অষ্টাঙ্গ যোগ বা রাজযোগ||Astange Yoga Or Raja Yoga

অষ্টাঙ্গ যোগ বা রাজযোগ||Astange Yoga Or Raja Yoga

অষ্টাঙ্গ যোগ বা রাজযোগ||Astange Yoga Or Raja Yoga

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

অষ্টাঙ্গ যোগ বা রাজযোগ||Astange Yoga Or Raja Yoga

অষ্টাঙ্গ যোগ বা রাজযোগ||Astange Yoga Or Raja Yoga

BENGALI VERSION

(ENGLISH VERSION PDF FILE BELOW THE ARTICLE)

• ভূমিকা -

ষড় দর্শন আর্য-হিন্দু সভ্যতার এক পরম গৌরবের বস্তু।ষড় দর্শন গুলি হল -

  1. সাংখাদর্শন।
  2. যোগদর্শন।
  3. ন্যায় দর্শন।
  4. বৈশেধিক দর্শন।।
  5. পূর্ব মীমাংসা দর্শন।
  6. বেদান্ত দর্শন।
এই সমস্ত দর্শন গুলি তাদের প্রনেতার নাম অনুসারে সমধিক পরিচিত। যেমন যোগ দর্শন তার প্রনেতা পতঞ্জলি দর্শন নামে পরিচিত।যোগদর্শনের প্রণেতা মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন -
"যোগঃ চিত্র,বৃত্তি-নিরোধ্য" 
অর্থাৎ চিত্ত বৃত্তিকে নিরোধ করার নামই যোগ।এই চিত্ত বৃত্তি পাঁচ প্রকার,যথা - প্রমান বা যথার্থ,বাস্তব জ্ঞান, জ্ঞান বিপর্যয় বা মিথ্যা বস্তু জ্ঞান,বিকল্প, নিদ্রা ও স্মৃতি। আবার যোগশাস্ত্র মতে চিত্ত পাঁচ প্রকার।যেমন - হ্মিপ্ত, মূঢ়,বিহ্মিপ্ত,একাগ্ৰ ও নিরুদ্ধ। পতঞ্জলির মতে, আত্মোপলব্ধি মুক্তি লাভের উপায়। কিন্তু চিত্ত একাগ্ৰ না হলে উপলদ্ধি সম্ভব নয়। পতঞ্জলি এই চিত্তকে শুদ্ধ ও স্থির এবং শান্ত করার জন্য যোগ সাধনার নির্দেশ দিয়েছেন। পতঞ্জলি তাঁর যোগসূত্রে যোগ সাধনার যে বিধান দিয়েছেন তাকেই অষ্ঠাঙ্গযোগ বলা হয়।পতঞ্জলির দর্শন অষ্টাঙ্গ দর্শন নামেও পরিচিত।
"যমশ্চ নিয়মশ্চৈব আসনঞ তথৈবচ
প্রাণায়ামতস্তথা গার্গি প্রত্যাহ্যরশ্চ ধারণা।
ধ্যানং সমাধিরেতানি যোগাঙ্গানি বর্ধনে।।"
- যোগী যাজ্ঞবল্ক্য 
• অষ্টাঙ্গযোগের স্তর -
মহর্ষি পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের অঙ্গ বা সাধনা গুলি হল ১. যম -
অষ্ঠাঙ্গ যোগের প্রথম যোগ বা সাধন হল যম। আমাদের ব্যাবহারিক জীবনেও যমকে আমরা ঠিক ঠিক কাজে লাগাতে পারি।যম অনুশীলন যতহ্মন না হবে ততক্ষণ যোগশাস্ত্রের মতে কেউ যোগ পথে এগিয়ে যেতে পারবে না।মানব মনের চঞ্চলতার মূল কারণ হল আশা আকাঙ্খা।যম হল এই আশা আকাঙ্খা নিয়ন্ত্রনের উপায়।
'অহিংসা সত্যাস্তেয় ব্রক্ষ্মচর্য্যা পরিগ্ৰহ যমাঃ'
অর্থাৎ অহিংসা,সত্য,অস্তেয়, ব্রক্ষ্মচর্য এবং অপরিগ্ৰহ এই পাঁচটি সাধনকে যম বলে।যোগ্যাভাস আরম্ভ করার আগে অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জীবনের যাত্রা শুরু করতে যারাই আসবে প্রত্যেক নবাগত সাধককে এই পাঁচটি সাধনের মধ্যে দিয়েই যোগ শুরু করতে হবে।নিম্নে যমের পাঁচটি সাধন বা ধাপ বর্ননা করা হল।-
