Critical Analysis Of Different Committee And Commissions On Education

Critical Analysis Of Different Committee And Commissions On Education

Critical Analysis Of Different Committee And Commissions On Education|| শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটি এবং কমিশনের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

BENGALI VERSION||

Critical analysis Of different committee And Commission On Education
Critical Analysis Of Different Committee And Commission On Education

BENGALI VERSION -

শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটি এবং কমিশনের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

1.ভূমিকা -

ভারতবর্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল মূলত চিরাচরিত ও প্রথাগত। শিক্ষা ছিল শুধুমাত্র উঁচু শ্রেণি জন্য। শিক্ষা ব্যবস্থা জাত ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য ছিল না। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়কালে থেকে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের একান্ত জরুরি ছিল। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় ছিল কিছু মানুষের জন্য, চিরাচরিত বা প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশীয় শিক্ষা কে প্রাধান্য দেওয়া হতো। তাই এই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করা একান্ত দরকার ছিল। মহাবিদ্রোহের পরবর্তী সময় কাল থেকে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করেন জন্য বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তী সময় কালে বিভিন্ন ধরনের কমিটি ও কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ও কমিশন এর উদ্দেশ্য ছিল জাতি-ধর্ম-বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ভারতবর্ষে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি বিষয়বস্তু ছিল -

  • বিদ্যালয় শিক্ষার লক্ষ্য।
  • পাঠক্রম ও শিক্ষা বাহন।
  • শিক্ষক - শিক্ষিকা ও শিক্ষার মান।
  • গবেষণা।
  • শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য,আবাসন,নিয়মানুবর্তিতা।
  • উচ্চ শিক্ষা প্রশাসন।
  • গ্রামীণ শিক্ষা সম্বন্ধীয় মতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ যেখানে স্থান পেয়েছে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত সুপারিশ।
  • ধর্ম শিক্ষা,নারীশিক্ষা,পেশাগত শিক্ষা‌ প্রবর্তন করা।
  • উচ্চশিক্ষার জন্য পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।

2. শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যাবলী -

ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথাগত ও চিরাচরিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা কমিটি ও কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ও কমিশন এর গঠনের পেছনে বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।এই উদ্দেশ্য গুলি হল -

  • শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের দেশের রাজনৈতিক শাসনতান্ত্রিক সংক্রান্ত বিষয় নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে সহায়তা করা।
  • শিক্ষার মান এমনভাবে উন্নতি করতে হবে যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থী জাতীয় সংস্কৃতির যোগ্য প্রতিনিধি হতে পারে এবং সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা যেন স্থায়ী অবদান রাখতে পারে।
  • শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিহ্মার্থীর জাতীয় সংস্কৃতি উপলব্ধি করে তাকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারন দ্বারা ভারতীয় সংস্কৃতির মূল ভাবনা গ্ৰহন ও বর্জন করতে পারে।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা করার শক্তি অর্জন ব্যবস্থা করতে হলে জীবনের জিজ্ঞাসার উত্তর অন্বেষণ এবং নানা দিকে তাদের গবেষণার ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত করার ব্যবস্থা করতে সহায়তা করে।
  • মানববিদ্যা চর্চার উদ্দেশ্যে সাধারণ শিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রভৃতি নানা ধরনের শিক্ষার মান উন্নয়নের ধারা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
  • শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য হল চারিত্রিক উন্নতির জন্য শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্বসাহিত্যে লিপিবদ্ধ থাকার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার সুযোগ পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং যাতে তারা নৈতিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়।
  • শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষমতা, মানুষের সৌভ্রাতৃত্বের প্রভৃতি মানবিক গুণ বিকাশ সাধন করা।
  • নতুন সমাজ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজ দর্শন সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করা এবং সমাজের চাহিদা অনুসারে শিক্ষার্থীদের সুশৃংখল সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করা।
  • শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো সকলের জন্য শিক্ষার সমান অধিকার প্রদান করা।
  • পুঁথিগত পাঠের সঙ্গে সহপাঠ্যক্রমিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করা।
  • শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো মাতৃভাষায় শিক্ষাদান করা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক উন্নতি সাধন করা।
  • গ্রামীণ উন্নতির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কৃষিবিদ্যা শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
  • প্রযুক্তিবিদ্যার আধুনিক বিশ্বের রূপ পাল্টে দিয়েছে জাতি বিকাশ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম উপায় হল কারিগরি শিক্ষা। উচ্চস্তরের কারিগরি শিল্প ব্যবস্থা শিক্ষাব্যবস্থায় করতে হবে।
  • এই শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল বযস্ক শিক্ষা প্রর্বতন করা।
  • নারী শিক্ষা সম্প্রসারণ এই শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।
3. স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কমিটি ও কমিশন -

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ভারতবর্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল গতানুগতিক ও চিরাচরিত। তৎকালীন সমাজে দেশীয় শিক্ষানীতিতে ধর্মকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলন ছিল। এই ধারাবাহিকতাকে পরিবর্তনের জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ভিন্ন কমিশন ও কমিটি ও আইন দ্বারা শিক্ষাব্যবস্থার নতুন রূপ গড়ে তোলা হয়েছে। সেই কমিটি ও কমিশন গুলি নিম্নরূপ বর্ণনা করা হলো। -

১. উডের ডেসপ্যাচ (1854) -

১৮৫৪ তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ন্ত্রণে সভার সভাপতি স্যার চার্লস উড ভারতবর্ষে ইংরেজি তথা দেশীয় ভাষার শিক্ষার উন্নতি ও প্রসার কল্পে 12 দফা একটি সুপারিশ পেশ করেন। এই সুপারিশ কে সামগ্রিকভাবে উডের ডেসপ্যাচ বলা হয়।

• সুপারিশগুলি -
  • ভারতবাসীর উচ্চশিক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা হয়। এই সুপারিশ মতে লর্ড ডালহৌসি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছিলে। 1857 খ্রিস্টাব্দে 24 শে জানুয়ারি প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে এই বছরে বোম্বে ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেন।
  • শিক্ষাব্যবস্থায় পৃথক শিক্ষা বিভাগ গঠন করা হয়।
  • নতুন নতুন মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়।
  • স্ত্রী শিক্ষার উন্নতি সাধন করা হয়।
  • বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সরকারি সাহায্য দান করা হয়।
• সমালোচনা - 

