ওজোন গহ্বর||Ozone Hole

ওজোন গহ্বর||Ozone Hole

ওজোন গহ্বর||Ozone Hole

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Ozone Hole
Ozone Hole

Assignment Questions -

1. ওজোন গহ্বর কি।এর সৃষ্টি কারন গুলি বর্ণনা কর।||What Is Ozone Hole? Explain It's Causes.

2. বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরের গুরুত্ব কী।ওজোন গহ্বরের ফলে সৃষ্ট প্রভাব গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।||What Is The Importance Of Ozone Layer In Atmosphere.Briefly Discuss The Effects By Ozone Hole.

ওজোন গহ্বর -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে পৃথিবীতে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পৃথিবীর তাপমাত্রাকে ক্রমশ উত্তপ্ত করেছে।আমেরিকা,জার্মানি,ব্রিটেন সহ কয়েকটি দেশের অন্তত তাই অভিমত করেন।জার্মানির বিজ্ঞানীরা অতি সম্প্রতিকালে দেখিয়েছেন যে যেখানে গাছপালা বনজঙ্গল বেশী সেখানে বেশী মিথেন উৎপন্ন হয় এবং এই গ্ৰীণ হাউস গ্যাসের ওজোন গহ্বর তৈরিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশী অবদান।উন্নত দেশগুলির সবুজ গাছগাছালির উপরও এতটাই আক্রমণাত্মক যে অন্যান্য গ্ৰীণ হাউস গ্যাস গুলি যেমন CFC ,N2O জলীয় বাষ্প এবং সর্বোপরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর ওজোন গহ্বর তৈরীতে অবদান ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।উন্নত দেশগুলির কলকারখানা থেকে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি ওজোন স্তর হালকা করার সব চাইতে বেশী ভূমিকা রয়েছে।জমি কর্ষন বা সুবজ গাছগাছালির থেকে নির্গত মিথেনকে ওজোন হ্রাসের  কারন হিসাবে দেখানো উন্নত দেশগুলির নিজেদের থেকে সুকৌশলে দৃষ্টি ঘোরানোর একটি সুলভ অথচ সযত্ন চেষ্টা মাত্র।

2. ওজোন গ্যাস -

ওজোন একটি গ্ৰীক শব্দ।ওজোন হল হালকা নীলাভ উত্তেজক ও বিষাক্ত গ্যাস। এটি একটি অস্থায়ী গ্যাস।অক্সিজেনের সঙ্গে যার তফাৎ খুব সামান্য।1840 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী স্কোনবি (Sconbien) সর্বপ্রথম ওজোনের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন।তিনটি অক্সিজেনের পরমাণু জুড়ে তৈরি হয় একটি ওজোন অনু।তাই ওজোন কে অক্সিজেনের গ্যাসের রূপভেদও বলা হয়।ওজনের সংকেত হল O3।বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ খুব কম (0.00006%) হলেও এই গ্যাসের জীবজগতের ও মানব কল্যাণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বায়ুমন্ডলে স্ট্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চ অংশে প্রাকৃতিক কারণে অক্সিজেন অনু এবং অক্সিজেনের পরমাণুর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ফলে ওজোন গ্যাস উৎপন্ন হয়। সমগ্র স্ট্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এর ঘনত্ব সর্বাধিক থাকে 15-35 কিলোমিটার উচ্চতায় থাকে ওজোন গ্যাস এবং সেই কারণে স্বভাবতই এই স্তর ওজোনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।ওজোনোস্ফিয়ারে ওজোনের গাঢ়ত্ব খুবই কম মাত্র 10 ppm।একে ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপ ও তাপমাত্রায় নিয়ে এলে 3 মিলিমিটার পুরু বাতাসের মতো হবে এবং ওজন হবে প্রায় 30 কোটি টনের মতো।ওজোনের সর্বাধিক গাঢ়ত্ব ক্রান্তীয় অঞ্চলে 25 কিমি ঊর্ধ্বে,মধ্য অহ্মাংশে 21 কিমি ঊর্ধ্বে,মেরু অঞ্চলে 18 কিমি উর্ধ্বে লহ্ম করা যায়।
সাধারনত বায়ুমণ্ডলে ওজোনের ঘনত্বকে পিপিএম এর বদলে ডবসন (DB) এককে প্রকাশ করা হয়।এক DB একক বলতে এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে 0.001 মিলিমিটার পুরু ওজোনের ঘনত্বকে বোঝায়।ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে ওজোনের ঘনত্ব ক্রমশ বাড়ে।ক্রান্তীয়(0°-30°) অঞ্চলে এর ঘনত্ব মাত্র 250DU। নাতিশীতোষ্ণ (30°-60°) অঞ্চলে এর ঘনত্ব মাত্র 350DU এবং মেরু (60°-90°) অঞ্চলে এর ঘনত্ব মাত্র 450DU।

3. বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি -

সূর্য থেকে অনবরত যে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাচ্ছে তার সঙ্গে অতিবেগুনি রশ্মি আসছে।এই অতিবেগুনি রশ্মিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

  • UV-A তরঙ্গদৈর্ঘ্য - 315-400nm
  • UV-B তরঙ্গদৈর্ঘ্য - 280-315nm
  • UV-C তরঙ্গদৈর্ঘ্য - 100-280nm
দেখা যায় যে,এই অতিবেগুনি রশ্মির মধ্যে সবচেয়ে কম যাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অর্থাৎ UB-C এবং খানিকটা UV-B এরা বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন কে ভেঙ্গে জায়মান অক্সিজেন তৈরি করে।আর এই জায়মান অক্সিজেন পরমাণু আর একটি অক্সিজেন অণুর সঙ্গে মিলে ওজোন তৈরি করে।এই শেষোক্ত বিক্রিয়াটি প্রচন্ড তাপ উৎপাদক হওয়ার স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়বীয় তাপমাত্রা ট্রপোস্ফিয়ারের তুলনায় অনেক বেশি হয়।
বিক্রিয়া(Reaction) -
O₂  UV-C+UV-B = [O]+[O]
2O₂ +2[O] = 2O3  + তাপ(Heat]
আবার যেসব আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বেশি (মূলত UB-A) তারা ওজোনকে ভেঙে আবার অক্সিজেন অনু সৃষ্টি হয়।
বিক্রিয়া(Reaction) -
O3 (UV-A) -   O₂ +(O)  
এভাবেই দিবালোকে আলোক -রাসায়নিক বিক্রিয়ার অক্সিজেন থেকে ওজোন উৎপন্ন হয় এবং তার বিয়োজন হয় ও পুনরুৎপাদন হয়। প্রতিদিন প্রায় 350,000 মেট্রিক টন ওজোন বায়ুমণ্ডলের সৃষ্টি এবং পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে।ফলে ওজোনের গাঢ়ত্ব এই গতিশীল সাম্যাবস্থায় প্রায় স্থির থাকে।তাই ওজোন স্তর একটি ছাতার মতো আমাদের পৃথিবীকে অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রহ্মা করে চলেছে।তাই একে বলা হয় পৃথিবীর ছাতা।

4. ওজোন গহ্বর -

সাম্প্রতিক কালে আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত মানুষ শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনীতি চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিতে গিয়ে শিল্পজনিত কারণে এমন কিছু গ্যাস নির্গত যাদের প্রভাবে ওজোন স্তর ক্রমশ হালকা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক কারণ এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারনে ফলে এমন কিছু গ্যাস নির্গত যাদের প্রভাবে ওজোন স্তর ক্রমশ হালকা হয়ে যাচ্ছে।এমনকি স্থানে স্থানে গহ্বর তৈরি হয়েছে।ওজোন গ্যাসের এই হ্মীণ বেধ সম্পন্ন অঞ্চলকে ওজোন গহ্বর বলে।1974 খ্রিস্টাব্দে মার্কিন বিজ্ঞানী নোলিনা এবং রোল্যান্ড ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের হ্মতি পারে বলে সর্বপ্রথম আশঙ্কা করেন।যা 1982 খ্রিস্টাব্দে আন্টার্কটিকা অঞ্চলে সমীহ্মা চালানোর সময়ে সর্বপ্রথম ওজোন গহ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।আর 1985 খ্রিস্টাব্দে বারংবার পর্যবেহ্মণ করে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে প্রতি বছর বসন্তকালেই আন্টার্টিকার উপরিভাগে এই ধরনের ওজোন গহ্বর তৈরি হয়।1987 খ্রিস্টাব্দে দহ্মিণ মেরুর আকাশে আরো বিশদ সমীক্ষা চালিয়ে ওজোন স্তরের ঘাটতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক নিঃসংশয় হন।এখানে উল্লেখ্য করা যায় যে,বাতাসে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ও নাইট্রোজেনের অক্সাইড (যারা ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে) চালান করার ব্যাপারে পৃথিবীর শিল্পোন্নত দেশগুলি সবচেয়ে এগিয়ে আছে। ভবিষ্যতে এইভাবে বায়ুমণ্ডল যাতে দূষিত না হয়,বিশেষত যার তেমন ইচ্ছে তেমন ক্লোরোফ্লুরোকার্বন যাতে বাতাসে ছাড়তে না পারে,সেজন্য 1987 খ্রিস্টাব্দে "মন্ট্রিল চুক্তি" সম্পাদিত হয়।

