অরণ্যধ্বংস||Deforestation
BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
Deforestation |
Assignment Questions -
1. অরণ্যধ্বংস কি।||What Is Deforestation.
2.অরণ্যধ্বংসের কারণ গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||Briefly Describe The Causes Of Deforestation.
3. অরণ্যধ্বংস ফলে সৃষ্ট প্রভাব গুলি কি কি।||What Are The Effects Of Deforestation?
4. অরণ্য সংরহ্মণের উপায় গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||Briefly Describe The Methods Of Forest Conservation.
অরণ্যধ্বংস -
BENGALI VERSION -
(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)
1. অরন্য ধ্বংস -
UNO এর অধীনস্থ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, FAO প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, 'কাঠ উৎপাদনের উপযোগী বা স্থানীয় জলবায়ু বা জলসংস্থানের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম, ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত নানা আকৃতির বৃক্ষবহুল উদ্ভিদগোষ্ঠী দ্বারা আবৃত জমিকে অরণ্য বা Forest বলা হয়।কোনো নির্দিষ্ট ভূমিভাগ থেকে নির্বিচারে বৃক্ষছেদন ও তৃণের বিনাশের মাধ্যমে বনভূমির হ্রাস এবং বনসৃজনের অনীহাকে অরণ্যধ্বংস বা Deforestation বলে।FAO 2008 খ্রিস্টাব্দে সর্বাধুনিক সংজ্ঞা মতে, গাছ কাটার ফলে অরণ্য অঞ্চল যখন অন্য কোনো জমি ব্যবহার অঞ্চলে পরিণত হয় এবং কমপক্ষে 10% অঞ্চলে এই পরিণতি হলে তাকে অরণ্যধ্বংস বলে। আবার অরণ্য ধ্বংস বলতে বোঝায় কোনো নির্দিষ্ট ভূমিভাগ থেকে নির্বিচারে বৃক্ষছেদনের মাধ্যমে বনভূমির পরিমাণ হ্রাস করা।অরণ্য বিনাশ পৃথিবী জুড়ে মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
কোনো দেশে বা অঞ্চলে বনভূমি এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদরূপে বিবেচিত হয় কারণ বনভূমি আধুনিক শিল্পে কাঁচামালের জোগান দেয়,বিভিন্ন প্রাণী ও জীবের বসবাসের সুযোগ দেয়,মাটিতে জৈব পদার্থের জোগান দেয়,ভূমিহ্ময় রোধ করে, কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে,মানুষ ও প্রাণীর খাদ্যের ও জ্বালানি জোগান দেয়।তাই বনভূমিকে কোনো দেশের'সমৃদ্ধি ও উন্নতির জীবনরেখা' বলা হয়।অনেকে আবার বনভূমিতে 'সবুজ সোনা' বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু বর্তমানে অরণ্যধ্বংস বা সবুজের ধ্বংস পৃথিবী জুড়ে মানুষের সভ্যতাকে সর্বনাশের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।তবে এই বনভূমি ধ্বংসের পেছনে প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক বিভিন্ন কারণ দায়ী।FAO এর তথ্য 2005 থেকে জানা যায় যে,বর্তমানে পৃথিবীতে মোট অরণ্যের পরিমাণ 952 লক্ষ হেক্টর।1979 থেকে 2000 সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট অরণ্য 423 কোটি হেক্টর থেকে কমে দাঁড়িয়েছে 420 কোটি হেক্টর।অর্থাৎ 22 বছরের মধ্যে পৃথিবীতে প্রায় 3 কোটি হেক্টর বনাঞ্চল কমে গেছে।FAO র হিসেব থেকে জানা যাচ্ছে বর্তমানে বছরে প্রায় 130 লক্ষ হেক্টর অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে এবং ভারতে নিধনের হার প্রায় 15 লক্ষ হেক্টর প্রতি বছর। Wilson's (1989) এর সমীক্ষা মতে,ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরন্য অঞ্চলে অরন্যে বিনাশের হার প্রতি বছরে প্রায় 1% এবং এর ফলে প্রতি বছরে 0.2-0.3 শতাংশ প্রজাতি লুপ্ত হয়ে। ভারতবর্ষের হ্মেত্রে অরণ্য ছেদনের চিত্র অত্যন্ত ভয়ানক।ভারতে প্রতি বছরে গড়ে 15 লহ্ম হেক্টর অরণ্য বিনষ্ট হয়, ফলস্বরূপ ভারতের মোট ভূভাগের প্রায় 1 শতাংশ ভূমি প্রতিবছর বন্ধ্যা ভূমিতে পরিণত হয়।
2. অরন্য ধ্বংসের কারণ -
অরণ্যধ্বংস পেছনের যে সমস্ত কারন গুলি রয়েছে তা মূলত 3টি ভাগে ভাগ করা যায়।
