শব্দদূষণ||Noise Pollution
BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
Noise Pollution |
Assignment Questions -
1. শব্দদূষণ কি। শব্দদূষণের উৎস এবং কারণ গুলি লেখ।||What is Noise Pollution? Write Down The Sources And Causes Of Noise Pollution.
2. শব্দদূষণের প্রভাব গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||Briefly Describe The Effects Of Noise Pollution.
3. শব্দদূষণের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গুলি কি।ভারত সরকার শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের গৃহীত পদক্ষেপ গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||What Are The Control Measures For Noise Pollution. Briefly Describe The Steps Taken By The Government Of India To Control Noise Pollution.
শব্দদূষণ -
BENGALI VERSION -
(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)
1. ভূমিকা -
বর্তমান সভ্যতার জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকা দূষণ ন্যায় শব্দদূষণ একটি অন্যতম প্রধান অভিশাপ।যে কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে যে শক্তি প্রবাহিত হয় তা আমাদের কানে এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি করে।ফলে আমরা শুনতে পাই। আধুনিক যন্ত্র সভ্যতা শব্দের তীব্রতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার এই শব্দের তীব্রতা মাঝে মাঝে বিরক্তির উদ্রেক করে।এর ফলে বিরাট দীর্ঘস্থায়ী শব্দ মানুষের এবং পরিবেশের উপর একটি হ্মতিকারক প্রভাব বিস্তার করেছে।
2. শব্দদূষণের সংজ্ঞা -
আমাদের চারিপাশে যে সমস্ত শব্দ প্রতিনিয়ত হচ্ছে,তা মানুষের শ্রবণ হ্মমতা 20 Hz থেকে 20000 Hz পর্যন্ত বিস্তৃত।আর যখন এই শ্রবণ হ্মমতার প্রাবল্য বা তীক্ষ্মতা কখনো কখনো মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। মানুষের সহন হ্মমতা বা শ্রুতি সীমার অতিরিক্ত তাঁর তীক্ষ্ম, অবাঞ্চিত,কর্কশ এবং বেসুরো অস্বাস্থ্যকর শব্দের প্রভাবে মানুষের শরীরে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে,তাকে শব্দদূষণ বলে।শব্দের তীব্রতাকে dB দ্বারা মাপা হয়।একটু জোরে কথোপকথন করলে তার তীব্রতার মান হয় 60dB। অর্থাৎ যখন কোনো শব্দ 80dB ছাড়িয়ে যায়,তাকে শব্দদূষণ বলে।100 dB যুক্ত শব্দ অসহ্য মনে হয়।এই শব্দদূষণ মানুষ তথা পরিবেশের নানা প্রাণীর উপর হ্মতিকারক প্রভাব বিস্তার করে বলে একে আবার পরিবেশগত শব্দদূষণ বলা হয়।
3. শব্দদূষণের উৎস এবং কারণ -
শব্দদূষণ প্রাকৃতিক ও মানবীয় কারনে হয়ে থাকে।তবে প্রাকৃতিক কারণ সামান্য হলেও শব্দদূষণের জন্য মানবীয় কারনই হল প্রধান।নিন্মে শব্দদূষণের বিভিন্ন উৎস এবং তার কারণগুলি বর্ণনা করা হল।-
• প্রাকৃতিক কারণ -
১. বজ্রপাত -
প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টিপাত এবং ঝড়বৃষ্টির ফলে বজ্রপাত ঘটে,যা সাময়িক ভাবে শব্দদূষণ ঘটায়।
২. অগ্ন্যুৎপাত -
পৃথিবীর অনেক জায়গায় সুপ্ত আগ্নেয়গিরি অবস্থান করে।এই সমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে বিস্ফোরণের সময়ে সাময়িকভাবে শব্দদূষণ ঘটায়।
• মানবীয় কারণ -
১. যান পরিবহণ -
শব্দদূষণের একটি প্রধান উৎস হল যানবাহন। শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার দ্রুত হারে বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন এবং এর ফলে বাড়ছে শব্দদূষণ। মোটরগাড়ি,বাস,লরি,ট্রাক,টেম্পো,অটো, মোটর সাইকেল,ট্রাম প্রভৃতি চলাচল আস্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টিকারী শব্দ ও বৈদ্যুতিক হর্ণের তীব্রতা মানুষের জীবনের দুঃসহ করে তুলেছে। তাছাড়াও হাসপাতাল,শিহ্মায়তন ও অন্যান্য নীরব কর্মব্যস্ত স্থানেও শব্দের দূষণ বাড়ছে।
