LANGUAGE DEVELOPMENT - VYGOTSKY'S THEORY

LANGUAGE DEVELOPMENT - VYGOTSKY'S THEORY

LANGUAGE DEVELOPMENT - VYGOTSKY'S THEORY||ভাষা বিকাশের ভাইগটস্কির তত্ত্ব

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION



VYGOTSKY'S THEORY LANGUAGE DEVELOPMENT
VYGOTSKY'S THEORY
(**ENGLISH VERSION PDF FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)


BENGALI VERSION -
ভাষা বিকাশের ভাইগটস্কির তত্ত্ব

1. ভূমিকা -

ভাষা মানুষের এক অনন্যসুলভ সম্পদ। এই অমূল্য সম্পদের মালিক হলেন মানুষই। মানুষের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল - মানুষের মন আছে, মানুষের চিন্তা-চেতনা-ক্ষমতা আছে, মানুষের জীবনের বিস্তৃত আবেগ আছে। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশের মাধ্যমে হলো ভাষা। ভাষাই হলো মানুষের প্রধান হাতিয়ার। বস্তুত, হলো মানুষের বিবর্তনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চালক, যা তাকে জীবজগতে শ্রেষ্ঠতর শিরোপায় এনে দিয়েছে।

2. ভাষা ও ভাষা বিকাশ - 

ভাষা হল কিছু চিহ্ন বা প্রতীকের সমষ্টি। যার প্রত্যেকটি কিছু নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে এবং যার উদ্ভব হয় সমাজ থেকে।Baron -এর মতে Language হল - "A System Of Symbols Plusrules For Combining Them,Used To Communication Information." আবার J.W.Santrock তাঁর বই "Educational Psychology" তে ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন -  " Language is a from of communication whether spoken,writtes or signed that is based on a system of symbols."

         প্রত্যেক প্রাণীই ভাষার ব্যবহার করে। কিন্তু মানুষের ভাষার ব্যবহার উন্নত মানের। জন্মের পর ই মানুষের সম্পূর্ণ ভাষা বিকাশ হয় না, আস্তে আস্তে ভাষার বিকাশ হয়।

3. ভাষা বিকাশের উদ্দেশ্যাবলী - 

ভাষা বিকাশের উদ্দেশ্য হল -

  1. একটি শিক্ষার্থী বা শিশুর ভাষার স্বরূপ বা প্রকৃতি উপলব্ধি জানতে পারে।
  2. একটি শিক্ষার্থীর বা শিশুর কোন বিষয়ের জ্ঞান, নীতি, ধারনা ইত্যাদি অনুধাবন করতে পারা।
  3. শিক্ষার্থীর বা শিশুর বিশ্লেষণমূলক দক্ষতা বিকাশ সাধনের জন্য।
  4. শিক্ষার্থীর বা শিশুর যোগাযোগ মূলক দক্ষতা বিকাশ সাধনের জন্য।
  5. ব্যক্তির তথ্য শিক্ষার বিকাশ, যেমন সাধারণ ও জটিল পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য অনুসন্ধান, নির্বাচন ও ব্যবহারে সক্ষমতার বিকাশের জন্য।
  6. একটি শিক্ষার্থীর বাঁশি সুর কিভাবে শিখন প্রক্রিয়া হবে তা লেখা ( আত্ম শিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতা বিকাশ এবং নিজস্ব শিক্ষণ বিষয়কে জ্ঞানীয় কৌশলের মাধ্যমে পরিকল্পনা, ও পরিচালনা) জন্য।
  7. ভবিষ্যতের পেশা ও ক্যারিয়ারের ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতা বিকাশের জন্য।

4. ভাষা বিকাশের গুরুত্ব -

ভাষা হলো শিক্ষার মূল কেন্দ্র। এটি ছাড়া কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা পোষণ বা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারা যায় না। তাই বিদ্যালয় স্তরে সঠিক ভাষার বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। ভাষা বিকাশের বেশ কয়েকটি গুরুত্ব সেগুলি হল - 

  • শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে ও অন্যান্য সামগ্রী সঠিক অনুধাবন সঠিক কার্যকরী ব্যবহার।
  • শিক্ষার্থীর বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিশেষ ভাষা ও ব্যাকরণ সম্পর্কে জ্ঞান।
  • প্রশ্ন গুলির ব্যাখ্যা ও তার যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক উপাদান নির্ধারণ করা।
  • সুগঠিত উত্তর ও প্রকল্প ইত্যাদি রচনা।
  • শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীর চাহিদার উপস্থাপন করা।
  • শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাদান মূলক কাজে অংশগ্রহণ করা।

5. ভাষা বিকাশের তত্ত্ব সমূহ - 

ভাষা বিকাশে কিভাবে হয় বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তার ব্যাখ্যা করেছেন। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো - 

ক। আচরনবাদী দৃষ্টিভঙ্গি - 

এই তথ্য অনুসারে মানুষ ভাষা অর্জন করে সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে। শিশুর ভাষা বিকাশের সময় পিতা-মাতা হাসি আদর ইত্যাদি শক্তিদায়ক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। কোন কোন আচরণবাদী মনে করে শিশুর ভাষা আয়ত্ত করে অনুসরণের মাধ্যমে। এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে মানুষের প্রথম দিকে ভাষার বিকাশ ব্যাখ্যা করা গেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে এই তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

খ। জন্মগত / সহজাত দৃষ্টিভঙ্গি - 

আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বিপরীতে গিয়ে কোন কোন মনোবিদ ও ভাষাতত্ত্ববিদ বলেন যে শিশুরা নিজেই নিজের ভাষা শেখে এবং ভাষা মস্তিষ্কের কাঠামোর মাধ্যমে অবস্থিত। ভাষাবিদ Chomsky এই মতে বিশ্বাসী। তার মতে প্রত্যেক শিশুর একটি Language Acquisition Device থাকে। কার দ্বারা সে বাক্য বুঝতে পারে ও তৈরি করতে পারে।

গ। মিথস্ক্রিয়া দৃষ্টিভঙ্গি - 

বর্তমানে আচরণবাদী ও সহজাত দৃষ্টিভঙ্গি বিতর্কে সমাধানসূত্র হিসাবে এই দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা হয় ভাষা বিকাশের জন্য মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি এবং পরিবেশের দুটি উপাদানের প্রভাব ফেলে এবং দুটি উপাদানের মিথস্ক্রিয়ার ফলেই ভাষার বিকাশ হয়।

এই দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্বাসী মনোবিদরা ভাষার বিকাশ কে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন।- 

  • তথ্য প্রক্রিয়াকরণ
  • সামাজিক মিথস্ক্রিয়া     

এই প্রকল্পটিতে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে লেভ ভাইগটস্কি ভাষা বিকাশের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করবো।

6. লেভ ভাইগটস্কি ও তাঁর তত্ত্ব - 

6.1. লেভ ভাইগটস্কি - 

লেভ ভাইগটস্কি 1896 সালে রাশিয়ার অরশা শহরে এক মধ্যবিত্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।1917 সালে তিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন।তিনি তাঁর জীবদ্দশায় 270টি বৈজ্ঞানিক আর্টিকেল,অসংখ্য লেকচার এবং অনেকগুলো মার্কস ভিত্তিক মনোবৈজ্ঞানিক শিক্ষণ তত্ত্ব প্রদান করেন।তিনি 1957 সালের জুন মাসে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র 37 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।দুর্ভাগ্যজনকভাবে 1958 সালের আগে তার দেওয়া তথ্যগুলো পশ্চিমা বিশ্বের সেভাবে প্রসার লাভ করতে পারেনি এবং 1960 সালে আগে তা প্রকাশিত হয় নি।1962 সালের দিকে তার তত্ত্ব সমূহ আমেরিকান মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে আগ্রহের জন্ম দেয়। তাকে " মোজার্ট অফ সাইকোলজি " বলা হয়।

