গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান||Ganga Action Plan
BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
Ganga Action Plan |
Assignment Questions -
1. গঙ্গা নদী দূষণ নিয়ন্ত্রণের গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান সম্পর্কে ধারণা দাও।||Give An Idea About The Ganga Action Plan For Ganga River Pollution Control.
গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান -
BENGALI VERSION -
(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)
1. ভূমিকা -
গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী।ভারতবর্ষে তথা উত্তর ভারতের মানুষদের শিক্ষা,দীহ্মা,কৃষ্টি,সংস্কৃতি,কৃষি,শিল্প, বাণিজ্য ও বসতি প্রভৃতি বিষয়ে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ জুড়ে রয়েছে গঙ্গা নদী।ভারতীয় মানব সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে গঙ্গা নদীর। কিন্তু গঙ্গা নদীর এই অবদানে কথা আমরা কেউ মনে রাখি নি।বর্তমানে নগরায়নের চাপে মানুষেরা প্রতিনিয়ত গঙ্গাতে আর্বজনা ও বর্জ্য পদার্থ ফেলে জলদূষণ বৃদ্ধি করছে।তাই গঙ্গা দূষণ হ্রাস করার জন্য সরকারী ভাবে ও বেসরকারি ভাবে বা সংস্থা গুলি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, এর মধ্যে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (Ganga Action Plan)।
2. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (Ganga Action Plan) -
গঙ্গার তীরে অবস্থিত 29টি প্রথম শ্রেণীর শহর বা বৃহত্তম নগর,যার লোকসংখ্যা ন্যূনতম 100000 বা তার বেশী জন।এরা দৈনিক গৃহস্থালীর বর্জ্য পদার্থ,নর্দমা নিকাশী নোংরা জল, মলমূত্র,পুরসভা ফেলা বর্জ্য পদার্থ,মৃতদেহ প্রভৃতি গঙ্গার জলে ফেলার ফলে গঙ্গার জল দূষিত হয়।1980 সালে গঙ্গা নদীকে বাঁচানোর তাগিদে ভারতে 14 টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু করা হয়।এই সার্ভের নাম দেওয়া হয় "ইন্টিগ্রেটেড ইকো ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফ রিভার গঙ্গা বেসিন"। তারপর 1984 সালেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঙ্গার দূষণ সম্বন্ধে সুনিশ্চিত হয় এবং অবিলম্বে এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পদহ্মেপ নেওয়ার সচেষ্ট হয়। তৎকালীন সময়ে একটি সমীক্ষা চালায় এবং গঙ্গার উচ্চ,মধ্য ও নিম্ন গতিপথের সমস্ত জায়গা জুড়ে দূষণের উপর একটি খসড়া রিপোর্ট প্রস্তুত করে।এই রিপোর্টে দেখা যায় ২৫২৫ কিলোমিটার করে বিস্তৃত দৈর্ঘ্যের প্রায় সবটাই দূষিত হয়ে পড়েছে।বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের যে অঞ্চল দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হয়েছে, সেখানে দূষণের মাত্রা শুধু তীব্র নয় গঙ্গাজল ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
1985 সালের ভারত সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় দূষণ রোধ করার জন্য ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্ট্রাল গঙ্গা অথরিটি এবং জুন মাসের গঙ্গা প্রজেক্ট ডাইরেক্টরেট গঠন করা হয়েছিল।যার উদ্দেশ্য ছিল গঙ্গা দূষণ হ্রাস করার প্রয়াস করা।তাই পরবর্তীকালে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সময়কালে 1986 সালে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান গঠন করে গঙ্গার জলকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করার জন্য পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধী হিন্দু তীর্থস্থান কাশী বা বারাণসীতে 1986 খ্রিস্টাব্দে 14ই জুন গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের সূচনা করেন।
3. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের ঊদ্দেশ্যাবলী -
- কৃষিকাজে রাসায়নিক ও কীটনাশক সারে প্রয়োগ বন্ধ করা।
- গঙ্গা নদীর পারে মলমূত্র ত্যাগ করার প্রবণতা বন্ধ করা।
- গঙ্গার জলে গবাদি পশু স্থান বন্ধ করা।
- মানুষ ও পশুপাখির মৃতদেহ গঙ্গার জলে ফেলার থেকে নিষ্পত্তি পাওয়া।
- নদীর জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের গবেষণা ও উন্নয়নের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
- বর্ধনের মাধ্যমে নিকাশি চিকিৎসা প্রযুক্তির বিকাশ যেমন আপ ফ্লো অ্যানোরিবিক স্লাজ ব্ল্যাঙ্কেট এবং নিকাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা করা।
- দূষণ হ্রাসের জন্য নরম শেল কচ্ছপ গুলি পুনর্বাসন করা।
