রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর|
|Rabindranath Tagore
BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION
Rabindranath Tagore's Educational Thought And Women Education |
Assignment Questions
1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিহ্মা চিন্তা এবং নারী শিক্ষা বিষয়ে সংহ্মেপে বর্ণনা কর||Discuss The Educational Thought And Women Education Of Rabindra Nath Tagore.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর||Rabindra Nath Tagore
BENGALI VERSION -
(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)
• ভূমিকা -
রবীন্দ্র প্রতিভা শুধু কাব্য সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান ভারতবাসীদের এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে।উপনিষদের বাণী তাঁকে গভীর ভাবে স্পর্ষ করেছিল।অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে সমগ্র উনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রায় অধেকাংশ জুড়ে বাংলার শিক্ষা,সাহিত্য,শিল্প ও সংস্কৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল নামটি জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আর এই ঠাকুর পরিবারের নানা প্রতিভাবান ব্যক্তিদের মধ্যে উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাল্য ও কৈশোরের যান্ত্রিক শিক্ষার অভিজ্ঞতা কবিকে প্রেরণা জুগিয়েছে শিক্ষার্থীদের যান্ত্রিকতার বেদনা থেকে মুক্তি দিতে।তিনি মূলত ভাববাদী হলেও তার শিক্ষা পরিকল্পনায় প্রকৃতিবাদ স্থান পেয়েছে।ভারতীয় শিক্ষা ক্ষেত্রে পেয়েছে এক অনন্য শিক্ষার পরিকল্পনা। সাম্প্রতিক শিক্ষার পরিকল্পনার উৎসে রয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধাবোধ। বিশ্ব পথিক রবীন্দ্রনাথের জীবনে নারী জাতি নানারূপে প্রতিভাত হয়েছে। তাঁর সাহিত্যের সমাজ ভাবনার, শিক্ষা চিন্তায়, সংগীতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে বিচিত্র রূপে,যার পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ বর্তমান লেখকের সাধ্যাতীত এবং পাঠ্যসূচির পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক ঘটে।
• জন্ম, বংশ পরিচয়, শিক্ষাজীবন -
1861 খ্রিস্টাব্দে 9 ই মে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্ম।প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র এবং পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা সারদা দেবী। ঠাকুরবাড়ির প্রথা অনুযায়ী চাকরদের তত্ত্বাবধানেই রবীন্দ্রনাথ বড়ো হয়েছেন, কিন্তু তাঁর শিক্ষা ও পুর্নাঙ্গ বিকাশের প্রতি সজাগ দৃষ্টি ছিল পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের। গৃহ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা, শরীরচর্চা জন্য কুস্তি শেখানোর পালোয়ান। সংগীত শিহ্মার ব্যবস্থা সমস্তই হত যান্ত্রিক নিয়মে। প্রথাগত শিক্ষার জন্য কিছু দিন ওরিয়েন্টাল সেমিনারি নামক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার শিক্ষা প্রনালী ও শাস্তির বহর তাকে শ্রীঘই বিদ্যালয়ের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলুন। বিদ্যালয় ছাড়ার পর তাঁর শিক্ষার সবটাই অপ্রথাগত এবং তিনি অনেকটাই ছিল স্বশিহ্মিত।1877 খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টার পড়ার জন্য তিনি লন্ডনে যান, কিন্তু পিতার নির্দেশে অসম্পূর্ণ অবস্থার ফিরে আসতে হয়।
