SOCIAL SCIENCE HISTORICAL AND PHILOSOPHICAL OVERVIEW OF METHODS AND GOALS

SOCIAL SCIENCE HISTORICAL AND PHILOSOPHICAL OVERVIEW OF METHODS AND GOALS

SOCIAL SCIENCE HISTORICAL AND PHILOSOPHICAL OVERVIEW OF METHODS AND GOALS

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Social Science : Historical And Philosophical Overview Of Methods And Goals

BENGALI VERSION
SOCIAL SCIENCE HISTORICAL AND PHILOSOPHICAL OVERVIEW OF METHODS AND GOALS

1. ভূমিকা -

মানব জীবনের মানুষের দুটি প্রধান সত্তা হল ব্যক্তিসত্তা এবং সামাজিক সত্তা। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী তার এই ব্যক্তিসত্তা ও সামাজিক সত্তার বিকাশ ঘটে। শিক্ষার্থীর সামাজিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যে সামাজিক সত্তা বিকাশ সংঘটিত হয় তাতে সহায়তা করে সমাজ বিজ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়গুলি, যেমন - ইতিহাস,ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান,সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান,নৃ-বিজ্ঞান ইত্যাদি। মানবজাতির সামগ্রিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক উপলব্ধি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয়গুলি মানব শিশুর যেহুতু বংশগত বস্তু হিসেবে পূর্বপুরুষ থেকে অর্জন করতে পারে না। তাকে তার নিজের জীবনের অস্তিত্ব প্রচেষ্টা সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক গুলি অর্জন ও উপলব্ধি করতে হয় শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন কালে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলি মাধ্যমে তা সম্ভব করে তোলে। নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা লাভ, দৃষ্টিভঙ্গি  গঠন, চরিত্র গঠন, নৈতিক মূল্যবোধ, সৃজনী ক্ষমতার বিকাশ, সৌন্দর্যবোধের বিকাশ, ও উপলব্ধি সবি ঘটে উপরোক্ত বিষয়গুলি চর্চার মাধ্যমে। সমাজ বিজ্ঞানের এই গুরুত্বের কথা স্বীকার করে বিষয় এবং বিষয় গুচ্ছ হিসেবে সমাজ বিজ্ঞান কে আমরা এই অধ্যায়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

2. সমাজবিজ্ঞানের ধারণা -

মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে সমাজবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাস করা শুরু করেছিল নানা কারণে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেমন একটি সহজ ব্যাখ্যা গোষ্ঠীবদ্ধ যাযাবর সমাজের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ভর হয়ে জীবনযাপন হয়ে উঠেছিল। তার ফলে কৃষির সূত্রপাত এবং কৃষি প্রয়োজনে স্থিতিশীল সমাজ তৈরি হয়েছিল। আবার জৈবিক বাস্তুতান্ত্রিকদের মতে মানুষ বিক্ষোভ শাখা ছেড়ে মাটিতে বসবাস করতে শুরু করলে বিবর্তনের পরবর্তী ধাপে তাদের হাত দুটি মুক্ত হয়ে পড়ে এবং দুই পায়ের উপর ভর করে সোজা হয়ে চলাফেরা করার উপযোগী অঙ্গ সঞ্চালন গত পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে গর্ভধারণকাল কমে যায় এবং অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অনেক পরিণত ও অসহায় অবস্থায় মানব শিশু জন্ম হওয়ার ফলে মেয়েরা মাতৃত্বের দায়ে এক স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হয়। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব হয়।

           কিন্তু যে কারণেই হোক সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব হলেও তা কখনোই চর্চার বিষয় হয়ে ওঠেনি। আদিম মানুষ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে প্রকৃতির নানা বিষয় সম্বন্ধে কৌতুহলী হলেও তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন ছিল না। এমনকি প্রাচীন সভ্যতা গুলিতে যে রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল, সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্বন্ধে ও নির্দিষ্ট বিদ্যাচর্চার কোন প্রমাণ নেই। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের গঠন ও নীতি সম্পর্কে প্রথম নীতিগত ও তাত্ত্বিক সিদ্ধান্তের প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার অবদান। এথেন্স Plato র "Academy"-তে তার শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান শিষ্য অ্যারিস্টটলের নামই এই প্রসঙ্গে বলা যায়। সুতরাং সমাজতত্ত্ব সূচনা হবার পূর্বে এবং সমাজতত্ত্ববিদ সমাজবিজ্ঞানের কেন্দ্রীয় বিষয় হওয়ার পূর্বে সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে কোন সংজ্ঞা দেওয়া প্রশ্ন আসে নি। কারণ সমাজ গঠিত হলেও সমাজ যে একটি চর্চার বিষয় হতে পারে সেই ধারণা অনেক পরে আসে।