6.2. ভাইগটস্কি ভাষা বিকাশ তত্ত্ব - 

ভাইগটস্কি কিন্তু পিয়াজেঁর মতো প্রজ্ঞার কোনো স্তর ভিত্তিক বিকাশের কথা বলেন নি।তিনি প্রজ্ঞার বিকাশকে ব্যাখ্যা করার জন্য সামাজিক বিকাশ,ভাষা বিকাশ ও ধারণা বিকাশের কথা বলেছেন। তিনি প্রজ্ঞার বিকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক উপাদানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ জন্য তাঁর তত্ত্বকে " সামাজিক দৃষ্টি মূলক তত্ত্ব " বলা হয়ে থাকে।

ভাইগটস্কির মতে, শিহ্মায় সামগ্রিক লক্ষ্য হল - সাংস্কৃতিক অন্তস্থীকরন ও সামাজিক সম্পর্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিকাশকে নিশ্চিত করা যায়।ফলশ্রুতিতে সামাজিক শিখন সম্পন্ন হবে।তিনি নতুন কোন পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে বা বর্তমান অভিজ্ঞতা অর্জন করার ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা প্রাথমিক জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাঁর মতে সকল ধরনের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থী পারিপার্শ্বিক পরিবেশের থেকে অর্জিত হয়।

তিনি জ্ঞানের উন্নয়নের দুটি পন্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। 

  • প্রথমত - প্রাথমিক প্রক্রিয়া যেগুলি মৌলিকভাবে জৈবিক তাকে সংগঠিত করে। 
  • দ্বিতীয়ত - সামাজিক-সাস্কৃতিক উচ্চতর মনোবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়াকে নির্দেশিত করে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জৈবিক প্রক্রিয়া গুলি উচ্চতর মনোবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া স্থানান্তরিত হয়।

তার তত্ত্বের বক্তব্য হল ব্যক্তির জ্ঞানমূলক বিকাশের সামাজিক মিথস্ক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রধান। এই মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিষয়বস্তুকে আয়ত্ত করে শিখন লাভ করে বা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। যে সন্নিহিত বিকাশের সীমা গিয়ে শিক্ষার্থীর শিখন হয় তা নিচে দেখানো হলো - 

VYGOTSKY'S THEORY

6.3. ভাইগটস্কি তত্ত্বের মূল নীতি - 

ক। সামাজিক মিথস্ক্রিয়া - 

ভাইগটস্কির প্রজ্ঞামূলক বিকাশে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তার মতে শিশুর প্রতিটি সাংস্কৃতিক বিকাশ এ দু'টি দিক আছে প্রথমত, তার সামাজিক স্তর এবং দ্বিতীয়তো শিশু নিজে।

১. বিভিন্ন পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে অন্যদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে এবং সেগুলিকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। উদাহরণ - আমরা যেভাবে কথা বলতে শিখি।

২. শিশুরা সমাজ ও কৃষ্টি অনুযায়ী বড়দের সঙ্গে যেভাবে ভাব বিনিময় করে তার মাধ্যমে শিশুর প্রজ্ঞার বিকাশ ঘটে এবং এক্ষেত্রে ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

খ। সন্নিহিত বিকাশের সীমা(Zone of Proximal Development) - 

ভাইগটস্কির এই প্রসঙ্গে ব্যক্তির তিনটি ক্ষেত্রের বিকাশ এর কথা উল্লেখ করেছেন।

১. প্রথম ধরনের সমস্যা হল সেই ধরনের সমস্যা যা একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি সহজেই সমাধান করতে পারে।

২. দ্বিতীয় ধরনের সমস্যা হল সেই ব্যক্তি যে এককভাবে সমাধান করতে পারবে না, কিন্তু কিন্তু অন্য ব্যক্তির সাহায্যে সেই সমস্যাটির সমাধান করতে পারবে।

