স্বামী বিবেকানন্দর দৃষ্টিতে নারী শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা

স্বামী বিবেকানন্দর দৃষ্টিতে নারী শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা


 


১.ভূমিকা

"Education is not the amount of information that is put into your brain and runs riot there, undigested all your life .we must have life building man-making, character making assimilation of ideas"....................swamiji.

বর্তমান ভারতের সর্বশ্রেষ্ট দার্শনিক হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি ছিলেন একাধিক ধর্মীয় নেতা, সমাজ বিপ্লবী এবং শিহ্মাবিদ। তিনি ভারতের গৌরবময় অতীত সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভাবে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বেদান্তের বিশ্বাসী ছিলেন এবং বেদান্তে নিহিত ভারতের মহত্তম ও প্রাচীনতম শ্রেষ্ট ভাবধারার মূল্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে দিয়েছিলেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের,ধর্ম ও বিজ্ঞানের, অতীত ও বর্তমানের সমন্বয় ঘটিয়ে ছিলেন। তিনি আধুনিক পৃথিবীর মানচিত্রের হিন্দু ধর্মের একটা বিশেষ স্থান করে দিয়েছিলেন। তাঁর দলন 'যত্র জীব তত্র শিব' ভারতীর শব্দ ভান্ডারে নতুন শব্দ হল ' দরিদ্র নারায়ণ'। তিনি ছিলেন ভারতের চির যৌবনের প্রতীক। তিনি চেয়েছিলেন যুব সমাজের মধ্যে ভারতবর্ষ অতীত সম্বন্ধে গর্ববোধ এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশায় মনোভাব সঞ্চারিত করতে। তিনি চেষ্টা করেছিলেন তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বোধ কে জাগিয়ে তুলতে। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি জাতিভেদ প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি সর্বপ্রকার বিশেষ অধিকার ও সুবিধাবাদের বিরোধী ছিলেন। তিনি সর্বপ্রকার সর্বহারাদের স্বাগত জানিয়ে ছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি  শোষণহীন সমাজ গঠন। তিনি জোর দিয়েছেন মানুষ হওয়ার উপর। তাঁর মতে ব্রহ্মচর্য ,শ্রদ্ধা,আত্মপ্রত্যয় ,শিহ্মায় মূল মন্ত্র।

শিহ্মায় বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি মতামত রেখেছেন। নীচে গণশিহ্মা, নারীশিক্ষা,কারিগরী ও বৃওিশিহ্মা এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য সংহ্মেপে আলোচনা করা হল।

২.লহ্ম ও উদ্দেশ্য 

স্বামীজি ভারতীয় নারীকে জগৎমাতা রূপে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং এটিই তাঁর স্ত্রী শিক্ষা পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য। তাঁর মতে স্ত্রীশিক্ষা নারীর বন্ধনে মুক্তির কারণ হবে। এই বন্ধন বলতে স্বামীজি মানসিক ও সামাজিক উভয়বিধি বন্ধনের কথা বলেছেন। নারীকে কেবল পুঁথিগত শিক্ষার সমৃদ্ধ দেখতে তিনি চাননি।তাঁর  মতে যে আলোকিত অস্তিত্ব রয়েছে তাকে লোকচক্ষুর সামনে আনতে চেয়েছেন। নারীজাতির সমস্যার সমাধানের জন্য পুরুষদের কাছে সাহায্যের ভিক্ষা করলে চলবে না। একাজে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, মেয়েদের সমস্যা মেয়েরা নিজেরাই যেমন বুঝতে পারবে অন্যের পক্ষে তা সম্ভব হবে না।উৎপীড়ন, শৃঙ্খলা মুক্ত সুশিক্ষার বিয়ে নারীশিক্ষার শক্তিময়ী রূপটি বিকশিত করতে পারবে।

