Pandit Iswar Chandra Vidyasagar

Pandit Iswar Chandra Vidyasagar

পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর||Pandit Iswar Chandra Vidyasagar

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Pandit Iswar Chandra Vidyasagar's contribution About Women Education And Social Reforms
Pandit Iswar Chandra Vidyasagar

Assignment Questions -

1. পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  সমাজ সংস্কার ও নারী শিক্ষা বিষয়ে সংহ্মেপে বর্ণনা করা।||Write Down The Pandit Iswar Chandra Vidyasagar's  Social Reforms And Women Education.

2. নারী শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার সম্পর্কে   পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সম্পর্কে ধারণা দাও।||Give An Idea About The Contribution Of Pandit Iswar Chandra Vidyasagar In Women's Education And Social Reforms.

Pandit Iswar Chandra Vidyasagar -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

উনিশ শতকের নারীশিক্ষা ও সমাজ সংস্কার মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম চিরস্মরণীয়। সমসাময়িক ধর্ম সংস্কারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কখনো কোনো ধর্মসভায় যোগদান করেন নি।বরঞ্চ কলেরা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজের হাতে সেবা করাকে তিনি মহৎ কাজ বলে কাজ বলে মনে করেছিলেন। সমাজে নারীদের ওপর নির্যাতন তাঁকে ব্যাকুল করত অনেক বেশি।অশিহ্মা ,অজ্ঞতা ও অন্ধতা থেকে নারীদের মুক্তির আলোতে নিয়ে আসাকে তিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে মনে করেছিলেন। আসলে রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার আন্দোলন ধর্মকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ধর্মকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে বিশুদ্ধ সমাজ সংস্কারের কথা ভেবেছিলেন।তাই সমাজ সংস্কার সাথে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে নারীদের সার্বিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব।

2. জন্ম পরিচয় ও শিক্ষা জীবন -

1820 খ্রিস্টাব্দে 26শে সেপ্টেম্বর বীরসিংহ গ্ৰামে (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার) জন্ম গ্ৰহন করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতার নাম ছিল ভগবতী দেবী।বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস ছিল অধুনা হুগলি জেলার বনমালীপুর গ্ৰামে। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষন ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য সুপন্ডিত ব্যক্তি।তিনি ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন।জন্মগ্ৰহন কালে তাঁর পিতামহ তাঁর বংশ অনুযায়ী নাম রেখেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার স্বল্প বেতনের চাকরি করতেন। সেই কারণে ঈশ্বরচন্দ্রের শৈশব কাল বীরসিংহেই তাঁর মা এবং ঠাকুরমার সঙ্গে অতিবাহিত হয়।

       ঈশ্বরচন্দ্র ছোটোবেলার অত্যন্ত দূরন্ত ও জেদি ছিলেন। সেই সঙ্গে ছিলেন অসাধারণ মেধাবী।মাত্র ছয় বছর বয়সে গ্ৰাম্য পাঠশালায় পড়া শেষ হলে ঠাকুরদাস তাঁকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। কথিত আছে পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইল ফলকে ইংরেজি সংখ্যা গুলি দেখে তিনি সহজে এবং অতি অল্প সময় তা আয়ত্ত করেছিলেন।1828 সালে ডিসেম্বর মাসে ঈশ্বরচন্দ্রকে কলকাতার একটি পাঠশালায় এবং 1829 খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে সংস্কৃত কলেজে ভর্তি করানো হয়। এখানে তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণ, সাহিত্যে বেদান্ত,স্মৃতি শাস্ত্র ও জ্যোতিষ সম্বন্ধে পাঠ গ্ৰহন করেন।1839 খ্রিস্টাব্দে 22শে এপ্রিল হিন্দু ল পরীহ্মা দেন ঈশ্বরচন্দ্র।সেই পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়ে 16 ই মে হিন্দু ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসা পত্রটি পান।তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে 'বিদ্যাসাগর' উপাধি টি ব্যবহৃত হয়।

3. কর্মজীবন -

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় পঠনপাঠন শেষ করার পর 1841 খ্রিস্টাব্দে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে আধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।এর উদ্যোক্তা ছিলেন Sir G.T. Marshall.5 বছর চাকরি করার পর তিনি 1846 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করে প্রচলিত পাঠক্রম ও শিক্ষাধারার সংস্কার করতে সচেষ্ট হলেন। কিন্তু কলেজের সম্পাদক রসময় দত্তের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ার তিনি পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তীকালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান করনিক হিসেবে যোগদান করেন।