উডের সুপারিশগুলিকে সমালোচনা করলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সমালোচনা করার যথেষ্ট অবকাশ থাকলেও একথা স্বীকার করা যায় এবং সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো রচনা করা হয়েছিল, পরবর্তীকালে সেই কাঠামো অনুযায়ী ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার পরিচালিত হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে উডের ডেসপ্যাচ রচয়িতা জাতীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির ধারা কে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করেছিল।

২. হান্টার কমিশন(1882) -

১৮৮২ তে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করেছিলেন। হান্টার এর নেতৃত্বে গঠিত কমিশন হান্টার কমিশন নামে পরিচিত।

• সুপারিশগুলি -
  • প্রাথমিক শিক্ষাকে জনগণের শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয় সমূহের শিক্ষার মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিস্মৃতি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
  • স্কুলগুলিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে সেখানে দেশীয় স্কুল রয়েছে যেখানে সেগুলিকে সহযোগিতা প্রদান এবং সেগুলির মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রাথমিক শিক্ষাকে জন শিহ্মার সামগ্রিক ব্যবস্থার এই অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যেখানে শিক্ষা যাতে নির্দিষ্ট কৃত স্থানীয় অর্থের উপরের প্রায় এক চেটিয়া দাবি রয়েছে এবং প্রাদেশিক রাজস্বের উপর ও তার বড় রকমের দাবি আছে।
  • পৌর ও স্থানীয় সাহিত্য শাসিত সরকার উভয়কেই স্বতন্ত্র স্কুল ফান্ড রাখতে হবে।
  • পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধান, সম্ভবপর স্থানের নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন, গ্রামীণ পরিবারের সুবিধা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের অবস্থানের সময় নির্ধারণ ব্যবস্থা করা এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা।
  • উচ্চমানের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পাঠক্রম কে দুটি অংশে ভাগ করার পরামর্শ দেন।যথা- 'Course A' ও 'Course B'
• সমালোচনা -
 
হান্টার কমিশনের সুপারিশ সমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নীতি সমন্বয় ঘটে শিক্ষার অগ্রগতিতে সম্ভাবনা করেছিলেন। কমিশনের দ্বিমুখী শিক্ষা পরিকল্পনা ত্রুটিহীন করে বাস্তবায়িত হলেও তার ফল সুদুরপ্রসারী হতে পারত বৃত্তি শিক্ষার পরিবর্তে উচ্চশিক্ষা যান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুপারিশ যদি থাকতো। তাহলে হয়তো ব্যবহারিক শিক্ষার প্রথম প্রচেষ্টা এরূপ ব্যর্থতার পরিবর্তিত হয় না।

৩. ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (1902) ও বিশ্ববিদ্যালয় আইন (1904) -

উনবিংশ শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ সরকার ভারতে শিক্ষা প্রসারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এসেছে। উডের ডেসপ্যাচ (১৮৫৭),স্টানলি ডেসপ্যাচ(১৮৫৯),হান্টার কমিশন(১৮৮২) প্রভৃতি সুপারিশ অনুসারে শিক্ষা বিস্তারে তৎপর হয়। এরা শিক্ষাসহ ভারতের জাতীয় সমস্যাগুলি সমাধানের চিন্তাভাবনা শুরু করলে ইংরেজি শাসনের কুফল গুলি তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশকে দমনের জন্য এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল।

• সুপারিশগুলি -
  • বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নিয়োগ এবং গবেষণা গ্রন্থাগার ছাত্রাবাস পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচি বিস্তৃত করা হবে।
  • সিনেটে সদস্যসংখ্যা সীমাবদ্ধ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের 50 জনের কম বা 100 জনের বেশি খোলা থাকবে না এবং আজীবন সদস্য থাকতে পারবেন না, তাদের কার্যকালের হবে পাঁচ বছর। 100 জন সদস্যের মধ্যে 80 জন এই সরকার মনোনীত করবেন।
  • পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়গুলি 20 জন এবং নতুন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাঞ্জাব ও এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়) 15 জন করে নির্বাচিত ফেলো নেওয়া চলবে।এই ভাবে এই আইন সাহায্যে সিনেট নির্বাচনে নির্বাচিত সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন লিপিবদ্ধ হবে এবং কলেজগুলো যাতে নিয়মিত পরিদর্শন হয় এবং অনুমোদনের পূর্বে সরকারি অনুমতি নেওয়া হয় সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি আসনের ব্যবস্থা করে সিন্ডিকেটকে আইনানুগ অনুমোদন দেওয়া হবে।
  • সিনেটে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইনকে কার্যে পরিবর্তন করতে না পারলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধনের জন্য এমনকি নতুন নিয়ম কানুন প্রণয়ন ব্যাপার ও সরকারি কর্তৃপক্ষকে আইন সঙ্গত ক্ষমতা অর্পণ করা হবে।১৮৫৭ সালের আইনি সরকারকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয় নি।
  • প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক সীমা নির্ধারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
  • প্রতিটি শিক্ষার দায়িত্ব অনুশোচিত কলেজগুলি গ্রহণ করবে এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার দায়িত্ব পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।
  • বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার পরীক্ষাগার ছাত্রাবাস খেলার মাঠ গড়ে তোলা হবে এবং প্রবেশিকা পরীক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ইন্টারমিডিয়েটে পরীক্ষার বিগত তিন বছরের ডিগ্রি কোর্সে পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়।
• সমালোচনা - 

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ও পরবর্তী সরকারের জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়েরা মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার দেশের প্রয়োজন ও বাস্তব অবস্থার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কথা কাউর মনে ওঠে নি, বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্যরা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আইন এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার তাদের স্বাধীন চিন্তার কোনো প্রতিবেদন কমিশনের রিপোর্ট ছিল না। কমিশন কলেজের অনুমতি ব্যবস্থা করা করি দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজের বিলোপ সাধন এবং বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের সম্পর্কে কঠোর বিধি প্রণয়ন করেন নি। বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব গ্রন্থাগার ছাত্রাবাস ছাত্রকল্যাণ ব্যবস্থা এবং তিন বছরের ডিগ্রী কোর্সের সুপারিশে তাৎপর্যপূর্ণ।

