আর্সেনিক দূষণ||Arsenic Pollution

আর্সেনিক দূষণ||Arsenic Pollution

আর্সেনিক দূষণ||Arsenic Pollution

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Arsenic Pollution - Concept, location,source,Causes,Effects And Control
Arsenic Pollution

Assignment Questions -

1. আর্সেনিক দূষণ কি।আর্সেনিক দূষণের বিশ্বব্যাপী অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দাও।What is Arsenic Pollution? Give An Idea Of ​​The Global Location Of Arsenic Pollution.

2. আর্সেনিক দূষণের কারণ গুলি কী কী।What Are The Causes Of Arsenic Pollution?

3. আর্সেনিক দূষণের প্রভাব গুলি লেখো। Write The Effects Of Arsenic Pollution.

4. আর্সেনিক দূষণের নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে ধারণা দাও।Give An Idea About Control Of Arsenic Pollution.

BENGALI VERSION -

আর্সেনিক দূষণ -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।WHO এর মতে,জলে আর্সেনিকের মাত্রা 0.05 মিলিগ্রামের বেশি থাকলে সেই জল পানযোগ্য নয়।যে সমস্ত অঞ্চলে 0.05 মিলিগ্রামের থেকে মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে আর্সেনিকের উপস্থিতি পৃথিবীর বৃহত্তম আর্সেনিক বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে এর ব্যাপকতা খুব কম এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে পানীয় জলে আর্সেনিকের অতিমাত্রার উপস্থিতি UNO এবং UNCED এর মতন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে ভাবিয়ে তুলেছে।

2. আর্সেনিক পরিচয় -

আর্সেনিক হল একটি মৌল। আর্সেনিকের প্রাচীন নাম সেঁকো বিষ।রসায়নে আর্সেনিকের পরিচয় একটি মৌলিক পদার্থ রূপে।ধাতু ও অধাতু উভয়ের ধর্মের জন্য বর্তমান তাই একে ধাতুকল্প বলে।পর্যায় সারণিতে এর অবস্থান চতুর্থ পর্যায়ের পঞ্চম শ্রেণিতে (VB)। পারমাণবিক সংখ্যা 33 এবং পারমাণবিক গুরুত্ব 74.92 ও আপেক্ষিক গুরুত্ব 5.727। সাধারনত প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় আর্সেনিক মৌল পাওয়া যায় না। আর্সেনিক আর্সেনাইট, আর্সেনিক,আর্সিনেট রূপে বেশি পাওয়া যায়। কিছু ধাতু যেমন - সোনা,রূপা,তামা,লোহা, আর্সেনিকের সাথে বিভিন্ন যৌগ তৈরি করে জৈব আর্সেনিকের তুলনায় অজৈব আর্সেনিক বেশি হ্মতিকারক।এটি জলে সহজেই দ্রবণীয়।এটি স্বাদহীন, বর্ণহীন,গন্ধহীন তাই সহজে চেনা যায় না।

3. আর্সেনিক দূষণ ও বিশ্ব প্রেহ্মাপট -

অতিরিক্ত আর্সেনিক যুক্ত হয়ে জল বা মাটি দূষিত হওয়াকে আর্সেনিক দূষণ বলে।তবে আর্সেনিক দূষণের কথায় সাধারণভাবে জল দূষণের কথাই প্রথমে মনে পড়ে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভূগর্ভস্থ জলের আর্সেনিকের মাত্রা প্রয়োজনের থেকে বেশি রয়েছে,যা ঐ সকল অঞ্চলের ভৌমজলকে বিষাক্ত করেছে।জলে আর্সেনিকের ন্যূনতম দূষণের মাত্রা নানা দেশে নানা রকম।স্বল্প পরিসরে পৃথিবীতে আর্সেনিক সমস্যায় থাকা দেশগুলির বিবরণ দেওয়া হল।-

• বিশ্ব ব্যাপি -

আর্জেন্টিনা,আমেরিকা,কানাডা,তাইওয়ান,চিলি,মেক্সিকো,জাপান,চিন,হাঙ্গেরী,নিউজিল্যান্ড,পোল্যান্ড,আলাস্কা,থাইল্যান্ড,ফিলিপাইন,শ্রীলঙ্কা,চেকোশ্লোভাকিয়া, ইংল্যান্ড,পাকিস্তান,নেপাল,বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ।

