Designing An Activity Based Curriculum||একটি সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠ্যক্রম নক্সশা করা
BENGALI VERSION||
BENGALI VERSION -
একটি সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠ্যক্রম নক্সশা করা
1. ভূমিকা -
শিক্ষার যে চারটি উপাদান আমরা দেখতে পাই তার মধ্যে অন্যতম উপাদান হল পাঠক্রম।ব্যক্তিগত এবং তাত্ত্বিক উভয় ধরনের প্রাসঙ্গিকতার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে পরিচিত।শিক্ষার বিবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠক্রম সম্পর্কিত ধারণা পরিবর্তন ঘটেছে।সাধারণভাবে বলতে গেলে শিশুরা কর্মের মাধ্যমেই চালিত হয়।
সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠক্রমের লক্ষ্য প্রতিটি শিশুর জৈবিক,বৌদ্ধিক এবং সামাজিক বিকাশের সঙ্গে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম,অভিজ্ঞতার পরিধি এবং পারস্পর্যের সংগতি বিধানের প্রয়াস।বস্তুত এই পাঠক্রমের অভীষ্ট হল বিদ্যার্থীর সকল মূল জৈবিক, বৌদ্ধিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণ।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মূল ভিত্তি হল সক্রিয়তার নীতি। শৈশবে ও কৈশোরে শিক্ষার্থীরা সাধারণত কর্মচঞ্চল ও সক্রিয় থাকে।সক্রিয়তা হল শিশুর প্রান ধর্ম। শিশুর অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তির প্রকাশ পায় বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে।শিশুর এই সক্রিয়তা ধর্ম বা চাহিদাকে সুষ্ঠুভাবে পরিপূরক করতে পারলে তাদের সৃজনী শক্তির সার্থক বিকাশ ঘটে।
2. পাঠক্রমের ধারণা -
শিক্ষার একটি অপরিহার্য উপাদান হল পাঠক্রম।লাতিন 'Currere' শব্দটি থেকে ইংরেজি 'Curriculum' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।লাতিন 'Currere' শব্দের অর্থ দৌড়। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৌড়ের যে পথ তাই পাঠক্রম বা Curriculum. অর্থাৎ পাঠক্রমের বুৎপত্তিগত অর্থ হল বিশেষ লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য দৌড়ের পথ।
বিভিন্ন শিক্ষাবিদ্ পাঠক্রমের সংজ্ঞায় বিভিন্নভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এখানে কয়েকটি সংজ্ঞা দেওয়া হল -
পেইনি এর মতে - " শিক্ষার্থী ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও আচরণের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য শিক্ষাপতিষ্ঠানে যে সমস্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় এবং সচেতন ভাবে পরিকল্পনা করা হয় তাদের সামগ্রিক যোগফল হল পাঠক্রম।"
ফ্রয়েবেলে মতে - " পাঠক্রম হলো মানবজাতির সামগ্রিক জ্ঞানের ক্ষুদ্র সংস্করণ।"
কিলপ্যাট্রিক এর মতে -" পাঠক্রম হলো এমন একটি উপাদান যার মধ্যে দিয়ে বাস্তব জীবনের প্রতিফলন ঘটে।"
মুদালিয়ার কমিশনের মতে -" পাঠক্রম বলতে শুধু বিদ্যালয়ের যে সমস্ত গতানুগতিক পাঠ্য বিষয় গুলি পরীক্ষাগারে, কর্মশালায়, বিতর্ক সভায়, খেলার মাঠে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার সংস্পর্শে ও পারস্পরিক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া মধ্যমে যে সমস্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তার সমষ্টি হল পাঠক্রম।"
3. পাঠক্রমের শ্রেণীবিভাগ -
শিক্ষাব্যবস্থাকে উদ্দেশ্যভিত্তিক,সময় উপযোগী, কর্মভিত্তিক এবং গতিশীল করে তোলার প্রধান হাতিয়ার হল পাঠক্রম।আমাদের শিক্ষার লক্ষ্যের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠক্রমের বিবর্তন হয়েছে।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠক্রমের সাংগঠনিক কাঠামোগত পরিবর্তনগুলি বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রমের জন্ম দিয়েছে।এই গুলি হল -
- কেন্দ্রীয় বা মূখ্য পাঠক্রম
- অব্যক্ত বা লুক্কায়িত পাঠক্রম
- লিখিত বা অভিব্যক্ত পাঠক্রম
- বাতিল পাঠক্রম
- ব্যবহৃত পাঠ্যক্রম
- গ্রহণযোগ্য পাঠক্রম
- অন্তর্মুখীন পাঠক্রম
- ইলেকট্রনিক পাঠক্রম
- বিষয় কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম
- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম
- অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম
- জীবন কেন্দ্রিক পাঠক্রম
- সমম্বয়িত পাঠক্রম
এখানে শুধু কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম সম্পর্কে আলোচনা ও ব্যাখ্যা করা হবে।
4. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম -
• ধারণা -