       সমাজ বিজ্ঞানের বিষয় গুলি তালিকা থেকে একটা কথা স্পষ্ট যে, সমাজবদ্ধ মানুষ সমাজের সঙ্গে তার সম্পর্কে আচরণ কুষ্টি ও সামাজিক বিকাশের নির্ণায়ক শক্তিগুলি সম্পর্কে যা কিছু মানবিক বিষয় আছে এবং তার চর্চার ফলে যে সমস্ত বিদ্যার উদ্ভব হয়েছে তাদের একত্রিত নামই সমাজবিজ্ঞান। সুতরাং সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা -

   " বিজ্ঞানের নিয়ম ও পদ্ধতি অবলম্বন করে মানুষ ও মানুষের সমাজ সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ের অনুসন্ধানের  সমস্ত একত্রিত বিদ্যার নামই সমাজবিজ্ঞান। (All the the disciplines engage into the investigation of all aspects of man and human society using scientific rules and methods are unified under the name of Social Science)"

সামাজিক বিজ্ঞান মানুষ ও সমাজের সম্পর্কে চর্চাকারী বিষয়গুলির সংমিশ্রণ। সামাজিক বিজ্ঞানের মূল ভাবগুলি নিচে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা। -

ক। এটি মানবিক সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করে ও অতীত এবং বর্তমানের ঘটনাকে পূর্ণ ব্যাখ্যায়িত করে।

খ। এটি মানবিক ক্রিয়া-কলাপ, সংস্কৃতি ও স্থানিক মিথস্ক্রিয়ার অনুসন্ধান করে।

গ। এটি মৌলিক সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন সম্পর্কে আলোচনা করে। 

ঘ। সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয় গুলি ব্যক্তির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক সঙ্গে জড়িত।

ঙ। এটি সামাজিক প্রকৃতি ও মানুষের পরস্পরের মধ্যে মিথস্ক্রিয়াকে তুলে ধরে।

3. সমাজ বিজ্ঞানের লক্ষ্য -

সমাজবিজ্ঞান হলো শিক্ষা ও সমাজের একটি সমন্বয়। সমাজবিজ্ঞান মূলত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত আলোচিত করে। সমাজবিজ্ঞানের প্রধানত সমাজ তথা মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞানের লক্ষ গঠিত হয়। সমাজ
বিজ্ঞানের নিম্নলিখিত লক্ষ্য গুলি হল -
  • সামাজিক ধারণার সম্পর্কে জানা।
  • সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানা। 
  • সামাজিক আদর্শ সম্পর্কে জানা। 
  • সামাজিক কর্মকাণ্ড গুলি আলোচিত করা।
  • সামাজিক সামগ্রিক বিষয় আলোচনা করা।
  • সামাজিক সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরুন করা।
  • সামাজিক নিয়ন্ত্রণ করা। 
  • সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানা।
4. সমাজবিজ্ঞানের ঐতিহাসিক মতামত -

