SCIENCE IN DAY-TO-DAY LIFE||দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
BENGALI VERSION-
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
1. ভূমিকা -
বিজ্ঞান কি সে সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে হলে আমাদের চারপাশের দিকে তাকাতে হবে,যেমন কম্পিউটারের মাউস, কম্পিউটারের স্ক্রিন, বলপয়েন্ট পেন বা জানালা দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ - বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রেই তার প্রভাব বিস্তার করেছে।এক কথায় বিজ্ঞান হল সকল বৈশ্বিক বিষয়ের জ্ঞান।
বিজ্ঞান আধুনিক জীবনের প্রতিটি শাখায় প্রভাব বিস্তার করেছে।একটি যন্ত্র,গাড়ি,কলকারখানায় ইত্যাদি শব্দের প্রতিরূপ যা আমাদের প্রত্যহ সকালবেলা থেকে রাত্রিবেলা অবধি বেষ্টন করে রাখে।আমরা যা খাই, যা পরি,যা বই পড়ি,যা উৎসব উদযাপন করি,যা খেলা আমরা খেলি সবকিছুকেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ প্রভাব বিস্তার করেছে।প্রত্যেক ব্যক্তি জীবনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রভাব উপলব্ধি করে।তা শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক আলো না পাখা,রেডিয়ো বা সিনেমা নয়,যা জীবনে প্রত্যক্ষভাবে প্রদর্শিত হয়।এটি আমরা যা করি বা যা আমাদের সঙ্গে ঘটে সব কিছুর সঙ্গে বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
2. দৈনন্দিন জীবনে পেছনে বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যাবলী -
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অবদানের পেছনে বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য রয়েছে। সেগুলি হল। -
- বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পদ্ধতিটিই পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।
- আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের বিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
- মানব সমাজের এক ধরনের উপভোগ্য ও বহুমুখী জীবনযাপন ধারণ করে চলতে বিজ্ঞান সহায়তা করে।
- বিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল মানব জীবন কে দ্রুতগতি সম্পন্ন করা।
- বিজ্ঞান আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জুগাতে সাহায্য করে।
- মানব জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে তুলতে বিজ্ঞান সহায়তা করে।
- দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়তা করে।
- মানুষের সময় ও শ্রম সাশ্রয়ে বিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
3.বিজ্ঞানের অর্থ ও সংজ্ঞা -
3.1.বিজ্ঞানের অর্থ-
ইংরেজি 'Science' কথাটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ 'Scientia' থেকে যার অর্থ জ্ঞান। বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞান কথাটি অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস যতদূর অনুসন্ধান করা হয়েছে তাতে দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ বছর পূর্বে ও বিজ্ঞান চর্চায় যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এই বিষয়টি দুটি পরস্পর সম্পর্কিত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়েছে,বিজ্ঞান চর্চা পদ্ধতিতে এবং বিজ্ঞান চর্চা বিষয়ে এই দুটি দিক থেকে বিচার করে দেখা গেছে যে প্রাকৃতিক প্রকৃত বৈজ্ঞানিক সত্তা এবং পদ্ধতি ইতিহাস অতি ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কিত।
3.2.বিজ্ঞানের সংজ্ঞা -
বিজ্ঞান বলতে আমরা বিশেষ কোনো বিষয়কে বুঝি না। বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সংগ্রহীত নানান জ্ঞানের সমষ্টির এবং তার অতিরিক্ত কিছু ,সেই কারণে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনেক তার কোনটি খুব তা স্পষ্ট।
বিজ্ঞানের একটি সহজ সংজ্ঞা হল -
"পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে ভৌত ও প্রাকৃতিক জগতের গঠন ও আচরণকে নিয়ে সুশৃংখল চর্চার উদ্দেশ্যে বৌদ্ধিক ও ব্যবহারিক কার্যকলাপ তাই বিজ্ঞান।"
James B Conant এর মতে -
"Science is an interconnected series of concepts and conceptual schemes that have developed as a result of experimentation and observation and are fruitful of further exper indentation and observation."
