Mathematics In Day To Day Life

Mathematics In Day To Day Life

Mathematics In Day To Day Life||দৈনন্দিন জীবনে গণিত
BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Mathematics in day to day life
Mathematics in day to day life

(**ENGLISH VERSION FILE BELOW ARTICLE BY PDF FORMAT)

BENGALI VERSION

Mathematics In Day To Day Life

1. ভূমিকা -

গণিত বস্তুর একটি সুশৃংখল প্রয়োগ হিসেবে গৃহীত।এটিও বলা যেতে পারে যে যখন কোনো ব্যক্তি গণিত চর্চা করবে তখন তাকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই সুশৃঙ্খল ও নিয়মমাফিক হতে হবে।আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে যেমন বাজার,অর্থ পরিচালনা,বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে চর্চা ও আলোচনা ইত্যাদিতে গণিত হল একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে গাণিতিক ধ্যান-ধারণা ও দক্ষতা অনুধাবন করা একান্ত প্রয়োজনীয়।এই সকল দক্ষতা বিষয়টির শ্রেণীভূক্ত তা হল সংখ্যা ব্যবস্থা। গণিতের জ্ঞান সামাজিক টোকেন  হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।গণিত সকল সৃষ্টির একটি ক্ষেত্র যার সাহায্যে ছাড়া বিশ্বের অগ্রগতি অসম্ভব। যে কোনো পেশায় অন্তর্গত ব্যক্তি যেমন 'রাঁধুনি' বা 'কৃষক','ছুতোর' বা 'মিস্ত্রি', 'দোকানদার' বা 'ডাক্তার', 'ইঞ্জিনিয়ার','বিজ্ঞানী','সঙ্গীতজ্ঞ' বা 'মিউজিশিয়ান', সকলকেই তাদের দৈনন্দিন জীবনে গণিতের উপর নির্ভর করে করতে হয়।

2. গণিতের অর্থ ও সংজ্ঞা - 

• অর্থ -

গণিতর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Mathematics'।এই 'Mathematics' শব্দটির দুটি গ্রিক শব্দ 'Mathein' এবং 'Mathemata' থেকে উৎসারিত।'Mathein' শব্দটির অর্থ হল শিক্ষন করা এবং 'Mathemata' শব্দটির অর্থ হল শিহ্মনীয় বিষয়।'শিক্ষনীয় বিষয়' বলতে বোঝায় যা শেখার যোগ্য,যা শিখতে হয়, স্বাভাবিকভাবেই শেখার অঙ্গ হিসেবে যে গুলিকে আমরা গুরুত্ব দিই অর্থাৎ চিন্তা করতে পারা,বিচার বিশ্লেষণ করতে পারা,যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারা ইত্যাদি। গণিতের মধ্যে সেই গুনগুলি বর্তমান।প্রাচীন গ্রিস সহ বেশ কিছু দেশ এগুলিকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই 'গণিত' কে যেমন ভালবাসতে পেরেছিলেন তেমনি গণিত বিষয়ে তাঁদের চিন্তা-চেতনার অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন যে "গণিত হলো পরিমাণের বিজ্ঞান"। ভারতের জাতীয় শিক্ষানীতিতে (1986) সেই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে -

"Mathematics should reason, analyse, articulate, logically, a part from being a specific subject it should be treated as a concomitant to any subject involving analysis and meaning."

• সংজ্ঞা -

Locke গণিতের সংজ্ঞা দিয়েছেন "Mathematics is away to settle in the mind of children a habit of reasoning."

Marshall H Stone এর মতে, "Mathematics is the study of abstruct system built of abstract elements.These elements are not described in concrete fashion."

গণিতবিদ অধ্যাপক Voss এর মতে, " Our entire civilization depending on the intellectual penetration and utilisation of Nature has it's real foundation in the mathematical sciences."

Klein এর মতানুসারে," Mathematics in general is fundamentally the science of self evident things."