২. রেল ও মেট্রো পরিবহন এবং স্টেশন -
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নতি সাধন ফলে রেল ও মেট্রো পরিবহনের যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।তাই শহরের বড়ো বড়ো স্টেশনের প্লাটফর্মের কোলাহল শব্দদূষণের একটি বৃহৎ উৎস।এই পরিবহন আগমনের সময় মাইকের বলা, টেলিভিশনের নানা প্রচার ইত্যাদি দ্বারা শব্দ উৎপন্ন হয়।যা স্টেশনের আশেপাশের যারা বসবাস করেন এবং যারা এখানে কাজ করেন,তারা এই শব্দ দূষণের শিকার হন।ট্রেন ও মেট্রো চলাচলের শব্দ এবং হুইসলের বিকট শব্দ শব্দদূষণ ঘটায়।
৩. শিল্প প্রক্রিয়া -
বিভিন্ন শিল্পে বিশেষ করে কলকারখানার বিভিন্ন যন্ত্রের আওয়াজ শব্দদূষণের একটি প্রধান কারণ।কর্মরত শ্রমিক এবং আশেপাশের জনবসতির উপর বিকট শব্দ স্নায়ুবিক ব্যধির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে প্রেসের মেসিন, টেক্সটাইল রুম, নিউজ পেপার প্রেস,চাবি পাঞ্জিং মেসিন,গাড়ি সারাই, সাইরেন প্রভৃতি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
৪. যান্ত্রিক ক্রিয়া -
ডিজেল চালিত জেনারেটর, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কুলার,ভ্যাকুয়াম ক্লিনার প্রভৃতি থেকে দূষণ সৃষ্টি হয়।
৫. বিমান পরিবহন -
বিমানের ইঞ্জিন চালু করবার সময় এবং আকাশপথে ওড়বার সময় উড়োজাহাজ বিকট শব্দ সৃষ্টি করে। তাছাড়া জেট ও দ্রুত গতিসম্পন্ন সুপারসোনিক বিমানের সৃষ্ট শব্দ থেকে দূষনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। বিমান ওঠা ও নামার সময় বিমানবন্দরের নিকটে অবস্থিত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের স্নায়ুবিক রোগ দেখা দেয় ও তাদের মানসিকতা কে প্রভাবিত করে।
৬. নিকটবর্তী প্রতিবেশী ও দোকানপাট -
নিকটবর্তী প্রতিবেশীর বাড়ি ও আশেপাশে দোকানপাট থেকে জোরে চোষো দুরদর্শন, টেপ রেকর্ডার,রেডিয়ো ও লাউড স্পিকার প্রভৃতির থেকে শব্দ দূষণ সৃষ্টি হয়,এর ফলে স্নায়ুবিক উত্তেজনা, উচ্চ রক্তচাপ,অনিদ্রা প্রভৃতি রোগ দেখা যায়।
৭. কথোপকথন -
শেয়ারবাজারে, অফিসে বা কোনো জমায়েত, বাজার এলাকায়, খেলার মাঠে, রেস্তরাঁয় ও শিহ্মায়তনে উচ্চ স্বরের কথাবার্তা ও শব্দদূষণের আওতায় পড়ে।
৮. বায়ু টারবাইন -
বর্তমানে প্রচলিত শক্তির বিকল্প হিসেবে যে সমস্ত অপ্রচলিত শক্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বায়ুশক্তি হল একটি। কিন্তু এই বায়ুশক্তি ব্যবহৃত টারবাইন ঘোরার সময় যে শব্দের সৃষ্টি হয়, তার থেকে শব্দ দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।
৯. ধর্মীয় দিক -
ভারতবর্ষ হল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও এখানে নানা ধর্মের এবং জাতির মানুষেরা বসবাস করে।তাই সারাবছর তাদের নানা ধর্মীয় সংস্কার,পূর্জাপাবন,বিবাহ ইত্যাদি সামাজিক অনুষ্ঠানের আতসবাজি ও মাইক, লাউড স্পিকারের তীব্র আওয়াজ শব্দদূষণ সৃষ্টি করে।
১০. মিটিং মিচ্ছিল -
ভারতবর্ষ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।তাই নানা সময়ের নানা রাজনৈতিক দল নানা সময় মিটিং মিচ্ছিলের সভায় মাইক,লাউড স্পিকার,ব্যানার ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন শব্দদূষণ হচ্ছে ঠিক তেমনি অন্যদিকে দৃশ্য দূষণ ঘটচ্ছে।
4. শব্দদূষণের প্রভাব -
১. মানুষের কর্মহ্মমতা হ্রাস -
