ফ্লুরাইড দূষন||Fluoride Pollution

ফ্লুরাইড দূষন||Fluoride Pollution

 ফ্লুরাইড দূষন||Fluoride Pollution

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Fluoride Pollution - concept, location,causes,effects and prevention


Fluoride Pollution

Assignment Questions -

1. ফ্লুরাইড দূষন সম্পর্কে ধারণা দাও।||Give An Idea About Fluoride Pollution.

2. ফ্লুরাইড দূষনের প্রভাব গুলি কি কি।||What Are The Effects Of Fluoride Pollution?

3. ফ্লুরাইড দূষনের নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা সংহ্মেপে বিবরণ দাও।Briefly Describe The Control Measures For Fluoride Pollution.

ফ্লুরাইড দূষন -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে আর্সেনিকের মতো ফ্লুরাইড এর মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে ফ্লুরাইড এর মাত্রায় উপস্থিতি নজরে আসে।WHO এর মতে পানীয় জলে ফ্লুরাইড এর পরিমাণ 1.5 মিলিগ্রামের বেশি থাকলে তা পানযোগ্য নয়।বিশ্বের বেশ কয়েকটি এলাকায় এর উপস্থিতি লহ্ম করা যায়।ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে,তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পানীয় জলে ফ্লুরাইড এর অতিমাত্রায় উপস্থিতি বিভিন্ন সংস্থাগুলিকে ভাবিয়ে তুলেছে।

2. ফ্লোরিন এবং ফ্লোরাইড এর পরিচয় -

ফ্লোরিন বা ফ্লুরিন একটি মৌলিক পদার্থ,যার রাসায়নিক প্রতীক F। স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে এটি বিষাক্ত হ্মীন হলুদ রঙের বায়বীয় পদার্থ (গ্যাস) হিসেবে অবস্থান করে।এর পারমাণবিক সংখ্যা 9, পারমাণবিক গুরুত্ব 18.99 এবং আপেক্ষিক গুরুত্ব 0.01696।

      ফ্লোরাইড হল একটি অজৈব এক পরমানুক অ্যানায়ন,যার রাসায়নিক সূত্র হল F।এটি সাধারণত সাদা বা বর্ণহীন হয়। ফ্লোরাইড তিক্ত স্বাদ এবং গন্ধহীন।এটি লবন ও খনিজ হল গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিকারক এবং শিল্প রাসায়নিক প্রধানত ফ্লোরোকার্বনের জন্য হাইড্রোজেন ফ্লোরাইডের উৎপাদনে ব্যববহৃত হয়।ফ্লোরাইড একটি দুর্বল হ্মার হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ যেহেতু এটি শুধুমাত্র আংশিকভাবে দ্রবণে যুক্ত হয়। কিন্তু গাঢ় ফ্লোরাইড হ্ময়কারক এবং ত্বকে আঘাত করতে পারে। ফ্লোরাইড হল সাধারণত ফ্লোরিন অ্যানায়ন।এটির আয়ন ভূমির কিছু খনিজের উপর দৃঢ় হয়,বিশেষত ফ্লোরাইট, কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতির পানির সঙ্গে কেবলমাত্র সামান্য পরিমাণে উপস্থিত থাকে।

3. ফ্লুরাইড দূষন -

আর্সেনিক দূষণ ন্যায় ফ্লুরাইড হল একটি তীব্র হ্মতিকারক গ্যাসীয় পদার্থ।পানীয় জলে সাথে ফ্লুরাইড মিশে যে দূষণ সৃষ্টি হয়,তাকে ফ্লুরাইড দূষণ বলে এবং সেই জল দীর্ঘদিন পান করলে যে রোগ দেখা যায়,তাকে ফ্লুরোসিস রোগ বলে।"World Health Organisation"(WHO) এবং "Bureau Of Indian Standards"(BIS) এর মতে,পানীয় জলে ফ্লুরাইড এর পরিমাণ প্রতি লিটারে 1.5 মিলিগ্ৰামের বেশী থাকলে সেই জলকে ফ্লুরাইড দূষিত জল বলা হয়।

4. ফ্লুরাইড দূষনের অবস্থান -

সাম্প্রতিক আর্সেনিকের ন্যায় ফ্লুরাইড দূষনের বিশ্বের অনেক অংশে দেখা যায়।যথা -

• বিশ্বব্যাপী -

মেক্সিকো,আর্জেন্টিনা,ইরাক,তুর্কি,সিরিয়া,জর্ডান,আলজেরিয়া,লিবিয়া,ইজিপ্ট,আরব,ইরান,তানজিনা,কেনিয়া, উগান্ডা,ইথিওপিয়া,পাকিস্তান,শ্রীলংকা,বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড,চীন,নিউজিল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া,ভারতবর্ষ।