Einstein এর মতে -
"Science is the attempt to make the chaotic diversity of experience corresponds to a logically uniform System of thought."
G.Gore এর মতে -
"Science is the interpretation of nature and man is the interpreter."
Norman Campbell এর মতে -
"Science is the study of those judgements concerning which universal agreement can be obtained."
অর্থাৎ বিজ্ঞান হল একটি সংঘবদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার যার একটি অনুসন্ধান পদ্ধতি ও অনুসন্ধানে একটি উপায় আছে এবং জীবনের প্রতি একটি দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি চিন্তণের উপায় রাখে।
4. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের -
দৈনন্দিন জীবনে যে যে দিকে বিজ্ঞানের প্রভাব রয়েছে ,সেই সম্পর্কে নিন্মের বর্ননা করা হল। -
১. কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
উচ্চ ফলনশীল বীজ,রাসায়নিক সার,কীটনাশক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে বিজ্ঞানের দ্বারা।যার ফলস্বরূপ উদাহরণ হল সবুজ বিপ্লব।
২. শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
শিল্পের আঙ্গিনায় বিজ্ঞানের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে।শিল্প-কলকারখানা উন্নত মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
৩.যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
বিজ্ঞান আমাদের যন্ত্র উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানবিক শ্রম হ্রাস করার করা ও আর বেশি সম্ভাবনাময় এবং ফলাফল প্রসূত কাজ করতে উৎসাহিত করে।একই সময়ে বিজ্ঞান অসংখ্য বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছে যা আমরা সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারি।মানব সমাজে এর ফলে এক ধরনের উপভোগ্য ও বহুমুখী জীবনযাপনের ধারণ করে চলেছে।
একজন গৃহবধূ বিজ্ঞানের উদ্ভাবিত বিভিন্ন রান্নার সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করতে পারেন।এই পরিস্থিতিতে তিনি পর্যাপ্ত সময় পান ও সেই সময়টিকে বাড়ির অন্যান্য কাজে বা পরিবারে প্রয়োগ করেন। বিজ্ঞানের উদ্ভাবনের ফলে উদ্ভূত ওয়াশিং মেশিনের ব্যবহারে জামাকাপড় কাচ এখন অনেক বেশি সুবিধাজনক।ওয়াশিং মেশিনগুলি সম্পূর্ণ স্ব-নিয়ন্ত্রিত।
৪. বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
বিদ্যুতের উদ্ভাবন আর একটি আশ্চর্য আবিষ্কার।আমাদের ঘরে আলো জ্বালার জন্য আমরা বালব, টিউবলাইট ব্যবহার করি,আবার ঘর গরম করার জন্য রুম হিটার ও ঠান্ডা রাখার জন্য কুলার বা এসি ব্যবহার করি।বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কার গুলি,যেমন পাখা, আলো,গাড়ি,ফোন,টিভি ইত্যাদি ছাড়া বেঁচে থাকাই এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫. চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
আমাদের অসুস্থতার ক্ষেত্রে ও বিজ্ঞান থেকে সুবিধা পেয়ে থাকি।বর্তমানে চিকিৎসক ও শল্য চিকিৎসকরা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা,মস্তিষ্ক স্ক্যান এবং উন্নত মানের সরঞ্জামের মাধ্যমে সঠিকভাবে অসুখ নির্ধারণ করতে পারেন এবং সেই অসুস্থতা কাটিয়ে তোলার জন্য বিধান দিতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার ধারণা বিজ্ঞানই প্রণয়ন করে।সংক্রামক রোগগুলি যার দ্বারা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।উন্নত মানের পরিছন্নতা ও নর্দমা ব্যবস্থার দ্বারা কলেরা,বসন্ত,টাইফয়েড,এডস্ ও অন্যান্য মহামারী রোগ, এবং বর্তমানে করোনা রোগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। টিবি,ক্যান্সার,করোনারি অ্যাটাক ইত্যাদি মারন রোগ ও অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত যার কারণ হল চিকিৎসা গবেষণায় উন্নতি ও বিকাশ।আমাশয়, টাইফয়েড রোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ ব্যবহার দ্বারা আমাদের দেশে নিরাময় সম্ভব।ম্যালেরিয়াকে কার্যত সম্পূর্ণ নিরাময় করা হয়েছে।এই সকল কিছুর ফলশ্রুতি স্বরূপ মানবজীবনে প্রগতিশীল উন্নয়ন ১০০ বছর আগের তুলনায় এখন দ্বিগুণ।চিকিৎসা বিদ্যার অগ্রগতির জন্য মানব জীবনের আয়ু অনেক বেড়েছে।