মানুষের কর্মহ্মমতা এবং শব্দের কোলাহলের সঙ্গে সমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে, কোলাহলের মাত্রা কম থাকলে মানুষের কর্মহ্মমতা বৃদ্ধি পায় আর কোলাহলের মাত্রা বেশি থাকলে মানুষের কর্মহ্মমতা হ্রাস পায়।ভারতে Sinha এবং Sinha -র সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে,শিল্পহ্মেত্রে কোলাহলের মাত্রা হ্রাস পেলে শ্রমিকের কাজের গুণমান বৃদ্ধি পায়।
২. মনঃসংযোগের অভাব -
শব্দদূষণের ফলে মনঃসংযোগের অভাব ঘটে।বড়ো বড়ো শহর গুলিতে বেশিরভাগ অফিসই রাস্তার পাশে অবস্থিত এবং রাস্তায় যানবাহনের শব্দ,লাউড স্পিকারের শব্দ অফিসে কর্মরত মানুষদের মনঃসংযোগের অভাব ঘটায়।
৩. ক্রান্তি -
শব্দদূষণের কারণে মনঃসংযোগের অভাব ঘটার কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কর্মীদের বেশি সময় দিতে হয়। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা যায়।
৪. রক্তচাপ সংক্রান্ত সমস্যা -
শব্দদূষণের প্রভাবে মানুষের শরীরে বিভিন্ন অসুখের সৃষ্টি হয়।অতিরিক্ত কোলাহলের ফলে একদিকে যেমন মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়,অন্যদিকে তেমনি টেনশনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়,যা আবার রক্তচাপ ও বিভিন্ন মানসিক অসুখের সৃষ্টি করে।
৫. শ্রবণজনিত সমস্যা -
কানের সহনশীলতার থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কোলাহলের সৃষ্টি হলে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায়, এমনকি কেউ সাময়িক বা চিরস্থায়ীভাবে বধির পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন।বিশেষত টেলিফোন অপারেটর, ইঞ্জিনের চালক, মেশিনে কর্মরত শ্রমিকের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়।চিকিৎসক ও মনস্তাত্ত্বিকদের মতে,80 থেকে 100 dB শব্দ সীমার মধ্যে থাকলে তা মানুষের পক্ষে যথেষ্ট বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
৬. নিদ্রা জনিত সমস্যা -
উচ্চমাত্রায় কোলাহলের ফলে নিদ্রা জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয় যা কোনো মানুষের মধ্যে বিরক্তি এবং এক অস্তিত্বকর অবস্থা তৈরি করে।এই ধরনের সমস্যার ফলে মানুষের কাজের গুনগত মান হ্রাস পাওয়ার অবসাদ জন্ম নেয়।
৭. হৃদপিন্ড জনিত অসুখ -
হৃদপিণ্ড জনিত অসুখের মাত্রা বৃদ্ধি বর্তমানে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর জন্য বিশেষভাবে শব্দদূষণকে দায়ী করা হচ্ছে।বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে,অতিরিক্ত তীব্র কোলাহলের প্রভাবে রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হৃদস্পন্দনের গতিও স্বাভাবিকের থেকে বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত সঞ্চালন জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
৮. যোগাযোগ ক্ষেত্রে সমস্যা -
উচ্চমাত্রায় শব্দের কারণে দুজন ব্যক্তির কথোপকথনের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়।এর ফলে অন্য ব্যক্তির বক্তব্য যথাযথভাবে বোঝা যায় না এবং অনেকসময় ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
৯. উদ্ভিদের উপর প্রভাব -
মানুষের মতো উদ্ভিদও যথেষ্ট সংবেদনশীল হওয়ায় উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট শান্ত পরিবেশ থাকার প্রয়োজন।শব্দদূষণ ঘটলে অন্যান্য শর্তগুলি অনুকূল থাকলেও উৎপাদিত শস্যের গুণগত মান হ্রাস পায়।
১০. প্রাণীর উপর প্রভাব -
