OBSERVE THE VARIOUS AGE GROUP CHILDREN (EARLY CHILDHOOD LATER CHILDHOOD ADOLESCENTS) IN VARIOUS SITUATIONS LIKE IN THE CLASSROOM||শ্রেনীকহ্মের মতো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের ( শৈশব,বাল্যকাল,কৈশোরকাল) পর্যবেক্ষণ|| BENGALI VERSION|| ENGLISH VERSION
![]() |
Observe The Various Age Group Children (Early childhood, Later Childhood, Adolescent) In Various Situation Like In The Classroom |
BENGALI VERSION -
শ্রেণীকক্ষের মতো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের (শৈশব,বাল্যকাল, কৈশোরকাল) পর্যবেক্ষণ
মানব জীবন হলো এক গতিমান কিংবা ক্রম পরিবর্তনকারী প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াটি ধারাবাহিকভাবে নিরবিচ্ছিন্ন ছিন্নতা সবসময় একই ভাবে চলে না।যা প্রতিনিয়ত একটি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী আমাদের জীবনে চাকাটিকে ঘুরিয়ে দেয়। মানুষের বিকাশ জনিত গতি-প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন। এই পরিবর্তন আসে বুদ্ধি থেকে আবার বুদ্ধির দ্বারা বিকাশ সঞ্চারিত হয় অর্থাৎ বুদ্ধি ও বিকাশ দুই একে অপরের প্রতি খুব ভালোভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিকাশ একাধিক ভাবে বোঝায় যে একটি ক্রমশ পরিবর্তন যা নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে আসে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বিকাশ মানুষের জীবনে মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয় কিংবা ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। বুদ্ধি যেমন সহজ সরল প্রক্রিয়া তেমনি বিকাশ কিন্তু কোনো জটিল প্রক্রিয়া নয়। নিয়মিত ও সংগঠিত সম্পন্ন পরিবর্তনের ধারা প্রগতি লাভ করতে থাকে। যার ফলে ব্যক্তিত্বের মধ্যে কাঠামো ভাবনা শিখর ক্ষমতা আচরণ বিশ্বাস নামক পরিবর্তন পরিবর্তিত হয়।মানুষের বিকাশ বংশগতি ও পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়।এই বৃদ্ধি ও বিকাশের ভারসাম্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়,বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম ভাবে তাদের আচরণ প্রকাশ করবে বিভিন্ন আচরণগত যে সমস্ত বৈষম্য দেখা যায়।তার একটি মাত্র কারণে বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য কাজেই ব্যক্তিজীবনকে বুঝতে হলে তার বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন দিক বিষয়ে ধারাকে অনুশীলন করতে হবে। তাই অনুশীলনী সুবিধার জন্য মনোবিদ ও শিক্ষাবিদ বয়সের ক্রমানুসারে ব্যক্তিজীবনকে সাধারণত কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন।এই ভাগগুলিকে স্তর বা স্টেজ বলা হয়।বিভিন্ন স্তরের বিকাশের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ধরনের,এক স্তর থেকে অন্য স্তরের মানুষ যখন পৌঁছায় তখন ওই পরিবর্তন হঠাৎ আসেনা এই পরিবর্তন আসে ধীরে ধীরে।মানুষের জীবনে বিকাশের স্তর বিভিন্ন রকমের যথা শৈশব কাল, বাল্যকাল, কৈশোর কাল ও প্রাপ্তবয়স্ক কাল।প্রত্যেকটি স্তরের বৈশিষ্ট্য অবশ্যই অপরের থেকে আলাদা।এখানে আমরা শৈশবকাল,বাল্যকাল,কৈশোর কাল এই তিনটি স্তরের বিকাশের নিয়ে আলোচনা করব।
2. উদ্দেশ্যাবলী -
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে জীবন বিকাশ তিনটি স্তরকে নেওয়া হলো। যথা - ক. শৈশব কাল,খ. বাল্যকাল , গ. কৈশোরে কাল। ব্যক্তির বিভিন্ন স্তরে জীবন বিকাশের স্তর প্রথমে শৈশব কাল ( প্রাথমিক শৈশবকাল ও প্রান্তীয় শৈশবকাল ) ,বাল্যকাল (প্রাথমিক বাল্যকাল ও প্রান্তীয় বাল্যকাল ),কৈশোরকাল (প্রাথমিক কৈশোরকাল ও প্রান্তীয় কৈশোরকাল ) দ্বারা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেমন শ্রেণিকক্ষে,খেলাধুলার মাঠে,গৃহ, পিতা-মাতা,বন্ধু এবং ভাই বোনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করাকালীন পর্যবেক্ষণ করে তাদের পারিবারিক, সামাজিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যাবলী লিপিবদ্ধ করেন নামক এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্যাবলি খুঁজে পাওয়া যায়। সেগুলি হল -
