শ্রবন প্রতিবন্ধকতা||Hearing Impairment

শ্রবন প্রতিবন্ধকতা||Hearing Impairment

শ্রবন প্রতিবন্ধকতা||Hearing Impairment

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Hearing Impairment - Concept, Definition, Characteristics,Classification,layout, causes, Preventive Measures Teaching Techniques Learning Problems And Role Of Teacher||শ্রবন প্রতিবন্ধকতা - ধারণা ও সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্যাবলী,শ্রবন শ্রবন শ্রেণিবিভাগ,শ্রবন স্তরবিন্যাস, কারণসমূহ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা,শিখন কৌশল পদ্ধতি,শিহ্মা দানে সমস্যা,শিহ্মক-শিহ্মিকার ভূমিকা

শ্রবন প্রতিবন্ধকতা - ধারণা ও সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্যাবলী,শ্রবন শ্রবন শ্রেণিবিভাগ,শ্রবন স্তরবিন্যাস, কারণসমূহ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা,শিখন কৌশল পদ্ধতি,শিহ্মা দানে সমস্যা,শিহ্মক-শিহ্মিকার ভূমিকা

BENGALI VERSION

(ENGLISH VERSION PDF FILE BELOW THE ARTICLE)

1. ভূমিকা -

প্রতিটি মানুষের পাঁচটি ইন্দ্র রয়েছে,যথা - চহ্মু, নাসিকা, শ্রবণ, জিহ্বা এবং ত্বক।এই পাঁচটি ইন্দ্রের দ্বারাই মানুষ নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করে।জন্মের পর কর্ণের মাধ্যমে শব্দ শিশু মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।শব্দের সংযোগ পরিবেশের সঙ্গে শিশু সম্পর্কে সূচিত হয়।মানুষের কর্ণ তিনটি প্রধান অংশে নিয়ে গঠিত।যথা বহিঃ কর্ণ,মধ্য কর্ণ ও অন্তঃ কর্ণ। বহিঃ কর্ণের অঙ্গ গুলি হল কর্ণছত্র,কর্ণকুহর এবং কর্ণপটহ। মধ্য কর্ণের অঙ্গগুলি হল তিনটি অস্থি এবং ইউস্টেচিয়ান নালি।এই অস্থি তিনটি হল মেলিয়াস,ইনকাম এবং স্টেপিস।আর অন্ততঃ কর্ণের অঙ্গগুলি হল অর্ধবৃত্তাকার নালি,অ্যাম্পুলা, ককলিয়া এবং অডিটরি নার্ভ।বাইরের কোনো উৎস থেকে সৃষ্ট শব্দ তরঙ্গ বহিঃকর্ণের পর্দায় গিয়ে আঘাত করলে,যে চম্পনের সৃষ্টি হয়,সেই কম্পন এসে মধ্য কর্ণের অস্থি তিনটির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ককলিয়াতে পৌঁছায়।ককলিয়ার অন্তঃলসিকা ও বহিঃলসিকা আন্দোলিত হয় এবং অভিটরি নার্ভের মাধ্যমে শ্রবনের অনুভূতি মস্তিষ্কের শ্রবণ অঞ্চলের পৌঁছোলে আমরা শুনতে পাই। কিন্তু যখন শ্রবণ ইন্দ্রিয় জনিত ক্রটির শিকার হয় তখন শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

2. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার ধারণা এবং সংজ্ঞা -

• ধারণা -

জন্মের পর কানের মাধ্যমে শব্দ শিশু মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।শব্দের সংযোগে পরিবেশের সঙ্গে শিশু সম্পর্কে সূচিত হয়।শব্দ প্রয়োগের করে শিশু নিজেকে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে এবং শব্দ শুনে অপরের মনোভাব বুঝতে পারে। এইভাবে শব্দ ব্যবহার পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের যোগ সূত্রে হয়ে ওঠে।যদি শ্রবনেন্দ্রিয় অঙ্গের কার্যকারিতার হ্মেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে শিশুটির পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হয়। শিশুটির পরিবেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তাতে শিশুটি শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়।

বংশগতি বা পরিবেশের কারণে শ্রবণের হ্মেত্রে বাধা বা Impairment তৈরি হয়।এই বাধা কারনে শিশুরা তাদের শ্রবণ দহ্মতাকে কাজে, লাগাতে পারে না। শ্রবণের হ্মেত্রে সমস্যা বা বাধা এই শিশুদের শ্রবণ অহ্মম করে তোলে।অথবা এই শিশুদের বাধার কারণে শ্রবণ সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। অপরদিকে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা বলতে বোঝায় এমন অসংগতি বা অতিক্রম করা যায় না বা সংশোধনযোগ্য নয়।

