অ্যাসিড বৃষ্টি||Acid Rain

অ্যাসিড বৃষ্টি||Acid Rain

অ্যাসিড বৃষ্টি||Acid Rain

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Acid Rain
Acid Rain

Assignment Questions -

1. অ্যাসিড বৃষ্টি কি। অ্যাসিড বৃষ্টির সৃষ্টি কারণ গুলি কী কী।||What Is Acid Rain? What Are The Causes Of Acid Rain?

2. অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাব গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।||Briefly Describe The Effects Of Acid Rain.

3. অ্যাসিড বৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ গুলি কি। অ্যাসিড বৃষ্টির কয়েকটি উদাহরণ দাও।||What Are The Controls Of Acid Rain? Give Some Examples Of Acid Rain.

অ্যাসিড বৃষ্টি

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. অ্যাসিড বৃষ্টি -

নাইট্রোজেনের অক্সাইড এবং সালফারের অক্সাইড সমূহ বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এসে যথাক্রমে নাইট্রিক অ্যাসিড এবং সালফিউরিক অ্যাসিড পরিণত হয়। বৃষ্টির জলের সঙ্গে যখন এই সব অ্যাসিড ভূ-পৃষ্ঠের এসে পড়ে তখন একে অম্লবৃষ্টি বা অ্যাসিড বৃষ্টি বলে। অর্থাৎ বৃষ্টির জলে অ্যাসিড মিশ্রিত থাকলে সে বৃষ্টিকে অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি বলে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলা হয় , বৃষ্টিপাতের জলে pH এর মাত্রা স্বাভাবিকের (pH = 6 - 7) থেকে 5.6 এর কম হলে সেই বৃষ্টিপাতকে অম্লবৃষ্টি বা অ্যাসিড বৃষ্টি বলে।এই অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্ল বৃষ্টির জন্য সালফিউরিক অ্যাসিড 70% ভাগ দায়ী।

2. অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ এবং বিক্রিয়া -

• কারণ -

  • বিদ্যুৎ চমক।
  • জীবাশ্ম জ্বালানী পুড়িয়ে।
  • বিভিন্ন কলকারখানা ও শিল্প কেন্দ্র থেকে।
  • খনিজ তেল পরিশোধনাগার থেকে।
  • ধাতু নিষ্কাশনে দ্বারা।
  • খনিজ তেলের যানবাহন।

• বিক্রিয়া -

. সালফার-ডাই-অক্সাইডের বিক্রিয়া -

ধাতু নিষ্কাশনে সালফার ঘটিত আকরিকের বায়ুতে তাপ জারণের (Roasting) ফলে প্রচুর পরিমাণে সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় এবং বায়ুমন্ডলের মিশ্রিত হয়।-

2ZnS  +  3O2  (Roasting) - 2ZnO   + 2SO2  

Cu2S,Fe2S+4O2(Roasting) - Cu2S+2FeO + 3SO2

সালফার ঘটিত খনিজ তেল যানবাহনের দহনের ফলে প্রচুর পরিমাণে সালফার-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় ও বায়ুমণ্ডলের মিশ্রিত হয়। তাছাড়াও তেল শিল্পে প্রচুর হাইড্রোজেন সালফাইড এবং সালফার-ডাই-অক্সাইড বায়ুমন্ডল অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফার-ট্রাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে।-

 2H2S  + 3O2   -   2H2O + 2SO2  

 2SO2+O2(Sunlight 290- 400 nm) -  2SO3

SO3 +  H2O - H2SO4         

২. নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের বিক্রিয়া -

বায়ুমণ্ডলে যে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন আছে তা বিদ্যুৎ চমকের প্রাক্কালে পরস্পর যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে।-

N2 + O2 —— > 2NO

এই নাইট্রিক অক্সাইড স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেন-ডাই- অক্সাইড উৎপন্ন করে।-

2NO + O2 —— > 2NO2

আবার,নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপাদন শিল্পে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় এবং বায়ুমন্ডলের মিশ্রিত হয়।

NaNO3  + H2SO4 - NaHSO4  + HNO3             

4HNO3   -  4NO2 + 2H2O + O2  

জ্বালানী তেল পুড়লেও নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয় এবং বায়ুমন্ডলের মিশ্রিত হয়।

৩. কার্বন-ডাই-অক্সাইডের বিক্রিয়া -

বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিডে উৎপন্ন হয়।-

CO2 + H2O —— > H2CO3

কার্বনিক অ্যাসিড মৃদু ও ভঙ্গুর বলে ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয় না।তাই অ্যাসিড বৃষ্টি বলতে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড বৃষ্টিকেই বোঝায়। সালফার এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমুহ বৃষ্টির জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং বৃষ্টির জলের সঙ্গেই মাটিতে পড়ে।এই অ্যাসিড বৃষ্টিতে সালফিউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ প্রায় 70% এবং নাইট্রিক অ্যাসিডের পরিমাণ প্রায় 30%।এই অ্যাসিড মিশ্রিত জল ভূপৃষ্ঠে পড়ে গড়িয়ে নদনদী,পুকুর,খাল-বিল,হ্রদ পূরণ করেও গড়িয়ে সমুদ্রে যায়।যা জলদূষণে সহায়তা করে।

