Relation Of Science With Other School Subjects
Relation Of Science With Other School Subjects |
Relation Of Science With Other School Subjects
Bengali Version -
1. ভূমিকা -
শিক্ষার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে ঐক্যবদ্ধ করনের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকদের মধ্যে সচেতন সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিদ্যালয় পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণের জন্য সকল শিক্ষককেই উদ্যমী হতে হবে।বিজ্ঞান হল এমন একটি বিষয় যা অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে খুব সহজভাবেই সম্পর্কিত হতে পারে।এই সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্য বিষয় থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সঙ্গে যে জ্ঞান তারা পাচ্ছে তার সঙ্গে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করে।বিজ্ঞানকে এককভাবে চর্চা করা যায় না।একটি কার্যকরী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সমস্ত রকম সম্পর্ক ও প্রয়োগকে সুনিশ্চিত করতে হবে।পারস্পরিক সম্পর্কের অর্থ হল পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক।এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয়েই হতে পারে। একজন ব্যক্তি বা শিক্ষার্থী সমস্যা বা ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের সহ্মম হয়।একটি ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞান ও অন্যান্য জ্ঞানীয় ক্ষেত্রে সমন্বিত জ্ঞানচর্চা প্রয়োজন।
2.বিজ্ঞানের অর্থ ও সংজ্ঞা -
2.1.বিজ্ঞানের অর্থ-
ইংরেজি 'Science' কথাটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ 'Scientia' থেকে যার অর্থ জ্ঞান। বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞান কথাটি অর্থ হল বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস যতদূর অনুসন্ধান করা হয়েছে তাতে দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ বছর পূর্বে ও বিজ্ঞান চর্চায় যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এই বিষয়টি দুটি পরস্পর সম্পর্কিত দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়েছে,বিজ্ঞান চর্চা পদ্ধতিতে এবং বিজ্ঞান চর্চা বিষয়ে এই দুটি দিক থেকে বিচার করে দেখা গেছে যে প্রাকৃতিক প্রকৃত বৈজ্ঞানিক সত্তা এবং পদ্ধতি ইতিহাস অতি ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কিত।
2.2.বিজ্ঞানের সংজ্ঞা -
বিজ্ঞান বলতে আমরা বিশেষ কোনো বিষয়কে বুঝি না। বিজ্ঞান বিষয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সংগ্রহীত নানান জ্ঞানের সমষ্টির এবং তার অতিরিক্ত কিছু ,সেই কারণে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনেক তার কোনটি খুব তা স্পষ্ট।
বিজ্ঞানের একটি সহজ সংজ্ঞা হল -
"পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে ভৌত ও প্রাকৃতিক জগতের গঠন ও আচরণকে নিয়ে সুশৃংখল চর্চার উদ্দেশ্যে বৌদ্ধিক ও ব্যবহারিক কার্যকলাপ তাই বিজ্ঞান।"
James B Conant এর মতে -
"Science is an interconnected series of concepts and conceptual schemes that have developed as a result of experimentation and observation and are fruitful of further exper indentation and observation."
Einstein এর মতে -
"Science is the attempt to make the chaotic diversity of experience corresponds to a logically uniform System of thought."
G.Gore এর মতে -
"Science is the interpretation of nature and man is the interpreter."
Norman Campbell এর মতে -
"Science is the study of those judgements concerning which universal agreement can be obtained."