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমকে অনেক সময় প্রকল্প ভিত্তিক পাঠক্রম বা অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পাঠক্রম বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই কর্মকেন্দ্রিক নামটি সম্পূর্ণ মৌলিক ধারণা থেকে এসেছে।এই কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ধারণাটি 1920 খ্রিস্টাব্দের পূর্বে তেমন ভাবে ব্যবহৃত হয় নি।1897 খ্রিস্টাব্দে John Dewey তাঁর Laboratory School -এ যে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রচলন করেছিলেন।সেখান এই নির্বাচিত কর্ম বা খেলার বিষয়বস্তুর চালিত হয়। সে নিজের মতো করে বিষয়বস্তু নির্বাচিত করে খেলতে থাকে। সেখানে এই নির্বাচিত কর্ম বা খেলার বিষয়বস্তুর পরিবর্তে পাঠক্রমকে স্থান দেওয়া হয়েছে।তাই এটিকে বলা হয় কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম।এখানে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে কর্মের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ সাধনের জন্য এখানে মাধ্যমে রূপে ব্যবহার করা হয়।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মনোবৈজ্ঞানিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।এই পাঠক্রমের তৈরীর সময় শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত জীবনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।এই পাঠক্রমের বিভিন্ন কার্যাবলীগুলি শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ও বাস্তব জীবনের উপযোগীতার নিরীক্ষা নির্বাচন করা হয়।এই কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে দৈহিক কার্যাবলী (শারীর শিক্ষা,খেলাধুলা,ব্রতচারী,পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য রক্ষা,নিত্য কাজ), পরিবেশ সচেতনতা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজ (ভ্রমণ,পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি),গঠনমূলক কাজ(কারুশিল্প ও হস্তশিল্প শিক্ষা,বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা,হাতে-কলমে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা), সৃজনাত্মক(ছবি আঁকা,মূর্তি গড়া,ছড়া ও সাহিত্য পাঠ, রচনা বা প্রবন্ধ লেখা ইত্যাদি),সমাজ শিক্ষা মূলক কাজ (সমাজ সেবামূলক কাজ) ইত্যাদি।
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের নমনীয় ও পরিবর্তন শীল।কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীদের জীবনকেন্দ্রিক হয়।বাস্তব জীবনের প্রয়োজন বা চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর চাহিদা পরিবর্তন পরিবর্তিত হয়, এবং এর সঙ্গে সঙ্গে পাঠক্রমের বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হয়। তুলনামূলকভাবে প্রারম্ভিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পাঠক্রমের উপযোগিতা বেশি।
• উদ্ভব -
বিষয় কেন্দ্রিক পাঠক্রমের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে।এই পাঠক্রম তাত্ত্বিক বিষয়ের ভারে ভারাক্রান্ত।এটি একখেঁয়ে, ক্লান্তিকর,জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক শূন্য এবং স্মৃতি শক্তির চর্চার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।এই পাঠক্রমের বড়ো ক্রটি হল এটি সার্বিক বিকাশের অনুপোযোগী।তাই বিষয় কেন্দ্রিক পাঠক্রমের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফল হল কর্মকেন্দ্রিক ও কর্ম ভিত্তিক পাঠক্রমের উদ্ভব।
• কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সংজ্ঞা -
কমেনিয়াস বলেন, যা কিছু শিখতে হবে,তা অবশ্যই কাজের মধ্যে দিয়ে শিখতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে কর্মধারায় রবীন্দ্র শিক্ষার পাঠক্রমের মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন - শিক্ষা হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার অঙ্গ, চলবে এক তালে,এক সুরে, তাঁর অভিমত হল, শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে পৃথক নয়।
গান্ধিজীর শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষার্থীর হাত পা,চোখ,কান ইত্যাদি অঙ্গ ও ইন্দ্রিয়গুলির উপযুক্ত ব্যবহার ও শিক্ষা দ্ধারাই মনে প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে। শিল্প শিক্ষার সঙ্গে আক্ষরিক শিক্ষা নয়,শিল্পের মাধ্যমে আক্ষরিক শিক্ষাই গান্ধিজীর পরিকল্পিত শিক্ষার আসল কথা।
John Dewey - এর মতে ,"Activity curriculum is a continuous stream of child's activities, unbroken by systematic subjects and springing form the interest and personality felt needs of the child."
