পরিবেশ,জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে সম্পর্ক||Relationship Between Environment,Population And Quality Of Life

পরিবেশ,জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে সম্পর্ক||Relationship Between Environment,Population And Quality Of Life

পরিবেশ, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে সম্পর্ক||Relationship Between Environment, Population And Quality Of Life

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Relationship Between Environment, Population And Quality Of Life
Relationship Between Environment,Population And Quality Of Life

Assignment Questions -

1. পরিবেশ, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর||Write Down The Relationship Between Environment, Population And Quality Of Life

পরিবেশ, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে সম্পর্ক

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

জনসংখ্যা বৃদ্ধি হল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমস্যা। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা পরিবেশের উপর ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলে। আগামী দিনের এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা পরিবেশকে এক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেবে। বিগত ইতিহাস থেকে দেখা যাচ্ছে যে জনসংখ্যার উন্নয়ন মানেই পরিবেশের বিপর্যয়। পরিবেশের অবনতি সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটে।তাই মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতির জন্য এই দুটি উপাদানের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

2. পরিবেশ -

ইংরেজি শব্দ 'Ecology' থেকে পরিবেশ তত্ত্বের ধারণা এসেছে।এই শব্দটির উৎপত্তি 'Oikos' নামক গ্ৰিক শব্দ থেকে,যার অর্থ গৃহ বা বাড়ি। পরিবেশ তৈরি হতে জল,মাটি, বাতাস, উদ্ভিদ,প্রাণী ও মানুষের দরকার লাগে। পরিবেশ বলতে আমরা কোনো একত্রের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত পারিপার্শ্বিক থেকে নিজস্ব অনুভূতি দ্বারা প্রাপ্ত উদ্দীপকের বুঝি।পরিবেশের শব্দগত অর্থ হল, পারিপার্শ্বিক অবস্থা অর্থাৎ যে সমস্ত বাহ্যিক শর্ত মানুষ, উদ্ভিদ বা প্রানীর বিকাশকে প্রভাবিত করে (আলোক, তাপমাত্রা,জল ও মৃত্তিকা)। অর্থাৎ উদ্ভিদ,প্রানী ও মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার দরকার হয়,তাকে পরিবেশ বলে। সাধারনত, পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি মানুষ ও তার চারপাশে অবস্থিত সজীব ও নির্জীব উপাদান, জীবজন্তু, গাছপালা এবং মানুষের হাতে গড়া সবকিছু নিয়ে যে বিরাট জগৎ গঠিত হয় তার সবটাই বোঝায়।

3. জনসংখ্যা -

ল্যাটিন শব্দ 'Populas' কথাটি থেকে 'Population' শব্দটি এসেছে।'Populas' কথার আহ্মরিক অর্থ হল জনগোষ্ঠী।একটি দেশের বা কোনো গ্ৰাম বা কোনো শহরের জনসংখ্যা বোঝানোর জন্য আমরা জনসংখ্যা কথাটি ব্যবহার করি। জনসংখ্যা একটি গতিশীল বাস্তুসংস্থান সম্পর্কিত বিষয়।বাস্তুবিদ ওডামের মতানুসারে, জনসংখ্যা হল এক স্থানে বসবাসকারী একই প্রজাতিভুক্ত জীবগোষ্ঠী বা খুবই নিকট সম্পর্কিত জীবগোষ্ঠী যাদের মধ্যে দিনের আদান প্রদান ঘটে, তাদের জনসংখ্যা বলে।

4. জীবনযাত্রার মান -

জীবনযাত্রার মান কথাটির জনসংখ্যা শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনযাত্রার মান কথাটি দেশ,কাল,পাত্রভেদে পরিবর্তনশীল। মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদার ভিত্তিতে এবং ওই সব মৌলিক চাহিদার পারস্পরিক ভিত্তিতে একথা স্পষ্ট ভাবেই বলা যায় যে জীবন জীবনযাত্রার মানকে কিছু উপাদান - ১. সম্পদ, ২. জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতি, ৩. সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ৪. বিকাশের প্রক্রিয়া, ৫. জীবনযাপনের স্তর এই পাঁচটি উপাদানের সমন্বয়ে ভিত্তিতে জীবনযাত্রার মান গঠন করা হয়। সাধারন মানুষের কাছে জীবনযাত্রার মানের গুনগত উন্নয়ন বলতে বোঝায়।-

