বায়ুদূষণ||Air Pollution

বায়ুদূষণ||Air Pollution

বায়ুদূষণ||Air Pollution

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Air Pollution (Concept, Sources, Causes,Effects, Control,Acts)
Air Pollution

Assignment Questions -

1. বায়ুদূষণ কাকে বলে।||What is Air Pollution.

2. বায়ুদূষণের কারণ গুলি সম্পর্কে বর্ণনা দাও।||Describe The Causes Of Air Pollution.

3. বায়ুদূষণের প্রভাব গুলি কি কি।||What Are The Effects Of Air Pollution?

4. বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ রোধের উপায় গুলি কী কী।ভারতে বায়ুদূষণের নিয়ন্ত্রণে আইনি পদক্ষেপ গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||What Are The Measures To Control Air Pollution.Briefly Describe The Legal Measures Taken To Control Air Pollution In Indian.

বায়ুদূষণ

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

বায়ু হল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ।যা পৃথিবী পৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বড় অংশ হল জীবমন্ডল যা গতিশীল বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। বায়ু মানুষ তথা পার্থিব সমস্ত জীবের জীবন ধারনের সম্ভব করে তুলেছে। বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাস হল নাইট্রোজেন (78.1%), অক্সিজেন (20.9%),কার্বন ডাই অক্সাইড (0.03%)। বায়ুমণ্ডলের প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কঠিন,তরল ও গ্যাসীয় কণা জীবজগতের প্রতিটি সদস্য গ্ৰহণ করে থাকে।পদার্থের বিভিন্ন কণাগুলি কখনো ছড়িয়ে পড়ে,কখনো বা একে অপরের সাথে কিংবা অন্য পদার্থের সঙ্গে ভৌত কিংবা রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্বারা সংযুক্ত হয়। বায়ুমণ্ডলে ঘুরে বেড়ানো অধিকাংশ বিক্রিয়ক বা বিক্রিয়াজাত এই কণাগুলি পরিশেষে সমুদ্রে জলে, মানুষের দেহে বা অন্য কোথাও সঞ্চিত হয়। পরিবেশে এই কণাগুলি রোগ জীবাণুর সৃষ্টি করে, বিষক্রিয়া করার, শারীরিক হ্মতিসাধন করে বা পরিবেশ কলুষিত করে। এদেরকে মানুষ দূষকরূপে চিহ্নিত করেছে।

• সংজ্ঞা -

World Health Organisation (1961) - Air pollutions is "limited to situations in which the outer ambient atmosphere contains materials in concentrations which are harmful to man and his environment."

Professor H.Parkins (1974) Air pollutions may be defined as "The presence,in the outdoor atmosphere,of one or more contaminants such as fumes,dust gases mist,grit, odour,smoke,smog or vapours in considerable quantities and of duration which is injurious to human, animals or plant life or which unreasonably interferes with the comfortable enjoyment of life and property."

অর্থাৎ,বাতাসে অত্যাধিক পরিমাণে বহিরাগত কণা উপস্থিত হয়ে শরীরের ও সম্পদের হ্মতি সাধন করলে, এই ঘটনাকে বায়ুমণ্ডল বলে।প্রধানত শিল্প কলকারখানা থেকে বায়ু দূষণ হয়ে থাকে অর্থাৎ শিল্পায়নের পরিণতি হল বায়ুদূষণ।আর মোটরচালিত যান বা অটোমোবাইলের জন্য বায়ুদূষণ কে "সম্পদ-এর রোগ"হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

2. বায়ুদূষকের প্রকারভেদ -

বায়ুদূষকের মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।যথা -

১. প্রাথমিক দূষক -

প্রাকৃতিক ভাবে বা মানুষের তৈরি উৎস থেকে এসে বায়ুমণ্ডলের মেশে।যেমন - কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রিক অ্যাসিড,নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড,অ্যামোনিয়া, সালফার ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতি জৈব যৌগ।

২. গৌণ দূষক -

প্রাথমিক দূষক গুলির মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে বা বহিরাগত কোন কণার সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে উৎপন্ন হলে তাদের গৌণ দূষক বলে।যেমন সালফার ট্রাই অক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড,অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, অ্যামোনিয়াম বাই সালফেট,ফরম্যালডিহাইড প্রভৃতি।

