Ecofeminism||পরিবেশগত নারীবাদ
BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
|
Ecofeminism |
Assignment Questions -
1. Short note About Ecofeminism.||পরিবেশগত নারীবাদ উপর টীকা লেখ।
BENGALI VERSION -
পরিবেশগত নারীবাদ -
(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)
1. ভূমিকা -
পরিবেশগত নারীবাদ বা Ecofeminism একটি সমসাময়িক মতবাদ। ইংরেজি "Eco" মানে পরিবেশ এবং "Feminism" মানে নারীবাদ। অর্থাৎ পরিবেশগত নারীবাদ বা "Ecofeminism" পরস্পর অন্তঃসম্পর্ক যুক্ত এমন একটি আন্দোলন যা আসলে পরিবেশ আন্দোলন এবং নারীবাদী আন্দোলনের এক সুন্দর সংশ্লেষ। পরিবেশগত নারীবাদের বিষয়টি মত হিসেবে আধুনিক হলেও এর অন্তর্নিহিত অর্থের মূল প্রোথিত রয়েছে মানব সমাজের প্রাগৈতিহাসিক বিবরনে।
2. পরিবেশগত নারীবাদ আন্দোলনের সূত্রপাত -
নারী আন্দোলনের তরঙ্গে 1800 এর দশকের মাঝামাঝি সময় আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হওয়ার পর থেকে বিবর্তন এবং পুনরুন্থারের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।ফলে সৃষ্টি হয় নারীবাদের।এই নারীবাদের কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।যথা -
- উদার নারীবাদ (Liberal Feminism)
- মার্কসীয় নারীবাদ (Marxist Feminism)
- প্রগতিশীল বা প্রগতিবাদী নারীবাদ (Radical Feminism)
- সামাজিক নারীবাদ (Socialist Feminism)
- পরিবেশগত নারীবাদ (Ecofeminism)
সত্তরের দশকের শুরুতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নারীবাদী মহিলা মূলস্রোতের পরিবেশ আন্দোলনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে নারীবাদীদের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে সচেষ্ট হন।এর ফলে আবির্ভাব ঘটে পরিবেশগত নারীবাদ বা Ecofeminism মতবাদের।ফরাসি নারীবাদী লেখক ফ্রাসোয়াঁ দ্য এবোন 1974 খ্রিস্টাব্দে তাঁর বই "Le Léminisme ou la Mort" গ্ৰন্থে প্রথম পরিবেশগত নারীবাদ শব্দটি ব্যবহার করেন।বিষয়টি প্রধানত নারীবাদ সংশ্লিষ্ট আন্দোলন এবং বাস্তুসংস্থান সম্পর্কিত দর্শনের আপাত যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা করে থাকে।অর্থের বিভিন্নতা সত্ত্বেও এটি মূলত নারীর প্রতি তথাকথিত পুরুষ সমাজের কর্তৃত্ব ও প্রকৃতির উপর মানুষের আধিপত্য বিষয়ক মতবাদ। অর্থাৎ নারী ও প্রকৃতির উপর সমান্তরাল ভাবে বিদ্যমান পুরুষ প্রাধান্যের অবসান দাবি করে এই নারীবাদ।গ্ৰেটা গার্ড,লরি গ্ৰুয়েন,জ্যানেট রিয়েল,রেচল কারসন,বন্দনা শিবা, মারিয়া মাইজ প্রমুখ এই পরিবেশ নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা। পরিবেশগত নারীবাদের নারী এবং পরিবেশকে অভিন্ন মাত্রায় সংযোজন করে।
3. পরিবেশগত নারীবাদের মূল বক্তব্য -
নারী ও প্রকৃতি উভয়ই পিতৃতন্ত্রের নির্মম শিকার।নারীর কোমল প্রকৃতির সঙ্গে পরিবেশ প্রকৃতির যথেষ্ট মিল খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশগত নারীবাদ এটি একটি দার্শনিক এবং রাজনৈতিক মতবাদ এবং আন্দোলন যা সমাজে পুরুষের আধিপত্যের ফলে সৃষ্ট নারীবাদী আন্দোলন এবং পরিবেশগত উদ্বেগকে একত্রিত করে। প্রকৃতির সঙ্গে নারীর একাত্মতা ও ঘনিষ্ঠতা পরিবেশ মূল্যায়নের একটি দিক।নারীবাদী দার্শনিক ফ্রাঁসোয়াঁ ধারনার সমালোচনা করেছেন যেখানে মনে করা হয় নারীত্বের কোমল প্রবৃত্তির গুনে সমৃদ্ধ পরিবেশ নারীবাদ গড়ে উঠেছে। কিন্তু সৃষ্টির একে বারে প্রথম থেকেই নারীরা প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বলেই পরিবেশ সুরহ্মার পরিবেশ নারীবাদের জন্ম।