• ভারতবর্ষ -

বিহারের ছাপড়া, ভোজপুর,বক্সার,অসম, অরুণাচল প্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জেলা, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায়,ঝাড়খন্ডের কয়েকটি জেলায় আর্সেনিকের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গঙ্গা,পদ্মা ও ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকায় বিশাল অঞ্চলে আর্সেনিকের ঝুঁকি নিয়ে বাস করেন।

• পশ্চিমবঙ্গ -

  1. কলকাতা - বাঁশদ্রোণী,নাকতলা, রিজেন্ট পার্ক, টালিগঞ্জ,যাদবপুর,বেহালা।
  2. দহ্মিণ ২৪ পরগণা - বারুইপুর,মগরাহাট -১, মগরাহাট -২, সোনারপুর,জয়নগর-১,ভাঙ্গর-১, ভাঙ্গর -২,বজবজ -২, বিষ্ণুপুর -১, বিষ্ণুপুর -২।
  3. উত্তর ২৪ পরগণা - হাবড়া -১,হাবড়া -২, ব্যারাকপুর -১,ব্যারাকপুর -২,দেগঙ্গা, বসিরহাট -১, বসিরহাট -২,স্বরূপনগর,সন্দেশখালি, রাজারহাট,বাদুরিয়া,বারাসাত -১,বারাসাত -২,আমডাঙ্গা, বনগাঁ,হাড়োয়া,বাগদা, হাসনাবাদ।
  4. হাওয়া - উলুবেড়িয়া -২,শ্যামপুর -২,বালি-জগাছা।
  5. হুগলি - বলাগড়।
  6. বর্ধমান - পূর্বস্থলী -১,পূর্বস্থলী -২।
  7. নদীয়া - চাপড়া,তেহট্ট -১,তেহট্ট -২,নবদ্বীপ, নাকাশিপাড়া,কালিগঞ্জ,হরিণঘাটা,হাঁসখালি, কৃষ্ণগঞ্জ, কৃষ্ণনগর -১, কৃষ্ণনগর -২,করিমপুর -১, করিমপুর -২,শান্তিপুর, রাণাঘাট -১,রাণাঘাট -২,চাকদহ।
  8. মুর্শিদাবাদ - রানীনগর -১, রানীনগর -২,পাম্পের গঞ্জ,লালগোলা,বেলডাঙ্গা-১,বেলডাঙ্গা -২,হরিহরপাড়া, ভগবান গোলা -১, ভগবান গোলা -২,সুতি -১,সুতি -২,ফারাক্কা,জিয়াগঞ্জ,নওদা, বহরমপুর,ডোমকল, রঘুনাথ গঞ্জ -২, মুর্শিদাবাদ,জলঙ্গী,সামসেরগঞ্জ।
  9. মালদহ - রতুয়া -১,রতুয়া -২, ইংরেজ বাজার,মানিকচক,কালিয়াচক -১,কালিয়াচক -২,কালিয়াচক -৩।
4. আর্সেনিকের বিভিন্ন উৎস(পরিমাণ) -
  1. বৃষ্টির জল ও তুষার - 0.002-0.59 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  2. নদীর জল - 0.20-0.264 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  3. হ্রদের জল - 0.38-1000 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  4. সাগর ও মহাসাগর - 0.15-600 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  5. আগ্নেয় শিলা - 0.08-113 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  6. রূপান্তরিত শিলা - 0.1-480 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  7. সমুদ্রের তলদেশের কাদা -3.2-60 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  8. নদীবাহিত পলি - 5-4000 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
  9. ভূপৃষ্ঠের মাটি - 0.1-97 মিলিগ্ৰাম/লিটার।
5. আর্সেনিক দূষণের কারণ -
আর্সেনিক দূষণ প্রাকৃতিক ও মানবীয় কারনে হয়ে থাকে।
• প্রাকৃতিক কারণ -
  • ভূতাত্ত্বিক গঠন।
  • অগ্নুৎপাত ফলে ঘটে।
  • আগ্নেয়শিলা ও খনিজ পদার্থ উপস্থিতি জনিত কারণ। 
  • খনি অঞ্চল।
• মানবীয় কারন -
  • অতিরিক্ত জলসেচ
  • কৃষিকাজে ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার ফলে।
  • বৃষ্টিহীন এলাকা নলকূপ থেকে অতিরিক্ত জল তোলার ফলে। 
  • কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ। 
  • বিভিন্ন প্ল্যান্ট ও জিওথারমাল প্ল্যান্ট।

