জলদূষণ||Water Pollution

জলদূষণ||Water Pollution

 জলদূষণ||Water Pollution

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Water Pollution (Concept, Sources,types, Causes,Effects, Control and Acts)
Water Pollution

Assignment Questions -

1. জলদূষণ বলতে কি বোঝ। জলদূষণের উৎসগুলি কি কি।||What Do You Mean By Water Pollution? What Are The Sources Of Water Pollution?

2. জলদূষণের কারন এবং তার প্রভাব গুলি আলোচনা কর।||Discuss The Causes And Effects Of Water Pollution.

3. জলদূষণের নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা গুলি কি কি।জলদূষণ নিয়ন্ত্রনে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||What Are The Measures To Control Water Pollution. Briefly Describe The Steps Taken By The Government Of India To Control Water Pollution.

জলদূষণ -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

আধুনিক জীবনযাপনে এবং শিল্পের প্রগতির জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলিতে জলদূষণ ঘটে।আবার তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে মানুষ ও প্রাণীর বর্জ্য পদার্থের থেকে জলদূষণ হয়। অর্থাৎ জলের দূষণ কোন একটি রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।সারা পৃথিবী এখন জলদূষণে সংক্রামিত। দেশের শিল্পায়ন ও উন্নতির উপর বিভিন্ন রাষ্ট্রে জলদূষণের মাত্রা ও প্রকৃতি নির্ভর করে। কীটনাশক, কারখানা থেকে মুক্ত শিল্পজাত বর্জ্য,অ্যাসিড, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের গরম জল প্রভৃতি জলের উপর মন্দ প্রভাব বিস্তার করে বলে এদের বিপজ্জনক জল দূষক বলা হয়।

• জলদূষণের সংজ্ঞা -

বিজ্ঞানী সাউথউইক (C. S. Southwick) 1976 খ্রিস্টাব্দে বলেছেন, মানুষের ক্রিয়াকলাপ ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের অবনতি হওয়াকে জলদূষণ বলা হয়। অর্থাৎ জলের সঙ্গে কোনো অবাঞ্চিত পদার্থ মিশে যাওয়ার ফলে যদি জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে জলজ উদ্ভিদ,প্রাণী ও মানুষের হ্মতির আশঙ্কা থাকে,তবে জলের সেই খারাপ অবস্থাকে জলদূষণ বলে।মনিবাসকম 1984 খ্রিস্টাব্দে তাঁর "Environmental Pollution" নামক গ্ৰন্থে জানিয়েছেন,যে জলের বৈশিষ্ট্য এবং গুনগত মানের কুফলদায়ী পরিবর্তনকে জল দূষণ বলে।এর ফলে জলের উপযোগিতা নষ্ট হয়।

2. জলদূষণের উৎস -

জলদূষণের বিভিন্ন উৎস গুলি নিন্মে বর্ণনা করা হল -

১. নর্দমা নিষ্কাশিত আর্বজনা ও ময়লা জলদূষণ -

আর্বজনা ও ময়লা জল বলতে বোঝায় যার মধ্যে অবাঞ্ছিত পদার্থ যেমন পশুদের মল ও বর্জ্য পদার্থ, মানুষের মল,জৈব ও অজৈব পদার্থ জলে মেশে,যা নর্দমার জল দ্বারা মারাত্মকভাবে দূষিত হয়।এই নর্দমা নিষ্কাশিত আর্বজনার জলে প্রোটিন ও কার্বহাইড্রেট মিলে 40-50%,ফ্যাট 5-10%, কঠিন বস্তু 0.02-0.08% থাকে।এই জৈব আবর্জনা দ্রুত বিয়োজিত হয়ে জলের ধর্মাবলীর বিরূপ পরিবর্তন ঘটায় যা স্বাস্থ্যের পহ্মে হ্মতিকর এবং নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি হয়।প্রধানত নর্দমা নিষ্কাশিত জলধারে মিশে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জারিত হওয়ার ফলে 

  1. জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়। 
  2. জলের আগাছা বেড়ে যায়। 
  3. জলের গন্ধ কটু হয়। 
  4. জলের রং পরিবর্তন ঘটে। 
  5. জলের ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়। 
  6. জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।
  7. জলে শ্যাওলা ও ছত্রাক প্রাচুর্য দেখা যায়।

২. গৃহস্থালির আর্বজনা ও ময়লা জলদূষণ -

গৃহস্থালির আবর্জনা মাটির উপর দীর্ঘদিন জমে থাকার কারণে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক ও রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু জলাশয় এবং মাটির নিচের জলবিভাজিকা, ভৌম জল,কৌশিক জল দূষিত করে।ফলে এই জলে জীবাণু উপস্থিত হয়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করার ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে এবং চাহিদা বেড়ে যায়।জল স্বাদহীন,গন্ধযুক্ত হয়, ঘোলাটে দেখায়।

৩. শিল্পায়ন জনিত জলদূষণ -

চিনি,সিমেন্ট,কাগজ,চামড়া,সার,বস্ত্র,নরম পানীয়,খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ,বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি শিল্প থেকে নিকাশী নালার আশা শিল্পজাত বর্জ্য জলদূষণ করে।শিল্পাজাত বর্জ্যের প্রকৃতি অনুযায়ী জলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলীর পরিবর্তন হয়।শিল্পজাত আর্বজনায় সাধারণত তামা,সীসা,দস্তা,সোডিয়াম,ক্যাডমিয়াম,সালফার, ফসফরাস,ক্লোরিন প্রভৃতি থাকে।যা কলকারখানা থেকে পাইপের সাহায্যে পুকুর,হ্রদ,নদীর জলে ফেলায় জল দূষিত হয়ে।

৪. কৃষিজনিত জলদূষণ -

গ্ৰামাঞ্চলে ব্যবহৃত কীটনাশক,আগাছা দমনের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ,রাসায়নিক সারের নাইট্রেট,পটাশ,ফসফেট প্রভৃতি নিকাশি নালার মাধ্যমে পুকুর,খাল,বিল,নদী নালায় এসে মিশে জল দূষণ করে।গবাদি পশুর থেকে মলমূত্র,নাইট্রোজেন,অ্যামোনিয়া,জৈব সার থেকে ব্যাকটেরিয়া,রাসায়নিক সার থেকে ফসফেট, নাইট্রোজেন,কীটনাশক থেকে জৈব-ক্লোরিন প্রভৃতি জলে দূষণ ঘটানোর অংশ নেয়। 

৫. ডিটারজেন্টের দ্বারা জলদূষণ - 

ডিটারজেন্ট বর্তমানে সাবানের বিকল্প হিসাবে অধিকাংশ পরিবারে ব্যবহৃত হয়।ডিটারজেন্টের বিষক্রিয়ায় স্বাদু জলে জলাশয়ে উদ্ভিদকণা,প্রাণীকণা সহ জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।মূলত ডিটারজেন্টের মধ্যে থাকা ABS (অ্যালকিল বেনজিন সালফোনেট) এবং LAS (লিনিয়ার অ্যালকিল সালফোনেট) নামক রাসায়নিক যৌগ জলদূষনের সক্রিয় ভূমিকা নেয়। স্বাভাবিক ডিটারজেন্টের তুলনায় কৃত্রিম ডিটারজেন্টের বিষক্রিয়া অনেক তীব্র যা জলকে দূষিত করে।

৬. সমুদ্র জলে ভাসমান তেলের জলদূষণ -

জাহাজে জাহাজে ধাক্কায় দুর্ঘটনা,জাহাজ ডুবি, মাঝ সমুদ্রে তেল ট্যাঙ্কার সাফ করা,ট্যাঙ্কার থেকে ছিদ্রপথে তেল চুইয়ে পড়া,সমুদ্রের তৈলখনি থেকে তেল উত্তোলনের সময় বড়সড় দুর্ঘটনা, সমুদ্রে তলদেশে পেতে রাখা পাইপ লাইন থেকে তেল চুঁইয়ে পড়া বা যুদ্ধের সময় আরব দেশগুলিতে সমুদ্রজলে তেল ফেলে দেওয়া প্রভৃতি কারণে সমুদ্রজলে ভাসমান তেলের আস্তরণ তৈরি হয়।হিসাব মতো প্রায় ৩০ লক্ষ ঘনমিটার তেল প্রতিবছর সমুদ্রে পড়ায় সমুদ্রে জলদূষণ হয় এবং এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু হয়। 

