Social Factors That Affect Growth And Development.

Social Factors That Affect Growth And Development.

Social Factors That affect Growth And Development||বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর প্রভাব বিস্তারকারী সামাজিক উপাদান

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION 

Social Factors That Affect Growth And Development
Social Factors That Affect Growth And Development

(*** ENGLISH VERSION  FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর প্রভাব বিস্তারকারী সামাজিক উপাদান

BENGALI VERSION -

• ভূমিকা -

একটি ব্যক্তির জীবনব্যাপী পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় হল বৃদ্ধি ও বিকাশ।ব্যক্তির বিকাশের ফলে উৎকর্ষতার সঙ্গে কর্ম সম্পাদনের সক্ষম হয় আর বৃদ্ধির ফলেই বিকাশ ঘটে। কারণ পরিমাণগত পরিবর্তনকে বাদ দিয়ে গুণগত পরিবর্তনকে যেমন বিচার করা যায় না তেমনই গুণগত পরিবর্তনকে বাদ দিয়ে পরিমাণগত পরিবর্তনকে তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায় না।ব্যক্তির বিকাশের কয়েকটি স্তর রয়েছে।একটি স্তর অন্যটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।তাই ব্যক্তির বৃদ্ধি ও বিকাশকে প্রভাবিত করে এমন উপাদানের সংখ্যা অনেক।বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর সামাজিক উপাদানও অনেক রকম হতে পারে।যেমন - দারিদ্র্য, সুযোগের অভাব,বঞ্চনা,পারিবারিক অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা,নিম্নমানের পারিপার্শ্বিক, অনুপযুক্ত গৃহপরিবেশ উল্লেখযোগ্য।ব্যক্তির বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর বিস্তারকারী এই উপাদান গুলির নিম্নে আলোচনা করা হল।-

১. দারিদ্র্য - 

অধ্যাপক আহুজা তাঁর 'Social Problems in India' শীর্ষক গ্রন্থের তিন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে দারিদ্র্য বিষয়টি আলোচনা করেছেন - 

  • বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ।
  • জীবন ধারণের জন্য নূন্যতম প্রয়োজনীয় বিষয় - খাদ্য, পোশাক,শিক্ষা,স্বাস্থ্য ইত্যাদি।
  • নির্দিষ্ট সমাজভিত্তিক জীবন যাত্রার মান ও বৈষম্য।

ভারতে দারিদ্র্য সূচক হিসেবে প্রত্যাহিক ন্যূনতম ক্যালোরির অভাবকে ধরা হয়।[নূন্যতম প্রয়োজন 2400/Capita/Day in rural and 2100/Capita/Day in urban (Bagchi & Roychoudhury,1989)] অর্থাৎ দারিদ্র্য শুধু একটি বিচ্ছিন্ন অবস্থা নয়।ব্যক্তির জীবনের প্রতিক্ষেত্রেই দারিদ্র্য প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ফলে মানুষ অধিকার ও ক্ষমতা অর্জনের থেকে বঞ্চিত হয়।ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্র্য চিহ্নিত করা আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।ডঃ অমর্ত্য সেন দারিদ্র্য প্রসঙ্গে বলেছেন - "Poverty is capability deprivation."

        ব্যক্তির বুদ্ধি ও বিকাশের সঙ্গে দারিদ্র্যের সম্পর্ক উভয়মুখী।অর্থাৎ শিশুর সুষম বৃদ্ধি ও বিকাশের সঙ্গে একটি বিরাট বাধা হল দারিদ্র্য।শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর দারিদ্র্যের প্রভাব নিম্নরূপ -