• সংজ্ঞা -

বিশিষ্ট মনোবিদ অ্যালিস স্ট্রেঞ্জ মূক ও বধির প্রসঙ্গে বলেছেন,"A child who is born with tittle or no bearing or who has suffered the loss early in infancy before speech and language patterns are acquired,is said to be deaf." অর্থাৎ একটি শিশু যে স্বল্প শ্রবণশক্তি নিয়ে অথবা একেবারে শ্রবণ শক্তিহীন অবস্থায় জন্মায় কিংবা যে শিশুর শ্রবণশক্তি তার ভাষা ও বাচনিক ভঙ্গি বিকাশের আগেই নষ্ট হয়ে গেছে তাকেই মুখ(Deaf) ও বধির(Dumb) বলা হয়।

UNESCO বিশেষজ্ঞ কমিটি (1985) যে সংজ্ঞাটিকে মান্যতা দিয়েছেন,তা হল - ".....deaf are those children whose spontaneous speach and language development have been very much retarded or is completely absent....." অর্থাৎ তারাই বধির শিশুর যাদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাষার বিকাশ বা দহ্মতা অতিমাত্রায় বাধা প্রাপ্ত বা অনুপস্থিত বললেই চলে।

Persons With Disabilities Education Act (1990) এর মতে অনুসারে,বধিরতার সংজ্ঞা হল "Deafness is hearing Impairment that is so severe that the child is impaired in processing linguistic information through hearing with or with hearing Impairment that adversely effects a child's educational performance."

USA এর School for the Dumb এর বিশেষজ্ঞরা এক সম্মেলনে স্বল্প মাত্রায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী সম্পর্কে বলেছেন,"....A hard of hearing is one whose hearing is disabled to an extent (35 db - 69 db) that makes difficult but does not preclude the understanding of speech through the car alone with or without a hearing aid." অর্থাৎ স্বল্প শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শ্রবণ হ্মমতা সীমাবদ্ধ (35 db - 69 db) এবং সহায়ক যন্ত্রের সাহায্যে নিয়ে বা সাহায্যে ছাড়াই কেবলমাত্র কানের সাহায্যে তিনি অন্যের কথা শুনতে ও বুঝতে সহ্মম।

3. শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের বৈশিষ্ট্যাবলী -

শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কানে বাইরের শব্দ যতটা এবং যেভাবে পৌঁছায় তার ভিত্তিতে তাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বৈচিত্র্য দেখা যায়। সাধারণ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল।-

  • শ্রবণের মাত্রা অনুযায়ী ভাষার বিকাশ,কথা বলার ধরন,শব্দ ও বাক্য ব্যবহারের প্রকৃতি নির্ভর করে।প্রায়ই কম কথা বলে,বিকৃত উচ্চারণ ও বধিরতা থাকলে শারীরিক ভাষা (ইশারা,ইঙ্গিত ইত্যাদি) বেশি ব্যবহার করে।
  • সামনের দিকে ঝুঁকে শোনার চেষ্টা করে এবং কানে হাত দিয়ে শোনার চেষ্টা করে।
  • শ্রেণিকক্ষে অমনোযোগী হয়।
  • শ্রেণিকক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের কথায় অর্থ বোধ হয় না।
  • বধির শিশুদের মধ্যে সামাজিক আচরণ সমস্যা দেখা যায়।
  • কখনো কখনো প্রহ্মোভ জনিত সমস্যা(অতি কুদ্ধ আচরণ) দেখা দিতে পারে।
  • লেখা ও দেখার উপর বেশি নির্ভরশীল।
  • অন্যের ঠোঁট নাড়া দেখে বুঝতে চেষ্টা করে।
  • পাঠ্য বিষয়ের স্মৃতি কম কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সামগ্ৰিকভাবে স্মৃতি দুর্বল।

4. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শ্রেণিবিভাগ -

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতাকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।যথা -

