Indian Fundamental Rights And Fundamental Duties

Indian Fundamental Rights And Fundamental Duties

Indian Fundamental Right And Fundamental Duties

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Indian Fundamental Rights And Fundamental Duties
Indian Fundamental Rights And Fundamental Duties

Indian Fundamental Right And Fundamental Duties

(*** ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

Assignment Questions -

1. Write Down The Indian Fundamental Rights.

2. Write Down The Indian Fundamental Duties.

Fundamental Rights
BENGALI VERSION -

1. ভূমিকা - 

মানব জীবনের মৌলিক প্রয়োজন গুলি যে সমস্ত অধিকারের সাহায্যে পূরণ হয়ে থাকে, তাকে মৌলিক অধিকার বলে অভিহিত করা হয়।মৌলিক অধিকার বলতে সাধারণভাবে সেইসব অধিকারকে বোঝায় যেগুলি নাগরিকদের ব্যক্তিসত্তার বিকাশে একান্তভাবে অপরিহার্য। এই কারণে মৌলিক অধিকার গুলি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত করা হয়। অধ্যাপক জোহারির ভাষায়,"A fundamental right may be defined as an interest protected by the higher law of land."মৌলিক অধিকার হল এমন এক ধরনের অধিকার যা দেশের সর্বোচ্চ আইনের দ্বারা সুরক্ষিত।

     মার্কিন,ফরাসি ও আইরিশ সংবিধানের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে সংবিধান রচয়িতারা ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশে (12 - 35 নং ধারা) নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলিকে লিপিবদ্ধ  করেছিলেন।মূল সংবিধানের সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, কিন্তু 1978 সালে 44 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের অংশ থেকে বাদ দেওয়ার হয়।বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের জন্য ছয় প্রকার মৌলিক অধিকার বর্ণনা করা হয়েছে।এগুলি হল -

  1. সাম্যের অধিকার (14 - 18 নং ধারা) 
  2. স্বাধীনতার অধিকার (19 - 22 নং ধারা) 
  3. শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (23 - 24 নং ধারা) 
  4. ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (25 - 28 নং ধারা) 
  5. সংস্কৃত ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার (29 - 30 নং ধারা) 
  6. সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার (32 ও 226 নং ধারা)

১. সাম্যের অধিকার - 

সাম্য বলতে বোঝায় জাতি ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষকে তার আত্মবিশ্বাসের উপযোগী সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান করা।ভারতীয় সংবিধানের 14 থেকে 18 নং ধারায় সাম্যের অধিকার ঘোষিত ও স্বীকৃত হয়েছে। 

• আইনের দৃষ্টিতে সমতার অধিকার ও তার ব্যাতিক্রম -

সংবিধানে 14 নং ধারায় বলা হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তিকে 'আইনের দৃষ্টিতে সমতা' কিংবা আইন সমূহ কর্তৃক সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না।'আইনের দৃষ্টিতে সমতা'র অর্থ হল - আইনের কাছে সবাই সমান।

• ব্যতিক্রম -

  • রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালগন পদাধিকারবলে যেসব ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কর্তব্য সম্পাদন করেন কিংবা তা সম্পাদনা করতে গিয়ে যেসব কার্য করেন, সেজন্য তাঁদের কোনো আদালতের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় না। 
  • স্বপদে বহাল থাকাকালিন রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল দের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না।
  • শপথে থাকাকালীন এঁদের গ্রেপ্তার বা কারাবাসের জন্য আদালত নির্দেশ দিতে পারেন না।
  • এমনকি, শপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বা পরে সম্পাদিত ব্যক্তিগত কার্যাবলীর জন্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালগনের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা দায়ের করার দুই মাসের নোটিশ দিতে হয়। 
  • বিদেশি রাষ্ট্রের শাসকগন এবং রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা যায় না। 
  • যুদ্ধ কালীন অবস্থায় শত্রুপক্ষের ব্যক্তিদের ভারতীয় আদালতে মামলা রুজু করার সুযোগ পাওয়া যায় না এবং অন্য বন্দীদের মতো সুযোগ সুবিধা দাবি করতে পারে না। 
  • পার্লামেন্ট এবং রাজ্য আইনসভার সদস্যরা বেশ কয়েকটি 'বিশেষ অধিকার' ভোগ করেন। 
  • 44 তম সংবিধান সংশোধনী আইন (1978) অনুযায়ী পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে প্রশাসনিক আদালত গঠন করতে পারে।