i. অহিংসা -
কায়মনোবাক্যে কোনো প্রানীকে হিংসা না করাকে অহিংসা বলে। অর্থাৎ কাউ প্রতি হিংসা না করা।তাই যোগের হ্মেত্রে অহিংসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।এতে প্রয়োজনীয় যে যোগী হতে হলে অহিংসা দিয়েই শুরু করতে হয়। সুতরাং ব্যক্তির মধ্যে অহিংসা প্রতিষ্ঠিত না হলে কখনোই যোগী হওয়া যাবে না।
ii. সত্য -
যথাদৃষ্ট বা যথা জ্ঞাত বিষয়কে সেইরূপ প্রকাশ করাকে সত্য বলে। অর্থাৎ সত্য হল ব্যক্তির মন থেকে,বচন থেকে আর ব্যবহারে সবসময় সত্য থাকতে হবে। এখানে সত্য মানে মনে কোনো ধরনের দুরভিসন্ধি,কাউকে ঠকানো, নিজের রাগও দ্বেষবশত মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া।
iii. অস্তেয় - 
অস্তেয় শব্দের সহজ অর্থ চুরি না করা। অর্থাৎ অপরের কোনো দ্রব্য অপহরন না করাকে অচৌর্য বা অস্তেয় বলে। এই অস্তেয় শব্দটির ভাব ও তাৎপর্য অনেক ব্যাপক ও গভীর।চুরি করা মানে কারোর জিনিস না বলে নেওয়া।
iv. ব্রক্ষ্মচর্য - 
কায়মনোবাক্যে বীর্যধারন করাকে ব্রক্ষ্মচর্য বলে। ব্রক্ষ্মচর্য ছাড়া আধ্যাত্মিক জীবন কল্পনাই করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি বলে আমি আজ থেকে সাধনা করব,সেদিনই তার মন থেকে, বচন থেকে ও আচরণে কোনো ধরনের অব্রক্ষ্মচর্যের প্রকাশ তা থাকবেই না। এমনকি মনের মধ্যে অব্রক্ষ্মচর্যের কোনো ধরনের চিন্তা আসবে না।যদি অবচেতন ভাবেও এই ধরনের কিছু এসে যায় তবে তাকে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে আর সচেতন ভাবেই করার তো প্রশ্নই আসে না।
v. অপরিগ্ৰহ - 
অপরিগ্ৰহ হল ত্যাগ বা লালসাহীন।বাঁচার জন্য যেটুকু জিনিসের প্রয়োজন, তাছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে গ্ৰহন না করাকে অপরিগ্ৰহ বলে। অর্থাৎ ব্যক্তির জীবনধারণ করতে গেলে, জীবন নির্বাহের জন্য যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই তার প্রয়োজন তার বাইরে কিছুই নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু জিনিস যদি যোগীর কাছে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে অপরিগ্ৰহে প্রতিষ্ঠিত নয়।তাই যোগ সাধনার অপরিগ্ৰহ হওয়া একেবারে বাধ্যতামূলক।
সুতরাং অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রক্ষ্মচর্য এবং অপরিগ্ৰহ এগুলি শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্যই অপরিহার্য নয়,যে কোনো দেশের,যে কোনো জাতির, যে কোনো সমাজের মানুষের জন্যই অপরিহার্য।তাই যে কোনো যুগে এই পাঁচটিকে বলা হয় মহাব্রত।
২. নিয়ম -