Wardha Scheme of Education - " we have attempted to draft an activity curriculum which implies that our schools must be the places of work,experimentation and discovery and not of passive absorption, imparted as second hand."
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, " কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম হলো সুসংগঠিতভাবে নির্দিষ্ট একক অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিকট বিষয়বস্তু উপস্থাপন করার মাধ্যম সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে কর্মের নিযুক্ত হতে পারে এবং প্রেষণার মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে।"
কোঠারি কমিশনের সুপারিশ - কোঠারি কমিশন নতুন সমাজের সঙ্গে সংগতি রেখে ভবিষ্যৎ অগ্রগতির লক্ষ্যের কাজের অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। নিম্ন প্রাথমিক স্তর খুব সাধারণ হাতের কাজ এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে Craft বা হস্তশিল্প শেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বুনিয়াদি শিক্ষার কর্মকেন্দ্রিকতা ও উৎপাদন, অনুবন্ধ প্রণালীতে শিক্ষা,স্থানীয় সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।কোঠারি কমিশনের মতে, কাজের অভিজ্ঞতা ও উৎপাদন মূলক নীতি ও কাজের দিক থেকে এক।
বিকাশমূলক কর্মকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমে ব্যাপক ভিত্তিক অনবদ্ধ এবং বিষয় ভিত্তিক পাঠক্রমের গুনগুলি কে সংগঠিত করা হয়েছে।উপরন্তু এতে বিদ্যার্থীর স্বরূপ, আগ্রহের ব্যপ্তি,শ্রেণিকক্ষে বিদ্যার্থীর গ্রহন ক্ষমতা এবং সমস্যার সমাধানের ইত্যাদি শিক্ষার প্রক্রিয়ার সার কথা উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
5. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য -
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বৈশিষ্ট্য গুলি হল -
১. শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও আগ্রহের কথা বিচার করে এই ধরনের পাঠক্রম গঠন করা হয়।কেন না আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা হল শিশুকেন্দ্রিক।আর বর্তমান শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও আগ্রহের উপর বিচার করে নির্বাচন করা হচ্ছে।
২. এই ধরনের পাঠক্রম পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক হয় না। এখানে শিক্ষার্থীদের নিকট কোনো সমস্যা উপস্থাপন করা হয়।শিক্ষার্থী সেই সমস্যার সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করে এবং সমাধানের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে।
৩. সমস্যার সমাধানের জন্য এখানে যে পরিকল্পনা করা হয় তা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে করে।তবে শিক্ষার্থীর এখানে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে থাকে।
৪. এখানে শিক্ষকের কাজ হল সহায়কের। তিনিই দলগুলিকে পরিচালনা করবেন।কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের সহ সমস্যা নিয়ে বিশ্লেষণ করবেন। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তিনি কাজ করবেন।এখানে নির্বাচন কর্মগুলি এমন হয় যেগুলি শিক্ষার্থীদের দেহ ও মনের বিকাশের সহায়ক। নির্বাচিত কর্মগুলি অবশ্যই শিক্ষামূলক হবে এবং সেগুলি শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হবে।
6. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের কার্যাবলী -
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সাংগঠনিক রূপ সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার করার জন্য অবশ্যই এই পাঠক্রমের অন্তর্গত।এই পাঠক্রমের কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।শিক্ষা বিদগণ এই পাঠক্রম রচনা করার সময় কর্মসূচিকে ৬টি শ্রেণীতে ভাগ করেছিলেন।এই গুলি হল -