গণিতের একটি আধুনিক সংজ্ঞা - " সংখ্যা,প্রতীক, বিভিন্ন মাত্রিক আকার বিমূর্ত ধারণার অবকাঠামো ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক,গতি এবং কালের বিজ্ঞানই হল গণিত।"

3. গণিতের বৈশিষ্ট্যাবলী -

সমসাময়িক গণিতের একটি বৃহৎ সংখ্যক বৈশিষ্ট্যাবলি বর্তমান।তার মধ্যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যকে আমরা এক্ষেত্রে আলোচনা করতে পারি। - 

  • প্রয়োগযোগ্যতা ও কার্যকারিতা সম্পন্ন।
  • বিমূর্ততা ও সাধারণীকৃত প্রকৃতি। 
  • সারল্য।
  • যৌক্তিক শিক্ষা এবং সর্বজনগ্রাহ্য ব্যবস্থাপনা।
  • দ্ব্যর্থহীনতা ও যথার্থতা।

4. গণিতের উদ্দেশ্যাবলী - 

  • দৈনন্দিন জীবনে গণিতের অর্থ উপলব্ধি করতে পারা। 
  • দৈনন্দিন জীবনে গণিতের গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়। 
  • প্রত্যাহিক জীবনে গণিতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।
  • দৈনন্দিন জীবনে কার্যকরী ব্যবহার সম্পর্কে ধারনা পাবেন। 
  • দৈনন্দিন জীবনে গণিতের স্বরূপ জানতে পারবেন।

5. গণিতের গুরুত্ব - 

মানব সভ্যতার ইতিহাসের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে সুদুর প্রাচীনকাল থেকে গণিত মানুষের জীবনের নানান ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে।সেই গুরুত্ব গুলি হল। -

  • প্রতিটি মানুষের জীবনে গণিতের গুরুত্বকে অস্বীকার করার উপায় নেই।প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সংখ্যা গণনা করতে হয়,যোগ,বিয়োগ,গুন,ভাগ করতে হয়।সংখ্যা পরিমাণ,গুণগতমান,আয়তন, সময়,দূরত্ব এবং ভৌত আরও অন্যান্য দিকগুলি সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে আবশ্যিকভাবেই জানতে বা শিখতে হয়। 
  • পরিমাণ পদ্ধতিতে জানা এবং কার্যকরী করে তুলতে হলে গণিতের কতকগুলি বিশেষ বিশেষ মৌলিক দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে আবশ্যিক ভাবেই জানতে বা শিখতে হয়।পরিমাপ পদ্ধতিকে জানা এবং কার্যকরী করে তুলতে হলে গণিতের কতকগুলি বিশেষ বিশেষ মৌলিক দিক সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। 
  • গণিতের কতকগুলি মৌলিক জ্ঞান ব্যতীত কোনো ব্যক্তিই পরিবেশ সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার সুযোগ যেমন পাবেন না তেমনি পরিবেশ ঘটমান বিভিন্ন ঘটনার কার্যাবলীর বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। মানুষের চিন্তন ক্ষমতার গভীরতা বৃদ্ধি, যুক্তি শক্তির বিকাশ,মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মানুষ সহজে অর্জন করতে সক্ষম হত না। সুতরাং আমাদের কারো গণিতের ভালো লাগুক না লাগুক গণিতের মূল তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে।
  • গণিতের বিশেষধর্মী স্তরগুলিকে অতিক্রম করতে হলেও গণিত শেখা জরুরী।গণিতের শিক্ষার যত উচ্চস্তরের দিকে আমরা অগ্রসর হব ততই গণিত গুরুত্বপূর্ণ থেকে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
  • আধুনিক বিজ্ঞানের জগতে বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞান,জ্যোতির্বিজ্ঞান,রসায়ন বিদ্যা, প্রযুক্তিবিদ্যা,জীববিজ্ঞানের বহুদিককে প্রভাবিত করে চলেছে গণিতবিদ্যা।শুধু তাই নয় চিকিৎসাবিদ্যা,মনস্তত্ত্ব,বাণিজ্য এবং অর্থনীতির বিষয়কে বিশ্লেষণধর্মী করে তুলতে গণিতের গুরুত্ব রয়েছে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষার শুরুতেই গণিতের মতো উল্লেখযোগ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদানের যথেষ্ট কারণ আছে।