পরিব্রাজক বিবেকানন্দ সারা ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করে উপলব্ধি করেছেন যে ভারতবাসীর অর্থনৈতিক দুরবস্থা/দুর্গতির মূল কারনই হল দরিদ্রতা।দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাথমিক শর্ত হলো দারিদ্রের অভিশাপ থেকে দেশকে তো করা। স্বামীজি মনে করতেন এই দরিদ্র্যের মূল কারণই হলো শিক্ষার অভাব, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষার অভাব, বিবেকানন্দের সময়কালে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোকের অভাব ছিল। তখন দেশের বেকার থাকলেও শিক্ষিত বেকার ছিল না বললেই চলে। শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও কারও ক্রমে নিয়োগের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।তাই তিনি সাধারণ শিহ্মায় পাশাপাশি বৃওি গত ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উপর জোর দেন।  

                       ৩.মূল বিষয়বস্তু

৩.১স্বামী বিবেকানন্দের দৃষ্টিতে নারীশিক্ষার

স্বামী বিবেকানন্দ নারী শিক্ষা প্রসারে ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন, দেশের মেয়েরা নিজেরা শিক্ষিত না হলে কুসংস্কার দূর করা, সমাজ সংস্কার বা নারী কল্যাণ অসম্ভব বলে তিনি মনে করতেন। শহরে ও গ্রামে নারী শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা তিনি বলেছিলেন।

নারীশিক্ষার পরিকল্পনা

বিবেকানন্দ স্ত্রীশিক্ষায় জন্য যে পরিকল্পনা করেছিলেন তার ভিত্তি ছিল সনাতন ধর্ম, নৈতিকতা, আজীবন ব্রত পালনের মতো ঐকান্তিত নিষ্ঠা। তাঁর কাছে আদর্শ হল -সীতা চরিত্র। যিনি অগ্নির মতো পবিত্র ও ভাষ্ময়। তাঁর ভাষায়- "শিক্ষা বলিতে কতগুলি শব্দ শেখা নহে, আমাদের বৃত্তিগুলি শক্তিসমূহের বিকাশ কেই শিহ্মা বলা যেতে পারে। শিক্ষা বলিতে ব্যক্তিকে এমনভাবে গঠিত করা,যাহাতে তাহার ইচ্ছা সদ্ধিয়ে  ধাবিত হয় ও সফল হয়। এইভাবে শিহ্মিতা হইলে ভারতের কল্যাণ সাধনে সমর্থ, হৃদয় মহিয়সী নারীর অভ্যুদয় হইবে।" স্বামীজি নির্দেশিত স্ত্রীশিহ্মা ব্যবস্থা পুরুষদের শিক্ষাব্যবস্থার থেকে বেশ কিছুটা পৃথক। কারণ

ক. সমস্যা অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির

খ.গৃহস্থালির উৎকর্ষ বহু পরিমানে স্ত্রীলোকের ওপর নির্ভরশীল।

ভারতের মতো দেশের সমস্যা হল-নারীকেন্দ্রিক অবরোধ প্রথা, পরাধীনতা, পরনির্ভরশীলতা , বিদ্যাসাগর যেমন-নারী সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন আইন প্রনয়নের মাধ্যমে, যেখানে স্বামীজি তাঁর সমাধান সূএ পেয়েছিলেন-সাবলম্বী ও পারস্পারিক সহায়তায় মধ্যে দিয়ে।

৩.২নারী শিক্ষার পাঠ্যক্রম

বিবেকানন্দ বলেছেন ইচ্ছাশক্তির বিকাশ এই হলো শিক্ষার লক্ষ্য। বাক, চিন্তা, শুদ্ধতা ই হল প্রধানশিক্ষা। শুধু মাত্র পুঁথিগত বিদ্যাচর্চা করে প্রচুর তত্ত্ব ও তথ্য কণ্ঠস্থ করাই শিক্ষা নয়। এই শিক্ষা সংকীর্ণতার দ্বারা চরিত্র গঠন ও পূর্ণ মানুষ হওয়া যায়না। স্বামীজি চেয়ে ছিলেন এমন শিক্ষা যা মানুষকে দেবে লৌহপেশি ইস্পাতের মতো দৃঢ় , প্রবল অনমনীয় মানসিক শক্তি , যার ফলে সে নিখিল বিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটন করে, সকল বাধা জয় করে, জীবনের উদ্দেশ্য সাধন করতে পারবে।

ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল সবই নারীকে শিখতে হবে, নারীসমাজকে র্দুভাগ্যের দাসত্বের থেকে উদ্ধারের জন্য অন্ধকারের অতল থেকে টেনে তুলবার জন্য স্ত্রীশিহ্মায় পাঠ্যক্রমে ধর্মশাস্ত্র, সাহিত্য,  সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, বাংলা যেমন থাকবে তেমনি সর্ব সাধারন মেয়েদের জন্য রন্ধনবিদ্যা, সূচিশিল্প, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, সন্তান পরিচর্যাবিদ্যা প্রভতি থাকবে।

৩.৩স্ত্রীশিহ্মা সাম্য প্রসঙ্গে বিবেকানন্দের মতামত

সাম্যবাদী চিন্তাভাবনার একটি বিশেষ দিক হল লিঙ্গভিত্তিক সমতা সংক্রান্ত ভাবনা। তিনি নারীশক্তির জাগরনের কথা বলেছেন। তিনি নারীর সমান অধিকার,সমসুযোগ,সমমর্যাদা, স্বাধীনতা ও নারী শিক্ষা সম্প্রসারনের উপর জোর দিয়েছেন। পৃথিবীর যে কোনো উন্নত দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,সে দেশের উন্নতিতে পুরুষদের মতো মেয়েদের ও অবদান রয়েছে। তাঁর মতে, কোনো জাতি প্রগতির শেষ্ট মাপকাঠি হল  নারীদের প্রতি তার মনোভাব,স্ত্রী জাতির অভু্যদয় না হলে ভারতের কল্যাণ সম্ভব হবে না-এ সাবধান বাণী স্বামীজির । আকাশে ওড়ার জন্য পাখির কাছে যেমন দুটি ডানার প্রয়োজনীয়তা সমান ঠিক তেমনই একটি জাতির উন্নতিতে পুরুষ ও নারী দুজনেরই আবশ্যিকতা রয়েছে। তাই ভারতকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সমমর্যাদায় আনতে হলে এদেশের নারী সমাজকে অশিক্ষার অন্ধকারে থেকে মুক্ত করে পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে চলার সুযোগ করে দিতে হবে। বিনের ভারতবর্ষকে সর্বত্রোভাবে যদি সমৃদ্ধ করতে হয় তবে পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদেরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি নারীর সমানাধিকার উপর জোর দিয়েছিলেন। কারালো থেকে বঞ্চিত করে অল্প বয়সেই মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে পুরুষের পদানত রেখে রেখে দেওয়ার তিনি সহ্য করতে পারেননি।  তিনি বাল্যবিবাহ অত্যন্ত ঘৃণা করতেন, অর্থনৈতিক কারণে, বিশেষ করে পরিবারের চাপে, অল্প বয়সী মেয়েদের জীবনে যে সর্বনাশ ডেকে নিয়ে আসে স্বামীজি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের মেয়েদের শিক্ষা, স্বাধীনতা,সহ্মমতা, মর্যাদায় নারী জাতীকে দেশের উন্নত জীবনযাত্রা ও সংগতি অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন এবং এই বিষয়ে বিবেকানন্দ কে মুগ্ধ করেছিল। বিবেকানন্দ চেয়েছিলেন ভারতের নারীরাও এই শিক্ষা, সহ্মমতা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রতিষ্ঠিত হোক। বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন,"জগতের অন্যান্য দেশের মেয়েদের মতো আমাদের মেয়েরাও এ যোগ্যতা লাভের সমর্থ"এটি সম্ভবত হলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারীদের একটি অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।