৩. তৃতীয় ধরনের সমস্যা হল সেই ব্যক্তি যে কোনো ভাবে সমাধান করতে পারবে না।

প্রকৃত বিকাশের সীমা, যেখানে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই কিছু আচরণ ও কার্য করতে পারে। এই সীমাতে ব্যক্তি প্রথম ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারে। ভাইগটস্কি বলেন ব্যক্তির প্রকৃত বিকাশের সীমার উপরেও কিছু কাজ করতে পারে। কিন্তু সেই কাজগুলি ব্যক্তি এককভাবে করতে পারে না এই কাজগুলি করার জন্য ব্যক্তির অন্য দহ্ম ব্যক্তির সাহায্য প্রয়োজন হয়। বিকাশের এই সীমাটি হল সন্নিহিত বিকাশের সীমা।এই সীমার মধ্যেই ব্যক্তি দ্ধিতীয় ধরনের সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে। ভাইগটস্কির আর একটি সীমা বা হ্মেত্রের কথা বলেছেন যেটি হল বিকাশের পরবর্তী সীমা। এই ধরনের কার্য ব্যক্তির কোনভাবেই এমনকি অপরের সাহায্য নিয়ে করতে পারে না। এই সীমার মধ্যেই ব্যক্তির তৃতীয় ধরনের সমস্যা সমাধান হয়।

অর্থাৎ, বলা যেতে পারে ZPD -র পূর্বের ক্ষেত্রে কাজ ব্যক্তি স্বাধীনভাবে করতে পারে, আর ZPD পরবর্তী ক্ষেত্রে কাজ সে কোনভাবেই করতে পারে না।

গ। প্রয়োজনীয় সাহায্য -

শিখন ও সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীকে যে প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করা হয়, সেই সাহায্যকেই বলা হয় ' Scaffolding ' । এই সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন উপযুক্ত উদাহরণ,উত্তর সংকেত, উৎসাহ প্রদান, সমস্যাকে ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করা ইত্যাদি। শিক্ষার্থীর যখন নিজে নিজে কোন কাজ করতে পারে না তখনই তার 'Scaffolding'  প্রয়োজন হয় ।মূলত শিক্ষার্থীর ZPD অন্তর্ভুক্ত কাজ বা সমস্যার জন্যই এই ধরনের সাহায্য প্রয়োজন হয়। 

        এ প্রসঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন,শিক্ষার্থী যখন নতুন কোন দক্ষতা অর্জন করতে চেষ্টা করবে তখন এই 'scaffolding' - এর প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু ধীরে ধীরে এই সাহায্য কমিয়ে একসময় বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

ঘ। ভাষা ও চিন্তন - 

ভাইগটস্কির মতে, শিশুরা শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের জন্যই ভাষা ব্যবহার করে থাকে তা নয়, তারা ভাষার মাধ্যমে আচরণ ও চিন্তন প্রক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে। শিশুরা নিজের কাজ বা আচরণকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলে।এই কথোপকথনকে বলা হয় 'আত্মকথন'।এই  আত্মকথন আত্মকথনের মাধ্যমেই শিশু তার ভাবনাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়ে যেতে শেখে। পিয়াজেঁর এই ধরনের আতঙ্কে আত্মকেন্দ্রিকতা বলে ব্যাখ্যা করলেও তিনি মনে করেন এই ধরনের কথনকে শিশু বয়সের চিন্তনের অন্যতম হাতিয়ার বলে অভিহিত করেছেন। 

          ভাইগটস্কির মতে, ভাষা ও চিন্তনর প্রথমে পৃথক ও স্বাধীন ভাবে হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে এই দুটির বিকাশ সম্মিলিতভাবে হয়। তাঁর মতে ব্যক্তি প্রথমে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ভাষার মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়া করে তারপর সে চিন্তন শুরু করে। সাত বছর পর শিশুরা কখনকে বাইরে প্রকাশ না করে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে একে বলা হয় স্বকথন(Inner Speech or Internal Speech)

6.4. ভাইগটস্কির তত্ত্বের মূল বক্তব্য - 

কোনো নতুন বিষয়গত ধারণা তৈরি বা পূর্ব জ্ঞান এর সঙ্গে বর্তমান অভিজ্ঞতার সংযোগের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, শিক্ষার্থী প্রজ্ঞার বিকাশের সাহায্য করে। তার মতে শিক্ষার্থীর কিভাবে শিখবে বা চিন্তা করবে তার নির্ধারক হলো ভাষা। শিশুর শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের জন্য ভাষার ব্যবহার করে তা নয়, তারা ভাষার মাধ্যমে আচরণ ও চিন্তন প্রক্রিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে। শিশুরা নিজের কাজ বা আচরণ কে নিয়ন্ত্রন করবার জন্য নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলে এই কথোপকথনকে বলে "আত্মকথন"