1. প্রাকৃতিক কারণ -
১. ভূমিকম্প -
ভূমিকম্পের ফলে অরন্যাবৃত অঞ্চলের বৃহ্ম গুলি অবনমন ঘটতে পারে এবং মাটির নীচে চাপা পড়তে পারে। উদাহরণ হল - পার্মিয়ান-কার্বনিফেরাস যুগে পৃথিবীর বিশাল অরন্যাঞ্চল মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় এবং তাপে ও চাপে কয়লার রূপান্তরিত হয়।
২. অগ্ন্যুৎপাত -
অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে উত্তপ্ত গলিত লাভা নির্গত হয় সেই লাভা স্রোত সন্নিহিত বনভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে বনভূমি সম্পন্ন রূপে বিনষ্ট হয়। উদাহরণ হল - ফিলিপাইন,মেক্সিকো,পেরু ইত্যাদি দেশের বহু অরণ্য অগ্ন্যুৎপাতের জন্য বিনষ্ট হয়েছে।
৩. ধস -
পাহাড়ি বা পার্বত্য অঞ্চলে ধসের ফলে প্রতিবছর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অরণ্যর বিনাশ ঘটে। ভূমিকম্প বা অতিবৃষ্টির কারণে শিলাস্তর আলগা হয়ে ধসের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হল - হিমালয়ে সরলবর্গীয় অরণ্যের ধ্বংস হয়।
৪. দাবানল -
প্রাকৃতিকভাবে অরণ্যতে দাবানল সৃষ্টি হয় এবং এর প্রভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অরণ্যর বিনাশ ঘটে। উদাহরণ হল - ক্যালিফোনিয়া,অস্ট্রেলিয়া,চিন ও ভারত প্রভৃতি দেশের অরণ্য বিনষ্ট হয়েছে।
৫. বিধ্বংসী ঝড় -
টাইফুন,টর্নেডো,সাইক্লোন প্রভৃতি বিধ্বংসী ঝড়ের প্রভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অরণ্যর ধ্বংস ঘটে। উদাহরণ - সাম্প্রতিক কালে আমফন ও যশ ঝড়ে ভারতে পশ্চিমবঙ্গ,ওড়িষা ও বাংলাদেশ এর প্রভাবে ফলে উপকূলীয় অঞ্চল অনেক অরণ্য বিনাশ ঘটে।
৬. অ্যাসিড বৃষ্টি -
অধঃহ্মেপণে PH এর মান 5.6 এর কম হলেই অধঃহ্মেপণকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলা হয়। বায়ুদূষক সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড থেকে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে।কোনো বনভূমির উপর দীর্ঘদিন যাবৎ অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বনভূমির বৃহ্মসমুহের শারীরবৃত্তীয় কাজ ব্যাহত হয় এবং ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - অ্যাসিড বৃষ্টি
৭. রোগ-পোকার আক্রমণ -
রোগ,পোকা বা পঙ্গপাল দ্বারা অরণ্যভূমি মাঝে মাঝে আক্রান্ত হয়।এর ফলে অরণ্যের যথেষ্ট হ্মতিসাধন হয়।
2. অর্থনৈতিক কারণ -
১. বনভূমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তর -
দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যের সংস্থানের জন্য অরণ্যকে কৃষিজমিতে রূপান্তর করা হয়।এই কারণে প্রতিবছর পৃথিবীতে গড়ে প্রায় 25 লহ্ম হেক্টর অরণ্যের বিনাশ ঘটেছে।এর ফলে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সাভানা তৃণভূমির ব্যাপক বিনাশ ঘটেছে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ তৃণভূমির ব্যবহার করা হচ্ছে বাগান চাষে।প্রেইরী,স্তেপ,পম্পাস,বাউন্স,ভেল্ড প্রভৃতি নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি অঞ্চলে গম চাষ ও পশুখাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে।দহ্মিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অরণ্য নিবিড় চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে।ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাগিচা চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২. ঝুমচাষের প্রভাব -
দহ্মিণ ও দহ্মিণ-পূর্ব এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যের বিনাশের অন্যতম কারণ হল ঝুমচাষ বা স্থানান্তর কৃষি। ভারতবর্ষে, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে এবং আফ্রিকা ও দহ্মিণ আমেরিকা মহাদেশের কিছু কিছু অনুন্নত উপজাতি সমাজে এখনো প্রাথমিক কৃষিরূপে স্থানান্তর কৃষির প্রচলন দেখা যায়। বনভূমি পুড়িয়ে এই চাষ করা হয় বলে এর ফলে ব্যাপক অরণ্যর ধ্বংস হয়। ভারতে প্রায় 6 লহ্ম 22 হাজার পরিবার ঝুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে।এর প্রভাবে আজ পর্যন্ত প্রায় 43 লহ্ম 50 হাজার হেক্টর বনভূমি বিনষ্ট হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জমিতে মোট জনসংখ্যার প্রায় 5% এরুপ কৃষিকাজে যুক্ত আছে।