• কর্মজীবন -
রবীন্দ্রনাথ ছোটোবেলা থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেন। জমিদারি সূত্রে রবীন্দ্রনাথ গ্ৰাম বাংলার সাধারণ মানুষ, দরিদ্র মুসলমান চাষি ও অন্যান্যদের দুঃখীদের সচহ্মে প্রত্যহ্ম করেন।এই কারনে পরবর্তীকালে পল্লি সংস্কার তাঁর জীবনের ব্রত হয়ে উঠেছিল। তিনি আধুনিক প্রনয়নে সমবায় প্রথার মাধ্যমে গ্ৰামীন অর্থনীতির উন্নতি সাধনে বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন।
1901 খ্রিস্টাব্দে 5জন ছাত্র নিয়ে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্টা করেন, সেখানে বিশ্বের জ্ঞানীগুণী ও জ্ঞান বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকে তিনি মেলাতে পেয়েছিলেন।1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সক্রিয় ভাবে আন্দোলন করেন।1913 খ্রিস্টাব্দে 'গীতাঞ্জলী' কাব্যগ্ৰন্থের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান।এই পুরস্কারের প্রাপ্ত অর্থ দান করেন শান্তিনিকেতনের নব প্রতিষ্ঠিত হয় 1921 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বিপুল সংখ্যক সাহিত্য ও সংগীত রচনার পাশাপাশি আধুনিক চিত্রকলা,নাটক ও সুচিন্তিত প্রবদ্ধ রাশির মাধ্যমে তাঁর সমাজ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার মৌলিকত্ব আজও আমাদের বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
• রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ধারণা -
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ধারণার কতগুলি মূল দিকের উল্লেখ করা যায়।-
১. মাতৃভাষা -
প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা সমস্ত স্তরেই শিক্ষার মাধ্যমে হবে মাতৃভাষা।যথার্থ শিক্ষা মাতৃভাষার মাধ্যমেই সম্ভব। ইংরেজ আমলে মাতৃভাষায় মাধ্যমেই শিক্ষাদানের পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
২. শিক্ষার পরিবেশ -
শিক্ষার পরিবেশ সচেতনতার প্রয়োজন আছে।শিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে।তাই বদ্ধ ঘরের চেয়ে মুক্ত অঙ্গন শিক্ষার উপযুক্ত স্থান।যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবিড় সংযোগ ঘটতে পারে প্রকৃতিতে সাক্ষী রেখে।
৩. জাতীয়তাবাদ দৃষ্টিভঙ্গি -
জাতীয়তাবাদ শুধুমাত্র নিজের দেশকে শ্রেষ্ঠ মনে করে পৃথিবীকে খন্ডিত করা নয়।জাতীয়তাবাদ নিজের অতীত, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করেও বিশ্বের যেখানে যা কিছু ভালো তাকেও স্বীকার করে নেওয়া। অন্যের প্রতি দ্বেষ বা হিংসা নয়।জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমের সঙ্গে সর্বজনীন প্রেমের কোনো বিরোধ নেই।
৪. আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি -
শিক্ষা শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করবে, জাতীয়তাবাদকে ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে। বিশ্বভারতী নামকরণের মধ্যেও এর ইঙ্গিত রয়েছে।এই বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের নানা দেশে থেকে শিক্ষার্থীরা এসে শিক্ষা লাভ করবে।
৫. সহপাঠক্রমিক কাজ -