ইতিহাসের জনক হেরোডেটাস ও থুকিমিডিসের সময় থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইতিহাস হল অতীত ঘটনার বিবরণ এবং ঐতিহাসিকের কাজ হলো এই বিবরণ লিপিবদ্ধ করা। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর পরবর্তী সময় এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঘটে এবং ইতিহাসকে বিজ্ঞান বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস শুরু হয়। ইতিহাস জীব বিজ্ঞান তা সর্বপ্রথম আলোকপাত করেন ভলতেয়ার, জার্মানি ঐতিহাসিক নেই বুরকের ইতিহাস সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পথ প্রদর্শন করেন। হেরোডোটাস ও থুকিমেডিস বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সর্বপ্রথম ইতিহাস লেখেন। তবে আধুনিককালে ঐতিহাসিকরা ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলে দাবি করেছেন।
বিজ্ঞানের নীতি - 
বিজ্ঞান চর্চার দ্বারা মানুষ একটি সাধারন সর্বজন গ্রাহ্য সিদ্ধান্তের সূত্রে হতে পারে। বিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত বা সূত্রগুলি প্রামাণ্য যোগ্য ও নির্ভুল বিজ্ঞানের সকল ভবিষ্যৎবাণী করতে সাহায্য করে এবং এর দ্বারা ভবিষ্যৎ কর্ণধার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ব্যবহারিক মূল্য গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানের আবেগ ও উচ্ছাস ও সংস্কারের কোন স্থান নেই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নৈব্যক্তিক। অ্যারিস্টোটলের মতে বিজ্ঞান হলো সাধারণ সত্যের অভিব্যক্তি।
ইতিহাস বিজ্ঞান : স্বপক্ষে যুক্তি -
১. পদ্ধতিগত দিক থেকে ইতিহাসকে বিজ্ঞানের পদবাচ্য বলে অভিহিত করা যায়। তথ্য সংগ্রহ তথ্যের বিশ্লেষণ গ্রহণ-বর্জন তত্ত্বসমূহের তোলোনা সংযোজন ও সংগঠনের পথেই তার সাধারন সিদ্ধান্তে উপনীত হন। ঐতিহাসিক ও একটি পদ্ধতি তথ্য বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত পথে অগ্রসর হন।
২. বৈজ্ঞানিক অনুমান এর সাহায্যে নতুন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং নতুন তথ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে পুরাতন সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। ঐতিহাসিক অনুমানের সাহায্যে পুরাতন তথ্যকে বাতিল করে নতুন তথ্য কে গ্রহণ করে।পদ্ধতিগত দিক থেকে ইতিহাসের মধ্যে বিজ্ঞানী বৈশিষ্ট্য রয়েছে,সুতরাং ইতিহাস বিজ্ঞান পদবাচ্য।
ইতিহাস বিজ্ঞান নয় : বিপক্ষে যুক্তি -
ইতিহাসের তথ্য ও বিজ্ঞানের তথ্য একরকম নয়।
১. বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য সংগৃহীত তথ্য সর্বদা দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রত্যক্ষ এবং পরীক্ষা যোগ্য। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য প্রত্যক্ষ নয়।তাই এগুলিকে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা যায় না।
২ ইতিহাসের তথ্য তুলনামূলকভাবে বিজ্ঞানের তথ্যের মধ্যে কতটা বাস্তব নয়। বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক বাস্তব বিষয় নিয়ে কাজ করলেও দুজনের বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইতিহাসের বাস্তবতা অদৃশ্য, বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা অদৃশ্য হলেও ফলশ্রুতিতে বারবার পরীক্ষা করা সম্ভব।
৩ ইতিহাস কোন না কোনভাবে অতীতকে আশ্রয় করে এবং সেই অতীত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবন ব্যাখ্যা করে। তাই ঐতিহাসিক তথ্য সমস্তটাই অতীতের। বর্তমানে সেই তথ্য নড়াচড়া করা,সেই তথ্য নিয়ে পরীক্ষা করার কোন উপায় নেই। বিজ্ঞানের তথ্য সৃষ্টি গ্রাহ্য ও পরীক্ষাযোগ্য হওয়ার এই তথ্য পরীক্ষাগারে বারবার পরীক্ষা করা যায় এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বা বারবার ঘটানো যায়। এবং একই ফল লাভ হয়।
৪ বৈজ্ঞানিক হলেন ভবিষ্যতের বক্তা। ঐতিহাসিক নন।
৫ বিজ্ঞান ব্যক্তি নিরপেক্ষ হয় কিন্তু ইতিহাসের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আবেগ রুচি অভিরুচি প্রভাব বিদ্যমান।
৬ বিজ্ঞানের তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় কিন্তু ইতিহাসের তথ্য পরস্পর সংশ্লিষ্ট।
৭ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সাধারণীকরণ সহজসাধ্য এবং এই সত্য সর্বজন স্বীকৃত। ইতিহাসের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের মতন সাধারণীকরণ সম্ভব নয়।

