Equalize Educational Opportunity Practicum

Equalize Educational Opportunity Practicum

Survey Of School To See The Implementation Of Various Incentives Of Government To Equalize Educational Opportunity||শিক্ষার সমসুযোগের সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনার বাস্তবায়ন দেখতে স্কুলের জরিপ||BENGALI VERSION

Equalize Educational Opportunity Practicum, সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা প্রকল্প
EQUALIZE EDUCATIONAL OPPORTUNITY


Survey of schools to see the implementation of various incentives of government to equalize Educational Opportunity

BENGALI VERSION

1. ভূমিকা - 

'সম' কথার অর্থ হল সবার জন্য সমান। ভারতের প্রাক্- স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী দশকের সমস্ত সুযোগ সুবিধা সকলের জন্য ছিল না,সমাজের ধনী এবং মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য ছিল। সামাজিক, অর্থনৈতিক, অঞ্চল বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই বৈষম্য দেখা যেত। অনুরূপভাবে, শিক্ষাব্যবস্থার এই বৈষম্য লক্ষ্য করা যেত। তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ছিল চিরাচরিত ও প্রথাগত। শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশার পরিবর্তনের জন্য দরকার ছিল।তাই স্বাধীনতার পরবর্তী সময় কাল থেকে বহু শিক্ষামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর বিভিন্ন কমিশন গঠিত হয়। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের করা হয়েছিল মূলত কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে।যেমন প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা,বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা,বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা,নারী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রভৃতি সম্প্রসারণ করার জন্য।প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্থায় ছিল সমসুযোগ,তাই সকলের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে ভারতবর্ষে সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল।

সমসুযোগ শিক্ষা - একটি রাষ্ট্রের যদি ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ, সামাজিক মর্যাদা,অর্থনৈতিক সংহতি,এবং আঞ্চলিক ভেদ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের নিজস্ব প্রবণতা ও ক্ষমতা অনুসারে আত্মবিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বিকাশের পথে কোন বাধাকে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং রাষ্ট্রের সাধ্য অনুসারে সকলের প্রয়োজন মতো সর্বোত্তম সুযোগের মাধ্যমে যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় তাকে সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থা বলা হয়।এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মূলত ধর্ম-জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ,আর্থসামাজিক এবং আঞ্চলিক ভেদে নারী-পুরুষ উভয়েই শিক্ষা লাভ করতে পারে তাদের চাহিদা অনুসারে।উদাহরণস্বরূপ স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে শিহ্মাব্যবস্থা ছিল প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা পদ্ধতি। এই পদ্ধতি পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে।এই শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি অন্যতম দিক ছিল সমসুযোগের ব্যবস্থা প্রবর্তন।

ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ধর্ম-বর্ণ-জাতি লিঙ্গ ভেদ,সামাজিক,আর্থিক এবং অঞ্চলভেদে শিক্ষাব্যবস্থাকে সমসুযোগ করা হয়েছে।আর্থিক দিক দিয়ে এই ধারণার দুটি প্রেক্ষিত আছে। 

ক। আনুভূমিক সমসুযোগ ও খ। উলম্ব সমসুযোগ। আনুভূমিক সমসুযোগ এর অর্থ হল সকলের প্রতি সমান আচরণ। উলম্ব সমসুযোগের অর্থ হল যারা সুযোগের অভাবে পিছিয়ে আছে (যেমন-তপশিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ শ্রেণি, নারী ইত্যাদি) তাদের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা। দ্বিতীয় বিষয়টি ভারতের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনীয়।

2. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট -

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় সংবিধানের 45 নম্বর ধারায় সমসুযোগের কথা অস্বীকৃত রয়েছে।সার্জেন্ট রিপোর্ট (1944) সুপারিশ করা হয়েছে, যে প্রাথমিক শিক্ষা বিভিন্নভাবে শিক্ষায় সমসুযোগের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।যেমন বিনা বেতনে শিক্ষা,মিড ডে মিল,পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, বৃত্তি প্রদান এবং চিকিৎসার সুযোগ দান ইত্যাদি। স্বাধীনতা অর্জনের পর বিষয়টি সংবিধানের নীতিগতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

           কোঠারি কমিশন,জাতীয় শিক্ষানীতি ও জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা শিক্ষার সুযোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।1964-66 এর শিক্ষা কমিশনের মতে " one of the important social objective of education is it equalize opportunity enabling the backward of under - privileged classes and individuals to use education as a lever for improvement of their condition.Every  society that values Social justice and it.anxious to improve the lost of the common naam land cultivate all the section of the population.This is the only e guarantee for the building up of a eqalitarian and human society in which exploration of the weak will be minimised." 1986 এর বক্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাতীয় শিক্ষানীতির মতে, " to provide for equal opportunity to all not only in access but also in the condition for success."

3. সমসুযোগ শিক্ষার উদ্দেশ্য -

সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের মূল উদ্দেশ্য ছিল 

A। নিরক্ষরতা দূরীকরণ -

ভারতবর্ষে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের সংবিধানের আইন দ্বারা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। ভারতবর্ষে প্রত্যেকটি মানুষ সাক্ষরতা লাভ করতে পারে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ একটা রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্যতম দিক।

B। বৈষম্য দূরীকরণ -

ভারতবর্ষে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গভেদে সামাজিক ও অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক বৈষম্য গ্রাম ও শহর অঞ্চল রয়েছে।তাতে শিক্ষাব্যবস্থা মূলত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের জন্য ছিল।এই বৈষম্য দূর করার জন্য সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

C। ব্যক্তিত্ব বিকাশ - 

প্রতিটি ব্যক্তির কিছু-না-কিছু সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে,যা শিক্ষার আলো দ্বারাই প্রতিভার বিকাশ ঘটতে পারে।তাই ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য সকলকে শিক্ষার আলো দেওয়া প্রয়োজন।এই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থা করা হয়। 