পাশ্চাত্য দেশে পুরুষশাসিত সমাজে যেমন বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়,যারা অবহেলিত ও অবদমিত হয়ে থাকে।যেমন নারী,শিশু, দরিদ্র, বর্ণবৈষম্যের শিকার মানবগোষ্ঠীর, সংখ্যালঘু,ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রভৃতি, তেমনই প্রকৃতির বুকে নানা প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বায়ুমণ্ডল, স্থলভাগ,জলসম্পদ কিংবা প্রানী গোষ্ঠী একই ভাবে মানবজাতির দ্বারা নিপীড়িত ও নিঃশোষিত হয়ে চলেছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপাদান গুলি নির্বিচারে অত্যাধিক ব্যবহার মানবগোষ্ঠীকে এক বিষম বিপদের সম্মুখীন করে তুলেছে।এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল পরিবেশ নারীবাদ।এই মতবাদের যথাযথ প্রয়োগেই পরিবেহ্মন সংরহ্মন ঘটানো সম্ভব হবে কেন না নারী সুলভ গুন সমৃদ্ধ সমাজ উপযুক্ত রূপে পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি যত্নবান হবে। নারী যেমন সমাজকে স্নেহ মমতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা দিয়ে যত্নে ধরে রাখে, সেভাবেই একমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশকে রহ্মা করা সম্ভব হবে এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন ঘটানো যাবে।
4. পরিবেশগত নারীবাদের লহ্ম্য -
- নারীর উপর পুরুষতন্ত্রের আধিপত্য ও নিপীড়নের বিভিন্ন দিক এবং প্রকৃতির উপর মানুষের নিপীড়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা পরিবেশগত নারীবাদের লহ্ম্য।
- পরিবেশগত নারীবাদ একটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি,যা নারীর নায্য অধিকার এবং পরিবেশ বিপর্যয় রোধকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয়।
- পরিবেশ রহ্মার করার জন্য,জাতি গঠন করার জন্য ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নারী জাতির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা দরকার।
- লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীদের অগ্ৰাধিকার দিলে সমাজের উন্নতি,তথা নারীর অগ্ৰগতি সহ আর্থিক নীতি ও পরিকল্পনার উদ্দেশ্য সফল হবে।
- নারীদের মধ্যে সচেতনতা বোধ গড়ে তুলতে সাহায্যে করে।
- নারীরা পরিবেশের ভারসাম্য কে অনেক সহজ ও সাবলীল ভাবে নিয়ন্ত্রন করতে সহ্মম হন।
- স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশে অভিযোজনের পরিকল্পনা, উন্নয়ন এবং কার্যনির্বাহী দলে নারীদের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
5. পরিবেশগত নারীবাদ তত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গি -
• ক্যারেন ডে. ওয়ারেন দৃষ্টিভঙ্গি -