3. জলের pH -

জল অম্ল বা হ্মার তা বোঝা যায় জলের pH -এর মান থেকে। Potential of Hydrogenion কে সংহ্মেপে pH বলা হয়।প্রকৃতপহ্মে pH হল হাইড্রোজেন আয়নের গাঢ়ত্বের ঋণাত্মক লগারিদম। অর্থাৎ -

pH = -log10C11+

pH স্কেল 0-14 ধরা হয়। বিশুদ্ধ জলের pH এর 7।আম্লিক জলে pH এর মান 0 থেকে আরম্ভ করে 7 এর কম হবে।তীব্র আম্লিক দ্রবণের pH এর মান 1 থেকে 4 এর মধ্যে। আর হ্মারীয় দ্রবণের pH এর মান 7 এর চেয়ে বেশী হয়ে 14 পর্যন্ত হবে। তীব্র হ্মারীয় দ্রবণের pH এর মান 10 থেকে 14 এর মধ্যে হবে।

4. অ্যাসিড বৃষ্টির উল্লেখযোগ্য ঘটনা -

  1. কানাডার টরেন্টোয় 1979 খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাস, বৃষ্টির জলে pH এর মান 3.5
  2. 1981 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার লস্ এঞ্জেলেসে যে ধোঁয়াশায় সৃষ্টি হয়েছিল তার pH মান হল 2.2।
  3. 1981 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার অ্যাসিড বৃষ্টির জলে pH এর মান ছিল 1.4।
  4. কানাডার ওন্টারিও 250000 হ্রদের মধ্যে 140টি অ্যাসিড বৃষ্টিতে পূর্ণ হওয়ার বর্তমানে মৃত।
  5. দহ্মিণ নরওয়ের 33000 বর্গ কিলোমিটার হ্রদ এলাকায় মধ্যে অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য 13000 বর্গ কিলোমিটার মাছ শূণ্য।
  6. দহ্মিণ কানাডার নোভা স্কোটিয়া 9টি নদীর জলের pH এর মান 4.7 এর কম,ফলে নদীর জল পরিত্যক্ত এবং মাছ শূণ্য,যদিও অতীতে রুই জাতীয় মাছের চাষ করা হতো।
  7. ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি 107টি হ্রদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মাছ শূণ্য।
  8. ইউরোপ ও আমেরিকার পাহাড় অঞ্চলের এক ধরনের লাল পাইন গাছ বিগত 25 বছরে প্রায় অর্ধেক মরে গেছে।
  9. ভারতবর্ষের তাজমহলের এই অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাব লহ্ম্য করা যাচ্ছে।

5. অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাব -

১. জলসম্পদ ও জলজ প্রাণীর উপর প্রভাব -

  • অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী সরাসরি আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও তীরবর্তী মৃত্তিকাস্থিত পারদ,অ্যালুমিনিয়াম ও তামাঘটিত যৌগকে হ্ময় করে এবং জলে ওদের লবণ মিশ্রিত করে জলকে বিষাক্ত করে,ফলে জল যেমন পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
  • অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে যদি কোনো জলাশয়ে জলের pH এর মান 4 এর কম হলে তাহলে সেই জলাশয়ের সব সজীব পদার্থ মরে যায়।এজন্য ইউরোপ ও আমেরিকার অ্যাসিড বৃষ্টিকে হ্রদ হস্তারক বলে।
  • জলে থাকা ফাইট্রো প্ল্যাঙ্কটন ও জু প্ল্যাঙ্কটনরা হ্মতিগ্ৰস্ত হয় বা মরে যায়।
  • খাল বিল নদীনালার মাছের প্রজনন হ্মমতা কমেছে।
  • নদী, পুকুর বা জলাশয়ে pH এর মান কমিয়ে দেয়।

২. উদ্ভিদের উপর প্রভাব -

  • স্থলভাগে গাছপালা ও কৃষিজ ফসলে বিঘ্নিত হয়।
  • উদ্ভিদের পরাগ মিলনে হ্মতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • শস্যের উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে।

৩. মৃত্তিকা উপর প্রভাব -

  • কৃষি জমির মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস  এবং ক্রমশ অনুর্বর হয়ে যায়।
  • মৃত্তিকা আম্লিক হলে অজৈব খাদ্য কণা ও টক্সিক ধাতুর দ্রবণীয়তার পরিবর্তন হয়,আয়ন বিনিময়ে বাধা সৃষ্টি হয়, মৃত্তিকার মধ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী ও সূক্ষ্ম জীবাণুরা হ্মতিগ্ৰস্ত হয় বা মরে যায়।
  • মৃত্তিকার অম্লতা বৃদ্ধির জন্য নীচের স্তর থেকে গাছেদের খাদ্যগ্ৰহন কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে,ফলে গাছ মরে যায়।
  • বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশী অথচ pH এর মান কম এমন অঞ্চলে মৃত্তিকার মধ্যে গাঢ় রং এর জৈব যৌগের পচন কম হবে।