  • মাত্রা অনুযায়ী বধিরতা।
  • বয়স অনুযায়ী বধিরতা।
  • ভাষাগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বধিরতা।
  • কর্ণের ক্রটি অনুয়ায়ী বধিরতা।
  • কেন্দ্রীয় বধিরতা।
• মাত্রা অনুযায়ী বধিরতা -
শ্রবণ জনিত ক্রটির মাত্রা অনুযায়ী শিশুদের প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।যথা -
১. বধির -
যে সমস্ত শিশুকে বোঝায় যারা সম্পূর্ণরূপে শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়েছে।এইসব শিশুদের শ্রবণ মূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এরা শ্রবণ অনুভূতি গ্রহণ করতে পারবে না অর্থাৎ শুনতে পারে না।একে বধির বলে
২. আংশিক বধির -
যে সমস্ত শিশুদের মধ্যে শ্রবণ ক্ষমতা অল্প হলেও বর্তমান।অর্থাৎ শ্রবণ হ্মমতা সামান্য রয়েছে।এইসব শিশুদের শ্রবণ মূলক প্রশিক্ষণ দিলে বা শ্রবণ যন্ত্র ব্যবহার করলে এই ধরনের শিশুরা আংশিক হলেও শুনতে পাবে। একে আংশিক বধির বলে।
• বয়স অনুযায়ী বধিরতা -
শিশুর বয়সের উপর ভিত্তি করে বধিরতাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।যথা -
১. জন্মগত বধির -
যে সমস্ত শিশুরা জন্মগত ভাবে বধির তারা জন্মের পর কোনো দিনই কিছু শুনতে পায় না।একে জন্মগত বধির বলে।
২. সংগঠিত বধির -
যে সমস্ত শিশুরা জন্মের পর ভালোভাবে শূনতে পেলেও পরবর্তীকালে কোনো রোগব্যাধির জন্য বধিরতা প্রাপ্ত হয়।একেই সংগঠিত বধির বলে।
• ভাষাগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বধিরতা -
শিশুর ভাষাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বধিরতা কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।যথা -
১. ভাষাগত বিকাশের পূর্ববর্তী বধিরতা -
শিশুর জন্ম গ্ৰহনের পর তার ভাষাগত বিকাশের আগেই শ্রবণ জনিত ক্রটির কারণে যে বধিরতা হয়,তাকে ভাষাগত বিকাশের পূর্ববর্তী বধিরতা বলে।
২. ভাষাগত বিকাশের পরবর্তী বধিরতা -
শিশুর জন্মের পর তার ভাষাগত বিকাশ কিছুটা হওয়ার পর যদি কোনো বিশেষ শ্রবণ জনিত ক্রটি ঘটে। তাহলে ভাষাগত বিকাশের পরবর্তী বধিরতা বলে।
• কর্ণের ক্রটি অনুয়ায়ী বধিরতা -
মানুষের কর্ণের তিনটি অংশ রয়েছে,যথা বহিঃ কর্ণ,মধ্য কর্ণ ও অন্তঃকর্ণ।বাইরের কোনো উৎস হইতে বহিঃ কর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণ মাধ্যমে শ্রবণের অনুভূতি মস্তিষ্কের শ্রবণ অঞ্চলের পৌঁছোলে আমরা শুনতে পাই।এই শোনার হ্মেত্রে তিন ধরনের ক্রটি লহ্ম করা যায়।যথা -
১. বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের গঠনগত কোনো সমস্যা থেকে শ্রবণ সঞ্চালনের বধিরতা।
২. অন্তঃকর্ণের ককলিয়া এবং অর্ধবৃত্তাকার নালি থেকে বহির্গত স্নায়ুজনিত বধিরতা।
৩. প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় প্রকার ক্রটি মিলিয়ে মিশ্র ক্রটি।
• কেন্দ্রীয় বধিরতা -
এই প্রকার বধিরতা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রের ক্রটির ফলে ঘটে থাকে।

5.শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার স্তরবিন্যাস -

শ্রবণ হ্মমতা নির্ণয় করার জন্য শব্দের তীব্রতা এবং শব্দের কম্পাঙ্ক প্রয়োগ করা হয়।শব্দের তীব্রতা ও কম্পাঙ্কে পরিমাপের একক ডেসিবেল।'বেল' একটি আনুপাতিক রাশি।একটি নির্দিষ্ট তীব্রতা ও কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট শব্দের পরিমাপ।ডেসিবেল হল বেল এর এক দশমাংশ।শ্রবণ হ্মমতার মাত্রা প্রকাশ করার জন্য ডেসিবেল বা ডেবে একক ব্যবহার করা হয়।শ্রবণ হ্মমতার মাত্রা অনুসারে তার স্তরবিন্যাস করা হয়। আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় দুটি কানে ভিন্ন মাপের শ্রবণ সহ্মমতা থাকতে পারে।অপেহ্মাকৃত ভালো কানে শব্দের গ্ৰহণীয়তা বা শ্রবন সহ্মমতা অনুসারে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার স্তরবিন্যাস করা।