- দৈহিক কার্যাবলী - খেলাধুলা,শারীর শিক্ষা,স্বাস্থ্য রক্ষা সংক্রান্ত কার্যাবলী।
- পরিবেশগত কার্যাবলী - শিক্ষামূলক ভ্রমণ, সমাজ পরিদর্শন।
- গঠনমূলক কার্যাবলী - বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ,বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ইত্যাদি।
- সৃজনাত্মক কার্যাবলী - সঙ্গীত,অঙ্কন,শিল্পকলা ইত্যাদি।
- কল্পনাত্মক কার্যাবলী - অভিনয়,প্রবন্ধ,রচনা, সাহিত্য পাঠ ইত্যাদি।
- সামাজিক কার্যাবলী - সমাজ উন্নয়ন কর্মসূচি, প্রাথমিক চিকিৎসা, সেবামূলক কর্ম।
7. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের উপযোগিতা -
- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের শিক্ষার উদ্দেশ্যকে প্রত্যক্ষভাবে চরিতার্থ করতে সহায়তা করে থাকে।
- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের অন্তর্গত উপাদানগুলি শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশে সহায়তা করে থাকে।
- এই ধরনের পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার কাজ পরিচালনা করলে শিক্ষার্থীদের প্রাহ্মোভিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
- এই পাঠক্রমে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়ক। কারণ এই পাঠক্রমের উপাদানগুলি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে এবং জ্ঞানের বাস্তবায়নে সক্রিয় করে তোলে।
- কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের জন্য অভিজ্ঞতাগুলি নির্বাচন করা হয় শিক্ষার্থীদের বিকাশ এবং পরিনমনের প্রতি দৃষ্টি আরোপ করে।
- এই পাঠক্রমের জন্য নির্বাচিত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়।এখানে শিক্ষার্থীর কর্ম সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা অনুসরণ বলে শিক্ষার্থীর নৈতিক ও চারিত্রিক বিকাশ ঘটে।
- এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে।এই পাঠক্রমের অন্তর্গত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য শিক্ষার্থীদের সমবেতভাবে কাজ করতে হয়।এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠে যা সামাজিক বিকাশে সহায়ক।
8. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সুবিধা ও অসুবিধা -
• সুবিধা -
- দৈহিক বিকাশ - শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশের কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
- মানসিক বিকাশ - শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম বিশেষভাবে উপযোগী হয়।
- প্রাক্ষোভিক বিকাশ - স্বাধীনভাবে নানা কাজ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে। ফলে তারা আনন্দ পায়।
- নৈতিক বিকাশ - কর্মভিত্তিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীকে একজন স্বনির্ভর দায়িত্ববান ও কর্তব্য পরায়ন নাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে।শিক্ষার্থীর নৈতিক বিকাশেও সহায়তা করে।
- সামাজিক বিকাশ - একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার সুযোগ থাকায় কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে।
• অসুবিধা -
- শিক্ষার প্রতি আকর্ষণের অভাব - কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের শিক্ষার্থীরা কাজের মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করার,নিজেকে সম্পূর্ণ কাজে নিযুক্ত করে।ফলে তাদের শিক্ষার দিকে তেমন আগ্রহ থাকে না।
- অতীত অভিজ্ঞতাকে অবজ্ঞা - এই পাঠক্রমে বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতার উপর কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
- শিক্ষালয়ের অভাব - এই ধরনের পাঠক্রম রূপায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত বিদ্যালয়ের অভাব রয়েছে।
- দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন - কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে অনেক বেশি সময় প্রয়োজন।
9. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের বিশ্লেষণ -
কর্মকেন্দ্রিক বা সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠক্রমের প্রধান বৈশিষ্ট্য শিক্ষার্থীর বয়স ও প্রকৃতি অনুযায়ী যে স্বাভাবিক সক্রিয়তা পাঠক্রম রচনার সময় তাকেই প্রধান অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
মানসিক ও সঞ্চালনামূলক (Mental operations and Motor) এই দুই প্রকার সক্রিয়তাই পাঠক্রমের উপাদান হতে পারে।আসলে কোনো পাঠক্রমই সক্রিয়তা যুক্ত নয়। বিদ্যালয় পাঠক্রমে সক্রিয়তাগুলি কি কি তা চিহ্নিত করতে হবে।পাঠ্যপুস্তকগুলিতে তার ইঙ্গিত থাকলেও সেক্ষেত্রে সক্রিয়তা মুখ্য বিষয় নয় এবং শিহ্মন ও শিখনের প্রকৌশল নয়।সেই কারণে সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠক্রমের রচনা করতে হলে নিম্নলিখিত নীতি গুলি অনুসরণ করা উচিত।
- নির্বাচিত সক্রিয়তাগুলি শিশুর দৈহিক,মানসিক ও সামাজিক বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
- শিক্ষার্থীর স্বক্রিয়তা অভিজ্ঞতা ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাগুলিকে যে ধারণাগুলি আয়ত্ত করতে হবে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নির্বাচিত করতে হবে।
- সক্রিয়তা স্বতঃস্ফূর্ত ও নির্দেশিত দুই প্রকার হতে পারে।
- সক্রিয়তাগুলি উদ্দেশ্যমুখি বৈচিত্র্যময় এবং আনন্দদায়ক হওয়া প্রয়োজন।
- দৈহিক, বৌদ্ধিক,সৃজনশীল, সমাজ ও পরিবেশ সংক্রান্ত,উৎপাদনমুখী এইরকম নানা বৈশিষ্ট্যযুক্ত কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের ভিত্তি হওয়া উচিত।
10. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের নির্দেশিকা -
- প্রথমে পাঠ্যপুস্তক থেকে ধারণাগুলি চিহ্নিত করতে হবে।
- ধারণা গুলির সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে।
- প্রত্যেকটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যত রকমের সক্রিয়তা সম্ভব উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী সেগুলিকে লিখতে হবে।
- সমগ্র পাঠ্যপুস্তকের ধারণা ও সক্রিয়তা বিশ্লেষণ করা হলে,তার মধ্যে থেকে মুখ্য সক্রিয়তা গুলি নির্বাচন করতে হবে।
- এই মুখ্য সক্রিয়তা গুলি এমন হবে যে,নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক সক্রিয়তা অবলম্বন করে সমগ্র পাঠ্যবিষয় টিকে শেখা যাবে।
- শিহ্মক -শিখন কলেজগুলিতে স্কুলের পাঠ্য পুস্তকে ও পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি সংগ্রহে থাকা বাঞ্ছনীয়।
11. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের সীমাবদ্ধতা -
১. বিকাশমূলক কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে ভারসাম্যের অভাব পরিলক্ষিত হয়।এই পাঠক্রমে কর্ম সম্পাদনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয় বলে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
২. সক্রিয়তা পাঠক্রম প্রধানত শিক্ষার্থীরা আগ্রহের উপর ভিত্তি করে সংগঠিত, তাই নিরবচ্ছিন্নতার নীতি সম্পূর্ণরূপে অনুসূত হয় না।
৩. অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানকে কর্মে রূপান্তরিত করা যায় না।তাই কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম সকল ধরনের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। তা ছাড়া,কর্মের ভিত্তিতে জ্ঞান অর্জন করতে হয় বলে শিক্ষার্থীর শিক্ষার অগ্রগতি খুব ধীর গতিতে চলে।
৪. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ আছে এমন সমস্যাই সে অনুশীলন করে,অন্যগুলি পরিহার করে। ফলে প্রকৃত চাহিদা,আগ্রহ ও সমস্যার মধ্যে শিহ্মক পার্থক্য করতে পারেন না।