       1849 খ্রিস্টাব্দে তিনি ফিরে এলেন সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক রূপে,1851 খ্রিস্টাব্দে তিনি হলেন অধ্যহ্ম।1855 খ্রিস্টাব্দে তিনি 'Special Inspector Of Schools' নিযুক্ত হয়ে বাংলার গ্ৰামেগঞ্জে পরিভ্রমণ করেন।এই সময়ই তিনি গ্ৰামের সাধারণ মানুষের অবর্ননীয় দুঃখ দুর্দশা ,অশিহ্মা, দারিদ্র্য ও কুসংস্কার দ্বারা বদ্ধ জীবনের সঙ্গে প্রত্যহ্ম ভাবে পরিচিত হলেন। মতবিরোধের সূত্রে তিনি 1854 খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ থেকে পদত্যাগ করে ফলে বদ্ধ হয়ে যায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের স্থলাভিযিক্ত  'Board Of Examiners' এর সভা হয়েছিলেন।

      বাংলার গ্ৰাম পরিভ্রমন করার সময় মাত্র দুই মাস সময়ের মধ্যে বিদ্যাসাগর 20 টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেখেছিলেন সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা স্ত্রী শিহ্মার হ্মেত্রে মেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি 15টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।স্ত্রী শিক্ষা ও তাদের সামাজিক মর্যাদার জন্য তিনি নিরলন ভাবে কাজ করতেন। তিনি বাংলা, ভাষা, সংস্কৃত,বাংলা বর্ণমালা বিষয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর অক্লান্ত চেষ্টায় 1856 খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইন পাস হয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর কাজে জন্য ইংরেজ বন্ধুদের যতটা সহযোগিতা পেতেন ততটা ভারতীয় পন্ডিতবর্গ ও শিহ্মিত সম্প্রদায়ের কাছে থেকে তা পান নি। সারাজীবন তিনি স্রোতের বিরুদ্ধে সংগ্ৰাম করে গেছেন। নিজের পরিবারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে এতটাই তিক্ত হয়েছিল যে তিনি শেষ জীবনে সাঁওতালদের মধ্যে বসবাস করেন।1891 খ্রিস্টাব্দে 29 শে জুলাই তাঁর মৃত্যু ঘটে। বিদ্যাসাগরের বিশাল কর্মকাণ্ড,তাঁর করুনা পূর্ণ হৃদয়, তাঁর সংস্কার যুক্ত প্রজ্ঞা ও প্রতিভার পূর্ণ পরিচয় দেওয়া জন্য কোনো পরিসরই যথেষ্ট নয়।

4. সমাজ সংস্কারক রূপে -

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন দয়ার সাগর। সারাজীবন যেমন অর্থ উপার্জন করেছেন তেমনি অকাতরে অন্যদের অর্থ সাহায্যে করে গেছেন, এমনকি যারা তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করেছে তাদেরও। কিন্তু তাঁর করুনার সবচেয়ে বড়ো হ্মেত্রটি ছিল নারী জাতির দুর্দশা,শিহ্মাহীনতা ও অসহায় অবস্থা।তাই সমাজে মেয়েদের জন্য নানা জেলার বিদ্যালয় স্থাপন করেই তিনি থেমে থাকেন নি,সমাজে মেয়েদের দুঃখ দুর্দশার মূল কারণ ধরে টান দিয়ে ছিলেন। তিনি দেখেছিলেন ঘরে ঘরে বাল্য বিধবারা অবর্ণনীয় অবিচার ও অনাচারের শিকার। তার কারণ বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ নামক সামাজিক কুপ্রথা।