যতদিন না নারীদের অবস্থা উন্নতির হয় ততদিন দেশের প্রভূত কল্যাণ অসম্ভব।"নারীগণ কে যোগ্যতা অর্জন করতেই হবে যাহাতে তাহারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মীমাংসা করিয়া লইতে পারে।"

বিবেকানন্দ বলতেন-"হৃদয়েয় শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দাও তখন তারা নিজেরাই প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলবে, নতুন সক্ষমতা অর্জন করতে নারীদের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না, যদি তাদের শিক্ষিত করে তোলা যায়।"তিনি বলেছেন,"প্রত্যেকে এমন কিছু শিখুক যাতে প্রয়োজন হলে তারা জীবিকা  অর্জন করতে পারবে।"

৩.৪ নারী শিক্ষার স্বরূপ ও শিক্ষক

নারীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠবে ভবিষ্যতে সমাজ, আদর্শ জননী হতে হবে। আদর্শ জননী ছাড়া আদর্শ সন্তান লাভ সম্ভব নয়। আবার আদর্শ সন্তান হয় দেশের আদর্শ নাগরিক। হৃদয়ের অন্তঃ স্থিত পূর্ণতা কে পরিস্ফুট করাই হলো নারী শিক্ষার শেষ কথা।এই Man Making Mission -এ আগে মানুষ হতে হবে, তারপর নারী, তারপর যোনিতে তার আত্মপ্রকাশ পরাকাষ্ঠা। দেশের কল্যাণের জন্য, প্রয়োজন বীর্যবান, তেজস্বী, বিশ্বাসী, চরিত্রবান, দায়িত্ববান মানুষের,তারা জাতিপ্রথা,কলঙ্ক, সামাজিক অন্যায়,বৈশম্যেয় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সৃষ্টি করবে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ। নারী কে হতে। হবে নির্ভীক, সাবলম্বী।তাঁর নারীত্ব, চরিত্র, শালীনতা,নম্রতা, ধৈর্য,কোমলতা ও চিন্তার স্বাধীনতার বিকাশ ঘটবে। তাঁর মতে-নারীদের শিক্ষা দিয়ে ছাড়িয়ে দাও, তখন তাহারাই প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলিবেন। তাঁর মতে-"যে শিক্ষায় চরিত্র গঠন হয়, মনের হওয়া যায়"তাকেই তিনি প্রকৃত শিক্ষা বলতেন। স্বামীজি ধর্মকে কেন্দ্র করে স্ত্রীশিহ্মায় প্রচারের কথা বলেছিলেন।তাই তিনি ব্রহ্মচারিনী তৈরি করতে চেয়েছিলেন,তারা Mass Education-এ সাহায্যে করবে। তাছাড়া শিহ্মিতা বিধবা রমনীরা ও এই দায়িত্ব নিতে পারবে। বিবেকানন্দের মানস কন্যা মিস মার্গারেট নোবেল এক আদর্শ শিহ্মিকায় ধ্যানমূর্তি দ্বারা স্ত্রীশিহ্মায় কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। স্বামীজির ইচ্ছা ছিল ছোটো বেলা থেকে মেয়েদের সাহসী,সাবলম্বী ও শিহ্মিত করে গড়ে তোলা হবে।প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে তারা ত্যাগী হয়ে সমাজের উন্নতিকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়বে অথবা সমম্বর প্রথায় মনোমতো পতি নির্বাচন করে সংসারে প্রবেশ করে।একদিকে সমাজকল্যাণে নিবেদিতা, অন্যদিকে বীর প্রসবিনী।