৬. পরিবহনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
যানবাহনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক পরিবর্তনের কথা বলা হয়।আমরা এখন কম হাঁটি বা গরুর গাড়ির পরিবর্তে স্কুটার,গাড়ি,বাস,ট্রেন, এরোপ্লেন ইত্যাদি এক স্থানে থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করি।যা মূলত বিজ্ঞানের অগ্রগতি দ্বারা সম্ভব।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে চিঠি,টেলিগ্রাম,টেলিফোনের পরিবর্তে আমরা এখন মোবাইল যুগে এসে পৌঁছেছি। বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম বা Social Media যেমন - Facebook , Whatsapp , Instagram , Telegram, Twitter, Email, Gmail, Google এর মতো অনেক মাধ্যম রয়েছে যা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেছে।
৮. গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
গনমাধ্যমের বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এক স্থানে ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। গনমাধ্যমের প্রথম মাধ্যম হল সংবাদপত্র।তবে বর্তমানে টেলিভিশনের সাংবাদিক চ্যানেল এবং স্মার্টফোনের কল্যাণের দাঁড়া এখন হাতে হাতে সংবাদ এর তথ্য জানা যায়।
৯. শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
প্রাচীন ভারতের শিক্ষার্থীরা গুরুকুলে থেকে শিক্ষা লাভ করত।ব্রিটিশরা এদেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল।বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।পাঠদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় এবং সাধারণ ক্লাসরুমকে স্মার্ট ক্লাসরুমে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখন পাঠ্যপুস্তকের জায়গা কেড়ে নিয়েছে audio-visual Study Material।ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে অনলাইন ক্লাস ও কোচিং নিতে পারছে,আবার অনলাইনে পরীক্ষা দিতে পারছে।
১০. আবহাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে আবহাওয়ার প্রতিবেদন,তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা,আর্দ্রতা,বৃষ্টিপাত,তুষারপাত, সাইক্লোন,সমুদ্রের জোয়ার ভাটা,সুনামি,বন্যা ইত্যাদির প্রকাশের সাহায্য করে,পূর্বাভাস দিয়ে যা আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম করে তোলে।
১১. প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
নবজাগরণই প্রথম মানুষকে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির মূল্য বুঝিয়েছে।কিন্তু অষ্টাদশ শতকে প্রাচীন প্রযুক্তি ও শিল্পের স্বল্প হারের কারণে তা কিছুটা নিস্তেজ ছিল।1920 খ্রিস্টাব্দের সময় পর্যন্ত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সক্রিয় ছিল না।কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের অভিনব উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করেছে প্রযুক্তিক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করার প্রক্রিয়াটি মানবজীবনকে দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করেছে,তাতে সন্দেহ নেই।এই সময়ে অগ্রগতির হার ছিল চরম এবং প্রায় প্রতিটি মুহূর্তেই নতুন যন্ত্র ও মাধ্যম আবিষ্কার হতে থাকে।