আবার, বায়ুদূষণ কে আরো তিন প্রকারে ভাগ করা যায়।

১. প্রাকৃতিক সংক্রামক

যেমন - কুয়াশা, পরাগরেণু, ব্যাকটেরিয়া, আগ্নেয়গিরির,অগ্ন্যুপাতের সময় নির্গত গ্যাস ইত্যাদি।

২. বায়ু কণা বা ভাসমান সূক্ষ্ম কণা

যেমন -ধূলা, ধোঁয়া, শিশির, কুয়াশা,বাষ্প ইত্যাদি।

৩. গ্যাস এবং জলীয় বাষ্প

যেমন - সালফার এবং নাইট্রোজেনের যৌগ, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের যৌগ ,জৈব যৌগ যথা অ্যালডিহাইড,হাইড্রোকার্বন, তেজস্ক্রিয় যৌগ ইত্যাদি।

এছাড়াও বায়ুদূষণের প্রকৃতি অনুযায়ী ৬টি ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন -

  1. মোটর চালিত যানবাহন থেকে দূষণ।
  2. শিল্প হ্মেত্র থেকে দূষণ।
  3. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দূষণ।
  4. শহর থেকে দূষণ।
  5. গ্ৰাম থেকে দূষণ।
  6. পারমাণবিক দূষণ।
3. বায়ুদূষক গ্যাস সমুহ -
• প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট গ্যাস -
1. দাবানল - 
কার্বন মনোক্সাইড,কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড সমূহ।
2. মাটি - 
ধূলিকণা ও ভাইরাস।
3. সমুদ্র -
বিভিন্ন লবণ, মিথাইল ক্লোরাইড, মিথাইল ব্রোমাইড সমুহ।
4. আগ্নেয়গিরির লাভা নির্গমন - 
সালফার ডাই অক্সাইড।
5. সবুজ সতেজ উদ্ভিদ - 
পরাগরেণু,ছত্রাক,তুলা, ফেদার,হাইড্রো কার্বন সমুহ।
6. পচনশীল উদ্ভিদ - 
মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড।
7. ঝড় বাতাস - 
বালি, ধূলিকণা, পরাগরেণু।
• মনুষ্যসৃষ্ট গ্যাস -
1. কার্বন ডাই অক্সাইড - 
জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের মৃত দেহাবশেষের পচন, উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্বাসক্রিয়া প্রভৃতি।2. কার্বন মনোক্সাইড - 
কাঠের উনুন,স্টোভ,গ্যাস, গ্যাসোলিন প্রজ্জ্বলন, মোটরগাড়ির ধোঁয়া, পুরানো ইঞ্জিনের ধোঁয়া, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রভৃতি।
3. হাইড্রোজেন সালফাইড - 
উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের মৃত দেহাবশেষের পচন, জ্বালানীর দহন,তেল শোধনাগার প্রভৃতি।
4. সালফার ডাই অক্সাইড - 
কয়লা ও তেল প্রজ্জ্বলন, কলকারখানার ধোঁয়া, আতসবাজির ধোঁয়া তেল শোধনাগার প্রভৃতি।
5. নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমুহ(নাইট্রিক অক্সাইড,নাইট্রাস অক্সাইড,নাইট্রোজেনের অক্সাইড,অ্যামোনিয়া) - 
কাঠের উনুন, কেরোসিন, স্টোভ,গ্যাস,কাগজ দহন, যানবাহনের ধোঁয়া, আর্বজনার দহন, রাসায়নিক সার কারখানা প্রভৃতি।
6. ক্লোরোফ্লুরো কার্বন -
রেফ্রিজারেশন যন্ত্র, এয়ার কন্ডিশনার,প্লাস্টিক শিল্প প্রভৃতি।
7. ওজোন -
তাপ রাসায়নিক ক্রিয়া।
8. বেঞ্জিন -
পেট্রোলিয়াম পাম্প থেকে।
9. ক্লোরিন -
কীটনাশক, ফসফেট সার কলকারখানার থেকে।
10. বেনজো পাইরিন - 
কাঠের উনুন, ধূমপান, তামাকের ধোঁয়া।
11. ক্লোরোফর্ম - 
ক্লোরিন পরিশোধিত জল ফোটালে।
12. মিথিলিন ক্লোরাইড - 
আসবাবপত্র রঙ করলে।
13. ট্রাইক্লোরোইথেন - 
গৃহ অভ্যন্তরের কীট পতঙ্গ বিনষ্ট করতে ব্যবহৃত অ্যারোসল স্প্রে ।
14. অ্যাসবেসটস - 
মেঝেতে টালি,ভিনাইল সিলিঙ।
15. প্যারা ডাইক্লোরো বেনজিন - 
রুম ফেনার, বাথরুম ফ্রেসনার, এয়ার ফ্রেশনার ইত্যাদি ব্যবহার।
16. হাইড্রোকার্বন সমুহ (মিথেন,আছেন,অ্যাসিটিলিন) -
যানবাহনের ধোঁয়া, জীবাশ্ম জ্বালানী,তেল শোধনাগার,কার্বাইড দিয়ে ফল পাকান।
17. হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড - 
অ্যাসিড কারখানা,প্লাস্টিক কারখানা, জীবাশ্ম জ্বালানির দহন।
18. অ্যালডিহাইড -
চর্বি, গ্লিসারল,তেল প্রভৃতি উত্তপ্ত থেকে।
19. হাইড্রোডেন সায়ানাইড -
মেটাল প্লেটিং,ব্লাস্ট ফার্নেস, রাসায়নিক শিল্প।
20. পার অক্সিঅ্যাসিটাইল নাইট্রেট -
তাপ রাসায়নিক ক্রিয়া থেকে।
21. ফসজেনেন -
রাসায়নিক রঙ প্রস্তুত কারখানা থেকে।
22. স্পঞ্জ আয়রণ -
স্পঞ্জ আয়রণ তৈরীতেও প্রচুর পরিমাণে ধূলো, শিশির, কুয়াশা,বাষ্পস্নান ও ধোঁয়াশা প্রভৃতি বায়ুমণ্ডলে যুক্ত হয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়।
4. বায়ুদূষণের কারণ -