৩.৫ বিবেকানন্দ,কারিগরি ও বৃত্তিশিক্ষা 

৩.৫.১ভূমিকা 

বিবেকানন্দ ছিলেন চরম বাস্তববাদী। মতে মানুষের জীবনে বিশেষ দুটি দিক হলো অন্তঃ প্রকৃতি ও বহিঃ প্রকৃতি। অন্তঃপ্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরাবিদ্যা (ধর্ম/অধ্যাত্ম বিদ্যা) এবং বহিঃ প্রকৃতি ট্রেনের জন্য প্রয়োজন অপরাবিদ্যা (বিজ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা, কারিগরি শিক্ষা, বাণিজ্যবিদ্যা ইত্যাদি)। মানুষকে আধ্যাত্নিক বা অপার্থিব জীবনের সাফল্য নিয়ে আসে এবং অপরাবিদ্যা মানুষকে পার্থিব বা বাস্তব জীবনে সাফল্য লাভের দক্ষতা সৃষ্টি করে থাকে।

পরিব্রাজক বিবেকানন্দ সারা ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করে উপলব্ধি করেছিলেন যে ভারতবাসীর অর্থনৈতিক দুরবস্থার /দুর্গতির মূল কারনই হল দরিদ্রতা। তাঁর কাছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রাথমিক শর্ত হলো দরিদ্র অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করা। স্বামীজি মনে করতেন, দারিদ্র্যের মূল কারণই হলো শিক্ষার অভাব। তখন দেশের বেকার থাকলেও শিক্ষিত বেকার ছিল না বললেই চলে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও কারও কর্মের নিয়োগের অভাব হবার সম্ভাবনা ছিল না। তিনি সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিগত ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উপর জোর দেন।

বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে, দেশের যেখানে মূলধনের অভাব এবং শ্রমের প্রাচুর্য দেখা যায় সেখানে শ্রম শক্তিকে সুশিক্ষিত করে তোলার দরকার, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন যে দেশবাসীর সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার পরিচিত দরকার।

তাঁর মতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হল মানুষকে জীবন সংগ্রামের যোগ্য করে তোলা। তার জন্য চাই জীবনমুখী শিক্ষা। এক কথায় মৌলিক পট্টত্ব দক্ষতা সৃষ্টি হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য। সেই জন্য দরকার বৃত্তিমুখী শিক্ষা। হাতে কলমে কাজ না করলে, শ্রমের প্রতি মর্যাদা সম্বন্ধে অবহিত না হলে,কেউ জীবন সংগ্রামের যোগ্য হবে না। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছেন,"তোরা একটা ছুঁচ পর্যন্ত তৈরি করতে পারিস না তবুও ইংরেজদের সমালোচনা করিস। ওরে নির্বোধ আগের তাদের পায়ের কাছে বসে যন্ত্র শিল্প,ব্যবসা-বাণিজ্য, কার্যকরী বুদ্ধি শিখে নে, রাতে জীবন যুদ্ধে জিততে পারিস।

৩.৫.২সাম্য প্রসঙ্গে বিবেকানন্দের মতামত

মানবপ্রেমী বিবেকানন্দ ছিলেন সাম্যবাদী বিশ্বাসী। বিবেকানন্দ প্রথম ভারতীয় যিনি সমাজতান্ত্রিক হিসেবে নিজেকে অভিহিত করেছিলেন। আর এই সমাজতান্ত্রিক চিন্তার দার্শনিক ভিত্তি হলো অ-দ্বৈতবাদ ও বেদান্ত দর্শন। সব মানুষই তার কাছে সমান। কারণ স্বামীজি বিশ্বাস করতেন এই মানুষই অমৃতের সন্তান, সবারই পূর্ণতার অধিকারী, তার সাম্যবাদী ভাবনার মূলমন্ত্র হলো 'যত্র জীব তত্র শিব' 

