বিশ্ব উষ্ণায়ন||Global Warming

বিশ্ব উষ্ণায়ন||Global Warming

বিশ্ব উষ্ণায়ন||Global Warming

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Global Warming (Concept, Causes,Effects And Controls)
Global Warming

Assignment Questions -

1. বিশ্ব উষ্ণায়ন কী।বিশ্ব উষ্ণায়নের কারন গুলি বর্ণনা কর।||What Is Global Warming. Described The Causes Of Global Warming.

2. বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব গুলি বিস্তারিত বর্ণনা কর।বিশ্ব উষ্ণায়নের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||Describe In Details The Effects Of Global Warming. Briefly Describe The Measures To Controls Of Global Warming.

Global Warming -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার চরম উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও এই বিষয়ে তর্কবিতর্ক আজও অব্যাহত যে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রকৃতপহ্মে বৃদ্ধি পাচ্ছে।পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্ৰীণ হাউস গ্যাস,মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড দায়ী শতকরা 49 ভাগ, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন দায়ী শতকরা 14 ভাগ, নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমূহ দায়ী শতকরা 6 ভাগ এবং জলীয় বাষ্প সহ অন্যান্য গ্যাস যেমন ওজোন দায়ী শতকরা 13 ভাগ।এই সমস্ত গ্যাসকে গ্রীণ হাউস গ্যাস বলা হয়।গ্রীন হাউস গ্যাসের বৃদ্ধির ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন সৃষ্টি হয়।যা বিশ্বব্যাপী গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি করে এবং জলবায়ুগত একটি বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে।

2. বিশ্ব উষ্ণায়ন -

সূর্য কিরণের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে সূর্যরশ্মি আপতিত হওয়ার পর দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মহাকাশে ফিরে যায়।হ্মুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সূর্য রশ্মিকে এই গ্রীন হাউস গ্যাস মহাকাশে ফিরে যেতে বাধা দেওয়ার ফলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঠিক থাকে অর্থাৎ ধ্রুবক থাকে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, 1995 সাল থেকে 2006 সাল পর্যন্ত গত দশ বছরের বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডের গড় বৃদ্ধি প্রতিবছরে 1.9 পিপিএম যেখানে 1800 সাল থেকে 1900 সাল পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের গড়ে তাপ বেড়েছে 0.5°C আর 1900 সাল থেকে 2000 সাল পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের গড়ে তাপ বেড়েছে 1°C।উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যদি এভাবে ক্রমবর্ধমান হয়,তবে আগামী 2050 সাল নাগাদ ভূ-পৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ 3.5°C গিয়ে দাঁড়াতে পারে।সুতরাং প্রাকৃতিক পরিবেশ তেমন ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার এই ক্রম বৃদ্ধি অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন "বিশ্ব উষ্ণায়ন" বা "Global Warming".

3. বিশ্ব উষ্ণায়নের কারন -

আপাতত দৃষ্টিতে দেখা যায়,গ্ৰীন হাউস প্রভাব এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের কারন গুলি মূলত একই।কারন গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের বৃদ্ধি বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ।বিশ্ব উষ্ণায়নের মূলত প্রাকৃতিক কারণ পরোহ্ম ভাবে ও মানুষসৃষ্ট কারণ প্রত্যহ্ম ভাবে হয়ে থাকে।

• প্রাকৃতিক কারণ -

  • সুপ্ত আগ্নেয়গিরি থেকে বিস্ফোরণ সময় কার্বন- ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইড মতো গ্যাস বেরিয়ে আসে। 
  • প্রাকৃতিকভাবে বনভূমিতে দাবানল ফলে টন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হয়।
  • বৃষ্টির জলে প্রতি লিটার 0.3 ঘন সেন্টিমিটার কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। 
  • বিভিন্ন জলাশয় বা জলাজমিতে পাতা লতা পচে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করে।

