আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Asanas

আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Asanas

আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Asanas

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Asana
আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Asana

আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী

BENGALI VERSION

(ENGLISH VERSION PDF FILE BELOW THE ARTICLE)

1. ভূমিকা -

যোগাস্রষ্টা মহর্ষি পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের তৃতীয় ধাপটি হল আসন।আসন বলতে আমরা বুঝি বসার জন্য কাপড়ের টুকরো বা কার্পেট বা হরিণের চামড়া। কিন্তু যোগ শাস্ত্রে আসন শব্দের মানে হল শরীরের একটি নির্দিষ্ট অবস্থা যা ব্যক্তির শরীর এবং মনকে স্থির রাখতে এবং ওই শারীরিক অবস্থার দ্বারা সুখের অনুভব করি। অর্থাৎ আসন হল ভঙ্গিমা বা বসার ভঙ্গি।যোগের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন মেরুদন্ড সোজা করে স্বাধীন ভাবে ধরে রাখার সদহ্মতা,সোজা বসে,মাথা,ঘাড় ও বুক এবং সরলরেখায় সন্নিবিষ্ট রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের আসনের অনুশীলন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির পাখি ও প্রাণী আছে এবং তাদের বসা বা দাঁড়ানোর অসংখ্য ভঙ্গিমা হল আসন।- ব্যক্তি স্বাস্থ্যের জন্য যা শারীরিক ভারসাম্য ও মানসিক প্রশান্তি জোগায়।

2. আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী -

যোগাসন অভ্যাস করার আগে যোগাসনের কয়েকটি দিক সম্বন্ধে নিজেদের ধারনা পরিষ্কার করে নেওয়া উচিৎ।কারন যোগাসন যদি ঠিক মতো নির্দেশ না মেনে করা হয় তাহলে ফল উল্টো হতে পারে।যোগ আসনে অভ্যাসে শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকে। কিন্তু এর সঙ্গে চাই পরিমিত ও যতদূর সম্ভব নিয়মিত আহার, বিশ্রাম,সংযম, নিয়মানুবর্তিতা, আত্মবিশ্বাস, অটুট মনোবল ও একাগ্ৰতা।নিম্নে যোগ আসনের নির্দেশাবলী আলোচনা করা হল।-

১. আসন অনুশীলনের বয়সকাল -

কোনো ব্যক্তির 5-6 বছর বয়স থেকে আরম্ভ করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যোগ আসন অভ্যাস করা যায়,তবে যে সমস্ত মেয়েদের বয়স 12-13 বছরের উপর এবং 45-46 বছরের নীচে তাদের স্বাভাবিক কারণে মাসে 4-5 দিন কোনো আসন করা ঠিক নয়, কিন্তু ধ্যানাসন ও শবাসন প্রভৃতি আসন অভ্যাস করা যায়।

২. আসন অনুশীলনের স্থান -

  • আসন অনুশীলনের জন্য যে স্থানটি নির্বাচন করা হবে, সেটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন,শান্ত এবং বায়ু চলাচলের উপযুক্ত হতে হবে।যেখানে কোনো স্যাঁতসেঁতে বা খারাপ গন্ধ থাকবে না।সেই স্থানটি আসবাবপত্র এবং অন্যান্য বস্তু দ্বারা বিশৃঙ্খল মুক্ত হওয়া উচিৎ।
  • আলো,বাতাস যুক্ত স্থানে যোগাসন করা উচিত। প্রতিদিন একই স্থানে যোগাসন অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে একটি শান্তির পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
  • কম্বল,প্যাড বা স্পঞ্জের গদি বা পাতলা তোশকের উপর বসে যোগাসন অভ্যাস করা উচিত।
  • শক্ত মাটি বা পাকা মেঝে বা শোবার বিছানায় আসন অভ্যাস করা উচিত নয়।