- বিভিন্ন বয়স স্তরের শিশুদের(শৈশব কাল, বাল্যকাল,কৈশোরকাল) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যেমন-শ্রেণিকক্ষে,খেলার মাঠে,গৃহ,পিতা-মাতা,বন্ধু এবং ভাই বোনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করাকালীন পর্যবেক্ষণ করে তাদের পারিবারিক,সামাজিক, প্রাহ্মোভিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যাবলী লিপিবদ্ধ করেন নামক এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হল।শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর ভিত্তি করে পর্যবেক্ষণ করা।
- প্রকল্পটির অপর এক উদ্দেশ্য হল শিশুদের স্বাতন্ত্র আত্মসিদ্ধিকরণে তারা যেন পরনির্ভর ও অসহায় হয়ে না পড়ে,তার জন্য লহ্ম করা।
- শিশুদের যথার্থ দৈহিক বৃদ্ধির উপর স্বতন্ত্র যত্ন দান করা।
- শিশুরা শৈশব অবস্থাতে স্বাভাবিক ক্ষমতা বাড়ছে কিনা;তার আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষণ করায় এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
- প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হল সকল স্তরকে ভাষা বিস্তৃতি সম্পর্কে সঠিক নির্ধারণ হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা।
- যৌন চেতনা সম্বন্ধে জটিল তথ্য প্রচার থেকে সরল তথ্য প্রচারে আদান-প্রদান করা।
- প্রত্যেকটি স্তরের মধ্যে মানসিক বৈশিষ্ট্যর কতটা বিস্তৃতি করন হচ্ছে সেটির লক্ষ্যকরন করা।
- প্রাক্ষোভিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গুলিকে স্বাতন্ত্র লক্ষ করাই হলো এই প্রকল্পটির অপর একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
- শিশুরা সঠিক জ্ঞান ধারণা নিয়ে বিকাশ করতে পারছে কিনা তার উপর ভিত্তি করা।
- আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মস্বীকৃতি উপলব্ধি করা এই প্রকল্পটির একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।
- শিশুদের ওপর বয়ঃসন্ধিকালের পরিবেশের স্থিতিকরণ হচ্ছে কিনা তার উপর লক্ষ্য করা এর উদ্দেশ্য
- বিভিন্ন বয়সস্তরের শিশরা সামাজিক পরিবেশ থেকে দিনকে দিন বিচ্ছিন্নতা লাভ করছে কিনা তার জন্য গুরুত্বদান করা।
- ছোট শিশুরা যে খুব কম বয়স থেকে চিন্তা করতে পারে তা আমরা বিশ্বাস করি না।কিন্তু তারা কিছু প্রতিরূপের উপর পারে। তারা আদৌ কোনো চিন্তনের মগ্ন কিনা তার জন্য বিশেষ উদ্দেশ্য স্থাপন করা।
- শিশুদের মধ্যে যদি কোনরকম অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণের অবনমন সংগতি দেখার পদ্ধতি দেখা যায়,সেই অসঙ্গতি গুলি চিহ্নিত করণ করাই হল এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।
- শিশুরা যাতে সঠিক রীতি নীতি,ন্যায় দ্বারা লালিত পালিত হয় এটাই হল এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
- সঠিক অভ্যাস অভ্যাসিত যেন হয়, এটি প্রকল্পের আদর্শমূলক উদ্দেশ্য।
- কল্পনার জগৎ দিয়ে শিশুরা যাতে অধিক মানসিক এবং বৌদ্ধিক বিকাশের জ্ঞান লাভ করতে পারে, এটাই হল মূল উদ্দেশ্য প্রকল্পটির।
- শিশুদের যাতে স্বাধীন সত্তার অধিকার দেওয়া হয়। এই স্বাধীন প্রদান করা হলো উদ্দেশ্য।
- বাল্য অবস্থায় তে শিশুরা নতুন কে কেন্দ্র করে যাতে কিছু করতে পারে এই অবস্থা যাতে সচেষ্ট হয় এবং সক্ষম করে তোলা হলো এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
3. মূল বিষয়বস্তু -
3.1. জীবন বিকাশ স্তর সমূহ -
মনোবিদ গন ব্যক্তি জীবনের বিকাশকে অনুশীলন করার জন্য বয়স ও বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিক মানুষের স্বাধীন কালকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করেছেন। মনোবিদ Earnest Jones এর মতে এই বিকাশের স্তর কে ৪টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে এবং মনোবিদ J. Pikunas মতে ১০টি ভাগে ভাগ করেছেন।কিন্তু এখানে কেবল মাত্র Jones নির্ধারিত বিকাশের স্তরগুলিকে নিম্নলিখিত ভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে -
1.শৈশবকাল(Infancy)[জন্মকাল - ৫ বছর পর্যন্ত]
A.প্রাথমিক শৈশবকাল(জন্ম - ৩বছর পর্যন্ত)
B.প্রান্তীয় শৈশবকাল (৩ - ৫ বছর পর্যন্ত)
2.বাল্যকাল(Childhood)[৬ - ১২ বছর পর্যন্ত]
A.প্রাথমিক বাল্যকাল (৬ - ৮ বছর পর্যন্ত)
B.প্রান্তীয় বাল্যকাল (৯ - ১২ বছর পর্যন্ত)