  1. বেঁচে থাকবার মতো যথেষ্ঠ আয়ের উৎস।
  2. সুষম খাদ্য ও পুষ্টি।
  3. যথাযোগ্য আবাসস্থল।
  4. স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি পরিসেবার সহজলভ্যতা।
  5. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজলভ্যতা।
  6. কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ।
  7. দূষণমুক্ত পর্যাপ্ত পানীয় জল।
  8. শিহ্মার সার্বজনিকতা ও সহজলভ্যতা।
5. পরিবেশ, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের সম্পর্ক -
পরিবেশ, জনসংখ্যা এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ এই তিনটির কার্যপ্রনালী পারস্পরিক ভাবে সম্পর্কযুক্ত।যথা -
১. জীবনধারণ উপাদান -
মানুষের বা জনসংখ্যার জীবনযাত্রার জন্য প্রাথমিক উপাদান (পানীয় জল এবং শ্বাসপ্রশ্বাস) প্রভৃতির জন্য আজও পরিবেশের ( জল এবং বায়ু ও উদ্ভিদের) উপাদানের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের এই উপাদান গুলি প্রভাবিত হয়ে দূষিত হচ্ছে।যা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করছে।
২. খাদ্য ও খাদ্য উপাদান -
দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের প্রাথমিক চাহিদা খাদ্য ও খাদ্য উপাদান জন্য পরিবেশের উপর অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে।যার ফলে একদিকে পরিবেশে ভূমিহ্ময় ও মৃত্তিকা দূষণ ঘটেছে, আবার অন্যদিকে রাসায়নিক সারে উৎপন্ন খাদ্যবস্তু গ্ৰহণে মানুষের নানা ব্যাধির লহ্ম্য করা যাচ্ছে।এর ফলস্বরূপ মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাচ্ছে।
৩. বাসস্থান -
দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক হারে নগরায়ন সৃষ্টি হচ্ছে।এই নগরায়নের জন্য ক্রমশ অরণ্য অকারনেই নিধন হচ্ছে। একদিকে যেমন মানুষ কর্মের আশায় শহরকেন্দ্রিক হচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়চ্ছে।দ্রুত হারে নগরায়নের বৃদ্ধির জন্য শহরাঞ্চলে বস্তির সংখ্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।যা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে চরমভাবে নীচে নামিয়ে দিচ্ছে।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদ -
মানুষ বা জনসংখ্যা তার জীবনযাপন করার জন্য প্রকৃতির ভান্ডারে সঞ্চিত যাবতীয় বস্তু,প্রাণী, উদ্ভিদ জীবজন্তুর ইত্যাদি যা কিছু আমাদের চাহিদা পূরণ করে এবং ধনসম্পদ প্রভৃতির কিছুর জন্য নির্ভর করে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর।এই প্রাকৃতিক সম্পদ পরিবেশের মধ্যে সঞ্চিত রয়েছে।মানুষ বা জনসংখ্যার তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জীবনযাত্রার মানের মূল ভিত্তি হল ধনসম্পদ,যা পরিবেশের থেকে নিয়ে তাদের চাহিদা পূরণ করে যা তাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫. পরিধান -
আধুনিক যুগে মানুষের পরিধানের প্রায় সমস্ত রকমের বস্তু সামগ্ৰী ও উপাদান প্রকৃতি থেকেই প্রাপ্ত। জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে তাদের চাহিদা পূরণের জন্য এই সমস্ত উপাদান উৎপাদনে পরিবেশের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে,যা পরিবেশে প্রত্যহ্ম ও পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দিচ্ছে।
৬. অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ -
দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের চাহিদা পূরণের জন্য যে অর্থনৈতিক ও শিল্পজাত দ্রব্য উৎপন্ন করা হয় তা আসে পরিবেশ থেকে। মানুষের এই ধরনের ক্রিয়াকলাপে পরিবেশ নানাভাবে দূষিত ( জলদূষণ, বায়ুদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ এবং অন্যান্য দূষণ) হচ্ছে।এই দূষণ দ্বারাই মানুষের নানা ধরনের ব্যাধি ও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।যা তাদের জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করছে।
৭. শিহ্মা -
শিহ্মার অনুভূমিক বিস্তার ও উল্লম্ব বৃদ্ধি এই দুই হ্মেত্রে মানুষ বা জনসংখ্যার জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ঘটায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বোধ গড়ে তোলে।শিহ্মার মানুষের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এবং পরিবেশে অবনমণে প্রতি সচেতনতা বোধ গড়ে তোলে যা জনসংখ্যার জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করে।
Environment, Population And Quality Of Life Diagram


উপরোক্ত চিত্রের মাধ্যমে বোঝা যায় যে,কোনো দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার যত বেশি হবে সেই দেশের জনগণের চাহিদার জন্য পরিবেশের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু তাতে জনগণের জীবনযাত্রার মান ততই কম হবে। অনুরূপভাবে যে দেশের জনসংখ্যা কম বা কাম্য সেই দেশের পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কম,যার ফলে সেই দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান বেশি।চিত্রে মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্রা D1 হলে পরিবেশ অবনমনের হারটি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে।আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির D1 পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং D3 পর্যন্ত জনসংখ্যা হার থাকলে মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুরূপভাবে পরিবেশের অবনমন হার D1 বৃদ্ধি পেলে মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরিবেশের অবনমন হার D3 পর্যন্ত হলে জীবনযাত্রার মান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।তাই উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় উন্নত দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির মাত্রা কম এবং পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাদের জীবনযাত্রার মান ততই উন্নত।
6. উপসংহার -
পরিশেষে এই কথা সত্যি যে, জনসংখ্যা, পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার মানের মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান। জনসংখ্যা, পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার মান একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে পরিবেশের মান উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হবে, যা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে হ্রাস করবে। আবার জনসংখ্যা হ্রাস পেলে পরিবেশের মান এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ 
1. জনসংখ্যা বৃদ্ধির = পরিবেশের অবনমন বৃদ্ধি = জীবনযাত্রার মান হ্রাস।
2. স্বল্প জনসংখ্যা = পরিবেশের অবনমন কম = জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি।

CLICK HERE -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post