ক্যারেন ডে. ওয়ারেন নারী পরিবেশকে অধস্তন করে রাখার বিষয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্ট মূল্যবোধের স্বরূপ উত্থাপনের তত্ত্বমূলক মত দান করেছেন।তাঁর মতে সমাজ সৃষ্ট মূল্যবোধ প্রকৃতপক্ষে ধারণাগত কাঠামো এবং পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামোর দ্বয়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
ক. সমাজ সৃষ্ট ধারণাগত কাঠামো এবং এর অন্তর্ভুক্ত পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামো ও কর্তৃত্বের যে যৌক্তিকতা পুরুষতন্ত্র তৈরি করেছে তার আসার তা তুলে ধরা।
খ. নারী ও পরিবেশ সম্পর্কে সমাজে যে দ্বৈতবাদ প্রচলিত সেই দ্বৈত বাদের বিকল্প দর্শন প্রচলন করা।
গ. নারী ও পরিবেশ সম্পর্কে সমাজে যে দ্বৈত বাদ প্রচলিত সেই দ্বৈতবাদের বিষয় দর্শন প্রচলন করা।
•• পিতৃতান্ত্রিক দ্বৈতবাদ -
ক্যারেন ডে. ওয়ারেন পরিবেশগত নারীবাদ সম্পর্কে দার্শনিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, পিতৃতান্ত্রিক দ্বৈততা নারী ও পরিবেশ নিপীড়নের জন্য দায়ী। পিতৃতন্ত্র নারীকে প্রকৃতিকরণ এবং প্রকৃতিকে নারীকরনের মাধ্যমে উভয়ের উপর নিপীড়ন চলায়।নারীর প্রকৃতিকরণ হয় যখন পিতৃতন্ত্রের প্রতিভূরা নারীকে প্রাণিজগতের নামে বর্ণনা করে।যেমন "Cows, Foxes, Chicks, Bitches, Pussycat's,Cats" ইত্যাদি।একইভাবে প্রকৃতির নারীকরণ হয় যখন প্রকৃতিকে "She"(স্ত্রী লিঙ্গ)বলা হয়। প্রকৃতিকে এভাবে নারীরূপে স্ত্রী ভাবে কল্পনা করে বলা হয় 'She is raped, mastered, conquered, controlled, penetrated, subdued and mined by men এবং প্রকৃতিকে 'মা' হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। তিনি মনে করেন,পুরুষতন্ত্র যখন নিজেকে প্রকৃতির মনিব বলে মনে করে,তখন প্রকৃতির মতো নারীকে ও একই দৃষ্টিতে দেখে এবং নারী ও প্রকৃতির ওপর একই রূপ আচরন করে।তবে পরিবেশ নারীবাদীরা একমত যে নারী ও প্রকৃতির মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনি সার্বিকভাবে নারীকে পুরুষের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে প্রকৃতির সাথে যুক্ত করে দেখেন এই যুক্তিতে যে, নারী নিপীড়ন যেমন নারী নিগৃহীত হয়, পরিবেশ শোষনেও তেমনই পরিবেশ নিগৃহীত হয়।তাই পরিবেশ নারীবাদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওয়ারেন নারী ও প্রকৃতি নিপীড়নের কারন হিসেবে পিতৃতন্ত্র কর্তৃক সৃষ্ট দ্বৈত মূল্যবোধকে দায়ী করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।তাঁর মতে,দ্বৈত মূল্যবোধ থেকে মানুষের মনে এই ধারণা জন্মেছে যে, নারী ও প্রকৃতি হল অধঃস্তন, এদের ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার আছে এবং এ কর্তৃত্ব করবে পুরুষতন্ত্র।অর্থাৎ এখানে নারী ও প্রকৃতি নিপীড়নের জন্য সমাজের পুরুষতান্ত্রিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এই দ্বৈত মূল্যবোধকে দায়ী করেছেন।তার মতানুযায়ী, সমাজের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারী পুরুষের মধ্যে যে অসম অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে বিদ্যমান।এই দ্বৈত মূল্যবোধের কারনেই মূলত নারী ও প্রকৃতি নির্যাতিত হয় এবং সমাজের অধস্তন অবস্থায় টিকে থাকে।
•• পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামো -
ওয়ারেন তাঁর "The Power and Promise of Ecological Feminism" প্রবন্ধে নারী ও প্রকৃতি নিপীড়নকে 'ধারণাগত কাঠামো' বলে আখ্যায়িত করেন। ধারণাগত কাঠামো বলতে তিনি এমন কিছু মৌলিক বিশ্বাস,মূল্যবোধ,অনুমান ও দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝান, যা ব্যক্তিকে নিজস্ব ধারণা গঠন করতে সাহায্য করে।এ ধারণা গুলো হল সমাজের বন্ধ মুল ধারণা, যা ব্যক্তির মনে গেঁথে যায়।ধারনাগত কাঠামো ব্যক্তির মধ্যে দৃষ্টি সহায়ক কাঁচের মতো কাজ করে,যা দিয়ে ব্যক্তি নিজেকে এবং তার পারিপার্শ্বিক জগৎকে উপলব্ধি করে বা মনের মধ্যে গ্ৰহন করে। ওয়ারেন কতগুলো ধারণাগত কাঠামোকে আবার পীড়নমূলক হিসেবে অভিহিত করেছেন।পীড়নমূলক ধারণাগত বলতে তিনি সমাজে নারীর বিরুদ্ধে আমরা যেসব নির্যাতন ও নিপীড়ন মূলক আচরণ করতে দেখি তাকে বুঝিয়েছেন।নির্বিচারে বিশ্বাস, ধর্মীয় কুসংস্কার সমাজ এমন ভাবে তৈরি করে ও গ্রহণযোগ্য করে তুলে যে যুগের পর যুগ মানুষ ও বিশ্বাস ও অপব্যাখ্যা মেনে নেয় এবং এগুলো ধর্মীয় বিধান বলে ধরে নেয়।ওয়ারেনের মতে, পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামো যখন পিতৃশাসিত হয় তখন তা নারীকে অধস্তন হিসেবে ব্যাখ্যা করে।তিনি পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামোর তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন।যেমন -
- মান :- যে কোনো অবস্থা ও শ্রেনির মধ্যে স্তরভেদ সৃষ্টি করে,যেমন 'নারী ও পুরুষ','মানুষ ও প্রকৃতি', 'উচ্চমানের পুরুষ জাতি ও নিম্নমানের নারী জাতি','মানুষ নিজেদের উচ্চমানের ও প্রকৃতিকে নিম্নমানে' মনে করে।
- দ্বৈত মূল্যবোধ :- যা নারী ও পুরুষের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করে,যেমন পুরুষ যুক্তি ও বুদ্ধির অধিকার,নারী আবেগপ্রবণ, পুরুষ সবল, নারী দুর্বল, পুরুষ উচ্চমানের ও নারী নিম্নমানের এইসব ধারণা দ্বৈত মূল্যবোধ থেকে গড়ে উঠেছে।
- পীড়নমূলক ধারণাগত কাঠামো :- এটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কেননা এটি সমাজে এমন কতগুলো ধারণাকে মূল্যবোধ হিসেবে যৌক্তিকতা দিচ্ছে,যা সমাজে দীর্ঘস্থায়ী রূপ লাভ করেছে। পরিবেশগত নারীবাদের হ্মেত্রেও এই কাঠামো কাজ করেছে।
•• উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভ -
ওয়ারেন তাঁর "The Power And Promise Of Ecological Feminism" প্রবন্ধে তিনি উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভ একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন।এই পদ্ধতি হিসেবে যখন একটি মতবাদকে বিচার করা হয় তখন তা যৌক্তিক রূপ পায়।বিশ্ব একটি মত তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা সার্বিক হয়। তাঁর মতানুযায়ী, নারীর প্রত্যক্ষন, নারীর মূল্যবোধ, নারীর অনুমতি কখনো পুরুষের পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।নারীর প্রত্যহ্মনে Care attitude কাজ করে বলে নারীর প্রত্যক্ষন পুরুষ থেকে ভিন্ন।নারীবাদীরা ব্যক্তিত্বকে স্থান দিয়েছেন, আর যা কিছু ব্যক্তিত্ব তাই আপেক্ষিক।