        এই তত্ত্বের ভাইগটস্কির ক্ষেত্রে কথোপকথনের ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।Speech বা ভাষ্য হলো এক ধরনের শক্তিশালী মনোবৈজ্ঞানিক উপকরণ যা ব্যাক্তির চিন্তন এর কাঠামো প্রস্তুতির মূলভিত্তি। ভাষা ও চিন্তন প্রথমে পৃথক ও স্বাধীনভাবে হয়ে থাকে এবং পরবর্তীতে এই দুই বিকাশের সম্মিলিতভাবে হয়। প্রথমে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ভাষার মাধ্যমে মিথস্ক্রিয়া করে, তারপর সে চিন্তন শুরু করে। সাত বছর পরে শিশুরা কথন কে বাইরে প্রকাশ না করে নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে একে বলা হয় " স্বকথন (Internal Speech)

 শিখন কিভাবে সংঘটিত হবে তার ব্যাখ্যায় ভাইগটস্কির  সন্নিহিত বিকাশের সীমা বা ZPD ধারণাকে তুলে ধরেছেন।তার মতে এই জন বা ক্ষেত্রগুলি শিখনের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশক। প্রথম স্তরে ( প্রকৃত বিকাশের সীমা) শিক্ষার্থী নিজে থেকেই বিষয়বস্তুকে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থী প্রকৃত বিকাশের সিমার উপরে দিও কিছু কাজ করতে সক্ষম, যা করতে শিক্ষক বা অন্যান্য কারও সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। এই স্তরকে বলা হয় " সন্নিহিত বিকাশের সীমা "

        শিখন ও সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীকে যে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হয়, সেই সাহায্যই বলে " Scaffolding "। সন্নিহিত বিকাশের সীমার শিক্ষার্থী সাফল্য নির্ভর করে প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগান দেওয়ার উপর। অর্থাৎ এই স্তরের শিক্ষার্থী কে যথাযথ উদাহরণ সংকেত উৎসাহ দান ইত্যাদি সাহায্য প্রদান করা হলে শিক্ষার্থীর শিখন সঠিক এবং যথাযথ হয়। এই স্তরের শিক্ষার্থী বয়স্ক এবং সমবয়সী সবার সঙ্গে পারস্পরিক আদান-প্রদান বা যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাহায্য পেয়ে থাকে। সেখানে ভাষাগত দিকটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

ভাইগটস্কির মতে, শিখনের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি হল শিখনের ক্ষেত্র কে অধিক জ্ঞানী কেহ হিসেবে শিক্ষা দিচ্ছে। যে ব্যক্তির নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সম্পর্কে অধিক জ্ঞান ও বোঝার ক্ষমতা রয়েছে তাকে বলা হয় " জ্ঞানী কেহ বা MKO ( More Knowledgeable Other) ".

ভাইগটস্কির মতে তথ্য অনুযায়ী শিখনের ক্ষেত্রে আরেকটি প্রয়োজনীয় বিষয় হলো শ্রেণিকক্ষে নিয়মানুগ পদ্ধতির প্রয়োগ করা। তার প্রত্যক্ষণ অনুযায়ী শিক্ষার্থী সন্নিহিত বিকাশের সীমাকে বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য দান করা আদর্শ শিক্ষকের কর্তব্য এবং সেই সাহায্যদান নির্দিষ্ট স্থানে হওয়া উচিত। যেমন প্রয়োজনীয় সাহায্যদানের প্রথম স্তরে হওয়া উচিত শিক্ষার্থীরা আগ্রহ বাড়ানো এবং শিখনের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি করা। এরপর শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে তাকে কাজের কাঠিন্য অনুসারে শিক্ষণ বিষয়কে ক্ষুদ্র অংশে খন্ডিত করে দেওয়া যেতে পারে।

