দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা||Visual Impairment

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা||Visual Impairment

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা||Visual Impairment

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী - ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য,শ্রেণিবিভাগ, কারন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, শিখন পদ্ধতি, শিহ্মায় সমস্যা এবং শিহ্মক-শিহ্মিকার ভূমিকা||Visual Impairment - Concept, Definition, Characteristics, Classification, Causes, Preventive Measures, Teaching Techniques, Learning Problems And Role Of Teacher

(ENGLISH VERSION PDF FILE BELOW THE ARTICLE)

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী - ধারণা, সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য,শ্রেণিবিভাগ, কারন, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, শিখন পদ্ধতি, শিহ্মায় সমস্যা এবং শিহ্মক-শিহ্মিকার ভূমিকা

BENGALI VERSION

1. ভূমিকা -

মানবদেহের পাঁচটি ইন্দ্রের মধ্যে একটি হল চোখ এবং এই চোখ বা দর্শনেন্দ্রিয় পরিবেশের সঙ্গে একজন ব্যক্তির সংযোগ স্থাপন করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।আর যদি কোনো ক্রটি,বাধা বা অনুপযুক্ততার কারনে একজন ব্যক্তি চোখের দেখতে পায় না, তাদেরকে আমরা দৃষ্টিহীন বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলি। দৃষ্টি প্রতি বন্ধকতা ব্যক্তির জীবনে এক গুরুতর সমস্যা। কেবলমাত্র দৃষ্টিহীনতা বা অন্ধত্ব নয়, দৃষ্টিগত বিবিধ সমস্যা একজন ব্যক্তিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী করে তোলে।

অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক উদাসীনতা ও নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায়। বর্তমানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।ফলে আগের চেয়ে সমাজে এদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পায় এবং সমাজের মূলস্রোতে এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শামিল করার আগ্ৰহ দেখা যায়।

একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছেন যে,সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় 30 মিলিয়ন মানুষ হল দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী।আর ভারতবর্ষে 2001 সালের জনগণনার প্রতিবেদনে দেখা যায়,এই দেশে মোট জনসংখ্যার 1.036% দৃষ্টি প্রতিবন্ধী,যা ভারতবর্ষের মোট প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক (48-54%)।

2. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের সংজ্ঞা -

সাধারণত যারা চোখের দেখতে পায় না, তাদের আমরা দৃষ্টিহীন বলে। দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গঠন করার জন্য বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেওয়া সংজ্ঞা গুলি উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে দুটি দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।যথা -