এই স্তরবিন্যাস ব্যতীত শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা ও বাক্ প্রতিবন্ধকতার ধরন অনুসারে ভারত সরকারের জনকল্যাণ মন্ত্রকের তথ্যের ভিত্তিতে স্তরবিন্যাস করেছেন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার মাত্রা বাক্ প্রতিবন্ধকতার মাত্রা বিশেষ চাহিদা শিহ্মাগত অবস্থান
স্বাভাবিক শ্রবণ অহ্মম শিশু(0-25db) স্বাভাবিক বাক্ সহ্মমতা শিশু -- মূল স্রোতের সাধারণ বিদ্যালয়ের শিহ্মা গ্ৰহন করে।
মৃদু মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু(2db6-40db) বাক্ সহ্মমতা ও ভাষার বিকাশ স্বাভাবিক সীমার মধ্যে কিন্তু হ্মীণ শব্দ বা দূর থেকে আসা শব্দ শুনতে পায় না। হিয়ারিং এড। সাধারণ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে সামনের সারিতে বসে শিক্ষা গ্ৰহন করতে পারে।
মধ্যম মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু(41db-55db) ভাষা বিকাশ ব্যাহত হয়।কথা ক্রটি পূর্ণ হয়।লিখন পঠন দহ্মতা বিলম্বিত হয়। হিয়ারিং এড ও ভাষা দহ্মতার প্রশিক্ষণ। সাধারণ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে বিশেষ বসার ব্যবস্থা,সহায়ক শিহ্মণ পদ্ধতি এবং সমম্বিত শিক্ষা ব্যবস্থার উপকৃত হয়।
গুরুতর মাত্রায় শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু(56db-70db) বিঘ্নিত ভাষার বিকাশ। শব্দভাণ্ডার,ব্যাকরণ,বাক্য গঠন ইত্যাদি ক্রটিপূর্ণ।ব্যক্তিকেন্দ্রিক সহায়তা পেলে লিখন পঠন দহ্মতা অর্জন করতে পারে। হিয়ারিং এড।ব্যক্তিকেন্দ্রিক বাকর সহ্মমতার প্রশিক্ষণ। খুব কম সংখ্যক শিশু মুল স্রোতের বিদ্যালয়ে বিশেষ সহায়তা দানের উপকৃত হয়।প্রাক্ প্রাথমিক ভাষার প্রশিক্ষণ দ্বারা উপকৃত হয়।
চূড়ান্ত মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু(71db-90db) স্বতঃস্ফূর্ত ভাষার বিকাশ বা বাক্ সহ্মমতা ঘটে না।খুব দুরত্বের মধ্যে শব্দ শুনতে পারে। অসংগঠিত বাক্য বলতে পারে। হিয়ারিং এড। বাক্ শ্রবণ প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিশেষ সহায়তা করে। বিশেষ বিদ্যালয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ। বিশেষ ধরনের বাক্ শ্রুতি,ভাষা ও শিহ্মাগত সহায়তা প্রয়োজন।
চূড়ান্ত মাত্রার শ্রবণ প্রতিবন্ধী (91db- above) ভাষার বিকাশের বা প্রয়োগের কোনো দহ্মতাই থাকে না। যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাকর বা শ্রবণ দহ্মতা ব্যবহার করে না। প্রশিক্ষণ সহ হিয়ারিং এড প্রাথমিক অবস্থায়।বাক্,শ্রবণ প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিশেষ সহায়তা করে। বিশেষ বিদ্যালয়ে ন্যূনতম শিক্ষা ও বৃত্তিগত প্রশিক্ষণে এরা উপকৃত হয়।


6. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার কারণসমূহ -

শ্রবণ প্রক্রিয়ার কোনো বাধা বা ক্রটির কারণেই শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা, তা বধিরতা বা আংশিক বধিরতা যেটিই হোক,কেবলমাত্র শারীরিক অক্ষমতার কারণেই ঘটে না,কখনো কখনো শারীরিক অক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক অসংগতির কারণে শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।আধুনিক যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞান, শল্য চিকিৎসা, জেনেটিক্স ইত্যাদি শাখায় উন্নতি ও প্রসার ঘটা সত্বেও শ্রবণ প্রতিবন্ধীকতার মূল কারণকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায় না।একাধিক কারণে তাদের সমষ্টিগত প্রভাবে শ্রবণ প্রতিরূপ সৃষ্টি করে।নিম্নে শ্রবন প্রতিবন্ধকতার কারণগুলি আলোচনা করা হল।-

ক. জিন ও বংশগত কারণ -

জন্মগত বধির শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের জিন ও বংশগতিই বধিরতার অন্যতম কারণ।পিতা-মাতা বা বংশগতভাবে তাদের সন্তান বধির হবার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু বধিরতা সমস্যাটির সঙ্গে জেনেটিক্স জড়িয়ে আছে,তাই একই প্রজন্মের একাধিক কারণে বধির শিশু জন্মাতে দেখা যায় এবং পরবর্তী প্রজন্মে জেনেটিক্স-এর নিয়মমতো বধির শিশু জন্মাতে থাকে। 

