Nature And History Of Mathematics

Nature And History Of Mathematics

Nature And History Of Mathematics||গণিতের প্রকৃতি এবং ইতিহাস 

BENGALI VERSION||

Nature And History Of Mathematics
Nature And History Of Mathematics


BENGALI VERSION -

গণিতের প্রকৃতি এবং ইতিহাস

1. ভূমিকা - 

শিক্ষার একটি বিশাল ক্ষেত্র ব্যাপী বৌদ্ধিক বিকাশ হিসেবে গণিতকে মর্যাদা দেওয়া হয়‌।বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে গণিত একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তাই বিষয়টি অনুধাবনের জন্য গণিতের প্রকৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দরকার।শিক্ষক বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান,বাণিজ্য,শিল্প, ইতিহাস,ভূগোল ইত্যাদির সমস্যা সমুহ সমাধানের জন্য গণিতকে একটি অব্যর্থ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। গণিত এমন একটি বিষয় যার মধ্যে থেকে অসংখ্য সূত্র, উপপাদ্য এবং তাদের প্রয়োগ কৌশল এবং যার থেকে লব্ধ জ্ঞান অন্যান্য বিষয়জ্ঞানকে আয়ত্ত করতে অনন্য সহায়কের ভূমিকা পালন করে। তাই জীবনে ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গণিতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।

2. গণিতের অর্থ ও সংজ্ঞা - 

• অর্থ -

গণিতর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'Mathematics'।এই 'Mathematics' শব্দটির দুটি গ্রিক শব্দ 'Mathein' এবং 'Mathemata' থেকে উৎসারিত।'Mathein' শব্দটির অর্থ হল শিক্ষন করা এবং 'Mathemata' শব্দটির অর্থ হল শিহ্মনীয় বিষয়।'শিক্ষনীয় বিষয়' বলতে বোঝায় যা শেখার যোগ্য,যা শিখতে হয়, স্বাভাবিকভাবেই শেখার অঙ্গ হিসেবে যে গুলিকে আমরা গুরুত্ব দিই অর্থাৎ চিন্তা করতে পারা,বিচার বিশ্লেষণ করতে পারা,যুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারা ইত্যাদি। গণিতের মধ্যে সেই গুনগুলি বর্তমান।প্রাচীন গ্রিস সহ বেশ কিছু দেশ এগুলিকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই 'গণিত' কে যেমন ভালবাসতে পেরেছিলেন তেমনি গণিত বিষয়ে তাঁদের চিন্তা-চেতনার অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন যে "গণিত হলো পরিমাণের বিজ্ঞান"। ভারতের জাতীয় শিক্ষানীতিতে (1986) সেই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে -

"Mathematics should reason, analyse, articulate, logically, a part from being a specific subject it should be treated as a concomitant to any subject involving analysis and meaning."

• সংজ্ঞা -

Locke গণিতের সংজ্ঞা দিয়েছেন "Mathematics is away to settle in the mind of children a habit of reasoning."

Marshall H Stone এর মতে, "Mathematics is the study of abstruct system built of abstract elements.These elements are not described in concrete fashion."

গণিতবিদ অধ্যাপক Voss এর মতে, " Our entire civilization depending on the intellectual penetration and utilisation of Nature has it's real foundation in the mathematical sciences."

Klein এর মতানুসারে," Mathematics in general is fundamentally the science of self evident things."

গণিতের একটি আধুনিক সংজ্ঞা - " সংখ্যা,প্রতীক, বিভিন্ন মাত্রিক আকার বিমূর্ত ধারণার অবকাঠামো ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক,গতি এবং কালের বিজ্ঞানই হল গণিত।"

3. গণিতের উদ্দেশ্যাবলি - 

  • গণিতের বিভিন্ন প্রকার তত্ত্ব,সূত্র ও উপপাদ্য কে পরীহ্মায় সাহায্যে দহ্মতা অর্জন করা।
  • শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করা। 
  • গণিত পরীহ্মাগারে বিভিন্ন শিহ্মন - শিখন প্রদীপন ব্যবহারের দহ্মতা অর্জন করা।
  • বিভিন্ন গাণিতিক তত্ত্ব ও ধারনার সত্যতা যাচাইয়ের দহ্মতা অর্জন করা। 
  • অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে ঘটনাকে বাস্তব রূপদান করা।
  • সমস্যাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তার সমাধানের পথ বের করা।
  • শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা।
  • গণিতে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন করা।