• আইন কর্তৃক সমভাবে রহ্মিত হওয়ার অধিকার ও তার ব্যতিক্রম - 

সংবিধানের 14 নং ধারার দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত 'আইন কর্তৃক সমভাবে রহ্মিত হওয়া' বলতে বোঝায় সমান অবস্থায় সমপর্যায়ভুক্ত সব ব্যক্তির প্রতি আইন সমান আচরণ এবং সবাইকে সমানভাবে রক্ষা করবে।এর অর্থ এই নয় যে, অবস্থার বিচার বিশ্লেষণ না করে প্রতিটি আইন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযুক্ত হবে।তবে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে এবং প্রতিটি পৃথক ক্ষেত্রে আইন পৃথকভাবে প্রযুক্ত হবে।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যাঁরাই আয় করেন, তাদের সবাইকে আয়কর দিতে হয় না।আয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন হারে আয়কর প্রদান করতে হয়। 

• জাতি ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে সমান অধিকার ও তার ব্যাতিক্রম -

সংবিধানের 15 নং ধারায় বলা হয়েছে যে - ধর্ম, জাতি, বর্ণ,লিঙ্গ,জন্মস্থান প্রভৃতি কারণে রাষ্ট্র কোনো নাগরিক দের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না।আবার সর্বসাধারণের জন্য ব্যবহৃত দোকান,হোটেল,রেস্তোরাঁ, স্নানাগার,পুষ্করনী এবং অন্যান্য প্রমোদস্থলে প্রবেশের ক্ষেত্রে জাতি,ধর্ম,বর্ণ,লিঙ্গ প্রবেশের কোনো ভেদাভেদ করা হবে না।

• ব্যতিক্রম -

  • জনস্বার্থে রাষ্ট্র কতকগুলি বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে,যেমন - সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনে পূর্বোক্ত স্থানগুলিতে কোন ছোঁয়াচে রোগীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে।
  • রাষ্ট্র নারী ও শিশুদের উন্নতির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম। 
  • তাছাড়া, সামাজিক অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর শ্রেণী এবং তপশিল ভুক্ত জাতি ও উপজাতি গুলি উন্নতির জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। 
• সরকারি চাকুরিতে সকলের সমান অধিকার ও তার ব্যাতিক্রম -

সংবিধানের 16(1) নং ধারায় সরকারি চাকুরি বা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধা থাকবে।16(2) নং ধারার বলা হয় জাতি,ধর্ম,বর্ণ,লিঙ্গ, বংশ,জন্মস্থানের কারনে কোনো নাগরিক সরকারি চাকুরি বা পদে নিয়োগের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না কিংবা তার প্রতি কোনো রূপ বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না ।

• ব্যতিক্রম -

  • যে কোনো অঙ্গরাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারি চাকুরি বা পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বসবাসরত যোগ্যতাকে পার্লামেন্ট অন্যতম শর্ত হিসেবে আরোপ করতে পারে [ 16(3) নং ধারা]। কিন্তু চাকুরী পাওয়ার শর্ত হিসেবে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হিসেবে দেওয়ার ক্ষমতা পার্লামেন্টের নেই। 
  • প্রয়োজন মনে করলে রাষ্ট্র অনুন্নত শ্রেণির নাগরিকদের জন্য কিছু সরকারি পদ বা চাকুরি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে[16(4) নং ধারা]।
  • সরকারি চাকুরিতে তপশিলি জাতি ও উপজাতি গুলির যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব হয় নি বলে মনে করলে রাষ্ট্র সেই সব চাকুরিতে প্রবীণতার ভিত্তিতে ওই দুটি জাতিভুক্ত কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য পদ সংরক্ষণ করতে সক্ষম[16(4ক) নং ধারা]। 
  • কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের চাকুরি সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে[16(5) নং ধারা]। 
  • প্রশাসনিক দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে সরকার তফশিলি জাতি ও উপজাতি ভুক্ত ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় বা রাজ্যের সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করতে পারে[335 নং ধারা]। 
  • ভারতের মূল সংবিধানের 336 নং ধারায় বলা হয়েছিল যে,নতুন সংবিধান কার্যকর হওয়ার পূর্বে ইঙ্গ-ভারতীয়দের জন্য কয়েকটি সরকারি পদ সংরক্ষিত রাখার যে ব্যবস্থা ছিল,1960 সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তা বহাল রাখার ব্যবস্থা করা হবে এবং 1960 সালের 25শে জানুয়ারি থেকে এই বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। 
• অস্পৃশ্যতা বর্জন -

ভারতীয় সংবিধানে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অস্পৃশ্য বলে কোনো ভারতীয়কে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা কিংবা অসম্মান করা হলে আইনত শাস্তি পেতে হয়(17 নং ধারা)। সংবিধানের এই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য 1955 সালে অস্পৃশ্যতা(অপরাধ)আইন প্রণীত হয়।কিন্তু অস্পৃশ্যতা আচরণ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও ভারতীয় সমাজ জীবনে এখনো তা দুষ্ট হ্মতের মতো নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। 

