Place Of Mathematics In School Curriculum

Place Of Mathematics In School Curriculum

Place Of Mathematics In School Curriculum||বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের গনিতে স্থান ও প্রাসঙ্গিকতা

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
Place Of Mathematics In School Curriculum
Place Of Mathematics In School Curriculum



(***ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের গনিতে স্থান ও প্রাসঙ্গিকতা

BENGALI VERSION -

1.ভূমিকা -

বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করে আছে।এটি প্রমাণিত যে গণিত হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের বিষয় গুলির মেরুদন্ড।বিজ্ঞানের বিকাশ ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই মানুষের বিজ্ঞান চিন্তার অগ্রগতিতে যথার্থ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে গণিতের কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম।স্বাধীন ভারতের কোঠারি কমিশন গণিতের এই গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে যথার্থভাবে মন্তব্য করেছেন "A part form its role in the growth of the  physical science.it is now playing an increasingly important part in the development of the biological science.The advant of automation and cybernetics in this country makes the beginning of the new scientific industrial revolution and makes it all the more imp imperative that special attention be devote to the study of mathematics, proper foundations in the knowledge of the subject should be laid at school."

2. গনিতের অর্থ ও সংজ্ঞা -

• অর্থ -

গণিতের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল "Mathematics"।এই শব্দটি এসেছে "Mathein" এবং "Mathemata" দুটি গ্রিক শব্দ থেকে।"Mathein" শব্দের অর্থ হল শিহ্মন করা এবং "Mathemata" শব্দটির অর্থ হল শিখনীয় বিষয়। অর্থাৎ যা শেখার যোগ্য,যা শিখতে হয়,তাই হল শিক্ষনীয় বিষয়।ভারতীয় জাতীয় শিক্ষানীতি (1986) বলা হয়েছে - "mathematics should reason, analyse, articulate, logically, apart from being a specific subject it should be treated as a concomitant to any subject involving analysis and meaning." 
গণিত হল একটি বিজ্ঞান যেখানে মেলবন্ধন ঘটে পার্থিব ও অপার্থিব জগতের।তাই গণিতবিদদের ভাষা বলা যেতে পারে," Mathematics is a type of thought a body of result so essentially characteristics of human mind.so little influenced by environment,so uniformly present in every civilization."

• সংজ্ঞা -

Marshall H. Stone এর মতে - " Mathematics is the Study of abstract system buit of abstract elements These elements are not clescribed in concrete fashion." 

গনিতবিদ অধ্যাপক Voss এর মতে - "Our entire civilization depending on the intellectual penetrations in the mathematical sciences."

According To Courant and Robin," Mathematics is an expression of the human mind which reflects the active will,the contemplative reason and the desire for aesthetic perfection,it's basic elements are logic and intuition, analysis and construction generality and individuality."

          অর্থাৎ উপরোক্ত গণিতের সংজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে গণিতের একটি সামগ্রিক যে অর্থ উপার্জন করা যায় তা হল -
  • গণিত হল মানুষের বিমূর্ত চিন্তন ক্ষমতাকে বাস্তব প্রয়োগ করার বিজ্ঞান। 
  • দ্বন্দ্বমূলক পরিবেশে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তোলার বিজ্ঞান হল গণিত। 
  • সংখ্যা,প্রতীক,মাত্রা ভিত্তিক আকার গতি,সময়, বিভিন্ন বিষয়কে রূপ বদ্ধ করার বিজ্ঞান হল গণিত।
  • দর্শন চিন্তার প্রতিফলন কে যুক্তির ভিত্তিতে আকার বদ্ধ করা বিকাশ হল গণিত। 
  • প্রকৃতিতে বিরাজমান বিভিন্ন বস্তু ও ঘটনাবলীকে প্রতীকের দ্বারা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে উপস্থাপিত করার বিজ্ঞান হল গণিত।
  • গণিত হল অভিজ্ঞতা,অনুমান,যুক্তিতর্ক এবং প্রতীকের মধ্যে যুক্তি গ্ৰাহ্য সমম্বয় সাধনকারী বিজ্ঞান।
3. গনিতের লহ্ম্য ও উদ্দেশ্যাবলী -

