Raja Rammohan Roy

Raja Rammohan Roy

রাজা রামমোহন রায়||Raja Rammohan Roy

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
Raja Rammohan Roy's Contribution About Social Reforms And Women's Education Reforms
Raja Rammohan Roy

Assignment Questions -
1. রাজা রামমোহন রায়ের ধর্মসংস্কার ও সমাজ সংস্কার বিষয়ে সংহ্মেপে বর্ণনা করা।||Write Down The Raja Rammohan Roy's Religion Reforms And Social Reforms.
2. নারী শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার সম্পর্কে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান সম্পর্কে ধারণা দাও।||Give An Idea About The Contribution Of Raja Rammohan Roy In Women's Education And Social Reforms.

রাজা রামমোহন রায়||Raja Rammohan Roy
BENGALI VERSION -

1. ভূমিকা -
উনিশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণের প্রান পুরুষ ভারতের মুক্তির পথ প্রদর্শক 'ভারত পথিক' রাজা রামমোহন রায় এমন একটা সময়ে হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার অধীনে রাধানগর গ্ৰামে (থানা - খানাকূল) 1772 খ্রিস্টাব্দে,মতান্তরে (1774-1833 খ্রিস্টাব্দে) জন্মগ্ৰহন করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম রামকান্ত রায় এবং মাতা তারিণী দেবী। ভারতবর্ষ এক যুগ সন্ধিহ্মনে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় কুসংস্কার এবং সামাজিক পঙ্কিলতার ভরে গিয়েছে সারা দেশে সেই সময় তাঁর আবির্ভাব ঘটে। তিনি একদিকে সমাজসংস্কারক আবার অন্যদিকে শিহ্মাবিদ। তিনি হলেন নবজাগরণ শ্রেষ্ঠ পথিক।তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজা রামমোহন রায় কে "ভারত পথিক" নামে আখ্যায়িত করেছেন।
2. শিক্ষা জীবন -
তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার অধিকারী।গোঁড়া ব্রাক্ষ্মন পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তিনি পাঠশালায় বাংলা ও গনিত শেখেন,টোলের সংস্কৃতি শিহ্মা করেন। এছাড়াও তিনি আরবি,ফারসি,গ্ৰীক, লাতিন,হিব্রু ও ইংরেজি এই আটটি ভাষা শেখেন মাত্র 22 বছর বয়সে। তাঁর ভাষা শিক্ষা এতটাই গভীর ছিল যে তিনি হিন্দুদের মূল ধর্মগ্ৰন্থগুলি, মুসলিমদের ধর্মগ্ৰন্থ কোরান, খ্রিস্টানদের ধর্মগ্ৰন্থ বাইবেল সহ তিনটি ধর্মের সমস্ত গ্ৰন্থপাঠ করেছিলেন।
3. কর্মজীবন -
রামমোহন 1779 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করেন। পিতার মৃত্যুর পর 1803 খ্রিস্টাব্দে তিনি সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। তাঁর প্রতিভার কথা দিল্লীর মোগল দরবার থেকে ব্রিটিশ মহলে চর্চিত ছিল। 1833 খ্রিস্টাব্দের তৎকালীন সময়ে মোগল সম্রাটের জন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য একটি পত্রালাপ ও আলোচনা চলছিল তাতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন রামমোহন।এই উদ্দেশ্যে তিনি লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বোর্ড অব ভাইরেক্টর্সের সঙ্গে আলোচনার জন্য 1833 খ্রিস্টাব্দে তিনি বিলাত পৌঁছালেন।ওই বছরই ব্রিস্টল শহরে পড়ে গিয়ে তিনি আঘাত পান, তার ফলে বিদেশেই তাঁর মৃত্যু হয়।
4. সমাজ সংস্কারক রূপে তাঁর অবদান -
রামমোহন উপলব্ধি করেছিলেন যে সমস্ত সামাজিক কুসংস্কার,কুপ্রথা,অন্যায়,অত্যাচার ও অবিচারের উৎস ধর্মীয় গোঁড়ামি আর আচার সর্বস্বতা, কিন্তু তিনি শুধুমাত্র ধর্ম সংস্কারের প্রচেষ্টা মন্থর এবং তার ফলাফল সকলের কাছে পৌঁছার না।সেজন্য সরাসরি সামাজিক নিষ্ঠুর কুপ্রথাগুলি দূর করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন।