3.শৈশবকাল(Adolescence)[১২ - ১৮ বছর পর্যন্ত]
A.প্রাথমিক শৈশবকাল (১২ - ১৪ বছর )
B.প্রান্তীয় শৈশবকাল (১৫ - ১৮ বছর পর্যন্ত)
4.প্রাপ্তবয়স্ককাল (Adulthood)[18 - মৃত্যু পর্যন্ত]
আমরা সমীক্ষায় যথাসম্ভব সঠিক পর্যবেক্ষণ করে শৈশবকাল,বাল্যকাল,কৈশোরকাল ও প্রাপ্তবয়স্ক কাল গুলি উল্লেখ করলাম।
3.2. বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ -
এই সমীক্ষায় পরিবেশের বিভিন্ন দিক গুলি কে শৈশব কাল,বাল্যকাল,কৈশোরকাল বৈশিষ্ট্যগুলি সাথে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে উপস্থাপিত করছি।যে সমস্ত পরিবেশ গুলি পর্যবেক্ষণ করতে হয়েছে সেগুলি বাস্তব সম্মত এবং পরিবেশগত নিম্নরূপ -
- বিদ্যালয় শ্রেণিকক্ষ
- খেলার মাঠ
- বাড়িতে পিতা-মাতা ও অন্যান্য অভিভাবকদের সঙ্গে
- অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা
3.3. বিকাশের বিভিন্ন দিক -
এই সমীক্ষায় শিশুর মে সমস্ত বিকাশের দিকগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলি নিন্মরুপ -
- দৈহিক বিকাশের - দৈহিক বিকাশ বলতে শিশুর দৈহিক ওজন বা উচ্চতা বৃদ্ধিকে বোঝায়।
- ভাষাগত বিকাশ- ভাষাগত বিকাশ বলতে বোঝায় শিশুর ভাষার প্রতি জ্ঞান,স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের জ্ঞান, শব্দভাণ্ডার, স্পষ্টভাবে শব্দের উচ্চারণ এবং বাক্য গঠন করার ক্ষমতা।
- মানসিক বিকাশ - মানসিক বিকাশ বলতে শিশুর অঙ্গ-পত্যঙ্গের ব্যবহার বা দৈহিক কার্যাবলী।
- সামাজিক বিকাশ - সামাজিক বিকাশ বলতে গৃহ ও পরিবেশের তথা সমাজের সাথে মানিয়ে নেওয়াকে বোঝায়।
- বৌদ্ধিক বিকাশ - শিশুর বোধশক্তি অর্থাৎ ভালো- খারাপ, সুখ-দুঃখ,হাসি-কানার বোধের বিকাশকে বলে বৌদ্ধিক বিকাশ।
- প্রাক্ষোভিক বিকাশ - প্রাক্ষোভিক বিকাশ বলতে বোঝায় প্রক্ষেপ আবেগ প্রভৃতির পরিবর্তনের রূপকে।
- নৈতিক বিকাশ - নৈতিক বিকাশ বলতে বোঝায় শিশুর কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে উচিত-অনুচিত বিচার করার ক্ষমতাকে।
3.4. জীবন বিকাশের স্তর সমূহ -
A. শৈশবকাল (Infancy) [জন্ম - ৫ বছর] -
এই স্তরে বয়স সীমা জন্ম থেকে ৫ বছরের। Jones শৈশবকাল কে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন 1. প্রাথমিক শৈশবকাল (জন্ম - ২ বছর পর্যন্ত ) 2. প্রান্তীয় শৈশবকাল (২ - ৫ বছর পর্যন্ত)। এই সময় শিশুদের দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত হয়। মানসিক,ভাষাগত,প্রাক্ষোভিক,সামাজিক বিকাশ কিছুটা ঘটে তবে নৈতিক বিকাশ এই সময় একেবারে ঘটেনা। শৈশবে বিভিন্ন ধরনের বিকাশ হল -
অ. দৈহিক বিকাশ -
শিশুর জন্মের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈহিক পরিবর্তনের মধ্য দয়ে তার বিকাশ সম্পন্ন হয়।যেমন -
- ওজনগত পরিবর্তন - জন্মের মুহূর্তে শিশুর ওজন সাধারণত তিন কেজি হয় । এই ওজন পাঁচ মাস পর্যন্ত মাসের মধ্যে বেড়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬ কেজি হয়। এক বছরের মধ্যে বেড়ে তা তিনগুণ বা ৯ কেজি এবং দুই বছরের মধ্যে চারগুণ মানে ১২ কেজি হয়। পাঁচ বছরে তা বেড়ে 43 পাউন্ড এর কাছাকাছি হয়।
- উচ্চতাগত পরিবর্তন - শিশুর উচ্চতা তার বংশগতির উপর নির্ভর করে। তবে শিশুর জন্মের সময় যে উচ্চতায় থাকে, তা প্রথম বছর ৫০% বেশি হয় এবং দুই বছরে তা বেড়ে ৭৫% হয় এবং তিন থেকে পাঁচ বছরে শিশুদের উচ্চতা স্বাভাবিকভাবে 38 ইঞ্চি থেকে 43 ইঞ্চি প্রায় বেড়ে যায় ।
- মাংসপেশি বৃদ্ধি - এই স্তরে শিশুর ওজন ও উচ্চতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশিরও দ্রুত বৃদ্ধি হয় ।এই স্তরে দুই ধরনের বৃদ্ধি দেখা যায়। i.Cephalocaudal tendency এই ধরনের বৃদ্ধিতে মাংসপেশি বৃদ্ধি মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত হয়। ii.Proximodistal tendency এই ধরনের বৃদ্ধি দেহের মধ্যবর্তী স্থান থেকে মাংসপেশির বিকাশের শরীরের শেষ পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
- সম্পন্ন কার্যাবলী - এই স্তরের প্রথমে শিশু কেবল মাথা নাড়তে, Rooting এবং Sucking করতে পারে। এই স্তরে শেষে শিশু বসতে, দাঁড়াতে এবং হাঁটতে শেখে।