৩. কৃষি পদ্ধতি -
বনভূমি সংলগ্ন কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতির প্রয়োগের ফলে হ্মুদ্র জীব,কীট পতঙ্গ,মাছি প্রভৃতি অরণ্যে প্রবেশ করে।এরা গাছের ভীষণ হ্মতি করে ও গাছের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়।
৪. বনভূমিকে পশুচারণ হ্মেত্রে রূপান্তর -
দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে দানাশস্যের ন্যায় দুধ, ঘি,মাখন,পনির, মাংস,পশম,চামড়া প্রভৃতি পশুজাত দ্রব্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।এর ফলে পশুচারণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার নাতিশীতোষ্ণ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অরণ্যকে ব্যাপক পরিমাণে পশুচারন ভূমিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
৫. অতিরিক্ত চারণ -
ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চল এবং শুষ্ক ও উপশুষ্ক অঞ্চলে হালকা অরণ্যতে অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে অরণ্যর বিনাশ ঘটে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অধিক জনসংখ্যার কারণে কোন নির্দিষ্ট পশুচারণ ভূমি না থাকায় ঝোপঝাড় সমন্বিত হালকা অরণ্যকে পশুপালন ভূমি হিসাবে ব্যবহৃত করা হয়।এর ফলে নতুন উদ্ভিদের পূনর্জন্ম ও বৃদ্ধি তেমন ঘটে না। উদাহরণ সাভানা তৃণভূমির অধিকাংশ অঞ্চল এভাবেই বিনষ্ট হয়েছে এবং ভারতের উত্তরাঞ্চলে অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণের ফলে মাথাপিছু অরণ্যের পরিমাণ হয়েছে 2.66 ঘনমিটার (2001)।
৬. বনভূমির দহন -
মানুষের সচেতন এবং অসচেতন ভাবে তার জীবিকার প্রয়োজনে অরণ্য দহন করে।ঝুম চাষ ছাড়াও পরবর্তী ঋতুতে নতুন উদ্ভিদ ও তৃণের সংস্থানের জন্য বনভূমি দহন করা হয়।এর প্রভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অরণ্যের বিনাশ ঘটে।যার ফলে মাটি শক্ত হয়ে যায়,মাটিতে উদ্ভিদের উপরাংশ ধ্বংস হয়। মাটির উর্বরতা কমে যায়,বিয়োজক প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।পরোহ্মভাবেও অরণ্যর হ্মতি হয়।
৭. কাঠ আহরণ -
বাণিজ্যিক বা মানুষের নিজস্ব প্রয়োজনে কাঠের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে অরণ্যর বিনাশ ঘটে।কাঠ শিল্পে, গৃহনির্মাণে জ্বালানির প্রয়োজনে, আসবাবপত্র নির্মাণে প্রয়োজন হয়,যার ফলে নির্বিচারে বৃহ্মচ্ছেদনের ফলে অরণ্যর বিনাশ ঘটে। ভারতীয় অরণ্য সর্বেহ্মণের সমীহ্মা অনুযায়ী ভারতে প্রতিবছর কাঠের চাহিদা প্রায় 2 কোটি 75 লহ্ম টন। কিন্তু অরণ্য সম্পদ সংরহ্মণের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অরণ্য থেকে কাঠ আহরণের সর্বোচ্চ অনুমোদন যোগ্য সীমা হল বছরে 1 কোটি 20 লহ্ম টন।1987 খ্রিস্টাব্দের সমীহ্মা অনুযায়ী ভারতে বছরে মোট জ্বালানি কাঠের চাহিদা প্রায় 15 কোটি 70 লহ্ম টন যা প্রায় 23 কোটি 50 লহ্ম ঘনমিটার কাঠের সমান। কিন্তু ভারতের অরণ্যর মোট জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ মাত্র 4 কোটি ঘনমিটার।ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বৃহ্মচ্ছেদনের পরিমাণ বাড়ছে।
৮. শিল্প স্থাপন -
উন্নত দেশগুলিতে শিল্প ব্যবস্থা দ্রুত সম্প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন শিল্পকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলি শিল্পোন্নত হওয়ার এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকেন্দ্র গড়ে তোলার ফলে বনভূমির আয়তন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