অর্থাৎ বিজ্ঞান হল একটি সংঘবদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার যার একটি অনুসন্ধান পদ্ধতি ও অনুসন্ধানে একটি উপায় আছে এবং জীবনের প্রতি একটি দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি চিন্তণের উপায় রাখে।
3. বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য -
- একজন ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর মধ্যে যুক্তিসম্মত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা চেতনা বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে।
- ব্যক্তির বা শিক্ষার্থী বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ভিত্তিক ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটাতে সহায়তা করে।
- ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর প্রগতিশীল ও সৃজনশীল মনোভাব গড়ে ওঠে।
- সমস্ত রকম কার্যপ্রক্রিয়ার নির্ভুলতার অভ্যাস, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে হিসাব বা গণনার নির্ভুলতা, পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিবেদনের নির্ভুলতা বিকাশে সহায়তা করে।
- মেধা বা বৌদ্ধিক সততার অভ্যাস গড়ে ওঠে
- শিক্ষার্থীর চারিপাশে যে সমস্ত দিক গুলি বিরাজমান সেগুলি কেন এবং কিভাবে বিরাজমান তা জানার জন্য কৌতুহল ঘটাতে সহায়তা করে।
4. বিষয় গুচ্ছ হিসাবে বিজ্ঞান -
ইংরেজি 'Discipline' কথাটি বাংলায় দাঁড়ায় বিষয় গুচ্ছ।এই বিষয়গুচ্ছ বলতে সাধারণভাবে বোঝায় জ্ঞানচর্চার এমন একটি ক্ষেত্র যার একটি সুনির্দিষ্ট ও ব্যাখ্যায়িত বিষয় বস্তু আছে। নিজস্ব একটি জ্ঞান অর্জনের কৌশল আছে এবং সেই সঙ্গে আছে বিষয়গত মূল্যবোধ। মানুষের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যা সুগঠিত করে। এর ফলশ্রুতিতে মানুষ মনোজগতের ঘটে নির্দিষ্ট কিছু বিকাশ বা উন্নয়ন ঘটে থাকে।
বেশিরভাগ মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পঠন-পাঠনে যে সমস্ত বিষয়ে তাদের নিয়েই এই অর্থে 'বিষয়গুচ্ছ' গড়ে ওঠে। এই ভাবী শিক্ষা জগৎ প্রচলিত ধারার গ্রহণ করেছে এবং তা বহন করে চলেছে। সমাজ জীবনে জ্ঞানের বিকাশে বিজ্ঞানকে বিষয়গুচ্ছ হিসাবে গ্রহণ করতে যে দুটি দিক থেকে বিবেচনা করা হয় তা হল- ১. সাধারণ শর্তাবলী এবং ২. বিশেষ শর্তাবলী।
5. বিজ্ঞানের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্কের প্রকার -
বিজ্ঞানের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের অন্তর সম্পর্কগুলি অনুধাবনের বিজ্ঞানকে বিদ্যালয় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করে পড়াতে হবে।এই সম্পর্ক দুই রকম হতে পারে।-
১. ঘটনা সূচক সম্পর্ক -
এটি একটি সাধারণ সম্পর্ক।প্রতিটি বিষয়বস্তুকে অন্য বিষয়ের ফলিত উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত করে সম্পর্ক স্থাপিত হয়।অর্থাৎ এটি প্রতিটি বিষয়ের সামগ্রিক ও গভীর চর্চা যেখানে বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য সন্ধান করা হয়। এই ধরনের সাফল্য নির্ভর করে যেসব বিষয়ের উপর তা হল -
- বিস্তৃত জ্ঞান
- বিজ্ঞান শিক্ষকের বহুমুখী জ্ঞান সঞ্চারন
২. নিয়মানুগ আন্তঃ সম্পর্ক -
বিজ্ঞানের পাঠক্রম এমন ভাবেই সুগঠিত হবে যাতে অন্য বিষয়গুলির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ধারণাকে প্রয়োগ করা যায়। নিয়মানুগ আন্তঃ সম্পর্ক তখনই সম্ভব যখন বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকরা তাঁদের শিহ্মনকে সম্পর্কিত ও সহযোগিতা পূর্ন করতে পারেন।এটি পাঠক্রমের সচেতন পরিকল্পনা দ্বারা সম্ভব।
বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ও বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ের মধ্যে একই ধরনের ঘটনা ও নীতি বর্তমান।এর ফলাফল স্বরূপ, নতুন বিষয় যেমন ভৌত রসায়ন,জৈব রসায়ন,জৈব পদার্থ বিদ্যা,বৈদ্যুতিক রসায়ন, মৃত্তিকা রসায়ন ইত্যাদি নতুন করে সংযুক্ত হয়েছে।
পদার্থবিদ্যা আলো = আলো ও স্বাস্থ্য,আলো ও জীবাণু, আলো ও ভিটামিন,প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম ইত্যাদি।
রসায়ন = খাদ্য পরিপাক,ভিটামিনের রসায়ন,রক্ত সাবান, যেমন কঠিন ও নরম ডিটারজেন্ট ইত্যাদি।
জীব বিদ্যা = দেহের শ্বাসতন্ত্রের কাঠামো ও মূল কার্যাবলী বিকাশ এবং তার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক।
6. বিজ্ঞানের সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক -
শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পাঠক্রমের বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গঠনের ক্ষেত্রে উদ্যোগ থাকা দরকার। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ আহরিত জ্ঞানের সঙ্গে বর্তমান আহরিত জ্ঞানকে সম্পর্ক যুক্ত করতে পারে। এই ধরনের সম্পর্ক শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বিকাশের পথে পরিচালিত করে। কোন একটি বিষয়ে সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বর্ণনা দেয়ার সময় অন্যান্য বিস্ময়ের সেই সম্পর্কিত নানান উদাহরণ ও শিক্ষকের দেওয়া প্রয়োজন। তাই বলা যায় বিজ্ঞানের মতন জটিল বিষয়ে সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক যুক্ত করার কাজটি দুরুহ হলেও অসম্ভব নয়।
১. বিজ্ঞান ও ভাষার সম্পর্ক -
বিজ্ঞান একটি ব্যবহারিক বিষয় হওয়া সত্বেও শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে ধারণা সম্পর্কে স্পষ্ট ও আকর্ষনীয় রূপে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ পায়।তাই তারা যে ভাষা ব্যবহার করে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যিক।যেসব শিক্ষার্থীর ভাষার উপর সঠিক দক্ষতা নেই।তারা কখনোই অন্য ব্যক্তি বা শিক্ষকের সামনে নিজস্ব মতামত বক্তব্য করতে পারবে না।এমনকি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক নীতি ও সূত্র ব্যাখ্যা করতে পারবে না। একমাত্রিক প্রযুক্তিগত পরিভাষা ও চিহ্ন এই নীতি গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন ভাষায় জ্ঞান বৃহত্তর প্রেক্ষিতে প্রসারিত হয়েছে। শিক্ষার্থীকে একটি কার্যকরী প্রেহ্মিতে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের উত্তর দিতে সক্ষম করে তোলার ভার অবশ্যই বিজ্ঞান শিক্ষক ও ভাষা শিহ্মকদের নিতে হবে।
ভাষার বিষয় ও বিজ্ঞান বিষয়কে পারস্পরিক সম্পর্ক যুক্ত করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক বিষয়ের উপর প্রবন্ধ রচনা করতে বলা হয়।যদি সেক্ষেত্রে সে কোনো ব্যাকরণগত ভুল করে তবে শিক্ষক তাকে তার ভাষা সংশোধন করতে বলেন। একই ভাবে ভাষা শিক্ষক ও বিভিন্ন প্রকল্প ভিত্তিক লেখার বিষয় হিসেবে বৈজ্ঞানিক ধারণাকে নির্বাচন করে ভাষার সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন।
২. বিজ্ঞান ও গণিতের সম্পর্ক -
অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক সূত্র ও নীতিই গাণিতিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।যার কারণে একজন শিক্ষার্থী গাণিতিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় করতে চায় বিজ্ঞানের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য। গাণিতিক প্রকাশ ও সূত্র ছাড়া একজন শিক্ষক কখনোই বিজ্ঞান শিক্ষাকে কার্যকর করে তুলতে পারবেন না। বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়কে শুরু করার আগে শিক্ষককে নিশ্চিত হতে হবে সকল শিক্ষার্থীর গাণিতিক ভিত্তি সুদৃঢ় ও বিস্তৃত কিনা।তাই গণিতকে বিজ্ঞানের একমাত্র ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়,কারণ বিজ্ঞানের সঠিক অনুধাবন গণিতের পর্যাপ্ত জ্ঞান ছাড়া কার্যত অসম্ভব।বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব গাণিতিক ধারণা ব্যবহার হয় তার মধ্যে বীজ গাণিতিক সমীকরণ, জ্যামিতিক সূত্র,গ্ৰাফ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।বিজ্ঞানের একটি বিষয় ও গণিতের মধ্যে সম্পর্ক অনুধাবন করা সম্ভব।
৩. বিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক -
বিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক অস্তিত্বশীল যেখানে আগে বিজ্ঞান অনেকটাই ব্যবহারিক প্রকৃতির ছিল ও এখন বর্তমানে তা অনেকটাই তাত্ত্বিক, তাই এই দুটি বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা সহজ। যখন পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সম্পর্কে বলা হয় তখন শিক্ষক অবশ্যই বিশ্ব ইতিহাসের মূল ঘটনা গুলি তুলে ধরবেন।শিক্ষক ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রাজার সময়কালে বিজ্ঞানের প্রকৃতি সম্পর্কে জানাবেন।বিভিন্ন অসুখের জন্য ওষুধ আবিষ্কার করতে বিজ্ঞানীদের প্রভাবিত করেছে এমন ঘটনা গুলি শিক্ষক বর্ণনা করবেন।
মানব ইতিহাসের বিভিন্ন অংশে মানুষের জীবন যাত্রার মান উল্লেখ করে ও বিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব।এই জ্ঞান লাভের ফলেই তারা সুস্বাস্থ্য পূর্ণ জীবন ও সঠিক স্বাস্থ্য বিধানের ধারণা করতে পারে।
৪. বিজ্ঞান ও দর্শনের সম্পর্ক -
দর্শনকে বিজ্ঞান সমুহের বিজ্ঞান বলার অর্থ হল এই যে এটি বিজ্ঞানকে আত্ম সচেতনতা বৃদ্ধি ও সেই সকল উৎসের সন্ধান দেয় যেখানে বিজ্ঞানগুলি তাদের বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতিগত নীতি সুগঠিত করতে পারে,সেই সকল দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিসমূহ বহুযুগ ধরে সংক্ষিপ্ত রূপে বাহিত হয়ে এসেছে।সামগ্রিকভাবে দর্শন ও বিজ্ঞান হল একে অপরের সহকারী সত্যকে সাধারণীকরণের জন্য। সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উদযাপনের ক্ষেত্রে দর্শন বিজ্ঞানকে বিশেষীকরণ করা না এবং তাকে নির্দেশ দানও করে না,কিন্তু এটি তাত্ত্বিক চিন্তাধারার সাধারণ সূত্র,জ্ঞান ও বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি পদ্ধতির জোগান দেয়,এই পরিপ্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক দর্শন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান স্থান অধিকার করে।
৫. বিজ্ঞান ও ভূগোলের সম্পর্ক -
ভূগোল হল এমনই একটি বিষয় যেখানে পৃথিবী ও তৎ সম্পর্কিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত।পৃথিবী ও মহাকাশে অন্যান্য গ্রহে অস্তিত্বশীল সব কিছুই ভূগোলের প্রধান বিষয়।কোন মৃত্তিকায় কি চাষ করা যায়,পৃথিবীতে কত ধরনের পর্বতের অস্তিত্বশীল ইত্যাদি বিষয়গুলি ভূগোলের অন্তর্ভুক্ত।আবার এই একই বিষয় বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত। বিজ্ঞানে বায়ুমণ্ডল ও পৃথিবী সম্পর্কিত নানা ধারণা অন্তর্ভুক্ত।সেখানে সজীব ও নির্জীব সকল কিছুকেই সংযুক্ত করা হয়,এই কারণেই বৃষ্টিপাতের দিক ও পরিমাপ অনুসারে তাপমাত্রাকে বিভিন্ন সামগ্রী দ্বারা বিজ্ঞানের চর্চা করা হয়ে থাকে।