• মানুষসৃষ্ট কারণ -

  • মানুষ প্রতিনিয়ত কয়লা,বিদেশ,পেট্রোল সহ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং কার্বন মনো অক্সাইড যুক্ত হয়।
  • গৃহস্থালি জীবনযাপন অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটার, ইলেকট্রনিক্স বস্তু ব্যবহারের ফলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হয়।
  • চাষ আবাদ করলে মৃত্তিকা কর্ষণে ধান ও গমের হ্মেত থেকে পচা জৈব আর্বজনা জমির পচা খড়কুটো,গোবর পরিবেশে মিথেন এর পরিমাণ বাড়ায়।
  • অধিক ফলনের আশায় জমিতে নাইট্রোজেন যুক্ত সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং বনাঞ্চল ধ্বংস করার পরিণতি বাতাসে নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমুহ বৃদ্ধি ঘটায়।
  • তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে কয়লা পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি হয়।
  • বিভিন্ন শিল্প ও কলকারখানা থেকে গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের সৃষ্টি হয়। 
  • বক্সাইট উত্তোলনের সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হয়। 
  • দ্রুত নগরায়নের ফলে বনভূমি নিধন করা হয়েছে,যার ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের অক্সাইড মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • বর্তমানে প্রচলিত শক্তি ব্যবহার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। 
  • প্রযুক্তিগত ব্যবহার অর্থাৎ মানুষের হিমশীতলকরনের জন্য এসি,রেফ্রিজারেট,ফ্রিজ এবং দৈনন্দিন কাজে জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সৃষ্টি হচ্ছে,অন্যদিকে ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের সৃষ্টি হচ্ছে। 
  • মানুষের অসচেতন মনোভাবের জন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে শিল্পোন্নত বিভিন্ন দেশের আনুপাতিক ভূমিকা -

     দেশ           বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা

১. আমেরিকা                                21%

২. রাশিয়া                                      14%

৩. ফ্রান্স,জার্মানি,ব্রিটেন,ইতালি     14%

৪. চিন                                              7%

৫. জাপান                                        6%

৬. ভারতবর্ষ                                     4%

৭. অন্যান্য দেশ                              34%

4. বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল -

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে সমস্ত হ্মতির সম্মুখীন হতে হবে, সেগুলি হল -

  • জলবায়ুর পরিবর্তন -

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীর জলবায়ুগত পরিবর্তন লহ্ম্য করা যায়।যেমন আমেরিকা ও ইউরোপে দেখা গেছে গত 50 বছরের মধ্যে শীতলতম শীতকাল। আবার জাপান ও কোরিয়ার গড় 25 বছরের মধ্যে তীব্রতম তুষার ঝড় উঠেছে।2004 সালের গ্ৰীষ্মে একযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 62টি টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছে,আলাস্কা,অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় প্রতি বছর ঘটে চলেছে ভয়াবহ দাবানল।লন্ডনে দেখা গেছে গত 300 বছরের মধ্যে শুষ্কতম গ্ৰীষ্ম।গত 200 বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে 0.6°C এবং শেষ হিমযুগের পর প্রায় 2.5-5°C। বিজ্ঞানীদের অনুমান আবহাওয়ার এই দ্রুত পরিবর্তন আগামী কয়েক দশকে ক্রমশ বেড়েই চলবে।

  • হিমবাহের বরফ গলন -

বিগত কয়েক দশক ধরে তাপমাত্রায় পরিবর্তনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন লহ্ম্য করা যাচ্ছে।তার প্রভাব পড়েছে আমাদের পরিবেশের উপর।যেমন বিখ্যাত ইলুলিসাট হিমবাহের গত 5 বছরে 15 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হ্রাস পাচ্ছে এবং 2004 থেকে 2006 সালের মধ্যে প্রায় 164 মাইল বরফ গলন লহ্ম্য করা যায় গ্ৰীনল্যান্ডে।ভারতে গঙ্গোত্রী হিমবাহও বছরে 30 মিটার হারে হ্রাস পাচ্ছে।