- অন্যান্য ক্রিয়া - শিশুর দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু হাঁটতে, দ্রুত হাঁটতে, দ্রুত দৌড়াতে পারে। লাফিয়ে বল ধরতে, শিশুর পায়ের সঞ্চালন করে খেলনা গাড়ি চালাতে পারে বা ট্রাই সাইকেল চালাতে পারে।
আ. ভাষাগত বিকাশ -
শৈশবে জন্ম থেকে ৫ বছর শিশুর ভাষার বিকাশ বিভিন্ন স্তরে হয়ে থাকে -
- শিশুর জন্মের পর দুই মাস কাছাকাছি সময়ে এক ধরনের স্বরবর্ণের মতো শব্দ করতে শেখে। একে Cooing বলা হয়।
- চার মাস বয়সে কাছাকাছি সময় শিশুর স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ মিশ্রণের এক ধরনের শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে। যেমন ব্যা-ব্যা-ব্যা-ব্যা, ন্যা-ন্যা-ন্যা-ন্যা ইত্যাদি। একে Babling বলা হয়।
- ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে শিশু শব্দ প্রথম উচ্চারণ করতে পারে। শিশু একটি শব্দ ও তার সাথে ইশারা দিয়ে তার মনের ভাব বোঝাতে পারে। যাকে Holophrase বলে।
- ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সে শিশু স্পষ্টভাবে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। এই বয়সে শিশুর শব্দভান্ডার পঞ্চাশের বেশি হয়।
- ১৮ - ২৪ মাস বয়সে শিশুর শব্দ ভাণ্ডার বৃদ্ধি পেয়ে ২০০র কাছাকাছি পৌঁছায় এবং শিশু দুটি শব্দ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। একে Telegraphic speech বলা হয়।
- ২ - ৩ বছর বয়সে শিশুর ভাষাগত বিকাশ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়।শিশুর শব্দভাণ্ডার বাড়তে থাকে এবং অতীতকালের সম্বন্ধীয় বাক্য ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
- ৩ -৪ বছর বয়সে শিশু তিন-চারটি শব্দাংশের সমন্বয় যুক্ত শব্দ বা যুক্ত বাক্য তৈরি করতে পারে, প্রশ্নসূচক বাক্য এবং বাক্য প্রায়োগিক দিকের ধারনা গঠন করতে পারে।
ই. মানসিক বিকাশ -
শৈশবে শিশুর বিভিন্ন ধরনের মানসিক বিকাশের স্তর দেখা যায়। Paiget-র মতে, এই স্তরের বিকাশমূলক দিক গুলি হল -
- প্রতিবর্ত ক্রিয়া - জন্মের সময় শিশুর কিছু ইন্দ্রিয় সক্রিয় থাকে এবং কিছু দৈহিক কার্যাবলী সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। যেমন আঁকড়ে ধরা,চোষা ইত্যাদি।এই স্তরের শেষের দিকে স্কিমার বিকাশ ঘটে।
- পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রিয়া - শৈশবে শিশুদের কোনো একটি আচরণ একইভাবে বারে বারে করতে দেখা যায়,যাকে পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রিয়া বলা হয়। এই ক্রিয়ায় কয়েক ধরনের হয় - প্রথম শ্রেণীর(১ - ৪ মাস) - এক থেকে চার মাস শিশুর নিজের শরীরের কোন অংশ সঙ্গে এই পুনরাবৃত্তি করে থাকে।যেমন - আঙুল চোষা দ্বিতীয় শ্রেণীর(8 - ৮ মাস) - শিশুর বাইরের কোন বস্তু নিয়ে পুনরাবৃত্তি মূলক আচরণ করে। যেমন- ঝুনঝুনি বাজানো তৃতীয় শ্রেণীর(১২ -১৮ মাস) - শিশুর চেষ্টা করে নতুন কোনো করতে এবং তার ফলাফল অন্য কাজেও একই হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে । যেমন - শিশুর হাত থেকে বাটি পড়ে গেলে,তাতে শব্দ হলে শিশু অন্য বস্তুকে ফেলার চেষ্টা করে শব্দ হচ্ছে কিনা দেখার চেষ্টা করে। চতুর্থ শ্রেণীর(২ - ৫ বছর) - এই স্তরে শিশুরা কোন কিছু পর্যবেক্ষণ করে কিছু সময় পরে সেটিকে অনুকরণ করে।
- বস্তু স্থায়িত্ব সম্পন্ধে ধারণা - শিশু জন্মের পর থেকে কোনো কিছুর স্থায়ী অস্তিত্ব আছে তা বুঝতে পারে না।তবে এই স্তরের শেষে শিশুর বস্তু স্থায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়।একে বস্তু স্থায়িত্ব সম্বন্ধে ধারণা বলে।
- কল্পনাছলে খেলা - এই স্তরে শিশুরা সারাদিনের কার্যকলাপকে কল্পনা করে খেলাচ্ছলে সেটিকে অভিনয় করে।একে বলে কল্পনাছলে খেলা।
ঈ. সামাজিক বিকাশ -
শৈশবে শিশুর মধ্যে কিছুটা সামাজিক বিকাশ ঘটতে দেখা যায়।যেমন, এরিকসনের মতানুসারে -
- শৈশবে (০ - ১ বছর পর্যন্ত) শিশুর মধ্যে এক ধরনের বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। শিশুর উপযুক্ত যত্ন,পরিচর্যা ও ভালোবাসা পেলে তার মধ্যে বিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়, যা তাকে পরিবারের বাইরের পরিবেশে ও সামঞ্জস্য বিধানে সাহায্য করে।নতুবা শিশুর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয় তার ফলে সামাজিক অসঙ্গতি হতে দেখা যায়।