বিবেকানন্দের সাম্যবাদী ভাবনা বা সমাজতন্ত্রের মূল কথাই ছিল বিশেষ অধিকার বিলোপ ও সমান অধিকার এর প্রতিষ্ঠা। স্বামীজীর বলেছিলেন-"বিশেষ সুবিধা ভোগ করিবার ধারণা মানুষের জীবনের কলঙ্ক ও স্বরূপ"। বিবেকানন্দ ছিলেন সবরকম শোষণের বিরোধী। তিনি অধিকার বাদের বিরোধিতা ছিলেন এবং সমাজ থেকে সবরকম শোষণ ও বিশেষ অধিকার দূর করতে চেয়ে ছিলেন। ধর্মীয় জীবনে যেমন তিনি অধিকার বাদের (অন্যকে বঞ্চিত করে নিজের সুবিধা ভোগ করার নামই অধিকার বাদ) বিরোধী, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে ও সব রকম বিশেষ অধিকারের তিনি বিরোধী। অধিকার বাঁধ বা বিশেষ অধিকারী হলো ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মূলনীতি। স্বামীজি এই অধিকার বাদ বিলোপ করতে চেয়ে ছিলেন। তিনি জনগণের জন্য সমান অধিকার চেয়ে ছিলেন । একশ্রেণীর বিশেষ অধিকার লাভ করে সমাজকে সমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করার সুযোগ বা সামাজিক অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা সকলের মধ্যে সমর্থন দেওয়া। সমাজের প্রতি স্বামীজীর আহবান ছিল-"অন্যায় সুবিধা চেয়েও না, সকলের জন্য সমান সুযোগ চাও, যুবক-বৃন্দ সামাজিক উন্নয়নের বাণী ছড়িয়ে দাও।"

মানবদরদি বিবেকানন্দ তিনটি তত্ত্বের প্রতিটি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন- একাত্ম বোধ ,সমত্ব বোধ ও মমত্ববোধ। সমাজতান্ত্রিক চিন্তার মূল ভিত্তি ছিল মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। তিনি মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য মেনে নিতে চাননি। তার সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল মানুষকে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করা। সমাজ থেকে সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য দূর করে সমাজকে সমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ দেওয়া ও সমাজ থেকে সব রকমের শোষণ দূর করা। দেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হবে, অস্পৃশ্যতা দূর করতে হবে, অশিক্ষার অন্ধকার দূর করতে হবে, মাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অনাহার থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে হবে, দেশে কৃষি ও শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে-এই ছিল তার আকুল আহ্বান। তিনি সমাজতান্ত্রিক ধাঁচে সমাজের গঠনের কথা বলেন । তার কল্পনায় ছিল শোষনহীন সমাজ, তিনি চেয়েছিলেন ধনী-নির্ধন, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ প্রভৃতি ভেদাভেদ দূর করে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের মানুষের ভেদাভেদ থাকবে না। অন্য তিনি অস্পৃশ্যতার অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য। তিনি অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার উপায় সমাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এই সঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন জীবনের সবক্ষেত্রেই জনসাধারণের ব্যাপক করলেন।

শ্রম জীবিরা হলো দেশের মেরুদন্ড। স্বামীজীর দরিদ্র ও শ্রমজীবীদের সমস্যা সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এদেশে শ্রমিকেরা দারিদ্র,অশিক্ষা, অবহেলা ও মর্যাদা শোষণ ও বঞ্চনার শিকার।শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত শ্রমজীবীদের শোষণ করে এক শ্রেণীর লোক ধনী হয়েছে। নতুন ভারতের শ্রমিক শোষণের অবসান ঘটবে মানুষের সমান অধিকার নিয়ে বিবেকানন্দ যা কিছু বলেছেন তাই ভারতের যুব সমাজকে দিয়েছেন প্রেরণা ও সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ।