6. গণিতের প্রয়োজনীয়তা -

গণিতের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারলেই বোঝা যায় আমাদের জীবনে গণিতের প্রয়োজনীয়তা কতখানি। গণিতের প্রয়োজনীয়তার নানান দিকগুলি সংক্ষেপে নিম্নে উল্লেখ করা হল।-

  • আমাদের জীবনে গণনা,হিসাব,ক্রয়-বিক্রয় প্রভৃতি কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্য গণিতের দক্ষতা অর্জনের জন্য গণিতের মৌলিক ভাষাগুলি জানার দরকার আছে। 
  • পরিবেশের পরিমাণগত পরিবর্তন সাধনের জন্য যে পরিমাপ পদ্ধতির দরকার হয়,সেই পরিমাপ পদ্ধতির বিষয়টি আমরা জানার সুযোগ পাই গণিতের জ্ঞান থেকে। 
  • গণিত হল আমাদের মনের একটি শৃঙ্খলা রক্ষা করা বিষয়।এটি আমাদের সুস্পষ্টভাবে, সঠিকভাবে, সুনির্দিষ্টভাবে এবং মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের চিন্তা করতে শেখায়। 
  • যেহুতু গণিত প্রকৃতিগতভাবে যুক্তিভিত্তিক বিষয়, তাই এটি আমাদের মানসিক ক্রিয়াকে যুক্তি ভিত্তিক পরিচালিত করে।
  • কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে, সামান্যীকরণের স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে গণিতের সুনির্দিষ্ট নীতির অগ্রসর হয়।
  • গণিত আমাদের কল্পনাকে সমৃদ্ধ করতে এবং একটি বিমূর্ত স্তরে পৌঁছাতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে।
  • অর্থনৈতিক ক্রিয়া-কলাপকে সুনির্দিষ্ট রীতিতে অগ্রসর হতে সাহায্য করে গণিত নামক বিষয়টি।
  • একজন ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক সামর্থ্য এবং প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রকে পরিমাপ করতে গণিত অনেক সাহায্য করে। 
  • বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানের বিষয়ে গুলির উচ্চতর স্তরের শিখনের হ্মেএে গণিত একটি অপরিহার্য বিষয় হিসেবে ভূমিকা পালন করে।এই সমস্ত বিষয়গুলি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ কে স্পষ্ট করে তুলতে নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গণিতের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।
  • সমাজবিজ্ঞান ও অন্যান্য বিজ্ঞানের গবেষকদের নিকট গণিত একটি কার্যকরী বিষয় হিসেবে কাজ করে।বিশেষ করে রাশিবিজ্ঞান পদ্ধতিগুলিকে সঠিকভাবে করতে গণিতের জ্ঞান অতি অবশ্যই প্রয়োজন।

7. দৈনন্দিন জীবনে গণিত - 

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গণিতের ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপৃত,তাই কখনো কখনো তার প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয় না। নিম্নে প্রত্যাহিক জীবনের গণিতের প্রয়োগ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হল। -

১. গনিত ও মানব জীবনচক্র -

মানব জীবনের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে চক্রাকার দেখা যায়,তাতে গণিতের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।একটি শিশুর জন্মের সময় তার ওজনের পরিমাপ থেকে শুরু করে তার বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত মৃতদেহ কবরস্থ বা পুড়ানোর পরিমাণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই গণিতের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।

২. গনিত ও গৃহের নিত্যকর্ম -

প্রতিটি মানুষ জীবন শুরু হয় গৃহ পরিবেশে।গৃহ পরিবেশ  বা পরিবারই হল তার শিক্ষা লাভের প্রথম পরিবেশ।এই পরিবারকে কেন্দ্র করেই শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন গড়ে ওঠে।স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে শিশুকে যুক্ত থাকতে হয়।পারিবারিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্য প্রত্যহ্ম বা পরোক্ষভাবে সম্পাদন করতে গিয়ে ব্যক্তির গাণিতিক দহ্মতা বিকাশ ঘটে। ব্যক্তি শিশু শিশু বা শিশু শিক্ষার্থীর গানিতিক দক্ষতা লাভের ক্ষেত্রে গৃহ পরিবেশের নিম্নলিখিত দিকগুলির বিশেষভাবে সহায়তা করে।