শিক্ষার্থীর শিখন একটি নির্দিষ্ট সামাজিক পরিবেশ বা প্রেক্ষাপটে ঘটে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী একসঙ্গে শিখন গ্রহণ করে এবং পারস্পরিক প্রতিযোগিতা মাধ্যমে নিজেদের পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হয়।

6.5. ভাষা  বিকাশের  সঙ্গে বৌদ্ধিক  বিকাশের সম্পর্ক -

ভাষা বিকাশের সঙ্গে বৌদ্ধিক বিকাশ পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিম্নে তা ব্যাখ্যা করা হলো -

  1. ভাষার, বিশেষত বাচনিক বিকাশের ক্ষেত্রে সামাজিক কথোপকথন একটি প্রধান ভূমিকা আছে।
  2. তাছাড়াও কিছুটা পরিমাণে হলেও ভাষার বিকাশের শিখনের ভূমিকা আছে যে কারণে ভাষা শেখায় কথাটি ও শিক্ষার একটি প্রয়োজনীয় অঙ্গ।
  3. ভাষার যথাযথ ব্যবহারের জন্য যে শব্দ ভান্ডার গড়ে ওঠে এবং ভাষা ব্যবহারের রীতিনীতি সম্পর্কিত জ্ঞান স্মৃতিতে সংরক্ষিত রাখার জন্য তথ্য জারণ প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে।
  4. একদিকে থেকে বিচার করে দেখলে ভাষা আমাদের নানান ধরনের গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কারণ প্রতিটি ধারণার একটি নাম আছে। তার বৈশিষ্ট্য সমূহ ওর নাম ভাষার মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়। কিন্তু ভাষার বিকাশ হবার পূর্বেই ধারনাগুলি জানা হয়ে যায়। সংখ্যার ধারণা সংখ্যাবাচক শব্দ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে শেখায় পূর্বেই গঠিত হয়ে যায়।
  5. বৌদ্ধিক বিকাশের ক্ষেত্রে স্মৃতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। কারণ ধারণা সংরক্ষণে ভাষার ভূমিকা যেভাবে উপরে বলা হয় তাছাড়াও যে সমস্ত কৌশলে কোন তথ্য অভিজ্ঞতা ধারণা স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয় তার মধ্যে অন্যতম কৌশল এর নাম ভাষা বা শব্দার্থ গত বন্ধন।
  6. ভাষার বিকাশ বৌদ্ধিক বিকাশের উপর নির্ভরশীল। মানসিক প্রতিবন্ধীদের ভাষার বিকাশ কিছুটা ব্যাহত হয়। আবার শিশুর বয়স থেকে বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে প্রজ্ঞামূলক বিকাশ যত অগ্রসর হয় ভাষার বিকাশ সেই অনুপাতে অগ্রগতি লাভ করে।
  7. সামাজিক কথোপকথনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করে দেখলে ভাষার বিকাশ বৌদ্ধিক বিকাশ কে ত্বরান্বিত করে। সামাজিক আদান-প্রদান থেকে আত্মকথন এবং তার ফলে চিন্তার ক্ষমতা বিকাশ লাভ করে।
উপরোক্ত ব্যাখ্যাগুলো থেকে সহজেই বোঝা যায়, ভাষার বিকাশ ও বৌদ্ধিক বিকাশ পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
7. ভাইগটস্কির তত্ত্বের শিক্ষাহ্মেত্রে তাৎপর্য -

7.1. ভাইগটস্কির শ্রেণিকক্ষের নীতি -

  1. শিখন ও বিকাশ একটি সামাজিক ও যৌথ কর্মসূচি। 
  2. The Zone of Proximal Development পাঠক্রম এবং পাঠটীকা প্রস্তুতে সাহায্য করতে সক্ষম। 
  3. বিদ্যালয়ের শিক্ষা হবে অর্থপূর্ণ এবং শিখন ও জ্ঞানের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না,কারণ শিশুরা প্রকৃত জগতের মধ্যেই বিকাশ লাভ করে।
  4. বিদ্যালয়ের বাইরের শিক্ষার সঙ্গে বিদ্যালয় অভ্যন্তরের শিক্ষার মিল থাকবে।