৭. তাপের প্রভাবে জলদূষণ -

বিভিন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের থেকে নির্গত গরম জল পুকুর, খাল,বিল,নদী নালায় এসে মিশে জলাশয়ের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং জলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলীর রূপ পরিবর্তন ঘটালে জল দূষিত হয়। আবার বিভিন্ন ধরনের কলকারখানার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি,যন্ত্রাংশ কে শীতল করতে জল ছড়ানো হয়।জল গরম হয়ে কারখানার নিকাশী নালা দিয়ে জলাশয়ে এসে মেশে এবং তাপ বেড়ে গিয়ে জলদূষণ ঘটায়।বিভিন্ন জলাশয়ে তাপদূষণ এর ফলে জলের তাপমাত্রা 30-35°c পৌঁছালে সেই জলকে 'বায়োলজিক্যাল ডেসার্ট' বলা হয়।

৮. তেজস্ক্রিয় পদার্থ দ্বারা জলদূষণ -

আণবিক শিল্প,আণবিক বিদ্যুৎ,বিভিন্ন গবেষণার পর তেজষ্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রোথিত করায় তেজস্ক্রিয় পদার্থের মিশ্রণে জল দূষিত হয়। আবার অনেক সময় তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণের ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বিভিন্ন জলাশয়ে নালার মাধ্যমে এসে মেশে।যার ফলে জলদূষণ হয়। 

৯. ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস দ্বারা জলদূষণ -

বৃষ্টির জল যদি নর্দমা, ডাস্টবিন, খাটাল, শ্মশান, ভাগাড়, আস্তাকুড়ে ধুয়ে নিয়ে এসে পুকুর,খাল,বিল,নদী, নালার এসে পড়ে তবে এই দূষিত জলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জলাশয়ের জলকে দূষিত করে।ঐ সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস টাইফয়েড,আন্ত্রিক,আমাশা,পোলিও হেপাটাইটিস প্রভৃতি রোগের সংক্রমণ ঘটায়।

১০. ধাতব বর্জ্যের দ্বারা জলদূষণ - 

ধাতব চামড়া,কাগজ,রং,সিমেন্ট শিল্পের থেকে ধাতব বর্জ্য পাইপ বা নালা পথে এসে বা চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়লে জলাশয়ে মিশলে বা মাটির অভ্যন্তরে ধাতব আবর্জনার মধ্যে দিয়ে জল দূষিত হয়।যেমন শিল্প থেকে মে সমস্ত শিল্পজনিত বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়।-

  • কাগজ - মুক্ত ক্লোরিন।
  • চর্মশিল্প - ফেনল,ক্রোমিয়াম,সালফাইড,ট্যানিক অ্যাসিড।
  • রবাব - জিঙ্ক
  • রাসায়নিক সার - ক্লোরাইড,জৈব ফসফেট।
  • মদ বা সুরা - জৈব অ্যাসিড,অ্যালডিহাইড।
  • ব্যাটারি - অ্যাসিড,সীসা।
  • বস্ত্র ও কোক - সালফাইড অ্যামোনিয়া, সায়ানাইড,ফেনল।
  • কীটনাশক - বেনজিন,কেপোন।
  • রঙ - সীসা,ফেনল। 
  • নরম পানীয় - দ্রবীভূত জৈব পদার্থ।
  • তেল শোধনাগার - জৈব অঙ্গার,ফেনল,চর্বি।
  • পেট্রো কেমিক্যাল - তেল,গ্ৰিজ, সালফার।

3. জলদূষণের প্রকার -

জলদূষণের নানা প্রকার হয়ে থাকে।যেমন -

১.  ভৌম জল দূষণ -

মানুষের বিবেচনাহীন এবং অবৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের ফলে বিভিন্ন মাত্রায় খনিজ,ধাতু এবং রাসায়নিক পদার্থ ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন অ্যাকুইফারে সঞ্চিত জলে সঙ্গে মিশে যে দূষণের সৃষ্টি করে, তাকে ভৌম জল দূষণ বলে।

যেমন - আর্সেনিক দূষণ ও ফ্লুরাইড দূষণ এই ভৌম জলের একটি অন্যতম উদাহরণ।

২. নদী দূষণ -

নদীর জলের সঙ্গে বিভিন্ন অজৈব পদার্থ বিভিন্ন মাত্রার মিশে গিয়ে ভূপৃষ্ঠের নদীর জলকে দূষিত করে,তাকে নদী দূষণ বলে।

যেমন - ভারতবর্ষে গঙ্গা নদী দূষণ একটি নদী দূষণ উদাহরণ।

৩. হ্রদ দূষণ -

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানুষসৃষ্ট কারনে হ্রদের বিভিন্ন মাত্রায় খনিজ ও রাসায়নিক পদার্থ মিশে যে দূষণ সৃষ্টি করে,তাকে হ্রদ দূষণ বলে।