১. রুবেলা সংক্রমণ -

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে মায়ের যদি হাম বা জার্মান মিজলস্ বা রুবেলা সংক্রমণ হয়, অথবা মা কোনো মিজলস্ আক্রান্ত ব্যাক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আসেন তবে সেই শিশুর বধির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

২. ইনফ্লুয়েঞ্জা বা মাম্পস্ সংক্রমণ -

গর্ভাবস্থায় মায়ের ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাম্পস্ ইত্যাদি রোগে সংক্রামক রোগ হলে গর্ভস্থ শিশুর শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা হবার সম্ভাবনা থাকে।

৩. অন্যান্য সংক্রমন - 

গর্ভাবস্থায় মায়ের কিডনি,লিভার,ডায়বেটিস বা অস্ত্রের সংক্রামক অসুস্থতা শিশুর শ্রবণ সহ্মমতাকে ব্যাহত করতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য সংক্রামন যেমন - সাইটোমেগালো ডাই বা হার্বিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস গর্ভাবস্থায় মাকে আক্রমন করলে শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে।

৪. অপুষ্টির Rh অসংগতি -

যদি বাবা ও মায়ের রক্তে Rh ফ্যাক্টরের অসংগতি বা অমিল থাকে তবে শিশুটি শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে।একই সঙ্গে বলা যায় গর্ভবতী মা যদি দীর্ঘ অপুষ্টির শিকার হন কিংবা খাদ্যে আয়োডিনের অভাব ঘটে তবে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং শিশুটি শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে।

৫. ড্রাগের প্রভাব -

গর্ভাবস্থায় অসুস্থ মায়ের চিকিৎসায় যদি অটোটকসিক বা পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তবে গর্ভস্থ শিশুর শ্রবণ সহ্মমতা ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী মা যদি কোনো নেশার আসক্ত থাকেন, ধুমপান, অ্যালকোহল বা অন্যান্য মানকে আসক্তি থাকে, তবে ওই শিশুর সমুহ হ্মতি হতে পারে এবং সে শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে।

খ. জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট -

প্রসবের সময়ে মা দীর্ঘসময় শ্বাসকষ্টে ভোগে করলে শিশুর জন্মকালে তার গলায় আম্বেলিকাল কর্ড জড়িয়ে গেলে নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হয় ও শিশুর মস্তিষ্কে ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অক্সিজেনের ঘাটতি হয়।ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হ্মতিগ্ৰস্ত হয় ও শিশুর শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে।

i. জন্মকালীন অসর্তকতা -

• অভিজ্ঞ সহকারী ও বিশেষণ চিকিৎসক দ্বারাই নবজাতকের জন্ম হওয়া বাঞ্ছনীয়। তার অন্যথা হলে শিশুর বিভিন্ন অসংগতি এমনকি শ্রবণ প্রতিবন্ধী হবার সম্ভাবনা থাকে।

• জন্মের সময় ব্যবহৃত যন্ত্র যথা কাঁচি,ফরসেপ ইত্যাদির ক্রটিপূর্ণ প্রয়োগে শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধী হতে পারে।

• গর্ভস্থ অবস্থায় বাহ্যিক চাপ,রক্ত হ্মরণ ইত্যাদি নবজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের হ্মতি করতে পারে ফলে তার শ্রবণ হ্মমতা নষ্ট হতে পারে।

ii. জন্মকালীন অন্যান্য বাধা -

শিশু মাতৃগর্ভে থাকার নির্ধারিত সময়সীমার আগে অর্থাৎ নয় মাসের কম সময়ে জন্ম নিলে, অপরিণত শিশুর জন্মকালীন ওজন যদি 2 কেজির কম হয় তবে শিশুর শ্রবণ শক্তির হ্মতি হবার সম্ভাবনা থাকে।

iii. জন্ম পরবর্তী কারণ -

• ভাইরাস সংক্রমণ -

জন্মের তিন মাসের মধ্যে শিশু যদি হাম,মাম্পস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয় তবে তা শিশুর শ্রবণশক্তির ক্ষতি করতে পারে।

• ওষুধের প্রয়োগ -

নবজাত শিশুর চিকিৎসায় যদি স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন জাতীয় ওষুধ অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয় তা শিশুর শ্রবন শক্তিকে ব্যাহত করে।

• বাহ্যিক আঘাত - 

শিশুর কানে বাইরে থেকে আঘাত লাগলে কিংবা শিশু পড়ে গেলে তার কানে দূষিত পদার্থ ও জল ইত্যাদি প্রবেশ করলে তা শিশুর শ্রবণ ক্ষমতাকে বিঘ্নিত করে। এছাড়া ঠান্ডা লাগা, এলার্জি, গলা ফুলে যাওয়ার ফলে শিশুর শ্রবণের ক্ষতি করে এবং শ্রবণ দক্ষতা নষ্ট করে দেয়।এগুলির ফলে কান থেকে পুঁজ নিঃসরণ শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ - এই তথ্য গবেষণা থেকে পাওয়া গেছে(NSSC 1992) 