বায়ুদূষণ মূলত প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারনে হয়ে থাকে।
• প্রাকৃতিক কারণ -
  1. আগ্নেয়গিরি।
  2. দাবানল।
  3. ধূলিঝড়।
  4. জলাভূমি।
  5. মৃত্তিকা।
  6. মরুভূমি।
  7. সমুদ্র
  8. উদ্ভিদের বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া।
  9. ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া,বান্দাই,অ্যালজি, পরাগরেণু।
  10. বিভিন্ন জৈব ও অজৈব পদার্থের পচন।
• মনুষ্যসৃষ্ট কারণ -
  1. বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থ।
  2. কঠিন পদার্থ ও হ্মুদ্র কণা।
  3. তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
  4. বিভিন্ন কলকারখানা ও শিল্প কেন্দ্র থেকে।
  5. কৃষিকাজের ফলে।
  6. খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থেকে।
  7. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
  8. খনি অঞ্চল থেকে।
  9. ধাতু নিষ্কাশনে দ্বারা।
  10. যানবাহন থেকে।
  11. অরন্যধ্বংস।
  12. দাড়ি কামানো ফোম, স্প্রে নিঃসৃত ধোঁয়াশা।
  13. বিমানে ব্যবহৃত এরোসল।
  14. যুদ্ধ বিগ্রহ।
  15. পারমাণবিক চুল্লিতে বিস্ফোরণ।
  16. জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে।
  17. পৌর জঞ্জাল সাফাই।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - অরন্যধ্বংস