- ১ - ২ বছরের শিশুর মধ্যে স্বাধীনতা ও লজ্জার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।এই স্তরে শিশু নিজের মতো করে পরিবেশ পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারলে সে স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। তা না হলে তার মধ্যে সন্দেহ বা লজ্জার অনুভূতি তৈরি হয় এবং শিশুর স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
- ৩ - ৫ বছরের বয়সের শিশুর মধ্যে সামাজিক প্রেক্ষাপটের উৎসাহ ও অপরাধবোধের দ্বন্দ্ব দেখা যায়।এই স্তরে শিশুরা উৎসাহিত হয়ে কাজ শুরু করে এবং সঠিকভাবে সাফল্য পেলে তাদের উৎসাহ বেড়ে যায়। অন্যদিকে যথাযথভাবে কাজ শুরু বা শেষ করতে না পারলে তারা অপরাধবোধে ভোগে এবং সামাজিকতা দক্ষতা অর্জিত হয় না।
উ. প্রাক্ষোভিক বিকাশ -
শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে জীবন বিকাশের প্রত্যেকটি স্তরের প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে।Watson এর মতে -
- মানুষ জন্মের সময় কেবল তিন ধরনের প্রক্ষোভ- রাগ,ভয়,ভালোবাসা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
- এই স্তরের শেষ পর্যায়ে আরো কিছু প্রহ্মোভ যেমন- হিংসা,ঘৃণা,আনন্দ,খুশি ইত্যাদির প্রকাশ ঘটে।
- ২ - ৫ বছর বয়সে শিশুর মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের মতো প্রায় সব ধরনের প্রক্ষোভের সৃষ্টি হয় কিন্তু সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা তৈরি হয় না।
B.বাল্যকাল (Childhood)[৬ - ১২ বছর পর্যন্ত] -
এই স্তরের সম্পূর্ণ বয়স সীমা ৬ -১২ বছর পর্যন্ত। ৬ - ৮ বছর সময় কালকে প্রাথমিক বাল্যকাল এবং ৯ - ১২ বছর পর্যন্ত সময়কে উত্তর বাল্যকাল বলা হয়। এই স্তরে যে সমস্ত বিকাশগত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তা হল -
অ. দৈহিক বৈশিষ্ট্য -
বাল্যকালে শিশুর দৈহিক বিকাশ শৈশবের মতো দ্রুত ঘটে না।এই স্তরে দৈহিক যে সমস্ত পরিবর্তন হয় তা হল-
- ওজনগত পরিবর্তন - প্রাথমিক বাল্যকাল ৬ - ৮ বছর এই সময় শিশুর ওজন প্রায় 43 পাউন্ড এর কাছাকাছি বা তার একটু বেশি থাকে। প্রান্তীয় বাল্যকাল ৯ - ১২ বছর এই স্তরে শিশুর বৃদ্ধি খুব ধীরে ধীরে সম্পন্ন হয়, বৃদ্ধি কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।
- উচ্চতাগত পরিবর্তন - এই স্তরে শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত ধীর গতি সম্পন্ন হয়।এই স্তরের শিশুরা যে সমস্ত অঙ্গসঞ্চালনমূলক কাজ করতে সক্ষম হয় তা হল - বয়স অঙ্গসঞ্চালনমূলক দক্ষতা ৬ - ৮ বছর - 1.এই বয়সে দৌড়ের গতি আরো বৃদ্ধি পায়,প্রতি সেকেন্ডে 12 পা ফেলতে পারে।2.দ্রুত লাফাতে এবং লাফাতে লাফাতে পারে 3.সমস্ত শরীরকে উপরে ছুটতে পারে। 4.বাই সাইকেল চালাতে পারে। ৯ - ১২ বছর - 1.এই সময় দৌড়ের গতি আরো বৃদ্ধি পায় 2.ফুটবল ক্রিকেট এই সমস্ত খেলা খেলতে পারে। 3.নিজের ইচ্ছা অনুসারে শরীরকে সঞ্চালন করতে পারে।
- অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন - ৬ - ১২ বছর পর্যন্ত সময় শিশুর দীর্ঘপেশীগুলো দ্রুত ও সুষমভাবে বৃদ্ধি পায়।কিছু জৈবিক পরিবর্তন যেমন,- শ্বাস-প্রশ্বাস ও হূদযন্ত্রের গতি হ্রাস পেতে থাকে।
আ. ভাষাগত বিকাশ -
বাল্যকালে শিশুর বিকাশগত পরিবর্তন হয় -
- ৬ - ৮ বছর বয়সে শব্দ ভান্ডারে দ্রুত হয়। ব্যাকরণ ব্যবহারের ক্ষমতা ও কথোপকথনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- ৯ - ১২ বছর শিশুর শব্দের সংজ্ঞা নিরুপণ, সমার্থক শব্দ,বিপরীত শব্দ ব্যবহার ও কথোপকথনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
ই. মানসিক বিকাশ -
বাল্যকালের বয়স তরে পরিসীমা ৬-১২ বছর। যদিও Piaget তার মানসিক বিকাশের তত্ত্বের এই স্তরকে ২ - ৭ বছরের পর্যন্ত প্রাথমিক বাল্যকাল এবং ৭ - ১১ বছরকে প্রান্তীয় বাল্যকাল বলে বলেছেন।Earnest Jones বাল্যকালকে ৬ - ১২ বছরের পর্যন্ত ধরেছেন এবং ৬ - ৮ বছর প্রাথমিক বাল্যকাল এবং ৯ - ১২ বছর প্রান্তীয় বাল্যকাল বলেছেন।এই স্তরের মানসিক বিকাশ গত বৈশিষ্ট্য গলি হল -
- সাংকেতিক চিন্তন - এই স্তরে শিশু সংকেতের ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