  1. দরিদ্র পরিবারের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের অন্তরায়। 
  2. দারিদ্র্যের প্রধান প্রভাব পড়ে শিশুদের দৈহিক সুষম বৃদ্ধির উপর।দরিদ্র পরিবারের শিশুর সঠিক পুষ্টিকর খাবার পায় না।ফলে দারিদ্র্য পরিবারের বেশির ভাগ শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে।
  3. অপুষ্টিজনিত রোগের ফলে শিশুর মধ্যে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে ওঠে না।
  4. প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন বয়সে শিশুকে যে প্রতিবেধক দেওয়া প্রয়োজন দরিদ্র পরিবার অনেক সময় তারও ব্যবস্থা করতে পাবে না।অর্থাৎ দারিদ্রতা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের উপর প্রত্যক্ষভাবে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।
  5. দরিদ্র পরিবারের বেশির ভাগ পিতা-মাতা উভয়েই উপার্জনের জন্য নিযুক্ত থাকেন।তারা শিশুর ন্যূনতম পরিচর্যা করারও সময় পান না।ফলে তাদের শিশুরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করে এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে যা শিশুর মানসিক, সামাজিক ও প্রাহ্মোভিক  বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। 
  6. হীনমন্যতা, হতাশা,আত্মবিশ্বাসের অভাব, হ্মমতা হীনতা  ইত্যাদি শিশুর মধ্যে বাসা বাঁধে। 
  7. আত্মনিয়ন্ত্রণ,মনোযোগ, কৌতুহল, ভাষা, প্রেষনা, পেশির ব্যবহার ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা তৈরি হয়।ফলে সুস্থ সামাজিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
  8. দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অনেক সময় তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।চুরি করা, মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা যায়। 
  9. বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্ৰহনের জন্য যে মানসিক প্রস্তুতি শিশুর প্রয়োজন তা থেকেও তারা বঞ্চিত হয়।
  10. দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বোধের অভাব থেকে নানাপ্রকার অপরাধমূলক আচরণ করে থাকে।

                 সুতরাং,দারিদ্রতা শিশুর দৈহিক,মানসিক, প্রাক্ষোভিক,সামাজিক ইত্যাদি নানা দিকে বিকাশের উপরই নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।তবে পরিবারে শৃঙ্খলা থাকলে অভাববোধ বা প্রাচুর্য কোনটাই শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় না।

২. সুযোগের অভাব - 

প্রত্যেকটি শিশুর জন্ম সূত্রে কিছু ক্ষমতা প্রবণতা ইত্যাদি প্রাথমিক মানসিক উপাদান নিয়ে জন্মায়।বেঁচে থাকার জন্য রাষ্ট্র,সমাজ বা পরিবার থেকে অনেক কিছু আশা করে যা তার স্বাভাবিক অধিকার।যেমন - মানুষের কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে(খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা) যা সে স্বাভাবিকভাবেই পেরে থাকে বা পাওয়া উচিত। কিন্তু যখন সে এগুলি পায় না বা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাকে বলে সুযোগের অভাব বা Lack of Opportunity. এই অধিকার গুলি সংবিধান স্বীকৃত।এগুলি ছাড়াও ব্যক্তির আরও কিছু চাহিদা থাকে সেগুলির/যে চাহিদা গুলি অপূরনে বা সুযোগের অভাবে ব্যক্তির বুদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়। বিভিন্ন ধরনের সুযোগের অভাবে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ কীভাবে ব্যাহত হয় তা নীচে আলোচনা করা হল। -

• আর্থিক সুবিধার অভাব -

2013 সালে Planning Commission এর রিপোর্টে, আমাদের দেশে 67% লোক দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে এবং প্রায় 220 মিলিয়ন 12 বছর বয়সের নীচের শিশুদের অর্থের উপার্জনে খনিতে,শিল্প কলকারখানায়, কৃষি জমিতে,লোকের বাড়িতে, দোকানে এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হয়।ফলে এই সমস্ত শিশুদের দৈহিক,মানসিক,সামাজিক,প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি সকল দিকেই বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

• পুষ্টির অভাব -

দরিদ্র পরিবারের মানুষ তাদের শিশুকে যথাযথ পুষ্টিকর খাবার দিতে পারে না।ফলে শিশুর দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত রোগ,যেমন - রিকেট, রক্তাল্পতা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।পুষ্টির অভাবে শিশুর বৌদ্ধিক বিকাশ ও ব্যাহত হয়। আবার শৈশবেই অর্থ উপার্জনের জন্য কাজে নিযুক্ত হওয়ায় খেলাধুলা বা শরীরচর্চা সুযোগ পায় না।ফলে দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

• কর্মসংস্থানের অভাব -

W.H.O. এর রিপোর্ট অনুসারে পৃথিবীর 15 মিলিয়ন শিশু অনাথ,যাদের বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা নেই। 10 মিলিয়নের বেশি শিশু বিভিন্ন কারণে নিশ্চিত বাসস্থানের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।যেমন - অনেক শিশু দাসত্বের শিক্ষার,কারো আবার ভগ্ন গৃহ পরিবেশে( মা বাবার বিচ্ছেদের কারণে)।এই সমস্ত শিশুদের মানসিক, সামাজিক ও প্রাহ্মোভিক বিকাশে বাধাগ্ৰস্থ হয়। 