৪. সাডলার কমিশন(1917) - 

1917 সালে স্যাডলার কমিশন পর্যবেক্ষণ ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উন্নয়নের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন। কলেজের পাঠ্যসূচিকে দুটি শাখায় বিভক্ত করা প্রয়োজন অনুভূত হয়।

• সুপারিশগুলি -
  • উচ্চশিক্ষাকে দুটি শাখায় বিভক্ত করে ম্যাট্রিকুলেট স্তরের পরীক্ষা ব্যবস্থার থেকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজ তৈরি করা যেখানে কলা বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিদ্যা,প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষা,শিহ্মক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। এই ইন্টারমিডিয়েট কলেজ গুলো এককভাবে পরিচালিত হতে পারে অথবা নির্বাচিত উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
  • মাধ্যমিক ও ইন্টারনেট শিক্ষার জন্য একটি পর্ষদ গঠন করতে হবে এবং মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে এই পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ করবে। সম্ভবত +2 অথবা জুনিয়ার কলেজের ধারণা স্যাডলার কমিশনের লক্ষ করা যায়।
  • উচ্চ বিদ্যালয় এর সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েট স্তর কে যুক্ত করা এবং শিক্ষা পর্ষদ গঠন করে উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা এবং ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
• সমালোচনা -

এই কমিশনের সুপারিশ সমূহ আংশিকভাবে কার্যকরী হয়েছিল‌।যেমন - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন,বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার নীতি প্রয়োগ,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলির মধ্যে সংযোগ সাধন ইত্যাদি তৎকালীন শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে নি।
                 বিশ্ববিদ্যালয়কে স্ব-শাসিত সংস্থার পরিণত করা, বহুমুখী পাঠক্রম প্রর্বতন করা, প্রয়োগ বিজ্ঞান ও বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা, তিন বছরের ডিগ্ৰি কোর্সের প্রবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে কমিশনের অভিমত শিক্ষা সংস্কারের পরিকল্পনা কেউ যে প্রভাবিত করেছে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

৫. হার্টাগ কমিটি (1929) -

1919 খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন এর ফলাফল পর্যালোচনা করার জন্য 1927 খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন নিয়োগ করা হয় সাইমন কমিশন শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ জন্য 1929 খ্রিস্টাব্দে হার্টগ কমিটি গঠন করেন স্যার ফিলিপ হার্টগ ছিলেন এই কমিটির চেয়ারম্যান। 1929 খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে এই কমিটি সরকারের নিকট তার রিপোর্ট পেশ করেন।

• সুপারিশগুলি -
  • প্রাথমিক শিক্ষার পাঠদান হবে চার বছরের।
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলি হবে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকেই প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের দায়িত্ব বেশি করে নিতে হবে।
  • নমনীয় পাঠ্যসূচি গ্রহণ করা,যাতে সাক্ষরতা,স্বাস্থ্য শিক্ষা,স্বাস্থ্যচর্চা ও চরিত্র গঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
  • মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যসূচিকে বহুমুখী করতে হবে যাতে এইসব বিদ্যালয়ে অধিক সংখ্যায় শিক্ষার্থীরা নিজ প্রবণতা অনুযায়ী পড়াশোনা করার সুযোগ পায়।
  • শিক্ষার মান বজায় রাখার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষাকে আরও কঠোর করা প্রয়োজন।
  • স্ত্রীশিক্ষা আবশ্যিক করার জন্য কমিটি গুরুত্ব আরোপ করেন।
  • উপযুক্ত বেতনে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা, শিক্ষক-শিখনের ব্যবস্থা করা এবং রিচার্জ কোর্সের ব্যবস্থা করে শিক্ষকদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
  • অপচয় ও অনুন্নয়নকে হ্রাস করার জন্য পাস-ফেলের কড়াকড়ি হ্রাস পায়।
• সমালোচনা - 

হার্টাগ কমিটির সুপারিশগুলি ছিল সমরোচিত যথেষ্ট মূল্যাবাণ,রিপোর্টে প্রদর্শিত শিক্ষানীতি মোটামুটি পরবর্তী ব্রিটিশ শাসনাধীনে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে।রিপোর্টে উল্লেখিত অপচয় ও অনুন্নয়ন শব্দ দুটি শিক্ষাসংক্রান্ত মৌলিক শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি ও ব্যবহৃত হচ্ছে।অপচয় ও অনুন্নয়ন দুর করতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা আজও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
                    মাধ্যমিক শিক্ষা,উচ্চ শিক্ষা,স্ত্রী শিক্ষা ও শিক্ষা প্রশাসন সম্পর্কে রিপোর্টে প্রদত্ত সুপারিশগুলি সময়োপযোগী ও মূল্যায়ন শিক্ষার গুনগত মান সম্পর্কে কমিটির বক্তব্য বর্তমানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি,পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে যদিও তা যথেষ্ট নয়।তবে কিছু কিছু ত্রুটি জটিল কমিটিতে লক্ষ্য করা যায়,যেমন - বয়স্ক শিক্ষা,নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য অন্যান্য পন্থা,শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রামীণ অসুবিধাগুলি দূরীকরণের জন্য যেসব বিষয়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল তা করা হয় নি। শিক্ষাকে কেন্দ্রী করণের করার জন্য বিশেষ তৎপরতা দেখা গেছে,এর ফলে শিক্ষার সম্প্রসারণ বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার সম্প্রসারণ ব্যাহত হয়েছে। প্রয়োজন ছিল প্রাথমিক শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণে যেসব অসুবিধাগুলি ছিল সেই গুলিকে দূর করে প্রাথমিক শিক্ষা ও যাতে প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকে তার সুপারিশ করা।

৬. সার্জেন্ট রিপোর্ট (1944) -

1944 সালে কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ শিক্ষার উপর একটি সামগ্রিক রিপোর্ট পেশ করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেটি সার্জেন্ট রিপোর্ট নামে পরিচিত।