• উপাধি গ্রহণ ও তার নিষিদ্ধকরণ - 

সংবিধানে 18 নং ধারায় ভারতীয় জনগণের মধ্যে সাম্য নীতির সার্থক রূপায়নের করার জন্য কোনোরূপ উপাধি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
• নিষিদ্ধকরন - 
  • কেবল সামরিক ও শিক্ষাগত উপাধি ছাড়া রাষ্ট্র কোনো ব্যক্তিকে অন্য কোনো উপাধি প্রদান করে না।
  • কোনো ভারতীয় নাগরিক কোনো বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত উপাধি গ্রহণ করতে পারেন না।তবে ভারত সরকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের "ভারতরত্ন" , "পদ্মশ্রী" , "পদ্মভূষণ" প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু রাজা,মহারাজা,নবাব প্রভৃতি মতো উপাধি নয়,পুরস্কার বা সম্মান মাত্র।তাছাড়া, রাষ্ট্র প্রদত্ত পুরস্কার গুলি যাঁরা পান, তাঁরা নামের পাশে অথবা চিঠির মধ্যে এগুলো কোনো উল্লেখ করতে পারেন না।

২. স্বাধীনতার অধিকার -

স্বাধীনতার অধিকার একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের ব্যক্তি - স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবিধানের 19 থেকে 22 নং ধারায় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতি লাভ করেছে। 

• ছয় দফার স্বাধীনতার অধিকার -

বর্তমানে সংবিধানের 19(1) নং ধারায় নাগরিকদের ছয় প্রকার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে, যেমন -

(ক). বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও তার নিয়ন্ত্রণ -

বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য একান্ত অপরিহার্য।ভারতের প্রতিটি নাগরিক নিজ ধ্যানধারণা এবং বিবেক বৃদ্ধি অনুসারে মতামত প্রকাশ করতে পারে। মতামত লিখিত বা মৌখিক ভাবে প্রকাশ করা যায়। চিঠিপত্র, পত্রপত্রিকা, পুস্তক পুস্তিকা কিংবা সংবাদপত্রের মাধ্যমে প্রত্যেক স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে।আবার ,সভা সমিতি,আলাপ আলোচনা,বির্তক প্রভৃতির মাধ্যমে মতামত প্রকাশিত হয়।সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনা করে সরকারকে সংযত থাকতে বাধ্য করার ব্যাপারে সংবাদপত্র গুলির ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু ভারতীয় সংবিধান নাগরিকদের বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কতকগুলি যুক্তিসংগত বাধা - নিষেধ আরোপ করেছে। 

  • ভারতের সার্বভৌমিকতা ও সংহতি রহ্মা।
  • রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা।
  • বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রীবন্ধন  সংরক্ষণ। 
  • দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা।
  • শালীনতা বা সদাচার রহ্মা। 
  • আদালত অবমাননা প্রতিরোধ।
  • মানহানি প্রতিরোধ করা।
  • অপরাধমূলক কার্যে প্ররোচনাদান বন্ধ করার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র সাধারণ অবস্থাতেও বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ বা খর্ব করতে পারে [19(2) নং ধারা]।

(খ). সমবেত হওয়ার অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ - 

ভারতীয় নাগরিকদের সমবেত হওয়ার অধিকার সংবিধানে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জনস্বার্থ সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে আলাপ আলোচনার জন্য জনসমাবেশের সমবেত হওয়ার এবং শোভাযাত্রা করার অধিকার নাগরিকদের আছে।কিন্তু এই অধিকার ৫টি শর্তাধীনে ভোগ করা যেতে পারে।শর্তগুলো হল - 

  • সভা সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। 
  • নাগরিকরা নিরস্ত্র ভাবে সভা সমাবেশ করতে পারবে।
  • জনশৃঙ্খলার প্রয়োজনে রাষ্ট্র এই অধিকারের উপর যুক্তিসংগত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে।
  • ভারতের সার্বভৌমিকতা।
  • সংহতি রক্ষার জন্য প্রয়োজনে নাগরিকদের এই অধিকারের উপর 'যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ' আরোপ করতে সক্ষম [19(3) নং ধারা]
(গ). সংঘ ও সমিতি গঠনের অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ -

ভারতীয় নাগরিকদের সংঘ ও সমিতি গঠনের অধিকার আছে।যেমন - শ্রমিক সংঘ,ক্রীড়া সংঘ, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংঘ বা সমিতি, রাজনৈতিক দল প্রভৃতি গঠন এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।কিন্তু এই অধিকারটি নিরঙ্কুশ নয়। 

  • বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী নীতি বহির্গত উদ্দেশ্যে গঠিত কিংবা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নকারী সংঘ বা সমিতি গুলির ওপর সরকার যুক্তিসংগত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
  • ভারতের সার্বভৌমিকতা ও সংহতি রক্ষায় প্রয়োজনেও সরকার এই অধিকার টিকে সংকোচন করতে সক্ষম [19(4) নং ধারা]।তবে রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বাধা নিষেধ গুলি যুক্তিসংগত কি না,তা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের হাতে অর্পিত হয়েছে।
(ঘ). ও (ঙ). যাতায়াত ও বসবাসের অধিকার এবং তার সীমাবদ্ধতা -