• শিক্ষার অভাব - 

দরিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী শিশুদের যথাযথ শিক্ষালাভ সম্ভব হয় না।ফলে তারা যেমন স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে জানে না এবং বিভিন্ন দৈহিক সমস্যার সম্মুখীন হয়,তেমনি শিক্ষার অভাবে শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশও ব্যাহত হয়।

• যত্ন ও ভালবাসার অভাব - 

শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য যথাযথ লালন পালন যত্ন ও ভালবাসার দরকার।কিন্তু পিতা-মাতা মৃত্যু বা বিবাহবিচ্ছেদের কারনে অনেক শিশু পিতা-মাতার উভয়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়।দরিদ্র পরিবারের শিশুর পিতা-মাতা উভয়েই উপার্জনে নিযুক্ত থাকে বলে শিশুর সঠিক যত্ন করতে পারে না।ফলে এই সব শিশুদের মানসিক,সামাজিক, প্রাক্ষোভিক বিকাশ ব্যাহত হয়। 

• সুস্থ পরিবেশের অভাব - 

সুস্থ গৃহ পরিবেশে ও পারিপার্শ্বিক স্বাভাবিক পরিবেশের অভাবেও শিশুর বিকাশ ব্যাহত হয়।শিশুর বাড়ির পরিবেশ সংকীর্ণ,স্যাঁতসেঁতে বা অস্বাস্থ্যকর হলে শিশুর দৈহিক বিকাশের উপর কুপ্রভাব পড়তে পারে।আবার শিশুর চারপাশের পরিবেশ ও যদি অস্বাস্থ্যকর বা অনুকূল না হয় তাহলেও শিশুর সমস্ত রকম বুদ্ধি ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি হয়।যে সমস্ত শিশু বস্তি পরিবেশে বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে অনেক সময় শিশুর মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দেখা যায়।

• গ্রহণ যোগ্যতার অভাব -

সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও শিশুর বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে।যে সমস্ত বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের বা খেলার দলের বন্ধুদের গ্রহণযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত হয় তাদের বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।অনেক সময়ই তাদেরকে হতাশাগ্রস্ত ও অন্তর্মুখী হতে দেখা যায়। এদের সঠিক সামাজিক করন হয় না। 

• সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুযোগ অভাব -

অন্তর্মুখী শিশুরা পরিবারের বাইরের কারোর সঙ্গে সহজে মেলামেশা করতে পারে না।সংস্কৃতিক আদান-প্রদানের সুযোগ না থাকায় এইসব শিশুদের সামাজিক বিকাশের ভীষণভাবে ব্যাহত হয়।

৩. বঞ্চনা -

'Deprivation' বা বঞ্চনার আভিধানিক অর্থ হল - "The state of not having something that people need." অর্থাৎ বঞ্চনা হল মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে না পাওয়ায় অবস্থা।শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাভাবিক বিষয়গুলি থেকে কোনো না কোনো কারণে তার দূরত্ব তৈরি হওয়া। সেগুলি এই কারণে শিশুদের বঞ্চিত শিশু বলা যেতে পারে।

             সাধারণত,বঞ্চিত শিশু বা Deprived child বলতে যাদের দৈহিক,মানসিক,সামাজিক ও প্রাহ্মোভিক চাহিদা অনুসারে যথাযথ পিতা-মাতার লালন পালন, নিয়ন্ত্রণ,শিহ্মা ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ থেকে বঞ্চিত বা না পাওয়া তাদেরকে বোঝানো হয়।Jack Fincher এর মতে,"Deprivation the act on process of removing or the condition resulting from removal of some thing normally present and usually essential for mental or physical well-being."

শিশু বৃদ্ধি ও বিকাশের বঞ্চনার প্রভাব -

  • দৈহিক বিকাশ - 

শিশু যদি তার পরিবারের কাছ থেকে সঠিক পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে তার দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয়,অপুষ্টিহীনতার ভোগে এবং নানারকম দৈহিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।শিশু উপযুক্ত খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হলেও তার দৈহিক বিকাশ ব্যাহত হয়। 

  • মানসিক বিকাশ - 

শিশুর মা বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভালোবাসা ও মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হলে তাহলে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং সে ধীরে ধীরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।তার কল্পনাশক্তি,সৃজনশীলতা,কৌতুহল প্রবৃত্তি চিন্তন ক্ষমতা, মনোযোগ প্রভৃতি প্রবৃত্তি নষ্ট হয়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