৯. সড়কপথের বিস্তার -
সমভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক পথের বিস্তারের কারণে বিস্তীর্ণ জুড়ে অরণ্যর বিনাশ ঘটে।
১০. খনিজ আহরণ -
বিভিন্ন খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য যে খনি খনন করা হয় তার প্রভাবে অরণ্যের বিনাশ ঘটে।
১১. বহুমুখী নদী পরিকল্পনা -
নদীর উপর বহুমুখী নদী পরিকল্পনার ফলে অরণ্য ধ্বংসের আর একটি অন্যতম কারণ। প্রধানত কৃষিকার্য ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীতে বাঁধ দিয়ে বাঁধের পশ্চাতে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয় এবং অরণ্য নষ্ট হয়।তাই গাড়োয়াল হিমালয়ে গঙ্গার উপর "তেহরী বাঁধ প্রকল্প" কে কেন্দ্র করে উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে।
১২. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন -
উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যে সমস্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, তার প্রভাবে বনাঞ্চল ক্রমশ ধ্বংসের মুখে এগিয়ে যাচ্ছে।
3. সামাজিক কারণ -
১. বসতি স্থাপন -
দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের আশ্রয়স্থল নির্মাণের তাগিদে বিশ্বের জনবহুল দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে অরণ্যধ্বংস করা হয়েছে।
২. গৃহনির্মাণ -
মানুষের গৃহসামগ্ৰী নির্মাণের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঠের প্রয়োজন।এই কাঠ সরবরাহের জন্য মানুষকে অধিকাংশ সময় বনভূমির ওপর নির্ভর করতে হয়।
৩. জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ -
গ্ৰাম্য অঞ্চলের রন্ধনকার্যে এবং শহরের অঞ্চলের অনেক কারখানায় আগুন জ্বালাতেও কাঠের ব্যবহার রয়েছে,যার উৎস বনভূমি।
৪. বেআইনিভাবে বৃহ্মছেদন -
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাঠের চোরাচালানকারী ব্যবসা বর্তমানে বেশ রমরমা।এই ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বিদেশের বাজারে কাঠ অবৈধভাবে রপ্তানি করতে গিয়ে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বেআইনিভাবে বৃহ্মছেদন করে চলেছে।
3. অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব -
অরণ্য ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক পরিবেশের উপর একটি প্রভাব বিস্তার করে।
1. প্রাকৃতিক প্রভাব -
১. ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি -
বনভূমির প্রভাবে বৃষ্টিপাতের জলধারা সরাসরি মৃত্তিকাতে আঘাত করতে পারে না।উদ্ভিদ আস্তরণের মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জলধারা পাতা,কান্ডের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্তিকাতে এসে পৌঁছায়,অরণ্য বিনাশের ফলে বৃষ্টির জলধারা সরাসরি মৃত্তিকাতে এসে পড়বে।এর ফলে মৃত্তিকাতে কণাগুলি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে বৃষ্টির জলের সঙ্গে পরিবাহিত হবে।এছাড়া অরণ্যের অভাবে পৃষ্ঠপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এর ফলে ভূমিহ্ময় হয়।পশুচারণের ফলে অরণ্যের বিনাশ ঘটলেও ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
২. ধস -
বৃক্ষরাশি তাদের শিকড়ের দ্বারা মৃত্তিকা ও শিলাসমুহকে দৃঢ় ভাবে আটকে রাখে।ফলে ঢালু পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যের অবস্থান এই সকল অঞ্চলের শিলাকে শিথিল হতে দেয় না। কিন্তু বৃহ্ম কাটার ফলে শিকড় পচে যায় এবং মৃত্তিকা শিলাখন্ড শিথিল হয়ে পড়ে,ফলে পার্বত্য অঞ্চলে ধসের সৃষ্টি হয়।
৩. মাটির উর্বরতা হ্রাস -
ভূমিহ্ময়ের ফলে মৃত্তিকার উপরের স্তরের পুষ্টি পদার্থ অপসারিত হয়।এর ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস পায়।
৪. মৃত্তিকা বিসর্পণ -