১. বাল্য বিবাহ রদ -

উনিশ শতকের গোড়া দিকে আলোচনা সভা ও পত্রপত্রিকায় প্রশ্ন উঠেছিল হিন্দুসমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুপ্রথা সম্পর্কে বাল্য বিবাহ ও কৌলিন্য প্রথা বন্ধ করবার এবং বিধবা বিবাহ ও স্ত্রীশিহ্মা চালু করবার।1850 খ্রিস্টাব্দে 'সর্বশুভকরী পত্রিকা' প্রকাশিত হয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রথম সমাজসংস্কারমূলক প্রবন্ধ 'বাল্যবিবাহের দোষ' নামে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবন্ধ।কারন এতে তিনি সহজ বুদ্ধি এবং যুক্তি দিয়ে বিষয়টি মে অতি নির্দয় ও নৃশংস তার নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে বিদ্যাসাগর কিন্তু এই ব্যাপারে আর তেমন আগ্ৰহ দেখান নি বা অগ্ৰসর হননি। কারণ বাল্য বিবাহের দোষ সম্পর্কে তাঁর লেখাটি সমাজে এতটুকু আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে নি। বিদ্যাসাগর এতে খুবই হ্মুন্ন হয়েছিলেন। পরবর্তী কালে তখন বাল্য বিবাহের কুফল নিয়ে আলোচনার ধারা বইতে থাকে তখন তিনি নিছক দর্শকের ভূমিকা গ্ৰহন করেছিলেন।

২. বিধবা বিবাহ আন্দোলন -

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের 'সর্বপ্রধান সৎকর্ম' ছিল হিন্দু বিধবা বিবাহের সমর্থনে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা।২০-২৫  বছর ধরেই বিধবা বিবাহের পহ্মে নানা কথা উঠছিল।মাত্র একজন ছাড়া শিহরিত বাঙালি যুবকের কেউই বিধবা নারীকে বিয়ে করতে এগিয়ে আসেন নি।এই সময়েই বিদ্যাসাগর গঠনমূলক কাজটি করে দেখালেন। তিনি 'পরাশর সংহিতা' থেকে প্রমান করেছেন।

      "নষ্টে মৃতে প্রব্রজিতে,ক্লীবে চ পতিতে পেতৌ" 

অর্থাৎ নারী পাঁচ অবস্থার 'স্বামী নিরুদ্দেশ হলে' বা 'স্বামী মারা গেলে' বা 'স্বামী সন্ন্যাস গ্রহণ করলে' বা 'স্বামী ক্লীব বা পতিত হলে' নারী দ্বিতীয় স্বামী গ্ৰহন করতে পারেন।

বিধবা বিবাহ কেবল বৈধ ই নয়,একটি শাস্ত্রীয় কর্ম।1855 খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে বিদ্যাসাগর প্রকাশ করলেন 'বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব'।এই প্রবন্ধেই তিনি শাস্ত্র থেকে প্রমাণ করেছিলেন যে বিধবাবিবাহ সম্পূর্ণভাবে শাস্ত্রসম্মত। বিদ্যাসাগর বাস্তববাদী মানুষ ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, বিধবাবিবাহ চালু করতে গেলে সরকার ও সমাজের সমর্থন বিশেষ প্রয়োজন।তাই তিনি বিধবা বিবাহের সমর্থনে এবং তার জন্য সরকারি আইন পাশ করবার উদ্দেশ্যে এক ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি সরকারকে প্রেরণের জন্য একটি আবেদনপত্র প্রস্তুত করে স্বাহ্মর সংগ্ৰহ অভিযানে নেমেছিলেন। বিদ্যাসাগর প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও সমর্থকদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে আসল কাজে সফল হয়েছিলেন।1856 খ্রিস্টাব্দে 26 শে জুলাই ইংরেজ সরকার হিন্দু বিধবা বিবাহ আইন পাশ করে।কেবল আইন পাশ করেই যে সামাজিক পরিবর্তনকে কার্যকরী করা যায় না তাই বুঝতে পেরে বিদ্যাসাগর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিধবা নারীদের পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা করতে লাগলেন।এই সব বিবাহ অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার সম্পূর্ণভাবেই বিদ্যাসাগরকে বহন করতে হত।

৩. বহু বিবাহ নিরোধ -

বহু কুলীন ব্রাহ্মণের পেশা ছিল বিবাহ করা।কারও কারও এত বেশি সংখ্যক বিবাহ ছিল যে, খাতায় তার হিসাব রাখতে হত। তারা সারাবছর ঘুরে ঘুরে শ্বশুর বাড়ি যাতায়াত ও নানা উপঢৌকন আদায় করেই জীবিকা নির্বাহ করত।তাই বিধবা বিবাহ নিয়ে যখন বাংলার সমাজ আলোড়িত হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই বিদ্যাসাগর আইনের সাহায্যে বহু বিবাহ বন্ধ করার জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন।কেবল ভাবনাচিন্তাই নয়, তিনি সরকারের কাছে এক আবেদনপত্র প্রেরণ করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের এই পদহ্মেপের পরে বাংলার বহু গণমান্য ব্যক্তির উদ্যোগে বহুবিবাহ প্রথার উচ্ছেদ সাধনে সরকারের কাছে আবেদন প্রেরণ করা হয়েছিল। পরিসংখ্যান অনুসারে কমপহ্মে 30টি আবেদন প্রেরিত হয়েছিল।সকলেই ভেবে নিয়েছিলেন যে সরকারি আইন যে কোনো সময়েই পাশ হবে। পরবর্তীকালে বহুবিবাহের সমর্থনে অনেকেই দরবার করেছিল। বহুবিবাহ নিবারণ বিদ্যাসাগরের পহ্মে সম্ভব না হলেও এই ব্যাপারে জন চেতনা জাগিয়ে তোলার কৃতিত্ব তাঁর।

5. সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার স্রষ্ঠা -

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পড়ানোর সময় তিনি অনুভব করেন, প্রাচীন পদ্ধতিতে সংস্কৃত শিক্ষা সমগ্ৰ বাঙালি জাতিকে কূপমন্ডুকতায় ঠেলে দিয়েছে।তাই তিনি ইংরেজি ভাষার প্রতি ব্যুৎপত্তি লাভ করে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলেন। তিনি চেয়েছিলেন এক সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলা ভাষা সৃষ্টি করতে যার মাধ্যমে পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানকে সহজবোধ্য কিন্তু সঠিকভাবে শিক্ষা দেওয়া যাবে।তার কারণ ইংরেজি ভাষার সর্বজনীন ভাবে শিহ্মাগ্ৰহন ছিল অসম্ভব।এই কারণে কলেজের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছেন। তিনি সংস্কৃত কলেজের দ্বার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন।তিনিই প্রথম শিহ্মাবিদ যিনি মাতৃভাষাকে শিহ্মার মাধ্যমে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি মনে করেন, মাতৃভাষার শিহ্মা দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ এবং স্ত্রী জাতির পহ্মেও শিক্ষা গ্ৰহন সহজ হবে।এই কার্যকে কার্যকর করার জন্য যে সমস্ত প্রয়াস করেন। সেগুলি হল -

  • মুগ্ধবোধ ও পাণিনি নির্ভর জটিল সংস্কৃত ব্যাকরণকে সরল করে রচনা করেন ব্যাকরন কৌমুদী,যা তাঁর মৃত্যুর পরও প্রায় শতাধিক বছর ছিল। সংস্কৃত ব্যাকরণ শিহ্মার প্রধান আকর গ্ৰন্থ। বাংলা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণ রচনার প্রথম প্রয়াস নিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। বিদ্যালয় তা আরও কার্যকরী করে তোলেন।
  • নতুন বাংলা গদ্য রীতি তিনি সৃষ্টি করেন।যার মাধ্যমে অত্যন্ত সাবলীল ভাবে যে কোনো কঠিন ভাব ও বিষয় প্রকাশ করা যায়। শুধু তাই নয়, তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্য থেকে অনুবাদ করে বেশ কয়েকটি সুখ পাঠ্য গ্ৰন্থ রচনা করেছিলেন।সীতার বনবাস কিংবা ভ্রান্তিবিলাস (আহ্মরিক অনুবাদ নয়,Comedy Of Errors অবলম্বনে মৌলিক রচনা) ইত্যাদি তার উদাহরণ।
  • বাংলা মুদ্রন শিল্পকে আধুনিক করেছিলেন বিদ্যাসাগর।স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা সীমিত করে এবং বাংলা হরফের ও টাইপের সংস্কার করে যে মুদ্রন ব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন। তার ফলেই বাংলা পুস্তক ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়।
  • প্রাথমিক ভাষা শিক্ষাকে আধুনিক করে তুলেছিলেন বিদ্যাসাগর। প্রাথমিক ভাষা শিক্ষার পুস্তক তাঁর আগে রচনা করেন মদনমোহন তর্কালংকার। তাঁর ৫ বছর পর লেখনে বিখ্যাত বর্ণ পরিচয় (প্রথম ভাগ ও পরে দ্বিতীয় ভাগ)। এই পুস্তকে তিনি ভাষা শিহ্মার প্রকৃত বৈজ্ঞানিক রীতির সূচনা করেন। বাংলা ছড়ার আদি পুরুষ তাকেই বলা হয়।