4. গণিতের প্রকৃতি - 

জ্ঞানের প্রতিটি বিষয়ের মতো গণিতের নিজস্ব স্বরূপ বা প্রকৃতি আছে।গণিতের এই স্বরূপ বা প্রকৃতি গণিতকে অন্যান্য বিষয় থেকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে।গণিতের প্রকৃতি উপলব্ধিতে লক্ষনীয় বিভিন্ন দিকে নিন্ম লিখিতভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। -

  • গণিত হল একটি বিজ্ঞান যেখানে স্থান, সংখ্যা, মাত্রা ও পরিমাপ গুরুত্ব পায়।
  • গণিতের স্বতন্ত্র ভাষা বর্তমান।গণিতের সাংগঠনিক উপাদান গুলি হল - গাণিতিক শব্দ,সূত্রাবলি, তত্ত্বাবলী,নীতি,প্রতীক,গাণিতিক ধারণা ইত্যাদি।
  • সৃসংজ্ঞয়িন, কার্যকারিতা এর সুস্পষ্টতার দ্ধারা গণিতের ভাষা প্রতিষ্ঠা পায়। 
  • ব্যক্তির ইচ্ছা,আবেগ,আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদির দ্বারা গণিত প্রভাবিত হয় না।
  • মুক্তির দ্ধারা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বিজ্ঞান  হিসেবেই গণিত নিজের পরিচয় তুলে ধরে। 
  • ব্যক্তির বৌদ্ধিক ক্ষমতা তথা উৎকর্ষতার ওপর গণিত নির্ভরশীল 
  • গণিত হল সুসংবদ্ধ,প্রণালী বদ্ধ,যুক্তিভিত্তিক এবং যথাযথ বিজ্ঞানের একটি শাখা। 
  • গণিতের প্রণালী বদ্ধ ভাষা ও চিন্তাধারার ব্যবহার সংক্ষিপ্ত হলেও তা দ্ব্যর্থহীন।
  • গণিতের ভিত্তি দৃঢ় হয় তার নির্ভূলতা,নিশ্চয়তা ও প্রয়োগ ধর্মিতার দ্ধারা। 
  • বিজ্ঞানের যথার্থ উপলব্ধিতে গণিত সহায়তা অনস্বীকার্য,বিশেষ করে ভৌতবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে গণিত ছাড়া প্রকৃত ধারণা লাভ সম্ভব নয়, এজন্য বলা হয়ে থাকে 'Mathematics' is the language of Science'.
  • ভৌতবিজ্ঞান (পদার্থবিদ্যা,রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি) ছাড়াও জীববিজ্ঞান,ভূ-বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান সমেত অন্যান্য অনেক নতুন নতুন বিজ্ঞানের বিষয়গুলির অনুধাবন এবং উন্নতিতে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।

5. গণিতের ইতিহাস -

'গণিতের ইতিহাস' কথাটির অর্থ গণিতের জগতে সংঘটিত অতীত ঘটনাবলী থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত গণিতের ধারাবাহিক বিকাশ সম্পর্কে অত্যন্ত সুসংহত অনুশীলন।ইতিহাস হল একটি অনুসন্ধানী আলোকরেখা বা মূল উৎস,বিকাশধারা এবং সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন সময়ে মানুষের অবদান সম্পর্কে আমাদের এক মহান সত্যের সাধন সন্ধান দেয়।এটি অতীত প্রজন্মের সংস্কৃতি,ঐতিহ্য,চিন্তাধারার আলোকপাত করে।এটি শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে এবং জ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখার গুণাবলিকে উদ্ভাবন করে যার নাম গণিত।গণিতের ইতিহাস শিক্ষার্থীকে বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জনে সাহায্য করে এবং স্বাতন্ত্র দেয়।

             বহু জ্ঞানী ব্যক্তি তাঁদের অবদান দ্বারা গণিতকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন উপায়ে সম্বৃদ্ধ শাখায় রূপান্তরিত করেছেন। তাঁরা গণিতের বিভিন্ন সূত্র,যুক্তি,নিয়মাবলি সৃষ্টি করেছেন, বিকশিত করেছেন এবং গণিতের সৌন্দর্যায়ণ নির্মাণ করেছেন। তাঁদের অবদানে তৈরি হয়েছে গণিতের নিজস্ব সংস্কৃতি।গণিতের ইতিহাসে ভারতীয়,চীনদেশীয়,আরবীয় এবং গ্রিকদের নাম অবিস্মরণীয়।

• প্রাচীন যুগ -

প্রাচীন যুগের গ্রিক কয়েকজন ব্যক্তি গণিতজ্ঞের নাম নিচে উল্লেখ করা হল। - 

পিথাগোরাস (540 খ্রিস্টপূর্বাব্দে) গণিতের পিথাগোবিয়ান প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন ও প্রখ্যাত পিথাগোরাসের উপপাদ্য প্রণয়ন করেন।

হেলেনীয় যুগের দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে ভৌতবিজ্ঞানের চর্চা করা হয়।এই ভৌতবিজ্ঞানের তত্ত্বচর্চার কেন্দ্রে ছিল গণিত।গণিতচর্চার সূত্র ধরে জ্যামিতি চর্চার প্রসারন ঘটে। এটি সুশৃঙ্খল রূপও নেয়। হেলেনীয় যুগের গণিতকে এক সুশৃঙ্খল রূপদান করার কাজটি সম্পন্ন করেন ইউক্লিড (প্রায় 300 খ্রিস্টপূর্বাব্দে) তিনি গণিতের একটি প্রধান অংশকে একটি ঐক্যবদ্ধ সূত্রে গ্রথিত করে অপরূপ জ্ঞান সৌধনির্মাণ করেন। এই সৌধটি সিদ্ধান্ত ও স্বতঃসিদ্ধের ওপর র্নিমিত হয়। গণিতের গুরুত্ব কতখানি তার উপলদ্ধি করা যায়,এইভাবে যে,জ্যামিতি শেখাতে গেলে এখনও ইউক্লিড কোন আকারের অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

আর্কিমিডিস (225 খ্রিস্টপূবাব্দে) যিনি সর্বকালের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে অন্যতম।তিনি পদার্থবিদ্যার মৌলিক সূত্র,ক্ষেত্রফল ও আয়তনের সূত্র আবিষ্কার করেন।

টলেমি (125 খ্রিস্টপূবাব্দে) কেন্দ্রে পৃথিবীকে স্থাপন করে একটি গোলক মডেল প্রস্তাব করেন। তাঁর তত্ত্ব যদিও কোপার্নিকাসের তত্ত্বের দ্বারা সমালোচিত ও প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।

• মধ্যযুগ -

মধ্যযুগের এক বিখ্যাত গণিতবিদ হলেন লিওনার্দো ফিবানাচ্ছি। তিনি 1202 সালে ইউরোপে আরবী সংখ্যা মালায় প্রবর্তন করেন।এই সংখ্যামালা কাজে লাগাতে প্রধানত বাণিজ্যিক হিসাব রক্ষণের ক্ষেত্রে।পাটিগণিতের যে চারটি প্রক্রিয়া আগে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের নিকট বোধগম্য ছিল তা মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রশিক্ষণের অঙ্গ হয়ে ওঠে।

            মুসলিম অধ্যুষিত দেশ গুলিতে মধ্যযুগের গণিত বিস্তার লাভ করে। 825 খ্রিস্টাব্দে অল-খোয়ারিজমি লিখিত ' কিতাব-অল-জার-অল-মুকাবলা ' গ্রন্থটি বাগদাদে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ছিল।এই গ্রন্থটি ইউরোপে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং এর থেকেই বীজগণিতের শব্দটি উত্থান হয়।

• আধুনিক যুগ(1500 খ্রিস্টাব্দ-1800 খ্রিস্টাব্দে) -

রেনেসাঁসের যুগে নব বিকশিত গণিতের উপর দখল ছিল গ্যালিলিও এবং কেপলারের।গণিতের বিভিন্ন শাখা গুলি এই সময় বিকশিত হয়।সেগুলি নিচে দেওয়া হল -

• ত্রিকোণমিতি -

ত্রিকোণমিতি সম্পর্কে সর্বপ্রথম ইউরোপীয় পাঠ্যপুস্তক রেজিওমেন্টনাসের দ্বারা 1464 খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয়।1530 থেকে 1600 খ্রিস্টাব্দ এই সময়কালে সুনির্দিষ্ট ত্রিকোণমিতির টেবিল,ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে সমীহ্মন পদ্ধতি এবং ত্রিকোণমিতির সম্পর্কগুলির গাণিতিক বিশ্লেষণ বিকশিত হয়।

• বীজগণিত -

1540 - 1603 খ্রিস্টাব্দের সময়কালের গণিতবিদ ভিয়েতা বীজগণিতের যাবতীয় যুক্তি প্রয়োগকে প্রতীক নির্ভর করে তুলে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন। বীজগণিতের সঙ্গে সঙ্গে ত্রিকোণমিতিতে ও কী জ্ঞাত কী অজ্ঞাত উভয় রাশির জন্য তিনি অহ্মর ব্যবহার করেন।1585 খ্রিস্টাব্দে সিম স্তেভ্যাঁ (1548 - 1620 খ্রিস্টাব্দে) দশমিক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।  

• লগ্যারিদম - 

1614 খ্রিস্টাব্দে নেপিয়ার লগ্যারিদমের প্রস্তাবনা উদ্ভব করেন।পরবর্তীকালে 1620 - 1625 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লগ্যারিদক টেবিল এবং কয়েকটি সূত্র গণনার সরঞ্জাম হিসাবে বিকশিত হয়। 

• বৈশ্লেধিক জ্যামিতি -

1630 থেকে 1640 খ্রিস্টাব্দে সময়কালে রেনে ডেকার্ট  এবং পিয়ের ফার্মেট ফার্টেজীয় বিশ্লেষণমূলক ব্যবস্থাপনাকে বিকশিত করেন।বীজগণিত ও জ্যামিতিক এই সময় সংশ্লেষিত হয়।

• ক্যালকুলাস -

 ব্যাবিলনীয় পূর্বসূরীদের থেকে শুরু করে।ইউডক্সাস এবং আর্কিমিডিসের অনুসরন একের পর এক গণিতজ্ঞরা তে কাজ চালিয়ে আসছিলেন তার চূড়ান্ত রূপ পরিগ্রহ করে নিউটনের মধ্যে।সতেরো শতকে ফের্মা এবং দের্কাতে -এর হাতে ক্যালকুলাস অতিক্রম অনেক দূর পর্যন্ত অগ্ৰগতি লাভ করে।ক্যালকুলাসকে আমরা যে রূপে চিনি,সেই বিশেষ রূপটি দিয়েছিলেন লেবনিজ (1646 - 1726) সুতরাং ক্যালকুলাসের বিকাশে নিউটন এবং লেবনিজ উভয়েই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।ক্যালকুলাস যেটি বৈজ্ঞানিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য একটি সক্রিয় সরঞ্জাম,সেটি গণিতের ইতিহাসে উন্নয়নের মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত।

6. ভারতবর্ষের গণিতের ইতিহাস -

ভারতীয় সভ্যতার মতোই গণিতের ইতিহাস প্রাচীন। মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পা সভ্যতার যুগে গণিতকে উন্নয়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হত। 

• প্রাচীন যুগ -

3000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 600 খ্রিস্টপূর্বাব্দ ভারতবর্ষে গণিতের উন্নয়ন ছিল ক্রম প্রসারণশীল। হরপ্পায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মূলত ইট প্রস্তুতকরণ শিল্প হল গাণিতিক সূত্রের গবেষণার ফলাফল ও তার প্রয়োগ। শুক্ল যজুর্বেদ যজ্ঞের জন্য পূজাবেদির  জ্যামিতিক কাঠামো সম্পর্কে আলোচনা করে।শাল্ব সূত্রে চারজন লেখকের নাম করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বৌদ্ধান(600 খ্রিস্টপূর্ব),মানাব(750 খ্রিস্টপূর্ব),অপস্টম্ব(600 খ্রিস্টপূর্ব),কাত্যয়ন(200 খ্রিস্টপূর্ব)।এই সূত্রগুলি পিথাগোরাসের প্রখ্যাত উপপাদ্য সংবলিত।এতে অমুলদ সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়েছিল। 

               বৈদিক গণিতের মতোই,গণিতের জৈন ধারনা ও ধর্মতত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল।জৈন দর্শন অসীম সংখ্যা এবং সংখ্যাতত্ত্বের ধারণাকে প্রতিফলিত করে যেটি ভগ্নাংশকে গননা করে।এটি 600 খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সস্তুত হয়। বৌদ্ধ যুগে কোনোরকম স্থানিক মূল্যের বিকশিত হয়।600-1000 খ্রিস্টাব্দে দেবনাগরী সংখ্যা মন্থরগতিতে বিকশিত হয়।এই সময়ই ভারতবর্ষে স্থানিক মূলক ও দশমিক ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়।

• মধ্যযুগ - 

500 থেকে 1200 খ্রিস্টাব্দে হল ভারতবর্ষে গণিতের চিরায়ত যুগ।এই সময়ের ভারতীয় গণিতজ্ঞ ছিলেন।আর্য ভট্ট(500 খ্রিস্টাব্দ),ব্রক্ষ্মগুপ্ত(700 খ্রিস্টাব্দ),ভাস্কর(900 খ্রিস্টাব্দ),মহাবীর (900 খ্রিস্টাব্দ),আর্যভট্ট-2(1000 খ্রিস্টাব্দ),ভাস্করাচার্য বা ভাস্কর-2(1200 খ্রিস্টাব্দ)।

               গণিতের গবেষণার দুটি কেন্দ্র পাটলিপুত্রের কাছে কুসুমপুর এবং উজ্জয়িনীতে স্থাপিত হয়েছিল। আর্যভট্ট(500 খ্রিস্টাব্দ) রৈখিক সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।তিনি তার দশমিক স্থানের ক্ষেত্রে পাই এর আনুমানিকতার প্রস্তাব করেন। তাঁর কার্যাবলি ত্রিকোণমিতির সঙ্গে সম্পর্কিত সেটি জ্যা -এর কার্যের মানের টেবিলকে অন্তর্ভুক্ত করে।

                  আর্যভট্টের মতো,ব্রহ্মগুপ্ত জ্যোতি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন।তিনি লীলাবতী (1200 খ্রিস্টাব্দে) নামে একটি বই এর প্রণেতা তিনি।আর্যভট্ট দ্ধারা প্রস্তাবিত কুট্টাক এর ধারণাকে পরিস্রুত করেন।দক্ষিণ ভারত ও গণিত বিকশিত হয় এবং চতুর্দশ শতকের দাক্ষিণাত্যের কয়েকজন বিখ্যাত গণিতজ্ঞ কর্নাটকের মহাবীর,কেরালায় মাধব।মহাবীর ' গণিত সারসংগ্ৰহ ' গ্রন্থটি রচনা করেন এবং মাধব গণিতের একটি শিক্ষাহ্মেত্রে প্রস্তুত করেন।প্রাচ্যের গণিতের একই রকমভাবে আকর্ষক 'প্রাচীনকাল থেকেই' ভারতবর্ষে গণিতের শিক্ষার ও তার গবেষণার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে

• আধুনিক যুগ -

প্রাক-ঔপনিবেশিক কালে পাঠশালায় গ্রামের একমাত্র পন্ডিতই গণিত বিষয়ে শিক্ষাদান করতেন।প্রাধান্যকারী ব্যবস্থা সেই সময়ে অনুসরণ করা হত।এই ধরনের পাঠ্য প্রক্রিয়ায় কার্যকারিতা ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল এবং তাই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের বস্তুবাদী ও সামাজিক জগতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।গাণিতিক দক্ষতার সঙ্গে সম্পর্কিত ধাধা লোকাচারবিদ্যা ছিল সাধারণ।তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল যে প্রতিদ্ধন্ধী দহ্ম শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও তার পরিমাপ সম্পর্কে প্রশিহ্মিত করা।অভিজাত শ্রেণী নয়,শিক্ষা ও গাণিতিক অনুশীলন যেমন - গণনা,পরিমান,পরিমাপ,আনুমানিক হিসেব ও অন্যান্য বাণিজ্যিক অনুশীলনের সঙ্গে শ্রমজীবি ও অনগ্ৰসর শ্রেনি অনেক বেশি পরিচিত ছিল।উচ্চ স্তরীয় অংশে শিহ্মনের বিভিন্ন শাখা।যেমন - লজিক, কম্পিউটেশনাল,অ্যাস্ট্রোনামি,বীজগণিত সম্পর্কে পাঠদান করা হত।এমনকি ইউক্লিড ও টলেমির তত্ত্বও অজানা ছিল না।

                 ব্রিটিশরা গণিতের ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে গ্রহণ করেছে যেখানে ইউরোপীয় গণিতকে তাঁরা নিকৃষ্ট হিসেবে বিবেচনা করেছে।এটি অভিযোগ তুলে ধরা হয় যে ভারতীয় গণিত প্রথাগত মন্ত্রবৎ শিক্ষার উপর নির্ভরশীল ছিল ও তার স্মৃতিশক্তিকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে।কিন্তু বাস্তবে সূত্রের বিন্যাস, অনুশীলনে এবং সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে দিয়ে এই শিক্ষা প্রসারিত হয়।এটি যুক্তিগত ক্ষমতাকে বিকশিত করার প্রশিক্ষণ, উপনিবেশিক শাসনকালে আধুনিক ইংরেজি ভাষায় লিখিত গণিতের গ্ৰন্থগুলি স্বদেশীয় ও সংস্কৃত ভাষা অনুবাদিত হয়।1850 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত পাঠশালা, পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক গণিত,স্লেট কেন্দ্রিক গণিত সহাবস্থান করত। কিন্তু ক্রমশ এই সনাতন শিহ্মাব্যবস্থা সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় যখন 1854 খ্রিস্টাব্দে উডের ডেসপ্যাচ এই মর্মে প্রস্তাব দেয় যে প্রতিটি স্কুলেই আধুনিক পাঠক্রমকে গ্রহণ করতে নতুবা তারা কোনো অনুদান পাবে না।এই গাণিতিক কার্যকারী প্রেক্ষিতে স্মৃতিশক্তির যান্ত্রিকতার দ্ধারা প্রতি স্থাপিত হয়।

7. উপসংহার - 

গণিত বস্তুর একটি সুশৃঙ্খল প্রয়োগ হিসেবে গৃহীত। এটিও বলা যেতে পারে যে যখন কোনো ব্যক্তি গণিতচর্চা করবে তখন তাকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই সুশৃঙ্খল ও নিয়মমাফিক হতে হবে।আমরা গাণিতিক ধারণা যখন গ্রহণ করি তখন আমাদের জীবন অনেক বেশি নিয়মনিষ্ঠা ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে ওঠে।কারণ এটি আমাদের যুক্তিবাদিতা,সৃজনশীলতা, বিমূর্ত বা স্থানিকতার চিন্তাধারা,সমালোচনা মূলক দৃষ্টিভঙ্গি সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা,এমনকি কার্যকরী যোগাযোগ মূলক দক্ষতার সহ্মমতার মতো ডবিষয়কে প্রতিপালন করে।গণিত সকল সৃষ্টির একটি ক্ষেত্র যার সাহায্য ছাড়া বিশ্বের অগ্রগতি অসম্ভব।







Post a Comment (0)
Previous Post Next Post