  • আইনগত দৃষ্টিভঙ্গি।
  • শিহ্মাগত দৃষ্টিভঙ্গি।
• আইনগত দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা -
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে আইনগত দৃষ্টিভঙ্গিতে বেশ কিছু মতামত পেশ করা হয়েছে।যথা -
"International Association For the Prevention of Blindness" দৃষ্টিহীন সম্পর্কে সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,ব্যবহারিক দিক থেকে যে ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি 1/20 ভাগের কম,বা যে ব্যক্তি দেড় মিটার দূরত্ব থেকেও আঙ্গুল গুনতে পারে না, তাকে দৃষ্টিহীন বা ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন বলা হয়।
আমেরিকার Social Security Act(1935) যে সংজ্ঞাটিকে মান্যতা দেয় তা হল-
"Blindness is visual acquity for distant vision of 20/200 or less than in better eye with best correction or visual acquity of more than 20/200 if the widest diameter of field of vision subsends an angle not greater than 20 degrees." অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ভালো চোখে চশমা ব্যবহারের পর ব্যক্তির দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা যদি 20/200 বা তার কম হয় বা ব্যক্তির তীক্ষ্ণতা 20/200 এবং বেশি কিন্তু তার ভালো চোখে দৃষ্টির হ্মেত্র 20° কোনের বেশি নয়, তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলা হয়।
"Rehabilitation Council Of India(RCI) Act" 1992 অনুসারে কোনো ব্যক্তি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হবে তখনই যখন নিজের যে কোনো এক বা একাধিক সীমাবদ্ধতা মধ্যে থাকবে।
ক. সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন।
খ. চোখে লেন্স ব্যবহারের পরও ভিস্যুয়াল অ্যাকুইটি বা দৃষ্টি প্রখরতা 6/60 (মিটার এককে) বা 20/200 (ফুটে এককে) এর বেশি হবে না।
গ. দৃষ্টিহ্মেত্র 20° বা তার চেয়ে কম।
K. C. Panda (1997) বলেছেন,"Visual handicap is defined in terms of visual acquity, field of vision and visual efficiency."অর্থাৎ দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা দৃষ্টির হ্মেত্র এবং দৃষ্টিগত পারদর্শিতার সাহায্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সংজ্ঞা দেওয়া হয়।
• শিহ্মাগত দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা -
J. Banerjee (2009) বলেছেন,"A completely visual impaired person is one whose vision is so limited/defective that he/she can't be educated through visual methods"অর্থাৎ একজন সম্পূর্ণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাকেই বলা হবে যায় দৃষ্টিশক্তি এতটাই ক্রটিপূর্ণ বা সীমাবদ্ধ যে,কোনো দৃষ্টিগত পদ্ধতিতে তাকে শিহ্মাদান করা সম্ভব নয়।
অপর একটি শিহ্মা বিজ্ঞানের সংজ্ঞা থেকে পাওয়া যায় যে,A child with educational blindness needs Braille for reading and writting purposes." অর্থাৎ একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির লেখা ও পড়ার জন্য ব্রেইল পদ্ধতি প্রয়োগ করা দরকার।
3. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের বৈশিষ্ট্যাবলী -
উপরিউক্ত আলোচনা মধ্যে দিয়ে নানা সমস্যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিচারে দেখা যায়। তদানুযায়ী দৃষ্টি সম্পর্কিত সমস্যার বৈশিষ্ট্যও নানারকম। এখানে শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শ্রেণিকক্ষে পর্যবেক্ষণ যোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য গুলি উল্লেখ করা হল।-
  1. শিশুর ঘন ঘন চোখ লাল হওয়া। 
  2. চোখ থেকে জল পড়া। 
  3. চোখ পিটপিট করা। 
  4. শ্রেণিকক্ষে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে না পাওয়া।
  5. দৃশ্য বস্তুর কথা অন্যকে জিজ্ঞাসা করে জানার চেষ্টা করা।
  6. কোনো উজ্জ্বল দিনের আলোতে আলোর অনুভূতি না হওয়া।
  7. চোখে ঝাপসা দেখা। 
  8. চলাফেলার পদে পদে বাধা পাওয়া এবং স্পর্শ করে চলার পথে নির্ণয়ের চেষ্টা করা। 
  9. উদ্দেশ্যহীন দৃষ্টি।
  10. সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও আচরণে অক্ষমতা ইত্যাদি।
4. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের শ্রেণিবিভাগ -
ভিন্ন ভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্থা দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাগ করেছেন।যেমন -