৩. আসন অনুশীলনের সময় -

যোগাসন অনুশীলনের শ্রেষ্ট সময় হল ভোরবেলা বা ব্রেকফাস্টের আগে।যদি সম্ভব হয় তবে ব্রাশ করে বা স্নান করে এবং টয়লেট যাওয়ার পর অনুশীলন করা উচিৎ। এছাড়া যদি সকালে যোগাসন অভ্যাস করা সম্ভব না হয়,তবে বিকালে বা সন্ধ্যার সময় অভ্যাস করা যেতে পারে।

৪. আসন অনুশীলনের স্থিতিকাল -

নিজের সুবিধা মতো পর্যাপ্ত সময় ধরে যোগাসন অভ্যাস করা উচিত।প্রথম দিকে 30 মিনিট এবং পরে আস্তে আস্তে সময় বাড়িয়ে 1 ঘন্টা পর্যন্ত করা যেতে পারে।

৫. আসন অনুশীলনের পোশাক -

যোগাসন অভ্যাসকালে এমন কোনো পোশাক ব্যবহার করা উচিত নয়,যাতে ব্যক্তির দেহে রক্ত চলাচল,শ্বাস-প্রশ্বাস বা অঙ্গ সঞ্চালন বিঘ্ন ঘটে। সুতরাং অনুশীলনের সময় আলগা বা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা উচিৎ।

৬. আসন অনুশীলনের বিরতি -

সাধারণত প্রতিটি আসন অভ্যাসের পর কিছুহ্মণ বিরতি জন্য শবাসন অভ্যাস করা হল নিয়ম।তবে একেবারে 7-8টির বেশি আসন অভ্যাস করা ঠিক নয়।প্রতি সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম নিতে হবে।

৭. আসন অনুশীলনের অন্যান্য নিয়ম -

  • একবার যোগাসন অনুশীলনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেলে যতটা সম্ভব চোখ বন্ধ রেখে অনুশীলন করতে হবে।
  • যোগ আসনের শেষে মিছরি,চিনি বা আখের গুড়ের শবরৎ, পাতিলেবু ও লবণ সহযোগে পান করা স্বাস্থ্যপ্রদ।এই সময় হ্মুধা পেলে অল্প মাত্রায় লঘু আহার করা যেতে পারে।
  • যদি কোনো আসনে সামনের দিকে মেরুদন্ডকে বাঁকানো হয়,তবে পরবর্তী আসনে মেরুদন্ডকে অবশ্যই পিছনের দিকে বাঁকাতে হবে। 

৮. আসন অনুশীলনের সাবধানতা -

  • যোগাসন অভ্যাসের আগে কিছুহ্মন খালি হাতে ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে গরম করে নেওয়া উচিৎ।
  • ভারী খাবার গ্রহণের 2-3 ঘন্টার পর যোগাসনের অভ্যাস করা উচিত।
  • শরীর অসুস্থ থাকলে বা মেয়েদের ঋতুকালীন যোগাসন করা উচিত নয়।
  • কয়েকটি আসন ছাড়া প্রায় সব আসনেই শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
  • যোগাসন প্রত্যেকেই অভ্যাস করতে পারবেন।তবে বয়স অনুপাতে বা রোগের তারতম্য এবং প্রয়োজন অনুসারে কার কোন আসন করা উচিত তা একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক বা শিক্ষিকার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই করা উচিৎ।
  • বেশি সময় যোগাসন অভ্যাস করলে শরীর ও মনে ক্লান্তি আসে, একঘেয়েমি দেখা যায়।যোগাসন কম সময় করলে মন প্রফুল্ল থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় মহিলাদের সকাল ও সন্ধ্যায় খোলা জায়গায় পায়চারি করা উপকারী।
  • প্রথম প্রথম দিকে অভ্যাসকালে অভ্যাসকারীর অল্প অল্প ভূল হলে শরীরের হ্মতি হবে মনে করে,আদৌ যোগ আসন অভ্যাস না করা যুক্তিযুক্ত নয়।যদি অভ্যাসকালীন ভূল হলে বারংবার চেষ্টার দ্বারা ভূল সংশোধন করে শুদ্ধ ভাবে এই ব্যায়াম অভ্যাস করার চেষ্টা করা উচিত।