5. বায়ুদূষণের প্রভাব -

• আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর প্রভাব -
বায়ুমণ্ডলের দূষণের ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন লহ্ম্য করা যায়। -
১. গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বৃদ্ধি -
প্রাকৃতিক কারণে বা মনুষ্য সৃষ্ট কারণে বিভিন্ন শিল্প, কলকারখানা, জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে এবং মাটিতে নাইট্রোজেন সার বেশি ব্যবহার করার কারণে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড,নাইট্রাস অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।হ্মুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সূর্য রশ্মিকে এই গ্যাস মহাকাশে ফিরে যেতে বাধা দেওয়ার ফলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঠিক থাকে অর্থাৎ ধ্রূবক থাকে,এই সমস্ত গ্যাস গুলিকে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বলা হয়।
২. গ্ৰীণ হাউস প্রভাব -
সূর্য কিরণই পৃথিবীর যাবতীয় উষ্ণতার প্রধান উৎস। সূর্য থেকে নির্গত 200 কোটি ভাগের মাত্র 1 ভাগ সৌরশক্তি হ্মুদ্র তরঙ্গ হিসেবে পৃথিবীতে আসে,একে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বলে।
শীতপ্রধান নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উদ্ভিদ পরিচর্যার জন্য তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য,যে কাঁচের ঘর তৈরি করা হয় তা গ্ৰীণ হাউস নামে পরিচিত।গ্ৰীণ হাউসের মধ্যে সূর্যতাপ প্রবেশ করলেও কাঁচের ঘরের ভিতরের উষ্ণতা বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে জমে থাকা প্রধানত কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড,নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প এবং ধূলিকণা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে গ্ৰীণ হাউসের কাজ করে।সূর্যতাপ বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে বাধাহীন ভাবে ভূ-পৃষ্ঠ এসে পড়লেও, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ বৃহৎ তরঙ্গরূপে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাধাহীন ভাবে মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না,কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে প্রধানত কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রোজেন অক্সাইড,নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প এবং ধূলিকণা প্রভৃতি গ্যাস এই তাপকে শোষণ করে নিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। পরিবেশ বিজ্ঞানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী এই সমস্ত গ্যাসগুলিকে এক সঙ্গে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস এবং এদের প্রভাবকে গ্ৰীণ হাউস প্রভাব বলা হয়।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - গ্ৰীণ হাউস প্রভাব
৩. বিশ্ব উষ্ণায়ন -
বায়ুমণ্ডলের গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে।যেমন - 1840-1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে গড়ে তাপ বেড়েছে 0.5°C, আবার 1900-2000 খ্রিস্টাব্দে মধ্যে 1°C। সুতরাং প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন ক্রমশ গরম হয়ে উঠেছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার এই ক্রমবৃদ্ধি অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন।বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নের আসলে হল গ্ৰীণ হাউস প্রভাবের নামান্তর।এর ফলে সামুদ্রিক জলস্ফীতি, কৃষি উৎপাদন হ্রাস ,প্রাণীর বিলুপ্তি লহ্ম্য করা যায়।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - বিশ্ব উষ্ণায়ন

৪. জলবায়ুর পরিবর্তন -
বায়ুদূষণের ফলে বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গত দুশো বছরের মধ্যে 1999 ছিল সর্বাধিক তাপীয় বছর। আমেরিকা ও ইউরোপে দেখা গেছে গত 50 বছরের মধ্যে শীতলতম শীতকাল।গড় 25 বছরের মধ্যে তীব্রতম তুষার ঝড় হয়েছে জাপান ও কোরিয়ার।2004 খ্রিস্টাব্দে গ্ৰীষ্মে একযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 562টি টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছে, আলাস্কা,অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়ার প্রায় প্রতি বছর ঘটে চলেছে ভয়ংকর দাবানল। লন্ডনে দেখা গেছে গত 300 বছরের মধ্যে শুষ্কতম গ্ৰীষ্ম।গত 200 বছরের তাপমাত্রা বেড়েছে 0.6°C এবং শেষ হিমযুগের পর প্রায় 2.5°-5°C। বিজ্ঞানীদের অনুমান জলবায়ু এই দ্রুত পরিবর্তন আগামী কয়েক দশকে ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

৫. অ্যাসিড বৃষ্টি -
বৃষ্টির জলের সাথে মিশ্রিত হয়ে সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড,হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ার ঘটনা অ্যাসিড বৃষ্টি নামে পরিচিত।
প্রধানত যানবাহন, কলকারখানা,ধাতু নিষ্কাশন চুল্লি থেকে নিঃসৃত গ্যাস ও দহনের ফলে সৃষ্ট ধোঁয়ার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলের সালফার ও নাইট্রোজেনের অক্সাইড গ্যাস জমা হয়।জলাচক্রের অনুকূল অবস্থায় এই পদার্থগুলি বারিকণা সাথে মিশে বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে নেমে আসে।এ ধরনের নেমে আসে। এই ধরনের বৃষ্টির জলের গড় pH 5.65। অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর হ্মতি হয়। গাছপালার উচ্চতা হ্রাস পায়।পাতা নষ্ট হয়।কৃষিজ সামগ্ৰীর উৎপাদন হ্রাস পায়। সুইডেন, জাপান,কানাডা,নেদারল্যান্ড, ইউরোপের মতো শিল্পোন্নত দেশে এই অ্যাসিড বৃষ্টির প্রাদুর্ভাব লহ্ম্য করা যায়।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - অ্যাসিড বৃষ্টি

