গ্ৰীন হাউস প্রভাব||Green House Effect

গ্ৰীন হাউস প্রভাব||Green House Effect

গ্ৰীন হাউস প্রভাব||Green House Effect

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Green House Effects (Concept, Sources Of Gas, Causes, Effects,Control)
Green House Effects

Assignment Questions -

1. গ্ৰীণ হাউস গ্যাস কী।গ্ৰীণ হাউস প্রভাব কী।গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের উৎস গুলি কী।||What Is Green House Gas.What Is Green House Effect.What Are The Sources Of Green House Gas.

2. গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের কারণ গুলি কী।গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের নিয়ন্ত্রনে ব্যবস্থা গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||What are The Reasons Of Green House Effects.Briefly Describe The Measures Taken To Control Green House Effects.

3. গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের ফলাফল গুলি সংহ্মিপ্ত বর্ণনা কর।||Briefly Discuss About Results Of Green House Effects.

Green House Effects -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা - 

দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরায়ন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে বনভূমি, যানবাহনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি মাত্রাতিরিক্ত দহনের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।যা ভূপৃষ্ঠের আবহমন্ডলকে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে।বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্বাভাবিক উপস্থিতির আপাত দৃষ্টিতে পরিবেশ দূষণ ঘটায় না বরং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমন্ডলে তাপীয় বিকিরণ আটকে রাখে বলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির থাকে নাহলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যেত,কিন্তু এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলেই গ্ৰীণ হাউসের প্রভাবে ভূ পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে,এটি এতটাই ভয়াবহ রূপে দেখা দিতে পারে যা পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগ ও ব্যবহারের থেকেও ক্ষতিকর।

2. গ্ৰীণ হাউস -

ইংরেজি ভাষার গ্ৰীণ হাউস শব্দটির অর্থ হল গাছপালার পরিচর্চার জন্য কাঁচের ঘরে।এই কাঁচের ঘরের মধ্যে দিয়ে রোদ যেমন অবাধে প্রবেশ করে।এই কাঁচের ঘরের গ্ৰীণ হাউসের ভেতরে থেকে ফলে সূর্যের দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মির বিকিরণে বাধা দেয় এবং এই গ্ৰীণ হাউসের ভেতরের তাপমাত্রা কোনমতেই 35°C এর নীচে নামে না।এই গ্ৰীণ হাউসের কাঁচের ঘরের মতোই বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্বচ্ছ ঘন স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে আসা বিকিরণ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ফিরে যেতে বাধা দেয়।যার ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে।গ্ৰীণ হাউসের সঙ্গে তুলনা করে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও তার সহযোগী কয়েকটি গ্যাসের প্রতিক্রিয়াকে গ্ৰীণ হাউস প্রভাব বলে। অর্থাৎ গ্ৰীণ হাউস প্রভাব হল একটি পরিবেশকে দূষিত করার অন্যতম পদ্ধতি। বায়ুমণ্ডলের মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও তার সহযোগী কয়েকটি গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্ৰীণ হাউস প্রভাব বলে।ভূ-পৃষ্ঠ উষ্ণ হওয়ার এই ঘটনাটি 1977 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী স্মিথ 'গ্ৰীণ হাউস প্রভাব' বলে অভিহিত করেন।প্রধান গ্ৰীণ হাউস গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও তার সহযোগী গ্যাস গুলির মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতিতে পৃথিবী ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে।পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ সহ আবহমন্ডলকে উত্তপ্ত হওয়ার ঘটনাকে বলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং।

কার্বন-ডাই-অক্সাইড(CO2) + মিথেন(CH4) + নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড (NO) + ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) + ওজোন গ্যাস(O3) + সিরাস এবং কিউমুলাস মেঘ = গ্ৰীণ হাউস প্রভাব।

3. গ্ৰীণ হাউস গ্যাস ও তার উৎস -

গ্ৰীণ হাউস প্রভাব ঘটাতে সহ্মম গ্যাস গুলিকে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বলে।কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে প্রধান গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বলা হয়, এছাড়াও মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড,ক্লোরোফ্লুরোকার্বন,জলীয় বাষ্প,ওজোন, পারফ্লুরোকার্বন,সালফার হেক্সাক্লোরাইড প্রভৃতি।

১. কার্বন-ডাই-অক্সাইড(CO2) -

কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎস হল কার্বন।কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎস হল বিভিন্ন উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড।এছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানির দহন,অরণ্য নিধন, বিভিন্ন শিল্পে জন্য কয়লার দহন এবং সিমেন্ট উৎপাদন শিল্প,যানবাহনে ব্যবহৃত ডিজেল,পেট্রোল থেকে উৎপন্ন হয়।বর্তমানে গ্রীন হাউস প্রভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ প্রায় 76 শতাংশ।