• সুপারিশগুলি -
  • শিক্ষা ব্যবস্থা হবে এমন যেখানে 3-6 বছরের শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক ব্যবস্থা,6-11 বছরের শিশুর জন্য সার্বজনীন বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক শিক্ষা,11-14 বছর বয়সের শিশুদের জন্য ওয়ার্ধার স্কিম অনুযায়ী উচ্চ-প্রাথমিক শিশুদের জন্য ওয়ার্ধার স্কিম অনুযায়ী উচ্চ- প্রাথমিক শিক্ষা অথবা মধ্য স্কুল শিক্ষা এবং এটাই হবে বিদ্যালয় স্তরে চূড়ান্ত পর্যায়।
  • মহাবিদ্যালয় স্তর বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে। এই পাঠ্যসূচী এমনভাবে পরিকল্পনা করা হবে যে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষার শেষে যে কোনো শিল্প-কলকারখানা অথবা বাণিজ্যের নিজের পেশা বেছে নিতে পারে।এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে পারবে। সুপারিশে বলা হয়েছে উচ্চ-বিদ্যালয় শিক্ষা এবং ভর্তির সময় সীমা হবে 6 বছর।
  • উচ্চ-বিদ্যালয় শিক্ষা হবে মূলত দুই ধরনের।        a) একাডেমিক ও b) টেকনিক্যাল। ডিগ্রি শিক্ষা হবে ৩ বছরের জন্য কিছু নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। উভয় শিক্ষা পদ্ধতির উদ্দেশ্য হবে সর্বাঙ্গ সুন্দর শিক্ষার ব্যবস্থা করা যা সমাপ্ত করে পরবর্তীকালে নিজেদের জীবনে উন্নতি বিধান করতে পারে।উচ্চ-বিদ্যালয় শিক্ষাদানের মাধ্যমে হবে মাতৃভাষা।
  • ২০ বছরের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক নিরক্ষরতা দূর করতে হবে।শিক্ষকদের প্রকৃত শিক্ষণের ব্যবস্থা করা,দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে,সামাজিক এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষাকেন্দ্র গুলোতে শিক্ষা বিভাগ সৃষ্টি করতে হবে।
  • এই কমিটির সর্বপ্রথম সর্বাত্মক সুপারিশ শিহ্মার সর্বস্তরের শিহ্মার প্রাক্- প্রাথমিক, প্রাথমিক, উচ্চ-বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় একই সঙ্গের কারিগরি, বৃত্তিমূলক এবং পেশাগত শিহ্মায়,সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সমান সুযোগ কথা বলা হয়েছে।
  • এই কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিক্ষা পেশায়।বেতন ও পেশা সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত হয়ে তারা মনে করেন এই শিহ্মা চাকুরি জনিত সমস্যা সমাধানে সহ্মম হয়। শিক্ষা সংক্রান্ত এই সুপারিশ স্বাধীন ভারতে শক্তিশালী ভিতের সূচনা করেছেন।
• সমালোচনা -

সার্জেন্ট রিপোর্টের জাতীয় শিহ্মায় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিহ্মানীতি। পূর্বে পরিকল্পিত শিক্ষানীতির শিহ্মা সম্পর্কে নতুন চিন্তা ধারার নতুন নতুন নীতির রূপায়ন করে। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিন্তা ধারার পুস্তকাদি, ছুটি, চাকরি,শিহ্মার সমান সুযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে এই রিপোর্টে আলোকপাত করে,বয়স্ক শিক্ষা প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা,আমোদ প্রমোদ ও সমাজ সেবা,শিল্প ও বানিজ্য শিহ্মা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যথাযথ সুপারিশ করার সামাজিক বিচার সার্জেন্ট রিপোর্টটি জাতীয় শিহ্মায় ইতিহাসে মূল্যাবাণ ভূমিকা পালন করে।

4. স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিভিন্ন শিহ্মামূলক কমিটি ও কমিশন - 

স্বাধীনতার পরবর্তী সময় ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল চিরাচরিত ও প্রথাগত। বিভিন্ন বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষে পঠন-পাঠন চলত। শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য রাধাকৃষ্ণন কমিশন, মুদালিয়ার কমিশন, ভক্তবৎসলম কমিটি, কোঠারি কমিশন,যশপাল কমিটির মতো বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত এবং পেশাগত শিক্ষা অর্জনের সুবিধা করার জন্য বর্ণ-ধর্ম- জাতি-লিঙ্গ নির্বিশেষে শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা। নারী শিক্ষা, তপশিলি জাতি ও উপজাতি শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কার,বয়স্ক শিক্ষা প্রভৃতি মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
  
১. রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ( 1948 - 1949) -
স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন হল রাধাকৃষ্ণন কমিশন বা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন।1948 শালী ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের সভাপতিত্বে এই কমিশন ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত হয়। ড. তারাচাঁদ,ড. জাকির হোসেন, ড. এ. লক্ষ্মন স্বামী মুদালিয়র,ড. মেঘনাথ সাহা,ড. করমনারায়ন,ড. নির্মল কুমার সিদ্ধান্ত এই কমিশনের সদস্য ছিলেন। এছাড়া এই কমিশনের তিনজন বিদেশি শিক্ষাবিদ সদস্য হলেন ড. আর্থার ই মরগ্যান,ড. জেমস এফ ডাফ এবং ড. টি গার্ট। কমিশনের সভাপতি ছিলেন ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এবং তারই নাম অনুযায়ী এই কমিশন রাধাকৃষ্ণন কমিশন নামে পরিচিত।