5. সমাজবিজ্ঞানের দার্শনিক মতবাদ - 

সমাজ বিজ্ঞানের দর্শন বিষয়টি জটিল ও বহুমুখী।কারণ বিশুদ্ধ দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যেমন সামাজিক বিষয়গুলিকে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে তেমনি সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানতত্ত্ব স্থির করে দেয়। সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রকৃতি, পদ্ধতি,যথার্থতার দিক নির্দেশ।সাধারণভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সম্পর্কে প্রাচীনতম বিতর্ক কেন্দ্রীভূত হয়েছিল একটিমাত্র প্রশ্ন ঘিরে - জ্ঞান সর্ব ব্যাপক বা সর্বজনীন কিনা?প্লেটো মনে করতেন সমস্ত প্রকৃত জ্ঞান সর্ব ব্যাপক সুতরাং অবরোহ যুক্তির মাধ্যমে একটি একক পৌঁছানো যাচাই বিজ্ঞান।তাই সাধারণভাবে নির্দিষ্ট তথ্য পৌঁছানো সাপেক্ষে যুক্তি দিয়ে প্লেটো অবরোহী যুক্তির মাধ্যমে যে জ্ঞান লাভ পদ্ধতি তা প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু অ্যারিস্টোটল তাঁর গুরুর এই যুক্তি খন্ডন করে আরোহী যুক্তি তথা অভিজ্ঞতাবাদের সাপেক্ষে সাওয়াল করেন। তাঁর মতে সমস্ত সত্যই সর্বজনীন হতে পারে না। সমাজের পক্ষে যা ভালো তা সমস্ত সমাজের পক্ষে ভালো নাও হতে পারে কিন্তু তা সত্ত্বেও ভালো টা ভালই থেকে যায়। গুরুর বিরোধিতা করার জন্য প্লেটোর মৃত্যুর পরই তিনি প্লেটোর Academy ছেড়ে চলে যান। কারণ তাকে প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয় নি। অতঃপর তিনি জীববিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং আলেকজান্ডারের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তাঁর পরবর্তী কাজগুলো সম্পন্ন করেন।যাই হোক অ্যারিস্টোটল মনে করেন জ্ঞান যেহুতু সর্ব ব্যাপক নয় সেহেতু বহুসংখ্যক একক অভিজ্ঞতা (পর্যবেক্ষণ) থেকে সাধারণ সত্যে পৌঁছানো যায় তাই জ্ঞান লাভের পদ্ধতি।

               দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জ্ঞানতত্ত্বের বিতর্ক থাকলেও সম্পর্কিত জ্ঞান সম্বন্ধে কোন বিতর্ক উপস্থিত হয় নি। কারণ সমাজকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে চর্চার কোনো ব্যবস্থা করা হয় নি।তবে প্রত্যক্ষবাদ জ্ঞানলাভের প্রধান উপায় ও বিজ্ঞান দর্শনের হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।বিশেষভাবে 1620 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত 'Novum organum ' গ্রন্থে ফ্রান্সিস বেকন আরোহী যুক্তিকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান লাভের পদ্ধতি হিসাবে  স্বীকৃতি পায়।আবার সপ্তদশ শতাব্দী থেকে নিউটনের সূত্র এবং কেপলারের সূত্র প্রথমে সর্ব ব্যাপক হিসাবে ধরে নিয়ে অবরোহী যুক্তি সাহায্যে এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সূত্রগুলি সার্বজনীন সভ্যতা প্রমাণিত হয়। পরবর্তীকালে এই দ্বিতীয় পদ্ধতি Hypothetieo Deductive নামে পরিচিত হয়।অর্থাৎ তখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান লাভের পদ্ধতিগত বিতর্কের মীমাংসা নিঃসংশয়ে হয় নি। 

প্রত্যক্ষবাদ -

সমাজ সম্পর্কিত বিষয়ে চর্চার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল।এই সংশয় দূর করার কৃতিত্ব অর্জন করেন আগস্ট কোঁৎ। কিন্তু তার পূর্বে পর্যবেক্ষণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য তথ্যকে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উপাদান হিসাবে গ্রহণ করা স্বপক্ষে যারা নানাভাবে মত প্রকাশ করেন এবং অভিজ্ঞতাবাদ কে একটি দার্শনিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁদের মধ্যে Rene Descartes,Gorifried Wilhelm leibnitz,John Locke প্রমূখ ছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ দার্শনিক George Berkeley,David Hume,David Hariley এবং অন্যরা বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও দর্শন হিসাবে অভিজ্ঞতাবাদকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। দার্শনিক পরিভাষায় প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভের এই পদ্ধতি প্রত্যক্ষবাদ নামে পরিচিত।আগস্ট কোঁৎ 1938 খ্রিস্টাব্দে Positivism কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।তিনি 'La Philosophic Positive' এবং তার পরবর্তী গ্ৰন্থাগুলিতে (মোট ৬টি) বিজ্ঞান ও সমাজবিদ্যার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেন। তার মধ্যে শেষ দুটি গ্রন্থের তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন সাধারণ বিজ্ঞানের পদ্ধতি সমাজবিদ্যার ক্ষেত্রে জ্ঞান লাভ করার পদ্ধতি হিসেবে গ্রাহ্য। তাঁর মতে প্রত্যক্ষ জ্ঞান কথাটির অর্থ মৌলিক,পর্যবেক্ষণলব্ধ, যৌক্তিক বিচারের পূর্ববর্তী অবিতর্কিত জ্ঞান।যুক্তি নির্ভর অনুমান বা বৌদ্ধিক বিচারের ভিত্তিতে অগ্ৰিম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে জ্ঞান হিসাবে গ্ৰাহ্য নয়।