7.2. ভাইগটস্কির তত্ত্বের শ্রেণি শিহ্মকের ভূমিকা -

ভাইগটস্কির শ্রেণীকক্ষে শ্রেণীর শিক্ষককে নিম্নলিখিত ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে।যেমন -

  1. শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করবেন এবং তাদের প্রেরণাকে জাগ্রত করবেন।
  2. শিখন পরিস্থিতিকে সমস্যামূলক করতে শিক্ষক দায়িত্ব নিতে হবে।
  3. পূর্ব জ্ঞানকে দূরে সরিয়ে নতুন জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করে করবেন।
  4. এমন সামাজিক পরিস্থিতি করে তুলবেন যেখানে শিক্ষার্থীদের শিখন এর মানসিকতা গড়ে উঠবে।

একজন নির্মিতবাদী শিক্ষক নিজে বেশি বক্তব্য রাখবেন।তিনি এমন পরিস্থিতি গড়ে তুলবে যেখানে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া করবে যা তাদের উৎসাহিত করবে এবং শিখন সহায়ক হবে দাঁড়িয়ে থাকবেন না।শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা বা সৃষ্টি করতে পারছে কিনা তার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। তিনি শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু পথ প্রদর্শকের কাজ করবেন তাদেরকে সাহায্য করবেন। যাতে তারা দলগত ভাবে কাজ করে, চিন্তা করে এবং প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া নেওয়া করে।শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে, প্রয়োজন বোধে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন।

7.3. অন্যান্য ক্ষেত্রে ভাইগটস্কির সুপারিশ -

১. পাঠক্রম -

পাঠক্রম এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর এবং শিখনের কাজের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া গড়ে উঠবে।

২.পাঠদান -  

ভারাবন্ধন বা Scaffolding যেখানে শিশুর পারদর্শিতার মান অনুযায়ী শিক্ষক পাঠদান করেন।ভাইগটস্কির মতে এটি একটি কার্যকরী শিহ্মন পদ্ধতি।

৩. পরিমাণ -  

শিশুর পারদর্শিতার পরিমাপের ক্ষেত্রে " Zone of Proximal Development or ZPD " বিবেচনা করতে হবে। পরিমাণ পদ্ধতি একদিকে যেমন প্রকৃত পারদর্শিতার প্রতি লক্ষ্য রাখবে অপরদিকে তেমনি বিকাশের সম্ভাবনার প্রতিও নজর রাখবে।

8. উপসংহার - 

সর্বোপরি বলতে পারি যে, ভাইগটস্কির জ্ঞান, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া ও ভাষা প্রকৃতি অনুধাবন করেন ও বিকাশের জটিল প্রকৃতি সম্পর্কে একটি ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন। মতে সমাজ নিমিত্তবাদ তত্ত্ব শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে এবং শিক্ষার্থীদের সকলের মধ্যে সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আলোচনার সুযোগ দেয় এই তথ্যের মাধ্যমে আমরা দেখি অভ্যন্তরীণ জ্ঞান মূলক এবং বাহ্যিক উপাদানের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার জ্ঞান বা প্রজ্ঞা তবে একটা কথা সত্যি যে শিক্ষক ও সামাজিক সংগঠনের এটি একটি চ্যালেঞ্জ।ভাইগট্স্কি অর্থের সামাজিক ঐতিহাসিক মাধ্যমের ওপর আলোকপাত করেন। যে অর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে থেকে ব্যক্তিগত অনুভূতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তার মতে যেভাবে চিন্তাধারার ভাষা সম্পর্কে বুঝিয়েছেন তা হল চিন্তাধারার যখনই বক্তব্যে পরিণত হয় তখনই এই প্রকৃত রূপ ও বাস্তবতা খুঁজে পাই। তাই ভাষা বিকাশে ভাইগট্স্কির তত্ত্বটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE





Post a Comment (0)
Previous Post Next Post