• শব্দদূষণ -

জোরালো ও তীব্র শব্দ শিশুর শ্রবন ক্ষমতার হ্মতিসাধন করে।যদি জোরালো ও তীব্র শব্দ দীর্ঘ স্থায়ী হয় তবে শিশুর শ্রবণশক্তি একবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।উল্লেখ করা যেতে পারবে যে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজি, মাইক্রোফোন,গাড়ির হর্ন ইত্যাদির শব্দ মাত্রা (অনাধিক 65 ডেসিবেল) আইন করে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

Read More...... শব্দদূষণ||Sound Pollution

• ওটাইটিস মিডিয়া -

জন্মের পর শিশুর মধ্যে কর্ণের আক্রমণ জনিত কারণে পুঁজ নিঃসৃত হয় এবং তা শিশুর বধিরতার অন্যতম কারণ। আবহাওয়া, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ, বয়স,জিনগত উপাদান ইত্যাদি সঙ্গে এই সংক্রমনের সম্ভাবনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।স্যাঁতসেতে আবহাওয়া, নিম্নমানের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ ও বহু সমস্যাযুক্ত পরিবারে এই জাতীয় সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশি(Tedeet at 1980)।

• ওটোসক্লেয়োসিস -

মধ্য কর্ণের হাড় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে এবং শিশুর শ্রবণ ক্ষমতার বাধা সৃষ্টি করে, এর ফলে শিশু শ্রবণ প্রতিবন্ধকতায় শিকার হয়।

7. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা -

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।যথা -

  • গৃহে টেলিভিশন,রেডিও বা মিউজিক প্লেয়ার ভলিউম কমিয়ে দিতে হবে।
  • উচ্চ শব্দ এড়াতে এবং শ্রবণ সুরহ্মার জন্য ইয়ারপ্লাগ এবং ইয়ারমাফ ব্যবহার করতে হবে।
  • গৃহে বাচ্চাদের উচ্চ শব্দ বা উচ্চচাপ যুক্ত সরঞ্জাম থেকে দূরে রাখতে হবে।
  • বিদ্যালয়ে বা কলেজে প্রাঙ্গন ও স্টেডিয়ামে লাউড স্পিকার বা কামান এর মতো উচ্চ শব্দ উৎপন্ন কারী উৎস থেকে বিশেষ করে বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
  • শ্রবণ শক্তি হ্রাসকারী অ্যাসপিরিন থেকে কেমোথেরাপির ওষুধ এবং IV অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
  • ড্রাগ সম্পর্কিত শ্রবণ শক্তি হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে একটি বিকল্প ওষুধ গ্ৰহন করতে হবে।
  • ব্যায়াম আপনার কান সহ আপনার সারা শরীরের রক্ত প্রবাহ করতে সহায়তা করে,তাই ব্যায়াম চর্চা করতে হবে।
  • ধুমপান এবং মাদক দ্রব্য ব্যবহার কমাতে হবে।

8. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা শিক্ষার্থীদের শিহ্মণ পদ্ধতি -

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা মুক(Deaf) ও বধির(Dumb) ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা আংশিকভাবে বধিরতা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার হ্মেত্রে শ্রুতি সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করলে এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে তারা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো কথাবার্তা বলতে এবং শুনতে পারে। কিন্তু যারা সম্পূর্ণরূপে মুক ও বধির তাদের জন্য নিম্নলিখিত শিহ্মাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

১. ওষ্ঠ পঠন পদ্ধতি -

বক্তার কথা বলার সময় তার ঠোঁট নড়াচড়া দেখে কথা বা ভাব বুঝতে পারাকে ওষ্ঠ পঠন পদ্ধতি বা বাক্ পঠন পদ্ধতি বলা হয়।মুক ও বধির শিহ্মার্থীরা বক্তার মুখের সামগ্ৰিক পরিবর্তন, নড়াচড়া ইত্যাদি লহ্ম করে বক্তার কথা বোঝার চেষ্টা করে থাকে।পরে একই ভাবে ঠোঁটের সঞ্চালন দেখে তারা ভাষা শিখে থাকে।এই পদ্ধতির আর এক নাম হল মৌখিক পদ্ধতি।এর প্রবর্তক হলেন জুয়ান পাবলো বনেঁ।

২. আঙুলের দ্বারা বানান শেখা পদ্ধতি -

যেসব শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ রূপে বধির তারা মনের ভাব প্রকাশের জন্য আঙুল সঞ্চালনের মাধ্যমে এই শিহ্মার্থীদের অহ্মর, শব্দ,বাক্য ও বানান শেখা সহজে শেখানো যায়।এই সঞ্চালন পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন পেরিয়ার।ভারতে এই পদ্ধতি কর পল্লবী পদ্ধতি নামে পরিচিত।

৩. কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতি -

এই পদ্ধতিতে মুক ও বধির শিহ্মার্থীদের অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকার কথা বলার সময় তাদের মুখে হাত বুলিয়ে, গলা স্পর্শে করে শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে।কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন কেটি অ্যালকর্ণ ও সোফিয়া অ্যালকর্ণ।

৪. শ্রবণ সহায়ক পদ্ধতি -

এই পদ্ধতিটি মূলত আংশিকভাবে বধির শিহ্মার্থীদের পড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।উচ্চ শক্তি সম্পন্ন শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের সাহায্যে আংশিক বধির শিহ্মার্থীদের বধিরতা অনেকটাই দূর করা হয়।

৫. দর্শন ভিত্তিক পদ্ধতি -

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা শিক্ষার্থীদের দর্শন ভিত্তিক পদ্ধতিতেও মনের ভাব প্রকাশের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।এতে কয়েকটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়।শিহ্মক শিহ্মিকা এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের এইসব প্রতীকের ব্যবহার শিখিয়ে দেন।তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিহ্মক শিহ্মিকার মতো মুখভঙ্গি করে শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীরে তা আয়ত্ত করে।

৬. বাক্ শক্তি বিকাশ -

সর্বপ্রথমে শিশু গলায় বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ করে থাকে।সে এই ধরনের শব্দের সঙ্গে খেলা করে এবং ব্যবহার এই শব্দগুলি অনুকরণ করে এবং বলার চেষ্টা করে।এমনকি কোনো ব্যক্তির কথাও সে অনুকরন করে।সে "মা","বা","দা" প্রভৃতি শব্দ বারবার বলে।যদিও এর অর্থ শিশুর কাছে বোধগম্য নয়।যখন সে পর পর "মা" "মা" বলছে তখন তার মাকে পাচ্ছে এবং এভাবে সে তার মা এবং "মা" শব্দকে একত্রিত করছে এবং নিজের কাছে অর্থবহ করে তুলছে। এইভাবে সে আরও কথা বলতে শেখে।

৭. ভাষার বিকাশ -

শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের হ্মেত্রে আর একটি গুরুতর সমস্যা হল অন্যের ভাষা বুঝতে না পারা। মানুষ সাধারণভাবে যে সমস্ত দহ্মতা অর্জন করে তার মধ্যে অন্যতম জটিল একটি হল ভাষাগত দহ্মতা।এই দহ্মতার উপকরনের মাধ্যমে অন্যতম হল ধারনা গঠন। দৃশ্যমান যে কোনো বস্তু বা ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা গঠন মত সহজ, বিমূর্ত বিষয়ের হ্মেত্রে তা ঠিক ততটাই কঠিন।বাক্যের বিশেষ্য, বিশেষন, ক্রিয়াপদ গুলি যত সহজে বোঝানো যায়, অব্যয় ও সর্বনাম পদগুলি তত সহজে বোঝানো যায় না।কারন বিশেষ্য,বিশেষন ও ক্রিয়াপদের দ্বারা দৃশ্যমান গুনের প্রকাশিত হয়,আর অব্যয় পদের দ্বারা বিমূর্ত ভাব প্রকাশিত হয়।

৮. পঠন দহ্মতার বিকাশ -

শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের ভাষা শিহ্মার মতোই পঠন শিক্ষা একটি ধীর গতি সম্পন্ন পরিশ্রম সাধ্য কাজ। বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা গেছে,পঠন হ্মমতার হ্মেত্রে শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা তাদের প্রকৃত বয়স বা মানসিক বয়সের তুলনায় পিছিয়ে থাকে।

৯. অন্যান্য -

Pugh শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের পঠন হ্মমতা পরিমাপ করার জন্য অনেক শিক্ষার্থীর উপর।OWA SILENT READING TEST এবং DURRELL - SULLIVAN READING ACHIEVEMENT TEST প্রয়োগ করেন। 

9. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমস্যা -

শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিশু শিহ্মার্থীদের শিক্ষার হ্মেত্রে নানান সমস্যা লহ্ম করা যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হল। -

১. মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা -

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। আবেগ প্রবণ এবং আন্তকেন্দ্রিক হওয়ার তারা নিজেদের সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। বেশিরভাগ হ্মেত্রেই তারা অন্তর্মুখী হয়।ফলে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা পছন্দ করে না।