৪. সমুদ্র দূষণ - 

উপকূলীয় এলাকায় জলে শহরাঞ্চল ও শিল্পহ্মেত্রের নানা বর্জ্য পদার্থ মিশে যে দূষণের সৃষ্টি করে,তাকে সমুদ্র দূষণ বলে।

4. জলদূষণের কারন -

জলদূষণের কারন গুলি হল -

১. গৃহস্থালির আর্বজনা -

গৃহস্থালির দৈনন্দিন আর্বজনা জলকে দূষিত করে। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জল এবং হোটেল রোস্তার প্রভৃতি থেকে নিষ্কাশিত জলে খাদ্যদ্রব্যের প্রত্যাখ্যাত অংশ, মলমূত্র,সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি মিশে থাকে।এই জলে পয়ঃপ্রণালীর দ্বারা নির্গত হয়ে নদী,হ্রদ, খালবিল অথবা সমুদ্রে পতিত হয়।এই জলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ডিটারজেন্ট,অ্যালকাইল বেনজিন সালফোনেট হল ডিটারজেন্টের অন্যতম প্রধান উপাদান এবং এই রাসায়নিক দ্রব্যটি জলকে দূষিত করে।

২. শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ -

শিল্পজাত আর্বজনা ও বর্জ্য পদার্থ জলে মিশে গেলে জল দূষিত হয়। রাসায়নিক দ্রব্য,চামড়া,কাগজ,মদ, বস্ত্রবয়ন,তৈল শোধনাগার প্রভৃতি শিল্পের বর্জ্য পদার্থ জলে মিশে গিয়ে জল দূষণ ঘটায়।তবে প্রায় সবধরনের শিল্পে কমবেশি হলেও জলকে দূষিত করে। শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ গুলির মধ্যে রয়েছে তামা,আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম,সিস,পারদ,দস্তা,ক্যাডসিয়াম প্রভৃতি ধাতু, তেল,গ্ৰিজ চর্বি প্রভৃতি জৈব্য দ্রব্য ফসফরাস,ফ্লুওরিন, অ্যাসিড,অ্যালডিহাইড ও কিটোন জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি।

৩. কৃষিজ বর্জ্য পদার্থ -

কৃষিজাত আর্বজনা জলে মিশে জলকে দূষিত করে তোলে।কৃষিকার্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক প্রভৃতি জল দূষণ ঘটায়।কৃষিহ্মেত্রে ব্যবহৃত নাইট্রেট,ফসফেট, পটাশ ইত্যাদি জলের সঙ্গে বাহিত হয়ে বিভিন্ন জলাশয়ে ও নদীনালা তে জমা হয়।এইসব রাসায়নিক সার মিশ্রিত জলে শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে।একে ইউট্রফিকেশন বলে।এর ফলে একদিকে যেমন জলের নাব্যতা ও দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান হ্রাস পায়,ঠিক তেমনই জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ ব্যাহত হয়ে মারা যায় ও প্রানীরা শ্বাসকার্যের বাধা উপস্থিত করে।ভারতের কৃষি হ্মেত্রে যে সমস্ত দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, সেগুলি হল DDT,BHC, Aldrin,PCB,Chloranden.

৪. জলের তাপীয় দূষণ -

জলের তাপ বৃদ্ধি পেলে দূষিত হয়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র,পরমাণু শক্তিকেন্দ্র, বিভিন্ন ধরনের শিল্পের শীতলীকরণের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়।এই উষ্ণ জল জলাশয়, নদীনালা,খাল বিল বা হ্রদ যেখানেই পতিত হয় ফলে সেখানে জলে তাপীয় দূষণের সৃষ্টি করে।উষ্ণ জলে বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে এবং তাদের শারীরবৃত্তীয় হ্মতি হয় ও প্রজননে নষ্ট হয়।

৫. খনিজ তেলের দূষণ -

জলে ভাসমান খনিজ তেলের দ্বারা জল দূষিত হয়।জলপথে চলাচলকারী জাহাজ ও স্টিমার ইত্যাদি থেকে ডিজেল,লুব্রিকেটিং তেল প্রভৃতি চুঁইয়ে বেরিয়ে জলে মিশে জল দূষণ ঘটায়। এছাড়া ট্র্যাকার বা তৈলবাহী জাহাজ ডুবে যাওয়া,তেলের পাইপ লাইন হ্মতিগ্ৰস্ত হওয়া সমুদ্রের তেল উৎপাদনকারী মঞ্চে দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে সমুদ্র জলে খনিজ তেল ছড়িয়ে পড়তে পারে। এভাবে ছড়িয়ে পড়া তেল সমুদ্র জলে একটি ভাসমান আস্তরন তৈরি করে।এর ফলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়।