- সম্পদ পুনরুদ্ধারের বিকল্পগুলি যেমন জ্বালানি উৎপন্ন করার জন্য মিথেন উৎপাদন এবং রাজস্ব উৎপাদনের জন্য জলজ চাষের ব্যবহার করা।
- গঙ্গার মতো অন্যান্য নদী স্থূল দূষিত প্রান্তে একই রকম কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য ট্রেন্ড সেন্টার হিসাবে কাজ করবে।
- গঙ্গা নদীতে অ্যারোয়োটিক এবং বায়োটিক ইকো সিস্টেমের মধ্যে বিভিন্ন গতিশীল মিথস্ক্রিয়া বিবেচনা করে একীভূত নদী অববাহিকা ব্যবস্থাপনার একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
4. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের বিভিন্ন ব্যবস্থা সমুহ -
১. অর্থবরাদ্দ -
গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা খরচা করা হয়েছিল,সেগুলি হল -
- নর্দমার জল গঙ্গায় না ফেলে নর্দমার দিক পরিবর্তন করা।
- শোধনের পর কলকারখানার বর্জ্য গঙ্গায় ফেলা।
- উমুক্ত শ্মশান গুলিতে বৈদ্যুতিক চুল্লীর ব্যবস্থা করা।
- সস্তায় শৌচাগার নির্মাণ করা।
- স্নানের জন্য ঘাটের সংস্কার করানো।
- ভূমিহ্ময় রোধের জন্য গঙ্গার পাড় বাঁধানো ইত্যাদি।
- কলকারখানার মালিক এবং শিল্পপতিদের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রণীত আইন মানতে বাধ্য করা।
- পরিবেশ আইন,দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রভৃতির ধারা এবং উপধারা গুলিকে আরো বাস্তবায়িত করা। গতানুগতিক আইনের পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা।
- গঙ্গা নদী তীরবর্তী অঞ্চলে আইন করে কৃষি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
- গঙ্গার উচ্চ,মধ্য ও নিম্ন গতিপথে জল প্রবাহ সচল রাখা।
- গঙ্গার জলের ভৌত রাসায়নিক ধর্মগুলির পরীক্ষা করে জলের দূষণের মাত্রা নিয়মিত নজরে রাখা এবং জলের মান ব্যবহার উপযোগী রাখার ব্যবস্থা করা।
- আবর্জনা বর্জ্য পদার্থ,পৌরসভার ময়লা প্রভৃতি শোধন করা অথবা এই সমস্ত আবর্জনা থেকে অপ্রচলিত শক্তি উৎপাদনে উদ্ভাবনা নিয়ে নিরন্তন গবেষণা চালানো।
- নদীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সমস্ত কৌশল বা পদহ্মেপ অবিলম্বে গ্রহণ করা।
- গঙ্গা অববাহিকায় বসবাসকারী সমস্ত মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান সবচেয়ে বেশী কার্যকরী হতে পারে।
- গঙ্গা দূষণ নিয়ন্ত্রণে জন্য সেমিনার,ওয়ার্কশপ, কনফারেন্স,ট্রেনিং প্রভৃতির আয়োজন করে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের সমস্ত গৃহীত পদক্ষেপ মানুষকে জানাতে হবে এবং এই সমস্ত পরিকল্পনা কার্যকরী করার লহ্ম্যে জনগনকে কর্মসূচীতে অংশগ্ৰহনের জন্য আবেদন করতে হবে।
5. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যানের গুরুত্ব -
প্রতিনিয়ত গঙ্গার জল দূষণ থেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে পরিকল্পনা বা কর্মসূচি গ্ৰহণ করা হয়েছিল, তার মধ্যে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান কর্মসূচি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।এই কর্মসূচি ঘোষণা পেছনে যে সমস্ত গুরুত্ব ছিল,সেগুলি হল -
- গঙ্গার জল দূষিত মুক্ত করা যাতে পানীয় জল হিসাবে তার পরিশোধন ও সরবরাহের ব্যয় কম করা।
- জল দূষিত মুক্ত করে মাছ সহ জলজ প্রাণী অস্তিত্ব বিপন্ন হাত থেকে রক্ষা করা।
- দূষিত মুক্ত জল চাষের জমিতে ব্যবহার করে শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মৃত্তিকার দূষণ থেকে রহ্মা করা।
- আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ যত নদী বক্ষে না ফেলা।কারন নদীতে অতিরিক্ত পাঁক ও পলির পরিমাণ বেড়ে নদীবক্ষ উঁচু হবে,যা নদীর গভীরতা হারালে নৌ পরিবহন অযোগ্য হবে।
- পলি যত কম পড়বে, নদীর জল ধারণ ক্ষমতা তত বৃদ্ধি পাবে।ফলে বন্যার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে না।
- নদীর বুকে পলি সঞ্চয়ের ফলে নদী তার গতিপথে পরিবর্তন করে।নদী গতিপথে পরিবর্তন নদীর ভাঙ্গন ডেকে আনে।গঙ্গার ভাঙ্গনে প্রচুর পরিমাণে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ফলে শস্য উৎপাদনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।তাই সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
- দূষণ যত বাড়বে গঙ্গা স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র ভারসাম্য হারাতে পারে।খাদ্য খাদকের পরিমাণ অস্বাভাবিক হলে গঙ্গা নদীর জীববৈচিত্রের প্রভূত ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।তাই সেই দিকে লক্ষ রাখতে হবে।