অষ্ঠাঙ্গযোগের দ্বিতীয় সাধনের নাম হল নিয়ম।যোগ শাস্ত্রে মতে যমের থেকে আসল যোগ শুরু হয় না, যোগ শুরু হয় নিয়ম থেকে। সুতরাং যমের পাঁচটি সাধনকে বহিরঙ্গ সাধন এবং নিয়মের পাঁচটি সাধনকে অন্তরঙ্গ সাধন বলে।সমাজে পরস্পরের মধ্যে মেলামেশা করার সময় যে মূল্যবোধের অনুশীলন করার কথা বলা হয়। সেগুলি এই পাঁচটি যমের মধ্যে আছে, তখন নিয়মের এই পাঁচটিকে অনুশীলনের মধ্যে রাখতে হয়।
'শৌচ সন্তোবতপর স্বাধ্যয়েশ্বর প্রনিধানানি নিয়মঃ'
অর্থাৎ শৌচ, সন্তোষ, তপস্যা,স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর প্রনিধান এই পাঁচটি ক্রিয়ার নাম নিয়ম। নিয়মের এই পাঁচটি সাধন নিম্নে বর্ণনা করা হল।-
i. শৌচ - 
স্নানাদি দ্বারা বাহ্য শরীরের শুচিতা এবং মৈত্রী করুনা মুদিতা উপেক্ষা ভাবনা দ্বারা চিত্তের বা মনের শুচিতা বজায় থাকে। অর্থাৎ শৌচ বলতে বহিঃ শৌচের কথাই বলা হয়েছে।অনেকে শৌচ মানে মনের পবিত্রতা কে বোঝায়।তবে এহ্মেত্রে নিজেকে পরিষ্কার রাখা ঘরবাড়ি সাফসুতারো রাখা।তাই যোগ সাধনার শৌচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ii. সন্তোষ - 
ব্যক্তির নিজের চেষ্টায় সৎভাবে যা পাওয়া যায় তাতেই তৃপ্ত হওয়ার নাম সন্তোষ। অর্থাৎ সবকিছুতে সন্তুষ্টির ভাব।যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা আর যা নেই তাই নিয়ে অসন্তোষ না করা। মাথায় মধ্যে সবসময় ঘুরছে এটা পেলে ভালো হয়,ওটা পেলে ভালো হয়,যোগ সাধনার এই ধরনের মনোভাব যে একেবারেই না থাকে।যা পেলাম,যা আমার কাছে আসছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
iii. তপস্যা - 
শীতোয়াদি, মন এবং ইন্দ্রিয়াদিকে সংযত করার নাম তপস্যা। অর্থাৎ তপস্যা মানে যখন কোনো একটি জিনিসকে কেন্দ্র করে জীবনযাপন করার চেষ্টা করা হয়। তখন শরীর মনে একটা তাপ সৃষ্টি হয়,এই তাপকে বলা হয় তপস্যা। এখানে তপস্যা মানে শারীরিক কুম্ভ সাধন, শরীরকে একটু কষ্ট নেওয়া মনে উপোস করা। তপস্যা সবারই খুব দরকার।যখন ধর্মকে সামনে রেখে শরীরের কুম্ভ সাধন করে কোনো কিছু করা হচ্ছে যার ফলে শরীর মনে একটা তাপ সৃষ্টি হয়, একেই তপস্যা বলে।
iv. স্বাধ্যায় - 
শাস্ত্রাদি পাঠ গুরু মন্ত্রাদি জপ করাকে স্বাধ্যায় বলে। অর্থাৎ নিয়মিত স্বাধ্যায় যদি না করা হয় ধর্ম জীবনে কখনোই এগানো যায় না। এখানে স্বাধ্যায় মানে জপ করা আর নিয়মিত শাস্ত্র পাঠ করা বোঝানো হয়েছে।জপ ধ্যান করার সঙ্গে সঙ্গে যদি নিয়মিত শাস্ত্র অধ্যয়ন না করা হয়।শাস্ত্রের কিছু স্তোত্র বা স্তব যদি আবৃত্তি না করা হয়,তাহলে সেই ব্যক্তির মন কোনোদিনই নিয়ন্ত্রিত হবে না,মন সব সময়ই চঞ্চল থেকে যাবে।তাই বহিরঙ্গে সাধন অর্থাৎ যম ব্যক্তি শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয় গুলিকে নিয়ন্ত্রণে আনে।আর নিয়ম ভিতরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলিকে সুনিয়ন্ত্রিত করে।নিয়ম অনুশীলন না করলে ব্যক্তির মনের ভিতর চাঞ্চল্য তৈরি হবে।তাই স্বাধ্যায় এমন একটা জিনিস যা ব্যক্তির সবার জন্যই খুব দরকার।