6. আর্সেনিকের বিষক্রিয়া -

আর্সেনিক দীর্ঘদিন ধরে লিটার প্রতি 0.05 মিলিগ্রামের বেশী মাত্রায় গ্ৰহন করলে দেহে,ক্রমশ আর্সেনিক জমা হতে শুরু করে।দেহে আর্সেনিকের দীর্ঘস্থায়ী বিষক্রিয়ায় লহ্মণ প্রকাশ পায়। আর্সেনিকের এই বিষক্রিয়াকে আর্সেনিকোসিস বলে।

দীর্ঘদিন ধরে পানীয় জলের সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে আর্সেনিক দেহে ঢুকলে মানুষের ত্বকে কালো ফোঁটা ফোঁটা দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রকাশ পেতে থাকে।একে স্পটেড মেলানোসিস বলে।সারা শরীর জুড়ে যখন এই কালো দাগ দেখা যায়। তখন বলা হয় ডিফিউজ মেলানোসিস বলে।কখনো ত্বকের উপর বিবর্ণ সাদা আর কালো কালো ফোঁটা দেখা দিলে বলা হয় লিউকো মেলানোসিস।বৃষ্টির ফোঁটার মতো করে সারা দেহে ব্যাপ্তি থাকায় ত্বকের এই দাগ গুলি রেন ড্রপ পিগমেন্টেশন বলা হয়। এছাড়াও হাত ও পায়ের তালুতে কড়া আর্সেনিকের প্রভাবে।একে কেরাটোসিস বলা হয়।মেলানোসিস ও কেরাটোসিস থেকে ক্যান্সারও হতে পারে।

7. আর্সেনিক দূষণের প্রভাব -

আর্সেনিক দূষণের ফলে মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উপর প্রভাব পড়ে।যা মানুষ ও পরিবেশকে হ্মতিসাধন করে।

•  মানবিক স্বাস্থ্যজনিত প্রভাব -

  1. আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় ফুসফুস ও শ্বাসনালী হ্মতি হয়।ফলে কাশি অথবা হাঁপযুক্ত কাশি,অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস দেখা যায়। 
  2. সহনশীল মাত্রায় বেশি আর্সেনিক যুক্ত জল বেশিদিন ধরে খেলে যকৃত স্ফীত হয় এবং হ্মতিগ্ৰস্ত হয়।
  3. ক্রমশ যকৃত শক্ত হয়ে গেলে পোর্টাল শিরায় রক্ত সঞ্চালন বাঁধা পায়।এ থেকে প্লীহা স্ফীতি ও উদরী হতে পারে।এহ্মেত্রে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
  4. আর্সেনিকের ফলে দুর্বলতা ও রক্তাল্পতা হয়।অপুষ্টি ও আর্সেনিকের বিষক্রিয়া একসাথে থাকলে রোগী শয্যাশায়ী হতে পারে।হাঁটতে চলতে গেলে পেশীতে ব্যাথা অনুভব হয়। 
  5. আর্সেনিকের প্রভাবে এ যাবৎ বহু মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।প্রধানত ত্বক স্কোয়ামাস, ফুসফুস বাওমেনস ক্যাপসুল,মূত্রস্থলী ও জরায়ুর ক্যান্সার দেখা যায়। 
  6. আর্সেনিকের প্রভাবে শব্দনালী প্রদাহ, থাইরয়েড জনিত রোগ,কম রক্তচাপ প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়। 
  7. মানুষের ত্বক,নখ ও চুলে আর্সেনিক সঞ্চিত হয়ে পড়ে ফুসকুড়ি,হাতে পায়ে কালো দাগ,চুলকানি,ক্যান্সার হতে পারে।
  8. হাতে ও পায়ে অসংখ্য সাদা খাঁজ তৈরি হয়।একে মিজরেখা বা অল্ডরিচ মিজ লাইন বলে। 
  9. পায়ের পাতার কালো রঙের ঘা হলে তাকে ব্ল্যাক ফুট ডিজিজ বলে। 
  10. রোগীর জ্বিহা, ঠোঁটের ভিতর,মাড়িতে, মুখের ঝিল্লিতে কালো ছোপ দেখা যায়।একে মাইনর ডারম্যাটোলজিক্যাল ফিচারস বলে।
  11. ত্বক ক্রমশ খসখসে বা রুক্ষ হয়ে যায়।হাত ও পায়ের তালুতে গুটি দানা দেখা যায়। ত্বক ক্রমশ পুরু ও শক্ত হয়ে হাত ও পায়ের তলায় অংশ ফেটে যায়।ত্বক ও মুখে নীলচে ছোপ দেখা দেয়। 
  12. পায়ের পাতা ফুলে যায় অথচ সেখানে আঙ্গুলের চাপ দিলে বসে যায় না।একে পিটিং ওডেমা বলে।
  13. চোখ লাল হয়ে যায় অথচ জ্বালা যন্ত্রণা হয় না।একে কনজাঙ্কটিভাল কনজেশন বলা হয়।

• সামাজিক প্রভাব -

  1. আর্সেনিক রোগগ্ৰস্ত বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিবাহের হয় না। 
  2. বিবাহের পরে যদি কোনো মেয়ের আর্সেনিকে আক্রান্ত হলে বিবাহ বিচ্ছেদও হতে পারে।
  3. যুবকেরা চাকুরী পাওয়া সত্ত্বেও মেডিক্যাল টেস্টে অনুপযুক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। 
  4. অনেক সময় ত্বকে,হাত পায়ের পাতার কড়া দেখা দেয় বলে কুষ্ঠ রোগ হয়েছে বলে তাকে সম্পূর্ণ পৃথক বা একঘরে করে দেওয়া হয়।

• প্রাকৃতিক প্রভাব -

  1. আর্সেনিক দূষণের ফলে ভৌমজল দূষিত হয়। 
  2. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত গ্যাস ও ছাই এর মধ্যে আর্সেনিক থাকার ফলে বায়ুদূষণ ঘটে। 
  3. আর্সেনিক দূষণের ফলে আর্সেনিক মৃত্তিকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়।
  4. মৃত্তিকার মধ্যে আর্সেনিক থাকার ফলে উদ্ভিদের কোশে আর্সেনিক জমা হয় এবং ওই কোশকে হ্মতিগ্ৰস্ত করে। 
  5. আর্সেনিক দূষণের ফলে জীবজন্তুর চর্মরোগ দেখা যায় ও ফুসফুসের সংক্রান্ত রোগ লহ্ম করা যায়।
8. আর্সেনিক দূষণের নিয়ন্ত্রন -
  1. আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল গ্ৰহন করা হল আর্সেনিক নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়।
  2. ফিটকিরি (অ্যালুমিনিয়াম সালফেট) মিশিয়ে জারণ পদ্ধতিতে আর্সেনিক যুক্ত জলের আর্সেনাইটকে আর্সেনেট এ পরিণত করে সহ অধঃহ্মেপ হিসাবে আলাদা করা যায়। ব্লিচিং পাউডার এবং ফিটকিরি জলে দ্রবীভূত করে এক মিনিট নেড়ে রেখে আর্সেনিকযুক্ত জলে ভালোভাবে মিশিয়ে দু'ঘণ্টার মতো রেখে দিলে অ্যালুমিনিয়াম ডাই-অক্সাইড এর দ্রুত অধঃক্ষেপ পড়ার পর পাত্রের ওপরের আর্সেনিকমুক্ত জল ফিল্টারের সাহায্যে পরিশ্রূত করে নিয়ে পানের জন্য এবং রান্নার কাজে লাগানো যায়।পাত্রের তলদেশে যে অধঃহ্মেপ গোবরে ফেলে দিলে গোবর মধ্যস্থ ব্যাকটিরিয়া অধঃহ্মেপে থাকা আর্সেনিককে উদ্বায়ী জৈব যৌগে রূপান্তরিত করে বায়ুমণ্ডলে মিশিয়ে দেয়।ফিটকিরি ও ব্লিচিং পাউডার সুলভ এবং সহজলভ্য হওয়ায় আর্সেনিক মুক্ত জল পাওয়ার জন্য এই পদ্ধতি গ্ৰামাঞ্চলে খুবই গ্ৰহনযোগ্য।
  3. লোহা দিয়ে তঞ্চন করেও আর্সেনিক যুক্ত জল থেকে আর্সেনিক মুক্ত জল পাওয়া যায়। সাধারনত একটি পাত্রে অব্যবহারযোগ্য মরিচা পড়া লোহা লোহা যেমন পেরেক,নাট বল্টু,কব্জা,হাসকল ইত্যাদি ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পাত্রের তলদেশে থাকে বালির পুরু আস্তরন। এবার ঐ পাত্রে আর্সেনিক যুক্ত জল এমনভাবে ঢালা হয় যাতে ঝুলন্ত মরিচা পড়া লোহার অংশ গুলি জলে ডুবে যায়। লোহার ফেরিক হাইড্রক্সাইড এর ধর্ম হল জলে দ্রবীভূত আর্সেনিক কে শোষণ করা। এবার শোষিত আর্সেনিক যুক্ত লোহার মরিচা খসে পড়লেও বালির আস্তরণের উপরে পড়ে।ফিল্টার করে আর্সেনিক মুক্ত জল পাত্রের তলদেশে সুংযুক্ত ট্যাপকল দিয়ে সংগ্ৰহ করা হয়।গ্ৰামের গরীবদেরকে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহের জন্য সবচেয়ে কম খরচ সাপেক্ষ এই পদ্ধতি।