৩.৫.৩মতামত ও পরিকাঠামো

ভারতবর্ষ হল কৃষি নির্ভর দেশ। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দেশের প্রচলিত কৃষি কাঠামো ছিল একেবারে অনগ্ৰসর, অনুন্নত কৃষি কাঠামো ও দারিদ্র্য ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত। তখন সামগ্ৰিকভাবে উৎপাদন প্রচেষ্টায় সঙ্গে শিহ্মায় কোনো যোগ ছিল না। জমির মালিকদের যেমন শিক্ষার অভাব ছিল তেমনই যারা জমিতে চাষ করতেন তাদের ও অভাব ছিল।তাই শিক্ষায় আলোকে আলোকিত করার প্রয়োজন। বিশেষ করে, কারিগরি শিক্ষায় মাধ্যমে বিজ্ঞান সম্মত চাষের প্রয়োগ কৌশল, উন্নততর উৎপাদন সম্পত্তি ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিদ্যার সঙ্গে পরিচিত করা দরকার। প্রথমে সাধারণ শিক্ষা ও পরে কারিগরি শিক্ষায় কৃষকদের শিহ্মিত করে তুলতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যা গ্ৰহন করা ও তা প্রয়োগ করার প্রস্তুতি হিসেবে ই কৃষকদের শিহ্মাব্যবস্থা করা দরকার। 

বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে যে কৃষি ব্যবস্থায়় উন্নয়ন দরকার তা তিনি স্বীকার করতেন। বিদেশি কৃষি বিজ্ঞান সম্পর্কে স্বামীজি গভীর আগ্রহ ছিল। বিদেশের কৃষির উন্নতি দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রযুক্তিবিদ্যার যথাযথ প্রয়োজন ভারতের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বামীজি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। জন্য তিনি দেশের যুবকদের আহ্বান করেছিলেন, গ্ৰামে গ্রামে গরিব চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে এবং তাদের শিক্ষিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে। কৃষকদের শিক্ষার জন্য কর্মশালা আয়োজনের কথা স্বামীজি বলেছেন, স্বামীজি চেয়ে ছিলেন দেশের কৃষকদের ও বিশেষ করে ছাত্ররা বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে কৃষি ব্যাপারে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং উন্নত ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হয়ে দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে তৎপর হবে। তিনি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করার কথা বলেছেন এবং ওই কেন্দ্রে গুলোতে কৃষিবিদদের সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করানোর কথা  বলেছেন। বস্তুত পক্ষে, নিজের এই ভাবনার প্রভাব বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশন,বেলুড় মঠ, নরেন্দ্রপুর প্রভৃতি কেন্দ্রগুলিতে কৃষিকাজ, ডিয়ারি ফার্মিং, পোল্ট্রি ফার্মিং রূপুর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে।

কৃষিতে নয় শিল্পের উপর জোর দেয়, তাতে দেশের দারিদ্রতা দূর করা যায়। ফিজি দেশের দ্রুত শিল্পায়ন চেয়ে ছিলেন, বিশেষ করে তিনি শিল্পায়ন বলতে বৃহৎ শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কে বুঝাতেন। গ্রামীণ কারিগরি দের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য তিনি জোর দিয়েছেন, তবে তার মূল ঝোঁক ছিল যন্ত্রশিল্প তথা বৃহৎ শিল্পের উপর, যেমন দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে যন্ত্র শিল্পের সম্প্রসারণ ও আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার প্রয়োগ এর উপর নির্ভরশীল স্বামীজি সেই বিষয়ের অবহিত ছিলেন। দ্রুত শিল্পায়নের জাপানের সাফল্য দেখেই তিনি যন্ত্র শিল্পের আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আমেরিকা ভ্রমণকালে তিনি সেখানকার যন্ত্র শিল্পের সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করেছেন।