• লহ্ম্য -
বর্তমানে বিদ্যালয়ের গণিত পাঠক্রমের মূল লক্ষ্য হল -

  • গণিতকে উপভোগ করা এবং তার সামাজিক ও প্রয়োগ সম্পর্কে উপলব্ধি করা,ও তার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া।
  • গাণিতিক সমস্যা বিষয়ে আলোচনা করা, কথাবার্তা ও একত্রে কাজ এবং চিন্তা করার মানসিকতা প্রদর্শন করা।
  • গণিত সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন করা এবং গাণিতিক সমস্যা ও ধাঁধার সমাধান করা।
  • শুধুমাত্র গণিত শিক্ষার উপযোগিতা ও যান্ত্রিক মূল্য উপলব্ধিই নয়, সেই অবশ্যই গণিতের অন্তর্জাত  গুরুত্বকে বিকশিত করা।
• উদ্দেশ্যাবলী -
  • গণিতের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার তত্ত্ব,সূত্র ও উপপাদ্য কে পরীহ্মায় করার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দহ্মতা অর্জন করে।
  • শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ঘটে। 
  • গণিত পরীহ্মাগারে বিভিন্ন শিহ্মন - শিখন প্রদীপন ব্যবহারের দহ্মতা অর্জন করে।
  • বিভিন্ন গাণিতিক তত্ত্ব ও ধারনার সত্যতা যাচাইয়ের দহ্মতা বিকশিত হয়। 
  • অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে ঘটনাকে বাস্তবিক রূপদান করা।
  • বিভিন্ন সমস্যাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তার সমাধানের পথ বের করা।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বোধ গড়ে তোলা।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতের যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতির উন্নয়ন সাধিত হয়।
4. বিদ্যালয়ের গণিত পাঠক্রমের স্থান -

আমাদের দেশে গণিত পাঠক্রমের বিকাশ বেশিরভাগই ঘটেছে বিংশ শতাব্দীর ত্রিশ অথবা চল্লিশের দশকের দিকে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির বিকাশের কারণে।প্রযুক্তি এবং শিল্প বিপ্লবের বিকাশ ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠক্রম বিকাশের দিকটিতেও বড়ো পরিবর্তন এনেছে।এই বিপ্লবের প্রভাব পড়েছে এখনকার সমাজবিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি উপর যা বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রভাবিত করেছে।ফলে এই দুটি শিহ্মা হ্মেত্রে পাঠক্রমে লহ্ম করা যায় গতিশীলতার বৈশিষ্ট্য। স্বাভাবিকভাবেই গণিত শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, গণিতের বিষয়বস্তু দৃষ্টিভঙ্গি এবং পাঠক্রম উন্নয়নের পদ্ধতিতেও পরিবর্তনের প্রয়োজন স্বাভাবিকভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেছে।

       ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর শিহ্মা ব্যবস্থা এর  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিশন ও কমিটি গণিত শিক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়েছে।গণিত শিক্ষণ এবং গণিত শিখনের মান উন্নয়নের জন্য গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রে নীতিগত পরিবর্তন করা হয়েছে।

জাকির হোসেন কমিটি (1937) সুপারিশ করেছেন -," Knowledge of Mathematics is an essential part of any curriculum, Every child is expected to work out the ordinary calculation required in the course of his craft work or his personal and Community concern and activities."

5. বিদ্যালয়ের গনিত শিহ্মার দৃষ্টিভঙ্গি -

NCERT বিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষার বিষয়ে যে নির্দেশিকা তৈরি করেছিল(2006) তাতে বিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষার হ্মেত্রে বিশেষ নির্দেশনা করা হয়েছে।সেগুলি হল -

  • শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়টিকে উপভোগ করতে শিখতে হবে।সেক্ষেত্রে সেই অনুভব গণিত শিহ্মা কে বিকশিত করতে সম্ভব হবে। 
  • গতানুগতিক গনিত কৌশল গুলি পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে বুঝতে হবে, যে কখন ও কিভাবে এই গাণিতিক কৌশলগুলি ব্যবহৃত হবে।
  • একটি শিশুর জীবনে অভিজ্ঞতার একটি অংশ হবে গণিত।
  • শিক্ষার্থীকে অর্থপূর্ণ গাণিতিক সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ করতে এবং তা সমাধান করতে হবে।
  • শিক্ষার্থীর যৌক্তিক চিন্তাধারাকে গণিত শিক্ষার দ্বারা বিকশিত করতে হবে।
  • গণিতের মৌলিক কাঠামো সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে অবহিত করা এবং সেই গুলিকে পাটিগণিত, বীজগণিত,জ্যামিতি,ত্রিকোণমিতি মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা।
  • গণিত শিক্ষক একটি শ্রেণিকক্ষে প্রত্যেকটি শিশুকে গনিত শিহ্মার সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রত্যাশা করে। 
       জাতীয় শিক্ষার নীতি(1986)তে প্রস্তাব বলা হয়, যে গণিতকে একটি পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে দেখাই শ্রেয়, যার মাধ্যমে একটি শিশুকে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারে এবং বিশ্লেষণ করতে ও গ্রন্থি বদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ দেয়।একটি নির্দিষ্ট বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার পরিবর্তে এটিকে বিভিন্ন বিষয়ে সহগামী হিসেবে বিবেচনা করা উচিত,যেখানে বিশ্লেষণ ও যুক্তি অন্তর্ভুক্ত। NCFSE - 2000 এর রিপোর্টে প্রায় একই ধারণা প্রতিফলিত হয়। তবুও গণিতের এই প্রনোদনের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও গণিতের লক্ষ্য সংকীর্ণ।

6. বর্তমানে মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের গনিতের স্থান ও প্রাসঙ্গিকতা -

কোঠারি কমিশন(1964-66) বিদ্যালয়ে শিক্ষার পাঠক্রমে হ্মেত্রে ব্যাপক রদবদল আনার সুপারিশ করেও তা কার্যকরী রূপ পায় নি।বস্তুত 1974 খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত আমাদের রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং গণিত শিক্ষার স্থানটি স্পষ্ট ছিল না। মুদালিয়ার কমিশনকে অনুসরণ করে এখনো পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারন স্তর হিসেবেই পড়ানো হত এবং নবম থেকে বিজ্ঞান বিভাগ আলাদা ভাবে স্বতন্ত্র একটি বিভাগ হিসেবে পড়ানো হত।স্বাভাবিক কারণেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গণিতকে আবশ্যিকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হলেও নবম শ্রেণী থেকে তা আবশ্যিক ছিল না।দশম শ্রেণীতে 'কোর' গণিত রাখার ব্যবস্থা ছিল।কিন্তু যেহেতু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় (নবম থেকে একাদশী পর্যন্ত) তাই গণিত পরীক্ষা দেওয়ায় বাধ্যতামূলক ছিল না,তাই বেশীর ভাগ বিদ্যালয়ে এই গণিত শিহ্মাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হত না। সেই সময় বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা পড়ত তারা গণিতকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ত সে কথা স্বীকার করতেই হয়। এইভাবেই 1973 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে এবং খুবই শীঘ্রই এই অসংগতি দূর করার জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে সচেষ্টতা লহ্ম্য করা যায়। 

        1974 খ্রিস্টাব্দে কোঠারি কমিশন সপারিশ অনুসারে সারা দেশের সাথে আমাদের রাজ্য ও শিক্ষা কাঠামো পরিবর্তনের সূত্র ধরে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণত শিক্ষার স্তর শুরু হয়।অর্থাৎ 10+2+3+2 শিক্ষা স্তরে কার্যকরী করে তোলার চেষ্টা হয়। 1975 খ্রিস্টাব্দে থেকে বিদ্যালয় শিক্ষার পাঠক্রমে গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায় এবং মাতৃভাষায় শিক্ষা পরেই তাকে স্থান দেওয়া হয়।ফলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রেই গণিত শিক্ষা বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিষ্ঠা পায়।