• ধর্ম সংস্কার -
রামমোহনের ধর্মসংস্কারের কথা উল্লেখ না করলে তাঁর সমাজ সংস্কার ও শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিটি অস্পষ্ট থেকে করে।সমস্ত ধর্মের সারমর্ম আত্মস্থ করার পর তিনি বুঝেছিলেন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান,কদাচার থেকে জন্ম নেওয়া যাবতীয় কু সংস্কার সমাজের বুকে চেপে বসেছে। তিনি মূর্তিপূজার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তাঁর চিন্তাধারার পরিণতি ঘটে ব্রাক্ষ্ম ধর্ম প্রবর্তনের মাধ্যমে যা পৌত্তলিকতা ও আনুষ্ঠানিক আড়ম্বর যুক্ত একটি ধর্ম হিসেবে প্রচারিত হয়।ব্রাক্ষ্মধর্ম শুধুমাত্র ধর্মীয় সংস্কার মাত্র নয়,এর মধ্যেই নিহিত ছিল সমাজ সংস্কারের বীজ।
       হিন্দুধর্মের তৎকালীন গোঁড়ামি,অন্ধ কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতার বিরোধিতার তিনি শুধুমাত্র লেখনি ধারন করেই হ্মান্ত হন নি।এই উদ্দেশ্যে নানা বক্তৃতা ও বিতর্কে তিনি একেশ্বরবাদ সম্বন্ধে প্রচার করতে থাকেন ক্লান্তিহীন ভাবে।1815 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় 'আত্মীয় সভা',যা ব্রাক্ষ্মধর্ম প্রচলনের সূত্রপাত বলে অনেকে মনে করেন।বলা বাহুল্য একেশ্বরবাদী হিসেবে তিনি ছিলেন অদ্বৈত দর্শনের সমর্থক এবং সেইজন্য অদ্বৈতবাদ প্রচারেও সচেষ্ট ছিলেন। তিনি 1828 খ্রিস্টাব্দে ব্রাক্ষ্মসভা স্থাপন করেন।দুই বছর পর 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাক্ষ্মসমাজ নামে পরিচিত হয় কারণ ততদিনে তাঁর প্রবর্তিত ব্রাক্ষ্মধর্ম বেশ কিছু অনুগামী সৃষ্টি করতে সহ্মম হয়েছিল।
• কৌলিন্য প্রথা বা বহু বিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন -
মধ্যযুগীয় ভারতবর্ষের একটি অন্যতম কু প্রথা ছিল কৌলিন্য প্রথা।দ্বাদশ শতকে বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথার ফলে একদিকে বালিকার সঙ্গে বৃদ্ধের বিবাহ,কুলীনদের বহু পত্নী গ্ৰহন,বাল্য বৈধব্য প্রভৃতি সমস্যা সমাজে দেখা যায়। উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে বাংলার সচেতন জনগন এর কুফল সম্পর্কে সজাগ হয়ে উঠেছে।1815 সালে আত্মীয় সভার মাধ্যমে তিনি কৌলিন্য প্রথা তথা বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান।1819 খ্রিস্টাব্দে প্রবত্তক ও নিবত্তকের দ্বিতীয় সম্বন্বে কুলীন কন্যাদের অসহায় অবস্থায় চরিত্র তুলে ধরেন।1822 সালে প্রকাশিত 'Brief Remarks regarding Modern Encroachments on the ancient rights of females,according to The Hindu Law of Inheritance' এ রামমোহন তীব্র ভাষায় এই প্রথার সমালোচনা করেন। কতকগুলি বিশেষ অবস্থা ছাড়া রামমোহন দ্বিতীয় বিবাহ সমর্থন করতেন না।এই প্রথা নিবারনের জন্য রামমোহন প্রস্তাব করেন যে,এক স্ত্রী বর্তমানে কারো দ্বিতীয় বিয়ে করতে ইচ্ছে হলে স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো দোষ আছে প্রমান করে ম্যাজিস্টেট বা হ্মমতা প্রাপ্ত অন্য কোনো রাজ কর্মচারীর অনুমতি নিতে হবে।এই উপায়ে বাঙালি মেয়েদের দুঃখ ও আত্মহত্যার সংখ্যা হ্রাস পাবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। রামমোহন উইলে তাঁর পুত্র বা অন্য কোনো আত্মীয়ের একই সঙ্গে একাধিক স্ত্রী থাকলে,তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার শর্ত আরোপ করেন।-