D। গণতান্ত্রিক সফলতা - 

ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গ,আর্থ-সামাজিক এবং আঞ্চলিক ভেদে ভারতের প্রত্যেকটি ব্যক্তি বা নাগরিক এই শিক্ষা গ্রহণ করবে।ফলে ভারতের নাগরিকদের বা জনগণের মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক সাফল্যতা প্রকাশ পাবে।

E। সামাজিক ঐক্য স্থাপন -

সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা ভেদাভেদ ভুলে সকলে একত্রিত হয়ে একটি সমাজ গঠন করবে।এই ভাবেই সামাজিক ঐক্যের স্থাপন করবে।

F। সামাজিক ন্যায়বিচার স্থাপন - 

একটি সমাজ তখনই উন্নত হবে যখন সেই সমাজে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত হবে।শিক্ষাব্যবস্থা উন্নতিতে সামাজিক অপরাধ অনেক অংশে কম হবে,মানুষজন মধ্যে ন্যায় ও বিচারের মনোভাব জাগ্রত হবে। শিক্ষার দ্বারা সমাজের ন্যায় ও সুবিচার স্থাপন করা সম্ভব।

G। নারী শিক্ষা ও অগ্রগতি -

ভারতবর্ষে নারী অবস্থান পরিবর্তন এবং অবহেলা দূর করার জন্য দরকার নারী শিক্ষা।নারী শিক্ষার দ্বারা নারী জাতি উন্নতি এবং প্রগতি সম্ভব।সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে নারীরা শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং পুরুষের ন্যায় সমতুল্য মর্যাদা অর্জন করতে পারবে।

4. সমসুযোগ শিক্ষার গুরুত্ব - 

সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব গুলি হল -

A. সংবিধানের প্রতিশ্রুতি পালন -

ভারতের সংবিধানে বর্ণিত সাম্যের অধিকারের মাধ্যমে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রত্যেক শিশুর মধ্যে বিনামূল্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে।অর্থাৎ প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা চাকুরী প্রভৃতি সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায় ও শিক্ষা সমসুযোগ ব্যবস্থা করা সংবিধানের কর্তব্য আর এই সংবিধানের প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য শিক্ষার সুযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

B. গণতান্ত্রিক সাফল্য -

ভারতবর্ষে গণতান্ত্রিক সাফল্য ও সমৃদ্ধি ঘটে শিক্ষিত ও আলোকপ্রাপ্ত জনসাধারণের ওপর নির্ভর করে।তাই শিক্ষায় সমসুযোগ একান্ত অপরিহার্য।এক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র,উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের,হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান,স্পৃশ্য ও অস্পৃশ্য,গ্রামাঞ্চল-শহরাঞ্চল ও নারী-পুরুষ প্রভৃতি কোনো বৈষম্য করা উচিত নয়। 

C. মানব মূলধন সৃষ্টি -

ভারতে সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা মূল উদ্দেশ্যই ছিল মানব সম্পদ সৃষ্টি।মানব সম্পদ যত বেশি সমৃদ্ধ হবে ততই রাষ্ট্রের উন্নয়ন ঘটবে।

D. ব্যক্তির সুষম বিকাশ -

ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিকাশ শিক্ষার আলো সুপ্ত প্রতিভা প্রকাশ পায়।তাই সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থার ব্যক্তিত্বের বিকাশ প্রকাশ পায়।

E. সামাজিক ঐক্য ও ন্যায়বিচার স্থাপন -

শিহ্মার আলো দ্বারা সমাজের মানুষদের মধ্যে একটি ঐক্যের এবং ন্যায় বিচার স্থাপনের মনোভাব প্রকাশ পায়।

5. সমসুযোগ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা - 

সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল সামাজিক লহ্ম্যে।এর মাধ্যমেই সমাজের বর্ণ-ধর্ম-জাতি-লিঙ্গভেদে, সামাজিক, অথনৈতিক এবং আঞ্চলিক ভেদে সকলের জন্য সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা পশ্চাৎপদ ও সুযোগ বঞ্চিত শ্রেনীর মানুষ নিজেদের উন্নয়নকে সফল করতে পারে। সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার অন্যতম রূপ শিক্ষা,যা আমাদের জন্মগত অধিকার। এই সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা নানা কারণে হয়েছিল যথা -

১. গণতান্ত্রিক সার্থক ও সামাজিক ন্যায়বিচার -

সংবিধান বর্ণিত ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গভেদে,সামাজিক অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক বিভেদে পশ্চাৎপদ ও সুযোগ বঞ্চিত মানুষ ও সাধারণ মানুষ নির্বিশেষে শিক্ষার সমসুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।এতে গণতান্ত্রিক সার্থক ও সামাজিক ন্যায়বিচার রক্ষা করা হয়।

২. প্রতিভার বিকাশ - 

প্রত্যেক ব্যক্তি কিছু-না-কিছু সম্ভাব্য বিশেষ প্রতিভা রয়েছে,যা শিক্ষার আলো দ্বারা উন্মুক্ত করা সম্ভব।তাই সমাজের সমৃদ্ধি সাধনের জন্য সমসুযোগের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা একান্ত জরুরি। 

৩. সমাজের সীমাবদ্ধতা ধারণাটি হ্রাস করা - 

প্রত্যেক ব্যক্তি কিছু-না-কিছু বিশেষ প্রতিভা রয়েছে।যাদের সুযোগ থাকে তাদের এই প্রতিভার প্রকাশ পায়, তারা উন্নত শ্রেণি আর যাদের সুযোগ এই বিশেষ গুনগুলি থেকে বঞ্চিত হয়, তাদের অনুন্নত শ্রেণি বলে। তাই এই বৈষম্যর সীমাকে হ্রাস করার জন্য কেবল অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে উন্নত নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধতার ধারণাকে কমিয়ে সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা কে সার্বজনীন করতে হবে। 