আমেরিকান অফিস অব রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিসেস মতো পাঁচটি শ্রেণিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভাগ করা হয়েছে।যথা -
১. সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন -
এই সমস্ত ব্যক্তিরা উভয় চোখে দৃষ্টিহীন হয়।এদের আলোক প্রত্যহ্মণ হ্মমতা থাকে না।
২. আইনগত দৃষ্টিহীন -
এই সমস্ত ব্যক্তিরা উভয় চোখের দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা 20/200 এর বেশি নয় বা দৃষ্টি হ্মেত্র 20° এর কম।
৩. সীমাবদ্ধ দৃষ্টিশক্তি -
এই সমস্ত ব্যক্তিরা একটি চোখে দৃষ্টিহীন এবং অপর চোখে সৃষ্টির তীক্ষ্ণতা 20/200 থেকে 20/60 এর মধ্যে থাকে।
৪. এক চোখে দৃষ্টিহীনতা -
এই সমস্ত ব্যক্তিরা একটি চোখে দৃষ্টিহীন হয় এবং অপর চোখ স্বাভাবিক হয়।
৫. অন্যান্য দৃষ্টিগত সমস্যা -
এই সমস্ত ব্যক্তিরা বর্ণান্ধতা, রাতকানা ইত্যাদি সমস্যার আক্রান্ত হয়।
• আবার,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।যথা -
১. স্বল্প দৃষ্টিমান(মৃদু মাত্রা) -
সাধারনত শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন প্রকারের ও বিশেষ ধরনের সাজ সরঞ্জাম ও আলোকিত ব্যবস্থার সহায়তার প্রায় স্বাভাবিক দৃষ্টিমানদের ন্যায়।এরা কাজ করতে সহ্মম।এরা 14 Point এর লেখা ও হরফ পড়তে পারে।
২. আংশিক দৃষ্টিমান(মধ্যম মাত্রা) -
দৃষ্টির প্রয়োজন এরূপ কাজকর্ম করার হ্মেত্রে এদের অধিক সময় ও শক্তি প্রয়োজন হয়। দৃষ্টি সহায়ক সাজ সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সত্ত্বের এরা নির্ভূল কাজ করতে প্রায় অহ্মম।এই শিশুরা নিজের দৃষ্টিকে শিহ্মাহ্মেত্রে ব্যবহার করে।এরা 18 Point এর লেখা পড়তে পারে।
৩. প্রায় দৃষ্টিহীন(গুরুতর মাত্রা) -
এই সমস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টি প্রয়োজন। এরুপ কাজকর্ম করা পহ্মে অন্যন্ত কষ্টকর।এরা শিখনের জন্য প্রধানত শ্রবণ শক্তি ও স্পর্শ হ্মমতার উপর নির্ভরশীল।
• এছাড়াও একটি মতাভেদের ভিত্তিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।যথা -
১. প্রচলিত শ্রেণিবিভাগ -
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।যথা -
ক. সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন -
যে সমস্ত শিশুরা একেবারেই দেখতে পায় না এবং পড়াশোনার জন্য ব্রেইল প্রনালীর সাহায্যে নিতে বাধ্য হয়।তাকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন বলা হয়।এরা সহজে এমন কোনো কাজ তারা করতে পারে না।তারা শ্রবণ ও স্পর্শ শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়।
খ. আংশিক দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন -
যে সব শিশুরা দৃষ্টি শক্তি স্বাভাবিক শিশুদের থেকে দুর্বল এবং যারা বড়ো হরফের ছাপানো লেখা পড়তে পারে,তাদের কে বলা হয় আংশিক দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন।
২. মনোবিদ লোয়েন ফেন্ড কৃত শ্রেণিবিভাগ -
মনোবিদ লোয়েন ফেল্ড দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন শিশুদের প্রধান চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।যথা -
ক. জন্মগত দৃষ্টিহীন -
যে সব ছেলেমেয়েদের জন্মগত ভাবে পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ ভাবে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে,তারা এই শ্রেণিভুক্ত।
খ. ৫ বছর বয়সের পর সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন -
যে সব ছেলেমেয়েরা ৫ বছর বয়সের পর কোনো কারণে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে, তাদের এই শ্রেণিভুক্ত করা হয়।এই সব ছেলেমেয়েদের মানসিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রথম শ্রেণীর দৃষ্টিহীনদের থেকে অনেকটাই আলাদা।
গ. জন্মগত ভাগে আংশিক দৃষ্টিহীন -
এই সমস্ত ছেলেমেয়েরা জন্মগতভাবে আংশিক দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হয়ে থাকে।এই ধরনের ছেলেমেয়েদের বড়ো হরফের ছাপানো অহ্মরের লেখা পড়তে পারে না।
ঘ. অর্জিত আংশিক দৃষ্টিহীন -
এই সমস্ত ছেলেমেয়েদের জন্মগত ভাবে স্বাভাবিক দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হলেও পরবর্তীকালে কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা বা রোগ ব্যাধির কারণে আংশিকভাবে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে।

5. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী সৃষ্টির কারণ -
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধকতা কেন ঘটে এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন গবেষণার ও পর্যবেক্ষণে বিবিধ হ্মেত্রে চিহ্নিত হয়েছে। এগুলি হল দর্শনেন্দ্রিয় গঠনগত ত্রুটির জন্য অহ্মমতা হতে পারে,জিন ও বংশগত কারণসমূহ, সামাজিক-মানসিক-প্রাকৃতিক-পরিবেশগত কারন সমুহ, দূরারোগ্য ব্যাধি কারণ সমুহ।এই সমস্ত কারণসমূহ এখানে লিপিবদ্ধ করা হল।-
১. দর্শনেন্দ্রিয়ের গঠনগত ক্রটি -
মানবদেহের দর্শনেন্দ্রিয় বলতে চোখকে বোঝানো হয়েছে।এই চোখের আকৃতি যদি ক্রটিপূর্ণ হয় তবে দেখার হ্মেত্রে সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া সঞ্চালনা পেশি অহ্মিগোলক বা কর্শিয়ার গঠনে সমস্যা থাকলে তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী হতে পারে। চোখের কাজের ভিত্তিতে চারটি অংশ দেখা যায়।
ক. সুরহ্মার কার্য পরিচালনাকারী অংশ বা Protective Part -
যদি চোখের তারা যা অহ্মিগোলকে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তবে অন্ধত্ব আসতে পারে।ট্রাকোমা অসুখটি এই অংশে হয় যা কর্নিয়াকে প্রভাবিত করে ও দর্শন প্রতিবন্ধকতা ঘটাতে পারে।
খ. দৃষ্টিশক্তি প্রদানকারী অংশ বা Refractive Part -
চোখের কর্নিয়ার ওপর বস্তুর ছবি প্রতিফলিত হলে আমরা দেখতে পাই।এই অংশে কোনো সমস্যা থাকলে দেখার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ঘটে।যেমন মায়োপিয়ার কারনে আলোক রশ্মি রেটিনার সামনে পতিত হয় বলে দূরের বস্তু দেখতে সমস্যা হয়।
গ. অভিযোজন কারী অংশ বা Accommodative Part -
আইবল বা অহ্মিগোলকের সঞ্চালনার সমস্যা দেখা গেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।যেমন নিসট্যাগমাস এর কারণে অহ্মিগোলকের অনিয়ন্ত্রিত সঞ্চালন হয়,ফলে কোনো বস্তুর প্রতি স্থির দৃষ্টিপাত করা সম্ভব হয় না।
ঘ. উদ্দীপনা গ্ৰহনকারী অংশ বা Peceptive Part -
মস্তিষ্কের যে অংশ দর্শন সংবেদনের জন্য দায়ী,সেই অংশে কোনো অসংগতি দেখা গেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা ঘটতে পারে।
২. জিন ও বংশগত ক্রটি -
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে জিনগত ক্রটির কারণে শিশুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা আসে। বংশগত বিভিন্ন ব্যাধি যেমন জন্মগত হানি,নিসট্যাগমাস,ডায়াবেটিস ইত্যাদি ব্যাধি শিশুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী।
৩. সামাজিক-মানসিক-প্রাকৃতিক পরিবেশগত ক্রটি -
ব্যক্তির সামাজিক-মানসিক-প্রাকৃতিক পরিবেশগত কারণে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।যথা -
ক. জন্মের পূর্ববর্তী কারন -
শিশু জন্মের পূর্ববর্তী কালে বা গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্নের ক্রটি জনিত কারণ অর্থাৎ খাদ্যের অভাব, অপুষ্টি, তীব্র প্রতিক্রিয়া জনিত ওষুধ সেবন, দুরারোগ্য ব্যাধি,যদি কোনো সংক্রামক অসুস্থতা হয়,যেমন - বুবেলা, সিফিলিস,টক্সোপ্লাজমেনিস, অস্বাভাবিক মানসিক চাপ, গর্ভাবস্থায় অস্বাস্থ্যকর মনোসামাজিক পরিবেশ জীবনে নির্বাচন জনিত কারন সমুহ ইত্যাদি।তবে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে।বেশি বয়সে না হলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পিতামাতার রক্তের শ্রেনিগত অমিল হলে যা অপুষ্টির শিকার হলে,মায়ের নেশা দ্রব্য গ্ৰহনের অভ্যাস থাকলেও শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে। আবার একটি মেয়ে পূর্ণ অবস্থাপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই শিশুর জন্মদান, অ্যানাসথেটিক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির জীবাণুমুক্তকরণ এর ক্রটি জনিত কারণে।
খ. জন্মকালীন কারন -
শিশুর জন্মের সময়ে যদি মস্তিষ্ক আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের ক্রটি দেখা দেয়।যেমন ফরসেপ ডেলিভারি,তবে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে। শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মালে শিশুর দৃষ্টিগত অহ্মমতা আসতে পারে।
গ. জন্ম পরবর্তী কারণ -
শিশু জন্মের পর পরিবেশগত কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর হতে পারে। বিভিন্ন সমীহ্মার ভারতবর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার যে চিত্র উঠে আসে,তা হল -
  • ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার হার বেশি।
  • ভিটামিন A কম মাত্রায় গ্ৰহণ ছাড়াও অপুষ্টি অন্ধত্বের বড়ো কারন।
  • কম বয়সের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলার ঘটনা ভারতবর্ষে সুলভ।যেমন 30% দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাদের 20 বছর বয়সের আগেই দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলে।
  • দারিদ্র্য,অপুষ্টি, সচেতনতার অভাব, শিক্ষার প্রসারের অভাব এবং স্বাস্থ্য পরিসেবার ঘাটতি অনেক হ্মেত্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী।
  • WHO ও NPCB (1981-1986) যৌথ গবেষণার এবং তার আগে ICMR(1971-1974) এর গবেষণাতেও দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ হিসেবে চোখে ছানিকে চিহ্নিত করে।
৪. দূরারোগ্য ব্যাধি জনিত কারণ -
ব্যক্তির দূরারোগ্য ব্যাধি জনিত কারণে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।যথা -
  • স্থল পক্স,চিকেন পক্স,হাম ইত্যাদি রোগ।
  • চোখের বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমন জনিত কারণ।যেমন - চালসে দৃষ্টি হাইপার মেট্রোপিয়া, মায়োপিয়া ছানি, গ্লুকোমা,বেটিনাল,ডিটাচমেন্ট, অপটিক টিউমরস ইত্যাদি।
  • টিউমার,ক্যানসার,চর্মরোগ, টাইফয়েড,এইডস, ম্যালেয়িরা,ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের কুপ্রভাব।
৫. অন্যান্য -
কাজের জায়গায় এবং বিশেষ করে লিখন বা পঠন ইত্যাদি সময়ে সঠিক ভঙ্গিতে বসা বা না থাকার কারণে।

6. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা -
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করতে নিম্নলিখিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।যথা -
  • গর্ভবতী মা যেন নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্ৰহন করতে হবে।
  • গর্ভবতী মায়ের কোনো সংক্রামক ব্যাধির চিকিৎসা করা।
  • শিশু যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে এবং শরীরে পর্যাপ্ত পর্যাপ্ত ভিটামিন 'A' থাকে তা দেখা।
  • শিশুদের নিয়মিত টীকা দান করা।
  • কোনো ঘনিষ্ঠ রক্ত সম্পর্ক এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ রক্ত শ্রেণি বিশিষ্ট পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিবাহ দান নিষিদ্ধ করা।
  • কোনো চিকিৎসক বা নার্সের তত্ত্বাবধানে শিশুর জন্মদান নিশ্চিত করা।
  • শিশুকে কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাত থেকে রহ্মা করা।
  • কোনো ব্যক্তির চোখে বাইরের কোনো বিষাক্ত পদার্থের সংক্রমন বা লোহার কুচি,পাথর কণা প্রবেশের কারণে বা চোখে কোনো ধরনের যন্ত্রনা অনুভব করলে বা চোখ অস্বাভাবিক লাল হলে সঙ্গে সঙ্গে চহ্মু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্ৰহণ করতে হবে।
  • জন্ম পূর্ববর্তী সময়ে মায়ের এক্সরে, অতিমাত্রায় ওষুধ সেবন, জন্মকালীন সময়ে শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি কারণে শিশু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতে পারে -এ ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।
7. দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিহ্মণ পদ্ধতি -
সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন এবং আংশিক দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের পাঠদানের পণ্য বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।কারণ সাধারণ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক শিশুদের যেভাবে পড়ানো হয়,সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন এবং আংশিক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের সেভাবে পড়ানো যাবে না। একটি শিশু কতখানি দৃষ্টিসম্পন্ন সে বিষয়ে পরিমাপ করার পর উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বনে দ্বারা পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা হয়।
• সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিহ্মণ পদ্ধতি -
সাধারণত সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিশু শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের জন্য মূলত স্পর্শ পদ্ধতি এবং শ্রবণ পদ্ধতির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।নিম্নে বর্ণনা করা হল -
১. ব্রেইল পদ্ধতি -
বর্তমানে সারা বিশ্বে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠনের জন্য ব্রেইল পদ্ধতি চালু হয়েছে।এটি 1829 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি লুই ব্রেইল এই বিশেষ পদ্ধতির চালু করেছেন এবং 1950 খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের শিক্ষামূলক বিজ্ঞানভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংস্থা(UNESCO) বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ব্রেইল পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।ব্রেইল ব্যবস্থায় পুরু কার্ডবোর্ড বা কাগজের উপর যে শক্ত জিনিস দিয়ে উঁচু উঁচু ডট বা বিন্দু দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় 'স্টাইলাস'। উঁচু উঁচু ছয়টি বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে ব্রেইল লেখা হয়। বাঁদিকে থেকে ডানদিকে ব্রেইল লেখা হয়।ব্রেইলকে হাতের স্পর্শের মাধ্যমে পড়তে হয়। বৈজ্ঞানিক সংকেত গণিত,সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।তবে বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যেও ব্রেইল লেখার ব্যবস্থা হয়েছে।যেহেতু দৃষ্টিহীন শিশুদের ব্রেইলের মাধ্যমে শিহ্মাদান করা হয়,তাই তাদের শিহ্মণ পদ্ধতি মূলত ব্রেইল ব্যবহারের কৌশলের উপর নির্ভরশীল।
২. ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি -
সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।এতে প্রতিটি শিশুর প্রতি অনুযায়ী শিখন পদ্ধতি আলাদাভাবে নির্বাচিত হয়।ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য শ্রেণিতে সর্বাধিক আটজন শিক্ষার্থী রাখা হয়।তার বেশি শিক্ষার্থীদের রাখলে শিহ্মাদানের কাজ ব্যাহত হয়।
৩. শব্দ নির্ভয় পদ্ধতি -
সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য টকিং বুক,ফোনোগ্ৰাম, টেপরেকর্ডার, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বিশেষ করে পাঠ্যসূচির বিভিন্ন অংশের উপর অডিয়ো ক্যাসেট প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।