শব্দদূষণে প্রাণীদের স্নায়ুতন্ত্রের যথেষ্ট ক্ষতি হয়।শ্রবণ ক্ষমতার উপর প্রাণীদের জীবনধারণ অনেকটাই নির্ভর করে। অতিরিক্ত মাত্রায় শব্দের প্রভাবে প্রানীদের আচরণগত সমস্যা দেখা দেয় এবং শ্রবণ হ্মমতা হ্রাস পেলে প্রাণীদের সহজেই শিকার করাও যেমন সম্ভব হয়,তেমনি তাদের নিজস্ব শিকার করার ক্ষমতাও হ্রাস পায়।এছাড়া শব্দদূষণের ফলে পরোক্ষভাবে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় প্রাণীদের অস্তিত্বও অনেকক্ষেত্রে বিপন্ন হয়ে পড়ে।অনেকক্ষেত্রে আবার শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে প্রাণীরা তাদের পরিধানের পথ চিহ্নিত করতে পারে এবং শব্দতরঙ্গের বিঘ্ন ঘটলে প্রাণীরা সঠিক সময়ে পরিধান করতে পারে না।
১১. সম্পত্তির উপর প্রভাব -
উচ্চমাত্রায় কোলাহল অট্টালিকা, সেতু ও স্মৃতিসৌধের পহ্মে অত্যন্ত হ্মতিকারক প্রভাব বিস্তার করে। উচ্চমাত্রায় সৃষ্ট শক্তিশালী শব্দতরঙ্গ দেয়ালে আঘাত করে এবং বিভিন্ন বড়ো বড়ো বাড়ি ও সেতু প্রভৃতির যথেষ্ট ক্ষয়হ্মতি করে।
5. শব্দদূষণের নিয়ন্ত্রণ -
মানুষ ও পরিবেশের উপর কোলাহলের বিভিন্ন হ্মতিকারক প্রভাবের কারণে কোলাহলকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।যথা -
• উৎসস্থলে নিয়ন্ত্রণ -
১. গৃহস্থালির কোলাহলের মাত্রা হ্রাস -
প্রতিটি গৃহে নির্বাচিত এবং যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে রেডিয়ো,টিভি,টেপ রেকর্ডার, ওয়াশিং মেশিন, চিমনির মেশিন প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন কোলাহলের মাত্রা হ্রাস করা যেতে পারে।
২. যানবাহনের রহ্মণাবেহ্মণ -
প্রতিটি গাড়ি গুলিতে সাইলেন্সার লাগানো এবং নিয়মমাফিক রহ্মণাবেহ্মণ করলে উচ্চমাত্রায় শব্দ উৎপাদন হ্রাস পায়।রেল পরিবহনের হ্মেত্রে কম শব্দ উৎপাদনকারী ইঞ্জিন তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে।
৩. কম্পনের উপর নিয়ন্ত্রণ -
কোনো বস্তুর কম্পন নিয়ন্ত্রণের জন্য Rubber Padding এর মতো বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা যেতে পারে,যার ফলে শব্দদূষণের নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৪. নীচু স্বরে কথা বলা -
কথোপকথনের সময় নীচু স্বরে কথা বললেও শব্দদূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
৫. লাউডস্পিকারের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা -
জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সভা ও অনুষ্ঠান ছাড়া লাউডস্পিকারের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিৎ।ভারতের বিভিন্ন মেট্রো শহরগুলিতে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
৬. মেশিনের নির্বাচন -
উন্নত প্রযুক্তির প্রভাবে যেসব মেশিন বা সরঞ্জাম থেকে স্বল্প মাত্রায় শব্দ উৎপন্ন হয়, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সেই সকল মেশিন গুলির ব্যবহার বৃদ্ধি করা উচিৎ।
৭. মেশিনের রহ্মণাবেহ্মণ -
বিভিন্ন মেশিনের উপযুক্ত ব্যবহার ও রহ্মণাবেহ্মণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,দীর্ঘপথ যাতায়াতের ফলে অনেকসময় যানবাহনের কিছু অংশ আলগা হয়ে যায় এবং এই অংশগুলি সঠিকভাবে জোড়া লাগাতে না পারলে উচ্চমাত্রায় শব্দের সৃষ্টি হয়,যা যাত্রী ও চালক উভয়ের কাছেই যথেষ্ট বিরক্তিকর।
• শব্দ পরিবহনের পথে নিয়ন্ত্রণ -
১. প্রতিবন্ধক বা বাধা স্থাপন -
শব্দের উৎস এবং শ্রবণকারীর মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধক বা বাধা স্থাপন করতে পারলে শব্দের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব।প্রতিবন্ধক বা বাধার উপস্থিতি শব্দকে আবার উৎসের দিকেই প্রতিফলিত করে।তবে শব্দের উৎস ও শ্রবণকারীর মধ্যে দূরত্ব অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে, প্রতিবন্ধকের কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