৪. বনাঞ্চলের উপর প্রভাব -

  • অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বিস্তৃত বনাঞ্চলের হ্মতি হয়।
  • বনাঞ্চলের গাছগুলির প্রায় অর্ধেক মরে যায়।
  • বনে থাকা পশুপাখি 

৫. মানুষ এবং মানুষের কারুকার্যের উপর প্রভাব -

  • অ্যাসিড বৃষ্টি যদিও সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের হ্মতি করে না, তবুও এ বৃষ্টির কারণে অ্যালুমিনিয়াম এবং তামা নির্মিত জলের পাইপ হ্ময়প্রাপ্ত হয় এবং বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়াম এবং তামা ঘটিত লবণ জলের সঙ্গে মিশে মানুষের শরীরে চলে যায়।এর ফলে পেটের অসুখ, মানসিক ভারসাম্যহীনতা,শ্বাস ক্রিয়া ও হৃৎপিণ্ড সম্বন্ধীয় নানা রোগ দেখা দেয়।
  • মানুষের দালান কোঠা এর রং নষ্ট করে বিবর্ণ করে দেয়।
  • স্থাপত্য,ভাষ্কর্য, মনুমেন্ট, প্রাচীন ঐতিহাসিক প্রাসাদ ক্রমশ হ্ময়ে যাচ্ছে।যেমন তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল,রোমের বিখ্যাত প্রেহ্মাগৃহ, ওয়াশিংটন মনুমেন্ট,লিঙ্কন, স্মৃতিসৌধ, গ্ৰীস,ইটালি,হল্যান্ডের বিভিন্ন মর্মর মূর্তি।
  • মার্বেল,স্লেট,লাইমস্টোন,গ্ৰানাইট,চুন সুরকির বিভিন্ন মূর্তি বা প্রসাদে থেকে দ্রাব্য সালফেট অম্লবৃষ্টির প্রভাবে মার্বেল বা লাইমস্টোন থেকে ক্রমশ চুঁয়ে পড়ে।-
CaCO3  + H2SO4    - CaSO4   + CO2 +  H2O      

6. অ্যাসিড বৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ মূলক ব্যবস্থা -
  1. সালফার যুক্ত জ্বালানীর ব্যবহারের পরিমাণ ততটা সম্ভব কম করতে হবে।
  2. জীবাশ্ম জ্বালানীর বিকল্প রূপ ব্যবহার করতে হবে। উদাহরণ - এল.এন.জি বা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করতে হবে।
  3. ইটের ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিশোধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  4. শিল্প কারখানার বর্জ্য গ্যাস নির্গত না করে তা রিসাইক্লিং বা পুনসঞ্চালন করা যেতে পারে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা যেতে পারে।এ ব্যাপারে শিল্প কলকারখানা গুলিকে সচেষ্ট হতে হবে।
  5. ব্যাপক পরিমানে বৃহ্মরোপন করতে হবে যাতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
  6. কলকারখানা ও শিল্প কেন্দ্র গুলিতে বৃহ্মরোপন করতে হবে।
  7. বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ও সালফারের অক্সাইড এর ধোঁয়া কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  8. মোটর যানের ইঞ্জিনগুলির আধুনিকীকরণ করতে হবে।
  9. জলাশয়ে অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে অম্লত্ব বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজন মতো চুন ছড়িয়ে জলের অম্লত্ব মোচন করতে হবে।
  10. জনগনের মধ্যে সচেতনতা বোধ গড়ে তুলতে হবে।

7. উপসংহার -

পরিশেষে বলা যায়,বিশ্বায়নকে স্বাগত জানানোর পরিণতি হিসেবে অ্যাসিড বৃষ্টি আজ বিশ্বব্যাপী এক সমস্যা।অ্যাসিড বৃষ্টির মূলত প্রত্যহ্মভাবে বায়ুদূষণের সাথে যুক্ত হলেও এর পরোহ্মভাবে প্রভাব পড়ে জলদূষণ এবং মৃত্তিকা দূষণে।এই অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে আজ বহু জীবকুলের প্রাণস্পন্দন আজ আর নেই। বিশ্বায়নের যুগে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ফলে মানুষ আজ হয়ে ওঠে বেপরোয়া,সময় থাকতে যদি এর নিয়ন্ত্রণ বা সচেতনতা বোধ না ভাবে তাহলে অচিরেই বিলুপ্ত হবে অনেক প্রজাতি এবং মানুষের মধ্যে নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি প্রাদুর্ভাব।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post