v. ঈশ্বর প্রনিধান - 
ঈশ্বর প্রনিধান কথায় অর্থ হল ঈশ্বরের কাছে পুরোপুরি ব্যক্তির মনকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পন করা বা ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করা। অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে সর্ব কর্ম সমর্পন করে আত্ম সমর্পন করাকে ঈশ্বর প্রনিধান বলে। এহ্মেত্রে ঈশ্বর ছাড়া ব্যক্তির আর কিছু লাগবে না,এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ভগবানের কোনো বিগ্ৰহে পূজা অর্চনা করা আর সব সময় ঈশ্বরের উপর কায়িক, মানসিক ও বাচিক দ্বারা কৃত সব কর্মের ফল সমর্পন করা।
সুতরাং যমের পাঁচটি সাধনকে বহিরঙ্গ সাধন এবং নিয়মের পাঁচটি সাধনকে অন্তরঙ্গ সাধন বলে।যা ব্যক্তি তথা সমাজের পরস্পরের মধ্যে মেলামেশা করার সময় যে মূল্যবোধের অনুশীলন করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়।
৩. আসন -
অষ্ঠাঙ্গযোগের তৃতীয় সাধনের নাম হল আসন।
'স্থির সুখমাসনম।'
যে অবস্থায় দীর্ঘ সময় বিনা কষ্টে স্থির হয়ে বসে থাকা যায়, তাকে আসন বলে। মেরুদণ্ডকে সোজা রেখে মাথা,গ্ৰীবা,বহ্মঃস্থল উন্নত করে একাসনে ৩-৪ ঘন্টা স্থির হয়ে বসে থাকলে আসন সিদ্ধি হয়।আসনে সিদ্ধ হলে শীতোয়াদি, হ্মুধার্তৃয়াদি অনুভূত হয় না।আসন দুই প্রকার, যথা প্রথমটি ধ্যান আসন এবং দ্বিতীয়টি স্বাস্থ্য আসন।
৪. প্রাণায়াম -
অষ্ঠাঙ্গযোগের চতুর্থ সাধন হল প্রাণায়াম।
'তস্মিন সতি শ্বাসপ্রশ্বাস য়োর্গতি বিচ্ছেদ প্রাণায়াম।'
শ্বাস প্রশ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করাকে প্রাণায়াম বলে। প্রাণায়াম তিন প্রকার, যথা - পূরক(শ্বাস গ্ৰহন করা), রেচক(শ্বাস ত্যাগ করা) এবং কৃম্ভক(শরীরের মধ্যে শ্বাস বায়ুকে রুদ্ধ করা)। প্রাণায়ামের দ্বারা প্রান বায়ু ও মন স্থির হয়। প্রাণায়ামের ফলে মনের মলিনতা দূর হয়।
৫. প্রত্যাহার - 
অষ্ঠাঙ্গযোগের পঞ্চম সাধনের নাম হল প্রত্যাহার। প্রত্যাহার হল জ্ঞানেন্দ্রিয় সংযম।
'স্বস্ববিষয় সম্প্রয়োগাভাবে চিতস্য স্বরূপানুকার 
ইবেন্দ্রিয়ানাং প্রত্যাহারঃ।'
ইন্দ্রিয় গুলিকে তাদের নিজ নিজ বিষয় থেকে নিবৃত্ত করে চিত্তের অনুগামী করাকে প্রত্যাহার বলে। অর্থাৎ ইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি করা।প্রত্যাহার স্বাভাবিকভাবে ফিরে থাকা কে বোঝায়।অর্থাৎ পার্থিব  সমস্ত সুখ অনুভূতি থেকে ফিরে থাকা এবং সমস্ত রকমের পাওয়ার ইচ্ছাকে সংযত করা।