২. সামাজিক স্বীকৃতি গত সমস্যা -

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা বলতে পারে না।তাই পারস্পরিক ভাব বিনিময় হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।এর ফলে সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের দূরত্ব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।সেই কারণে তাদের মধ্যে সামাজিক স্বীকৃতিগত সমস্যা প্রকট হয়।

৩. শিহ্মাজনিত সমস্যা -

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো নির্দিষ্ট বয়সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না,বেশি বয়সে ভর্তি হওয়ার ফলে সমবয়সি শিক্ষার্থীদের তুলনায় তারা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। পড়াশোনার নানা অসুবিধার জন্য তারা ভালো ফল করতেও পারে না।

৪. প্রাহ্মোভিক সমস্যা -

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বিশেষ সমস্যা হল প্রাহ্মোভিক সমস্যা।তারা যেহেতু অন্যের কথা বুঝতে পারে না এবং অন্যকে নিজের কথা বোঝাতে পারে না,তাই তাদের মধ্যে প্রহ্মোভ ঘটিত সমস্যা লহ্ম করা যায়। আচমকাই যে কোনো ব্যাপারে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে, আবার কখনো কখনো অশোভন আচরণ করে।তারা অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়।

10. শিহ্মক-শিহ্মিকার ভূমিকা -

বর্তমানে বিশেষজ্ঞ শিহ্মক/শিহ্মিকার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষক-শিহ্মিকার বিভিন্ন প্রকার ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষার্থীদের শিহ্মা দানের জন্য নানা দায়িত্ব গ্ৰহন করতে হচ্ছে। মূলত উভয়ের যৌথ প্রচেষ্টা উপর শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভরশীল।তাই অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মতো শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে একজন সাধারণ শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে বিশেষ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেগুলি হল -

  • সাধারণ বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তি দায়িত্ব শিহ্মক/শিহ্মিকাকে নিতে হবে।
  • শ্রেণিকক্ষে কোনো শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছে কিনা তার জানতে হবে।
  • শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিহ্মা দানের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি কৌশল ব্যবহারের হ্মেত্রে বিশেষজ্ঞ শিহ্মক/শিহ্মিকার পরামর্শ নিতে হবে।
  • শিহ্মক বা শিক্ষিকার সাধারণ শিশু শিহ্মার্থীদের সহপাঠীকে সহায়তা করতে উদ্বুদ্ধ করবেন।তবে এহ্মেত্রে খেয়াল রাখতে হবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের যাতে স্বাভাবিক শিশুদের উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।
  • শিহ্মক বা শিক্ষিকা স্বাভাবিক ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর সঙ্গে সমান ব্যবহার করবেন।
  • শ্রেণিকক্ষে শিহ্মক বা শিক্ষিকা শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের শিক্ষা দানের হ্মেত্রে উপযুক্ত পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
  • শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা দানের সময় শিহ্মক বা শিক্ষিকাকে অবশ্যই ভাষা বর্জিত আচরণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
  • শ্রেণিকক্ষে শিহ্মক বা শিক্ষিকার এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা ও পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সবশেষে বলা যায় যে,শিহ্মক বা শিক্ষিকার মূল দায়িত্ব হল শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও চেতনার জাগ্ৰত করে করতে হবে এবং পরবর্তীতে বৃহত্তর সমাজে সার্থক অভিযোজনের জন্য সহ্মম করে তুলতে হবে।তবে বলা বাহুল্য যে,এই কাজটিকে কষ্টসাধ্য এবং এই শিক্ষার মূল লহ্ম্য।

CLICK HERE -


Assignment Questions -

1. শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলতে কি বোঝ।শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের বৈশিষ্ট্য গুলি কি।||What Do You Mean By Hear Impairment.What Are The Characteristics Of Hear Impaired children.
2. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার সম্ভাব্য কারন গুলি সংহ্মেপে আলোচনা কর।||Mention In Brief The Probable Causes Of Hearing Impairment.
3. শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গুলি সংহ্মেপে বর্ণনা কর।||Briefly Describe The Preventive Measures For Hearing Impairment.
4. শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দানের জন্য কি কি পঠন কৌশল বা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়,তা সংহ্মেপে আলোচনা কর।||Briefly Discuss What Reading Strategies Or Methods Are Used To Teach Hearing Impaired Students.
5. একজন শিক্ষক হিসাবে আপনি কীভাবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা চাহিদা পূরণ করবেন।||As A Teacher How Would You Satisfy The Needs Of Hearing Impaired Children in Inclusive Set up. 

Read More......



বিশেষ শিখন অহ্মমতা||Specific Learning Disability.

সঞ্চালনমূলক অহ্মমতা||Locomotor Impairment

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post