বিবর্তনবাদ -

সমাজবিজ্ঞান সূচনা ও বিকাশে ক্ষেত্রে যে সমস্ত মতবাদ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল তার মধ্যে চার্লস ডারউইনের মতবাদ একটি প্রধান মতবাদ। বিবর্তন সম্পর্কিত বিস্তারিত ব্যাখ্যা 'Origin Of Species' প্রকাশিত হওয়ার পর আপাতদৃষ্টিতে জীবজগতের বিবর্তনের এবং জীব বৈচিত্রের যুক্তিও প্রমাণ সম্মত ব্যাখ্যা মনে হলেও একটি বিশেষ দৃষ্টি ভঙ্গি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।যার ফলে বিবর্তনের তত্ত্ব শুধুমাত্র জীব বিদ্যার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য মানবিক বিষয়গুলি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হতে থাকে। সমাজ সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে এই রকম একটি ক্ষেত্র।      

              কৃষ্টিমূলক বা সামাজিক নৃতত্ত্ব বিদ্যা বিশেষ বিবর্তনবাদী চিন্তাধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। প্রাণী জগতের মধ্যে মানুষ প্রজাতির উদ্ভব ও বিবর্তন নৃতত্ত্ববিদ্যা অন্যতম বিষয়, আদিম সমাজ ব্যবস্থার উদ্ভব সামাজিক রীতিনীতি,প্রথা,বিশ্বাস,নিয়মাবলী ইত্যাদি বিষয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার অভিমুখ অগ্রসর হয়েছে তা বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য Ethology ও Ethoography নামক শাখাগুলি বিকাশ লাভ করেছে।

প্রয়োগবাদ -

John druwy প্রয়োগবাদী দার্শনিক হিসেবে শিক্ষা তত্ত্বের ইতিহাসে বিখ্যাত। তিনি বিদ্যালয়কে বলেছেন বিদ্যালয় হল সরলাকারে পরিস্রুত সমাজ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে সামাজিক বিকাশের সুতিকাগারে, গণতান্ত্রিক জীবন চর্চার মাধ্যমে শিক্ষা ও গণতান্ত্রিক বিকাশ সমার্থক হয়ে ওঠে। সমাজের ব্যক্তির ভূমিকা শুধুমাত্র সামাজিক কাঠামোতে অভিযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির সমাজায়ন ঘটানো নয়। সমাজ ও ব্যক্তির ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে উভয়ের মধ্যে যে অগ্রগতি বা পরিবর্তন ঘটে তাই প্রকৃত ও সমাজ প্রক্রিয়ার। গণতান্ত্রিক জীবন-যাপনে যে সমাজ জীবন তিনি সেটিই প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করেছেন। সেই কারণই শিক্ষা ও জীবনকে তিনি সমার্থক বলে মনে করেন। 
      প্রয়োগবাদী অনুযায়ী, সামাজিক অভিজ্ঞতা কোনো একমুখী প্রক্রিয়া নয়। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমাজকে আত্মস্ত করে আবার তারা পরিপ্রেক্ষিতে পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের বিচার করে।সুতরাং সামাজিক অভিজ্ঞতার কোনো চরম মূল্য নেই। সমাজ যেন জীবনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার গবেষণাগার। এই দিক থেকে বিচার করে  দেখলে প্লেটোর সর্বজনীনতার পরিবর্তে অ্যারিস্টোটলের অভিজ্ঞতাবাদ ছায়া দেখতে পাওয়া যায় প্রয়োগবাদী চিন্তায়।পরবর্তীকালের আচরণবাদী চিন্তাধারার মূলত প্রয়োগবাদী দর্শনের ভিন্নতা বিকল্প প্রকাশ।