         অনেকে আবার এই মত পোষণ করেন যে, গণিত একটি কঠিন বিষয় এবং সকলের পক্ষে বিষয়টিতে পাণ্ডিত্য লাভ করা সম্ভব নয়,একথা সত্যি হলেও এটাও ঠিক যে একটা নির্দিষ্ট স্তর (দশম শ্রেণী) পর্যন্ত শিক্ষা লাভ সবার জন্য প্রয়োজন এবং তা সম্ভবও।উপযুক্ত শিক্ষণ পদ্ধতি অবলম্বন করলে এবং যথাযথ শিহ্মন পদ্ধতি ফোন করলে এবং যথাযথ শিখন পরিবেশ রচনা করতে পারলেও সমস্ত সাধারণ মানের শিক্ষার্থীদের গণিত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম। তাছাড়া আমাদের ব্যবহারিক জীবনের নানান ক্ষেত্রে গণিতের প্রভাব সুস্পষ্ট।

         একথা ঠিক যে,প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশ করতে শিক্ষা কাঠামোয়, গণিতের গুরুত্ব একটি অংশে শিক্ষার্থীদের নিকট অনুভূত হলেও একটি বড়ো অংশের শিক্ষার্থীদের নিকট তেমন গুরুত্ব পায় নি। মুদালিয়ার কমিশনের সুপারিশের মতো যে বহুমুখী পাঠক্রম প্রবর্তিত হয়, তাতে কেন্দ্রীয় এবং প্রান্তিক দুই প্রকারের পাঠক্রমের কথা উল্লিখিত ছিল কেন্দ্রীয় পাঠক্রমের অন্তর্গত বিষয় হিসেবে গণিত সেখানে আবশ্যিক পাঠ্য ছিল। কিন্তু সেক্ষেত্রেও গণিত শিক্ষার ফল খুব ভালো হয় নি। পরবর্তীকালে কোঠারি কমিশন সুপারিশ কার্যকর হলে কিছুটা আশাপ্রদ হয়।

         সাম্প্রতিককালে 2011 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে। বর্তমানে প্রচলিত প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয় স্তরের পাঠ্যক্রম,পাঠ্যসূচি,পাঠ্যপুস্তক গুলির সমীক্ষা এবং পুনর্বিবেচনা করার দায়িত্ব প্রদান করা হয় এই বিশেষজ্ঞ কমিটির হাতে।জাতীয় পাঠক্রমের রূপরেখা 2005 এবং শিক্ষার অধিকার আইন 2009 দুটিকে সমানে রেখে বিশেষজ্ঞ কমিটি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন পাঠক্রম,পাঠ্যসূচির এবং পাঠ্যপুস্তক প্রনয়নের কার্য সম্পন্ন করেছেন। 

         বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে নবম - দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম দ্বি - বিভাজিত হয়ে শুধুমাত্র দশম শ্রেণীতে পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে 2012 খ্রিস্টাব্দ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে।এখানেও গণিতকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পাঠক্রমে স্থান দেওয়া হয়েছে।

7. বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের গণিতের প্রয়োজনীয়তা -

পাঠক্রম হল শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রাণকেন্দ্র। শিখন - শিক্ষন কার্যাবলী কে সুস্পষ্ট পরিচালিত করার ক্ষেত্রে পাঠক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।পাঠক্রম ব্যতীত ধারাবাহিক এবং সার্বিকভাবে শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার কাজ সংগঠিত করা সম্ভব হতো না।প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্য ভিত্তিক,সময়োপযোগী এবং গতিশীল করে তোলার জন্য পাঠক্রম কে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।বিষয় কেন্দ্রিক পাঠক্রমের অংশ হিসাবে গণিত পাঠক্রমের দিকটিও সেই প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।গণিত পাঠক্রমের প্রয়োজনীয়তা প্রধানত কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হল -