বৃক্ষসমূহের শিকড় মৃত্তিকাকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। কিন্তু কোনো স্থানের বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেলে বিশেষ করে ঢালু পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যের বিনাশ ঘটলে মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায় এবং ভূমির ভাল বরাবর নীচের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে অর্থাৎ মৃত্তিকার স্থানান্তর ঘটে।
৫. বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি -
বনভূমি বিনাশ ঘটলেও ভূমিহ্ময় বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত মৃত্তিকা নদীখাতে জমা হয়।ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়।বর্ষাকালে নদী উদ্বৃত্ত জল বহন করতে পারে না ফলে বনলতা বৃদ্ধি পায়।
৬. খরার প্রকোপ বৃদ্ধি -
পাতার মধ্য দিয়ে উদ্ভিদ সমূহ যে বাষ্পীয় প্রস্বেদন চালায় তা অরণ্য বিনাশের ফলে হ্রাস পায়।এর ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
৭. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস -
বায়ুতে আর্দ্রতার অতিরিক্ত সংযোজন ঘটিয়ে বায়ুকে সম্পৃক্ত করে ঘণীভবনের মাধ্যমে বনভূমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে আবার বনভূমির ধ্বংসের ফলে কোনো কোনো অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও হ্রাস পেয়েছে।
৮. ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি -
বনভূমির উপস্থিতি ঝড়ের তীব্রতাকে প্রতিহত করে। ফলে অরণ্য না থাকলে বায়ু তীব্রবেগে প্রবাহিত হয় এবং জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি করে।
৯. মরুভূমির প্রসাব -
অরণ্যের বিনাশ ঘটলেও মৃত্তিকার আর্দ্রতা হ্রাস পায়।বায়ুপ্রবাহ জনিত হ্ময় ও সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়।মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে এ কারণে মরুকরণ ঘটে।
১০. বিশ্ব উষ্ণায়ন -
ভৌগোলিক গণ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীগন মনে করেন অরণ্য শূন্যকরণ ও বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের মধ্যে একটি ধনাত্মক সম্পর্ক আছে।অরণ্য শূণ্যকরণ হলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত হ্রাস পায় ও বনভূমির পরিমাণ বাড়লে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।অরণ্যর পরিমান হ্রাস পেলে বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের এবং গ্ৰীণ হাইস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও ভূ-পৃষ্ঠে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়াও এই অরণ্যের কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করলে তা থেকেও বিপুল পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়ে গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের মাত্রা বাড়বে।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - বিশ্ব উষ্ণায়ন
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - গ্ৰীণ হাউস প্রভাব
১১. বাস্তু পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা -
অরণ্য হল বিভিন্ন প্রাণীর স্বাভাবিক বাসস্থান।বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে অরণ্যর বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে।অরণ্য বিনাশের ফলে প্রাণীর খাদ্যের ঘাটতি দেখা যায়।বহু প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয় বা অন্যত্র পরিযান করে।এর ফলে বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
১২. শক্তি প্রবাহ হ্রাস -