৫. কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে বিদ্যার্থীর উপরই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।আর শিক্ষকের অবমূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার্থী তরুণ অভিজ্ঞ,তাই তার উদ্দেশ্যও সীমাবদ্ধ। শিক্ষকেই নতুন জ্ঞানের প্রবেশদ্বার শিক্ষার্থীর কাছে উন্মুক্ত করে দেন।শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকের নির্দেশনা অপরিহার্য।
৬. বিকাশমূলক কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে উচ্চশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত বিমূর্ত চিন্তন হ্মমতার বিকাশ ও গবেষণামুখী কার্যক্রম সংগঠিত করা অসুবিধাজনক।আসলে এই পাঠক্রম নীচু ক্লাসের জন্য বেশি কার্যকর।
সবশেষে বলা যায়, মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না।কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয় কখনোই সকল বা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর চাহিদা ও আগ্রহ মেটাতে পারে না।ফলে কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর সংস্কৃতির বিকাশ ব্যাহত হয়।
12. উদাহরণ -
• কার্যাবলী 1 -
বীজগাণিতিক সূত্র : (a+b)² = a² + 2ab + b²
উপকরণ -
- থার্মোকল
- আঠা
- ছুরি
- স্কেল
- রঙের কাগজ
- রঙিন পেন
- কাঠের বোর্ড
১. থার্মোকল থেকে ছুরি দিয়ে a ও b একক বাহু বিশিষ্ট দুটি বর্গক্ষেত্র কেটে নেওয়া হল।
২. আবার থার্মোকলটি থেকে ছুরি দিয়ে দুটি একই মাপের আয়তক্ষেত্র কেটে নেওয়া হল।আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য a একক ও প্রস্থ b একক।
৩. আটা দিয়ে বর্গক্ষেত্রে দুটির উপর লাল রঙের কাগজ ও আয়তক্ষেত্রের দুটির উপর হলুদ রঙের কাগজ লাগানো হল।
৪. বর্গক্ষেত্র দুটি ও আয়তক্ষেত্র দুটি চিত্রের মতো কাঠের বোর্ডের উপর আঠা দিয়ে লাগানো হল।
বর্ণনা -
চিত্রে ABCD বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল
= (a+b)² = a² + 2ab + b²
আবার ABCD বর্গক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল
= AEFI বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল + GQEF আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল + FGCH আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল + IDHS বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল
= a² + ab + ab + b²
= a² + 2ab + b²
সুতরাং (a+b)² = a² + 2ab + b²
ব্যবহার - মডেলটি (a+b)² = a²+ 2ab+b² সূত্রটির জ্যামিতিক প্রমানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
13. উপসংহার -
কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম নমনীয় ও পরিবর্তনশীল।কর্মকেন্দ্রিক পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের জীবন কেন্দ্রিক হয়। বাস্তব জীবনে প্রয়োজন বা চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পরিবর্তিত হয় এবং এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।তুলনামূলকভাবে প্রারম্ভিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পাঠক্রমের উপযোগিতা বেশি।এই পাঠক্রমের সমব্যয়মূলক কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুর ব্যক্তিত্ব পরিপূর্ণ বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
শিশুর কাছে প্রয়োজনীয় সকল বিষয়বস্তুই পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।তাছাড়া কর্ম কেন্দ্রিক পাঠক্রম শিশুদের আগ্রহ,চাহিদা ও সমস্যার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করবে।তাই বিভিন্ন বিষয়ে অনুবদ্ধ সম্ভব করে তোলা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সর্বশেষে,সক্রিয়তা ভিত্তিক পাঠক্রমের মনস্তত্ত্ব সম্মত। এই পাঠক্রমে শিশুকে একটি বিষয়বস্তু রূপ কামরায় বদ্ধ করে রাখা হয় না, বরং শিশুকে কেন্দ্র করেই বিষয়বস্তু সংগঠিত করা হয়।