  • মেরু অঞ্চলের বরফ গলন -

পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণের মেরুতে বরফ অস্বাভাবিক ভাবে গলতে শুরু করেছে।উত্তর মেরুতে 1958 থেকে 1976 তে যেখানে সুমেরুর বরফের গড় উচ্চতা ছিল 3 মিটার তা 1993 থেকে 2005 এর গড় হিসাবে কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় 1.6 মিটার।গত 30 বছরে সুমেরুর বরফ কমেছে প্রায় 38000 বর্গ কিলোমিটার। আর দহ্মিণ মেরুতে ক্যুরি হিমবাহে গত 100 বছরে 11 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য হ্রাস পাচ্ছে।ফলে কুমেরুতেও বিশাল বিশাল হিমশৈল গুলি দহ্মিণ মেরুর মূল ভূখণ্ড থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে।

  • সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি -

দ্রুত হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন বরফ রাশি গলতে শুরু করেছে তেমনি সেই বরফগলা জল সমুদ্রে পতিত হয়েছে।তাপ বৃদ্ধির কারণে বরফ গলে জলে পরিণত হয়েছে,যার আয়তন তুলনামূলক বেশি বরফের থেকে।এই বরফের জল সমুদ্রে পতিত হয়ে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি করছে।1901 থেকে 2000 সালে পৃথিবী জুড়ে সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়েছে প্রতি বছরে প্রায় 1.5 মিলিমিটার।United State Watch Institute হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে জলতল বাড়ছে প্রতি বছরে এক ইঞ্চি করে ইতিমধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরের কিরবাতি অঞ্চলের দুটি দ্বীপ জলের তলায় চলে গেছে। United Nation এর মতে সারাবিশ্বের প্রায় 5 কোটি সামুদ্রিক দ্বীপবাসী আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পরিবেশ উদবাস্ততে পরিণত হবে।

  • প্রবাল দ্বীপের ধ্বংস -

সমুদ্রের প্রবাল জন্মের প্রধান শর্ত হল সামুদ্রিক জলের তাপমাত্রায় 18°C থেকে 30°C হওয়া প্রয়োজন।কিন্তু পৃথিবীর তাপমাত্রায় ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন বরফ গলে সমুদ্র মিশেছে আবার অন্যদিকে সমুদ্রের জলের উষ্ণ হয়ে তাপমাত্রায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।ফলে সমুদ্রের জলে তাপমাত্রার একটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে ও এই প্রবাল প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন হচ্ছে। ইতিমধ্যে 55 শতাংশ প্রবাল দ্বীপ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে ভবিষ্যতে যদি এইভাবে তাপমাত্রায় ক্রমশ বৃদ্ধি হলে আগামী 15 বছরের মধ্যে বাকী দ্বীপ প্রায় সমস্ত প্রবাল মারা যাবে।

  • উপকূলীয় অঞ্চল জলমগ্নতা -

হিমযুগের সমুদ্রের জলতল ছিল এখানকার চেয়ে 80 থেকে 150 মিটার নীচু অর্থাৎ সব বরফ গললে জলতল কমপক্ষে অতিরিক্ত এই উচ্চতায় আবার উঠে আসতে পারে।যা সব মিলিয়ে জলতল বাড়বে বর্তমানের চেয়ে অতিরিক্ত 7 মিটার। বিজ্ঞানীদের মতে জলতলের উচ্চতা 1 মিটার বাড়লে পৃথিবীর 11.5 শতাংশ এবং 3 মিটার বাড়লে প্রায় 27 শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চল জলের নীচে যাবে।যেমন - বাংলাদেশ, ভারতের সুন্দরবন ও গুজরাট উপকূল, মালদ্বীপ, মায়ানমার, ফিলিপাইন,পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এই প্রভাব লহ্ম্য করা যাবে।

  • শুকিয়ে যাবে নদনদী -

দ্রুত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ ধীর গতিতে গললেও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহ গুলি দ্রুততর ভাবে বরফ গলতে শুরু করেছে।ফলে পর্বতের হিমবাহের গলিত জলে পুষ্ট নদীগুলি উৎসে বরফের অভাবে শুকিয়ে যাবে এবং বরফগলা জলে পুষ্ট হ্রদও পরিণত হবে শুষ্ক ভূমিতে।