উদ্ভিদ হল প্রাথমিক উৎপাদক।সৌরশক্তিকে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে উদ্ভিদ তার কলায় সঞ্চিত করে।পরে পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে এই রাসায়নিক শক্তি যান্ত্রিক ও তাপশক্তিতে পরিণত হয়।এই শক্তি খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে অন্যান্য জীবদেহে সঞ্চারিত হয়।অরণ্য বিনাশের ফলে এই শক্তি সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস পায়।ফলে প্রাণী জগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়।
১৩. সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হ্ময়হ্মতি বৃদ্ধি -
সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসকে বাধা প্রদান করে ম্যানগ্ৰোভ অরণ্য উপকূলীয় হ্ময়হ্মতি হ্রাস করে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের দ্বারা উপকূল হ্ময়প্রাপ্ত হয়,জীবন ও সম্পত্তি হানি ঘটে। কিন্তু ম্যানগ্ৰোভ অরণ্যের সমাবেশ উপরোক্ত হ্ময়হ্মতির মাত্রাকে কমিয়ে দেয়।
১৪. জীব বৈচিত্র্যের ধ্বংস -
অরণ্যে যে জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরহ্মণে সাহায্য করে।অরণ্য ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যতা নষ্ট হয় এবং জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হয়।
2. অর্থনৈতিক প্রভাব -
১. কৃষি উপর প্রভাব -
অরণ্য শূণ্যকরণের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায় ও কৃষির জন্য পর্যাপ্ত জল সরবরাহ ব্যাহত হয়।এর ফলে কৃষির উৎপাদন কমে যায়।আবার অরণ্য শূন্যকরনের ফলে ঝড় ঝঞ্ঝার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও শস্যহানি ঘটে। অরণ্য ধ্বংস করার ফলে অরণ্যের উপর নির্ভরশীল তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্যের অভাবের তাড়নায় কৃষি ক্ষেত্রে প্রবেশ করে ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে।
২. কাষ্ঠশিল্পের উপর প্রভাব -
অরণ্য হ্রাস পাবার ফলে কাষ্ঠশিল্পের প্রয়োজনীয় কাঠের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।যেমন ভারতে সেগুন কাঠের মতো মূল্যবান কাঠ ব্যাপক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে।কাষ্ঠশিল্প হ্রাস পেলে শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে ও অনেক পরিবারে অপুষ্টি ও দারিদ্রের প্রকোপ বাড়বে।
৩. পরিবেশের উপর প্রভাব -
জলপথ, রেলপথের ও সড়ক পথের যানবাহন নির্মাণ শিল্পের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কাঠ ব্যবহৃত হয়।ফলে অরণ্যর পরিমাণ কমে যায়। পাশাপাশি মৃত্তিকা হ্ময় বৃদ্ধি পেয়ে নদীর জলধারন হ্মমতা কমে যায় ফলে বন্যার প্রকোপ দেখা যাতে পারে।
৪. অন্যান্য শিল্পের উপর প্রভাব -
কাগজ শিল্প সরাসরি ভাবে নরম কাঠ, বাঁশ,ঘাস প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল।তাই বনভূমি ধ্বংস হলে কাগজ শিল্প খুবই হ্মতিগ্ৰস্থ হবে। এছাড়াও কৃত্রিম রেয়ন শিল্প, আসবারপত্র নির্মাণ শিল্প প্রভৃতিও অরণ্যর অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৫. পরিবহনের উপর প্রভাব -
অরণ্যের বিনাশের ফলে জল পথের যানবাহন ও তৎসহ সড়ক পথের যানবাহন নির্মাণ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কাঠের সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার ফলে পরিবহন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।
৬. জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর প্রভাব -
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কেবলমাত্র উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে নদীর জলের গতিবেগ বেশি এবং খাড়াভাবে জল উচ্চ অংশ থেকে নীচের দিকে পতিত হয় সেখানে বসানো হয়। এছাড়াও কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করেও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কিন্তু বনভূমি ধ্বংসের ফলে মৃত্তিকা হ্ময়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং হ্ময়প্রাপ্ত মৃত্তিকা জল,বায়ু ইত্যাদির দ্বারা নদীর জল মিশে গিয়ে জলে কাদার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।ফলে টারবাইনের চাকাতে কাদা জমে গিয়ে তার গতিবেগ কমিয়ে দেয় এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে।