  • বিদ্যালয়ের গণিত পাঠক্রমের মাধ্যমে শিক্ষককে শ্রেণী কক্ষের ভেতরে ও বাইরে গণিত শিক্ষণ পদ্ধতিটি কার্যকরী করে তুলতে সহায়তা করে।
  • শিহ্মন পদ্ধতিতে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বিভিন্ন শিখন সম্পদ।গণিত শিখন পদ্ধতিতে শিক্ষক কোনো কোনো শিখন সম্পদকে কাজে লাগাবেন, তা একটি তালিকা দিতে সাহায্য করে গণিত পাঠক্রম।
  • শিক্ষার্থীর শিখন কতখানি সার্থকতা লাভ করেছে তার পরিমান করা হয় মূল্যায়ন কৌশলের দ্বারা। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে শিক্ষকের মূল্যায়ন কৌশল ব্যবহার করবেন তা স্থির করতে সহায়তা করে গণিত পাঠক্রমে।
  • গণিত শিখনের যাবতীয় উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণকে সঠিক পথ অর্জন করার ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল পথ রেখা তৈরি করে গণিত পাঠক্রম। 
  • শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীদের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে ও জীবনমুখী শিক্ষার দিকটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে সহায়তা করে গণিত পাঠক্রম।
  • শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে, পেশা নির্বাচনে,বিকল্প পেশা স্থির করেন,উচ্চ স্তরের বিজ্ঞান ও গণিত অধ্যায়নের বিষয়টিকে যথার্থভাবে সফল করে তোলার জন্য যে গাণিতিক ভিত্তির প্রয়োজন হয়,তা প্রদান করে গণিত পাঠক্রম। 
  • শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশের হ্মেত্রে, যেমন - বুদ্ধি,চিন্তন ক্ষমতা,কল্পনা শক্তি,যুক্তি ও চিন্তার ক্ষমতা, সৃজন ক্ষমতার সামগ্রিক রূপটিকে যথার্থ কার্যকরী করে তুলতে গণিত প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে।
  • একটি উন্নত মানের গণিত পাঠক্রম শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাহ্মোভিক, সামাজিক বিকাশ সাধনের কার্যে সহায়তা দানের সঙ্গে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে সার্বিক বিকাশ সাধনের পথকে প্রশস্ত করে।

8. একজন সুদক্ষ গনিত শিহ্মকের গুনাবলী -

একজন সুদক্ষ গণিত শিক্ষকের গুণাবলী গুলি হল -

১. বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান -

একজন দহ্ম গণিত শিক্ষকের গণিতের বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাপকতর জ্ঞান থাকা জরুরী। তাকে গণিতের বিভিন্ন শাখা,যেমন - বীজগণিত, জ্যামিতি,স্ট্যাটিসটিকস, ক্যালকুলাস ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। এই জ্ঞান গণিতের ধারণা ও প্রক্রিয়া গুলিকে ব্যাখ্যা করতে শিক্ষকের আত্মবিশ্বাস প্রেরণা প্রদান করে।

২. বিষয়ের উৎস সম্পর্কে ধারণা -

শিক্ষার্থীদের শিক্ষার বিভিন্ন উৎস,এই সম্পর্কে একজন শিক্ষকের ধারণা থাকা উচিত। তবে তাকে গণিতের শিখনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুশীলন সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেগুলি সংঘবদ্ধ করতে হবে। 

৩. সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে চর্চা -

একজন সফল শিহ্মকের সমস্যার সমাধানের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে চর্চা করতে হবে।কারণ সেই বিকল্প পদ্ধতি গুলির গণিতে দুর্বল এরকম শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

৪. শিখন পরিকল্পনা -

শিক্ষকের সুদক্ষ শিহ্মন পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। কারণ শিখন পরিকল্পনার মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ ও তাদের আত্মবিশ্বাসকে সুনিশ্চিত করবে।

৫. শিহ্মকের ভাবমূর্তি -

একটি গনিত শ্রেণিকক্ষে একজন সক্রিয় শিক্ষক কখনোই "কারণ আমি বলছি" এইভাবে নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করবেন না বা "আমি সবকিছু জানি" এর ভূমিকা পালন করবেন না। 