• সুপারিশগুলি - 
  • বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারমিডিয়েট কলেজ মোট ১২ বছর শিক্ষা গ্রহণের পর ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের অধিকার লাভ করবে।
  • প্রত্যেক প্রদেশে অধিক সংখ্যক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ স্থাপন করতে হবে। 
  • বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের শেষে সমস্ত ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ভিড় না করে তার জন্য অধিক সংখ্যক বৃত্তি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। 
  • 12 বছর বিদ্যালয় শিক্ষার লাভ করার পর ছাত্রেরা কলা ও বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য ইন্টারমিডিয়েট কিংবা তদনুরূপ কোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। 
  • পাস কোর্সের গ্রাজুয়েটদের দুই বছর ও অনার্স কোর্সের গ্রাজুয়েটদের তিন বছরের পড়াশোনা করতে হবে।
  • কলা ও বিজ্ঞান শাখাতে মাস্টার ডিগ্রীর নিয়ম-কানুনের মধ্যে সংগতি রাখতে হবে। 
  • অনার্সের ছাত্ররা এক বছর ও পার্শ কোর্সের ছাত্ররা দুই বছর পরে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করবে।
  • পি.এইচ.ডি ডিগ্রির শিহ্মার কাল হবে দুই বছর।
  • গ্রামীণ ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছেন।গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ে জনশিক্ষা,কৃষি গ্ৰামোন্নয়ন, সমাজ উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।গ্রামীণ শিক্ষার নিম্ন স্তরে থাকবে বুনিয়াদি বিদ্যালয়,আর উচ্চস্তরে থাকবে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়।গ্রামীণ শিক্ষার কাঠামোর স্তর গুলি হল - (ক) আট বছর ব্যাপী নিম্ন ও উচ্চ বুনিয়াদি শিক্ষাস্তর। (খ) তিন বা চার বছর ব্যাপী মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর বা উত্তর বুনিয়াদি শিক্ষাস্তর। (গ) তিন বছরের কলেজ শিক্ষাস্তর।(ঘ)দু বছরের স্নাতকোত্তর শিহ্মাস্তর।
• সমালোচনা - 

স্বাধীনতার পর শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা শুরু করতেই নজর দেওয়ার হয় উচ্চ শিক্ষার প্রতি।প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য কোনো কমিশন বসানো হয় নি।বিভিন্ন ত্রুটি প্রমাণ করেছে শিক্ষা চেতনার তৎকালীন নেতৃবৃন্দের দুর্বলতা তবে এই কমিশনের সুপারিশে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে কিছু দিশা দেওয়া হয়েছিল। 
          এ কথা সত্যি যে, স্থান ও কাল বিচারে রাধাকৃষ্ণ কমিশন ভারতীয় শিক্ষাকে বিপ্লবাত্মক রূপান্তরের মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশগুলির শিহ্মা মানের সমপর্যায়ভুক্ত করেছেন।শিক্ষার সঙ্গে এই প্রতিবেদনের সুপারিশ গুলি বাস্তবায়িত হলে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে সূচিত হত নবযুগ।এতে ডঃ রাধাকৃষ্ণনের নব ভারত গঠনের স্বপ্ন ও সার্থক হত। তবে যেভাবে উচ্চ শিক্ষার সমস্ত দিক থেকে সুবিন্যস্ত করার কথা বলেছিলেন তাঁর কিছুই এখনও পর্যন্ত বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয় নি।

২. মুদালিয়ার কমিশন বা মাধ্যমিক কমিশন ( 1952 - 1953) -

ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করে।কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের সুপারিশে ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষার সংস্কার তারাচাঁদ কমিটির নির্দেশিত পথে শুরু হয়েছিল।কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল মাধ্যমিক শিক্ষার সংস্কার করতে গেলে সমস্যাটিকে আরও তলিয়ে দেখতে হবে।তাই সর্বভারতীয় ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কারের জন্য মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ে তদানিস্তন উপাচার্য ড. লক্ষ্মনস্বামী মুদালিয়র -এর সভাপতিত্বে 1952 সালে "The Secondary Education Commission" (1952) নামে একটি শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।এই কমিশন 1952 সালে অক্টোবর থেকে 1953 সালে জুন মাস পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশবাসীয় প্রয়োজন ও চাহিদা এবং সরকারের আর্থিক সংহতি এই উভয় দিকে লক্ষ রেখে বাস্তব তথ্য ভিত্তিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেন।

• সুপারিশগুলি -
  • প্রাথমিক বা নিম্ন বুনিয়াদি শিক্ষা চার অথবা পাঁচ বছর।
  • মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে থাকবে দুটি শিক্ষাস্তর।(i) নিম্ন মাধ্যমিক ৩ বছরের জন্য,(ii)উচ্চ মাধ্যমিক ৪ বছরের জন্য। 
  • কমিশন বলেন, তৎকালীন দুই বছরের ইন্টার মিডিয়েট স্তরকে তুলে দিয়ে ওই স্তরের একবছর কে মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের সঙ্গে যুক্ত করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পরিণত করতে হবে।আবার ইন্টার মিডিয়েট স্তরের বাকি এক বছর ডিগ্রি স্তরে যুক্ত করে তিন বছরের ডিগ্রী কোর্স চালু করতে হবে।
  • যারা প্রাক্ বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স বা উচ্চতর মাধ্যমিক কোর্স শেষ করবে তারাই পেশাগত শিক্ষার কলেজে ভর্তি হতে পারবে।আবার বৃত্তিমূলক শিক্ষার কলেজগুলিতে এক বছরের প্রাক্ বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করতে হবে। 
  • যে সব অঞ্চলে সুযোগ রয়েছে সেই সব অঞ্চলে বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।এই বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের রুচি, প্রবণতা অনুযায়ী পড়ার সুযোগ পাবে। 
  • পৃথকভাবে বা বহুমুখী বিদ্যালয় গুলির সঙ্গে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।কারিগরি বিদ্যালয় সঙ্গে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।কারিগরি বিদ্যালয় শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় স্থাপন করা প্রয়োজন।এই বিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন শিল্পের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রত্যেক রাজ্যেই গ্রামাঞ্চলে কৃষি বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।এই বিদ্যালয়গুলিতে উদ্যান নির্মাণ, পশুপালন ও কুটির শিল্প শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।কিছু গ্রামীণ কলেজেও এই সমস্ত বিষয়ের শিক্ষার সুযোগের ব্যবস্থা করা দরকার।
  • যে সব ব্যক্তি Transferable চাকরি করেন তাঁদের জন্য গ্রামাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে।
  • কিছু কিছু আংশিক দিকে বিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রয়োজন যেখানে ছেলেমেয়েরা সকাল আটটা থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাটাবে।এই বিদ্যালয়গুলিতে দিনের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে।যে সব অঞ্চলে বাবা-মা উভয়কে চাকুরির জন্য দিনের বাইরে থাকতে হয় তাঁদের ছেলেমেয়েদের জন্যে এই ধরনের ব্যবস্থা অবশ্যই প্রয়োজন।শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা, অবসর বিনোদন ও পাঠ্য অতিরিক্ত কার্যাবলী পরিচালনার জন্যও আংশিক দিবা বিদ্যালয় প্রয়োজন।
  • শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। 
  • মেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় ও উপযুক্ত পাঠ্য বিষয় পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।মেয়েদের গার্হস্থ্য বিজ্ঞান,শিল্পকলা,সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয় পড়ানো ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। 
  • ছেলেমেয়েরা যাতে সমশিক্ষা লাভ করতে পারে ও সমসুযোগ পায় সেই কারণে সহশিক্ষার স্কুলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।এই স্কুলগুলিতে মেয়েদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা থাকবে ও তাদের গার্হস্থ্য বিজ্ঞান পড়ানোর সুযোগ সুবিধা রাখতে হবে।
  • 14 বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ সময়ের শিক্ষা গ্ৰহন করার আগে যাদের পড়া বন্ধ হয়ে যাবে তাদের আংশিক সময়ের শিক্ষার জন্য বিশেষ বিদ্যালয় ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বিকেলবেলায় এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে।এই শিক্ষা হবে অবৈতনিক ও স্থানীয় বিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত। 
  • কমিশন মনে করেন, বাস্তবের সঙ্গে সংগতি রেখে পাবলিক স্কুল স্থাপন করা দরকার।এই স্কুল গুলিকে জাতীয় ভাবধারার অনুপ্রাণিত করতে হবে।স্কুলগুলি হবে স্বাবলম্বী, সরকারি অনুদান এই স্কুলগুলি থেকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। এই বিদ্যালয়গুলির শিক্ষা পদ্ধতি ও ব্যবস্থা থাকবে।মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ থাকবে এবং তাদের সরকারি বৃত্তির ব্যবস্থা থাকবে।
• সমালোচনা -