৬. ওজোন গহ্বর -
ভূ-পৃষ্ঠের উপর 10 থেকে 80 কিলোমিটার উচ্চতায় মধ্যে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামে বায়ুমন্ডলের একটি স্তর আছে।এই স্তরের মধ্যে ওজোন গ্যাসের একটি পাতলা আবরণ আছে।এই ওজোন একটি বিষাক্ত গ্যাস।তবে বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের অবস্থিতি জীবজগৎ এবং মানবজীবনের কাছে কল্যাণকর।কারণ এই গ্যাসের আবরণ সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মির অনেকটা শোষণ করে।এই অতিবেগুনি রশ্মি জীবজগতের পহ্মে অত্যন্ত হ্মতিকর।
1974 খ্রিস্টাব্দে মার্কিন বিজ্ঞানী নোলিনা এবং রোল্যান্ড ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের হ্মতি হতে পারে বলে সর্বপ্রথম আশঙ্কা করেন।1982 খ্রিস্টাব্দে আন্টার্কটিকা অঞ্চলে সমীক্ষা চালানোর সময়ে ওজোন গহ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।1987 খ্রিস্টাব্দে দহ্মিণ মেরুর আকাশে আরও বিশদ সমীক্ষা চালিয়ে ওজোন স্তরের ঘাটতি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকরা নিঃসংশয় হন।
অন্যদিকে, রং শিল্প, রেফ্রিজারেশন,প্ল্যাস্টিক শিল্প প্রভৃতি থেকে নিঃসৃত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বায়ুমণ্ডলে অতিবেগুনি রশ্মির সাথে বিক্রিয়া করে গ্যাসীয় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, এবং মেরু অঞ্চলের বাতাসে ভাসমান বরফকুচির সাথে বিক্রিয়ার এই হাইড্রোক্লোরিক গ্যাসের অনু থেকে ক্লোরিন অনু তৈরি হয়।ক্লোরিন অনু পুনরায় অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ক্লোরিন পরমাণুতে ভেঙে যায় এবং ওজোন গ্যাসকে ধ্বংস করে। এইভাবে ওজোনস্তরে প্রতিনিয়ত অবহ্ময়ের কাজ চলছে।তার ফলে হ্মতিকর অতিবেগুনি রশ্মি আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে পৃথিবীতে পৌঁছে যাচ্ছে।এই ওজোন স্তরের অবহ্ময়কে ওজোন গহ্বর বলে।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - ওজোন গহ্বর