  • খেলা হল শিশুর জীবনের অঙ্গ।এই খেলার অঙ্গ বা খেলনা হিসেবে শিশুকে দেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকার খেলনা দিয়ে তাদের বৈশিষ্ট্য,যেমন - রং,আকার ইত্যাদির ভিত্তিতে আলাদা করতে দিলে পৃথকীকরণের সময় সংখ্যার ধারণা,বস্তুর আকারগত ধারণা লাভ করতে পারে।এর থেকে গানিতিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হয়।
  • শিশুর বিভিন্ন ধরনের বস্তু নিয়ে নাড়াচাড়া করে, পর্যবেক্ষণ করে,সেগুলি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। এই সমস্ত বস্তুর মধ্যে রান্নাঘরের বস্তুকে নিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্ন নির্মাণ করে যেতে পারে,বিভিন্ন সাংকেতিক বার্তা লেখা যেতে পারে।
  • গৃহ পরিবেশে বড়োদের ব্যবহারের জন্য যে কম্পাস,চাঁদা,ত্রিকোণ প্রভৃতি জ্যামিতিক সরঞ্জাম থাকে সেগুলি নিয়ে শিশুরা খেলার সুযোগ পেলে গানিতিক ধারণাকে আবিষ্কারের সুযোগ প্রদান করা যেতে পারে। 
  • চিত্রাঙ্গন শিশুর খুব পছন্দের কাজ এবং খেলা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার সংক্রান্ত ধারণা(যেমন - বৃত্ত,ত্রিভুজ,চতুর্ভুজ,চোং (লম্বাবৃত্তাকার),শঙ্কু প্রভৃতি ধারনা) দেওয়া যেতে পারে।
  • শিক্ষার্থীদের মজা প্রদানকারী (শব্দগুলি শিশুদের আনন্দ দেয়) যোগের যন্ত্র(Adding Machine),(Roll's Multiply খেলা শিশুকে গাণিতিক ধারণা দেয়। Blackjack -এর মধ্যে এক প্রকার কার্ডের খেলা ও শিশুদের গণিত শিখনের যথেষ্ট সাহায্য করে। 
  • গৃহ পরিবেশে বাগান তৈরীর পরিকল্পনা,প্রজেক্ট নির্মাণের বিষয়,বিভিন্ন পারিবারিক ব্যবহার্য কেনা কাটা,ইলেকট্রিক বিল প্রদান,টেলিফোন বিল প্রদান সংক্রান্ত কার্যাবলী শিশুকে গাণিতিক দক্ষতা বিকাশের ক্ষেত্রে অনেকখানি সহায়তা করে।
  • গৃহ পরিবেশ বা পরিবারের এমন বহু জিনিসপত্র থাকে যেগুলি শিশুকে দেখা,চিন্তা-ভাবনা করতে দেওয়া প্রভৃতি সুযোগ প্রদান করতে হবে।এই সমস্ত জিনিসপত্র গুলির মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল স্কেল,চাঁদা কম্পাস,ঘড়ি, ক্যালকুলেটার,বিভিন্ন মাপের ফিতা(দৈঘ্য মাপের জন্য),থার্মোমিটার,ব্যারোমিটার,লুডোর ছক্কা, অ্যাবাকাস,পাজল বক্স,তাস, Rubik's cubes,বিভিন্ন ধরনের ব্লক, বিভিন্ন ধরনের ক্যালেন্ডার, গ্রাফ পেপার, মুদ্রা, বিভিন্ন আকৃতি ও গঠনের বীজ,মার্বেল,মানচিত্র গ্লোব, গণিতের কুইজ বই ইত্যাদি।