  1. কৌলিন্য প্রথা ও বহু বিবাহের ফলে বাংলাদেশের আত্মহত্যার সংখ্যা এবং মেয়েদের দুঃখ দুর্দশা বৃদ্ধি পায়।
  2. কোনো কোনো কুলীন ব্রাহ্মণ ১০০টি বিবাহ করেছে এমন নিদর্শনও উনিশ শতকের পাওয়া যেত। 
  3. আধুনিক কৌলিন্য ও বহু বিবাহ প্রথা যে শাস্ত্র সম্মত নয় তা তিনি প্রমান করেছেন।
• সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন -
সতীদাহ প্রথা নিয়ে উনিশ শতকে শিহরিত বাঙালি শ্রেণির যাবতীয় বৌদ্ধিক চিন্তাভাবনার সূত্রপাত ঘটান রাজা রামমোহন রায়।1818 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।সর্বপ্রথম তিনিই দেখান সতীদাহ প্রথা হিন্দুশাস্ত্র সম্মত কোন প্রথা নয় এবং এই প্রথার সঙ্গে ধর্মের কোন যোগ নেই।এটি হল হিন্দুধর্মের একটি কুসংস্কার মাত্র।তাই তিনি সার্বিকভাবে সামাজিক সচেতনতার জাগরনের জন্য জনমত গঠন,লোক শিহ্মা এবং জন সচেতনতা সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সতীদাহ প্রথার অবসান ঘটাতে উদ্দ্যোগী হন। যা 1819 খ্রিস্টাব্দে রামমোহন সতীদাহ প্রথা বন্ধের বিরুদ্ধে একটি গন স্বাহ্মর সম্বলিত আবেদনপত্র সরকারের কাছে পাঠান। পরবর্তীকালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক 1828 খ্রিস্টাব্দে ভারতের গর্ভনর জেনারেল হয়ে আসবার পর সতী আন্দোলন এক নতুন দিকে মোড় নেয়। নারীদের প্রতি এই অমানবিক কুপ্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে 1829 খ্রিস্টাব্দে 4ঠা ডিসেম্বর 17নং রেগুলেশন আইন দ্বারা সতীদাহ প্রথা আইন বলবৎ করা হয়।
• বিধবা বিবাহ - 
সতীদাহ প্রথা রদ হওয়ার পর বাঙালি সংস্কার করা বিধবা বিবাহ সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠেছেন রামমোহনের জীবনকালে (1772 - 1830 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) বিস্তৃত ছিল।বস্তুত পহ্মে বাংলায় উনিশ শতকের প্রথম দিকে থেকে বিধবা বিবাহ নিয়ে সমাজে আলোচনা শুরু হয়। রামমোহন তাঁর কোনো গ্ৰন্থে বিধবা বিবাহের সমর্থনে কিছু বলেন নি। তিনি বিধবা বিবাহ ব্রক্ষ্মচর্য অবলম্বনে সমার্থন করতেন।আত্মীয় সভার অধিবেশন যুবতী স্ত্রীর স্বামীর মরনান্তর ব্রক্ষ্মচর্যে কালহ্মেপ কর্তব্য বলেই বিবেচিত হয়েছিল।
• সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা -
রামমোহনের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের একটি বিশেষ দিক হল সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি পুরুষ ও নারীর সমমর্যাদার পহ্মপাতী ছিলেন। তিনি হিন্দু নারীর বিষয়ে সম্পত্তি অধিকার সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। সেই সময় সমাজে পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না।এই বিষয়টির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং সম্পত্তিতে মেয়েদের সমান অধিকারের আইন প্রনয়নের উদ্দেশ্য সামগ্ৰিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।নারীরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায় সেদিকে তার দৃষ্টি ছিল সজাগ। তাঁর মতে স্ত্রী মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে সমান অধিকারিনী।তাই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা লাভে সহায়তা করা।
5. শিক্ষা সংস্কারক রূপে তাঁর অবদান -
• শিক্ষা চিন্তা -