  • প্রাক্ষোভিক বিকাশ -

শিশু খাদ্য,নিরাপত্তা ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর মধ্যে রাগ ও ভয় প্রবল মাত্রায় বিকশিত হয়। ভালোবাসার প্রহ্মোভটি অবলুপ্ত হয়ে যায়। তার ব্যক্তিত্বের বিকাশও সঠিকভাবে হয় না।স্বাধীন চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হয় না।অনেক শিশুর ক্ষেত্রে মানসিক অসুস্থতাও দেখা দেয়।

  • সামাজিক বিকাশে - 

শিশু পরিবারের মা বাবা এবং অন্য সদস্যদের মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হলে শিশুর সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। শিশু অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে,সবার সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না এবং অনেক সময় সমাজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা তৈরি হয়,যার জন্য অনেক শিশু কৈশোরে অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। 

৪. পারিবারিক অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা -

পারিবারিক বিশৃঙ্খলা বলতে বোঝায় পরিবারের সুস্থ পরিবেশের অভাবকে।বর্তমানে যন্ত্র সভ্যতার যান্ত্রিকতার মানুষের জীবনযাত্রা জটিল হয়ে গিয়েছে এবং পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কগুলির মধ্যেও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।যার ফলস্বরুপ পারিবারিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। পারিবারিক অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু কারণ হল - 

  1. বিবাহ বিচ্ছেদ।
  2. পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু।
  3. পরিবারের সদস্যদের উশৃঙ্খল জীবনযাত্রা।
  4. জীবিকার জন্য পরিবারের সদস্যদের দূরবর্তী স্থানে বাস।
  5. সদস্যদের সম্পর্কের অবনতি জনিত কারণে পারিবারিক অস্থিরতা।
  6. পরিবারের সদস্যদের পরিবার সম্পর্কে উদাসীনতা।
  7. দুশ্চরিত্র মদ্যপ পিতা বা স্বার্থপর মার জন্য যে পরিবারে শান্তি নেই।

এই সমস্ত পরিবারের শিশুর সার্বিক বিকাশ বিভিন্নভাবে ব্যাহত হয়।ভালোবাসার অভাব,কঠোর শৃঙ্খলা, অবহেলা বা প্রবল শৃঙ্খলাহীনতা ইত্যাদি নানা কারণে শিশুর মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়।তারা প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।আবেগের অস্থিরতার ফলে তারা অনেক সময় অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। 

শিশু বা শিক্ষার্থীদের বিকাশের হ্মেত্রে পারিবারিক বিশৃঙ্খলতার প্রভাব শিশুর বিকাশের সব স্তরই(অর্থাৎ শৈশব,বাল্য ও কৈশোর) পারিবারিক বিশৃঙ্খলা কুপ্রভাব ফেলে যার ফলাফল প্রসারী হয়।যেমন - 

• দৈহিক বিকাশের -

  1. বিশৃঙ্খলা পূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে প্রায়শই শিশুর প্রতি অবহেলা বা উদাসীনতা নজরে পড়ে।ফলে শিশু সঠিক যত্নের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে।
  2. অনেক সময় পারিবারিক অশান্ত পরিবেশে শিশুর মনের উপর এতটাই তীব্র প্রভাব ফেলে,যে তাদের শিশুদের ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।

• মানসিক বিকাশের - 

  1. বিশৃঙ্খল গৃহ পরিবেশে শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ হয় না।তাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা বা বিচলতা, অমনোযোগী ইত্যাদি দেখা যায়। 
  2. অনেক সময় শিশুর মধ্যে হতাশা, উদ্বিগ্নতা,ভয়,  নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি প্রসার ঘটতে দেখা যায়।
  3. পারিবারিক বিশৃঙ্খলার কারণে শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ সুষ্ঠুভাবে ঘটতে পারে না।অনেক সময় মানসিক বিকার গ্রস্থতা দেখা যায়।

• প্রাক্ষোভিক বিকাশের - 

  1. পারিবারিক অস্থির পরিস্থিতির কারণে শিশুর প্রাহ্মোভিক বিকাশ সঠিক ভাবে হয় না।ফলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রহ্মোভগত অসাম্য দেখা যায়। 
  2. প্রায়শই শিশুর মধ্যে ঋনাত্মক প্রহ্মোভের বিকাশ ঘটতে দেখা যায়।যেমন - অতিরিক্ত রাগ,ক্ষোভ, হিংস্রতা ইত্যাদি।