৪. নির্ভুল অভিজ্ঞতাদান -
সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা মূলত স্পর্শ এবং শ্রবণের মাধ্যমে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। সেই কারণে তাদের পড়ানোর সময় স্পর্শেন্দ্রিয় এবং শোভনেন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে সঠিক অভিজ্ঞতা দানের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
৫. সক্রিয়তা ভিত্তিক পদ্ধতি -
সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীনদের সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করানো হয়।পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটিয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়।ফলে একদিকে তারা যেমন অনুপ্রাণিত হয়,অন্যদিকে যথাযথ অভিজ্ঞতা লাভ করে।
৬. সামগ্রিক ধারণা গঠন -
একটি ব্যক্তি চোখে দেখে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তা মূলত সামগ্রিক বা সমন্বয়ধর্মী হয়।এজন্যই স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা কোন বস্তুকে সামগ্রিকভাবে দেখলে অন্য দিকে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা যেহেতু এক একটি বস্তুকে স্পর্শ করে তার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে, তাই তারা এক সঙ্গে অন্য কোন বস্তু সামগ্রিক ধারণা লাভ করতে পারে না।এই কারণে দৃষ্টিহীন শিশু শিক্ষার্থীদের পড়ানোর সময় একটি বস্তুর নানান অংশে সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে ধারণা দেওয়ার পর এইসব অভিজ্ঞতা গুলির সমন্বয় সাধন করা হয়ে থাকে। সামগ্রিক ধারণা না পেলে তাদের শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়।
• আংশিক দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিহ্মণ পদ্ধতি  -
আংশিক দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শিখন পদ্ধতি সাহায্য নেয়া হয়,তা নিচে বর্ণনা করা হল।-
১. চশমা ব্যবহারের দ্বারা শিখন -
আংশিক দৃষ্টি সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য ফ্রেশনেল লেন্স গালিয়ান চশমা, প্রভৃতি ব্যবহার করা হয় এছাড়া এই শিশুদের শ্রেণিকক্ষে প্রথম শ্রেণীতে বসিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
২. বড় হরফে বইয়ের ব্যবহারের দ্বারা শিখন -
আংশিক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের সময় বড়ো হরফে ছাপানো বই ব্যবহার করা হয়।স্বাভাবিক শিশুদের জন্য ব্যবহৃত বইয়ে ছাপানো অক্ষর গুলি যেখানে 10 point হয়, সেখানে আংশিক দৃষ্টি সম্পন্ন শিশুদের জন্য 18 থেকে 24 Point বিশিষ্ট অক্ষরে ছাপা বই ব্যবহৃত হয়।এই সমস্ত শিশুদের পড়ার সুবিধার জন্য হাসপাতাল এবং জেলা পুনর্বাসন কেন্দ্র গুলিকে হ্যান্ড লেন্স এবং ম্যাগনিফাইং গ্লাস সরবরাহ করতে বলা হয়। 
৩. দর্শন সহায়ক যন্ত্রের ব্যবহারের দ্বারা শিখন -
এই পদ্ধতিতে উন্নতমানের লেন্স বা বৃহদীকরণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রের সাহায্যে শিক্ষাদান করা হয়। এছাড়া এপি ডো স্কোপের সাহায্যে বিভিন্ন পঠনীয় বিষয়কে পর্দায় বড়ো করে ফেলে আংশিক দৃষ্টি সম্পন্ন শিহ্মার্থীদের শিখনের ব্যবস্থা করা হয়। 
৪. শ্রুতি সহায়ক উপকরণের ব্যবহারের দ্বারা শিখন -
শ্রুতি সহায়ক উপকরণ বলতে সাধারণত ফোনোগ্রাম, টকিং মেশিন, টকিং বুক, টেপ রেকর্ডার, অডিয়ো-ক্যাস্টে প্রভৃতিকে বোঝায়।এই সমস্ত উপকরণের সাহায্যে আংশিক দৃষ্টি সম্পন্ন শিশুদের পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু তারা চোখে ভালো ভাবে দেখতে পায় না।তাই কানে শুনেই তাদের বেশির ভাগ পড়াশোনা করতে হবে।
৫. শ্রেণিকক্ষে কিছু কৌশল প্রয়োগ -
আংশিক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সামনের সারিতে বসানোর ব্যবস্থার করা প্রয়োজন, যাতে তারা ব্ল্যাক বোর্ডের লেখা দেখতে পায়।ব্ল্যাকবোর্ড দেখার সময় জানলার বাইরে যেতে মাঝে মাঝে তাকায়,সে ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে। ব্ল্যাকবোর্ড লেখার সময় শিক্ষক বা শিক্ষিকার উচ্চারণ করে এবং বড় হরফে লিখবেন। 
৬. অ্যাবাকাস পদ্ধতি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ -
এই সমস্ত প্রতিবন্ধী শিহ্মার্থীদের গাণিতিক বিষয়ে যোগ, বিয়োগ, গুন,ভাগ, শতাংশ এবং বর্গমূল প্রভৃতি অ্যাবাকাস পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। এছাড়াও মানচিত্র তৈরি, হাতের আঙ্গুলের সূক্ষ্ণ সালমের সাহায্য করে। 
৭. কম্পিউটার পদ্ধতি শিখন -
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় ভারতে বর্তমানে আংশিক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

8. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের শিক্ষায় সমস্যা -
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের শিক্ষা হ্মেত্রে নানারকম সমস্যা দেখা যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সংহ্মেপে আলোচনা করা হল।-
১. ইন্দ্রিয় জনিত সমস্যা -
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মতো লিখতে,পড়তে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনে করতে পারে না।ফলে তাদের সামগ্ৰিক ধারণা গঠনের হ্মেত্রে কিছু না কিছু ক্রটি থেকেই যায়।এই ক্রটির মূল কারণ হল দৃষ্টি শক্তির অভাব।
২. শিহ্মা জনিত সমস্যা -
দৃষ্টিহীন শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মতো নির্দিষ্ট বয়সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না।তারা বেশি বয়সে বিদ্যালয়ে আসার আসার ফলে তারা এমনিতেই একই বয়সি স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় পিছিয়ে থাকে।এর ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা দেখা দেয়,যা তাদের শিহ্মা গ্ৰহনের বাধার সৃষ্টি করে।
৩. সামগ্ৰিক অভিজ্ঞতা অর্জন জনিত সমস্যা -
মানব দেহের চোখ হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়।এটিকে জ্ঞানের সবচেয়ে মূল্যবান প্রবেশদ্ধার বলা হয়।তাই দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশু শিহ্মার্থীদের কোনো বিষয়ের সামগ্ৰিক অভিজ্ঞতা অর্জন জনিত সমস্যার সম্মুখীন হবে।
৪. নিরাপত্তা জনিত সমস্যা -
দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিশুরা তুলনামূলক ভাবে অনেক সময় তারা ঠিকমতো নিজেদের চার পাশের পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না।অন্যের করুনা, বিদ্রূপ, তাচ্ছিল্য প্রভৃতি তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা বোধের জন্ম দেয়।আর হীনম্মন্যতা বোধ তাদের ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশের বাধার সৃষ্টি করে।এর ফলে তারা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে থাকে।
9. শিক্ষক-শিহ্মিকার ভূমিকা -
বর্তমানে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষক-শিহ্মিকার উপর বিভিন্ন প্রকার ব্যতিক্রম ধর্মী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করতে হচ্ছে।মূলত উভয়ের যৌথ প্রচেষ্টা উপর শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভরশীল।তাই অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মতো দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে একজন সাধারণ শিক্ষক বা শিক্ষিকার বিশেষ কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।যথা -
১. ভর্তির দায়িত্ব -
সাধারণ বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তির দায়িত্ব শিক্ষক- শিক্ষিকাকে নিতে হবে। 
২. শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা -
শ্রেণিকক্ষে যে বা যারা সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন এবং আংশিক দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করবে এবং বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনে শিহ্মা দান করবে। 
৩. বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ -
শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি কৌশল ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে। 
৪. শিক্ষার্থীদের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি -
শ্রেণিকক্ষে এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মনির্ভরতা বাড়িয়ে তোলার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের নিজেদের ব্যবহারের জিনিসপত্রের যত্ন নিজেদেরকেই নিতে হবে এই রকম উৎসাহমূলক কথা শিক্ষার্থীদের বলবেন।
৫. স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা - 
শ্রেণিকক্ষে এই সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা সাধারণ শিশুদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সহপাঠীকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করবেন।তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু যাতে স্বাভাবিক শিশুর উপর বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।
৬. শিহ্মক-শিহ্মিকার সমানাধিকার নীতি - 
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকা স্বাভাবিক ও দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী উভয় প্রকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমান ব্যবহার করবেন।
৭. অংশগ্রহণে উৎসাহ -
শিহ্মক-শিহ্মিকা বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করবেন।তবে এই বিষয়ে লহ্ম রাখতে হবে দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধিতা যদি কোনো রূপ বাধা সৃষ্টি হয় সেহ্মেত্রে তাদের জন্য সমতুল্য পৃথক বিশেষ কাজের ব্যবস্থা করবেন।
৮. বসার স্থান প্রতি নজর -  
শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।যেমন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, উপযুক্ত বসার জায়গা,আংশিক দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের জন্য সঠিক রং ও আকারের শিক্ষা উপকরণের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া।
৯. শিহ্মক-শিহ্মিকা আচরণ - 
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের সময় শিহ্মক-শিহ্মিকা অবশ্যই তার ভাষা বর্জিত আচরণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
১০. সম্যক ধারণা  করা -
বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের বিভিন্ন বস্তু,ঘর এবং অন্যান্য বিষয়ের অবস্থান,দিক এবং দুরত্ব সম্পর্কে শিহ্মক-শিহ্মিকা দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী সম্যক ধারণা প্রদান করবেন।