রামমোহন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞান - বিজ্ঞানের,সাহিত্য ও দর্শনের গভীর জ্ঞান সম্পন্ন এক পরম উদার দৃষ্টির অধিকারী ছিলেন। তিনি ভারতীয় দর্শন ও সাহিত্যে সম্বন্ধে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন আবার পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপলদ্ধি করে ছিলেন।সেই উনবিংশ শতাব্দীতে যাঁরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ের কথা চিন্তা করেছিলেন ভারতীয় সভ্যতা যে আবদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে সম্পূর্ণ গতিহারা হয়েছে তাকে পুনরুজ্জীবিত করে সচল স্রোত ধারার বহমান করে তুলতে হলে,প্রাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে তার সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। সেই জন্য একদিকে তিনি  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেদান্ত মহাবিদ্যালয় ও অন্যদিকে অ্যাংলো হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
         ইংল্যান্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনি বোর্ড অফ
 ডাইরেক্টর্স 1813 খ্রিস্টাব্দে 41 ভারতীয় শিক্ষার জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন, ফলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার মধ্যে একটি মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সেই সময় রামমোহন ও তাঁর সহযোগীরা এর প্রবল বিরোধিতা করেন। তিনি 1823 খ্রিস্টাব্দে গর্ভনর লর্ড আর্মহাস্টকে চিঠি লিখে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধের তীব্র প্রতিবাদ করেন।
    1817 খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি Sir Hyde East এর সহায়তা কলকাতায় হিন্দু কলেজ বা হিন্দু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।1822 খ্রিস্টাব্দে বাঙালিদের প্রকৃত ইংরেজি শিক্ষা উদ্দেশ্য রামমোহন Anglo Hindu School প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি 1825 খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যে ও পাশ্চাত্য দর্শন চর্চা করার জন্য বেশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
   রামমোহন কে বলা হয় 'আধুনিক বাংলা গদ্যের জনক'। তিনি বাংলা ব্যাকরন রচনার যেমন ব্রতী হয়েছিলেন তেমনি সংস্কৃত মুক্ত স্বাধীন ও স্বতন্দ্র বাংলা গদ্য রচনারীতির সূচনা করেছিলেন,যা পরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাতে পরিনতি লাভ করে। বিপুল গ্ৰন্থাবলি ও রচনা। তাঁর ভাষার উপর অগাধ আধিপত্যের প্রমাণ বহন করে। কিন্তু যে প্রসঙ্গে এখানে রামমোহন কর্মকান্ডে অবতারণা সেই নারী জাতির শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি উল্লেখ না করলে তাঁর কথা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
• মাতৃভাষার উপর গুরুত্ব -
পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের একজন ঘোরতর সমর্থক হওয়ার সত্ত্বেত্ত রামমোহন স্বদেশিকতা বিমুখ ইংরেজি শিক্ষা চান নি। মাতৃভাষাকে অবহেলা করে ইংরেজি শেখানোর পহ্মপাতী ছিলেন না তিনি। রামমোহন তাঁর নিজস্ব সংবাদপত্র 'সংবাদ কৌমদীতে' স্পষ্ট ভাষা লিখেছেন যে মাতৃভাষা না শিখে পাশ্চাত্য শিক্ষা আয়ত্ত করা যায় না।তাতে কোনো শিহ্মাই গ্ৰহন করা সম্ভব হবে না। এখানেই রামমোহনের আশ্চর্য দূরদৃষ্টি এবং আধুনিকতা প্রকাশ পেয়েছে। রামমোহন গদ্য সাহিত্যের উন্নতিতে সহায়তা করেছিলেন।বাংলায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনায় তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। ভূগোল বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা ব্যতীত তাঁর রচিত বাংলা ব্যাকরনও উল্লেখের দাবি রাখে। এইভাবে বলা যেতে পারে যে, রামমোহন তাঁর শিক্ষা সংস্কার কর্মসূচিতে প্রাচ্য পাশ্চাত্য সম্মিলিত শিহ্মার ওপরই জোর দিয়েছিলেন।  