• সামাজিক বিকাশের - 

  1. পারিবারিক অস্থিরতার কারণে শিশু তার বাইরের সামাজিক পরিবেশে সঠিকভাবে সামঞ্জস্য বিধান করতে সক্ষম হয় না। 
  2. অনেক সময় শিশুর মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে অনিহা দেখা যায়।ফলে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কম হয়।

• শিক্ষাক্ষেত্রে প্রভাব -

  1. পারিবারিক বিশৃঙ্খলা পূর্ণ শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষাগত পারদর্শিতা অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়।
  2. এই ধরণের শিশুরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায়শই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অহ্মম হয়। 
  3. পারিবারিক অশান্তি পরিস্থিতির কারণে অনেক সময়ই শিশুর Home task শেষ হয় না বা বাড়িতে পড়াশোনা ঠিকভাবে হয় না।ফলে এরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিকটও গ্রহণযোগ্যতা কম পায়।
  4. এই ধরনের শিশুরা তাদের বন্ধুদলের সঙ্গে সঠিকভাবে সামঞ্জস্য বিধানে অক্ষম হয়।ফলে এখানেও এদের গ্রহণযোগ্যতা কম হয়।

            অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বিশৃঙ্খলা পূর্ণ গৃহ পরিবেশ শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে কুপ্রভাব ফেলে।এবং শিশুরা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। 

৫. নিম্নমানের প্রতিবেশিত্ব -

যে পরিবেশে শিশু বড়ো হয়,তার চারিদিকে পরিবেশ ও প্রতিবেশী শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।এক্ষেত্রে সাধারণত প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক,সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবেশকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।শিশুর বিকাশের উপর প্রভাব বিস্তারকারী এই জাতীয় উপাদান গুলি হল -

  1. অর্থনৈতিক অনুন্নয়ন। 
  2. ক্রটিপূর্ণ সামাজিক সংগঠন।
  3. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গত অবক্ষয়।
  4. অশিহ্মার প্রভাব।
  5. সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ।
  6. প্রাকৃতিক দুর্যোগ। 
  7. প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব।
  8. সমবয়সী বন্ধু।
  9. বয়স্ক অভিজ্ঞ মানুষের অনভিজ্ঞতা।
  10. সামাজিক অবস্থা। 
  11. দেশ বিভাগ বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে স্থানচ্যুতি ঘটলে তার প্রভাব। 

         অর্থাৎ উল্লিখিত কারণগুলির জন্য শিশুর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিম্নমানে বা প্রতিকূল হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রতিকূলতার কারণে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।এই উপাদানগুলি যেভাবে শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে তা নীচে আলোচনা করা হল -

  • দূষিত প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশুর বিকাশ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে।শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়,পিতা-মাতা দরিদ্রতা বৃদ্ধি পায়,ফলে নিরহ্মরতা বৃদ্ধি পায়।
  • সমবয়সি বন্ধুদের প্রভাবে শিশুরা অনেক সময় চুরি করা, মিথ্যা কথা বলা, ড্রাগ খাওয়া, মাদকদ্রব্য সেবনের মতো অপরাধমূলক কাজে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
  • যুদ্ধ,অন্তর্বিল্পব, মহামারী, প্রাকৃতিক বিপর্যয়,অর্থনৈতিক অবনতি, কুশিক্ষা,বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রভৃতি কারণে সমাজজীবনে বিপর্যস্ত হলে শিশুর নৈতিক চরিত্র নষ্ট হয় এবং অপরাধ প্রবণতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • দেশবিভাগ,প্রাকৃতিক বিপর্যয়,দুর্ভিক্ষ,মহামারী ইত্যাদি কারণে স্থানচ্যুতি ঘটলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়।তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।
  • সমাজ পরিবর্তনে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সমাজের এবং জীবনের প্রচলিত  মূল্যবোধের প্রতি মানুষ আস্থা হারায়।এই সময়ে প্রাপ্তবয়স্কদের আচরণ সংগতির যে অভাবে দেখা যায়।তার দ্বারা শিশুরা বিভ্রান্ত হয়।আস্থাহীন মূল্যবোধের ফলে শিশুরা অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে।
  • প্রতিবেশীদের নীতিগত আদর্শ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি না থাকলে সমাজ গঠনের মৌলিক যোগ সূত্রাবলি  দুর্বল হয়ে পড়ে যা অসংযম ও আদর্শ হীনতার রূপ নিয়ে শিশুর মনে প্রতিফলিত হয়।ফলে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং সে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।এই শিশুরাই অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
  • শিক্ষার অভাবে শিশুদের অসামাজিক কার্যে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। 