- বিলম্বিত অনুকরণ - এই স্তরে শিশুরা কোন কিছু পর্যবেক্ষণ করে কিছু সময় পরে সেটিকে অনুকরণ করে।
- আত্মকেন্দ্রিক চিন্তন - এই স্তরে শিশুরা অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝতে পারে না। তাদের নিজস্ব ভাবনা অনুযায়ী কোন বিষয়কে যেভাবে দেখছে বা বুঝতে পারছে অন্যরাও সেভাবেই ভাবছে বা দেখছে বলে মনে করে। এই ধরনের চিন্তনকেই আত্মকেন্দ্রিক চিন্তন বলা হয়।
- সর্বপ্রাণবাদ - প্রাথমিক বাল্যকালের শিশুর জীব ও জড়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না,সব কিছুরই প্রাণ রয়েছে বলে ভেবে নেয়।এই ধরনের চিন্তনকে সর্বপ্রাণবাদ বলা হয়।
- একমুখী চিন্তন - এই স্তরে শিশুরা কোন বিষয়কে দুটি দিক থেকে ভাবতে বা চিন্তা করতে পারে না। একে বলে একমুখী চিন্তন।
- শ্রেণিকরণ ক্ষমতা - প্রান্তীয় বাল্যকালে শিশুর বিভিন্ন বস্তু বা বিষয়কে পৃথক করতে পারে ও নির্দিষ্ট শ্রেণীতে ভাগ করতে পারে ।
- কর্মপর্যায় ক্ষমতা - এই বয়সে শিশুর ওজন বা উচ্চতার ভিত্তিতে বস্তুকে ছোট থেকে বড়ো, বড়ো থেকে ছোট, ভারী থেকে হালকা বা হালকা থেকে ভারী এই পর্যায়ে সাজাতে পারে।
- আরোহী চিন্তন - শিশু একই ধরনের অনেক বিষয়বস্তুকে দেখে সামান্যীকরণে বা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে। এই ক্ষমতাকে আরোহী চিন্তন ক্ষমতা বলে।
- মূলত চিন্তন - এইরকম শিশুরা ইন্দ্রিয়গ্ৰাহ্য বিষয়ের ওপরেই ভাবশক্তি করতে পারে। যেমন - টেবিলে ধারণা,স্কুলের ধারণা প্রভৃতি।
ঈ. সামাজিক বিকাশ -
এরিকসনের বিবৃতি অনুযায়ী বাল্যকালের শিশুর সামাজিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য হলো -
- ৬ - ৮ বছর বয়সের শিশুর মধ্যে সামাজিক প্রেক্ষাপটে উৎসাহ ও অপরাধবোধের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। এই স্তরে শিশুরা উৎসাহিত হয়ে কাজ শুরু করে এবং সঠিকভাবে সাফল্য পেলে তাদের উৎসাহ বেড়ে যায়। অন্যদিকে যথার্থভাবে কাজ শুরু বা শেষ করতে না পারলে তারা অপরাধবোধে ভোগে ও সামাজিকতা দহ্মতা অর্জিত হয় না।
- ৯ - ১২ বছর বয়সের শিশুর মধ্যে উদ্যান ও হীনমন্যতা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রথাগত শিক্ষার আওতায় প্রবেশ করে নিজেরাই কাজ করতে ও শিখতে হয়।ফলে এদের কর্মক্ষমতা সৃষ্টি হয়। নতুবা তাদের মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি হয় ও কর্মবিমুখ হয়।
- ৬ - ৮ বছর বয়সের শিশুর মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের মতো প্রায় সব ধরনের প্রক্ষোভের সৃষ্টি হয় কিন্তু সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা তৈরি হয় না।
- ৮ - ১২ বছর বয়সে শিশু অন্যদের প্রক্ষোভকে বুঝতে সহ্মম হয় এবং প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়।
Kohlberg এর তত্ত্বানুসারে -
- ৬ - ৮ বছরের শিশুর নিকট ভালো-মন্দের বিচার হয় শাস্তি ও পুরস্কারের দ্বারা। যে কাজ করলে শাস্তি হয় সে কাজ করা উচিত নয় - এটাই তার নীতিবোধ।
- প্রান্তীয় বাল্যকালে শিশু নিজের স্বার্থের ভিত্তিতেই যে কোনো কাজকে ঠিক ভুল বিচার করলে তার নিজের স্বার্থ পরিতৃপ্তি হয়।এটিই তার নীতিবোধ।
মানব জীবনের প্রতিটি স্তরের মতো কৈশোর কালের বিকাশও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোর বলতে 'সময় থেকে শুরু করে একজন ব্যক্তি যখন বয়স্কদের ভূমিকা ও কর্তব্য বুঝতে শেখে ততদিন পর্যন্ত সময়কাল হল কৈশোর'। এই স্তরে ১২ -১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর কৈশোরকাল বলে। ১২ - ১৪ বছর বয়সকে প্রাথমিক কৈশোরকাল এবং ১৫ - ১৮ বছর বয়সকে প্রান্তীয় কৈশোর কাল বলা হয়। কৈশোর কালের বিভিন্ন বিকাশের বৈশিষ্ট্য হলো -
অ. দৈহিক বিকাশ -
বাল্যকালে তুলনায় এই স্তরে দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত গতিতে হয়। দৈহিক বিকাশের লহ্মণ প্রথমে মেয়েদের শুরু হয়। কিন্তু এই স্তরের শেষে ছেলেদের দৈহিক বিকাশ মেয়েদের তুলনায় দ্রুত হারে ঘটে থাকে। এই স্তর শুরু হয় যৌবনারম্ভ বা বয়ঃসন্ধিহ্মন দিয়ে। ফলে ছেলে মেয়ে উভয়েরই যৌনাঙ্গসমূহের গঠনগত দিক থেকে পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। এছাড়াও এই বয়সকালে তাদের মধ্যে যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটে, যা এই স্তরের শেষে পরিনতি লাভ করে।এই স্তরের অন্যান্য দৈহিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য গুলি হলো -
- উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি দ্রুত হারে হয়।
- শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই সময় তারা শক্তি প্রদর্শন করতে চায়।
- কর্মোদ্যম বেশি হয় বলে তারা সক্রিয়ভাবে কোন কাজ করতে চায়।
- কোন কাজে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
- শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ তন্ত্র প্রায় পরিণত হয়।
দৈহিক বিকাশের মতো এই স্তরে মানসিক বিকাশও অতি দ্রুত হয়। আমরা যদি পিয়াজেঁর প্রজ্ঞার বিকাশে তত্ত্ব পর্যালোচনা করি তবে এই স্তরের প্রজ্ঞার বিকাশের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখতে পারি -
- বিমূর্ত চিন্তন - যে সমস্ত বিষয় মূর্ত নয় অর্থাৎ পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্ধারা প্রত্যহ্মণযোগ্য নয়,সেই সকল বিষয়ের উপর চিন্তন করতে পারার ক্ষমতাকে বলে বিমূর্ত চিন্তন।যেমন - স্বাধীনতা,ভালোবাসা ইত্যাদি।এই স্তরে ব্যক্তিরা এই ধরনের চিন্তন করতে সক্ষম হয়।
- অবরোহী চিন্তন - আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য দু ধরনের চিন্তন করে থাকি। একটি আরোহী এবং অপরটি অবরোহী। প্রথমটি হল বিশেষ বা নির্দিষ্ট কোন থেকে সাধারণ এবং অপরটি হলো সাধারণ থেকে নির্দিষ্ট পৌঁছানো।এই স্তরে দ্বিতীয় চিন্তনটি কার্যকরী হয় অর্থাৎ কিশোর বা কিশোরীরা অবরোহী চিন্তন করতে পারে।আরোহী চিন্তনের ক্ষমতা পূর্বেই ব্যক্তি করতে সক্ষম হয়।
- সমস্যা সমাধানের চিন্তন - এই স্তরে ব্যক্তি নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে পারে।প্রথমে যে সমস্যা সমাধানের জন্য অনুমতি সিদ্ধান্ত বা প্রাক্প্রকল্প গ্রহণ করে,পরে সেটিকে সে পরখ বা যাচাই করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও সমস্যার সমাধান করে।যদিও এটি প্রমাণিত সমস্ত কিশোর-কিশোরীরা এই সমস্যা সমাধান চিন্তন করতে সক্ষম হয় না।
- প্রতিফলিত চিন্তন - এই স্তরে ব্যক্তি নিজের চিন্তন বা যুক্তিকরণকে মূল্যায়ন করতে পারে।এই ধরনের চিন্তনকে বলে প্রতিফলিত চিন্তন।
- বন্ধুত্ব স্থাপন - এই বয়সে ব্যক্তির বন্ধুত্ব তৈরির প্রবণতা দেখা যায়। কৈশোরকালে ব্যক্তির সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্য হতে ভালোবাসে।
- বন্ধুদলের প্রভাব বৃদ্ধি - এই স্তরে ছেলেমেয়েদের আত্মসংকট সৃষ্টি হয় বলে তারা বন্ধুদলের সঙ্গে বেশি সময় কাটায় এবং ওই দলের প্রতি তাদের আনুগত্য বৃদ্ধি পায়।
- সামাজিক স্বীকৃতি লাভের প্রচেষ্টা - এই বয়সে ব্যক্তি সমাজের স্বীকৃতি প্রত্যাশা করে।সেজন্য তারা বিদ্যালয়ের কোনো অনুষ্ঠান,সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করতে চায়।
- প্রাক্ষোভিক অস্থায়িত্ব - কৈশোরের প্রথমে ব্যক্তির প্রক্ষোভ সংবেদনশীল হয় এবং সে সহজেই দুঃখিত হয় অর্থাৎ তার প্রক্ষোভের স্থায়িত্ব থাকে না।
- বিমূর্ত প্রহ্মোভ - এই বয়সে ব্যক্তি কোনো বিমূর্ত ধারণাকে কেন্দ্র করে প্রহ্মোভের বহিঃপ্রকাশ করে।
- প্রাহ্মোভিক পরিণমন - কৈশোরের শেষ স্তরে ব্যক্তির প্রহ্মোভের নিয়ন্ত্রণ আসে অর্থাৎ যে সুশৃঙ্খলভাবে প্রহ্মোভমূলক আচরণ করতে পারে।
- প্রকল্পটি থেকে আমি বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা সম্পর্কে জানতে পারি।
- প্রকল্পটি থেকে যে সমস্ত তথ্য পায় সেই সমস্ত তথ্যগুলোকে আগামী ভবিষ্যতের কাজে লাগাতে সাহায্য করবে।
- বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করার ফলে শিক্ষককে শিক্ষাদান পদ্ধতির কৌতুহলী প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কে তথ্য জানতে পারি।
- বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবচরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মূলক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়।
- বিভিন্ন বয়সের স্তরের ভিত্তিতে শিশুদের মধ্যে দৈহিক, সামাজিক, মানসিক, ভাষাগত, বৌদ্ধিক ও প্রাক্ষোভিক, বিকাশ সম্পর্কিত সমস্যা ও সমাধান মূলক তথ্য জানতে পারি।