3. সামাজিক প্রভাব -
১. উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবনযাত্রা -
অরণ্য ধ্বংসের ফলে প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া আরণ্যক উপজাতির জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে ও তার ফলে নানারকম সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।অরণ্যের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা অরণ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত।যেমন সাঁওতালরা বৃক্ষকে পূজা করেন।সুতরাং ধর্মীয় অনুভূতিও বনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে।
২. উপজাতি সম্প্রদায়ের বাস্তুচ্যুত -
অরণ্যের মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতি, তাদের গৃহখাদ্যের অভ্যাস প্রভৃতি অরণ্যের উপর নির্ভরশীল।অনেক উপজাতি তেমন - পিগমি,বান্টু প্রভৃতিরা মাচা বেঁধে ঘর নির্মাণ করেন।জ্বালানি কাঠের জোগান সম্পূর্ণ ভাবে অরণ্যে বসবাসকারী উপজাতিরা বন থেকে সংগ্রহ করে। তারা অরণ্যের মধ্যে উৎসব পালন করে।ফলে অরণ্য ধ্বংস হলে এসব মানুষেরা বাস্তুচ্যুত হবে।
৩. মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও রোগ -
অরন্য ধ্বংসের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাবে।ফলে মানুষের বিভিন্ন স্বাস্থ্যহানি ও রোগ বৃদ্ধি ঘটে।
৪. পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি -
অরণ্য ধ্বংসের ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।যেমন - বায়ু দূষণ, জলদূষণ,মৃত্তিকা দূষণ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ দূষণ, বর্জ্য পদার্থ দূষণ প্রভৃতি।
4. অরণ্য সংরহ্মনের উপায় -
সমগ্ৰ জীবজগতের অস্তিত্ব ও পরিবেশের ভারসাম্য অরণ্যের উপর নির্ভরশীল।তাই অরণ্য সংরহ্মন অত্যন্ত জরুরী।নিন্মলিখিত উপায়ে অরণ্য সংরহ্মন করা যায়।-
১. বনসৃজন -
বনভূমির সৃষ্টি অরণ্য সংরহ্মণের অন্যতম উপায়। বিভিন্ন উপায়ে বনভূমি সৃষ্টি করা যেতে পারে।যথা -
- বনভূমির ধ্বংস প্রাপ্ত অংশে বৃহ্মরোপন।
- পতিত জমিতে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহ্মরোপণ।
- চিরাচরিত, সামাজিক ও কৃষি পদ্ধতিতে নতুন চারাগাছ রোপণ।
- পরিণত বৃহ্মচ্ছেদনের স্থানে নতুন চারাগাছ রোপণ।
- অলাভজনক কৃষিজমি ও পশুচারণ জমিতে বনভূমি সৃষ্টি।
- বনমহোৎসব পালন।
২. সংরক্ষিত অরণ্যের সংরক্ষণ -
ক্ষতিগ্রস্ত অরণ্যগুলিকে সংরক্ষিত অরণ্য, উদ্ভিদ আশ্রয়স্থল, জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি ঘোষণা করে সংরক্ষণ করা যায়। জীবজন্তুর জন্য সংরক্ষণের বাস্তুতন্ত্রের খুব প্রয়োজনীয়তা আছে।যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা জাতীয় পার্কগুলিতে অরণ্য ও পশু সংরক্ষণ করা হয়। ভারতবর্ষের সংরক্ষিত বনভূমি,অভয়ারণ্য,মৃগদাব গড়ে তুলে অরণ্য ও পশু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৩. উপযুক্ত ভূমিব্যবহার ব্যবস্থার প্রয়োজন -
ভূমির অবস্থান,মাটির চরিত্র এবং জমির অন্যান্য বিশিষ্টতা অনুযায়ী জমিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে জমির ব্যবহার নির্দিষ্ট করে বনসম্পদ সংরহ্মণ ব্যবস্থা সফল করা যায়।
৪. নিয়ন্ত্রিত বৃহ্মচ্ছেদন -
কাঠের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সমতা বজায় রেখে গাছ কাটার পরিমাণ নির্ধারণ করা দরকার,এর সঙ্গে অপরিনত বা চারাগাছ না কাটা হয় সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
৫. অপচয় প্রশমন -