মার্কসবাদ -

মার্কসবাদ দ্বন্দ্বমূলক বিষয়বস্তু নামে পরিচিত। মার্কসীয় তত্ত্ব প্রধানত অর্থনীতি ও সমাজতান্ত্রিক তত্ত্ব হলেও এই মতবাদ শিল্প,সাহিত্য থেকে শুরু করে এত রকম ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছিল যে। কোনো বিশেষ একটি দার্শনিক মতবাদের অন্তর্গত বলে তার শ্রেণীবিভাগ করা কঠিন। কাল মার্কস প্রথমে জীবনে দার্শনিক হেগেল এর চিন্তাধারার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং Moses Hess এর দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অবিলম্বে হেগের এবং হেস -এর প্রভাবমুক্ত হয়ে সরাসরি নিজের তত্ত্ব নির্মাণ করেছিলেন, যা সমাজ বিজ্ঞান দর্শন হিসাবে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছিল কিন্তু এখনো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। মার্কসীয় তত্ত্বের প্রধান উপাদান শ্রম,শ্রমিক ও উৎপাদনভিত্তিক। সমাজ পরিবর্তন ঘটে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ প্রভাবে শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক উপাদান ভিত্তিক। তাঁর মতে ধণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উৎপাদন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার শ্রমিকের হাতে থাকে না। তার ফলে শ্রম বিনিয়োগ করেও শ্রমিক ক্রমশ শোষিত ও বঞ্চিত হতে থাকে এবং শেষপর্যন্ত সর্বহারা শ্রেণীর সৃষ্টি করে। শোষিত ও শোষকের দ্বন্দ্বের যে সংগ্রাম গড়ে ওঠে তাকে বলা হয়েছে শ্রেণিসংগ্রাম। রাষ্ট্র যেহেতু ধনিক শ্রেণীর প্রভুত্ব শ্রেণী-সংগ্রামের মধ্য দয়ে শেষ পর্যন্ত সর্বহারা বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং সর্বহারা শ্রেণীর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। উৎপাদিত ও প্রাকৃতিক সম্পদের সমভাবে বন্টিত হওয়ার জন্য শ্রেণিসংগ্রাম ও বিপ্লবী হাতিয়ার প্রকৃত সামাজিক সাম্য আগে বিপ্লবের মধ্যে দিয়েই শোষণের অবসান ঘটায়।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার শোষণের হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ধর্মের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিক্ষার উপাদান ও শ্রমিক শ্রমের একটি অত্যাবশ্যক অনুঘটক লক্ষণীয় বিষয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মহাত্মা গান্ধীর ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছিলেন তা ছিল উৎপাদনমুখী ও উৎপাদনভিত্তিক।
যাই হোক, সমাজ বিজ্ঞানের দার্শনিক প্রেক্ষাপটে সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি যেমন নিয়ন্ত্রণ করে তেমনি কোনো একটি সমাজের সমাজ বিজ্ঞান চর্চার ভিত্তি ও দিক নির্দেশ করে দেয়। 

6. উপসংহার -

সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজ সম্পর্কে আলোচনা। সমাজে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া দ্বারা সমাজ নির্মাণ বিবর্তন ও পরিবর্তন হয়। সো মাচ বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক ও লক্ষণ রয়েছে যা ঐতিহাসিক ও দার্শনিক মত আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক ও দার্শনিক মতাদর্শের নিরিখে সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানে ঐতিহাসিক ও দার্শনিক ভূমিকার ক্ষেত্রে অনুধাবনের ধারনার বিভিন্ন পার্থক্য বর্তমান। একটি সার্বিক তত্ত্ব হলো চিন্তার ইতিহাস। এটি দর্শনের বৃহত্তর ক্ষেত্রে এই উপবিষয় ক্ষেত্রটিকে স্থান দিতে পথ প্রস্তুত করে। দর্শন মূলক ধ্যান-ধারণা যখন আমরা সামাজিক বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি তখন তার শুনি প্রশ্নগুলি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সমাধান করার জন্য কাজ করে।








Post a Comment (0)
Previous Post Next Post