৬. শিহ্মকের ভূমিকা -

শিক্ষকের ভূমিকা হতে হবে শিহ্মনের সুযোগ প্রদানকারী রূপে যিনি শিক্ষার্থীদের জন্য জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন কৌশল প্রদান করবেন।যদি কোনো শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধানের অক্ষম হয় বা ভূল পদ্ধতি অনুসরণ করে তাহলে শিক্ষককে অবশ্যই তার ত্রুটি খুঁজে বার করে তাকে উৎসাহ দিতে হবে। 

৭. নেতৃত্ব প্রদান করা -

একজন সক্রিয় গণিত শিক্ষককে সবসময় শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয়ে উভয় ক্ষেত্রেই একজন নেতৃত্ব সুলভ ভূমিকা পালন করতে হবে।শুধুমাত্র গণিতের জ্ঞানের জন্য নয়,শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব ও কার্যক্রম বিকাশের জন্যই তাকে শিক্ষার্থীদের থেকে শ্রদ্ধা অর্জন করতে হবে।শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণ স্পষ্ট নিয়ম ও প্রত্যাশা প্রদর্শন করতে হবে,যাতে শিক্ষার্থীরা সেগুলি অনুসরণ করতে পারে।

৮. যত্নশীল মনোভাব -

একজন সফল গণিত শিক্ষককে তার শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবেন।তাকে অনুসন্ধান করতে হবে যে শিক্ষার্থীর কোনটি খারাপ লাগছে বা কোনটি ভালো লাগছে।সেক্ষেত্রে তিনি সচেতন থাকবে।গণিত শিক্ষকের তাঁর শিক্ষার্থীর থেকে একটি বৃহত্তর প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু শিক্ষার্থীর পারিবারিক কোনো সমস্যা বা বাধার উপস্থিতি সম্পর্কেও শিক্ষকের অবহিত থাকবেন যেটি তার পড়াশোনাকে সময় বা বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।একই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় কোনো সুযোগ সময় দেবেন বিষয়টি আয়ত্ত করার জন্য।

9. বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গনিত শিহ্মার ক্রটি -
  • কোনো ব্যক্তি বা শিহ্মার্থী গণিত ছাড়া অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারবেন না।
  • দুর্ভাগ্যবশত বিদ্যালয়ে এই বিষয়টিকে ব্যবহারিক দক্ষতাকে অত্যন্ত অবহেলা করা হয়।সেই কারণেই শিক্ষার্থীদের মনে যে ক্রমশ গণিতের প্রতি ভয় ও বিতৃষ্ণার জন্ম নিচ্ছে তা নিরসনের কোনো প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে না। 
  • গণিতের পাঠক্রমে প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীদের কাছে সন্তুষ্ট করতে পারে না। 
  • অনেক সময় সুদক্ষ শিক্ষকের অভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণিতের প্রতি ভয়ে সৃষ্টি হয়।
  • বিদ্যালয়ে গণিত শিখনের অকার্যকারিতার মধ্যেই এর বীজ নিহিত আছে।তাই বিদ্যালয়ে গণিত পঠনের পদ্ধতিতে সংশোধন করা প্রয়োজন।
10. উপসংহার -

পরিশেষে বলা যায় যে, বিদ্যালয়ে যে সমস্ত পাঠক্রম রয়েছে তার মধ্যে গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে রয়েছে। গণিত একটি স্বতন্ত্র বিষয় হলেও অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে একটি ক্রমবর্ধমানহারে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। ফলে গণিত কে একইভাবে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কে প্রকটতা স্পষ্ট করতে হবে। বর্তমানে সমাজে আমরা দুই ধরনের মানুষ লক্ষ্য করি। একটি গাণিতিকভাবে দক্ষ এবং অন্যটি গাণিতিকভাবে অদক্ষ মানুষ।বিদ্যালয় হল সমাজের একটি অংশ।তাই বিদ্যালয়ের স্তর হইতে এই গাণিতিকভাবে অদক্ষ মানুষদের সংখ্যা হ্রাস করা একান্ত দরকার।তাই বিদ্যালয়ে অন্যান্য বিষয়ের মতোই গণিতের স্থান ও প্রাসঙ্গিকতা বিদ্যমান।



CLICK HERE -


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post