তিনি উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভের মাধ্যমে নারী প্রেহ্মিতকে তুলে ধরেছেন। তাঁর উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভ একটি Deductive Method বা অবরোহ পদ্ধতি। তাঁর মতে নারী প্রেহ্মিত হল বিশেষ।এই বিশেষ প্রেহ্মিতকে গুরুত্ব দিয়ে হবে।তিনি মনে করেন, সনাতনী নীতিবিদ্যার নৈর্ব্যক্তিক নিয়ম নীতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে কিন্তু উত্তম পুরুষ বিবরনকে এক্ষেত্রে অবহেলা করা হয়।নারীবাদী এবং পরিবেশ নীতি বিদ্যার চারটি কারণে উত্তম পুরুষে ন্যারেটিভ গুরুত্বপূর্ণ এবং নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহন ও তত্ত্ব নির্মাণের ক্ষেত্র কার্যকর ভূমিকা পালন করে।এই কারণ গুলি হল।-
- উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভ আমি-সে,আমরা-তারা, ব্যক্তিসত্ত্বা-অপরসত্ত্বা ইত্যাদি সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশেষভাবে নির্মাণ করে।এমন ন্যারেটিভ ব্যক্তিত্ব অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করে,যার ফলে বৈষম্যমূলক সম্পর্ক যেমন মানব ও অমানব,মানব ও প্রকৃতি,জীব ও জড় ইত্যাদি অস্তিত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
- উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভ নৈতিকতার হ্মেত্রে আচরণের সার্বিকীকরণ অপেক্ষা বৈচিত্র্যের যৌক্তিকতার বিশ্বাস করে।
- উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভের মধ্যে সৌহার্য্যপূর্ণ উদার মনোভাব প্রকাশ পায়, যা কর্তৃত্বপূর্ণ ও আধিপত্য বিস্তারকারী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত।
- ওয়ারেন ন্যারেটিভ সম্পর্কে বলেন,উত্তম পুরুষ ন্যারেটিভ সিদ্ধান্তমূলক হয়ে থাকে।একই সাথে ন্যারেটিভ এবং সমাধানের ইঙ্গিত দেয়,যা নৈতিক অবস্থার সাথে মানানসই সিদ্ধান্ত হতে পারে।
ওয়ারেন পরিবেশগত নারীবাদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নারী অভিজ্ঞতার যে বিকল্প ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার পুরুষতান্ত্রিক বিবেচনা অপেক্ষা অনেক বেশি সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়।নারীর ঘটনা কখনোই নারীর দৃষ্টিতে বিচার করা হয় না,যদি তাই হতো তাহলে সমাজে এইরকম ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি হতো না।
• ভাল প্লামউডের দৃষ্টিভঙ্গি -
ভাল প্লামউড একজন নারীবাদী দার্শনিক।তিনি জেন্ডার বৈষম্য সম্পর্কে যেমন সচেতন তেমনি পরিবেশ নৈতিকতা সম্বন্ধেও সচেতন।জেন্ডার বৈষম্যকে তিনি প্রকৃতি নিপীড়নের সাথে এক করে দেখেছেন বলে পরিবেশ নারীবাদী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর মতে, পরিবেশগত নারীবাদ প্রকৃতপক্ষে নারীবাদের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং নারীবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।তাই তিনি পরিবেশগত নারীবাদকে সবিচার পরিবেশগত নারীবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁর সবিচার পরিবেশ নারীবাদ আলোচনার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে।
•• দ্বৈত বাদ -