  4. বহু দেশেই দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির জল ব্যবহারের প্রথা আছে।বৃষ্টি শুরু হলে প্রথম দিকে বায়ুমণ্ডলের ধুলোবালি ও বাতাসে ভেসে থাকা দূষিত পদার্থ জলের সঙ্গে মিশে মাটিতে নেমে আসে।তখন বৃষ্টি শুরু হবার 5 থেকে 7 মিনিট পর থেকে জল সংগ্ৰহ করা ভাল।ভালভাবে সংরহ্মণ করা সম্ভব হলে 7 থেকে 8 মাসে সেই জল ব্যবহার করা যায়।জল সংগ্ৰহের জন্য স্থায়ী বা সাময়িক ব্যবস্থা করাই ভাল। বাড়ির ছাদ,টালি বা টিনের চালে বৃষ্টির জল পড়ে।যে জল গড়িয়ে পড়বার সময় বড় পাত্রে সংগ্ৰহ করে রাখা যায়।লহ্ম্য রাখতে হবে যে চালা বা ছাদের উপরে যেন গাছ না থাকে এবং পরিষ্কার থাকে।
  5. ইলেক্ট্রোডায়ালিসিস পদ্ধতির সাহায্যে কঠিন পদার্থের অপসারণ ঘটিয়ে জল থেকে আর্সেনিককে মুক্ত করা যেতে পারে।
  6. জল যেমন আর্সেনিক দ্বারা দূষিত হয়, তেমনই মাটিও। এবিষয়ে নজর রাখতে হবে,মানুষকে আর্সেনিক সংক্রমণের বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
  7. আর্সেনিক বিষাক্ত ও হ্মতিকারক হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন শিল্পে যেমন ইলেকট্রনিক রঙ,সাবান, ব্যাটারি তৈরি,কাছ,কাঠ শিল্পে, কীটনাশক উৎপাদনে, গৃহপালিত পশুদের রোগ নিরাময়ের ঔষধ তৈরি শিল্পে এখনো ব্যবহৃত হয়েই চলেছে।এই সমস্ত শিল্পজাত সামগ্ৰী উৎপাদনে আর্সেনিকের ব্যবহার সম্বন্ধে যত্নবান ও সজাগ থাকতে হবে।
  8. যে সমস্ত এলাকায় মাটিতে লোহা এবং অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি, সেখানকার জল আর্সেনিক দ্বারা দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। এবিষয়ে স্থানীয় মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগাম নেওয়ার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
  9. নলকূপে আর্সেনিক আছে কিনা বা থাকলেও কতটা পরিমাণে তা পরীহ্মামূলক ভাবে দেখা প্রয়োজন।
  10. সাধারনত 50-150 ফুট গভীরতায় আর্সেনিক বেশি পাওয়া যায়।তাই নলকূপের গভীরতা জানা প্রয়োজন। এছাড়াও নিকটস্থ এলাকায় সেচের কাজে বা অন্য কোন অতিরিক্ত ভূগর্ভের জল তোলা হচ্ছে কিনা তা দেখা প্রয়োজন।
  11. কোনো ব্যক্তিকে এই রোগে সনাক্ত করতে পারলে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো উচিৎ।এহ্মেত্রে রোগীয় আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ জলের সাথে ভিটামিন A ও C এবং প্রোটিন যুক্ত খাদ্য এবং টাটকা শাক সবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। আর্সেনিকের প্রভাবে সৃষ্ট রোগ আর্সেনিকোসিস কখনই ছোঁয়াচে নয়।
9. উপসংহার -

আর্সেনিক দূষণ জলদূষণের একটি অন্যতম কারণ বা প্রভাব হিসেবে ধরা হয়।বিশ্বের সব মানুষের জীবনধারণের জন্য পরিস্রুত পানীয় জল পাওয়ার অধিকার আছে।22 শে মার্চ বিশ্বজল দিবস ঘোষিত হয়েছে।সব মানুষ যাতে পানীয় জল গ্ৰহন করতে পারে সেদিকে সব কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অঙ্গীকার করা প্রয়োজন।

CLICK HERE -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post