• নারী শিক্ষা -
রামমোহন নারী জাতির শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নতির জন্য সমস্ত রকমের অন্ধবিশ্বাস ও কু প্রথার অবসান ঘটাতে চেয়েছিল। তিনি মনে করতে নারী জাতির উন্নতি জন্য শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।তাই পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন এই কারণেই প্রয়োজন বলে মনে করতেন।এর বিরুদ্ধে তিনি সচেষ্ট ছিলেন তার প্রমান পাওয়া যায় তাঁর বিভিন্ন গ্ৰন্থাবলি থেকে।"উৎসবানন্দ বিদ্যা বাগীশের সহিত বিচার" (1816), "ভট্টাচার্যের সহিত বিচার"(1817),"গোস্বামীর সহিত বিচার"(1818),"সহমরন বিয়ক প্রবর্তক নিবর্তক সম্বাদ"(1818) প্রভৃতি গ্ৰন্থে রামমোহন শাস্ত্রীয় যুক্তি প্রমান উদ্ধৃত করে তাঁর মত প্রতিষ্ঠা করেছেন।
          সংস্কার মুক্ত নিরাকার একেশ্বরবাদী ব্রাক্ষ্মধর্ম ছিল সমাজ সংস্কারের একটি মস্তবড়ো হাতিয়ার এবং নারী জাতির মুক্তিরও হাতিয়ার। কারণ পরবর্তীকালে দেখা যায় ব্রাক্ষ্ম পরিবারের মেয়েরাই শিহ্মা দীহ্মা ও পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। রামমোহন তাঁর দুর দৃষ্টিতে বুঝেছিলেন ধর্মসংস্কার ভারতীয় সমাজ সংস্কারের একটি প্রধান প্রন্থা।আর যথার্থ সমাজসংস্কার হলে তবেই স্ত্রী শিক্ষা ও নারী জাতির মুক্তি সম্ভব হবে।তাই বাংলার সমাজ আবদ্ধ পঙ্কিক জলাশয়ে রূপান্তরিত হয়েছিল। পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে তিনিই প্রথম জ্বালান। রামমোহন বাংলা ভাষাকে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত করেন আবার ভারতের অতীত সাহিত্য ও দর্শনের পুনরূদ্ধার করে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের সঙ্গে একত্রিত করেন।
6. সাংবাদিকতা -
ভারতের সংবাদ পত্র ও সাংবাদিকতার তিনি ছিলেন অগ্ৰদূত। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সাময়িক পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে নবজাগরণ ও যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বহু মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।এই প্রসঙ্গে তিনি 1821 খ্রিস্টাব্দে 'সম্বাদকৌমুদী' প্রকাশ করেন।পরের বছর ফরাসি ভাষার প্রবর্তিত হয় 'মিরাৎ-উল-আকবর'।এই দুই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই যুক্তিবাদিতার প্রসার ঘটাতে।পরে 1829 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'Bengal Herald' নামক আর একটি ইংরেজি পত্রিকা।
7. উপসংহার -
ভারতবর্ষে যে কুসংস্কার থেকে মুক্তি এবং আধুনিক মানসিকতার গ্রহণের মধ্যেই ভারতবাসীর উন্নতি নিহিত রয়েছে। এই সময় রাজা রামমোহন রায় ছিলেন বাংলার নবজাগরণে প্রাণপুরুষ। ভারতের মুক্তির পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাকে "ভারত পথিক" নামে আখ্যায়িত করেছেন। রাজা রামমোহন রায় ধর্মসংস্কার,সামাজিক ও নারী শিক্ষার প্রসারে জন্য সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। তাঁর এই অবদান ছিল অপরিসীম।

CLICK HERE -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post