জলবায়ু ও তার সম্পর্কিত উপাদান যা, মানব জাতি ও পৃথিবীকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে সেই সম্পর্কে বিজ্ঞান থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ভূগোল দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়।তাই এইসব প্রাকৃতিক বিষয়ের উপর ভূগোল শিক্ষা বা চর্চা সবচেয়ে ভালোভাবে অনুধাবিত হয় যখন তার বিজ্ঞান শিক্ষক দ্বারা চর্চিত হয়।ভূগোলবিদ ও বৈজ্ঞানিক উভয়ের মধ্যে সাধারণ অনেকগুলি বিষয় আছে,তাই বলা যায় দুটি বিষয়ই একে অপরের ভূগোল ও বিজ্ঞানকে সম্পর্কিত করা কষ্টসাধ্য নয়।
৬. বিজ্ঞান ও সমাজবিদ্যা সম্পর্ক -
প্রাচীনকাল হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষ তাদের জীবনযাত্রার বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা দ্বারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মাত্রার বিস্তৃত করে এবং বিভিন্ন কুসংস্কার ও মিথ্যা বিশ্বাসের বাধা থেকে নিজেদের মুক্ত করে। বৈজ্ঞানিক অগ্রসরতার যুগে মানুষ বুঝেছে যে মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব অধিকার আছে এবং তার উপর কোনোরকম আঘাত করা অপরাধ বলে গণ্য হয়।তাই বলা যায় যে বিজ্ঞান ও সামাজিক বিদ্যা দুটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত।একজন বিজ্ঞান শিক্ষক বিজ্ঞানকে সামাজিক বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত করতে পারেন উপযুক্ত ও প্রাসঙ্গিক উদাহরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে।
৭. বিজ্ঞান ও পৌরনীতি সম্পর্ক -
দুটি বিষয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মূল লক্ষ্যে হল উন্নত ও ব্যবহারযোগ্য নাগরিক তৈরি করা,তাই এই দুটি বিষয়কে সংযুক্ত করা সম্ভব।বিজ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার গুলির উপযোগিতা বুঝতে সক্ষম হয় যার দ্বারা তারা আরও বেশি দায়িত্ববান হয়ে ওঠে।তারা এক ধরনের দায়িত্বের ধারণাকে উপলব্ধি করতে পারে, যা পরবর্তীকালে তাদের দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে।বৈজ্ঞানিক চেতনা জাগরনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অসুখ সম্পর্কে জানতে পারে ও একটি স্বাস্থ্য সমৃদ্ধ ও পরিষ্কার পরিমন্ডল গঠনের তাদের ভূমিকা কি হতে পারে সে সম্পর্কে জ্ঞাত হয়।এই ধরনের তথ্য গ্ৰহনের মাধ্যমে তারা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে সুগঠিত হয় ও সামগ্রিকভাবে সমাজ ও দেশের একটি আদর্শ পৌর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. বিজ্ঞান ও কলাবিদ্যার সম্পর্ক -
বিজ্ঞান কলা ক্ষেত্রকে বিকশিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাতে সন্দেহ নেই।কিন্তু এটি সঠিক নয়,উভয়েই উভয়কে উন্নতি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।সকল ধরনের শিল্প কলাই বৈজ্ঞানিক বিকাশের ফলশ্রুতি,কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষকের পক্ষে বৈজ্ঞানিক নীতি ও ঘটনা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় যতক্ষণ তা শিল্পকলার সঙ্গে সংযুক্ত না করা হয়।যেহেতু বিজ্ঞান একটি ব্যবহারিক বিষয়।