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ছিল অসংখ্য সমস্যা।এই সমস্যার কথা স্মরণ রেখেই মুদালিয়ার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে লহ্ম্য, সংগঠন,পাঠ্যক্রম,পাঠ্যপুস্তক,চরিত্র গঠনের শিক্ষা, পরিচালনা ও পরামর্শ, পরীক্ষা পদ্ধতির সংশোধন, শিক্ষক- শিখন,শিহ্মা প্রশাসন ইত্যাদি বিষয়ে একটি  সর্বাঙ্গীন রিপোর্ট পেশ করেন।এই সুপারিশ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত রুচি,আগ্ৰহ,প্রবণতা ইত্যাদি উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।মাধ্যমিক শিক্ষা যাতে জীবন কেন্দ্রিক প্রগতিশীল ও কর্মভিত্তিক করা যায় তার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। 
          যা হোক 1948-49 খ্রিস্টাব্দে উচ্চ শিক্ষা সংক্রান্ত রাধাকৃষ্ণন কমিশনের সুপারিশের পরে 1952-53 খ্রিস্টাব্দের মুদালিয়ার কমিশনের মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে রূপান্তর সৃষ্টি করে তার মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে।

৩. ভক্তবৎসলম কমিটি (1963) -

স্বাধীনতার পর নারী শিক্ষার উন্নয়নে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন কমিশনেও এর উল্লেখ আছে। তবে কমিটি হিসেবে ভক্তবৎসলম কমিটি নারী শিক্ষার কিছু সুপারিশগুলি করেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভক্তবৎসল নামের পূর্বে নারী শিক্ষা সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণন কমিশন(1948-49) মুদালিয়ার কমিশন (1952 53),হংস মেহেতা কমিটি (1961) একাধিক সুপারিশের উল্লেখ করেন কিন্তু নারী শিক্ষার অগ্রগতির সেক্সে আশা অনুরূপ ফল দেখা যায় নি। সেই কারণেই জাতীয় নারী শিক্ষা পর্ষদ নারীশিক্ষার প্রসার এবং গুণগত মান উন্নয়নের জন্য 1963 খ্রিস্টাব্দে শ্রী ভক্তবৎসলম নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়।

• সুপারিশগুলি -
  • নারী শিক্ষার জন্য জনগণের সাহায্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করে তুলতে হবে।
  • গ্রাম্য অঞ্চলে শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • শিক্ষিকা হওয়ার জন্য মেয়েদের উৎসাহিত করতে হবে ও চাকুরির অবস্থার উন্নতি ঘটতে হবে।
  • সাংসারিক মহিলাদের জন্য গ্রামে আংশিক সময়ের জন্য শিক্ষকতা করা ব্যবস্থা করতে হবে।
  • দরিদ্র ছাত্রীদের স্কুল থেকে বিনামূল্যে পোশাক ও বই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রাথমিক স্তরের সহ-শিক্ষার প্রচলন করতে হবে।
  • বেসরকারী উদ্যোগের সাহায্য নিয়ে স্কুল-গৃহ নির্মাণ করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • নারী শিক্ষা বিষয়ে যাবতীয় কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতা দূর করতে হবে।
  • বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সম্মেলন,বেতার প্রচার,শিক্ষক সহায়ক উপকরণ সরবরাহ,ছাত্রী সংগ্রহ এই সব কাজের জন্য জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য গ্রহণ প্রয়োজন। 
  • যেসব অঞ্চল দুর্গম পার্বত্য বা অনগ্ৰসর অঞ্চল সেখানে অতিরিক্ত বেতন ও ভাতা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
  • গ্রামাঞ্চলের শিক্ষিকাদের শিহ্মন কলেজে বা বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  • বিদ্যালয়ে মহিলা পরিদর্শক নিয়োগ করতে হবে যাতে শিক্ষার মান উন্নতি হয় এবং অপচয় ও অনুন্নয়ন হ্রাস পায়। 
  • নারী শিক্ষার যাবতীয় ব্যয় ভার কেন্দ্রীয় সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। 
  • নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য একে অবৈতনিক করতে হবে ও বাধ্যতামূলক করার জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকারের সাহায্যে আইন গঠন করতে হবে।
  • শিক্ষিকা যাতে বিদ্যালয়ের কাছাকাছি বিনা ভাড়ায় থাকতে পারেন তাঁর জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • যেখানে 300 জনের মধ্যে জনসংখ্যা সেখানে 1 মাইলে মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও 1500 জনবসতি অঞ্চলে 3 মাইলের মধ্যে একটি মিডল স্কুল ও 5 মাইলের মধ্যে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
• সমালোচনা -

নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নে ভক্তবৎসলম কমিটির সুপারিশ গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বের কমিটি গুলির যেসব ত্রুটি ছিল সেগুলি পূরণ করে নতুন কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সুপারিশ করেছিলেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে কোঠারি কমিশনের একথা স্বীকার করা হয়েছে। এতদ সত্ত্বেও শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য হ্রাস করার জন্য যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিশেষ কিছু বক্তব্য ছিল না।

৪. কোঠারি কমিশন(1964 - 1966) -

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভূত হয়।দেশের শিক্ষা সংস্কারের জন্য স্বাধীন ভারতে রাধাকৃষ্ণন কমিশন, মুদালিয়ার কমিশন,জাতীয় নারী শিক্ষা কমিটি গঠিত হয়েছে।এই সমস্ত কমিশন বা কমিটির রিপোর্ট পুরোপুরি না হলেও অধিকাংশ সুপারিশ সরকার গ্রহণ করেছিলেন এবং সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তনও এসেছিল।কিছুটা কাজ হলেও সমাজের দাবি অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থার যে উন্নতি হওয়া উচিত ছিল তা হয় নি। শিক্ষা সমগ্ৰ ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে একটি সংহতি পূর্ণ ও প্রয়োজন মেটাবার উপযোগী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তৎকালীন সরকার 1964 খ্রিস্টাব্দের 14ই জুলাই একটি শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করেন এবং এই কমিশন কাজ শুরু করেছিল 1964 খ্রীষ্টাব্দে ২য়া অক্টোবর থেকে। রিপোর্টটি 1966 খ্রিস্টাব্দে 11 ই মার্চের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়।এই কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন ড. ভি.এস. কোঠারি। তাঁর নাম অনুসারেই এই কমিশনের নাম কোঠারি কমিশন নামে পরিচিত।

• সুপারিশগুলি -

a) নার্সারি - 3-5 বছরের শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অর্থাৎ এক থেকে তিন বছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা। নার্সারী ও কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা হবে এই স্তরে।
b) প্রাক্-প্রাথমিক স্তর - 5-6 বছরের শিশুদের জন্য প্রাক্ -প্রাথমিক শ্রেণি।
c) প্রাথমিক স্তর - প্রাথমিক শিক্ষাস্তর হবে দুটি,i.নিম্ন প্রাথমিক ও ii.উচ্চ প্রাথমিক।
i.নিম্ন প্রাথমিক স্তর - প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত(i - iv class)অথবা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত(i-v class) অর্থাৎ চার অথবা পাঁচ বছরের জন্য হবে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে।শিক্ষার্থীদের বয়স 6-11 বছর। 
ii.উচ্চ প্রাথমিক স্তর - পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত(v -vii class) অথবা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত(vi -viii class)। শিক্ষার্থীদের বয়স হবে 11-14 বছর।
d) মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর - এই স্তরের শিহ্মাকেও কোঠারি কমিশন দুটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথাক্রমে - i)নিম্নমাধ্যমিক অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত(viii -x class) অথবা নবম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত(ix-x class), শিহ্মার্থীর বয়স হবে 14-16 বছর।
ii)উচ্চ মাধ্যমিক স্তর - একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর (xi-xii class), শিক্ষার্থীর বয়স হবে 16-18 বছর।
e) উচ্চ শিক্ষার স্তর - উচ্চ শিক্ষার স্তর হবে তিন ধরনের, i)প্রথম ডিগ্ৰী স্তর - এই স্তরের শিক্ষা হবে দুই বছরের। শিক্ষার্থীর বয়স 18-21 বছর পর্যন্ত।
ii)দ্বিতীয় ডিগ্রী স্তর - এই স্তরে শিক্ষা হবে দুই বছরের। শিক্ষার্থীদের বয়স 21-23 বছর। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ বিষয়ে তিন বছরের M.A., M.Sc., M.Com. ডিগ্রী কোর্স চালু করতে পারেন। এই সব কোর্সের নাম অনার্স অথবা যে কোনো নামকরণ করা যেতে পারে। এছাড়াও কমিশন বলেন, কোনো কোনো নির্বাচিত বিষয়ে বিশেষ শিক্ষাদানের জন্য চার বছরের প্রথম ডিগ্রী কোর্স চালু করা যুক্তিযুক্ত।এই নতুন কোর্সের প্রথম বছর পাঠক্রম তিন বছর ডিগ্রি কোর্সের প্রথম বছরের পাঠক্রমের মতো হবে।
iii) স্নাতকোত্তরের শেষে থাকবে গবেষণা স্তর - উচ্চ শিক্ষা স্তরে Major University সংক্রান্ত সুপারিশটি উল্লেখযোগ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রথম স্নাতকোত্তর পঠন ও গবেষণা হবে। এদের মান হবে বিশ্বের যে কোন উন্নত মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনীয়।
f) উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পেশাগত শিক্ষা - 
i) প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরটিকে কলেজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে 1975-76 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিদ্যালয় স্তরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে অর্থাৎ কলেজ স্তরে এই ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে না।
ii)1965-85 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্বাচিত একাদশ শ্রেণি যুক্ত বিদ্যালয় গুলিকে দ্বাদশ শ্রেণীর বিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে।এ ছাড়াও কতকগুলি উন্নত মানের হাইস্কুল কে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী যুক্ত করে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উত্তীর্ণ করতে হবে। 
iii) 6+ বয়সের আগে কোনো শিশুকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা যাবে না। 
iv) নিম্ন প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয় হবে সর্বাধিক। উচ্চতর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অর্থাৎ 10 বছরের শিক্ষা হবে সাধারণধর্মী।এই স্তর বিশেষধর্মী শিক্ষাব্যবস্থা থাকবে না।