  • খরা,বন্যা, ঝড় ও দাবানলের তীব্রতা -

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী জুড়ে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব ভাগে, এশিয়ার উত্তর ও মধ্যভাগের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে,উত্তর ইউরোপে এবং সমগ্ৰ এশিয়ার উপকূলে।পর্বতের শীর্ষদেশে অবস্থিত হিমবাহের গলনের ফলে বরফের গলা জলে পুষ্ট নদী গুলিতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে নদী উপত্যকার বাড়বে বন্যার প্রকোপ। উপসাগরীয় অঞ্চল গুলিতে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে আরও বেশি সংখ্যায় এবং তীব্রভাবে। অবধারিত ভাবে বেশ কিছু নতুন অঞ্চল পড়বে খরার কবলে।জলের কষ্টের প্রকোপ বাড়বে কম বেশি মাত্রায়। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অরণ্যের প্রকৃতি উপর প্রভাব পড়েছে।

  • খাদ্যের অভাব -

জলবায়ুগত পরিবর্তনে ফলে সমস্যার পড়বে কৃষি এবং খাদ্যশস্যের উৎপাদন।যেমন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে একদিকে সেচ বিহীন অঞ্চলে দানাশস্য চাষ করা যায় না, আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি সেচ বিহীন অঞ্চলে দানাশস্য চাষ করা যায় না। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্ৰি সেন্টিগ্ৰেড বাড়লে হেক্টর প্রতি ধান ও গমের উৎপাদন কমে যাবে যথাক্রম 0.75 টন ও 0.45 টন। কৃষিজাত ফসল যেমন ধান,গম,পাট, তুলো, জোয়ার,বাজরা, সয়াবিনের উৎপাদন কমবে।

  • পানীয় জলের অভাব -

দ্রুত হারে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ এবং মেরু অঞ্চলে বরফ গলে সমুদ্রের জলে পতিত হয়ে পৃথিবীতে লবণাক্ত জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। পানীয় জলের চাহিদা পূরণের জন্য ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করার ফলে ভূগর্ভস্থ জলের টান পড়বে। অর্থাৎ সাধু বা মিষ্টি জলের অভাব লক্ষ্য করা যাবে।

  • জীববৈচিত্র্য হ্রাস -

জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন বনভূমি সংখ্যা দ্রুত হারে ধ্বংস হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে জীব বৈচিত্র্য সংখ্যার তারতম্য ঘটেছে। বনভূমির উদ্ভিদের ধরনও বদলাচ্ছে আর যে সমস্ত উদ্ভিদ এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না তারা চিরতরে অবলুপ্ত হয়েছে।উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা 1.5°C থেকে 2.5°C বাড়লে 20-30 শতাংশ উদ্ভিদ অবলুপ্তির মুখোমুখি হবে।উত্তর গোলার্ধের তুন্দ্রা ও তৈগা অঞ্চলে বহু জলজ পাখির জন্মস্থান কিন্তু উষ্ণায়নের ওই সব অঞ্চলের জলাভূমি যাবে শুকিয়ে, তখন বিপন্ন হবে ওইসব পাখিরা।WWF এর হিসাবে তুন্দ্রা জলাভূমির 40-50 শতাংশ জলাভূমি হ্রাসে প্রায় 50 লহ্ম হাঁস এবং 70 লহ্ম ক্যালিড্রিড ওয়েডর পাখি তাদের বাসস্থান হারাবে।গত 30 বছরে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের পেঙ্গুইনের সংখ্যা 30 হাজার থেকে 11 হাজার হয়েছে।মেরু ভল্লুক এবং সামুদ্রিক ধূসর তিমির প্রায় একই অবস্থা।

  • বনাঞ্চলের ধ্বংস -

বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে বনাঞ্চলের দাবানল ঘটার সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে।যেমন পর্তুগাল,ক্যালিফোর্নিয়ার,অস্ট্রেলিয়া,স্পেন, ইউরোপের কিছু অংশে এই ধরনের দাবানল মাঝেমধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।এর ফলে অচিরেই বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়াও জলবায়ু গত পরিবর্তনের ফলে ভেষজ উদ্ভিদ সহ বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ কুল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

  • বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট -
বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমগ্ৰ পৃথিবী জুড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে ম্যানগ্ৰোভস বাস্তুতন্ত্রের সাম্যতা বিনষ্ট হবে।
  • নিত্যনতুন রোগের প্রাদুর্ভাব -

বৃষ্টিপাত ও আর্দ্র পরিবেশে মশা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করার ফলে মশা বাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ পীতজ্বর, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকেনগুনিয়া ইত্যাদি রোগ আফ্রিকা হইতে এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রতিটি মানুষের মধ্যে হৃদরোগ ও উদর পীড়ার রোগের প্রকোপ লহ্ম্য করা যাচ্ছে।এছাড়াও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিভিন্ন ভাইরাস ও তজ্জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। সাম্প্রতিক কালে করোনা ভাইরাস ও মাঙ্কি ভাইরাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

5. বিশ্ব উষ্ণায়নের নিয়ন্ত্রণ মূলক ব্যবস্থা -

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে যে সমস্ত আলোচনা ও সম্মেলন হয়, সেই আলোচনা ও সম্মেলনে বলা হয়েছে যে মানুষের জীবনযাত্রা ও অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন আনলে আগামীদিনে এর সুফল পাওয়া যাবে।এই নিয়ন্ত্রন মূলক ব্যবস্থা গুলি হল।-

১. ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্পের ব্যবহার -

প্রতিটি বাড়ির সমস্ত ইলেকট্রিক ল্যাম্প ও টিউব প্রভৃতি কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্পের দ্বারা প্রতিস্থাপিত করলে শক্তির ব্যবহার এক ধাক্কায় ৩০ শতাংশ কমানো যাবে। ফলে কয়লা পুড়িয়ে এত তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রয়োজন হবে না। 

২. সৌর হিটার ও সৌর কুকারে ব্যবহার -

বর্তমানে বাড়ি বা হোটেলের গরম জলের জন্য গিজারের ব্যবহার বন্ধ করে সৌর হিটারের ব্যবহার করা যেতে পারে এবং সেই সঙ্গে বাড়ির রান্নার জন্য সৌর কুকার ব্যবহার করা গেলে একদিকে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে অন্য দিকে দূষন হ্রাস করা যাবে। 

৩. বনসৃজন -

প্রত্যেক পাঁচ বছরের উপরের জনগন যদি তাদের বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দায় টবে গাছ লাগান তাহলে অনায়াসে কয়েক হাজার টন কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডল থেকে মুক্ত করা যেতে পারে। এবং সেই সঙ্গে বনসৃজনের মাধ্যমে বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে পরিবেশে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা যায়। আবার অনেকে সময় কোনো ব্যক্তি রাস্তায় যাবার সময় কোনো ফল খেতে খেতে যাওয়ার সময় যদি ফলের বীজ রাস্তায় ফেলে দেওয়া তাহলে সেই বীজ গাছে পরিণত হয়ে পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। 

৪. পরিবহনের প্রতি সচেতনতা -

ব্যক্তির যদি নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার না করে সরকারি বা বেসরকারি বাসে বা ট্রেনে করে একসঙ্গে অনেকে ব্যবহার করলে,তাহলে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।সেই সঙ্গে তেল বিহীন যানবাহন যেমন বাইসাইকেলের ব্যবহারের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে।পুরানো গাড়িকে বাতিল করতে হবে যাতে দূষণ না ছড়ায় এবং যানবাহন গুলিকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর পরীক্ষা-নিরীহ্মার মাধ্যমে সঠিকভাবে পরিচালনা করা দরকার।এতে দূষণ কম হয়।

৫. অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহার -

প্রচলিত শক্তি গুলির পরিবর্তে অপ্রচলিত শক্তি যেমন সৌরশক্তি,বায়ু শক্তি,জোয়ার-ভাটা শক্তি,ভূ-তাপীয় শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।কারন এরা একদিকে যেমন অ-কার্বন শক্তির উৎস,অন্যদিকে পরিবেশ পহ্মে সহায়ক। 