• ভারতের বিভিন্ন রাজ্য -

ভারতবর্ষে উত্তরাখণ্ড,উত্তরপ্রদেশ,বিহার,ঝাড়খন্ড,মধ্য প্রদেশ,অন্ধ্রপ্রদেশ,পাঞ্জাব,হরিয়ানা,মহারাষ্ট্র,গুজরাট, তামিলনাড়ু,কেরালা,কর্ণাটক,রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গের এই কয়েকটি রাজ্যে ফ্লুরাইড দূষণ দেখতে পাওয়া যায়।

• পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা -

পশ্চিমবঙ্গে পুরুলিয়া বাঁকুড়া বীরভূম জেলাতে এই দূষণ দেখা যেত তবে সাম্প্রতিককালে জলপাইগুড়ি,উত্তর দিনাজপুর,দক্ষিণ দিনাজপুর,মালদা,হুগলী,পূর্ব মেদিনীপুর এবং বর্ধমানে এই দূষণের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

5. ফ্লুরাইড দূষনের কারন -

• প্রাকৃতিক কারণ -

  • অগ্ন্যুৎপাত বিস্ফোরণ ঘটে।
  • ভূগর্ভস্থ জল।
  • ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন শিলা ও খনিজ পদার্থের দ্রবীভূত।
  • বাষ্পীভবণ প্রক্রিয়া।
  • বিভিন্ন উদ্ভিদ মাটি থেকে জল শোষিত করে ফ্লুরাইড বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। উদাহরণ - চা পাতার গাছ।
  • শুষ্ক ও বৃষ্টিহীন এলাকা।

• মানসিক কারণ -

  • কৃষিজ উপকরণ,যেমন - ফসফেট জাতীয় সার।
  • ফ্লোরাইড দূষিত নলকূপ।
  • প্লাস্টিক,কাচ প্রভৃতি শিল্প ও কলকারখানা।
  • প্ল্যান্ট ও হাব
  • শহরাঞ্চল থেকে নিকাশিত জল।
  • ইট ও সিমেন্ট উৎপাদন।

6. ফ্লুরোসিস -

জলের মধ্যে দ্রবীভূত ফ্লুরাইড থেকে মানবদেহে যে বিষক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়।একে ফ্লুরোসিস বলে।স্বাভাবিক বয়স্কদের তুলনায় ফ্লুরোসিস রোগের প্রভাব শিশুদের উপরে বেশী মাত্রায় লহ্ম্য করা যায়।এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাড়ের ও দাঁতের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ফ্লোরিনের বিক্রিয়ার ফলে হাড় ও দাঁত ক্রমশ দুর্বল ও হ্ময় পায়। ফ্লুরোসিসে হাঁটু ও মেরুদন্ড এতটা শক্ত হয়ে যায় যে নাড়াতে পর্যন্ত কষ্ট হয়। বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।