২. মিথেন(CH4) -

গ্রীন হাউজ প্রভাবে একটি অন্যতম গ্যাস হল মিথেন।যা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকে 21-35 গুন বেশি সক্রিয়। জলাভূমি,মূলত জমিতে চাষবাস,জৈব বস্তু,জীবজন্তুর মৃতদেহের পচন, কয়লা খনি ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।গ্রীন হাউজ প্রভাবে মিথেনের অবদান প্রায় 13 শতাংশ।

৩. ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) -

ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের বাণিজ্যিক নাম ফ্রেয়ণ।এটি প্রধানত রেফ্রিজারেটার,এয়ার কন্ডিশনার,ফ্রিজ, এরোসল স্প্রে,প্লাস্টিক ফোম, স্প্রেক্যাম ইত্যাদি ব্যবহারে প্রতিবছর বায়ুমণ্ডলে নিহ্মিপ্ত হয় প্রায় 1 মিলিয়ন টন CFC।

৪. ওজোন গ্যাস(O3) -

বায়ুমন্ডলে উপস্থিত অক্সিজেন(O2) পরমাণু দুটি অনুতে বিভক্ত হয়ে,পরবর্তীকালে অক্সিজেনের একটি অণু এবং অক্সিজেনের পরমাণু সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে ওজোন গ্যাস উৎপাদন হয়।

৫. নাইট্রাস অক্সাইড (NO2) -

নাইট্রাস অক্সাইড উৎস হল স্যার শিল্প,নাইলন উৎপাদন, জৈব উৎপাদনে জ্বলন,জীবাশ্ম জ্বালানীর দহন, কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত অজৈব সালের বর্জ্য থেকে এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে এসে মিশেছে।গ্রীন হাউস সৃষ্টিতে এর ভূমিকা প্রায় 6 শতাংশ।

৬. পারফ্লুরোকার্বন (PFCs) -

পারফ্লুরোকার্বনের উৎস হল সিনথেটিক ফুড প্যাকিং শিল্পে, কার্পেট শিল্পে, টেফলন শিল্পে, ফ্রায়িং প্যান প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হয়।HFC গ্যাসের সঙ্গে এদের পরিমাপ করা হয়।বিশ্ব উষ্ণায়নে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর তুলনায় কয়েক হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী।

৭. সালফার হেক্সাফ্লোরাইড (SF6) -

এটি অদাহ্য গ্যাসরূপে বিদ্যুৎ শিল্পে, বিভিন্ন ইনসুলার, উচ্চ ভোল্টেজের সারকিট তৈরি, এয়ার ক্রাফট শিল্পে, কৃত্রিম শিল্প গ্যাসে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের থেকে 22 হাজার গুন বেশি শক্তিশালী।

৮. হাইড্রোফ্লুরোকার্বন (HFCs) -

CFC র জায়গায় বাজারে এসেছে HFC বা হাইড্রোফ্লুরোকার্বন তাও বর্তমানে অন্যতম গ্ৰীন হাউস গ্যাস।এই গ্যাসের উৎস হল হিমশীতলকরণ যন্ত্র,অ্যালুমিনিয়াম শিল্প প্রভৃতি।উষ্ণায়নে এই গ্যাসের ভূমিকা কার্বন-ডাই- অক্সাইডের তুলনায় 12000 গুন বেশি।

৯. জলীয় বাষ্প (H2O) -

জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব বাতাসে প্রায় 1.4 শতাংশ হলেও গ্ৰীন হাউস প্রভাবের ভূমিকা প্রচুর। জলীয় বাষ্প সূর্যের ইনফ্রারেড রশ্মি শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং জলীয় বাষ্প সৃষ্ট মেঘ পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপকে বাধা দেয়।

4. গ্ৰীন হাউস প্রভাবের কারণ -

গ্ৰীন হাউস প্রভাব মূলত প্রাকৃতিক ও মানুষসৃষ্ট কারনে হয়ে থাকে।

• প্রাকৃতিক কারণ -

  • সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে বিস্ফোরণ সময় কার্বন- ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড মতো গ্যাস বেরিয়ে আসে। 
  • প্রাকৃতিকভাবে বনভূমিতে দাবানল ফলে টন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয়।
  • বৃষ্টির জলে প্রতি লিটার 0.3 ঘন সেন্টিমিটার কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। 
  • বিভিন্ন জলাশয় বা জলাজমিতে পাতা লতা পচে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করে।