ভারতের সর্বত্র স্বাধীনভাবে যাতায়াত করার এবং যে কোনো অঞ্চলে বসবাস করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু 

  • জনস্বার্থে।
  • তফশিল ভুক্ত উপজাতি গুলির স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র এই দুটি অধিকারের উপর যুক্তিসংগত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে[19 (5) নং ধারা]। 
(চ). বৃত্তি বা পেশা গ্রহণের অধিকার এবং তার সীমাবদ্ধতা -

প্রতিটি ভারতীয় নাগরিক নিজ পছন্দ মতো বৃত্তি,পেশা বা ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকারী।কিন্তু জনস্বার্থে রাষ্ট্র এই অধিকারের উপর যুক্তিসংগত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে। 

  • জনস্বার্থ বিরোধী যে কোনো ব্যবসা বাণিজ্যে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। 
  • বিভিন্ন বৃত্তির ক্ষেত্রে কর্মীর যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের আছে [19(6) নং ধারা]। 
• ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা -

সংবিধানের 19(1) নং উপধারাটি একদিকে যেমন নাগরিকদের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে। অন্যদিকে তেমনি 19(2)-(6) নং উপধারা গুলি অধিকারসমূহ ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপের ব্যবস্থা করেছে। এইভাবে ভারতীয় সংবিধান ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার  জন্য সচেষ্ট হয়েছে।

• দোষী সাব্যস্ত করা ও শাস্তিদান সংক্রান্ত ব্যবস্থাদি -

সংবিধানের 20(1) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, দেশে প্রচলিত আইন অমান্য করার অপরাধ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।একই অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার অভিযুক্ত ও দণ্ডিত করা যাবে না [20(2) নং ধারা]। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে তাঁর নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না[20(3) নং ধারা]।

• জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার -

সংবিধানে 21 নং ধারায় বলা হয়েছে আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।এছাড়া 2002 সালে 86 তম সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী 21(ক) নামে নতুন একটি ধারা সংযোজিত করে শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মর্যাদা দান করা হয়েছে।এই ধারায় ঘোষণা করা হয়েছে রাষ্ট্র 6 - 14 বছর বয়সি বালক বালিকাদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করবে।

• গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কিত নিয়মাবলী -

সংবিধানে 22 নং ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে।আটক ব্যক্তিকে তার আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।এছাড়া গ্রেপ্তার করার 24 ঘন্টার মধ্যে আটক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করতে হবে।তবে ' শত্রুভাবাপন্ন বিদেশি ' এবং ' নিবর্তনমূলক আটক আইনে ' ধৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নিয়মগুলি কার্যকর হবে না।

৩. শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার -

শোষণ,লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু। ভারতীয় সংবিধানের 23 নং এবং 24 নং ধারায় নাগরিকদের শোষনের বিরুদ্ধে শোষণের বিরুদ্ধে অধিকারটি স্বীকৃতি লাভ করেছে।

• মানুষ ক্রয়বিক্রয়,বেগার খাটানো ইত্যাদি নিষিদ্ধকরণ এবং তার ব্যাতিক্রম -

সংবিধানের 23(1) নং ধারায় মানুষ নিয়ে ব্যবসা অর্থাৎ মানুষের ক্রয় বিক্রয়, বেগার খাটানো বা অনুরূপভাবে বলপূর্বক শ্রমদানে বাধ্য করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।'মানুষ কয়বিক্রয়' বন্ধ করা বলতে এখানে দাসপ্রথা ছাড়াও অন্য উদ্দেশ্যে নারী,শিশু প্রকৃতির কয় বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বেগার খাটানোর মতো যে কোনো ধরনের বলপূর্বক কাজ করানো ভারতীয় সংবিধানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

• ব্যতিক্রম - 

  • জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে রাষ্ট্র ধর্ম,বর্ণ, জাতি ও শ্রেণি নির্বিশেষে সবাইকে শ্রমদানে বাধ্য করতে পারে। 
  • রাষ্ট্র যদি সামরিক শিক্ষা গ্ৰহন কিংবা সমাজসেবামূলক কার্য সম্পাদনকে বাধ্যতামূলক বলে আইন প্রণয়ন করে, তবে সেই আইন সংবিধানের 23(1) নং ধারায় বিরোধী বলে বিবেচিত হবে না। 
• কম বয়সে শিশুদের বিপজ্জনক কাজে নিযুক্তি এবং তার নিষিদ্ধকরণ -