৬. রোগ জীবাণুর উপস্থিতি -

জলে রোগ জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে জলদূষণ ঘটে।ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া,প্রোটোজোয়া প্রভৃতি মিশ্রিত জলে পান করলে অথবা ব্যবহার করলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। পয়ঃপ্রণালী দ্বারা নিষ্কাশিত জল জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধির পহ্মে সহায়ক।জলবাহিত রোগ মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস ই,কলেরা,রক্ত আমাশয়, টাইফয়েড, জিয়ার্ডিয়াসিস প্রভৃতি প্রধান।

৭. হ্ময়জাত পদার্থ -

বিভিন্ন প্রকার হ্ময়জাত পদার্থ,যেমন - বালি,পলি কাদা ও সূক্ষ্ম কাদা নদীর জলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে জলকে ঘোলাটে করে তোলে। এছাড়াও হ্ময়জাত পদার্থ নদীগর্ভে সঞ্চিত হয়। হ্ময়জাত পদার্থের দূষণের ফলে জল সম্পদের গুনগত মান হ্রাস পায়।

৮. নগরায়ন -

বর্তমানে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরায়নের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফলে জনবসতি তে নর্দমা নিকাশী নালা,ডাস্টবিন,ঘাটাল, পয়ঃপ্রণালীর,কাপড় কাচার ডিটারজেন্টের জল এবং গৃহস্থালির ব্যবহৃতি জল ইত্যাদি জলের সঙ্গে মিশে দূষণ ঘটাছে। আবার এক পশলা বৃষ্টির জল ধুয়ে জলের সঙ্গে মিশে দূষণ ঘটাছে।

৯. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মৎস্য চাষ -

বর্তমানে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য(মাছ,ঝিনুক, চিংড়ি প্রভৃতি) চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে মৎস্য চাষিরা কৃত্রিম জলাশয়, পুকুর বা নদীতে মাছে দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ও ওষুধ প্রয়োগ করে। এই রাসায়নিক দ্রব্য জলে মিশে জলের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলীর রূপ পরিবর্তন করে।তাঁর ফলে জলদূষণ ঘটে।

১০. ধর্মীয় কারণ -

পূজার পর বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি,ফুল,বেলপাতা,কলা গাছ এবং পুজার বিভিন্ন উপকরণ জলাশয়,নদী,হ্রদ খালবিল অথবা পুকুরে ফেলা দেওয়া হয়।যা ফলে জলদূষিত হয়।এই কারণে ভারতে বিভিন্ন নদী ,হদ্র ও জলাশয় দূষিত হচ্ছে।

১১. অ্যাসিড বৃষ্টি -

অ্যাসিড বৃষ্টির জল নদী,হ্রদ, জলাশয়ে মিশে জলের অম্লত্ব বৃদ্ধির পায় ফলে জল দূষিত হয়।যার ফলে জলে থাকা মাছের প্রজননে হ্মমতা হ্রাস পায়।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - অ্যাসিড বৃষ্টি