৬. অনুপযুক্ত গৃহ পরিবেশ - 

'Housing' শব্দটির অন্তর্গত যে বিষয়গুলি রয়েছে সেগুলি হল - বাড়ি ক্রয়মূল্য,বিচলতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা।'Poor Housing' বা অনুপযুক্ত গৃহ পরিবেশ বলতে গৃহহীনতা ,বা অতিরিক্ত সদস্য যুক্ত গৃহ পরিবেশ। গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতায় ইত্যাদিকে বোঝায়। গৃহ পরিবেশে অনুপযুক্ততা শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা অনুপযুক্ত গৃহ পরিবেশকে চিহ্নিত করতে গিয়ে গৃহ পরিবেশে খারাপ বা অনুপযুক্ত হওয়ার কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। সেগুলি হল -

  1. দারিদ্রতার কারণে শিশুর পরিবারের গৃহহীনতা।
  2. অধিক জনসংখ্যা বা সদস্যযুক্ত জনাকীর্ণ পরিবার।
  3. গৃহের আভ্যন্তরীন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে (অপরিচ্ছন্ন বা দূষণ যুক্ত)।
  4. স্থায়ী গৃহের অভাব। 
  5. শিশুর সংকীর্ণ স্থান ও যথাযথ আলো,বায়ুর অভাব।
  6. মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিকূল পরিবেশ। 

উল্লিখিত কারণগুলি শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। সেগুলি হল - 

  1. অবাঞ্ছিত নিম্নমানের গৃহ পরিবেশ শিশুর বিকাশকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করে।বিশেষ করে স্বাস্থ্য,প্রহ্মোভ ও সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে।
  2. নির্ভরযোগ্য কাঠামো, ন্যূনতম আধুনিক পরিসেবা (জল,ইলেকট্রিসিটি, শৌচালয়) বা দূষণমুক্ত গৃহ পরিবেশ না হলে তার শিশুর দৈহিক, মানুসিক ও প্রাহ্মোভিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
  3. অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন গৃহ পরিবেশ এবং গৃহে প্রয়োজনীয় স্থানাভাব শিশুকে গৃহের প্রতি বিরূপ করে তোলে।ফলে পরিবারের বন্ধন শিথিল হয় এবং মূল্যবোধ হ্রাস পায়।
  4. পরিবারে শিশু যদি পিতা-মাতার যত্ন ভালোবাসা ও মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সে তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পরিতৃপ্ত করার জন্য নানা প্রকার অপরাধমূলক আচরণ করে থাকে।তাকে শিক্ষার আওতায় আনা ও সম্ভব হয় না।
  5. অতিরিক্ত আদর বা মনোযোগ পেলেও শিশুর ব্যক্তিত্বের সুষ্ট বিকাশ ব্যাহত হয়। 
  6. পিতা-মাতার বৈষম্যমূলক আচরণ শিশুর মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। 
  7. পরিবারের শৃঙ্খলা হীনতা শিশুকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। 
  8. কঠোর নিপীড়ন মূলক শৃঙ্খলা শিশুর আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা বোধকে হ্মুন্ন করে।ফলে শিশুর মধ্যে অসন্তোষ ও অতৃপ্তি দেখা দেয়।দেখা যায় ব্যর্থতা,নিজের সম্পর্কে হীনম্মন্যতাবোধ এবং অপরাধপ্রবণতা। 

         পরিশেষে বলা যেতে পারে, এই সমস্ত সামাজিক উপাদানের জীবনব্যাপী ব্যক্তি বৃদ্ধি ও বিকাশকে প্রভাবিত করে।নানা অভাবে ব্যক্তি/শিশুকে সমাজ বিমুখী করে তোলে।এই সমস্ত কারনে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

Assignment Questions -

1. Social Factors That Affect Growth And Development.

2.Social Factors That Affect Growth And Development - Poverty.

3.Social Factors That Affect Growth And Development - Lack Of Opportunity.

4.Social Factors That Affect Growth And Development - Deprivation.

5.Social Factors That Affect Growth And Development - Disrupted Family.

6.Social Factors That Affect Growth And Development - Poor Neighborhood.

7.Social Factors That Affect Growth And Development - Poor Housing.


CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE









Post a Comment (0)
Previous Post Next Post