৬. সম্পদের যথাযথ ব্যবহার -

কোনো দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে হবে যাতে দ্রব্যের উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎ অপচয় না হয়। বিজ্ঞানীদের মতে গচ্ছিত সম্পদকে ভবিষ্যতের জন্য মজুত রাখতে হবে এবং পুরোনো দ্রব্যকে ফেলে না দিয়ে পুনর্নবীকরণ করে পুনরায় ব্যবহার করতে হবে।এর ফলে বিদ্যুতের সাশ্রয় করা যায়।

৭. হিমশীতল করন যন্ত্রের ব্যবহার হ্রাস -

ফ্রিজ,রেফ্রিজারেটার,এ.সি মেশিন প্রভৃতির উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে হবে,রাতে CFC,HFC,PFC মতো গ্যাসের উৎপাদন কমিয়ে আনা যায়।

৮. সাশ্রয় -

রাত্রি বেলায় খেলা বন্ধ করে দিনের সূর্যালোকে ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলা চালু করতে হবে।যাতে বিদ্যুৎ এর খরচ কম হয়।প্রতিটি বাড়ি, বিদ্যালয়,কলেজ, অফিস ও আদালতে প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিনা কারণে ফ্যান ও লাইট চালানো বন্ধ করতে হবে।এছাড়াও কাজ না থাকলে কম্পিউটার বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ। কম্পিউটার চালানোর হ্মেত্রে স্টান্ডবাই বা স্কিনসেভার ভোগে কম্পিউটারকে রাখলে বিদ্যুৎ বাঁচানো সম্ভব হয় না। কম্পিউটার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে ইউপিএস ও মনিটর থেকে কার্বন নির্গমন বন্ধ হয়।

৯. শিল্পাঞ্চলে সর্তকতা মূলক নিয়ম -

বিভিন্ন কলকারখানা,শিল্পাঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা বরাবর বসতি স্থাপন করা যাবে না।এই অঞ্চলকে ঘিরে বেশী সংখ্যক উদ্ভিদ লাগিয়ে বনাঞ্চলের সৃষ্টি করতে হবে।

১০. জনসচেতনতা -

বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে শিল্পোন্নত দেশ গুলির অতিরিক্ত হারে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস উৎপাদন না করে,দূষন নিয়ন্ত্রণ মূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে, বৃহ্মরোপন করার প্রতি এবং পৃথিবীকে বিপন্ন করার হাত থেকে রক্ষা করার বিষয়ে প্রতি সচেতন করতে হবে।

১১. বিভিন্ন সম্মেলন -

পৃথিবী জুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে হলে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পৃথিবীর সবকটি দেশকে বসুন্ধরা শীর্ষক সম্মেলন, Agenda-21, মন্ট্রিল চুক্তি এবং কিয়োটো চুক্তি মেনে চলতে হবে।

6. উপসংহার -

পরিশেষে একটি কথা বোঝা যায় যে,বিরাট এক বিপদের আতঙ্ক নিয়ে বর্তমানকালে বায়ুমণ্ডলীয় উষ্ণতা মানুষের কর্ম প্রকৃতির দ্বারা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।সুতরাং আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতিকে এমন একটি স্তরে নিয়ে যেতে হবে,যাতে করে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর উৎপাদনের মাত্রাকে হ্রাস করতে হবে।অর্থাৎ বিকল্প শক্তি উৎপাদনের উপাদানকে আবিষ্কার করতে হবে এবং বায়ুমন্ডলের গ্যাসের ভারসাম্য অবস্থা ধীর রাখার জন্য পরিবর্ত দ্রব্য হিসাবে প্রবহমান শক্তি সম্পদের ব্যবহার করে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে,তা না হলে এই ভারসাম্য চিরতরে বিন্যস্ত হবে।পৃথিবী ক্রমশই উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে উঠবে, যা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করবে।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post