৩. গনিত ও খেলাধুলা -

খেলাধুলার জগতের গণিতের উপস্থিতি লক্ষণীয়।বিভিন্ন খেলার নিয়ম-কানুন খেলার মাঠের পরিমাপ,সরঞ্জামের পরিমাপ,মাঠ তৈরির পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন, খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নিয়মকানুন প্রস্তুতিতে গণিতের পর্যাপ্ত ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যে কোনো খেলার সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ,সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আলাপ-আলোচনার প্রতিটি ক্ষেত্রে গণিতের জ্ঞানকে কাজে লাগানো হয়।বস্তুত প্রায় সমস্ত খেলাতেই গণিতের ব্যবহার আছে।

৪. গণিত ও আয় -

একটি ব্যক্তি বাড়ির বাইরে যখন কাজ এবং ব্যবসায়িক কাজে বেরোবেন, তখন তার পেশার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাজ তাঁর আরও বেশি পরিশীলিত জ্ঞান প্রয়োজন।এই পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করার উপযুক্ত পারিশ্রমিক কোনো নিযুক্ত যে কোনো ব্যক্তিকেই গণনা করে দেখতে হবে।সে ক্ষেত্রে তাই গণিতের জ্ঞান আবশ্যিক।গাণিতিক জ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা না থাকলে যে কোনো ব্যক্তি অনায়াসে প্রতারিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

৫. গনিত ও ব্যাংকিং -

ব্যাংকের বহু মানুষের সমাগম ও তাদের অন্তর্ভুক্তি আবশ্যিক সেখানেও গণিতের উচ্চস্তরীয় জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়।যেহেতু প্রযুক্তি মাত্রাধিক উন্নতি ও বিকাশ লাভ করেছে তাই গণিত বিষয়টিও ক্রমশ আরও বেশি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

৬.গনিত ও বাজারব্যবস্থা -

গণিতে অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞান পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, একটি চায়ের কাপ ক্রয় থেকে শুরু করে উচ্চতর পরিশীলিত বৈদ্যুতিক দ্রব্য বা গাড়ি ক্রয় সর্বক্ষেত্রেই কোনো ব্যক্তি গণিতের ব্যবহারকে অস্বীকার করতে পারবে না।এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে মুদির দোকান,আসবার পত্র বা বিভিন্ন ওষুধ পত্র পন্য ক্রয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

৭. গণিত ও পরিবহন ব্যবস্থা - 

মানুষ তার কাজের জায়গা বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানের যাতায়াত,গাড়ি চালানো বা যে কোনো যানবাহনের ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে যেটি আবার ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।এই ভারসাম্য গাণিতিক জ্ঞান থেকেই উদ্ভূত হবে।যাতায়াত খরচ,প্রয়োজনীয় সময়, বহন যোগ্য সামগ্রী এগুলি সবই গাণিতিক গণনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

৮. গনিত ও অবসর যাপন -

অবসর যাপনের শিক্ষা ও শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য।এই অবসর যাপনের শিখনের মূল ভিত্তি হল শিক্ষার্থীদের অবসর জীবনকে উপযুক্ত কাজের দ্বারা সময় নির্বাহ করা।এই অবসর প্রয়োজন ব্যক্তি মানুষের দেহ ও মনের ক্লান্তিকে দূর করে আনন্দপূর্ণ অবস্থায় রাখা। গণিতের মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে,গণিত চর্চার মধ্যে যে আনন্দ আছে,সেটিকে যথাযথভাবে উপভোগ করতে হলে তা সম্ভব একমাত্র অবসর যাপনে ও গণিতের নিয়োজিত করা।গণিত চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অবসর বিনোদন হতে পারে স্বচ্ছন্দে।গণিতের বেশ মজায় মজায় অংক, ধাঁধা সংক্রান্ত কিছু,সমস্যার সমাধান, বড়ো বড়ো গণিতের সমস্যাকে ছোটো ছোটো আকারে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার কৌশল ইত্যাদি শিক্ষার্থীকে অনেকখানি আনতে দিতে পারে।গণিতের বিভিন্ন মজার মজার খেলা আছে। এইভাবে খেলা চ্ছলে গণিত শেখার আনন্দকে কার্যকরী করে তোলা সম্ভব অবসর সময়ে গণিতকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।