৪. বৈষম্য দূরীকরণ -

ভারতের তৎকালীন সমাজে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল, তাতে বর্ণ-ধর্ম-জাতি-লিঙ্গভেদে,সামাজিক ও আর্থিক এবং আঞ্চলিকতা একটি বৈষম্য ছিল।এই বৈষম্য দূর করার জন্য এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। 

৫. জাতীয় সংহতি - 

বর্তমান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার উচ্চ শ্রেণীর মানুষ উচ্চ মানের শিক্ষা ক্রয় করতে পারছে, অন্যদিকে নিম্ন ও দুর্বল শ্রেণীর মানুষ আজও নিম্নমানের শিক্ষা ক্রয় করতে পারছে আবার পারছে না।ফলে দেশের মধ্যে কাল্পনিক একটি বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। কোন রাষ্ট্রের জাতীয় উন্নতিতে জাতীয় সংহতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।তাই এটি উন্নত ও শিক্ষাগত দিক থেকে বৈষম্যহীন সমাজ তখনই হবে যখন জাতীয় সংহতি বজায় থাকবে।

৬. আর্থসামাজিক উন্নয়ন - 

একটি রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান হল মানব।মানুষের দ্বারা প্রচলিত হয় অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার। রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য দরকার শিক্ষাব্যবস্থা।শিহ্মাব্যবস্থার যদি সকলের জন্য সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা সৃষ্টি করে তাহলে রাষ্ট্রের দ্রুত আর্থ-সামাজিক ভাবে উন্নয়ন ঘটবে।

৭. উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা - 

সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা সৃষ্টির ফলে রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের শিক্ষা আলো পাবে। ফলে তাদের নানা প্রতিভার বিকাশ ঘটবে,দেশের তথা জাতীয় উৎপাদন, মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।জনগণ হয়ে উঠবে দহ্ম নাগরিক। তাই মানুষের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এই শিক্ষা ব্যবস্থার।

৮. গণতান্ত্রিক মনোভাব - 

যদি একটি রাষ্ট্রের সকলের জন্য সমসুযোগের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় তাহলে সেই রাষ্ট্রের জনগণের মনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ধারাকে সঠিকভাবে বজায় রাখতে পারবে।

৯. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা - 

শিক্ষার সমসুযোগের ফলে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতা বিকাশ পায়।ব্যক্তি বিশেষই হল গণতন্ত্রের ভিত্তি।তাই প্রতিটি ব্যক্তি যেন তার ক্ষমতা ও প্রতিভার বিকাশ সাধন করতে পারে। 

উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে।

6. শিক্ষানীতির সুপারিশ - 

6.1. কোঠারি কমিশন সুপারিশ - 

শিক্ষাগত সুযোগের বৈষম্য দূর করতে কোঠারি কমিশনের অভিমত; জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়,আর্থিক দিক থেকে দুঃস্থ নির্বিশেষে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ যাতে শিক্ষার সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে, তার জন্য কমিশন যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছেন সেগুলি হল - 

১.সর্বস্তরের শিক্ষাকে ধীরে ধীরে অবৈতনিক করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শেষ হওয়ার আগে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে হবে। 

২.প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। 

৩.পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি নিন্মে মাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে হবে। 

৪.শিক্ষার সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৫.মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে Book Bank গঠন করতে হবে এবং লাইব্রেরী গুলির উন্নতি সাধন করতে হবে।

৬.Common school গুলি অবৈতনিক হবে এবং এখানে উন্নত মানের শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে।

৭.জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে Common School System চালু করতে হবে।

৮.দুর্বল ও অনগ্রসর শ্রেণীর শিক্ষার সুযোগ আরও বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 

৯.শিক্ষার অগ্রগতিতে জেলা গুলির ও রাজ্যগুলির মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা কমিয়ে আনতে হবে। 

১০.স্ত্রী শিক্ষা প্রসারের জন্য National Committee On Women Education সুপারিশ কার্যকর করতে হবে।

6.2. জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ - 

প্রচলিত শিক্ষাকাঠামোতে দীর্ঘদিন ধরে যে বৈষম্য চলে আসছে।তা দূর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।তবে তার মধ্যে অন্যতম হল নতুন শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতিতে শিক্ষার ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল ধরে যে বৈষম্য চলে এসেছে,তা দূর করার কথা বলা হয়েছে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য শিক্ষার সমসুযোগ দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলা হয়েছে।

ক। নারী শিক্ষাব্যবস্থা - 

১.মেয়েদের স্বাক্ষর করে তুলতে হবে।

২.তাদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩.বৃত্তিমূলক কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার মেয়েরা যাতে অংশ নিতে পারে সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

৪.নারী শিক্ষার যাতে অগ্রগতি হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। 

খ। তপশিলি জাতির শিক্ষাব্যবস্থা - 

১.অভিভাবকরা যাতে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের নিয়মিত বিদ্যালয় পাঠান সেজন্য তাদের উৎসাহ দিতে হবে।

২.তপশিলি জাতি ভুক্ত শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি স্থিতি এবং সর্বশেষ স্তরে কৃত কার্যের মান যাতে নেমে না যায় তার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৩.তপশিলি শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪.তপশিলি জাতির মধ্যে থেকে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

৫.তপশিলি শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয় বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপন করতে হবে।

গ। তপশিলি উপজাতির শিক্ষাব্যবস্থা - 

১.তপশিলি উপজাতি ভুক্ত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

২.প্রথমদিকে পাঠ্যপুস্তক তপশিলি উপজাতিদের ভাষা রচনা করতে হবে এবং পরে আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ এবং শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩.তপশিলি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় যথেষ্ট আবাসিক বিদ্যালয় ও আশ্রম বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।