সংবিধানের 24 নং ধারা অনুসারে, 14 বছরের কম বয়স্ক শিশুদের খনি,কারখানা ও অন্য কোনো বিপজ্জনক কার্যে নিয়োগ করা নিষিদ্ধ হয়েছে।সরকার বিভিন্নভাবে এই জন্য বিভিন্ন আইন প্রনয়ন করেছে।যেমন - 

  1. Factories Act 1948.
  2. The Mines Act 1952.
  3. The Child Labour (Prohibition And Regulation)Bill 1986.

৪. ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার - 

হিন্দু,মুসলমান,খ্রিস্টান,বৌদ্ধ,পারসি প্রভৃতি ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে ভারতে বসবাস করছে।ব্রিটিশরা ভারতকে নিজেদের পদানত রেখে শোষণ করার জন্য 'বিভক্ত করে শাসন করো' নীতি অনুসরণ করেছিল।ফলে,হিন্দু মুসলমান দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মনে বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চরম আকার ধারণ করলে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়, জন্মলাভ করে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র। কিন্তু পাকিস্তান ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ভারত 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে।

ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের অর্থ -

ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও মূল সংবিধানের কোথাও ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে বর্ণনা করা হয় নি।1976 সালে 42 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটি সংযোজন করা হয়েছে। 'ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র' বলতে বোঝায় অনন্তসায়নম্ আয়েঙ্গার। গণপরিষদে মন্তব্য করেছিলেন, 'ধর্মনিরপেক্ষ' বলতে এক কথায় বোঝায় না যে, কোনো ধর্মের প্রতি আমাদের বিশ্বাস নেই এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটির অর্থ হল রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে সাহায্য করবে না বা এক ধর্ম অপেক্ষা অন্য ধর্মকে প্রাধান্য দেবে না।সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে সব ধর্মকে সমান মর্যাদা প্রদান করাকে বোঝায়।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হল এমন একটি রাষ্ট্র,যা ব্যক্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে,যা ধর্মীয় মতামত নির্বিশেষে সব ব্যক্তিকে নাগরিক হিসাবে গ্রহণ করে এবং সংবিধানে বিশেষ কোন ধর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত না করে কিংবা বিশেষ কোন ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা বিরোধিতা করে না। এক কথায় বলা যায় ধর্ম বিষয়ে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকে। 

• ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার এবং তার নিয়ন্ত্রণ - 

ভারতীয় সংবিধানের 25 - 28 নং ধারায় জনগণের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতি লাভ করেছে।প্রত্যেক ব্যক্তির বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মস্বীকার, ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা রয়েছে [25(1) নং ধারা]। সাধারণভাবে রাষ্ট্র কোনো ধর্মীয় বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ করতে না পারলেও -

  • জন শৃঙ্খলা, সমাজের স্বীকৃতি নীতিবোধ, জনস্বাস্থ্য এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের প্রয়োজনে রাষ্ট্র এই অধিকারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। 
  • বিশেষ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোনো ধর্মাচরণের অঙ্গ কি না,তা বিচার বিবেচনা করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।বস্তুত, ধর্মের নাম রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা,জনস্বার্থ প্রভৃতি বিঘ্নিত হলে কিংবা নরবলির মতো অমানবিক কার্যাবলি অনুষ্ঠিত হলে অথবা সতীদাহ,দেবদাসী প্রথার মতো নীতি বহির্গত আচার-অনুষ্ঠান চলতে থাকলে সামগ্ৰিক ভাবে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি ব্যাহত হবে। তাই এইসব প্রতিরোধ করার জন্য সংগত কারণে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ একান্তভাবে প্রয়োজন।
  • সংবিধানে একথাও বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র ধর্ম আচরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক,আর্থিক, রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য ধর্ম নিরপেক্ষ কার্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। 
  • সামাজিক কল্যাণ সাধন ও সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্য রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার হস্তক্ষেপ করতে সহ্মম।
  • হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব ব্যক্তির কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করতে পারে। 
• ধর্মীয় সম্প্রদায় গুলির অধিকার ও তার নিয়ন্ত্রণ -

ব্যক্তি ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সংবিধানে কতকগুলি অধিকার প্রদান করা হয়েছে। সংবিধানের 26 নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা তার যে কোনো অংশ 

  1. ধর্ম বা দানের উদ্দেশ্য সংস্থা স্থাপন ও রহ্মণাবেহ্মণ করতে পারে।
  2. নিজে নিজে ধর্ম বিষয়ক কার্যকলাপ নিজেরাই পরিচালনা করতে পারে। 
  3. স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও ভোগদখল করতে পারে। 
  4. আইন অনুসারে সম্পত্তি পরিচালনা করতে পারে।

• নিয়ন্ত্রণ -

  • জন শৃঙ্খলা 
  • নৈতিকতা 
  • জনস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য যে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় বা তার অংশের উপরিউক্ত অধিকার গুলিকে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
• ধর্মীয় উদ্দেশ্যে কর আদায় নিষিদ্ধকরন -

কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্ম সম্প্রদায়ের প্রসার বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কর প্রদানে বাধ্য করা যাবে না(27 নং ধারা)। কিন্তু মন্দির দর্শন, দেবপূজা ইত্যাদি ব্যাপারে রাষ্ট্র কর ধার্য করার পরিবর্তে বৃত্তি বা অনুদান ধার্য করে সংবিধানের এই বাধানিষেধটিকে এড়িয়ে যেতে পারে। 

• শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম শিহ্মাদান নিষিদ্ধকরণ - 

ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ধর্মীয় শিক্ষা দানের উপর কিছু কিছু বাধানিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সংবিধানের 28 নং ধারায় বলা হয়েছে যে, 
  • সম্পূর্ণভাবে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মবিষয়ক শিক্ষাদান করা যাবে না। 
  • আবার,যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কিংবা সরকারি অর্থে আংশিক ভাবে পরিচালিত, সেই সমস্ত শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বিনা অনুমতিতে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। কিন্তু রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত হলেও কোনো দাতা বা আছি র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শিহ্মা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া যায়, যদি দাতার মিলে উইলে কোনো বিশেষ ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ থাকে।

৫. সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার -

ভারতীয় সংবিধানের 29 এবং 30 নং ধারায় সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার ঘোষিত হয়েছে।এই ধারায় বলা হয়েছে যে, 

  • সব শ্রেণীর নাগরিক নিজ নিজ ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার অধিকার।এই অধিকারের স্বীকৃতির মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গুলির স্বার্থ সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
  • তাছাড়া,রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত অথবা সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রবেশাধিকার থেকে কোনো ব্যক্তিকে ধর্ম,বংশ,জাতি বা ভাষার অজুহাতে বঞ্চিত করা যাবে না। ধর্ম বা ভাষাভিত্তিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গুলি নিজেদের পছন্দমতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে।এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য প্রদানের বিষয়ে রাষ্ট্র কোনোরূপ বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। এরূপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় ভিত্তিতে আসন সংরক্ষিত করা যাবে না। এই কারণে মাদ্রাজ (বর্তমানে তামিলনাড়ু) সরকারি কলেজে ধর্মের ভিত্তিতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থাটি সংবিধান বিরোধী বলে বাতিল হয়ে যায়।
  • আবার, রাষ্ট্র সংখ্যালঘু শ্রেণীর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে চাইলে তাকে ' পুরো ক্ষতিপূরণ প্রদান ' করতে হবে [30(1) নং ধারা]।
• মূল্যায়ন -

সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার সংবিধানে মৌলিক অধিকারের তালিকায় লিপিবদ্ধ হওয়ার ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র আরো উজ্জ্বল হয়েছে বলে অনেক মনে করেন।বস্তুত ধর্ম, ভাষা ও গোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি এবং শিক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করার যে দৃষ্টান্ত সংবিধানে দেখানো হয়েছে পৃথিবীর অন্য কোথাও তার প্রায় নেই বললেই চলে।এই কারণে 1992 সালে সুপ্রিমকোর্ট সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকারের গুরুত্ব সম্পর্কে এক রায়দান করতে গিয়ে বলে, শিক্ষার অধিকার হল মৌলিক অধিকারের সহযোগী ("Right to education is concomitant to fundamental right".)

৬. সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার -

সংবিধানে কেবল লিপিবদ্ধ করা হলেই যে মৌলিক অধিকার গুলি সুরক্ষিত হবে,এমন কোনো কথা নেই। আইন বিভাগ,শাসন বিভাগ প্রভৃতি যে কোনো সময়  অধিকার গুলি খর্ব করতে পারে। তাই সাংবিধানিক প্রতিবিধানের মাধ্যমে অধিকার গুলি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একান্ত অপরিহার্য। ডঃ আম্বেদকর 32 নং ধারায় বর্ণিত সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারকে " সংবিধানের আত্মা ও প্রাণকেন্দ্র " বলে বর্ণনা করেছেন। 

• আদেশ বা নির্দেশ জারি করে অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা -

ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলি রহ্মা করার জন্য সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার সংবিধানের 32 নং ও 226 নং ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধানের 32 নং ধারা অনুযায়ী মৌলিক অধিকার গুলি বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য নাগরিকরা সুপ্রিমকোর্টের কাছে আবেদন করতে পারে। সুপ্রিমকোর্ট এই অধিকার গুলি বলবৎ করার জন্য বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকার - পৃচ্ছা এবং উৎপ্রেষণ প্রভৃতি শেখ,নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারেন।অনুরূপভাবে, 226 নং ধারা অনুসারে অঙ্গরাজ্য গুলি হাইকোর্টের আদেশ বা নির্দেশ জারি করে অধিকার গুলি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাছাড়া, পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট ছাড়া অন্য যে কোনো আদালতকে নিজ এক্তিয়ারের  মধ্যে পূর্বোক্ত লেখসমুহ জারি করার ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। তবে, অদ্যাবধি পার্লামেন্ট এই ধরনের কোনো আইন প্রণয়ন করে নি।সংবিধানে উল্লেখিত 'আদেশ' ,'নির্দেশ' বা লেখগুলি হল - 