৯. গনিত ও সৌন্দর্য উপলব্ধি - 

মানুষ শুধুমাত্র তার জৈবিক চাহিদার নিবৃত্তির আর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যই শাস্তি সম্পূর্ণ হয় না।মানব জীবনের সার্থকতা পূর্ণতা পায় বিশ্ব প্রকৃতিতে রূপ-রস-গন্ধ সস্তোগের দ্বারা।এই বিশ্ব প্রকৃতির মাঝে যা কিছু বর্তমান তাকে সুন্দর ভাবে উপলব্ধি করা,তার নিজের অস্তিত্বের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করা মানব ব্যক্তিসত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।এই বিশ্ব প্রকৃতির সাম্রাজ্যের সর্বত্র যে অপরূপ সৌন্দর্য ধারা বিস্তৃত রয়েছে তাকে আবিষ্কার করা বা তাকে উপলব্ধি করা শিশুর সৌন্দর্যবোধ বিকাশের মূল উদ্দেশ্য।প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যকে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে গণিতের জ্ঞান ও তার ব্যবহার।তখন গণিত নিজেই হয়ে ওঠে আনন্দ লাভের উৎস।সৌন্দর্য উপলব্ধির হাতিয়ার প্রতিটি শিশুর মধ্যে যে নান্দনিক বোধের সত্তা সুপ্ত অবস্থায় থাকে - গণিতের চর্চার মাধ্যমে,গণিতের সাহায্যে সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তার রস আস্বাদন করে নান্দনিক সত্তাকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব।বিখ্যাত গণিতবিদদের অনেকেই গণিতকে সেই কারণে সৃজনশীল কার্যাবলির মধ্যে অন্তর্ভুক্তিতে বিবেচনা করেন।

8. দৈনন্দিন জীবনে গণিতের প্রভাব - 

  • মানুষের জীবনে অনেক বেশি নিয়মনিষ্ঠা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে ওঠে। 
  • গণিত চর্চা ফলে মানুষের জীবনের যুক্তিবাদিতা, সৃজনশীলতা, বিমূর্ত বা স্থানিকতার চিন্তাধারার, সমালোচনামূলক দৃষ্টিকোণ, সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বিকাশ পায়।
  • গণিত চর্চার ফলে মানুষ যোগাযোগমূলক দক্ষতা বিকাশ পায়।
  • গণিতের মাধ্যমে মানুষের স্থান,সংখ্যা,মাত্রা ও পরিমাপের ধারণা পাওয়া যায়। 
  • ব্যক্তির বৌদ্ধিক ক্ষমতা তথা উৎকর্ষতার বিকাশ পায়। 
  • মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে জীবনমুখী শিক্ষার দিকটিকে তাৎপর্য পূর্ণ করে তুলতে সহায়তা করে।
  • কোনো ব্যক্তি গণিত ছাড়া অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন না।

9. উপসংহার -

দৈনন্দিন জীবনে গণিতের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে যে, কোনো ব্যক্তি গণিত ছাড়া অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন না। দুর্ভাগ্যবশত স্কুলে এই বিষয়টির ব্যবহারিক দক্ষতা অত্যন্ত অবহেলা করা হয় ও সেই কারণে শিক্ষার্থীরা মনে যে ক্রমশ গণিতের প্রতি ভয় ও বিতৃষ্ণার জন্ম নিচ্ছে তা নিরসনের কোনো প্রচেষ্টাই গড়ে ওঠে নি। তারা দৈনন্দিন জীবনে গণিতের সর্বব্যাপী উপস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয় না বলেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। স্কুল গণিত শিহ্মনের অকার্যকারিতার মধ্যেই এর বীজ নিহিত আছে। এটি মানুষের জীবনে দৈনন্দিন প্রয়োগ বর্জিত একটি বিষয় হিসেবে স্কুলে পড়ানো হয় যে পদ্ধতির সংশোধনের একান্ত প্রয়োজন।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post