5. জলদূষণের প্রভাব -

জলদূষণের ফলে নানা ধরনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি হল -

• ভাইরাস ও জীবাণু জনিত দূষণের প্রভাব -

  • জলবাহিত রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ।যথা - পোলিও,মায়েলাইটিস, প্যারাটাইফয়েড, কলেরা, হেপাটাইটিস এ,হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস ই, টাইফয়েড, ডায়েরিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়,জন্ডিস সৃষ্টি হয়।
  • জলবাহিত রোগ সৃষ্টিকারী প্রোটোজোয়া ও কৃমিঘটিত রোগের মধ্যে আমাশয়,জিয়ার্ডিয়াসিস, গিনিওয়ার্ম, চর্মরোগ প্রভৃতি।
• ভারী ধাতুর দূষণের প্রভাব -
  • দূষিত ভূগর্ভস্থ পানীয় জল পান করলে গর্ভবতী মায়েদের হ্মেত্রে গর্ভপতন,কম ওজনের শিশুর জন্মদান,জন্ম ক্রটি ইত্যাদি প্রভাব লহ্ম্য করা যায়।
  • দূষিত জলপান করলে স্নায়বিক দৌর্বল্য যথা - মাথাধরা,মাথার যন্ত্রণা, ঝিমুনি ভাব,বোমী ভাব,অনিদ্রা দেখা যায়।
  • দূষিত জলের প্রভাবে শিশু ও পরিণত বয়সের মানুষের দেহে চর্মরোগ,চহ্মু রোগ, রাতকানা দেখা দিতে পারে।
  • জৈব বিবর্তনের মাধ্যমে নিকাশি জলের বর্জ্য পদার্থের নাইট্রেট মানুষের দেহে রক্তে মিশে হিমোগ্লোবিনের সাথে বিষাক্ত যৌগ তৈরী করলে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসকার্যে বাধা দেয়, হাঁপানি রোগের সৃষ্টি হয়।
  • জলের দূষণ ঘটলে ভাইরাস,ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাক দ্বারা জৈব বস্তুর পদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং গন্ধ বার হয়।
  • পারদ দূষনের জন্য জাপানে মিনামাটা উপসাগরের নিকটবর্তী অধিবাসীরা এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয়।একে মিনামাটা ব্যাধি বলা হয়।
  • আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় ফলে মানবদেহের ত্বক,স্নায়ুতন্ত্র এবং রক্তনালীতে  নানারকম অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।হাতের চেটো এবং পায়ের পাতার তলায় কালো পচনশীল ক্ষত সৃষ্টি হতে থাকে,একে ব্ল্যাক ফুট ডিজিজ বলে। এছাড়াও আর্সেনিকের প্রভাবে শ্বাসনালীর ক্ষতি, যকৃতের পচন,ত্বকের ক্যান্সার,মূত্রথলির ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
 বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - আর্সেনিক দূষণ
  • জলের মধ্যে দ্রবীভূত ফ্লুরাইড থেকে মানবদেহে বিষক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।ফ্লুরাইড প্রথমে মানুষের শ্লেষ্মাঝিল্লি আক্রমণ করে।মানবদেহে ক্রমাগত ফ্লুরাইড প্রবেশ করলে ফ্লুরোসিস রোগ দেখা যায়। এই রোগে দাঁত ও হাড়ে নানান গঠনগত সমস্যা সৃষ্টি হয়।এই রোগে আক্রান্ত মানুষ ক্রমশ পঙ্গু হয়ে যায়। হাড়ের ও দাঁতের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ফ্লোরিনের বিক্রিয়ার ফলে হাড় ও দাঁত দুর্বল হয়ে যায়।এই রোগকে নক্ নি সিনড্রোম নামে পরিচিত।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - ফ্লুরাইড দূষণ

• কীটনাশক ও জীবাণুনাশক ব্যবহার জনিত দূষণের প্রভাব -
  • কীটনাশক ও জীবাণুনাশক দ্রব্যের ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে স্নায়ুঘটিত রোগ,আন্ত্রিক, মস্তিষ্ক ঘটিত রোগ,ক্যানসার ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি হতে পারে।
  • কীটনাশক ব্যবহারের ফলে উদ্ভিদের দেহের বৃদ্ধি রোধ করে,এমনকি উদ্ভিদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
  • দূষিত জলের মাছের জন্মে বাধাপ্রাপ্ত হয়,মাছের ডিম ফোটে না,মাছের পাখনা,আঁশ ও ফুলকা স্বাভাবিক ক্রিয়ায় কাজে আসে না।
• মৃত্তিকা উপর প্রভাব -
  • দূষিত জলে কৃষিকাজ করা হলে মৃত্তিকার মধ্যে বসবাসকারী জীব ও জীবাণুদের হ্মতি গ্ৰস্ত হয়।
  • দূষিত জল দিয়ে চাষবাস করলে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে ফলে শাক সবজীর উৎপাদন হ্মতিগ্ৰস্ত হয়।
  • মৃত্তিকার অভ্যন্তরে থাকা ভৌম জল দূষিত হলে মাটির Ph হ্মারের পরিমান বেড়ে যায়।
  • মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায় এবং উৎপাদন হার ব্যাহত হয়।
• খনিজ তেলজাত দূষণের প্রভাব -
  • ভাসমান তেল থেকে সমুদ্র জল দূষণে পাখির পালকে জলরোধী হ্মমতা হ্রাস পায়।ফলে অসংখ্য পাখি মারা পড়ে।
  • সমুদ্রের ভাসমান তেলের ফলের সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদ অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এবং পরবর্তীকালে এদের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
• তাপীয় দূষণের প্রভাব -
  • অতিরিক্ত হারে আগাছা যথা - শেওলা, কচুরিপানা প্রভৃতি বেড়ে গেলে জল দূষিত হয়।ফলে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়।মাছ সহ জলজ প্রাণীর অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এমনকি মাছ সহ জলজ প্রাণীদের মৃত্যুও ঘটে।
  • জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের সংখ্যা হ্রাস এবং মৃত্যু ঘটে।
  • সামুদ্রিক জৈববৈচিত্র্য নষ্ট হয়।
  • সামুদ্রিক সম্পদের উৎপাদনশীলতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। 
  • ট্রাউট মাছের ডিম থেকে উষ্ণ জলে পোনা নির্গত হয় না।