'ততঃ পরমা বশ্যতেন্দ্রিয়াণাম'
অর্থাৎ, প্রত্যাহার সাধনার ইন্দ্রিয়গণ বশীভূত হয়। বেদান্তে প্রত্যাহারকে শম,দম, উপবতি ও তিতিহ্মা বলা হয়েছে।শম ও দম মানে অন্তরিন্দ্রয় ও বহিরিন্দ্রিয়ের নিমন্ত্রণ।
অষ্ঠাঙ্গযোগের প্রথম পাঁচটি অর্থাৎ যম(অহিংসা,সত্য,অস্তেয়, ব্রক্ষ্মচর্য, অপরিগ্ৰহ), নিয়ম (শৌচ, সন্তোষ, তপস্যা, স্বাধ্যায়, ঈশ্বর প্রনিধান),আসন, প্রাণায়াম ও প্রত্যাহারকে যোগশাস্ত্রে বহিরঙ্গ সাধনা বলা হয় এবং পরের তিনটি অর্থাৎ ধারণা, ধ্যান ও সমাধিকে যোগশাস্ত্রে অন্তরঙ্গ সাধনা বলা হয়।
৬. ধারণা -
অষ্ঠাঙ্গযোগের ষষ্ঠ সাধনের নাম হল ধারণা।যখন কোনো ব্যক্তি একটি জায়গায় মনকে কেন্দ্রিত করে, তখন তার মন তার স্বভাব অনুযায়ী আস্তে শান্ত হয়ে যায়।এতে যে যোগ সাধনার খুব অগ্ৰগতি হবে এমনটা নয়। কিন্তু মন শান্ত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।মন শান্ত হলে মানসিক উদ্বেগ এবং উদ্বেগজনিত শারীরিক ব্যাধি গুলিও কমে যাবে।মনকে যদি একই জায়গায় বারো সেকেন্ডে ধরে রাখা যায়,তখন সেটাকে ধারণা বলা হয়।
'দেশবন্ধশ্চিত্তস্য ধারণা'
অর্থাৎ চিত্তকে দেশ বিদেশে বন্ধন করে রাখার নাম ধারনা। বাইরের বিষয় হতে নিবৃত্ত করে কোনো এক বিশেষ স্থানে চিত্ত বা মনকে স্থির করে রাখার নাম ধারনা।
৭. ধ্যান -
অষ্ঠাঙ্গযোগের সপ্তম সাধনের নাম হল ধ্যান। ধ্যান হল গভীর চিন্তায় মগ্ন অবস্থা।ব্যক্তির মনকে কিছু না পাওয়ার ইচ্ছাকে দৃঢ় করার জন্য ধ্যান। যখন গভীর ভাবে একটি বিষয়ে চিন্তা করা যায়।যাতে করে কোনো প্রকার বিঘ্ন না ঘটে।এই ধারণা দীর্ঘায়িত হলে তাকে ধ্যান বলে।
'তত্র প্রত্যয়ৈক তানতা ধ্যানম্'
অর্থাৎ মনকে ধোয় বস্তুকে অবিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘসময় স্থির রাখাকে ধ্যান বলে। ধ্যান গাঢ় থেকে গাঢ়তর হলে চিত্ত বৃত্তির নিরোধ হয়।যোগীর অন্তরে এক গভীর প্রশান্ত ভাব জাগ্ৰত হয়।তবে ধারণা আর ধ্যান মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে।কোনো একাগ্ৰতার গভীরতাও স্থায়িত্বের মধ্যে কোনো কোনো যোগীর মতে ১২ সেকেন্ড কোনো জিনিসের উপর মনকে ধরে রাখলে একটি ধারণা হবে, আর এই রকম বারোটা ধারণা হলে হবে ধ্যান হয়।,
৮. সমাধি -
অষ্ঠাঙ্গযোগের অষ্টম এবং শেষ সাধনের নাম হল সমাধি। সমাধি কথাটির অর্থ হল সম্মোহ।এটিই হল যোগের সর্বোচ্চ ধাপ,যেখানে প্রায় আত্মা শরীরের সঙ্গে একত্রে থাকে না। যেখানে মন পার্থিব সবকিছু থেকে দূরে অবস্থান করে,ধীরে ধীরে মানুষের মন জ্ঞানাতীত চেতনার স্তরে পৌঁছোয়।একেই সমাধি বলে।অর্থাৎ কোনো বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধ্যান করতে করতে মন ধ্যেয় বস্তুর আকার ধারণ করে। এবং ধীরে ধীরে ধ্যেয় বস্তুতে লীন হয়ে যায়। মনের এই অবস্থাকে সমাধি বলে।
'তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং স্বরূপশুনামিব সমাধিঃ'
সমাধি যে কোনো যোগের অন্তিম লহ্ম্য।এই সমাধির দুটি দিক আছে প্রথমত কত গভীর এবং দ্বিতীয়ত টানা কতহ্মন থাকা হচ্ছে।যোগ শাস্ত্রে ধারনা, ধ্যান ও সমাধিকে একত্রে সংযম বলে।যম নিয়মাদি অষ্ঠাঙ্গযোগের বাকি পাঁচটি সাধনকে সংযমের সোপান বলে।সমাধি লাভ হলে চরম জ্ঞান বা প্রজ্ঞা লাভ হয়।
• উপসংহার -
পরিশেষে একথা বলা যায় যে, পৃথিবীর সমস্ত প্রানীদের মধ্যে মানুষেই হল শ্রেষ্ঠ জীব। অধিকাংশ প্রাণী জন্মের পর মাতৃস্নেহে ও পরিচর্যার স্বল্পকাল কাটিয়েই দ্রুত স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে। কিন্তু মানব শিশুর স্বাবলম্বী হতে সময় লাগে কমপহ্মে ১০/১২ বছর এবং সাবালক/সাবালিকা হতে সময় লাগে আরও ৭/৮ বছর।তাও আবার ব্যক্তিবিশেষে এর তারতম্য ঘটে।
প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য বিশেষ সাধনার প্রয়োজন। বিরোধ শ্রেণীর উদ্ভিদ যেমন অবলম্বন ছাড়া উপরে উঠতে পারে না, তেমনি মানুষের মানুষ হতে একটি বিশেষ অবলম্বনে আবশ্যক। জীবনকে শোভন সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে সামনে একটা লক্ষ্য থাকা দরকার। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে একটি আদর্শ পথের প্রয়োজন। একটি আদর্শ পতি মানুষ হওয়ার অবলম্বন। এই পথ দেখানোর জন্য মহর্ষি পতঞ্জলির পতঞ্জল যোগদর্শন। এতে তিনি অষ্টাঙ্গিক যোগের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা শাশ্বত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
এই যুগের মূল উদ্দেশ্য মানুষের সামাজিক, মানসিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক প্রগতি এবং সর্বোপরি আপন সত্তার বিকাশ। এই যোগ যে কোনো সাধকের সাধনার পথ অনেকটা প্রশস্ত এবং কন্টক মুক্ত করে। সাধারণ মানুষের জীবন গঠনে করে আনন্দ ও প্রশান্তি লাভ করতে পারে। এই অষ্টাঙ্গিক যোগকে ব্যাখ্যা,বিশ্লেষণ ও মনন দ্বারা অসীম সম্পদের অধিকারী হওয়া সম্ভব।তাই বর্তমান যুগে এই যুগের ভূমিকা অপরিসীম।

CLICK HERE -


Assignment Questions -
General And Optional Paper
1. ঋষি পতঞ্জলির অষ্ঠাঙ্গযোগের সম্পর্কে ধারণা লেখ।||Write The Concept Of Astanga Yoga Of Sage Patanjali.
2. পতঞ্জলির যোগসূত্র অনুযায়ী অষ্টাঙ্গ যোগের ব্যাখ্যা দাও।||Explain Astanga Yoga As Mentioned in Yoga Sutra Of Patanjali.
3. রাজ যোগ বা অষ্টাঙ্গ যোগ সম্পর্কে বর্ণনা দাও।||Explain The Raja Yoga Or Astanga Yoga.

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post