৭. তাপীয় দ্বীপ -
নগর ও শহরগুলিতে কলকারখানা,যানবাহন ও বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে এই হ্যালন গ্যাসের উৎপাদন গ্ৰামাঞ্চলের তুলনায় বহু গুণ বেশি।ফলে শহর থেকে গ্ৰাম একটি তাপীয় ঢালের সৃষ্টি হচ্ছে। শহরাঞ্চলের এই অতিরিক্ত তাপ বলয়কে তাপীয় দ্বীপ (Heat Island) বলে।
• মানুষের উপর প্রভাব -
বায়ুদূষণের ফলে মানুষের উপর যে সমস্ত প্রভাব গুলি লহ্ম্য করা যাচ্ছে, সেগুলি হল -
  1. কার্বন মনোক্সাইড এর মানব রক্তে হিমোগ্লোবিনে সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্বো অ্যামিনো হিমোগ্লোবিন যৌগ তৈরি করে যার পরিনতি প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। 
  2. নাইট্রোজেনের অক্সাইড গুলি দেহে প্রবেশ করলে রক্তে অনুপ্রবেশ করে মানব দেহের ফুসফুসের কলা কোষ বিনষ্ট করে দেয়। 
  3. বায়ুমণ্ডলের ওজোন গ্যাস বৃদ্ধি পেলে নাইট্রোজেনের অক্সাইড সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন গৌণ দূষক সৃষ্টি করে,যা একসঙ্গে ফটোকেমিক্যাল স্নগ সৃষ্টি করে মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার হ্মতিসাধন করে। 
  4. সালফার ডাই অক্সাইড মানবদেহে শ্বাসকার্যের ব্যাঘাত ঘটায় বিশেষত ফুসফুস এরোসল কণা অন্যান্য শ্বাস অঙ্গের সিলিয়ারী আবরণ কলার হ্মতিসাধন করে।
  5. কার্বন ডাই অক্সাইড মানবদেহে শ্বাসকার্যের কষ্ট দেয়।
  6. রক্তে সীসার আধিক্যজনিত উপস্থিতি মস্তিকে স্নায়ুবিক দুর্বলতার সৃষ্টি করে।
  7. সীসা ঘটিত বিষক্রিয়ায় মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। 
  8. সীসার প্রভাবে মানুষদেহের বৃক্ষকে,যকৃতে এমনকি জনন তন্ত্রের হ্মতি হয়।
  9. বায়ুদূষণের ফলে মানুষের ক্যানসার সৃষ্টি হয়।
  10. বায়ুদূষক হিসাবে পরিচিত বিভিন্ন গ্যাস মানুষের মুখমন্ডল,ত্বক, ঠোঁট,চোখ এর প্রত্যহ্ম সংস্পর্শে আসে এবং এর ফলে দেহের ও সমস্ত অংশে মন্দ প্রভাব দেখা যায়।
  11. মানুষের শ্বাসনালী ফুলে যায়,হৃদরোগ,ব্রঙ্কাইটিস, কাশি,সাইনিস, হাঁপানি প্রভৃতি রোগ বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্টি হয়।
  12. বায়ুদূষণের হ্মতিকারক প্রভাবের ফলে জীবজন্তুর ওজন কমে যাওয়া,পেশীর দুর্বলতা,পৌষ্টিক তন্ত্রের পহ্মাঘাত,দৃষ্টিশক্তি হ্রাস,দুধ উৎপাদনের হ্রাস প্রভৃতি দেখা যায়।
  13. শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের বায়ুদূষণের কারণে মাথা ব্যথা,বমি বমি ভাব,বুকে ব্যথা,চোখ ও গলায় অস্থিরতা,রক্তে অক্সিজেন বহন হ্মমতা হ্রাস এবং চোখ জ্বালা করে।
• উদ্ভিদের উপর প্রভাব -
  1. বায়ুদূষণের ফলে উদ্ভিদের পাতা খসে পড়া, পাতার দৈর্ঘ্য হ্রাস পায়।
  2. বায়ুদূষণের ফলে উদ্ভিদের পাতায় বাদামী রঙের দাগ এবং পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়।একে ক্লোরোসিস বলে।
  3. উদ্ভিদের কান্ডে দাগ দেখা যায়।
  4. উদ্ভিদের উৎপাদন শীলতা হ্রাস পায় এবং বিভিন্ন পরিবর্তন লহ্ম্য করা যায়।
  5. উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটায়।
  6. অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে অনেক উদ্ভিদের হ্মতিসাধন হয়।
• হ্মুদ্র অনুবীহ্মনিক জীবের উপর প্রভাব -
  1. দ্রুত হারে বায়ুদূষকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে,যার ফলে অতি হ্মুদ্র জীব দ্রুত পরিবেশ পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন করতে না পারার মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে। 
  2. প্রাকৃতিক বনভূমি অঞ্চলে মধ্যবর্তী ও প্রান্তীয় বনভূমি অঞ্চলে কলকারখানা, রাস্তাঘাট ও যানবাহন দ্রুত চলাচলের ফলে বাতাসে দূষকের নির্গমন অতিরিক্ত হওয়ার হ্মুদ্র হ্মুদ্র তৃণভোজী প্রাণীর মৃত্যুর হয়েছে। 
  3. আবার শিল্প নির্ভর দেশগুলিতে অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির সম্পূর্ণ রূপে বিলীন হয়ে গেছে। 
  4. সিমেন্ট কারখানা, কয়লাখনি ও অ্যাসবেস্টস কলকারখানা গুলি থেকে সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইড যেভাবে বায়ুমণ্ডলের মিশ্রিত হচ্ছে তাতে পাশ্ববর্তী অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য ব্যাপক হ্মতিসাধন ঘটছে।
• বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব -
  1. বায়ুদূষণের ফলে গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  2. গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি লহ্ম্য করা যায়। এই বৃষ্টির ফলে জলে pH এর মাত্রা নীচে নেমে যায়।তার ফলে পাশ্ববর্তী অঞ্চলের বায়োম বা বাস্তুতন্ত্রের হ্মতি করে।
  3. অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বহু জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং উদ্ভিদের হ্মতিগ্ৰস্ত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
  4. কলকারখানা ও যানবাহন থেকে অনিয়ন্ত্রিত দূষিত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মেশার ফলে স্থলভূমি ও জলাভূমির বাস্তুতন্ত্র ও বাস্তুতন্ত্রের উপাদান গুলির প্রাকৃতিক ধর্মে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।যা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
  5. বায়ুদূষণের ফলে ওজোনস্তর হালকা হয়, অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের বায়ু দূষিত হয়।
  6. আবহাওয়া ও জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তন ঘটায় অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতি তার প্রাকৃতিক বাসভূমি থেকে সম্পূর্ণরূপে চিরতরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।ফলে রেড ডাটা বুক এ বিরল বিপন্ন ও বিপদাপন্ন প্রাণীর ও উদ্ভিদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।
• বস্তুর উপর প্রভাব -
  1. দ্রুত হারে বায়ুদূষণের ফলে নিন্ম বায়ুমণ্ডলে বায়বীয় কঠিন ও তরল পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোফ্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিড প্রভৃতি বায়ুমণ্ডলে বিক্রিয়া করে বৃষ্টির মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের এসে পতিত হয়।একে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে।এই সমস্ত অ্যাসিড যুক্ত জল প্রাচীন স্থাপত্য এবং চুনাপাথর ও মার্বেল দ্বারা নির্মিত মন্দির, মসজিদ গির্জা ও অন্যান্য স্থাপত্যে ব্যাপকভাবে হ্ময়প্রাপ্ত করার প্রাচীন ঐতিহ্য শালী স্থান গুলি আজ গভীর সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। উদাহরণ - ভারতের তাজমহল।
  2. বায়ুদূষণের প্রভাবে লোহা,ইস্পাত,তামার হ্ময় শুরু হয়।
  3. বায়ুদূষণের ফলে গ্ৰানাইট, মার্বেল,পাথর এবং ইট পর্যন্ত বিবর্ণ হয়ে যায়।
  4. বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত রঙ অমসৃণ এবং বিবর্ণ হয়ে পড়ে,ফুলে ওঠে।
6. বায়ুদূষণের নিয়ন্ত্রণ -
বায়ুদূষণ রোধের প্রধান পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়,যেমন-
1. জ্বালানি নির্বাচন ও ব্যবহার -
  1. সীসাযুক্ত জ্বালানী তেল যানবাহনে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
  2. অতিরিক্ত বিদেশ, পেট্রোল ব্যবহার বন্ধ করা অবিলম্বে দরকার।
  3. ডিজেল,পেট্রোলের বিকল্প জ্বালানি যেমন বায়ো-ডিজেল ব্যবহার চালু করা।
  4. কলকারখানার যে সমস্ত জ্বালানীতে ধোঁয়া কম হয়,সেইসব জ্বালানী ব্যবহার করতে হবে।যেমন কয়লা ,ডিজেল এর পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করতে হবে।
  5. গ্ৰামাঞ্চলে রান্না ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করার সুযোগ থাকা চাই।
  6. গ্ৰামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলে রান্নায় ধূমহীন উনুনের ব্যবহার বেশী করে চালু করতে হবে।
  7. রান্নার জন্য সৌর কুকার ব্যবহার করতে হবে।
  8. মশা তাড়াতে ধোঁয়া উৎপন্ন করতে টায়ার বা সালফার পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।
  9. কলকারখানার চিমনির উচ্চতা বাড়াতে হবে।
2. যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন -
  1. যে সব কলকারখানা থেকে পুরানো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য বেশী পরিমানে বায়ুদূষক গ্যাস নির্গত হয়,সেসব কারখানায় পুরানো পদ্ধতি বা যন্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক যন্ত্রপাতি বা নতুন কর্ম পদ্ধতি ব্যবহার করা প্রয়োজন।
  2. দূষণ সৃষ্টিকারী যানবাহন চালানো বন্ধ করতে হবে।
  3. যানবাহনের ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি নিয়মিত রহ্মণাবেহ্মন করতে হবে।
  4. যানবাহনের থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময় অন্তর করা প্রয়োজন।