৯. আসন অনুশীলনের উপকারিতা -

  • আসন শরীরের বিভিন্ন অস্থি সন্ধি গুলির নমনীয়তা বৃদ্ধি করে, পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের বিষ অপসারণ করে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে স্তূপাকার সঞ্চিত থাকে।
  • আসন অভ্যাসের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রের সমন্বয় সাধন এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে,যেমন মেরুদন্ড,অস্ত্র ইত্যাদি।ফলে ধীরে ধীরে সম্ভাব্য সর্বোত্তম শারীরিক সুস্বাস্থ্যের দিকে পরিচালিত হয়।
  • নিয়মিত যোগাসন অভ্যাসের মাধ্যমে ব্যক্তির শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়, যা প্রাহ্মোভিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতিতে সহায়তা করে।
  • যোগ আসনে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়ার আশা ঠিক নয়।বিশ্বাস ও ধৈর্য্যের একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত ও নিয়মমতো যোগ আসন অভ্যাস করলে সুফল অবশ্যই পাওয়া যাবে।
  • বিভিন্ন ধরনের রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধনে সহায়তা করে।
  • ব্যক্তির শরীর এবং মনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

১০. আসন অনুশীলনের সীমাবদ্ধতা -

  • যোগাসন বেশি সময় ধরে করা ঠিক নয়।
  • একই বয়সে সব রকমের আসন অভ্যাস করা যায় না।
  • যে সমস্ত ব্যক্তিদের চোখ,কান ও হৃৎপিণ্ড দুর্বল বা রোগ আছে তাদের কখনোই শীর্ষ আসন করা উচিৎ নয়।
  • যে সমস্ত ব্যক্তিদের স্থায়ী নাকের রোগ আছে তাদের সর্বাঙ্গাসন ও শীর্ষ আসন করার সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
  • যে সমস্ত ব্যক্তিদের পেটের বিভিন্ন প্রকার রোগ আছে তাদের ভুজঙ্গাসন,শলভাসন ও ধনুরাসন করা উচিত নয়।
  • যে সমস্ত ব্যক্তিদের কোষ্ঠবদ্ধতা আছে তাদের পশ্চিমোত্তরাসান করা উচিত নয়। এবং মেয়েদের মুয়রাসন করা ভালো না।
  • যোগ আসন অভ্যাসকালে ঝাঁকুনি দিয়ে বা জোর করে কোনো ভঙ্গিমা বা প্রক্রিয়া আয়ত্ত করা ঠিক নয়।আসন অভ্যাসকালে মুখে যেন কোনো বিকৃতি না আসে।
  • গর্ভবতী মহিলাদের তিন মাসের পর ভারী আসন করা উচিত নয়।
  • সাধারণত শীর্ষ আসন অভ্যাসের পর শবাসন করা উচিত নয়।কারণ শীর্ষ আসন অভ্যাস কালে মাথায় যে রক্ত ওঠে শীর্ষ আসনের পর শবাসন অভ্যাসে তা নামতে দেরি হওয়ায় মাথায় ভার বোধ হয়।
3. উপসংহার -
বর্তমানে ব্যস্ততার জীবনে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরচর্চা না করার ফলে আজ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের রোগের বসা বাঁধছে। আবার কিছু কিছু মানুষ বিষন্নতা বা দুশ্চিন্তা গ্ৰস্ত হয়ে উঠেছে।ব্যক্তির শরীর এবং মনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দূর করতে দরকার যোগ ব্যায়াম করা।বৈদিক যুগ হইতে বর্তমানে যুগের শ্রেষ্ট উপায় হল যোগ ব্যায়াম করা।তাই বর্তমানে যোগ আসনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Assignment Questions -

1. আসন বলতে কি বোঝ।||What Do You Mean By Asana.

2. আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী গুলি সম্পর্কে সংহ্মেপে আলোচনা কর।||Briefly Discuss The Instructions Or Guidelines For The Practice Of Asana.

Read More......

ক্রিয়া অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Kriyas

আসন অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Asanas

প্রাণায়াম অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Pranayama

ধ্যান অনুশীলনের নির্দেশাবলী||Guidelines For The Practice Of Meditation

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post