২. বাড়ির নকশা -
বাড়ির নকশা তৈরির সময় দেয়ার,দরজা,জানালা এবং সিলিং -এ উপযুক্ত শব্দ শোষক পদার্থ ব্যবহার করলে শব্দের মাত্রা হ্রাস পেয়ে থাকে। এছাড়াও বাহ্যিক কোলাহলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাড়ির বাইরের দেয়ালও বিশেষ উপায়ে নির্মাণ করা যেতে পারে। অনেক সময় আবার ঘরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কোলাহল হ্রাসের জন্য Acoustic Tiles ঘরের দেয়ালে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৩. প্যানেল বা বেষ্টিত অঞ্চল স্থাপন -
শব্দের তীব্রতা হ্রাসের উদ্দেশ্যে উৎস স্থলটি একটি কক্ষের মতো প্যানেল যুক্ত গঠনের মাধ্যমে ঘিরে রাখা যেতে পারে।আবার অনেকক্ষেত্রে ঘরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কোলাহলের মাত্রা হ্রাস করার জন্য Acoustic Tiles ঘরের দেওয়ালে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এই পদ্ধতি অবলম্বন করলেও শব্দদূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
৪. সবুজ বলয় উন্নয়ন -
সবুজ বলয় বিকাশ ঘটলে শব্দ দূষণকে রোধ করা সম্ভব হয়।তবে শব্দ বা কোলাহলের হ্রাসের মাত্রা উদ্ভিদের প্রজাতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে,বট, অশ্বত্থ, তেঁতুল, অশোক, নারিকেল ও নিম প্রভৃতি উদ্ভিদের শব্দ শোষন করার হার বেশি। এছাড়াও শিল্প অঞ্চল গুলিতে তাদের নির্মিত এলাকার থেকে চার গুণ বেশি এলাকায় সবুজ বলয়ের বিকাশ ঘটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়,যা শব্দদূষণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বায়ুদূষণ কেও প্রতিরোধ করে।
• সুরহ্মা প্রদানকারী সরঞ্জামের ব্যবহার -
১. পেশার আবর্তন -
দীর্ঘহ্মণ শব্দের উৎসের কাছে যেসব শ্রমিকরা থাকেন,তাদের হ্মেত্রে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাজের পরিবর্তন করা যেতে পারে।এভাবে পেশাহ্মেত্রে আবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে ওই শ্রমিকদের উপর শব্দদূষণের হ্মতিকারক প্রভাব হ্রাস করা সম্ভব হয়।
২. উচ্চ শব্দ সীমায় অবস্থানের সময় হ্রাস -
নিয়মানুসারে,একটানা 8 ঘন্টার বেশি 90dB শব্দসীমার মধ্যে অবস্থান করা নিষিদ্ধ।যেসব শ্রমিকেরা এই শব্দসীমার মধ্যে কাজ করেন তাদের বিভিন্ন পেশাগত দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়।তাই এই শ্রমিকদের কাজের সময় এমনভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত,যাতে অতিরিক্ত সময় উচ্চ শব্দসীমার মধ্যে অবস্থান করতে না হয়।
৩. শ্রবণ জনিত সুরহ্মা -
শ্রবণজনিত সুরহ্মা প্রদানের জন্য Earmuffs,Ear Plugs প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। Earmuffs ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায় 32dB পর্যন্ত শব্দের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব,তবে তা নির্ভর করে Earmuffs এর আয়তন, আকৃতি, উপাদান প্রকৃতির উপর।
6. শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ -
ভারতে শব্দদূষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।বাজি ফাটানো ও লাউড স্পিকারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত সরকারের বিভিন্ন আইন থাকলেও তার প্রয়োগ অত্যন্ত সীমিত।তাই ভারতের বেশিরভাগ বড়ো বড়ো শহরগুলিতে কোলাহলের মাত্রা থাকে প্রায় 70dB এর উপর।যেমন - দিল্লিতে প্রায় 89dB,কলকাতায় প্রায় 87dB, মুম্বাইয়ে প্রায় 85dB ও চেন্নাইয়ে প্রায় 89dB শব্দসীমা থাকে।ভারতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের যে সমস্ত আইনি পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে,সেগুলি হল -