5. ওজোন গহ্বরের সৃষ্টি কারন -

ওজোন স্তরের গহ্বর মূলত প্রাকৃতিক কারণ এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারনে হয়ে থাকে।নিম্নে তা বর্ণনা করা হল।-
• প্রাকৃতিক কারণ -
১. আলোর রাসায়নিক প্রক্রিয়া -
সূর্যালোকের প্রভাবে নাইট্রোজেনের (N) নাইট্রোজেন অক্সাইডে পরিণত হওয়াকে আলোর রাসায়নিক প্রক্রিয়া বলে।এই প্রক্রিয়া 11 বছর অন্তর Sunspot Circle -এ দেখা যায়। 
২. অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব -
সমীকরণের সাহায্যে এর প্রভাব সহজে অনুধাবন করা যায়।
বিক্রিয়া(Reaction) -
O3    -   O₂ +(O)

O3 + O  -   O₂ + O₂
৩. গতিশক্তির কার্যকারিতা - 
উচ্চ বায়ুর প্রবাহের ফলে 60° থেকে 70° অক্ষাংশে ওজোন গ্যাসের সঞ্চয় এবং ওজোন গ্যাসের প্রভাব লহ্ম্যনীয়। 
৪. আগ্নেয় উচ্ছ্বাস -
আগ্নেয় উচ্ছ্বাসের সৃষ্টির ফলে সালফেট দ্বারা ওজোনের ভাঙ্গন ঘটতে থাকে।
• মনুষ্যসৃষ্ট কারণে -
মানুষের নানাবিধি কার্যকলাপে ফলে ওজোনমন্ডলের গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
১. ক্লোরিন তত্ত্ব -
মানুষ বিভিন্ন শিল্পের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ও হ্যালোন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নির্গত করে।এই সকল গ্যাসকে সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ওজোন বিনাশকারী উপাদান বলে মনে করা হয়।তারা আলোক রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ওজোনকে অক্সিজেনের পরমাণু ও অনুতে বিভক্ত করে।
বিক্রিয়া(Reaction) -
CFC(CFCl2/CFCl2) - Cl + CFCl2/CFCl
Cl + O3 - ClO + O2
ClO + ClO - 2Cl +O2
২. সালফেট তত্ত্ব -
মানুষের বিভিন্ন শিল্পসংক্রান্ত কার্যাবলীর মাধ্যমেও প্রচুর পরিমাণে সালফেট জাতীয় ক্ষুদ্র কণার উদ্ভব হয় এবং তারা বায়ুমণ্ডলের 15 থেকে 22 কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যে সঞ্চিত হয়ে থাকে।ওজোনের অনুগুলি আণবিক ও পারমাণবিক অক্সিজেনে রূপান্তরিত হবার প্রক্রিয়ায় সালফেট জাতীয় কণাগুলি অনুঘটকের ভূমিকা গ্ৰহন করে থাকে। 
বিক্রিয়া(Reaction) -
SO4O3 = SO2 + 2O2 + O
৩. নাইট্রোজেন অক্সাইড তত্ত্ব -
শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী জেট বিমানগুলি বায়ুমন্ডলের উচ্চস্তর দিয়ে যাবার সময় জ্বালানির দহনে নাইট্রাস অক্সাইড বিমুক্ত করে তা ওজোনমন্ডলকে বিনষ্ট করে এবং ওজোন গহ্বর সৃষ্টি করে।
বিক্রিয়া(Reaction) -
N2O - N2 + O
N2O + O - NO + NO
NO +O3 - NO2 + O2
৪. অন্যান্য তত্ত্ব - 
CFC ছাড়াও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ওজোন স্তর হ্রাস করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ধারণ করে।উর্ধ্বাকাশে মিথেন ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ইত্যাদি ভেঙে যায় এবং মিথেন ভেঙে মিথাইল মুক্ত মূলক ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভেঙে যায় জায়মান অক্সিজেন ও হাইড্রোক্সিল মুক্ত মূলক তৈরি করে। তাছাড়া জায়মান অক্সিজেন জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করেও হাইড্রোকিস মুক্ত মূলক গঠন করে।এই হাইড্রোক্সিল আয়ন ওজোন অনুকে ভেঙে তৈরি করে হাইড্রো পার-অক্সাইড ও অক্সিজেন।বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রায় 11 শতাংশ ওজোন হ্রাসের এটাই সম্ভাব্য কারণ।
বিক্রিয়া(Reaction) -
1. 
CH4 - CH3 +H
CH3 + O3 - CH3O + O2
2.
H2O2 - 2HO
H2O2 - (O) + H2O
H2O + (O) - 2HO
HO + O3 - O2 + H2O

6. বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের গুরুত্ব -

ভূপৃষ্ঠে ওজোন গ্যাস একটি পরিবেশ দূষক পদার্থ হিসাবে কাজ করলেও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোনস্তর পৃথিবীর জীবজগতের প্রানের রহ্মক।ওজোনের একটি পাতলা স্তর সূর্যকিরণ থেকে হ্মতিকর অতিবেগুনি রশ্মির বেশিরভাগ অংশকেই রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মাধ্যমে আটকে দেয়। অর্থাৎ ওজোনস্তর পৃথিবীর জীব পরিবেশে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা ছাতা হিসাবে কাজ করে।কোনো কারণে ওজোনস্তর পাতলা হয়ে গেলে বা ওজোনস্তরের গহ্বর তৈরি হলে পৃথিবীতে হ্মতিকারক UV-B রশ্মির আগমন ঘটবে,ফলে জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।মনে রাখা দরকার পৃথিবী সৃষ্টির বহু কোটি বছর পর পৃথিবীতে প্রাণ এসেছিল মূলত অক্সিজেনহীন, ওজোনস্তরহীন বায়ুমণ্ডলীয় পরিবেশের জন্য। অগভীর সাগরের তলদেশে প্রথম প্রাণ এসেছিল,কারণ জল অতিবেগুনি রশ্মি আটকে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে স্বভোজী সবুজ উদ্ভিদের আবির্ভাবে বাতাসে অক্সিজেন জমে ওজোন স্তর সৃষ্টি করেছিল।তারপরই জৈব বিবর্তনে পৃথিবীতে প্রাণের সমারোহ হয়েছিল।

7. ওজোন গহ্বরের প্রভাব -

ওজোনস্তরটি বায়ুমণ্ডলের এমন এক আবরণের সৃষ্টি করেছে যা হ্মুদ্ধমন্ডলের এবং ভূপৃষ্ঠে অতিবেগুনি রশ্মি আগমনে বাধাদান করে।সেই কারণে বর্তমানে বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তরের সংকোচন পৃথিবী এবং জীবমন্ডলকে প্রভাবিত করবে।

১. বায়ুমণ্ডলের উপর প্রভাব -

  • ওজোনমন্ডল সূর্য থেকে আগত বিকিরিত অতিবেগুনী তরঙ্গের আগমনে বাধাদান করবার জন্য,ওজোন স্তরের উর্ধ্বসীমায় বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক গড় তাপমাত্রা লহ্ম করা যায়। 
  • এখানকার গড় তাপমাত্রা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রায় প্রায় সমান হবে, ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলে উত্তাপ জনিত প্রভাব গুলি লহ্ম করা যায়।