ক. ' বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ ' -

বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ(Habeas Corpus) কথাটির অর্থ বন্দিকে আদালতে সশরীরে হাজির করা। কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হলে কি কারণে তাকে আটক করা হয়েছে, তা জানার জন্য সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট বন্দির আবেদনক্রমে আটককারীর উপর আদেশ জারি করে আদালত কক্ষে উপস্থিত করার নির্দেশ দিতে পারেন। আদালতে যদি মনে করেন যে, বেআইনিভাবে আবেদনকারীকে আটক করা হয়েছে, তবে আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দানের নির্দেশ দিতে পারেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সুপ্রিমকোর্টে কেবল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে 'বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ' লেখ জারি করতে পারেন। কিন্তু হাইকোর্ট রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি উভয়ের বিরুদ্ধে এই লেখ জারি করার অধিকারী।তবে দুটি ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট 'বন্দি প্রত্যহ্মীকরণ' লেখ জারি করতে পারেন না, যথা - 

  • নিজ এক্তিয়ারের বাইরে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে আদালতে এই রূপ লেখ জারি করতে অক্ষম। 
  • ফৌজদারি অপরাধের জন্য কোনো আদালত কর্তৃক হাজতবাসের দন্ড প্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তির উদ্দেশ্যে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টে 'বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ' লেখ জারি করার অধিকারী নন।
খ. 'পরমাদেশ' -

পরমাদেশ(Mandamus) শব্দটির অর্থ 'আমরা আদেশ দিচ্ছে' সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট কোনো অধস্তন আদালত, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য পরমাদেশ জারি করতে পারেন।এই আদেশ জারি করে আদালত সরকারকে আইন সংগত ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত কর্তব্য সম্পাদনে বাধ্য করেন।কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি কিংবা কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পরমাদেশ জারি করার হ্মমতা সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের নেই। 

গ. 'প্রতিষেধ' - 

প্রতিষেধ (Prohibition) কথাটির অর্থ 'নিষেধ করা'। এই আদেশ জারি করে উর্দ্ধতন আদালতে নিম্নতন আদালতকে তাঁদের এক্তিয়ার বহির্ভূত কার্য সম্পাদনে বাধা দিতে পারেন।ঊর্ধ্বতন আদালতের এই নির্দেশ লঙ্ঘন করা হলে লঙ্ঘনকারীকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা যেতে পারে।

ঘ. 'অধিকার -পৃচ্ছা' -

অধিকার-পৃচ্ছা(Quo-Warranto) কথাটির অর্থ 'কোন অধিকারে'। কোনো ব্যক্তি যে পদ অধিকার করে থাকে সেই পদের জন্য তার দাবি কতখানি যুক্তিসঙ্গত,তা সুপ্রিমকোর্টে বা হাইকোর্ট অধিকার - পৃচ্ছার মাধ্যমে খতিয়ে দেখেন।দাবিটি অবৈধ বলে মনে করলে আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পদচ্যুত করার নির্দেশ দিতে পারেন।

ঙ. 'উৎপ্রেষণ' -

উৎপ্রেষণ (Certiorari) বলতে 'বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া' বোঝায়।সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট কোনো মামলার নিরপেক্ষ বিচার করার জন্য কিংবা অধস্তন আদালত গুলির ক্ষমতা বহির্ভূত কার্যে বাধাদানের উদ্দেশ্যে তাঁদের এই নির্দেশ দিতে পারেন যে,মামলাটি শুনানির জন্য উচ্চ আদালতে পেরন করা হোক।এইরূপ আদেশ পৌর প্রতিষ্ঠান গুলির ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হতে পারে। 

• ব্যতিক্রম -

সংবিধানে অন্যান্য মৌলিক অধিকারের মতো সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকারটিওঅবাধ বা নিরঙ্কুশ নয়।এই অধিকারের ব্যতিক্রম গুলি হল - 