১. Cr. P. C. Section 133 -
Cr. P. C. Section 133 এর অধীনে Magesterial Court এর শব্দদূষণজনিত যে কোনো ধরনের সমস্যা দূর করা বা মোকাবিলা করার সহ্মমতা থাকে।Sec - 133 অনুযায়ী,একজন Executive Magistrate জনগণের সমস্যাকে প্রথমে শর্তসাপেক্ষে,তারপর চিরস্থায়ীভাবে নির্মূল করতে পারে।
২. I.P.C. Public Nuisance 268-295 -
Indian penal code -এর Chapter IV -এ Sections 268,269,270,279,280,288,290,291,294 -এ জনস্বাস্থ্য, জনসুরহ্মা প্রভৃতি হ্মেত্রে অপরাধের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এই Section গুলির সাহায্যে শব্দদূষণ জনিত অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়।
৩. Factories Act,1948
Factories Act এ শব্দ বা কোলাহল নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই, তবে এই আইনের তৃতীয় অধ্যায়ে Sections 89 ও 90 তে কোলাহলের কারণে শ্রবণহ্মমতা হারানোর বিষয়টিকে একটি উল্লেখযোগ্য অসুখ রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
৪. Environment (Protection) Act,1986
৫. Air (Pollution And Control) Act,1987
৬. Motor Vehicle Act,1988
৭. The Noise Pollution (Regulation And Control) Rules,2000
শব্দদূষণের ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার The Noise Pollution (Regulation And Control) Rules,2000 প্রণয়ন করেন।এই আইনে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত নীতি গুলি হল।-
- রাজ্য সরকার শিল্প, বাণিজ্য ও বসতি নির্মাণের জন্য স্থান সুনির্দিষ্ট করবে।
- বিভিন্ন অঞ্চলে কোলাহলের সাপেক্ষে পারিপার্শ্বিক বায়ুর গুণগত মান নির্ধারণ করা হবে।
- রাজ্য সরকার কোলাহল নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবে এবং নির্ধারিত পারিপার্শ্বিক বায়ুর গুণগত মানের তুলনায় শব্দসীমা যাতে বৃদ্ধি না পায়,সেই বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করবে।
- এই আইনে হাসপাতাল,আদালত এবং শিহ্মা প্রতিষ্ঠানের চারপাশে প্রায় 100 মিটার অঞ্চলে নিস্তব্ধতা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ছাড়া বিশেষত রাতেরবেলার লাউড স্পিকারের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও রাত 10টা থেকে ভোর 6টার মধ্যে কোনো ব্যক্তির কার্যকলাপ নির্ধারিত শব্দসীমাকে অতিক্রম করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
৮. Authority list for Implementation Of Noise Rules,2000
7. উপসংহার -
পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবেশ জলদূষণ বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকা দূষণের ন্যায় শব্দদূষণ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।পরিবেশের জল-বায়ু-মৃত্তিকা দূষণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।কারণ জল-বায়ু-মৃত্তিকা দূষক পদার্থ পরিবেশে অনেক দিন স্থায়ী হয় কিন্তু শব্দদূষণ অস্থায়ী হলেও পরিবেশে বর্তমানে থাকে এবং আস্তে আস্তে বিলীন হলেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী বিস্তৃত।তাই প্রভাব থেকে মুক্ত উদ্দেশ্যে নানা সময়ে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
CLICK HERE -