২. জলবায়ুর উপর প্রভাব -

  • ওজোনস্তরে গহ্বরের ফলে ভূপৃষ্ঠে সূর্যের আলো রশ্মি বিকিরণের আগমন বৃদ্ধি পাবে ফলে গ্ৰীণ হাউস প্রভাব বাড়তে পারে।
  • গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের ফলে ভূপৃষ্ঠের ও নিম্ন বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে। 
  • বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রার বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি লহ্ম করা যাবে।যার ফলে জলবায়ুর স্থানীয় ও বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন হবে। 
  • তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ ও তুষার গলে গিয়ে সমুদ্রতলকে উত্থিত করবে। 
  • বায়ুমণ্ডলের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বায়ুমণ্ডলে অ্যাসিড বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। 
  • জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অধঃহ্মেপণের পরিমাণ হ্রাস বা বৃদ্ধি পাবে।

৩. মানুষের উপর প্রভাব -

  • ওজোনস্তরের গহ্বরের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে মানুষের শরীরে পতিত হলে,চর্মের ক্যানসার বৃদ্ধি পাবে। 
  • মানুষের শরীরে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের হ্মমতা হ্রাস পায়। 
  • উচ্চহারে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জন্য ধোঁয়াশায় পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের শ্বাসযন্ত্র হ্মতিগ্ৰস্ত হবে এবং জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ হ্মমতা হ্রাস পাবে।
  • সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের অতি অল্প বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে।
  • সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV-B) ফলে মানুষের ত্বকের উপর নানারকম হ্মতিকারক প্রভাব ফেলে।অল্প বয়সেই ত্বক কুঁচকে বয়স্ক মানুষের মতো হতে পারে। কখনো কখনো ত্বক পুড়ে তামাটে বর্ণ ধারণ করে।
  • সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির দীর্ঘকালীন প্রভাবে মানুষের অনাক্রম্যতা কমে যায়,ফলে মানুষ খুব সহজেই সংক্রামক রোগের আক্রান্ত হয়।

৪. জীবমন্ডলের উপর প্রভাব -

  • ওজোনস্তর বিনষ্ট হবার ফলে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের হার ও জল ব্যবহারের দহ্মতা এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পাবে,এই অবস্থায় কৃষির উৎপাদনের হার কমে যাবে।
  • UV-B রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের পাতা,ফল এবং বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • সমুদ্রে উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটনের উৎপাদন হার হ্রাস পাবে ফলে প্রাণী প্ল্যাঙ্কটন ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্য হ্রাস লহ্ম করা যাবে।
  • অধিক অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরণের প্রভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পদ হ্মতিগ্ৰস্ত হবে এবং খাদ্য সরবরাহ হ্রাস পাবে। 
  • সামুদ্রিক মাছেদের সরবরাহ কমে যাবে এবং ক্রমে তাদের সংখ্যা হ্রাস পাবে।

৫. বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব -

  • ওজোনমন্ডলের গহ্বরের ফলে বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হতে পারে। 
  • জলবায়ুর পরিবর্তনে জন্য সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের শাড়ির ভিত্তিক বৈশিষ্ট্যের যথেষ্ট পরিবর্তন হতে পারে। 
  • তাপমাত্রার বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির প্রভাবে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের হাট হ্রাস পাবে এবং বাস্তব ব্যবস্থার উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাবে। 
  • তাপমাত্রার বৃদ্ধির জন্য জৈবশক্তির চক্রের পরিবর্তন হতে পারে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী জলচক্রের পরিবর্তন এবং এর জন্য জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র সমূহের পরিবর্তন হতে পারে।
  • সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র হ্মতিগ্ৰস্ত হয়।