7. ফ্লুরাইড দূষনের প্রভাব -

• মানসিক স্বাস্থ্যজনিত প্রভাব -

  1. ফ্লুরোসিস প্রভাবে দাঁতের গঠনের বিকৃতি ঘটে।
  2. দাঁতে দাগ ও গর্তের সৃষ্টি হয় এবং বহু বর্ণে রঞ্জন ঘটে।
  3. হাড়ের ও দাঁতের ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ফ্লোরিনের বিক্রিয়ার ফলে হাড় ও দাঁত দুর্বল হয়ে যায়।এই রোগকে নক্ নি সিনড্রোম বলা হয়।হাড়ের দুর্বলতাকে অস্থিপঞ্জরের ফ্লোরোসিস বলা হয়।
  4. ফ্লোরিন প্রোটোপ্লাজমিক বিষ হিসাবে কাজ করে। ফ্লোরিনের অধিক ক্যালশিয়াম আসক্তির ফলে ক্যাসিফিকেশান বাধা প্রাপ্ত হয়।ক্যালশিয়ামের অভাবে দাঁতের এনামেল সুগঠিত হতে পারে না।এই ঘটনাকে ফ্লুরাইড প্রভাবিত এনামেলহাইপো প্লাসিয়া বলা হয়।
  5. ফ্লুরাইড সংক্রান্ত ব্যক্তির দৈহিক ওজন হ্রাস পায় এবং তাদের প্রজনন হ্মমতা হ্রাস পায়।
  6. ফ্লুরাইডের ফলে মানুষের পেশি দুর্বলতা লহ্ম করা যায়।
  7. দীর্ঘদিন উচ্চমাত্রায় ফ্লুরাইড যৌগ গ্ৰহন করলে অস্থির ফাটল দেখা যায়।
  8. এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির পায়ের অস্থির অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পঙ্গুত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  9. এই দূষিত জল থেকে মানুষের অ্যালার্জি,কিডনির সমস্যা, হাড়ের বিকৃতি প্রভৃতি রোগের সৃষ্টি হয়।
  10. ফ্লুরাইড দ্বারা মানুষের দাঁতে ছোপ ছোপ দাগ সৃষ্টি হয়।একে ছোপ দাগ বলা হয়।
• প্রাকৃতিক প্রভাব -
  1. ফ্লুরাইড থেকে জল দূষণ ঘটে।
  2. ফ্লুরাইড মৃত্তিকার সাথে মিশে মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস করে।
  3. মৃত্তিকা দূষণ ঘটে।
  4. উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ফলন হ্রাস পায়।
  5. বন্যজীবনকে হ্মতি করে।
  6. কৃষিজ ফসলের ফলন এবং অন্যান্য কৃষিকাজের হ্মতি সাধন করে।
  7. ফ্লুরাইড ফলে জীবজগতের উপর নেতিবাচক প্রভাব লহ্ম করা যায়। 

8. ফ্লুরাইড দূষনের নিয়ন্ত্রন -

  1. ভূগর্ভস্থ জল ফ্লোরাইড যুক্ত কিনা তা সনাক্তকরণ করা ও সেই জল বর্জন করা।
  2. দূষিত নলকূপ বা ট্যাব চিহ্নিতকরণ করতে হবে।
  3. বৃষ্টি এবং নদী খালের জল পরিশুদ্ধ করে পানীয় এবং রান্না জল হিসেবে ব্যবহার করা।
  4. কৃষিকাজে ফ্লোরাইড দূষিত ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার যাতে না করা হয় সেই বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
  5. কালো চা,বিট লবণ,হজমোলা,চূরন,চাট মশলা, বিভিন্ন স্বাদ বৃদ্ধিকারী মশলা,তামাক,সূপারি, কোঁটোর খাবার এবং অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রসাধন পরিহার করা।
  6. প্রত্যেক ব্যক্তিকে পুষ্টিকর সুষম খাদ্য গ্ৰহন করা।যেমন - দুধ,দই,ছানা,লেবু, রসালো ফল,সবুজ লাল ও হলুদ তাজা শাকসবজি প্রভৃতি বেশি করে খাওয়া।
  7. ফ্লোরিনেটের টুথপেস্ট ও মাজন ব্যবহার না করা।
  8. বৃষ্টির জলকে সংরহ্মন করা।
  9. কোনো ব্যক্তির ফ্লুরোসিস দ্বারা শারীরিক সমস্যা‌ হলে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
  10. প্রত্যেক ৬-১১ বছরের বাচ্চাদের নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা করানো উচিৎ।
  11. প্রতিটি হাসপাতালে চিলেশান চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং পূর্ণাঙ্গ অর্থোপেডিক ইউনিট তৈরি করতে হবে।
  12. উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবধি ফ্লুরোসিস রোগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিদ সম্পর্কে শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
  13. জনগণের মধ্যে সচেতনতা বোধ গড়ে তুলতে হবে।
  14. ফ্লুরোসিস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
  15. ফ্লোরাইড যুক্ত জলকে ফিল্টার করে পানীয় হিসেবে গ্ৰহন করা উচিৎ।এহ্মেত্রে চূন বা ফটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে।

9. উপসংহার -

আর্সেনিক মতো ফ্লোরিন একটি মৌলিক পদার্থ।তাঁর উপস্থিতি পানীয় জলকে দূষিত করেছে,যা বর্তমানে একটি সমস্যা রূপে দেখাচ্ছে। পৃথিবীর ৩ ভাগ জলের মধ্যে মাত্র কিছু শতাংশ গ্ৰহনযোগ্য যা মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা দূষিত হচ্ছে।তাই জলদূষন এবং ফ্লোরাইড দূষণ থেকে রহ্মা করার জন্য জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post