বিবেকানন্দ একথা স্বীকার করেছেন যে ভারতের শিল্পায়ন এর অন্যতম উপায় হল বৈদেশিক সহায়তা। ভারতের পাশ্চাত্য থেকে কারিগরি সাহায্য নেবে এবং তার বিপক্ষেই বিদেশে তথা ইউরোপকে দেবে আধ্যাত্মিকতা, বিদেশে থেকে যন্ত্রাদি ভারতে আনা এবং বিদেশের ধর্ম প্রচারক পাঠানো সম্পর্কে স্বামীজি গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি বলেছেন,"আমেরিকানরা ভারতে ধর্ম শিক্ষাদানের জন্য মিশনারি না পাঠিয়ে জনগণকে শিল্প শিক্ষা দিতে পারে, এমন লোক পাঠানোই ভালো, বিজ্ঞান চর্চা সম্প্রসারণ ও দেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। আমি যে উপলব্ধি করেছিলেন যে যন্ত্র শিল্পের মূল ভিত্তি বিজ্ঞান চর্চা, ছাড়া কারিগরি বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশুদ্ধ বিজ্ঞান চর্চার অগ্রগতি অপরিহার্য। তাই স্বামীজি বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের অগ্রগতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শুধু বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নয় প্রয়োগ বিজ্ঞানের সম্প্রসারণের ও তার আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড।

স্বামীজি ভারতের শিল্পায়নে আগ্রহী ছিলেন, শিল্পায়ন শিল্প স্থাপনে সম্পর্কে স্বামীর সঙ্গে চিঠির মাধ্যমে জামসেদজী টাটা সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। ভারতে হাজারীবাগে বিরাট জমি নিয়ে একটি বড় কারখানা ও শিল্প বিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা বিবেকানন্দ ছিল। ভারতবর্ষে শিল্প বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা যায় কিনা তার চেষ্টাও করেছিলেন। সন্ন্যাসীদের মাধ্যমে শিল্প, শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার ব্যাপারটি বিবেকানন্দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি দেশের শিল্পায়নের জন্য সন্ন্যাসীদের সংগঠিত করতে চেয়ে ছিলেন যাতে সন্ন্যাসীরা জনগণকে তাদের শিল্পের জ্ঞানের ফল দান করতে পারেন। ভারতবাসীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

স্বামীজী বলেছেন,"আমাদের দরকার কারিগরি শিক্ষা এবং অনুরূপ বস্তু যা ইন্ডাস্ট্রি উন্নতিতে সাহায্য করবে,"প্রতিটি শহরে, প্রতিটি গ্রামে একটি করে মঠ করতে হবে। এখানে একজন সুশিক্ষিত সাধু মোহস্ত হয়ে থাকবেন। সেই বিভাগ গুলি পরিচালনা করবেন এক একজন বিশেষজ্ঞ সন্ন্যাসী। বাস্তবিকপক্ষে, রামকৃষ্ণ মিশন,বেলুড় মঠ ও নরেন্দ্রপুর মিশন পরিচালিত শিল্প বিদ্যাপীঠ মূলত বিবেকানন্দ এই চিন্তা ধারা জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।

৪.উপসংহার

নিঃসন্দেহে বিবেকানন্দের শিক্ষাভাবনা ছিল বৈপ্লবিক। তিনি ভারতের চিরাচরিত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। গুরুকুল আদলে শিক্ষা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি ইতিবাচক ও গঠনমূলক শিক্ষার কথা বলেছেন। তিনি শিক্ষার চরিত্রগঠন এর উপর জোর দিয়েছেন এবং ধর্মকে আশ্রয় করে শিক্ষা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তিনি পরা ও অপরা বিদ্যার সামঞ্জস্যের কথা বলেছেন। তিনি সমাজে বিপ্লবের জন্য গণশিক্ষা ও নারীশিক্ষার সম্প্রসারণ এর ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি চলিত ভাষায় জনশিক্ষা প্রচার ও প্রসারের কথা বলেছেন।তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দরিদ্রতা দূরীকরণের জন্য বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা, কারিগরিশিক্ষা ও গবেষণা, কৃষিবিদ্যাচর্চা ও কৃষি গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন ।বস্তুতপক্ষে, তাঁর মধ্যে কোন রক্ষনশীলতা ছিল না। তিনি পাশ্চাত্যকে ভালো জিনিস বর্জন করার পক্ষপাতি ছিলেন না। তাঁর শিক্ষা ভাবনায় আজকের দিনেও অর্থবহ ও প্রাসঙ্গিক।














Post a Comment (0)
Previous Post Next Post