মানব সভ্যতার প্রাচীন যুগের অ্যারিস্টটল ও প্লেটোর দর্শন থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত দেকার্ত ও কান্টের দর্শনে আমরা দ্বৈততা লক্ষ করি।পাশ্চাত্য সমাজে আমরা ক্ষমতার যে বৈষম্য দেখতে পাই, সেখানেও দ্বৈতবাদী কাঠামো রয়েছে,যেমন 'সংস্কৃতি বনাম প্রকৃতি','পুরুষ বনাম নারী','মানব বনাম দাস', 'সার্বিক বনাম বিশেষ','মানব বনাম প্রকৃতি' ইত্যাদি এই দ্বৈতবাদী উপর ভিত্তি করে নারী পুরুষ ভেদাভেদ ও মানব প্রকৃতি বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে।সনাতনী ও আধুনিক দার্শনিকরা নারী ও প্রকৃতিকে হীন ও নিম্নমানের মনে করেন পিতৃতন্ত্র কর্তৃক তৈরি দ্বৈত মূল্যবোধের কারনেই। অর্থাৎ তাঁর মতানুযায়ী পরিবেশকে যেজন্য তুচ্ছ জ্ঞান করে উপেক্ষা করা হয়।নারীকে ও একই কারণে উপেক্ষা করা হয়।নারীবাদ পাশ্চাত্য দ্বৈতবাদী কাঠামোকে এজন্য দায়ী করে থাকে।তিনি এখানে পরিবেশ ও নারী অধস্তনের জন্য পিতৃতন্ত্র কর্তৃক তৈরি দ্বৈত মূল্যবোধকে দায়ী করেন।
•• উদার নারীবাদ ও প্রগতিশীল নারীবাদের সমালোচনা -
উদার নারীবাদে বলা হয় সমাজ হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক, আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী পুরুষের জীবতাত্ত্বিক পার্থক্যকে পুঁজি নারীর মধ্যে নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য(দুর্বল,ভীরু,হীন এবং আবেগপ্রবণ) এবং পুরুষের মধ্যে ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য(যুক্তির অধিকারী,ধীর সাহসী এবং পরাক্রমশালী)দেখা যায়। এই ভিত্তির উপর তিনি উদার নারীবাদকে সমালোচনা করে বলেন, যে যুক্তিতে পুরুষতান্ত্রিকতা নারীবাদীদের কাছে অগ্ৰহনীয় ওই একই যুক্তিতে উদার নারীবাদ নারীদের কাছে অগ্ৰহনীয়।এই উদার নারীবাদের বিপরীত মতবাদ হল প্রগতিশীল নারীবাদ।এই মতবাদ নারী পুরুষের জীবতাত্ত্বিক পার্থক্যকে স্বীকার করে কিন্তু অন্যান্য পার্থক্য (যেমন নারী দুর্বল,হীন,ভীরু ইত্যাদি অস্বীকার করে। উদার নারীবাদীদের মতে, জীবতাত্ত্বিক কারণে নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন,যেমন নারীর বৈশিষ্ট্য হল নিপীড়ত বা শোষিত আর পুরুষের বৈশিষ্ট্য হল পীড়নকারী বা শাষক।তাই তিনি উদার নারীবাদের পুরুষের বৈশিষ্ট্য বর্জন করে নারীর বৈশিষ্ট্যকে উচ্চে তুলে ধরে অধস্তনকে উর্ধতন করার পহ্মে মত প্রকাশ করে।এই কারণে প্লামউড এ মতবাদকে বাছবিচারহীন বৈপরীত্যের নারীবাদ বলে সমালোচনা করেন।বাছবিচার হীন উদার নারীবাদকে তিনি নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করেন।
দুটি মতবাদের ক্রটি গুলো চিহ্নিত করাই ছিল তাঁর সমালোচনার লহ্ম।তবে প্লামউড উদার নারীবাদের নারীর অভিজ্ঞতার দিকটি পরিবেশ নারীবাদের হ্মেত্রে গ্ৰহন করেছেন। তিনি মনে করেন পরিবেশগত নারীবাদ মানুষকে উল্লিখিত ভাবে অসম্পূর্ণ ভাগে ভাগ না করে বরং নারী ও পুরুষ উভয়কেই প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গণ্য করলে তা অধিক মাত্রায় যুক্তিযুক্ত হবে। এমন মতবাদকে তিনি সবিচার পরিবেশ নারীবাদী বলেন।
6. বর্তমানে পরিবেশগত নারীবাদের প্রাসঙ্গিকতা -