কাঠ ও কাঠজাত দ্রব্যের অপচয় নিবারণ করে অরণ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যায়।
৬. নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ -
অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণে অরণ্যের অনেক অপরিণত গাছ নষ্ট হয়। গবাদি পশু চারাগাছ খেয়ে নেয়,ফলে বনভূমির প্রসার রোধ হয়।যদি নির্দিষ্ট পশুচারণ ক্ষেত্রের ব্যবস্থা করা হয় এবং আলাদাভাবে তৃণক্ষেত্র সৃষ্টি করা ও সংরক্ষণ করা যায় তাহলে অরণ্য সংরক্ষণ সম্ভব। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে চারাগাছের বনভূমিতে আইন করে পশুচারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৭. জীবজন্তুর পরিবেশ সংরক্ষণ ও খাদ্যের জোগান -
জীবজন্তু বাস্তুতন্ত্রের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।পরিবেশ তন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সংরক্ষিত বনভূমি, অভয়ারণ্য,মৃগদাম প্রভৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ বিদেশে অরণ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
৮. কীট পতঙ্গ ও রোগ নিবারণ -
কীট পতঙ্গের আক্রমণে প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ব্যাপক ভাবে বনভূমির ক্ষতি হচ্ছে।অরণ্য সম্পদের সুরক্ষার জন্য কীট পতঙ্গ,রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিহত করা দরকার।
৯. দাবানল নিয়ন্ত্রণ -
অরণ্যের শুকনো ডালপালা পরিষ্কার,দ্রুত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে দাবানল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।এক্ষেত্রে কৃত্রিম উপগ্ৰহের সাহায্যে নেওয়া যেতে পারে। দাবানল প্রতিরোধে কানাডা ও রাশিয়া বিশেষ ভাবে সচেষ্ট।ফেডারেশনের বনাঞ্চলে মাঝে মাঝেই দাবানল সৃষ্টি হয়। কানাডার বনগুলোতে অল্প দূরত্বের ব্যবধানে দাবানল রোধ করার জন্য প্রহরাকেন্দ্র আছে।এইসব প্রহরাকেন্দ্রে খবরাখবর দেবার আধুনিক ব্যবস্থা অগ্নিনিবারক যন্ত্রাদি রয়েছে।
১০. কাঠের বিকল্প দ্রব্য আবিষ্কার -
কাঠের পরিবর্ত দ্রব্য যেমন লোহা,অ্যালুমিনিয়ামের দরজা-জানালা,PVC বা কাঁচের পাল্লা,কংক্রিটের স্লিপার ইত্যাদির ব্যবহার এবং কাঠের বিকল্প সুলভ জ্বালানি আবিষ্কারের মাধ্যমে অরণ্য সংরক্ষণ সম্ভব।
১১. উপযুক্ত তত্ত্বাবধান -
অরণ্য সংরক্ষণের কাজ সঠিক ভাবে তত্ত্বাবধানের জন্য পুলিশ,প্রশাসন ও বনরক্ষকদের মধ্যে সঠিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
১২. যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ -
সরকার যদি অরণ্যের আয়ের এক অংশ বনবাসীদের মধ্যে বন্টন করে দেয় তাহলে বনসংরক্ষণে তাদের আগ্রহ বাড়বে।এইভাবে যৌথ উদ্যোগে সংরক্ষণ সম্ভব।
১৩. আইনি পদক্ষেপ -
অরন্য সংরহ্মণ এবং অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব থেকে রহ্মার্থে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও আইন লঙ্ঘনকারী শাস্তি বিধান দেওয়া হয়েছে।যথা - ভারতের বনভূমি সংরহ্মণে বিভিন্ন আইন -
- Indian Forest Act,1927
- Wild Life (Protection) Act,1972
- Indian Forest Act,1878
- Forests (Protection) Act,1980
- Wild Life Protection (Amendment) Act,1991
5. উপসংহার -
পরিশেষে বলা যায় যে,মানুষ সহ প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার শর্ত হল জল ও অক্সিজেন। অক্সিজেন সরবরাহকারী একমাত্র উপাদান সবুজ উদ্ভিদের যথেচ্ছ কর্তন প্রকৃতিতে অক্সিজেনের ভারসাম্য নষ্ট করে বিশ্বের সমস্ত প্রাণীকুলের কাছে এক অস্তিত্বের সংকট আনছে।এই সমস্যার একমাত্র সমাধান অরণ্যধ্বংস নয়,প্রয়োজন অরণ্যসৃজন।তাই 21 শে মার্চ বিশ্ব অরণ্য দিবস হিসাবে পালন করা হয়।বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সবুজ পৃথিবী বজায় রাখার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মঙ্গলজনক হবে।
CLICK HERE -