10. উপসংহার -
পরিশেষে এই কথা বলা যায় যে,একজন শিক্ষক-শিহ্মিকার মূল দায়িত্ব হল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের হীনম্মন্যতা রোধ কাটিয়ে তার মধ্যে আত্মনির্ভরতা, চেতনা জাগ্ৰত করে বিদ্যালয়ের এবং পরবর্তী হ্মেত্রে বৃহত্তর সমাজে সার্থক অভিযোজনের জন্য সহ্মম করে তোলা।বলা বাহুল্য,এই কাজটি কষ্টসাধ্য এবং এই শিক্ষার মূল লহ্ম্য।

CLICK HERE -


Assignment Questions -
1. দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলতে কি বোঝায়। আইনগত দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা দাও।শিহ্মাগত দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা দাও।||What does Visually Impaired Mean.Give The Legal Definition Of Visual Impairment.Give The Educational Definition Of Visual Impairment.
2. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের সৃষ্টির পেছনে কারণ গুলি কী কী।||What Are The Reasons Behind The Creation Of Visually Impaired Person.
3. দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধকতার জন্য কি কি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্ৰহন করা হয়।||What Preventive Measures Are Taken For Visual Impairment.
4. শ্রেণিকক্ষে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিশু শিক্ষার্থী এবং আংশিক দৃষ্টিহীন শিশু শিক্ষার্থীর জন্য কি ধরনের শিখন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।||What kind of Learning Methods Are Adopted In The Classroom For Totally Blind Children And Partially Blind Children.
5. একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা হিসেবে আপনি কীভাবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের চাহিদা পূরণ করবেন।||As A Teacher How Would You Satisfy The Needs Of Visually Impaired.

Read More......



বিশেষ শিখন অহ্মমতা||Specific Learning Disability.

সঞ্চালনমূলক অহ্মমতা||Locomotor Impairment


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post