৪.শিক্ষিত ও সম্ভাবনা পূর্ণ তপশিলি উপজাতি ভুক্ত যুবকদের তপশিলি উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার শিক্ষকতা করার সুযোগ দিতে হবে। 

৫.তপশিলি জাতি ভুক্ত এলাকায় প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা কেন্দ্র এবং বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করতে হবে। 

৬.পাঠক্রম এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে তপশিলি উপজাতি ভুক্ত মানুষের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি যথাযথ মর্যাদা পায়।

ঘ। প্রতিবন্ধীদের শিহ্মাব্যবস্থা - 

১.আংশিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২.গুরুতর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে হবে।

৩.প্রতিবন্ধীদের জন্য বৃত্তি শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।

৪.যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে তাদের সব রকমের সাহায্য করতে হবে। 

ঙ। বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থা - 

১.১৫ বছর থেকে 35 বছর বয়সে নাগরিকদের নিরক্ষরতা অবসান ঘটাতে হবে।

২.শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

৩.বয়স্ক শিহ্মা ব্যবস্থার জন্য বিশেষ ধরনের বই তৈরি করতে হবে।

৪.গ্রন্থাগারের উপর উন্নতি করতে হবে।

৫.শিক্ষাব্যবস্থা প্রসার ঘটাতে হবে। 

৬.প্রয়োজনে ভিত্তি বৃত্তিমুখী শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

৭.মাধ্যমিক পরবর্তী স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

         পরিশেষে বলা যেতে পারে কোঠারি কমিশন,1968 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষানীতি,1986 খ্রিস্টাব্দের শিক্ষানীতি প্রসারের ফলে ভারতবর্ষের শিক্ষা ব্যবস্থার সমসুযোগ ধারণা প্রকাশ ঘটবে।

7. তথ্য সংগ্রহ - 

7.1. বিদ্যালয় নির্বাচন

উক্ত প্রকল্পটি করার জন্য আমি................................. বিদ্যালয়কে নির্বাচন করা হলো। এই বিদ্যালয় মূলত পঞ্চম শ্রেণী হইতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পঠন-পাঠন করানো হয়। উক্ত প্রকল্পটি করার জন্য আমি প্রধান শিক্ষক/প্রধান শিক্ষিকা -এর নিকট হতে অনুমতি নিয়ে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হয়েছে।

7.2. পদ্ধতি - 

এই সমীক্ষাট করার জন্য ৫০জন শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়েছে।তাদের সাথে কিছু প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

• নমুনা সংগ্রহ - ১

শিক্ষার্থীর নাম -

বিদ্যালয়ের নাম -

শিক্ষার্থীর শ্রেণি -

শিক্ষার্থীর ক্রমিক সংখ্যা -

শিক্ষার্থী বয়স -

শিক্ষার্থীর লিঙ্গ -

১.বিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য কোনো ক্যাপিটেশন ফ্রি দেওয়া হয়েছিল ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

২.বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাসিক বা বাৎসরিক বেতন দিতে হয় ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৩.বিদ্যালয় হইতে স্কুল ইউনিফর্ম প্রদান করা হয় ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৪.বিদ্যালয় হইতে পাঠ্যপুস্তকে বই পত্র বিনামূল্যে দেওয়া হয় ? 

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৫.তোমার বিদ্যালয় কি বুক ব্যাংক রয়েছে ? 

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৬.বিদ্যালয় গ্রন্থাগার রয়েছে ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৭.বিদ্যালয় হইতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা রয়েছে ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৮.বিদ্যালয়ে মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কি আর্থিক সাহায্য করা হয় ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

৯.বিদ্যালয় কী তপশিলি জাতি উপজাতি ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে? 

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

১০.তোমার মতে তপশিলি জাতি উপজাতি ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা খারাপ ব্যবহার করে ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

১১.তপশিলি জাতি উপজাতি ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষক বা শিক্ষিকা খারাপ আচরণ করেন ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

১২.শ্রেণিকক্ষে বা বিদ্যালয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা আছে ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

১৩.প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা কি কোন ব্যবস্থা রয়েছে ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )। 

১৪.তোমার এলাকায় এই বিদ্যালয় বাদে অন্য কোন বিদ্যালয় রয়েছে ?

উত্তর - হ্যাঁ (  ) / না (  )।

Master Table 

নং         বিষয়                    হ্যাঁ শতাংশ         না শতাংশ    ১.       ক্যাপিটেশন ফ্রী              ০                   ১০০

২.         অবৈতনিক                   ০                  ১০০

৩.        স্কুল ইউনিফর্ম             ৬০                    ৪০

৪.      বিনামূল্যে পুস্তক           ৭০                    ৩০

৫.          Book Bank           ১০০                      ০

৬.            গ্রন্থাগার              ১০০                       ০

৭.         স্কলারশিপ             ১০০                       ০

৮.     আর্থিক সহায়তা।         ৬০                     ৪০

৯.    SC/ST/OBC 

           students                ১০০                      ০

১০. SC/ST/OBC 

 students সাথে অন্যান্য  

শিক্ষার্থীরা  ব্যবহার                  ০                  ১০০

১১. SC/ST/OBC 

 students সাথে অন্যান্য  

শিক্ষক-শিহ্মিকার ব্যবহার        ০                  ১০০

১২.প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী          ১০০                       ০