- বিভিন্ন বয়স স্তরের অসংগতি মূলক আচরণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা জানতে পারি।
6. সিদ্ধান্ত গ্রহণ -
পর্যবেক্ষণে দ্বারা প্রাপ্ত তথ্য গুলি বিশ্লেষণ করে দেখলাম সকল দৈহিক, ভাষাগত, মানসিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক ও প্রাহ্মোভিক বিকাশ সমান নয় ও সেই স্তর অনুযায়ী স্বাভাবিক নয়। কারো বিকাশে তুলনায় কম,কারো বিকাশে তুলনায় বেশি,কারো স্বাভাবিক। এই বৈশিষ্ট্য গুলি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারি কীভাবে এই অসামঞ্জস্য দূর করা যাবে।
অর্থাৎ, যেহুতু গ্রাম্য এলাকা থেকে দল নির্বাচন করা হয়েছে তাই আর্থিক অবস্থার জন্য অনেকেই সেই পরিবেশে পায় নি। দৈহিক বিকাশ যাদের অসামঞ্জস্য তাদের পারিবারিক দুরবস্থার জন্য যথেষ্ট পুষ্টি পায় নি। গ্রামটিতে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুব কম। তাই নৈতিক ব্যবহারে ও পড়াশোনার আগ্রহ কয়েকটি শিশুর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। অনেকে সামাজিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে গুরুজনদের প্রতি সম্মানবোধ নেই। তার কারন শিক্ষার অভাব।
এছাড়াও সাংস্কৃতিক দিকেও অনেকেই পিছিয়ে আছে গ্রাম্য এলাকাতে। এই সমস্ত দিক সেই রকম কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেই। তাই যতটা সম্ভব এই গ্রাম্য এলাকাতে দ্রুত পুনরুদ্ধার করার প্রয়োজন। প্রতিটি গ্রামে গ্রামীণ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তার পাশাপাশি কর্মকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক দিকে বিকাশের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই সমস্ত শিশুদের মধ্যে সমবিকাশ ঘটবে।
7. সীমাবদ্ধতা -
প্রকল্পটির বাস্তবে করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছে। প্রকল্প কি সাফল্যকরণ করতে গিয়ে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি হয়েছে। যেমন -
- প্রকল্পটি করতে গিয়ে সর্বপ্রথম যে সমস্যাটি উপলব্ধি করা হয়েছে সেটি হল সঠিক ভাবে যোগাযোগ স্থাপন না থাকা। যা প্রকল্পটি একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- একটি বিদ্যালয়ের করা হয়েছে তাই সার্বজনীনভাবে তথ্য সংগ্রহ করা যায় নি।
- সঠিক পরিকাঠামো না থাকার ফলে সঠিক মতো তথ্য সংগ্রহ করা যায় নি।
- উন্নততর পরি পার্শিক পরিবেশ না থাকার প্রকল্পটির সমস্যা।
- সময়ের অভাবে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।
8. নিজস্ব মতামত -
প্রকল্পটি করতে গিয়ে আমি বিভিন্ন বয়স স্তর ( শৈশবকাল -প্রাথমিক শৈশবকাল, প্রান্তীয় শৈশবকাল, বাল্যকাল - প্রাথমিক বাল্যকাল ও প্রান্তীয় বাল্যকাল, কৈশোর কাল- প্রাথমিক কৈশোরকাল ও প্রান্তীয় কৈশোর কাল) সম্পর্কে ধারণা পেলাম। এই তিন ধরনের জীবন স্তরের মাধ্যমিক শিশুরা পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করে। বিকাশ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দ্ধারা। বিভিন্ন বয়স স্তরের শিশুদের দৈহিক, মানসিক,সামাজিক, ভাষাগত, বৌদ্ধিক, প্রাক্ষোভিক,নৈতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা পেলাম। একটি শিশু পরিপূর্ণ বিকাশ এই সকল বৈশিষ্ট্য দ্ধারা একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির তে পরিণত হতে পারে। আমরা বলতে পারি শিশুর বিভিন্ন বয়স স্তরের মধ্য দিয়েই বুদ্ধি ও বিকাশ সম্ভব হয়, সম্পর্কে ধারণা লাভ করলাম।
9. উপসংহার -
ব্যক্তি জীবনে পরিপূর্ণতা ও সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় হয় শিক্ষা। এই শিক্ষা ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ মানুষের পরিণত করতে সহায়তা করে। শিক্ষাই জীবনকে সুন্দর ও সাবলীল করে তোলে। মনে রাখতে হবে ব্যক্তির বিকাশের উপর নির্ভর করলেও একমাত্র শিক্ষাই ব্যক্তিকে সুন্দর পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের সম্বন্ধে আমরা যে সাধারণ ধারণা পাই তা মনোবিজ্ঞানীদের মতানুসারে বাস্তবসম্মত। সুতরাং সব কিছু বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় যে, মানুষের জীবনে বিকাশের স্তর কয়েকটি সীমাবদ্ধ স্তরের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত হয়।