• রাসায়নিক দূষনের প্রভাব -

  • রাসায়নিক সারের পরিমান জলে বৃদ্ধি পেলে এই জলের অনুজীব প্রচন্ড হারে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে।এর ফলে এই জলে অক্সিজেনের পরিমান একেবারে কমে যায়।
  • আঞ্চলিক ভাবে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র হ্মতিগ্ৰস্ত হয়।
  • বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ এবং পাখির জীবনচক্র ব্যাহত হয়।
  • জল দূষিত হলে জলজ উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন বিষাক্ত জৈব পদার্থ।যথা বেঞ্জ পাইরিন, ফেনানথ্রিন, ন্যাপথালিন ইত্যাদি জমা হয়।

6. জলদূষণের নিয়ন্ত্রনমূলক ব্যবস্থা -

• উৎসস্থলে দূষণ প্রতিরোধ -

  1. দূষক গুলি কোনো একটি স্থানে সংগ্ৰহ করে,পরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা উচিৎ যাতে সেগুলি সরাসরি জলাশয় বা নদীতে এসে না পড়ে।
  2. যে সকল কলকারখানা গুলিতে প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহৃত হয়,তাদের বর্জ্য জল জলাশয় বা নদীতে নির্গমনের আগে পরিশোধন করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন। 
  3. পানীয় জলের উৎস এবং পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ব্যবধান বজায় রাখা উচিৎ।
• পয়ঃপ্রণালীর আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ -

  1. সুপরিকল্পিত উপায়ে পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার নির্মাণ করা এবং নিয়মিত তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন। 
  2. পয়ঃপ্রণালীজাত আবর্জনার বহির্গমনের আগে যথাযথভাবে বাস্তুতান্ত্রিক অনুসন্ধান করা উচিৎ এবং এক্ষেত্রে পয়ঃপ্রণালীর বহির্গমনের কেন্দ্রটিও সঠিকভাবে সুনিশ্চিত করতে হবে।
  3. পয়ঃপ্রণালীজাত আবর্জনার বায়ুজীবি ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।কারণ এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে বিভিন্ন জৈব পদার্থের বিয়োজন ঘটায় অ্যালগির পরিমাণ হ্রাস পায়।
  4. মানুষ পশুর মলমূত্র কোনভাবেই যাতে জলাশয়ে না মেশে সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
  5. কম্পোস্টিং টয়লেট গ্ৰামাঞ্চলে অধিক সংখ্যায় স্থাপন করা প্রয়োজন।
• গৃহস্থালি আর্বজনা নিয়ন্ত্রণ - 

  1. গৃহস্থালি থেকে আগত আবর্জনার প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট এবং ফসফেট থাকে যা জলাশয়ে ইউট্রফিকেশন জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।তাই গৃহস্থালি থেকে নির্গত বর্জ্য জল নর্দমায় এসে পড়ার আগে পরিশোধন করা প্রয়োজন।
  2. পরিবারের অপ্রয়োজনীয় পদার্থের ব্যবহার কমানো।
  3. আর্বজনা জলে নিহ্মেপ করা সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
  4. বিভিন্ন গৃহস্থালির আর্বজনার পুনঃ চক্রীকরণ ঘটিয়ে নতুন দ্রব্য উৎপাদন করতে হবে।
  5. বাড়ির চারদিকে জলাশয় গুলিতে শ্যাওলা ও আগাছা জন্মাতে না দেওয়া।
  6. পুকুর, খালবিল, নদীনালা বা জলাশয়তে গবাদি পশুর স্নান করানো বন্ধ করতে হবে।
  7. কাপড় কাচার বা বাসনপত্র মাজার সময় কম ফসফেটযুক্ত ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
• কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ -

  1. কৃষিহ্মেত্রে কীটপতঙ্গের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক শিকারি প্রজাতির উপস্থিতি প্রয়োজন। 
  2. কীটপতঙ্গের নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষিজমিতে বিভিন্ন প্যাথোজেনিক অনুজীবের বিস্তার ঘটানো যেতে পারে,কারন এগুলির প্রভাবে কীটপতঙ্গেরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবে এবং ফলস্বরূপ তাদের সংখ্যা হ্রাস পাবে।
  3. কীটপতঙ্গগুলির জীবনচক্রকে বিঘ্নিত করে তাদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করা যেতে পারে।

• জলের তাপীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ -

  1. বিভিন্ন শিল্প এবং তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলির নিজস্ব কুলিং টাওয়ার থাকা প্রয়োজন।
  2. যেসব শিল্পে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন তাদের নিজস্ব জলাধার নির্মাণ করা উচিৎ। এছাড়া উত্তপ্ত বর্জ্য জল প্রথমে শীতল করে তারপর মূল জলধারায় নিষ্কাশিত করা প্রয়োজন।
  3. শিল্পগুলি যাতে একই জলের পুনঃচক্রীকরণ করতে পারে, তার জন্যও ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
• শিল্পজাত বর্জ্যের নিয়ন্ত্রণ -
  1. কাগজ,চামড়া,রঙ,সাবান,রাসায়নিক সারের কল কারখানা থেকে শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ থেকে জলদূষক অপসারণ করার পর জলাশয়ে ফেলা উচিৎ।
  2. কলকারখানার দূষিত জল নির্বীজ ও পরিশ্রুত করে নদীতে ফেলা প্রয়োজন।
• বর্জ্যজলের ব্যবস্থাপনা এবং প্রক্রিয়াকরণ -
  1. বর্জ্যজলের ব্যবস্থাপনা এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য এই জল থেকে দূষকগুলি দূরীকরণের প্রয়োজন এবং এহ্মেত্রে বর্জ্য জলকে পরিশোধিত করে জলাশয়ে নিষ্কাশনের জন্য বিশেষ প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়।
  2. খালবিল, পুকুর, নদীনালা,হ্রদ ও সমুদ্রের জলে আর্বজনা ফেলা বন্ধ করতে হবে।
• খনিজ তেলের নিয়ন্ত্রণ -
  1. সমুদ্রের জলে ভাসমান তেল তুলে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।বাকী অংশ তেল ধ্বংসকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজন ঘটানো উচিৎ।
  2. তেলবাহী ট্যাঙ্কার পরিষ্কার করার পর তেলযুক্ত ময়লা সমুদ্রের জলে না ফেলা।

7. জলদূষণ সংক্রান্ত আইনসমুহ - 

ভারতে জলদূষণের বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ -
  1. The Northern Indian Canal And Drainage Act,1873.
  2. The Obstruction Of Fairways Act,1881.
  3. The Indian Fisheries Act, 1897.
  4. Indian Ports Act,1908.
  5. Damodar Valley Corporation Act,1948.
  6. The River Boards Act,1956.
  7. The Merchant Shipping (Amendment) Act,1956.
  8. The Merchant (Amendment) Shipping Act,1970
  9. The Water(Prevention And Control Of Pollution)Act,1974.
  10. The Water(Prevention And Control Of Pollution) Ses Act,1977
  11. The Water (Prevention And Control Of Pollution)Ses Rules,1978.
  12. The Coastal Regulation Zone Notification,1991.
এছাড়াও গঙ্গা ও যমুনা নদীর জলের পরিশোধনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত উল্লেখযোগ্য দুটি পদক্ষেপ হল গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান এবং যমুনা অ্যাকশন প্ল্যান।

8. উপসংহার -

পরিশেষে বলতে পারি,জল হল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক কারণ এবং মানুষের অবৈজ্ঞানিক কাজকর্মের জন্য জলের ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈবিক ধর্মাবলীর পরিবর্তনের জল ব্যবহারে অনুপযুক্ত হয়ে জল দূষিত হচ্ছে বলে ধরা হয়।জল দূষিত হলে পশু মানুষ সহ সমগ্র জীবকুল ভয়াবহ সমস্যা ও সংকটের মুখে পড়েছে। তাই সময় থাকতে জলদূষণকে যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর আরো কুফল ভোগ করবে।

CLICK HERE -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post