পরিবেশের সুষ্ট পরিচালনায় জন্য নারীদের অনন্য ভূমিকা রয়েছে এবং পরিবেশের সুস্থিতি বজায় রাখা ও পরিবেশ সংরক্ষণে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য।নারীরা তাদের অনন্য সাধারণ দহ্মতা ও জ্ঞান দিয়ে নারীরা প্রমান করেছে কীভাবে মাটি,জল, বনভূমি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের যথার্থ ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা করা যায়। নারীদের শিক্ষার জন্য বিনিয়োগ অর্থনৈতিক লহ্ম্যমাত্রা উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করে,যা আগামী দিনের পরিবেশ ও বিশ্ব অর্থনীতি সমৃদ্ধ করে।
পরিবেশে অভিযোজনের হ্মেত্রে নারীদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ে তাদের ভাবনাচিন্তা ও গবেষনা এবং তাদের দলগত কাজের মূল্য নিতে হবে।এর পর স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশে অভিযোজনের পরিকল্পনা, উন্নয়ন এবং কার্যনির্বাহী দলে তাদের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত করতে হবে।সমস্ত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা দূর করে, লিঙ্গ বৈষম্য না রেখে নারীদের অগ্ৰাধিকার দিতে হবে,তাহলে সমাজের উন্নতির তথা নারীর অগ্ৰগতি ব্যতীত আর্থিক নীতি ও পরিকল্পনার উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে,নারী হচ্ছে একটি প্রবাহমান সম্পদ,যার সুষ্ট ও কার্যকারী ব্যবহারের মাধ্যমেই পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রহ্মা করতে পারি এবং আমাদের সমাজ ও বিশ্বকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারি। পরিবেশ রহ্মার অগ্ৰদূত ,খাদ্য উৎপাদনকারী,ব্যবসায়ে সাহায্যেকারী ,স্বাস্থ্যের উন্নতি কারী এবং মা হিসেবে নারীর ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে সুস্থির ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ প্রত্যেকের জন্য অপেহ্মা করে। পরিবেশ রহ্মা করার জন্য,জাতি গঠন করার জন্য ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নারী জাতির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন।
7. উপসংহার -
পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবেশকে রহ্মা করতে নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিটি মানুষের মধ্যে জাগ্ৰত করার লহ্ম্যে আমাদের নিয়োজিত হতে হবে।এই নৈতিক মূল্যবোধ সম অধিকার,ন্যায় পরায়নতা, সহমর্মিতা ও মানবতাবোধের জন্ম দেয়।যদি এই নৈতিক মূল্যবোধ সঠিক বিকাশ ঘটলে সমাজ থেকে দ্বৈতবাদী মনোভাব দুর হলে প্রকৃতি ও মানুষের হ্মেত্রে সম ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরন প্রতিষ্ঠিত হবে।মমত্বপূর্ণ ও উদারনৈতিক মূল্যবোধই মানব সমাজকে সামাজিক ও প্রাকৃতিক অবহ্ময় থেকে রহ্মা করে কল্যানকর এবং আলোকিত সমাজ ও জীবন গড়তে সহায়তা করে। ওয়ারেন ও প্লামউড উভয়েই নারীর অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন এবং তার অনুশীলনের কথা বলেছেন।একই সঙ্গে তাঁরা দ্বৈত মূল্যবোধ থেকে প্রকৃতির প্রতি সমাজের আগ্ৰাসী মনোভাবের যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন তা যদি যথাযথ ভাবে পরিহার করা যায়,তাহলে হয়তো নারী তার মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে এবং প্রকৃতি আপন বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে সমস্যাহীন থাকতে পারবে।
CLICK HERE -