১৩.প্রতিবন্ধীদের জন্য

          ব্যবস্থাপনা।                   ০                  ১০০

১৪. আঞ্চলিক বৈষম্যহীন    ১০০                      ০    

Equalize Educational Opportunity

ব্যাখ্যা -

উক্ত সমীক্ষায় থেকে বেশকছু তথ্য আমরা পাই। এই সমীক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু দিকের তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারি। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে 100% শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় কোনো ক্যাপিটেশন ফ্রী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানকে বা প্রতিষ্ঠানের কোনো সদস্যকে দিতে হয় নি এবং বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের জন্য বার্ষিক বা মাসিক বেতন দিতে হয় না। প্রত্যেক বছর শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম বিদ্যালয় হইতে দেওয়া হয় কিন্তু সকল ছাত্র-ছাত্রীরা পায় না।বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর নতুন শ্রেণীতে ওঠার সময় বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পেয়ে থাকে এবং বিদ্যালয় একটি নির্দিষ্ট বুক ব্যাংক গঠন করা হয়েছে।অবসর সময় শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনে এবং অন্যান্য বই পড়ার সুবিধার্থে গ্রন্থাগার রয়েছে।মেধা ও পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের এবং সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের মেধাবী এবং দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়ে থাকে। বিদ্যালয় তপশিলি জাতি উপজাতি এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে এবং এদের সাথে অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক,শিক্ষিকাদের কোন খারাপ ব্যবহার বা আলাদা ভাবার মনোভাব নেই। বিদ্যালয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে তবে খুব কম সংখ্যক।কিন্তু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন বা পরীক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থাপনা নেই।শিক্ষার্থীর মধ্যে সেই অঞ্চলের এই বিদ্যালয়টি ছাড়াও আরো অনেক বিদ্যালয় রয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন করতে পারে। তাই সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থার আঞ্চলিক বৈষম্য তা রয়েছে তা এই এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অনুভব করে না। সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থায় এই বিদ্যালয়টি রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও ব্যবস্থা ও উন্নতি করার কথা ভাবছেন।

8. সমসুযোগ শিহ্মা ব্যবস্থার সমস্যাবলী - 

১.জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব - 

একটি শিক্ষাব্যবস্থা সকলে জন্য উন্মুক্ত করার প্রধান ভূমিকা পালন করেন রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।কিন্তু বর্তমান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কাজ করে চলেছে। তাতে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে ঠিকই,কিন্তু সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।তাই শিক্ষাব্যবস্থায় জাতীয়করণ করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তুলতে হবে।

২. আঞ্চলিক বৈষম্য - 

বর্তমান ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে শুধু নয়, জেলা গুলির মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়।যে সমস্ত এলাকায় বা অঞ্চল গুলি উন্নত সেইখানে বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।এই এলাকা বা অঞ্চলে শিক্ষার্থীরা সুযোগ-সুবিধা লাভ করেছে। বিপরীত দিকে যে সমস্ত এলাকাগুলিতে অনুন্নত সেখানে কোন বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন করা হয় নি।ফলে সেই এলাকা বা অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

৩.দারিদ্রতা - 

ভারতবর্ষ হলো মূলত একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয়। ভারতের অধিক সংখ্যক মানুষ দরিদ্র এবং সীমার নিচে অবস্থান করে।অল্প সংখ্যক মানুষ ধনী,এই ধনী ব্যক্তি দরিদ্র মানুষের চেয়ে বেশি ভালো শিক্ষাব্যবস্থা লাভ করে।ফলে ধনী ও গরিব ব্যক্তি মধ্যে বৈষম্য থেকে যায়।এই বৈষম্য জন্য সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

৪.শিক্ষার মানের তারতম্য - 

বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে শিক্ষার মানের খুব বেশি পার্থক্য দেখা যায়।এই অবস্থায় শিক্ষার সুযোগের অসমতা সৃষ্টি করে।উদাহরণস্বরূপ গ্রামাঞ্চলের স্কুল-কলেজ তুলনায় কম ফলে শিক্ষা গুণগত মান কম। সমসুযোগের শিক্ষা ব্যবস্থায় এটি একটি বড় অন্তরায়।

৫.গৃহ-পরিবেশের পার্থক্য -

শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক ভিত্তি হলো গৃহ-পরিবেশ।একটি শিশু বিদ্যালয় যাওয়ার আগে পঠন-পাঠন শুরু করেন নিজের গৃহে।গৃহ-পরিবেশে যদি পিতা-মাতা নিরক্ষর হয় তাহলে গৃহ পরিবেশে শিক্ষাব্যবস্থা সঠিকভাবে হবে না। তাই দেখা যায় বস্তি এলাকা তে গিয়ে পরিবেশ শিক্ষা অনুকূল নয়।শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পিতা-মাতা শিক্ষিত হওয়া এবং গৃহ-পরিবেশের উন্নত হওয়া একান্ত জরুরী।

৬. নারী শিক্ষার প্রতি অবহেলা - 

ভারতবর্ষের সমাজব্যবস্থা মূলত পুরুষতান্ত্রিক।সমাজে সব সময় নারীদের মনে করা হতো তারা বাল্যকালে পিতার ঘর,যৌবনে স্বামীর ঘরে,বার্ধক্যেকালে সন্তানের নিকট থাকবে।রান্নাবান্না,ঘরবাড়ি সামলানো ও সন্তান জন্ম দেওয়া এদের কাজ।নারীদের প্রতি অবহেলা বহুদিন ধরে চলে এসেছে ভারতে,শিক্ষাব্যবস্থায় অনুরূপভাবে পুরুষের তুলনায় কম স্বাক্ষর নারীরা। যতদিন এই মানসিকতা দূর করা না হবে নারী প্রগতি ও শিক্ষার প্রতি অগ্রগতি ঘটবে না।