শান্তিনিকেতনে পাঠক্রমে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কার্যাবলী যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অভিনয়, প্রার্থনা, নৃত্য ও সংগীত, খেলাধুলা,ভ্রমন,সম্মেলন বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতির বন্দনা ইত্যাদি বিশেষ স্থান পেয়েছে।এইসব কাজগুলি চরিত্র গঠনের ওপর বিশেষ প্রভাব ফেলে থাকে।
৬. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক -
এই সম্পর্কে আন্তরিক হওয়ার আবাসিক শিক্ষার্থীরাও গৃহ পরিবেশের অনুরূপ স্বাচ্ছন্দ্য পেয়ে থাকে,শৃঙ্খলার সমস্যাও থাকে না।
৭. ভারতীয় দৃষ্টি ও আধ্যাত্মিকতা -
প্রাচীন ভারতের তপোবনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা আদর্শের প্রতিফলন শান্তিনিকেতনের শিক্ষা ব্যবস্থায় সুস্পষ্ট।
৮. শিহ্মকের ধারণা -
রবীন্দ্রনাথের মতে, যে গুরুর অন্তরে ছেলে মানুষটি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে তিনি ছেলেদের ভার নেওয়ার অযোগ্য।প্রদীপ যেমন নিজে জ্বলে অন্যকে জ্বালাতে সাহায্য করে শিক্ষকও তেমনি নিরন্তর জ্ঞান সাধনার সাথে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দীপিত করবেন।
৯. সৃজনশীলতা -
রবীন্দ্র শিক্ষাচিন্তায় সৃজনশীলতা এক বিশেষ স্থান করে আছে।এরই মধ্যে জীবন যাপনের সার্থকতা ও আনন্দের অনুসন্ধান করা হয়েছে।সাহিত্য,সংগীত,নৃত্য,চারুকলা ও কারুকলার বিভিন্ন শাখার মধ্যে থেকে শিক্ষার্থীরা আত্ম প্রকাশের জন্য উপযুক্ত মাধ্যম খুঁজে নেবে এবং সৃজনশীল হয়ে উঠবে।
১০. জনশিক্ষা -
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তায় জন শিক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।উন্নত জাতি গুলির সফলতার পেছনে তিনি সর্বজনীন শিক্ষার ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। জন শিক্ষা বিস্তারের জন্য শান্তিনিকেতনে এই কারনে শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়।
১১. নমনীয় সময় তালিকা ও কর্মসূচি -
ব্রাহ্মমুহূর্ত থেকে শান্তিনিকেতনের কার্যক্রমের শুরু, সকাল দুপুর গড়িয়ে অপরাহ্ন পর্যন্ত চলে নানান কাজ এক নির্দিষ্ট ছন্দে, শৃঙ্খলার কড়াকড়ি ছন্দপতন ঘটায় না।
১২. প্রকৃত ও সমাজ -
মানুষ জন্ম বিশ্ব প্রকৃতি এবং মানব সমাজ এই দুয়ের মাঝখানে।সামগ্রিক শিক্ষার পরিকল্পনার পেছনে আছে তাই প্রকৃতির সাথে ঘনিষ্ঠ থাকার প্রচেষ্টার, আবার সমাজের প্রতি সচেতনতার প্রকাশ পায়।
• রবীন্দ্রনাথের শিক্ষার লক্ষ্য -
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শন তাঁর শিক্ষা লহ্ম্যকে প্রভাবিত করেছেন।এক্ষেত্রে ভাববাদ, প্রকৃতিবাদের সাথে যুক্ত হয়েছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।
- শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ সুষম বিকাশই হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য।এই বিকাশ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে শারীরিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের ধারা।
- রবীন্দ্রনাথের অপর শিক্ষা উদ্দেশ্য হল বিশ্ব মানবের সংস্কৃতির সাথে শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটানো, এর ফলে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিটি রচিত হবে।
- বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিজ্ঞান চেতনার গঠন হবে অপর শিক্ষা উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে উপযোগিতাবাদ স্থান পেয়েছে।প্রাচ্যের প্রজ্ঞা ও পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান চেতনার সহযোগে শিক্ষার্থী রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করবে।
- শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু তথ্য সরবরাহ হতে পারে না, তাই শুধু ইন্দ্রিয়ের শিক্ষা,জ্ঞানের শিক্ষা নয় বোধের শিক্ষাও শিক্ষার্থীর জীবনে গুরুত্ব পাবে।
- শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে কল্পনা,স্বাধীন চিন্তা বিকাশ, সৃষ্টিশীলতা হবে এর লহ্ম্য যা শিক্ষা প্রক্রিয়াকে করে তুলবে আনন্দময়।
- বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় সময় - রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেছিলেন মানুষকে শুধু প্রকৃতির ক্ষেত্রে নয় মানুষের মধ্যে মুক্তি দিতে হবে।জ্ঞানের তপস্যার ও শিল্প সৃষ্টির আনন্দলোকে পূর্ব ও পশ্চিম, সমস্ত বিশ্বজগৎ একটি প্রাণময় মিলন কেন্দ্রে একত্র হবে - যার মূল মন্ত্র হবে -"যত্র বিশ্বম্ ভবেত্যেকনীড়ম্"।
অন্যান্য শিক্ষাবিদদের মতো রবীন্দ্রনাথ কোনো বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেনি বা কোনো বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতির প্রতি আস্থাও ব্যক্ত করেন নি।তিনি মনে করতেন মানুষ মানুষের কাছ থেকে শিখতে পারে, যেমন জলের দ্বারা জলাশয় পূর্ণ হয়, শিক্ষার দ্বারা শিক্ষা জ্বলিয়া ওঠে। প্রাণের দ্বারা প্রাণ সঞ্চারিত হয়।অর্থাৎ তিনি পদ্ধতির পরিবর্তে আস্থা ব্যক্ত করেছিলেন শিক্ষার উপর,তার গুণগত উৎকর্ষের উপরই নির্ভর করছে শিক্ষাদানের উৎকর্ষ।শিহ্মকই স্থির করবেন তিনি শিহ্মাদান কিভাবে করবেন। তবে তিনি মুক্ত পরিবেশে স্বাধীন সক্রিয়তা স্বপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
• রবীন্দ্রনাথের পাঠক্রম -
শান্তিনিকেতনে যে পাঠক্রম অনুসরণ করা হয় তা মূলত অভিজ্ঞতা ও কর্মভিত্তিক।প্রথাগত বিষয়গুলি যেমন - ভাষা,সাহিত্য,ইতিহাস,ভূগোল, গণিত সাধারণ ভাবে স্থান পেয়েছে। পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান চর্চাকে উপযোগিতার বিচারে তিনি পাঠক্রমে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন। পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা হিসেবে বেদ,রামায়ণ, মহাভারত উপনিষদের চর্চাকে ও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
পল্লী উন্নয়নের মতো সামগ্রিক কাজ,কর্ম অভিজ্ঞতা সৃজনাত্মক ও উৎপাদনাত্মক কাজ পাঠক্রমে স্থান পেয়েছে শিল্পকলা,সংগীত,নৃত্য,ভাস্কর্যের মতো বিষয়গুলিকে তিনি সৃজনশীলতার মাধ্যম হিসেবে পাঠক্রমে স্থান দিয়েছেন, আবশ্যিকতার বিচারে মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধ বলে বিবেচনা করেছেন। স্বদেশের ইতিহাস পাঠ তার ধারণার আবশ্যিক পাঠ বলে গণ্য করা হয়।
• নারী শিক্ষা -
রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িককালে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীর সংখ্যা ছিল নগণ্য।কিন্তু যারা ছিল তাদের মধ্যে স্বতন্ত্র কোনো শিক্ষার বিষয় বা প্রণালী ছিল এমন কোনো নির্দেশন নেই।কারণ তৎকালীন মেয়েদের প্রথাগত বিদ্যালয়ে শিক্ষার বিরোধী মানুষের সংখ্যা কম ছিল না।এই পক্ষে-বিপক্ষে ও মতাদর্শের ভিত্তিতে কবি দেখেন যে,মেয়েদের স্বাভাবিক বাৎসল্য,সংসার প্রীতি ও অন্যান্য কোমল গুনের জন্য এই বন্ধন বা অধীনতা অনেকটাই স্বেচ্ছা বন্ধন।তার দরুন কোনো নারী তার বন্ধন বা অধীনতাকে অস্বীকার করে মুক্তি চাইলে সেটা ব্যাতিক্রম বা বিদ্রোহের পরিচয় বলে মনে করা হয়।এখানেই থেকে আসে নারী মুক্তি আন্দোলনে কথা।কিন্তু সেই বিষয়টি উল্লেখ করার পূর্বে নারীদের শিক্ষা ও শিক্ষা প্রণালী কথাটি আগে বলা দরকার।রবীন্দ্রনাথ বলেছেন বিদ্যার দুটি রূপ আছে। একটি হল বিদ্যার বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা, অপরটি হল ব্যবহারের রূপ। বিশুদ্ধ জ্ঞানের হ্মেত্রে কোনো নারী পুরুষ ভেদাভেদ প্রশ্ন নেই।কিন্তু সেই জ্ঞানকে কিভাবে কাজে লাগানো হবে বা ব্যবহার করা হবে সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ থাকাই স্বাভাবিক।কারণ নারী নারীসত্তা এবং পুরুষের পুরুষত্বের দাপটে বা অহংকার দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে এবং সমাজে তা মান্যতাও পেয়ে থাকে। নারীপুরুষের স্বাভাবিক সহজাত পার্থক্য বর্তমান যুগের বিচারে জৈব লিঙ্গের পার্থক্য। তাঁর মতামত থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার,যে তাঁর সময় জৈব লিঙ্গ ও লিঙ্গ বোধের মধ্যে কোনো দূরত্বের কথা ভাবা হয় নি।
সংসারে সন্তান ধারন ও লালন পালনই নারীদের একমাত্র কাজ নয়, কাজেই মুক্তিকামী বিদ্রোহী নারীদের নিজের শক্তিতে মুক্তি অর্জন করতে হলে তাদের সাংসারিক সুখ ও নিশ্চিন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা বিসর্জন দিতে হবে।তিনি একথা বলতে ভুল করেন নি যারা বিদ্রোহী অর্থাৎ যারা প্রথাগত নারীসুলভ ভূমিকা অস্বীকার করেন এবং তা করেন নিজের শক্তিতে তাদের হ্মেত্রে ব্যবহারিক বিদ্যা অর্জন প্রনালী পুরুষের সমান।সম্ভবত তিনি বলতে চেয়েছিলেন প্রকৃত নারীমুক্তি ঘটলে আর নারী পুরুষের লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না।তিনি মনে করেন জানার অধিকার মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য,যা জানাটাই মানবিক ধর্ম,শিক্ষা মানুষের সেই স্বাভাবিক চাহিদা পূরণের যোগান যোগান দেয় না যদি চাহিদা পূরণের জোগান দার।যদি চাহিদার মধ্যে বৈচিত্র থাকে তবে তাকে অগ্রাহ্য করে সকলের জন্য একই শিক্ষা কুপথ্যের সমান।তাতে না হয় মনের পুষ্টি,না হয় তার সত্যিকারের ব্যবহারিক প্রয়োগ। এদিক থেকে দেখতে গেলে সবারই যে কেরানি হওয়ার শিক্ষা প্রয়োজন তা অবাস্তব চিন্তা।পুরুষ ও নারীর চাহিদার মধ্যে যতটুকু ভিন্নতা আছে তাকে স্বীকার করে নিয়ে উভয়ের মধ্যে শিক্ষার সেই ভেদ টুকু থাকাই দরকার।
• উপসংহার -
রবীন্দ্রনাথ এক মহৎ শিহ্মাদর্শ বর্তমান প্রজন্মকে দিয়ে গেছেন।এই আদর্শের সংরহ্মণের ও প্রসারের দায়িত্ব ভারতীয়দের।মানুষকে প্রকৃতি ও বিশ্বমানবতার মধ্যে মুক্তি দেওয়ার যে আয়োজন তিনি শিক্ষা প্রাঙ্গনে করে গেছেন সেই স্বপ্ন পূরণে বিশ্বভারতী সমর্থ হবে এই প্রত্যাশা রাখা যায়। তাঁর শিক্ষা চিন্তা ও প্রয়োগ,পরীহ্মা নিরীহ্মা যাকে প্রথম বিশ্লেষনের মাধ্যমে সর্ব সমহ্মে নিয়ে আসেন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ,যা এখনও আমাদের চর্চার বিষয়।
CLICK HERE -