• মানুষসৃষ্ট কারণ -

  • মানুষ প্রতিনিয়ত জীবাশ্ম জ্বালানি ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি করছে।
  • গৃহস্থালি জীবনযাপন অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ফলে গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের সৃষ্টি হয়।
  • তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে কয়লা পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়।
  • বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা থেকে গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের সৃষ্টি হয়। 
  • বক্সাইট উত্তোলনের সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হয়। 
  • দ্রুত নগরায়নের ফলে বনভূমি নিধন করা হয়েছে,যার ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • বর্তমানে প্রচলিত শক্তি ব্যবহার ফলে গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
  • প্রযুক্তিগত ব্যবহার অর্থাৎ মানুষের হিমশীতলকরনের জন্য এসি,রেফ্রিজারেট,ফ্রিজ এবং দৈনন্দিন কাজে জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হচ্ছে,অন্যদিকে ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের সৃষ্টি হচ্ছে। 
  • মানুষের অসচেতন মনোভাবের জন্য গ্রীন হাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।

5. গ্ৰীণ হাউস প্রভাব ফলাফল -

  • গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের বৃদ্ধি -

দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনাঞ্চলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং বিভিন্ন যানবাহনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে,শিল্প ও কলকারখানা গড়ে তোলার এবং মানুষের নানা ধরনের কার্যকলাপের জন্য দিন দিন গ্ৰীণ হাউস গ্যাস যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইড,মিথেন,নাইট্রাস অক্সাইড ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন, সালফার হেক্সাফ্লোরাইড এর পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পৃথিবীকে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর করছে।

  • বিশ্ব উষ্ণায়ন -

বর্তমানে যে হারে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা অন্তত 0.20°C করে বাড়বে দশক পিছু।আর নির্গমনের হার বাড়লে তাপ বৃদ্ধি 0.2°C ছাড়িয়ে যাবে এবং বর্তমান শতক শেষ হওয়ার আগে অতিরিক্ত 3°C তাপমাত্রা যোগ হবে। ইতিমধ্যে উষ্ণায়নে সাইবেরিয়ার বরফ গলে গিয়ে নীচে জমে থাকা নিন্মমানের পিট জাতীয় কয়লা থেকে বেরিয়ে আসছে কয়লার মধ্যে জমে থাকা মিথেন গ্যাস।ফলে গত 40 বছরে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে অতিরিক্ত 3°C।ফলে পৃথিবী ক্রমশ উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে ওঠেছে।

  • জলবায়ুর পরিবর্তন -

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ুগত পরিবর্তন লহ্ম্য করা যায়।যেমন আমেরিকা ও ইউরোপে দেখা গেছে গত 50 বছরের মধ্যে শীতলতম শীতকাল। আবার জাপান ও কোরিয়ার গড় 25 বছরের মধ্যে তীব্রতম তুষার ঝড় উঠেছে।2004 সালের গ্ৰীষ্মে একযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 62টি টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছে,আলাস্কা,অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় প্রতি বছর ঘটে চলেছে ভয়াবহ দাবানল।লন্ডনে দেখা গেছে গত 300 বছরের মধ্যে শুষ্কতম গ্ৰীষ্ম।গত 200 বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে 0.6°C এবং শেষ হিমযুগের পর প্রায় 2.5-5°C। বিজ্ঞানীদের অনুমান আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আগামী কয়েক দশকে ক্রমশ বেড়েই চলবে।

  • হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফ গলন -

বিগত কয়েক দশক ধরে তাপমাত্রায় পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন লহ্ম্য করা যাচ্ছে।তার প্রভাব পড়েছে আমাদের পরিবেশের উপর।যেমন বিখ্যাত ইলুলিসাট হিমবাহের গত 5 বছরে 15 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হ্রাস পাচ্ছে এবং 2004 থেকে 2006 সালের মধ্যে প্রায় 164 মাইল বরফ গলন লহ্ম্য করা যায় গ্ৰীনল্যান্ডে।ভারতে গঙ্গোত্রী হিমবাহও বছরে 30 মিটার হারে হ্রাস পাচ্ছে।

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণের মেরুতে বরফ অস্বাভাবিক ভাবে গলতে শুরু করেছে।উত্তর মেরুতে 1958 থেকে 1976 তে যেখানে সুমেরুর বরফের গড় উচ্চতা ছিল 3 মিটার তা 1993 থেকে 2005 এর গড় হিসাবে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় 1.6 মিটার।গত 30 বছরে সুমেরুর বরফ কমেছে প্রায় 38000 বর্গ কিলোমিটার। আর দহ্মিণ মেরুতে ক্যুরি হিমবাহে গত 100 বছরে 11 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হ্রাস পাচ্ছে।ফলে কুমেরুতেও বিশাল বিশাল হিমশৈল গুলি দহ্মিণ মেরুর মূল ভূখণ্ড থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।

  • সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি -

দ্রুত হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন বরফ রাশি গলতে শুরু করেছে তেমনি সেই বরফগলা জল সমুদ্রে পতিত হয়েছে।তাপ বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে জলে পরিণত হয়েছে,যার আয়তন তুলনামূলক বেশি বরফের থেকে।এই বরফের জল সমুদ্রে পতিত হয়ে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি করছে।1901 থেকে 2000 সালে পৃথিবী জুড়ে সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়েছে প্রতি বছরে প্রায় 1.5 মিলিমিটার।United State Watch Institute হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে জলতল বাড়ছে প্রতি বছরে এক ইঞ্চি করে ইতিমধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের কিরবাতি অঞ্চলের দুটি দ্বীপ জলের তলায় চলে গেছে। United Nation এর মতে সারাবিশ্বের প্রায় 5 কোটি সামুদ্রিক দ্বীপবাসী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পরিবেশ উদবাস্ততে পরিণত হবে।

  • প্রবাল দ্বীপের ধ্বংস -

সমুদ্রের প্রবাল জন্মের প্রধান শর্ত হল সামুদ্রিক জলের তাপমাত্রায় 18°C থেকে 30°C হওয়া প্রয়োজন।কিন্তু পৃথিবীর তাপমাত্রায় ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন বরফ গলে সমুদ্র মিশেছে আবার অন্যদিকে সমুদ্রের জলের উষ্ণ হয়ে তাপমাত্রায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফলে সমুদ্রের জলে তাপমাত্রার একটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে ও এই প্রবাল প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে। ইতিমধ্যে 55 শতাংশ প্রবাল দ্বীপ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে যদি এইভাবে তাপমাত্রায় ক্রমশ বৃদ্ধি হলে আগামী 15 বছরের মধ্যে বাকী দ্বীপ প্রায় সমস্ত প্রবাল মারা যাবে।

  • উপকূলীয় অঞ্চল জলমগ্নতা -

হিমযুগের সমুদ্রের জলতল ছিল এখানকার চেয়ে 80 থেকে 150 মিটার নীচু অর্থাৎ সব বরফ গললে জলতল কমপক্ষে অতিরিক্ত এই উচ্চতায় আবার উঠে আসতে পারে।যা সব মিলিয়ে জলতল বাড়বে বর্তমানের চেয়ে অতিরিক্ত 7 মিটার। বিজ্ঞানীদের মতে জলতলের উচ্চতা 1 মিটার বাড়লে পৃথিবীর 11.5 শতাংশ এবং 3 মিটার বাড়লে প্রায় 27 শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চল জলের নীচে যাবে।যেমন - বাংলাদেশ, ভারতের সুন্দরবন ও গুজরাট উপকূল,পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এই প্রভাব লহ্ম্য করা যাবে।

  • শুকিয়ে যাবে নদনদী -

দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ ধীর গতিতে গললেও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ গুলি দ্রুততর ভাবে বরফ গলতে শুরু করেছে।ফলে পর্বতের হিমবাহের গলিত জলে পুষ্ট নদীগুলি উৎসে বরফের অভাবে শুকিয়ে যাবে এবং বরফগলা জলে পুষ্ট হ্রদও পরিণত হবে শুষ্ক ভূমিতে।

  • খরা,বন্যা, ঝড় ও দাবানলের তীব্রতা -

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী জুড়ে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব ভাগে, এশিয়ার উত্তর ও মধ্যভাগের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে,উত্তর ইউরোপে এবং সমগ্ৰ এশিয়ার উপকূলে।পর্বতের শীর্ষদেশে অবস্থিত হিমবাহের গলনের ফলে বরফের গলা জলে পুষ্ট নদী গুলিতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে নদী উপত্যকার বাড়বে বন্যার প্রকোপ। উপসাগরীয় অঞ্চল গুলিতে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে আরও বেশি সংখ্যায় এবং তীব্রভাবে। অবধারিত ভাবে বেশ কিছু নতুন অঞ্চল পড়বে খরার কবলে।জলের কষ্টের প্রকোপ বাড়বে কম বেশি মাত্রায়। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অরণ্যের প্রকৃতি উপর প্রভাব পড়েছে।