৭.পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী - 

2001 জনগণনা তে দেখা যায় ভারতের মোট জনসংখ্যা 17.5% তপশিলি জাতি ও 18.4% সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মন্ডল কমিশনের অনুযায়ী অন্যান্য পশ্চাত্পদ গোষ্ঠীর জনসংখ্যা 52%।এই বিরাট সংখ্যার জনগণের সাংবিধানিক রহ্মা কবচ এবং আইনগত কিছু অধিকার থাকা সত্বেও সমাজে তারা আজও অবহেলিত।যার জন্য দায়ী শিক্ষার অভাব এবং সরকারের প্রচারের অভাব। এক কথায় বলা যায় যে,সামাজিক বঞ্চনা, দারিদ্রতা, হীনমন্যতা,সচেতনতার অভাব ইত্যাদি নানা কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে এরা বঞ্চিত। 

৮. প্রতিবন্ধী - 

ভারতবর্ষে সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের একত্র করণের সংখ্যা নেহাত কম নয়।সমগ্র জনগণের প্রায় 2.5 শতাংশ শিক্ষা যোগ্য।এদের জন্য পৃথক বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।কিন্তু সবচেয়ে বড়ো কথা এদের পাঠদানকারী শিক্ষকের সংখ্যা নগণ্য এবং বিশেষ শিক্ষা লাভের জন্য তেমন কোনো আলাদা প্রতিষ্ঠান নেই। এইসব কারনেই প্রতিবন্ধীদের মধ্যে একটা বড়ো অংশ শিক্ষার সুযোগ থেকে এখনও বঞ্চিত।

৯.শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক পরিবেশ - 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক পরিবেশ পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং শিক্ষার্থীর ভূমিকা,পাঠক্রমিক ও সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ, তাদের শিক্ষাগত পারদর্শিতা ইত্যাদি।তবে এক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সামাজিক পরিবেশের এই বিষয়গুলি বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভর পৃথকভাবে ফেলে।যেমন তপশিলি জাতি ও উপজাতির প্রতি শিক্ষকদের এই ধরনের নেতিবাচক মনোভাব,তা এই সম্প্রদায়ভুক্ত শিক্ষার্থীদের আত্ম প্রত্যয়ের উপর আঘাত বিস্তার করে যার ফলে তাদের শিক্ষাগত পারদর্শিতা এবং শ্রেণিকক্ষে মিথস্ক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে। 

১০.তপশিলি জাতি,উপজাতি ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর প্রতি উচ্চবর্ণের সম্প্রদায়ের সহানুভূতিশীলতা দৃষ্টিভঙ্গি -

ভারতের বর্ণের ভিত্তিতে যে শ্রেণী ভাগ রয়েছে,তাতে উচ্চবর্ণের সম্প্রদায় সব সময় তপশিলি জাতি,উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়।উচ্চবর্ণের সম্প্রদায় সবসময় মনে করে নিম্নবর্ণের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিত্বের বৌদ্ধিক ক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম,অধিকাংশ শিক্ষকগণ মনে করেন নিম্নবর্ণের শিক্ষার্থীদের সর্বদাই উচ্চবর্ণের শিক্ষার্থীদের থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে এবং নিম্নবর্ণের শিক্ষার্থীদের কারণেই শিক্ষার গুনমান ব্যাহত হয়।সেই জন্যই এদের প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন।

১১.সামাজিক অসম - 

সামাজিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে অসমতা একটি ঘটনা।এর প্রধান কারণ হলো সামাজিক এবং আর্থিক দিক থেকে তপশিলি জাতি,উপজাতি এবং অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের অসম তাদের বিকাশের ক্ষেত্রে ও অসমতা দেখা যায়।স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব শিহ্মনের ক্ষমতা উপরোক্ত প্রভাব বিস্তার করে।এই সামাজিক অসমতা শিক্ষাক্ষেত্রেও সঞ্চারিত হয়। 

১২.বর্তমান বিদ্যালয় ব্যবস্থা সীমাবদ্ধতা - 

স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা চিন্তা করেই রচিত হয়েছিল।দুঃখের বিষয় শিক্ষক এবং পরিচালকবৃন্দ শিক্ষার যে পরিবেশ গড়ে তুলেছে তার প্রধান লক্ষ্য হল উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাহিদা এবং উচ্চকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। নিম্ন,পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর বিশেষ করে উপজাতিদের কথা স্মরণ করা হয় নি।পাঠক্রম,মূল্যায়ন পদ্ধতি, সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলী এবং সাধারণ শিক্ষা পরিবেশের। নিম্ন গোষ্ঠীভুক্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী নয়। 

            উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত করা যায় যে,উচ্চবর্ণ এবং নিম্নবর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে শিক্ষাগত অসমতা দেখা যায় তার প্রধান কারণ হল উচ্চ সম্প্রদায় কর্তৃক নিন্মবর্ণ সম্প্রদায়ের ওপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে শোষণ এবং অবিচার।

9. সমসুযোগ শিক্ষাব্যবস্থা সমস্যার সমাধান - 

১.জাতীয়করণ :- 

বর্তমানে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও বেসরকারি উদ্যোগ দ্বারা পরিচালিত।এখনো পর্যন্ত ভারতবর্ষে সকল বিদ্যালয়গুলিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনা যায় নি।বেসরকারি উদ্যোগকে শিক্ষাহ্মেত্রে কাজ করতে দেওয়া সংগত হবে না।একটি সংস্থার মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিচালিত হতে হবে এবং সেটি হবে রাষ্ট্রীয় সংস্থা।তাই শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয়করণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

২. Common School -

ভারতবর্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের এক অন্যতম পদক্ষেপ হল Common School বা সর্বসাধারনের জন্য বিদ্যালয়।এই বিদ্যালয় খোলার উদ্দেশ্য ছিল -

  • সব স্কুলে সবার জন্য সুযোগ থাকবে।
  • অভিভাবকদের সম্পদ বা অর্থের ওপর নির্ভর করবে না,করবে শিশু মেধা ও প্রতিভার উপর।
  • শিক্ষাব্যবস্থা হবে অবৈতনিক।
  • শিক্ষার মান সমান হবে।
৩. আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ -

এই শিক্ষাব্যবস্থা তৃতীয় পদক্ষেপ আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ করা।ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়,রাজ্য ও জেলা স্তরে শিক্ষার সুযোগ যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। রাজ্যগুলির শিক্ষা খাতে ব্যয়ের মাধ্যমে বৈষম্য দেখা যায়।উদাহরণস্বরূপ ভারতের শিক্ষা খাতে সবচেয়ে অধিক খরচ হয় কেরালাতে এবং কম খরচে উড়িষ্যাতে। শিক্ষাব্যবস্থা বৈষম্য দূর করতে হবে।জাতীয় স্তরে এই বৈষম্য দূর করতে ভারতের সরকারের দায়িত্ব থাকা বিভিন্ন রাজ্যগুলিতে সমানভাবে শিক্ষাবিস্তার হয় সেই দিকে নজর দেওয়া।যাতে সমানভাবে শিক্ষা বিস্তার হয় সেদিকে নজর দেওয়া।রাজ্যগুলিতে বিশেষ আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। 

৪. শিক্ষার সমসুযোগ বন্টন - 

ভারতের জাতীয় রাজ্য ও জেলা স্তরে ব্যতীত গ্রাম ও শহর অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে সমসুযোগের আয়ত্তে আনতে হবে। অর্থের ভিত্তিতে নয় প্রত্যেকটি শিশু তার মেধার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রবেশ অধিকার থাকবে।গ্রামাঞ্চল ও অনুন্নত এলাকাতে বিদ্যালয় করতে হবে।যাতে শিক্ষার জন্য কোন শিক্ষার্থী এক এলাকা থেকে অন্য এলাকাতে পরিব্রাজন করতে না হয়।

৫.নারী শিক্ষা ও প্রগতি - 

ভারতের নারী শিক্ষা ও প্রগতি উপর বিকৃত মানসিকতা রয়েছে।সেই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।আমাদের মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য এবং গৃহ পরিবেশে উন্নতির জন্য নারী শিক্ষা পুরুষদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন। কারণ শিক্ষিত জননী তার সন্তানকে কখনোই নিরহ্মর রাখতে চাইবেন না।সামাজিক ন্যায় স্থাপন ও পরিবার পরিকল্পনা জন্য নারী শিক্ষা একান্ত প্রয়োজনীয়। আধুনিক বিশ্বের নারীর ভূমিকা নিয়ে এবং সন্তানদের লালন পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধতা নেই, সে এখন নিজের ক্যারিয়ার নিজেই তৈরি করতে প্রয়াসী হয়েছে।সমাজের প্রতি বিকাশের পুরুষদের সঙ্গে পা মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে।যদিও এখনো পুরুষদের তুলনায় নারী শিক্ষা অনেক পিছিয়ে আছে,নিরক্ষর জনগণের মধ্যে একটি বড়ো অংশই মহিলা। তবে আশার কথা এই যে এই পার্থক্য অর্থাৎ নারী-পুরুষের মধ্যে শিক্ষার পার্থক্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। 

৬. অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা - 

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ৬-১৪ বছর বয়সের শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা হবে অবৈতনিক। যদিও এখনও ভারতের সমস্ত রাজ্যের এটি চালু হয়েছে। তবুও বহু রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করা হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ কেরালা, তামিলনাড়ু পশ্চিমবঙ্গের প্রভৃতি রাজ্যে নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এবং যোগ্য শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষাকে অবৈতনিক করা প্রয়োজন।চাহিদা অনুযায়ী এবং যোগ্য শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে Free Student ship দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও নমনীয় হওয়া প্রয়োজন।নথিভূক্ত দের মধ্যে শতকরা 30 জনকে Free Student Ship - এর আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।সাধারণভাবে সমাজের অনগ্রসর দের জন্য উচ্চশিক্ষা হবে অবৈতনিক অর্থাৎ তপশিলি জাতি,উপজাতি ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়,মহিলা এবং দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের বিনা বেতনে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা করতে হবে।

         শিক্ষা হ্মেত্রে অন্যান্য ব্যয় যেমন পুস্তক,টিফিন সরবরাহ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় দ্রব্য, বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম,যাতায়াতের ব্যয় বর্তমানে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা বিভাগকে Book Bank -এর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। UGC-এর জন্য অর্থ সাহায্য করবে। প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ অর্থ সাহায্য করা প্রয়োজন। 

৭. স্কলারশিপ ব্যবস্থা -

বর্তমান স্কলারশিপের ব্যবস্থা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।তবে এই কর্মসূচিতে বেশ কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসা প্রয়োজন। যেমন -

  • ১. স্কলারশিপ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন এবং শিক্ষার সর্বস্তরে এটা প্রয়োজন।
  • ২. স্কলারশিপ বা বৃত্তির ব্যবস্থা আরও কার্যকরী হবে যদি একই সঙ্গে শিহ্মার সর্বস্তরের এবং সর্বক্ষেত্রে কয়েকটি উচ্চমানের প্রতিষ্ঠার থাকে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানে প্রতিভা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের সুযোগ দেওয়া হয়।
  • ৩. বর্তমানে যেভাবে বৃত্তি দেওয়া হয় তা খুবই ত্রুটিপূর্ণ,বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে একটি তাচ্ছিল্য বা দয়া দেখানো মানসিকতা চোখে পড়ে এবং অনেক বিলম্বে প্রদান করা হয়।এই বিলম্বের কারণে বৃত্তি দানের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়।এর জন্য প্রয়োজন হল প্রশাসনের তৎপরতা এবং বিকেন্দ্রীকরণ করা যাতে কোনো ভাবে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পেতে অযথা বিলম্ব না হয়।
সাধারণ নীতি হওয়া উচিত ৫০% স্কলারশিপ "School Clusture" এর ভিত্তিতে প্রদান করা হবে এবং অবশেষে অবশিষ্ট ৫০% রাজ্যভিত্তিক দেওয়া হবে। শিক্ষা বিভিন্ন স্তরে নিন্মোক্তভাবে স্কলারশিপ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