6. নারী শিক্ষা - 

বিদ্যাসাগর লহ্ম করেন, নারী জাতির দুর্দশা,শিহ্মা হীনতা ও অসহায় অবস্থা।তাই মেয়েদের জন্য নানা জেলার স্থাপন করেই তিনি থেমে থাকেনি। মেয়েদের দুঃখ দুর্দশার মূল কারণ ধরে টান দিয়েছিলেন। তিনি দেখেছিলেন ঘরে ঘরে বাল্য বিধবারা অবর্ননীয় অবিচার ও অনাচারের শিহ্মার, তার কারণ বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ নামক সামাজিক কুপ্রথা।

        বস্তুত লিঙ্গ বৈষম্যের নিকৃষ্টতম উদাহরণ বাঙালি বিধবাদের জীবন। বিদ্যাসাগর তৎকালীন সমাজের এই দৃষ্ট হ্মমতাকেই দূর করতে চেয়েছিলেন। অপরদিকে মেয়েদের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করার পাশাপাশি তিনি প্রাথমিক শিক্ষার প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য যে সব নিয়মনীতি প্রবর্তন করেছিলেন সেগুলিও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।যদিও নিয়মনীতি গুলি ছেলেমেয়েদের সকলের জন্য রচিত হয়েছিল। তার মধ্যে আছে।-

  • বাংলা ভাষাকে প্রাথমিক শিহ্মার মাধ্যম হিসেবে গ্ৰহন করা।
  • পাঠ্যসূচি প্রনয়ন (পড়া,লেখা, ভূগোল, ইতিহাস, পাটিগণিত,জ্যামিতি, প্রকৃতি বিজ্ঞান ও নীতি বিজ্ঞান)।
  • বয়সভিত্তিক মডেল বিদ্যালয়ের পরিকল্পনা (3-5 বছর)।
  • শিহ্মক নিয়োগ (একজন হেড পন্ডিত ও দুই জন সহকারী পন্ডিত)।
  • পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ন (বর্ণ পরিচয়, কথামালা, বোধোদয়,ব্যাকরন কৌমুদী,বাংলা ইতিহাস, চারু পাঠ, জীবনচরিত)।
  • পরিদর্শক নিয়োগ ও আঞ্চলিক বিভাজন (সার্কেল)।
  • শিহ্মক শিহ্মনের জন্য নর্মাল বিদ্যালয় স্থাপন।

7. বিদ্যালয় স্থাপন -

1844 সালে গর্ভনর হেনরি হার্ডিঞ্জ এর উদ্দ্যোগে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার বিভিন্ন স্থানে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিহ্মাদানের উদ্দেশ্য 101টি ভার্নাকুলার স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই কাজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সক্রিয় ভূমিকা গ্ৰহন করেন।1849 সালে ভারত বন্ধু ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন বিদ্যালয় নামে পরিচিত।এই কাজে বেথুনের সহযোগী ছিলেন বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর ছিলেন (1850-1868 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত) এই বিদ্যালয়ের অবৈতনিক সম্পাদক।বেথুনের মৃত্যুর পর এই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পান বিদ্যাসাগর।

           তিনি দহ্মিনবঙ্গের চারটি জেলার (মেদিনীপুর, নদিয়া,হুগলি, বর্ধমান) ছেলেদের জন্য 200টি আদর্শ বঙ্গ বিদ্যালয় বা মডেল স্কুল স্থাপন করেছিলেন এবং মেয়েদের 35টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি 1853 সালে তিনি বীরসিংহ গ্ৰামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভগবতী বিদ্যালয়। শেষ জীবনে তিনি সাঁওতাল পরগনার কর্মাটারে সাঁওতাল পড়ুয়াদের জন্য পাঠশালা চালাতেন।

8. উপসংহার -

একজন মানুষের নিরলস এবং অবিরাম সংগ্ৰাম কীভাবে একটা সামাজিক বিপ্লব আনতে পারে তার জলন্ত উদাহরণ হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।তবে নারীর জাতির সামাজিক অবস্থানের উন্নতি সম্বন্বে একই কথা প্রযোজ্য। তাঁর মৃত্যুর পর শতাধিক বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো শিহ্মার মেয়েরা ছেলেদের পিছনে,এখনো নতুন করে স্ত্রী শিহ্মার জন্য স্বতন্ত্র প্রয়াসের কথা বলতে হয়, তাদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা কথা যে বলতে হয়, তাদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তায় কথা যে বলতে হয়,তার সত্যিই দুঃখজনক।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post