  • খাদ্যের অভাব -

জলবায়ুগত পরিবর্তনে ফলে সমস্যার পড়বে কৃষি এবং খাদ্যশস্যের উৎপাদন।যেমন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে একদিকে সেচ বিহীন অঞ্চলে দানাশস্য চাষ করা যায় না, আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি সেচ বিহীন অঞ্চলে দানাশস্য চাষ করা যায় না। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্ৰি সেন্টিগ্ৰেড বাড়লে হেক্টর প্রতি ধান ও গমের উৎপাদন কমে যাবে যথাক্রম 0.75 টন ও 0.45 টন।

  • পানীয় জলের অভাব -

দ্রুত হারে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ এবং মেরু অঞ্চলে বরফ গলে সমুদ্রের জলে পতিত হয়ে পৃথিবীতে লবণাক্ত জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। পানীয় জলের চাহিদা পূরণের জন্য ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করার ফলে ভূগর্ভস্থ জলের টান পড়বে। অর্থাৎ সাধু বা মিষ্টি জলের অভাব লক্ষ্য করা যাবে।

  • জীববৈচিত্র্য হ্রাস -

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন বনভূমি সংখ্যা দ্রুত হারে ধ্বংস হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে জীব বৈচিত্র্য সংখ্যার তারতম্য ঘটেছে। বনভূমির উদ্ভিদের ধরনও বদলাচ্ছে আর যে সমস্ত উদ্ভিদ এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না তারা চিরতরে অবলুপ্ত হয়েছে।উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা 1.5°C থেকে 2.5°C বাড়লে 20-30 শতাংশ উদ্ভিদ অবলুপ্তির মুখোমুখি হবে।উত্তর গোলার্ধের তুন্দ্রা ও তৈগা অঞ্চলে বহু জলজ পাখির জন্মস্থান কিন্তু উষ্ণায়নের ওই সব অঞ্চলের জলাভূমি যাবে শুকিয়ে, তখন বিপন্ন হবে ওইসব পাখিরা।WWF এর হিসাবে তুন্দ্রা জলাভূমির 40-50 শতাংশ জলাভূমি হ্রাসে প্রায় 50 লহ্ম হাঁস এবং 70 লহ্ম ক্যালিড্রিড ওয়েডর পাখি তাদের বাসস্থান হারাবে।গত 30 বছরে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের পেঙ্গুইনের সংখ্যা 30 হাজার থেকে 11 হাজার হয়েছে।মেরু ভল্লুক এবং সামুদ্রিক ধূসর তিমির প্রায় একই অবস্থা।

  • নিত্যনতুন রোগের প্রাদুর্ভাব -

বৃষ্টিপাত ও আর্দ্র পরিবেশে মশা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করার ফলে মশা বাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ পীতজ্বর, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকেনগুনিয়া ইত্যাদি রোগ আফ্রিকা হইতে এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।এছাড়াও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ভাইরাস ও তজ্জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। বর্তমানে করোনা ভাইরাস ও মাঙ্কি ভাইরাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

6. গ্ৰীন হাউস গ্যাসের নিয়ন্ত্রন -

  • বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।
  • অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। 
  • বনসৃজন প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
  • প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটাতে হবে। 
  • আর্বজনার প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে।
  • শীতলকরন যন্ত্রের ব্যবহার কমাতে হবে।
  • বাড়ি,বিদ্যালয়,কলেজ,অফিস ও আদালত প্রভৃতি জায়গায় বিনা কারণে পাখা,লাইট ও কম্পিউটার ইত্যাদি অপচয় বন্ধ করতে হবে। 
  • জনগনের মধ্যে সচেতনতা বোধ সৃষ্টি করতে হবে।
7. উপসংহার - 

পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আছে বিভিন্ন প্রকার গ্যাস।এই গ্যাসীয় আবরণে ঢাকা বায়ুমণ্ডলে এমন অনেক গ্যাস আছে যা পার্থিব জগতের পহ্মে হ্মতিকারক।জৈব অথবা অজৈব সমস্ত কিছুর ওপরই এর প্রভাব সবসময় শুভ হয় না।এর অশুভ প্রভাব ব্যাপক হ্মতি সাধন করে।তবে কিছু কিছু কু প্রভাব মানুষ তথা প্রাণী জগতে কিছু কল্যাণমূলক প্রভাব ফেলে।তাই "গ্ৰীণ হাউস প্রভাব" যেমন তার অশুভ প্রভাব নিয়ে হ্মতি করে,ঠিক সেইরকম কিছু কিছু শুভ প্রভাব নিয়েও আসে। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যাচ্ছে,গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের ক্রমশ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে,যার ফলস্বরূপ বিশ্ব উষ্ণায়নের সৃষ্টি হচ্ছে।

CLICK HERE -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post