১. নিম্ন প্রাথমিক স্তরে প্রয়োজন মতো শিশুকে উপযুক্ত পরিমাণে বৃত্তি দেওয়া হবে।
২. উচ্চ প্রাথমিক স্তরে থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উপরের দিক থেকে ২০% শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হবে।প্রতিটি ব্লকের অন্তত একটি করে উন্নত মানের মাধ্যমিক শিক্ষা স্থাপন করতে হবে, যেখানে ভর্তির ক্ষেত্রে একমাত্র মেধাই বিবেচিত হবে।প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণ করা হবে। 

৩. উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বর্তমানে যে সমস্ত কর্মসূচি আছে নিন্মোক্ত ভাবে তার পরিবর্তন আনতে হবে।- 

  • বৃত্তির সংখ্যা এবং পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে এবং অন্যান্য ধরনের সাহায্যের ব্যাপারে আরও উদার হতে হবে।
  • বৃত্তি প্রদানের যাতে বিলম্বিত না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
  • বৃত্তি নির্বাচনে আরও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি গ্রহণ প্রয়োজন।
  • বিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে।
  • লোন স্কলারশিপের ব্যবস্থা আরও প্রসারিত করতে হবে। স্কলারশিপের বা বৃত্তি দুই রকম হবে -i.যারা হোস্টেলে থাকবে তাদের শিক্ষার জন্য সমস্ত রকমের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ব্যয় বহন করতে হবে।যেমন টিউশান ফ্রী, পুস্তক, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি।ii.যারা বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে বা কলেজে যাতায়াত করবে তাদের জন্যও প্রধানত প্রত্যক্ষ - পরোহ্ম ব্যয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। 
শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কোনো সময় অন্যান্য ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে। যেমন - 

  • সম্ভব মতো হোস্টেল এবং স্কলারশিপ ব্যয় হ্রাস করার জন্য যাতায়াতের ব্যয় বহন করা প্রয়োজন।
  • Day Students কেন্দ্র এবং থাকার জায়গায় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আরও উদার হওয়া প্রয়োজন।
  • শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষার আংশিক ব্যয় নিজেরাই উপার্জন করতে পারে,সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
  • স্কলারশিপ প্রদানের ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
  • করেসপন্ডেস কোর্স,দূরশিক্ষা,মুক্ত শিক্ষা প্রভৃতি বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষায় সমসুযোগের কর্মসূচিকে আরও অক্সিজেন জোগাতে পারে। এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রথাগত শিক্ষার বিকল্প হিসাবে গড়ে উঠতে পারে।

10. মূল্যায়ন -

শিক্ষায় সমসুযোগ নির্ভর করে শিক্ষার সম্প্রসারণের উপর।এই সম্প্রসারণ বলতে বোঝায় - i.সংখ্যাগত সম্প্রসারণ, ii.সামাজিক সম্প্রসারণ, iii.গুণগত সম্প্রসারণ। সংখ্যাগত বিচারে প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ হল শিহ্মার সুযোগ সৃষ্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু স্বাধীনতার পর এক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে সামান্য। এক্ষেত্রে রাজ্য-রাজ্য,জেলা-জেলা ব্যবধান প্রকট হয়ে ওঠেছে।সামাজিক দিক থেকেও শিক্ষা সুযোগের ব্যবধান খুব প্রকট। তপশিলি জাতি, উপজাতিরা এখনও সাধারণ শ্রেনী থেকে অনেক পিছিয়ে। নারীরা সমাজের বেশিরভাগ স্তরে পুরুষদের থেকে শিক্ষা সুযোগের ব্যবধান খুব প্রকট। সরকার এই অসম দূর করার চেষ্টা করেছে,কিন্তু আশা অনুরূপ সাফল্য আসে নি। দেখা যাচ্ছে তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে যারা আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল তারা এই সুযোগ সুবিধাগুলি ভোগ করছে অন্যদিকে যারা প্রকৃত পশ্চাৎপদ তপশিলি জাতি,উপজাতি এবং পশ্চাৎপদ তারা পশ্চাৎপদ দিকেই থেকে যাচ্ছে।

         শিক্ষার সুযোগের সমতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুণগত দিকটিও বিচার্য বিষয়। সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা যে মানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে,সেই তুলনায় সাধারণ দরিদ্র শ্রেণী,তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান অনেক নীচু।বিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়।জাতীয় সরকার আজ এই বৈষম্য দূর করার সুপারিশ গুলি কে কার্যকর করে উঠতে পারে নি। সরকার সর্বস্তরে শিক্ষা সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারছে না।কারণ শিক্ষা এখনও বেসরকারি নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

11. উপসংহার -

পরিশেষে বলা যেতে পারে, সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায়।শিক্ষাব্যবস্থায় সকলের জন্য সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই আইনের যে ফাঁকি বা সমস্যাগুলি রয়েছে সেগুলি সমাধান করা এত সহজ নয়।আমাদের ভারত সরকার ভবিষ্যতে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমসুযোগ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো বেশি কার্যকরী করে তুলবে।কোঠারি কমিশনের মন্তব্যটি তাই সত্যি হয়ে উঠেছে যে " Like all ideas in life perfect equality of educational opportunity is probably unattaintable " এসব সত্ত্বেও আমাদের থেকে থাকলে চলবে না।সুসংহত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে,শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে দিকে।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post