বর্তমানে উপভোক্তাদের জন্য ছুঁচ থেকে জেট প্লেন,স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি থেকে কম্পিউটার প্রায় সব কিছুতেই বৃহত্তর পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।কিন্তু বাস্তব জীবনে উন্নয়নের থেকে বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন,শিক্ষা ও সৌন্দর্যের গুণমান ইত্যাদির উন্নয়ন হয়েছে অনেক বেশি,বিজ্ঞান আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জুগিয়েছে।
১২. তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
এই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানের দুই উল্লেখযোগ্য সফল।এক কম্পিউটার এবং অপরটি ইন্টারনেট।জীবনধারণের অভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তথা মননের ক্ষেত্রেও অমূল্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাছাড়া এই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থা লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
১৩. বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
বিনোদন জগতে বিজ্ঞানের প্রথম অবদান ছিল চলচ্চিত্র বা সিনেমা।তারপর রেডিও ও টেলিভিশনের।তবে বর্তমানে এই তিনটিতে সীমাবদ্ধ নেই।স্মার্টফোনের আবিষ্কার হওয়ায় পর মানুষ তার পকেটে সমগ্ৰ জগতের বিনোদন ভান্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।বর্তমানে বিনোদন হল সম্পূর্ণ মোবাইল কেন্দ্রিক।
১৪. খাদ্যতালিকায় ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
খাদ্যের গুনাগুনের ক্ষেত্রে আমরা বিজ্ঞানের সাহায্যে বুঝতে পারি কোনো খাদ্যে কতটা প্রোটিন ও ক্যালরি আছে।এটি আমাদের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন উপাদানকে বিশ্লেষণ করে ও শ্রেণীবিভক্ত করে ভিটামিন,ক্যালোরি মান,মিনারেল ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে।এটি আমাদের ভারসাম্য সূচক খাদ্যতালিকা গঠনে সাহায্য করে এই ধরনের এই ধারণার উপর ভিত্তি করে।এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নয়নের জন্য স্বল্প মূল্যের কিন্তু পুষ্টিকর খাবার শিশুদের দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
১৫. বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান -
বর্তমান যুগে সময় সাশ্রয় ও শ্রম সাশ্রয় করার জন্য অনলাইনে মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তু বা পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য,যা মূলত বিজ্ঞানের অগ্রগতির দিকে সূচিত করছে।যেমন flipkart, Amazon, Snapdeal মতো অনলাইন শপিং পোর্টালের মাধ্যমে মানুষ তার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করে।আবার অপ্রয়োজনীয় বস্তু Olx অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিক্রয় করতে পারছে। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন শপিং গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারা।
5. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব -
দৈনন্দিন মানুষের জীবনে বিজ্ঞানের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।মানুষের জীবনের বিজ্ঞানের সু-প্রভাব ও কু-প্রভাব দুই ধরনের প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। নিন্মের তা আলোচনা করা হল। -
• সু-প্রভাব -
- বিজ্ঞান মানব সুস্থিরতা ও সুবিধা প্রদান করে থাকে।
- সময় ও দূরত্বকে জয় করে বিজ্ঞান মানব সভ্যতাকে একীভূত করেছে।
- বিজ্ঞানের অগ্রগতি দ্বারা মানব জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করেছে।
- বিজ্ঞান মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পদ্ধতিটিই পরিবর্তন করে দিয়েছে।
- বিজ্ঞান আমাদের জীবনের গতি বেগ বহুলাংশে বাড়িয়েছে।
- বিজ্ঞান আমাদের পেশাগত দিকটি সুবিস্তৃত করেছে।
- বিজ্ঞান আমাদের কৌতূহলের সীমা-পরিসীমা বাড়িয়েছে।