8. ওজোন গহ্বরের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা -

  1. ওজোন গহ্বরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য প্রথম বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ নেওয়ার উদ্দেশ্যে 1970-এ স্টকহোম বৈঠক CFC উৎপাদন ও ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা শুরু হয়।প্রথম স্ক্যান্ডেনিভিয়ান দেশসমূহ সুগন্ধী অ্যারোসল উৎপাদনে CFC যৌগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং উত্তর আমেরিকার দেশসমূহ যথারীতি বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে CFC এর উৎপাদন কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে চলেছে। এরপর 1987 (মন্ট্রিয়াল), 1990(লৃন), 1992(কোপেনহেগেন) তে আবার উদ্যোগ শুরু হয়, এবং ঠিক হয় 1995 খ্রিস্টাব্দে মধ্যে সমস্ত উন্নত দেশে CFC এবং হ্যালোন উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে হবে।সেই সঙ্গে কার্বন টেট্রাক্লোরাইড এবং মিথাইল ক্লোরোফর্ম এর উৎপাদন ধারাবাহিক ভাবে কমিয়ে আনতে সকলেই সম্মত হয়।সম্মেলনে আরো বলা হয় এই সমস্ত ব্যবস্থা গৃহীত হলে 1995-2005 খ্রিস্টাব্দ অবধি বায়ুমণ্ডলে ক্লোরিনের ঘনত্বের কোনো পরিবর্তন হবে না,2005 খ্রিস্টাব্দের পর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ক্লোরিনের ঘনত্ব হ্রাস পাবে। এবং এই ক্লোরিনের ঘনত্ব 2ppb -এ নেমে না আসা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় 2075 সাল পর্যন্ত নিয়মিত ওজোন গহ্বর দেখা যাবে অ্যান্টার্কটিকায়। 
  2. সারা পৃথিবী জুড়ে অপর যে পদ্ধতির কথা ভাবা হচ্ছে তা হল CFC প্রতিস্থাপন যোগ্য বিকল্প পদার্থের সন্ধান।CFC-11 ও CFC-12 এর বিকল্প হিসেবে যে রাসায়নিক যৌগ পরীক্ষা মূলক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলি হল HCFC-123,HCFC-123a,HCFC-141b,HCFC-22,HFC-134a ইত্যাদি।এগুলি ক্লোরিনবিহীন হওয়ার ওজোন বিনাশের সম্ভাবনা নেই।তাছাড়া বায়ুমণ্ডলে এরা হ্মণস্থায়ী। সর্বোপরি আরো কতকগুলি প্রযুক্তি বা বিকল্পের সন্ধান পাওয়া গেছে যেগুলি প্রচলিত হলে বায়ুমন্ডলে CFC গ্যাস অবাধে মেশাবার পরিমাণ অনেক কমবে।
  3. কীটনাশক স্প্রে, ক্লীফ, এজেন্ট প্রভৃতির হ্মেত্রে এতদিন CFC -র বহুল প্রচলন ছিল। বর্তমানে অন্যান্য হাইড্রোকার্বন দিয়ে এই কাজ করার চেষ্টা উন্নত দেশগুলোতে শুরু হয়েছে।
  4. ফুড প্যাকেজ তৈরিতে মোমের বদলে পিচবোর্ড বা খড়ের মন্ড থেকে তৈরি বা ব্যবহার করা যেতে পারে।তাপনিরোধক পদার্থ হিসাবে CFC -এ বদলে ফাইবার গ্লাসের আরো প্রচলন বাড়ানো যেতে পারে।তবে এখনো CFC -র তুলনায় এই সমস্ত প্রযুক্তি অনেক বেশি দামি এবং সেই কারণে দরিদ্র দেশসমূহের পহ্মে এই সমস্ত প্রস্তাব মানা খানিকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার।
9. উপসংহার -

পরিশেষে বলা যায় যে, ওজোন স্তর পৃথিবীর ও তার জীবকুলকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। বাস্তবিকই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।কারণ আজই যদি পৃথিবীর সর্বত্র CFC কিংবা হ্যালোন উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া যায় তাহলেও ইতিমধ্যে যে বিপুল পরিমাণ ওজোন স্তরের হ্ময় হয়েছে তা পূরণ করতে অন্তত আরো 100 বছর লেগে যাবে।তবে সাম্প্রতিককালে কোরোনা ভাইরাসের চলাকালীন সময়ে ডিবলিউ.কম সূত্রে রাষ্ট্রসংঘ জানা যে ওজোন স্তরের হ্মতি অনেকটাই কমে গিয়েছে।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post