  5. যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে মেশায় আগে পরিশোধন করতে হবে।
  6. উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পের আধুনিকীকরণ বাধ্যতামূলক করা দরকার।
  7. স্প্রে মেশিন, বিমান প্রভৃতি থেকে নিষ্কাশিত এরোসল জনিত দূষণ প্রতিরোধে করার জন্য Inertial separators, filters, Precipitators জাতীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়।
  8. গ্যাসীয় দূষিত পদার্থ গুলিকে নিয়ন্ত্রিত করার হ্মেত্রে Combustion, Absorption, Adsorption যন্ত্রপাতির প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার।
  9. যানবাহন থেকে নির্গত হাইড্রোকার্বন,কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য Tune-up, Catalytic Reactor জাতীয় যন্ত্রপাতি ও ইঞ্জিনের উন্নতি করা প্রয়োজন।
3. শিল্পের অবস্থানের জন্য স্থান সংরহ্মণ -
  1. দূষণ মাত্রার হার হ্রাস করার জন্য কলকারখানা বা শিল্পাঞ্চল এলাকার নিকটবর্তী অঞ্চলে গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন করা একান্তভাবে জরুরী।
  2. কলকারখানা অঞ্চল বা শিল্পাঞ্চল থেকে জনবসতি দূরে রাখতে হবে।
  3. শিল্পায়নের পূর্বে উপযুক্ত স্থান বেছে নিতে হবে এবং শিল্প বা কলকারখানা গড়ে ওঠার আগে পরিবেশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হতে হবে।
4. রাসায়নিক এবং বর্জ্য পদার্থ -
  1. কৃষিজমিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।
  2. কৃষিহ্মেত্রে কীট পতঙ্গ সহ জীবাণু দমনের জন্য জৈব প্রযুক্তির সাহায্যে নিতে হবে।
  3. শিল্পের ফলে উৎপন্ন বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থের উপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ হওয়া উচিৎ।
  4. বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন ট্রাই ইথিলিন গ্লুকোজ বাষ্প ঘরে স্প্রে করে ঘরের বায়ু দূষণ মুক্ত করা যেতে পারে।
  5. দূষণহীন বায়ু পাওয়ার জন্য ঘরের বদ্ধ বায়ু নির্গমন পাখা লাগিয়ে বের করে দিয়ে পরিষ্কার বায়ু প্রবেশ করাতে হবে।এতে জীবাণুমুক্ত বায়ু পাওয়া যেতে পারে।
5. অন্যান্য -
  1. বায়ুদূষণের কারণ এবং ফলাফল সম্পর্কে সর্বস্তরের মানুষ এবং সরকারের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
  2. বৃহ্মরোপণ করে বায়ুদূষণ কিছুটা কমানো যায়।
  3. বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চিরাচরিত শক্তির পরিবর্তে অচিরাচরিত শক্তির যেমন - সৌর শক্তি,বায়ু শক্তি,জোয়ার-ভাটা শক্তির ব্যবহার প্রচলিত করতে হবে।
  4. বায়ুদূষণ প্রণীত দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন দূষণ রোধের হ্মেত্রে আরো কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে।
7. বায়ুদূষণের রোধে আইনি পদক্ষেপ -
ভারতবর্ষের বায়ুদূষণের রোধে যে সমস্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে,সেই গুলি হল -
  1. The Bengal Smoke Nuisance Act,1905
  2. The Indian Electricity Act,1908
  3. The Indian Boiler's Act,1923
  4. The Petroleum Act,1934
  5. The Motor Vehicle Act,1938
  6. The Factories Act,1948
  7. The Industrial Development and Regulations Act,1951
  8. The Inflammable Substances Act,1952
  9. Mines and Minerals (Regulations and Development)Act,1957
  10. Prevention and Control of Pollution Act,1981
  11. Environment Protection Act,1992
8. উপসংহার -

বায়ু হল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। বায়ুমণ্ডলের দ্বারাই জীবমন্ডলের অস্তিত্ব নির্ভর করে। আর যদি এই বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস দূষিত হয় তাহলে জীবমন্ডলের অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়বে।এই দূষিত বায়ু রোগ জীবাণু সৃষ্টি করে,বিষক্রিয়া করে,মানুষের শারীরিক হ্মতিসাধন করে এবং পরিবেশকে কলুষিত করে। তাই জীবমন্ডলের বেঁচে থাকার জন্য দূষণমুক্ত বায়ু একান্ত প্রয়োজন।অপরদিকে দেখলে বোঝা যায় বায়ুদূষণ ঘটলে জলদূষণ এবং মৃত্তিকা দূষণ ঘটতে পারে,যা আমাদের পরিবেশের পক্ষে এবং মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর।

CLICK HERE -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post