- বিজ্ঞানের দ্বারা বস্তু ব্যবহারের পন্থার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।
- বিজ্ঞান আমাদের এমনই আরামদায়ক ও সুবিধা দায়ক অনুভূতি দিয়েছে।
- বিজ্ঞান আমাদের শিখিয়েছে কিভাবে স্বল্প সময়ে আমরা দীর্ঘ সূত্র কাজ করতে পারে ও কম পরিশ্রমে তা সম্পাদান করতে পারি।
- বিজ্ঞান বিভিন্ন যন্ত্র উদ্ভাবনের মাধ্যমে শ্রম হ্রাস করার ও আরও বেশী সম্ভাবনাময় এবং ফলাফল প্রসূত কাজ করতে উৎসাহিত করে।
- বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার ধারণার প্রণয়ন করা।
• কু-প্রভাব -
- বিজ্ঞান এমন বিপজ্জনক অস্ত্র উদ্ভাবন করেছে যা মানবতাকে ধ্বংস করতে পারে।
- বিজ্ঞানের একটি মূল অপব্যবহার হল প্রচারের জন্য গনমাধ্যমের অপব্যবহার করা।
- অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সুবিধাকে জনকল্যাণের স্বার্থে পরিবর্তে অপব্যবহার করতে থাকে।
- আমরা বিজ্ঞানের যন্ত্রের উপর বেশি নির্ভরশীল তাই আমরা ধীরে ধীরে যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি।
- বিজ্ঞান যেমন আমাদের বেগ দিয়েছে তেমনই আবেগ কেড়ে নিয়েছে।
- পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হল বিজ্ঞানের অগ্ৰগতি।
- মানুষ যে পরস্পর নির্ভর হয়ে সমাজের সৌহার্দ্যে মাধ্যমে জীবন ধারণ করত,তা চলে গেছে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে।
- বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সৃষ্টি হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ।
6. বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা -
সকল প্রকারের সমস্যা বা প্রাকৃতিক ঘটনাই বিজ্ঞানের দ্বারা ব্যাখ্যায়িত হয় না।বিজ্ঞান যে কোনো সমস্যাকে সমাধান করতে অক্ষম।এটি মূলত প্রাকৃতিক সমস্যাকেই সমাধানের চেষ্টা করে, কোনো অতি প্রাকৃতিক ঘটনাকে নয়।প্রাকৃতিক ঘটনা বিজ্ঞানের মূল বিষয়বস্তুকে অতি প্রাকৃতিক ঘটনাবলী থেকে পৃথকীকৃত করা আবশ্যক। অতি প্রাকৃতিক ঘটনাবলী নির্ধারিতভাবে নির্ভর যোগ্যভাবে যাচাই করনের দ্বারা পরীহ্মিত হয় না, কিন্তু প্রাকৃতিক ঘটনাবলি দৃষ্টবাদ বা অভিজ্ঞতাবাদী যাচাইকরণের দ্বারা অনুমোদনযোগ্য।বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমালোচনামূলক পরীক্ষা একটি পরিশীলিত পথে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে অনুধাবনে সাহায্য করে এবং এই প্রক্রিয়া পরিমাণ গত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সময়ের সমান্তরালে সঞ্চিত হয়।
7. উপসংহার -
বিজ্ঞান হল মানব জাতির কাছে একটি আশীর্বাদ। প্রত্যেকদিনে জীবনে এর উপযোগিতা তা হল অসামান্য। কিন্তু বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার গুলি নানাভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।এরোপ্লেনে ভ্রমণ করার পরিবর্তে যদি আমরা তাকে বোমা নিক্ষেপের জন্য ব্যবহার করি তবে সেই বিজ্ঞানই অভিশাপ হিসেবে দেখা দেয় এবং ভয় এখানেই যে একদিন বিজ্ঞান মানবতাকে ধ্বংস করবে। বিজ্ঞানকে ব্যর্থতামূলক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত যাতে এর প্রকৃতি বুঝে তার সঠিক ব্যবহার করা যায়।তবে বর্তমানে আমরা বিজ্ঞান আমাদের উপর নির্ভরশীল নয় বরং আমরা বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।যদি আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করতে চাই তাহলে বিজ্ঞানের অগ্রগতির প্রয়োজন। তবে বিজ্ঞানকে জনকল্যাণ স্বার্থে ব্যবহার করলে সেটি সমাজের কল্যাণমুখী হবে কিন্তু যদি আমরা অকল্যান হিসাবে ব্যবহার করলে সেটি সমাজের পহ্মে বিপজ্জনক হিসাবে গন্য হবে, তখনই বিজ্ঞান অভিশাপ হিসেবে দাঁড়াবে।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি বিজ্ঞান হল একটি ম্যাজিক,কিন্তু এর আশ্চর্য আবিষ্কার গুলি আমাদের সচেতন ভাবে ব্যবহার করতে হবে।