• সমালোচনা -

কোঠারি কমিশন প্রথম প্রাক্-প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সবরকম শিক্ষার সমস্যার নিয়ে আলোচনা করে সুচিন্তিত সুপারিশ করেছেন।দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিচ্ছিন্নভাবে বিচার না করে সামগ্রিক দৃষ্টিতে সমস্যাকে বিচার করে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ভবিষ্যৎ রূপ কল্পনা করেছেন।কমিশনের বিচার্য বিষয় ছিল দেশের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা।তাই স্বাভাবিকভাবেই কমিশনের সুপারিশ সমূহ বহু ব্যাপক।শুধুমাত্র আইন ও চিকিৎসা ক্ষেত্রটি কমিশনের আলোচনার বাইরে ছিল।শিক্ষার কাঠামো, পাঠক্রম পরীক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার,বয়স্ক শিক্ষা, নারী শিক্ষা প্রভৃতি নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ থাকলেও কোথায় কোথায় দুর্বলতা লহ্ম্য করা যায়।

৫. যশপাল কমিটি (1992) -

1992 সালে ভারত সরকার প্রফেসর যশপালকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করে একটি জাতীয় পরামর্শ দাতা কমিটি গঠন করে সুপারিশ করার জন্য কীভাবে বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াশোনার ভার কমানো যায়।পাঠ্যসূচী সংক্রান্ত সমস্যা বিশ্লেষণ করে যশপাল কমিটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে বিদ্যালয় শিশুদের পড়ানোর ঘর সংক্রান্ত সমস্যা শুধুমাত্র ক্রটি ছিল,পাঠ্যসূচী নয়, শুধুমাত্র অযোগ্য শিহ্মক নয়, বিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য নয়, বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকের জন্য নয়,এই সমস্যা মূল কারন বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর সঠিকভাবে ব্যবহারের অভাবের জন্য।জ্ঞানের বিস্ফোরণ এবং সংক্রামিত রোগের লক্ষণ এই ধারণার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

• সুপারিশগুলি - 
  • বিদ্যালয়ের মান নির্ণয় স্থান। 
  • সমাজে অংশগ্রহণ করা।
  • উপস্থিতির হার শিক্ষার ক্ষেত্রে স্তর বজায়। 
  • শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণমান উৎকর্ষের স্তর বজায় রাখার জন্য যে মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে সেগুলি হল - শিক্ষার প্রস্তুতিকরণ,শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষার উপকরণ ব্যবহার,শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ এবং অংশ গ্ৰহন,বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সাফল্য, শ্রেণি পরিচালনা শিহ্মন প্রক্রিয়া,কলা,কর্মশিক্ষা,শারীর শিক্ষা, পরিবেশ শিক্ষা বিভিন্ন প্রকার কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি হবে। 
  • যশপাল কমিটির মনে করে,কঠোর সর্বাত্মক এবং নিবিড় শিক্ষক প্রস্তুতি কর্মসূচি,ফলস্বরুপ বিদ্যালয়ে গুনমান উৎকর্ষের শিখন প্রক্রিয়া ঘটবে এবং প্রশিক্ষণরত শিক্ষক বা সহ্মম হবে স্বশিক্ষণ এবং স্বাধীন চিন্তা ভাবনার বিকাশ ঘটবে।
  • সুপারিশ করা হয়েছে কর্মসূচির বিষয় সূচীর মেয়াদ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর ১০ বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ৩/৪ বছর কর্মসূচির বিষয় সূচী বিদ্যালয় শিক্ষার প্রয়োজনের দিক লক্ষ্যে রেখে পূন গঠন করতে হবে এবং ব্যবহার কেন্দ্রিক হবে। শিক্ষকদের জন্য শিক্ষার ধারাবাহিকতা থাকবে এবং তা হবে প্রাতিষ্ঠানিক।শিহ্মকদের শিক্ষার বিষয়টি সম্পাদিত হবে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা মাধ্যমে।
• সমালোচনা -

এই সুপারিশগুলি শিক্ষক নীতি গ্রহণের উপর বিশেষ প্রভাব পড়েছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন নতুন বিষয় চালু হয়েছিল। এই সুপারিশগুলো নির্দিষ্টভাবে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বহন করে।
 
5. বর্তমান ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থা -

স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন কমিশন ও কমিটিগুলি যে সমস্ত শিক্ষা ক্ষেত্রে যে যে সুপারিশ করেছিল তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় আজও সেই সুপারিশগুলি লক্ষ করা যায়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সমস্ত সুপারিশ লক্ষ্য করা যায় সেগুলি হল -
  • অবৈতনিক ও সর্বজনীন বাধ্যতামূলক শিক্ষা বিধান দেওয়া হয়।
  • সংবিধান দ্বারা আইনত ভাবে 6-14 বছরের সমস্ত শিশুদের শিক্ষার অধিকার সংরক্ষন করা হয়েছে।
  • বিদ্যালয় ব্যবস্থা প্রাক্-প্রাথমিক,প্রাথমিক মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তর আজও বিদ্যমান।
  • শিক্ষার সমবন্টনের বিধান দেওয়া হয়।
  • শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষমতা ও শিক্ষা সুনিশ্চিত করা হয়।
  • পাঠ্যপুস্তকের যথাযথ রূপরেখা নির্মাণ করা হয়।
  • পরীক্ষা ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু রূপায়ণ করা হয়।
  • বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শক্তিশালী করা হয়।
  • নারী শিক্ষা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
  • বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে জোর দেওয়া হয়।
  • পেশাগত শিক্ষা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
  • বৃত্তি প্রদান ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
  • শিক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
6. উপসংহার -

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তী সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল মূলত চিরাচরিত ও প্রথাগত।ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে প্রাচ্য শিক্ষার সঙ্গে প্রাশ্চাত্য শিক্ষার সমন্বয় সাধন ঘটানো হয়েছিল। শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং স্বাধীনতার পরবর্তী সময় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের দ্বারা সুপারিশ করে শিহ্মা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার,পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন, পরীহ্মা পদ্ধতি, শিক্ষকের শিহ্মন ও প্রণালী দ্বারা শিক্ষার প্রসার করা।ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তী সময় যে সমস্ত কমিশন ও কমিটি বিভিন্ন সুপারিশ প্রদান করেছে,তা বর্তমানে ভারতীয় নতুন শিক্ষানীতি তে প্রতিফলিত হয়। শিক্ষাব্যবস্থার  উন্নয়নের দ্বারা সমাজ ব্যবস্থার উন্নত সাধনের জন্য এই সমস্ত কমিটি ও কমিশনের সুপারিশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


















Post a Comment (0)
Previous Post Next Post