  • যুদ্ধ, বহিরাক্রমন কিংবা দেশের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের ফলে সমগ্র দেশ বা তার কোনো অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।এইরূপ জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সংবিধানের 19 নং ধারায় বর্ণিত স্বাধীনতার অধিকার গুলি অকার্যকর হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আইনসভা যে কোনো আইন প্রণয়ন করতে এবং শাসন বিভাগ যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে [358(1) নং ধারা]। 
  • তাছাড়া, জরুরি অবস্থার সময় রাষ্ট্রপতি আদেশ জারি করে কেবল 20 এবং 21 নং ধারায় বর্ণিত অধিকার গুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে কার্যকর করার জন্য আদালতে আবেদন করার অধিকার স্থগিত রাখতে পারেন[359(1) নং ধারা]।
  • সশস্ত্র বাহিনীর কিংবা জনশৃঙ্খলা রক্ষার নিযুক্ত উন্নয়ন অন্যান্য বাহিনীর কিংবা গোয়েন্দা ব্যুরো বা এই ধরনের অন্যান্য সংগঠনের প্রয়োজনে নিযুক্ত টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থার কর্মীদের কর্তব্য সম্পাদন ও শৃঙ্খলা রক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য তারা কতখানি মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারবে, পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তা স্থির করে দিতে পারে [33 (ক) - (ঘ) নং ধারা]।
  • ভারতের কোনো অঞ্চলে সামরিক শাসন চালু থাকাকালীন কোনো সরকারি কর্মচারী বা অন্য কেউ শৃঙ্খলা রহ্মা বা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কোনো অবৈধ কাজ করলে পার্লামেন্ট আইন প্রনয়ন করে ওইসব কাজকে বৈধ বলে ঘোষণা করতে পারেন [34 নং ধারায়]। পার্লামেন্ট প্রনীত এরূপ আইন কে 'দন্ডনিষ্কৃতি আইন' বলা হয়।

Fundamental Duties -
BENGALI VERSION -

• ভূমিকা -

1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনের ফলে সংবিধানের চতুর্থ অংশে সঙ্গে 4(ক)/(IV-A) নামক একটি নতুন অংশ সংযোজন করা হয়।এই অংশে 51(ক) নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের 10টি মৌলিক কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে।এরপর 2002 সালে 86 তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে 51(ক) ধারাটির মধ্যে একটি নতুন মৌলিক কর্তব্য সংযোজিত হয়েছে।এর ফলে বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকদের পালনীয় মৌলিক কর্তব্যের সংখ্যা 10 থেকে 11 তে দাঁড়িয়েছে।

• কর্তব্য -

এই মৌলিক কর্তব্য গুলি হল - 

  1. সংবিধানকে মান্য করে চলা এবং সাংবিধানিক আদর্শ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ,জাতীয় পতাকা ও জাতীয় স্তোত্র এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। 
  2. স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দানকারী সুমহান আদর্শ গুলির সযত্নে সংরক্ষন ও অনুসরণ করা।
  3. ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য এবং সংহতিকে সমর্থন ও সংরক্ষণ করা। 
  4. দেশ রক্ষা ও জাতীয় সেবামূলক কার্যের আহবানে সারা দেওয়া।
  5. ধর্মগত,ভাষাগত ও আঞ্চলিক বা শ্রেণীগত ভিন্নতার ঊর্ধ্বে উঠে ভারতীয় জনগণের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ এবং নারীর মর্যাদাহানিকর প্রথা সমূহ বর্জন করা। 
  6. জাতীয় মিশ্র সংস্কৃতির গৌরবময় ঐতিহ্যকে মূল্য দান ও সংরক্ষন করা। 
  7. বনভূমি,হ্রদ,নদনদী এবং বন্যপ্রাণী সহ প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং জীবিত প্রাণী সমূহের প্রতি মমত্ববোধ প্রদর্শন করা। 
  8. বৈজ্ঞানিক মানসিকতা,মানবিকতা, অনুসন্ধিৎসু ও সংস্কার মুখী দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার সাধন করা। 
  9. সরকারি সম্পত্তির সংরক্ষণ ও হিংসা বর্জন করা। 
  10. সর্বপ্রকার ব্যক্তিগত ও যৌথ কর্মপ্রচেষ্টাকে উন্নততর পর্যায়ে উন্নতি করার উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রকার কার্যকলাপের উৎকর্ষ সাধন করা।
  11. প্রত্যেক পিতামাতা বা অভিভাবক কর্তৃক তাঁর 6 - 14 বছর বয়স্ক শিশুর শিক্ষাদানের জন্য ব্যবস্থা গ্ৰহন করা। 
• উপসংহার -

ভারতীয় নাগরিকদের উপরিউক্ত মৌলিক কর্তব্য গুলিকে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে যুক্ত করার পরিবর্তে সংবিধানের চতুর্থ অংশে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি সমূহের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে,এগুলিকে অমান্য করা হলে আদালতে প্রতিকার পাওয়া যায় না। কারণ সংবিধানের চতুর্থ অংশে বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতি গুলি আদালত কর্তৃক বলবৎ যোগ্য নয়। তাই এইসব কর্তব্যকে সদিচ্ছার প্রকাশ বলেই চিহ্নিত করা যায়।


CLICK HERE -

Fundamental Rights (ENGLISH VERSION)

Fundamental Duties (ENGLISH VERSION)




Post a Comment (0)
Previous Post Next Post