তাই এর ফলাফল স্বরূপ বিজ্ঞান শিক্ষককে অনেক ডায়াগ্রাম,মডেল ও চার্ট আঁকতে হয় শিহ্মনের সুবিধার্থে,যার জন্য তার শৈল্পিক দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।কারণ এটি ছাড়া তিনি তার অঙ্কিত ছবিতে রং-এর মিশ্রণের সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন না ও ফলে সেটি ততটা আকর্ষণীয় ও হয়ে উঠতে পারবে না।একজন শিল্পীর আলো ও সেড অঙ্কনের বিষয়বস্তু ও ভিত্তি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন, তাই বলা যায় যে বিজ্ঞান ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক কিন্তু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে যে কারণে দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।
৯. বিজ্ঞান ও সঙ্গীতের সম্পর্ক -
বিজ্ঞানের সঙ্গে সংগীতের সম্পর্ক নিবিড়।সংগীতের শিক্ষার্থীদের অনুরনন,তার ও বায়ু প্রবেশের পথে স্পন্দন ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ।কন্ঠস্বর ও উন্নত মানের সংগীতের জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উপাদান ব্যবহার করা হয় যা বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ব্যবহারের দ্বারাই সম্ভব যা সংগীত জগতে বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবহারের দিকে চালিত করে। বিজ্ঞান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে সংগীতের উপকরণ ও সামগ্রী এবং তাদের কার্যকলাপ নির্ধারণ করে বিজ্ঞানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেন।
১০. বিজ্ঞান ও হস্তশিল্পের সম্পর্ক -
বিজ্ঞানের সঙ্গে হস্তশিল্প কর্মকে সম্পর্কিত করা কঠিন হয়, কিন্তু বৈজ্ঞানিক নীতি ও সূত্রগুলি বোঝার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা এখন অনেক বেশি অগ্রসর হয়েছে। হস্তশিল্পের সময়ে শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক সামগ্রী ও উপকরণের বিভিন্ন অংশকে নকশায়িত করতে বলা যেতে পারে।এই কাজটি করার জন্য তাকে বৈজ্ঞানিক চেতনা সমৃদ্ধ হতে হবে।তাদের মধ্যে একটি চেতনা কাজ করবে যে বাস্তবে তা নির্মিত সামগ্রী ও উপকরণ গুলি কতটা ব্যবহার্য তা পর্যবেক্ষণ করা।
১১. বিজ্ঞান ও জ্যোর্তিবিদ্যা সম্পর্ক -
বিজ্ঞানের সঙ্গে জ্যোর্তি বিদ্যার সম্পর্ক নিবিড়।বিজ্ঞানের সহযোগিতায় কোনো গ্রহ,কোথায় কখন ঘুরছে এবং এটি পৃথিবীর মানুষের কাছে কখন দৃশ্যমান হবে।এটি একটি জটিল তত্ব এবং এর জন্য গাণিতিক ভিত্তি থাকা আবশ্যক।একই রকমভাবে গাণিতিক সূত্র ও তত্ত্ব পদার্থ বিদ্যার বৃহত্তর প্রহ্মিতে প্রযুক্ত,তাই জ্যোর্তি বিদ্যার বিজ্ঞানের অবদান কম নয়।
7. উপসংহার -
পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষায় বিভিন্ন শাখা প্রশাখার মধ্যে অন্যতম হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই নিবিড়। বিদ্যালয় পাঠ্যবস্তু মধ্যে বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্ক রয়েছে এবং শিক্ষার্থী বৌদ্ধিক বিকাশ, ভাষাগত বিকাশ, জ্ঞানগত বিকাশ প্রভৃতিতে বিজ্ঞানের এবং বিজ্ঞানের সহকারি বিষয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্ক সমানুপাতিক। বিজ্ঞানের সহায়তা ছাড়া অন্যান্য বিষয় গুলি সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না,যদিও বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়গুলি স্বতন্ত্র তবুও এদের মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে।