মৃত্তিকা দূষণ||Soil Pollution

মৃত্তিকা দূষণ||Soil Pollution

মৃত্তিকা দূষণ||Soil Pollution

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Soil Pollution (Concept, Classification, Sources,Causes, Effects,Controls)
Soil Pollution

Assignment Questions -

1. মৃত্তিকা দূষণ কাকে বলে। মৃত্তিকা দূষণের প্রকারভেদ কর।||What is Soil Pollution?Differentiate The Types Of Soil Pollution.

2. মৃত্তিকা দূষণের উৎসগুলি কি কি। মৃত্তিকা দূষণের কারণ গুলি সংহ্মিপ্ত আলোচনা কর।||What Are The Sources Of Soil Pollution?Briefly Discuss The Causes Of Soil Pollution.

3. মৃত্তিকা দূষণের প্রভাব গুলি কি কি। মৃত্তিকা দূষণ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা কর।||What Are The Effects Of Soil Pollution? Briefly Describe Soil Pollution Control Measures.

মৃত্তিকা দূষণ -

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

ভূ-ত্বকের উপরিভাগে নরম শিলাস্তর সব সময় পরিবর্তনশীল জৈব ও অজৈব পদার্থ,বায়ু, অনুজীব, জল, জীব প্রভৃতি নিয়ে গঠিত হয় মৃত্তিকা। মৃত্তিকার কতগুলি বিশেষ গুণাবলি বা ধর্ম রয়েছে।এই মৃত্তিকাতে গাছপালা জন্মায় এবং তার জন্য মৃত্তিকা দৃঢ় হয়। কিন্তু মৃত্তিকা প্রাকৃতিক পরিবেশ বা মানুষের অসচেতনতা মূলক কারণে মৃত্তিকার গুণমানের বিরূপ পরিবর্তন হয় যা মানুষের জীবনে এবং পরিবেশের জীবকূলের উপরে প্রত্যহ্ম ও পরোক্ষ প্রভাব ফেলে।অর্থাৎ প্রাকৃতিক কারণে এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারনে দ্বারা মৃত্তিকা দূষিত হচ্ছে এবং তার গুণগত মানের অবনমন ঘটছে।

• সংজ্ঞা -

মৃত্তিকাতে বিভিন্ন দূষক পদার্থ যথা, রাসায়নিক সার, কীটনাশক,প্লাস্টিক,গৃহস্থালীর আর্বজনা, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ মৃত্তিকাতে অবিশ্লেষিত অবস্থায় মিশে মৃত্তিকার পুষ্টিমৌলকে অপসারিত করে,ফলে মৃত্তিকাতে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণীদের স্বাভাবিক কাজকর্ম কে বাধা দেয়, তাকে মৃত্তিকা দূষণ বলে।

2. মৃত্তিকা দূষণের প্রকারভেদ -

মৃত্তিকা দূষণের দূষকের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রধানত দুই প্রকার ভাগ করা যায়। যথা -

১. সজীব দূষক -

আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থেকে নিঃসৃত বর্জ্য পদার্থ, হাসপাতালের বর্জ্য পদার্থ (যথা - ব্যান্ডেজ,সূঁচ,সিরিঞ্জ), পৌরসভার কর্তৃক বর্জিত আবর্জনা,নর্দমা নিকাশী আবর্জনা এবং কঠিন বর্জ্য ইত্যাদিতে রোগ সৃষ্টিকারী নানাবিধ অণুজীব যথা - ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া, আদ্যপ্রানী(Protozoa) এবং কৃমি উপস্থিত থাকে। এগুলি উদ্ভিদে সংক্রামিত হয় এবং খাদ্য শৃঙ্খলের পথে মানবদেহে প্রবেশ করে ও নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে।

২. অজীব দূষক -

শিল্প-কলকারখানা, পৌরসভার এবং কৃষিহ্মেত্রের বর্জিত আবর্জনার অপরিকল্পিত স্তূপীকরণের ফলে মৃত্তিকা দূষিত হয়ে থাকে।খনি শিল্প,ধাতু শিল্প, ইঞ্জিনিয়ার শিল্প,প্ল্যাস্টিক শিল্প,কাগজ শিল্প,রঙ উৎপাদন কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহারকারী সংস্থা ইত্যাদি থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে অজৈব বিষাক্ত ধাতু যথা - সীসা,পারদ,ক্যাডমিয়াম,দস্তা,লবণ,অ্যাসিড ইত্যাদি রাসায়নিক পদার্থ মৃত্তিকার সাথে মিশ্রিত হয়। পৌরসভার কর্তৃক নিহ্মিপ্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ যথা - ধাতুর বস্তু,খাদ্যাংশ,গার্হস্থ্য জ্বালানীর অদাহ্য অংশ, ব্যবহৃত ব্যাটারি,কাগজ ইত্যাদি স্তূপীকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন অজৈব রাসায়নিক পদার্থ ও ভারী ধাতু মৃত্তিকায় সংক্রামিত হয়।কৃষিকার্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে মৃত্তিকায় নাইট্রেট ও ফসফেটের অধিকৃত ঘটে।

এছাড়াও আরো টি প্রকারে ভাগ করা যায়।যথা -

৩. জৈব দূষক -

কৃষিহ্মেত্রে ব্যবহৃত জলে উপস্থিত অদ্রাব্য বিভিন্ন ধরনের জৈব ক্লোরিন এবং কীটনাশক পদার্থ গুলি (যেমন - ডি. ডি. টি., হেপ্টাক্লোর, অলড্রিন, ক্লোরডেন, এন্ড্রিন ইত্যাদি) অবিশ্লেষ্য প্রকৃতির হওয়ার এদের বেশ কিছু অংশ মৃত্তিকায় অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়। উদ্ভিদ মূল দ্বারা শোষিত হয়ে এগুলি উদ্ভিদকোষে পুঞ্জীভূত হয় এবং খাদ্য শৃঙ্খলের পথে মানবদেহে প্রবেশ করে ও স্বাস্থ্যের উপর হ্মতিসাধন করে। কীটনাশক ব্যতীত কৃষিহ্মেত্রে ও বাগানে ব্যবহৃত জৈব জীবাণুনাশক ও মৃত্তিকা নিয়ন্ত্রক প্রয়োগের হলেও বিভিন্ন ধরনের জৈব দূষক মৃত্তিকার সাথে যুক্ত হয়।

৪. প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষক -

মৃত্তিকা দূষণের অপর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল যথেচ্ছভাবে প্লাস্টিক ও পলিথিন দ্রব্যের ব্যবহার ও আর্বজনা হিসাবে সেগুলি মৃত্তিকা ভাগে নিহ্মেপ করা হয়।বালতি,গেলাস,কাপ,বাটি,সিরিঞ্জ,থলি,কলমের ভগ্নাংশ ইত্যাদি প্লাস্টিক ও পলিথিন নির্মিত নানা ধরনের জিনিস যত্রতত্র ফেলা বন্ধ করতে হবে।এগুলি অবিশ্লেষ্য প্রকৃতির হওয়ার অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায়।এর দীর্ঘদিন এই ভাবে থাকবার ফলে এগুলি থেকে নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়।এই রাসায়নিক পদার্থ গুলি মৃত্তিকাকে দূষিত করে।

৫. তেজস্ক্রিয় দূষক -

শিল্প সংস্থা ও পারমাণবিক পরীহ্মাগারের বর্জ্যবস্তু, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তেজস্ক্রিয় পদার্থ যথা - স্ট্রনসিয়াম-90, সিজিয়াম-137, রুথেনিয়াম-106,আয়োডিন-131,রেডিয়াম-106, ল্যান্থানিয়াম-140,সিরিয়াম-144 ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ মৃত্তিকার সঙ্গে মিশ্রিত হয় এবং মৃত্তিকাকে দূষিত করে তোলে।

৬. অ্যাসিড দূষক -

মৃত্তিকার উপরিভাগে উর্বর মৃত্তিকার স্তরে অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবে অনুর্বর হয়ে যায়।

৭. পুষ্টিকর পদার্থের দূষক -

অতিরিক্ত শস্য ও সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রভাবে মৃত্তিকার জীব মারা যায়, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।কর্কর খাদ্যশৃঙ্খল হ্মতিগ্ৰস্ত হয়। মৃত্তিকাতে বাতাস আলো ঢোকা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্তিকার pH এর মাত্রা ক্রমশ কমে যায়।

3. মৃত্তিকা দূষণের উৎস -

১. কলকারখানার নির্গত কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

কাগজ,রঙ,তৈল শোধনাগার,ভারী শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কয়লাখনি, সিমেন্ট উৎপাদন প্রভৃতি কলকারখানা থেকে কঠিন বর্জ্য পদার্থ এবং উড়ন্ত ছাই

২. কৃষিক্ষেত্রে থেকে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক -

অদ্রাব্য বিভিন্ন ধরনের জৈব ক্লোরিন এবং কীটনাশক পদার্থ গুলি যেমন - ডি. ডি. টি., হেপ্টাক্লোর, অলড্রিন, ক্লোরডেন, এন্ড্রিন ইত্যাদি।

৩. গৃহস্থালি কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

অভঙ্গুর প্লাস্টিক জাতীয় প্যাকেট ও গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য পদার্থ।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - কঠিন বর্জ্য পদার্থ জনিত দূষণ এবং ব্যবস্থাপনা

৪. তেজস্ক্রিয় পদার্থ -

স্ট্রনসিয়াম-90, সিজিয়াম-137, রুথেনিয়াম-106, আয়োডিন-131, রেডিয়াম-106, ল্যান্থানিয়াম-140, সিরিয়াম-144, কার্বন-14,বেরিয়াম-140 ইত্যাদি মৃত্তিকা সঙ্গে মিশে দূষণ ঘটাছে।

4. মৃত্তিকা দূষণের কারণ -

মৃত্তিকা দূষণের কারণ গুলি নিন্মে বর্ণনা করা হল।-

• প্রাকৃতিক কারণ -

১. অগ্ন্যুৎপাত -

অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গত ছাই,লাভা ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে মৃত্তিকা দূষিত হয়।

২. ভূমি ধস -

অধিক বৃষ্টিপাত,শিলার দুর্বলতা,মাটিতে বালির পরিমাণ অধিক হওয়ার ফলে ভূমি ধস ঘটে।এই ধসে যাওয়া মৃত্তিকা সাধারণত বালি, কাঁকর,পাথর ভর্তি থাকে।ফলে মৃত্তিকার গুণ নষ্ট হয়।যেখানে ধস নামে সেখানেকার পাহাড়ের ঢালে কঠিন পাথর বা শিলাস্তর বেরিয়ে পড়ে।তাই ধসের ফলে যেখান থেকে ধস নামলো এবং ধসের আলগা পাথুরে মৃত্তিকা যেখানে জমা হয় সেই দুজায়গারই মৃত্তিকা দূষিত হয়।

৩. মৃত্তিকা হ্ময় -

প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি,যেমন - বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, সমুদ্র তরঙ্গ প্রভৃতির মাধ্যমে ভূমি ভাগের অতি প্রয়োজনীয় মৃত্তিকার অংশবিশেষ অপসারিত হওয়াকে মৃত্তিকা হ্ময় বলে।এই মৃত্তিকা হ্ময়ই মৃত্তিকা দূষণের একটি কারণ।

৪. অ্যাসিড বৃষ্টির -

বায়ুমণ্ডলের সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বৃষ্টির জলের সাথে বিক্রিয়ার যথাক্রমে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। বৃষ্টির জলের সাথে এই অ্যাসিডগুলি মৃত্তিকার পতিত হয়।একে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে।এর ফলে মৃত্তিকার অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়।এই অবস্থায় মৃত্তিকার ধাতব ও জৈব আয়নগুলির প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।ফলে উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে অণুখাদ্য শোষণ করতে পারে না।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - অ্যাসিড বৃষ্টি

৫. ঝড় -

উপকূলবর্তী অঞ্চলের সাইক্লোন,টর্নেডো, নিম্নচাপ, সুনামি প্রভৃতির ফলে সমুদ্র থেকে জলোচ্ছ্বাস হয়ে মৃত্তিকার লবণাক্ততা বাড়িয়ে মৃত্তিকার দূষণ ঘটায়।

৬. মৃত্তিকার উর্বরাশক্তির হ্রাস -

উদ্ভিদকুল মৃত্তিকার উপরিস্তর থেকে অণুখাদ্য সংগ্ৰহ করে পুষ্টি সাধন করে থাকে। খনিজ পদার্থের আবহবিকার এবং অণুজীবীয় ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে জৈবাবশেষের বিশ্লেষণ এই দুই প্রক্রিয়ায় অণুখাদ্যগুলি মৃত্তিকায় সংযোজিত হয়। উদ্ভিদ এই অণুখাদ্যগুলি মৃত্তিকায় থেকে গ্ৰহণ করে এবং খাদ্য শৃঙ্খলের পথে এগুলি উদ্ভিদদেহ থেকে অন্যান্য প্রাণীদেহে স্থানান্তরিত হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহাবশেষের বিশ্লেষণের ফলে অণুখাদ্য গুলি পুণরায় মৃত্তিকায় নীত হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অণুখাদ্যের আবর্তন ব্যাহত হওয়ার ফলে মৃত্তিকার উর্বারশক্তি হ্রাস প্রাপ্ত হয়।একে " পরিপোষক দূষণ" বলে।পরিপোষক দূষণের মূল কারণ গুলি হল - একই শহরের পুনরাবৃত্তি,পরপর দুটি চাষের অন্তবর্তী সময়ের ব্যবধান হ্রাস,অত্যধিক পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে অণুজীব গুলির মৃত্যু ইত্যাদি।

• মনুষ্যসৃষ্ট কারন -

১. কীটনাশক প্রয়োগ - 

গাছের বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমন করতে এবং গাছের বা ফসলের প্রতিদ্বন্দ্বী আগাছাগুলিকে নির্মূল করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকদের মধ্যে ক্লোরিন যুক্ত হাইড্রোকার্বন গোষ্ঠীর অন্তর্গত ডি.ডি.টি. বছরের পর বছর ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকা দূষিত হয়ে পড়ে।

২. রাসায়নিক সার প্রয়োগ -

অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকাতে N,P,K প্রভৃতি সার থেকে প্রাপ্ত নাইট্রেট, ফসফেট ও মলিবডেট সঞ্চিত হবার ফলে মৃত্তিকার জীবাণুগুলির জীবনচক্র প্রভাবিত হয় এবং মৃত্তিকা দূষিত হয়।এর ফলে মৃত্তিকার গঠন,গ্ৰথন, উর্বরতা প্রভৃতির ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে।

৩. জৈববর্জ্যের মাধ্যমে -

শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন হাজার হাজার টন জৈব আবর্জনা (সবজির খোসা,মল,মূত্র খাদ্যের অবশিষ্টাংশ) জমা হচ্ছে এবং জল ও মৃত্তিকাকে দূষিত করছে।

৪. অজৈব যৌগের মাধ্যমে -

সালফার ডাই অক্সাইড, ফ্লুরাইড, কলকারখানার ছাই প্রভৃতি পদার্থ মৃত্তিকাকে দূষিত করে।লোহা,কয়লা,জিঙ্ক, তামা প্রভৃতি কারখানা ও খনির বর্জ্য পদার্থ মৃত্তিকার দূষক হিসাবে চিহ্নিত।সীসা, আর্সেনিক,পারদ, ক্যাডমিয়াম প্রভৃতি ভারী ধাতব দ্রব্য জল বা অন্য কোনো উৎস থেকে মৃত্তিকাতে এসে জমা হয় এবং মৃত্তিকার জীবাণু ও উদ্ভিদের দেহকোশের হ্মতি হয়।

৫. ডিটারজেন্টের মাধ্যমে -

মৃত্তিকার উপর ডিটারজেন্টের দূষনের পরিমাণ কম হয়।তবে শহরাঞ্চলে ডিটারজেন্টে কারখানা থেকে বর্জ্য মৃত্তিকার উপর পতিত হয় এবং মৃত্তিকাকে দূষিত করে তোলে এবং পুকুরে ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জলের মাধ্যমে মৃত্তিকার দূষণ হয়।

৬. তেজস্ক্রিয় পদার্থের মাধ্যমে -

পরমাণু গবেষণা, পরীক্ষা ও বিস্ফোরণ, তেজস্ক্রিয় খনিজের ব্যবহার বৃদ্ধি মৃত্তিকাকে দূষিত করে। পরমাণু কেন্দ্র ও গবেষণাগার থেকে বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ সব সময় বেরিয়ে মৃত্তিকাতে মিশে মৃত্তিকাকে দূষিত করে। এছাড়া শিলা ও খনিজ বিশ্লিষ্ট হয়েও তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলি হল স্ট্রনসিয়াম-90, সিজিয়াম-137, রুথেনিয়াম-106, আয়োডিন-131, রেডিয়াম-106, ল্যান্থানিয়াম-140, সিরিয়াম-144, কার্বন-14,বেরিয়াম-140 ইত্যাদি।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - তেজস্ক্রিয় দূষণ

৭. নগরায়ন ও শিল্পায়ন -

জনসংখ্যার ব্যাপক বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ন ও শিল্প বৃদ্ধি পাচ্ছে।কারণ জনসংখ্যার বাসস্থান ও কাজের সন্ধানের জন্য শিল্প এবং বিভিন্ন কলকারখানা থেকে কঠিন পদার্থের স্তুপীকৃত স্থলভাগে দূষণের অন্যতম কারণ বিভিন্ন শিল্প সংস্থা, হাসপাতাল থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মৃত্তিকা তথা স্থলভাগকে দূষিত করে। কলকারখানা,শিল্প, নগরায়ন অত্যাধিক হারে বৃদ্ধির জন্য সালফিউরিক অ্যাসিড,নাইট্রিক অ্যাসিড,হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রভৃতি বাতাসে ভাসমান অবস্থায় শিশির, তুষার ও বৃষ্টির জলের সাথে মিশে এবং স্থলভাগে পতিত হয়ে জীবমন্ডল তথা স্থলভাগের দূষিত করে।এই অবস্থায় জন্য মৃত্তিকায় ধাতব ও জৈব আয়নগুলির প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়।এর ফলে মৃত্তিকা থেকে উদ্ভিদ অণুখাদ্য শোষণ করতে পারে না। আবার বিভিন্ন শিল্প যেমন সিমেন্ট,কাগজ,রঙ, ধাতু শোধন, খনি থেকে তরল ও কঠিন শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থ এসে মৃত্তিকাতে মিশলে মৃত্তিকা দূষণ দেখা যায়।

৮. গৃহস্থালীর আর্বজনার মাধ্যমে -

পলিথিনের ব্যাগ,প্লাস্টিকের বিভিন্ন দ্রব্য প্রভৃতি জৈব প্রক্রিয়ায় পুনঃব্যবহার হয় না এবং বিয়োজিত হয় না।এই সব বর্জ্য মৃত্তিকাতে মিশে মৃত্তিকাকে দূষিত করে তোলে।

৯. প্রাণীর পয়ঃপ্রণালীর পদার্থের দ্বারা দূষণ -

মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মলমূত্র ইত্যাদি বর্জ্য পদার্থ মৃত্তিকা দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস। মানুষের রেচন পদার্থের সঙ্গে অন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী,কৃমি ইত্যাদি রোগবাহী অনুজীব গুলি মৃত্তিকায় সংক্রামিত হয়।এই মৃত্তিকায় জন্মানো শস্য,সবজি ইত্যাদি ভহ্মণের মাধ্যমে মানবদেহে রোগ জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটে। অনুরূপভাবে অন্যান্য প্রাণীর রেচন পদার্থের মাধ্যমেও রোগবাহী অণুজীবের ক্রমণ ঘটে থাকে।

১০. লবন ও জলসেচ দ্বারা দূষণ -

বর্তমানে বিভিন্ন কৃষি ব্যবস্থায় ব্যাপক জলসেচ ব্যবহারের ফলে মৃত্তিকাতে লবণতা বেড়ে যাচ্ছে।সেইসঙ্গে উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলবাহিত অতিরিক্ত মৃত্তিকার সঞ্চয়ের ফলে মৃত্তিকা দূষিত হচ্ছে। আবার লবণ শিল্পে লবণ উৎপাদনের জন্য সমুদ্রের লবণাক্ত জল জমিতে ধরে রাখার ফলে,মৃত্তিকা লবণাক্ত হয়ে ওঠে এবং মৃত্তিকাকে দূষিত করে তোলে।

১১. অরণ্যধ্বংস -

উদ্ভিদ তার শিকড়ের সাহায্যে মৃত্তিকাকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বসতি নির্মাণ, কাঠের চাহিদার জন্য, অতিরিক্ত কৃষিজমি তৈরি করার অরন্যাঞ্চলের  পরিমান হ্রাস পাচ্ছে।এর ফলে মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায় এবং সহজেই হ্ময়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর এই মৃত্তিকা হ্ময় থেকে মৃত্তিকা দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন - অরণ্যধ্বংস

১২. "Soil Conditioner" এর ব্যবহার -

মৃত্তিকার গুণগত মান উন্নত করার জন্য বর্তমানে "Soil Conditioner" এর ব্যবহার করার প্রবণতা পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।সিসা,পারদ ও আর্সেনিকের মতো হ্মতিকারক উপাদান গুলি এই জাতীয় "কন্ডিশনার" উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।ফলে মৃত্তিকার মধ্যে সিসা,পারদ ও আর্সেনিকের পরিমাণ যে ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে এবং মৃত্তিকাকে দূষিত করছে।

১৩. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বারা দূষণ -

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত কয়লার ছাই মৃত্তিকার সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে মৃত্তিকাকে দূষিত করছে।

5. মৃত্তিকা দূষণের প্রভাব -

• কৃষিহ্মেত্রে প্রভাব -

  1. দূষণের ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি কমে ফলে শস্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়। 
  2. অতিরিক্ত NPK সার ব্যবহার করার ফলে ভুট্টা,গম,ছোলা শস্যগুলির মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা 25-30 ভাগ কমে যায়।
  3. প্রয়োজনের অতিরিক্ত পটাশিয়াম সার প্রয়োগের ফলে ফসলের অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও ক্যারোটিন হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের অভাবে স্কার্ভি নামে এক ধরনের রোগ হয়।
  4. মৃত্তিকাতে টক্সাকিন,ডি.ডি.টি.,বি.এইচ.সি. ইত্যাদি কীটনাশকের অতিরিক্ত প্রয়োগে ফসলের শত্রু অনুজীবের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু অনুজীবেরা মারা যায়।

• শিল্পজাত আর্বজনা ও বর্জ্য পদার্থের প্রভাব -

  1. পারদ,সীসা,দস্তা,আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম,সোডিয়াম,পটাশিয়াম,তামা প্রভৃতি ধাতব দূষিত পদার্থ মৃত্তিকার মধ্যে হিতকর জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।যা মৃত্তিকার গুণগত মান নষ্ট হয়।
  2. বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত লবণ মৃত্তিকাকে প্রদূষিত করার ফলে শস্যের উৎপাদন হ্রাস পায়।
  3. চর্মশিল্পের পরিত্যাক্ত আবর্জনার মধ্যে অ্যনথ্রাক্স ব্যাসিলি -র মতো ক্ষতিকর জীবাণুর সন্ধান পাওয়া যায়। 
  4. অ্যামাইনো অ্যাসিড,অ্যালবুমিন,জিলেটিন প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে বিভিন্ন সালফার ও ফসফরাস যৌগ উৎপাদন করে এবং এই যৌগগুলি থেকে পুনরায় মৃত্তিকার পহ্মে ক্ষতিকর ফসফরাস অক্সাইড,হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়।
  5. কার্বন-14,আয়রন-55,ম্যাঙ্গানিজ-54,কোবাল্ট-57,আয়রন-57,জিঙ্ক-65 প্রভৃতি তেজস্ক্রিয় পদার্থ দৈহিক পঙ্গুতা সৃষ্টি করে এবং স্নায়ুরোগ ও বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের কারণ হয়।
• প্লাস্টিকের হ্মতিকারক প্রভাব -
  1. মৃত্তিকা তার স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে। 
  2. জল নিকাশি ব্যবস্থা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং রাস্তাঘাট জলে ডুবে যায়। 
  3. জলাভূমি গুলি বুজে যায়।

• মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব -

  1. বিভিন্ন প্রকার রোগ যেমন - অ্যানথ্রাক্স,কিউ জ্বরের জীবাণু দূষিত মৃত্তিকার মাধ্যমে মানুষের দেহে ঢোকে।
  2. বিভিন্ন রোগের ব্যাকটেরিয়া যেমন - আমাশয়, কলেরা,ডায়েরিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতি মানুষের দেহ থেকে মৃত্তিকার আসে এবং মৃত্তিকা থেকে সুস্থ সবল মানুষের দেহে ঢোকে।
  3. মৃত্তিকার পারদের বিষক্রিয়ায় মানুষের মস্তিষ্ক কোষের বিনাশ, মানসিক বৈকল্য, অনীহা,পেশী শৈথিল্য, দৃষ্টিহীনতা,বধিরতা ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়।
  4. মৃত্তিকার ক্যাডমিয়ামের প্রভাবে মানুষের ফুসফুস ও বৃক্কের ক্রিয়াহীনতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি,অস্থির নমনীয়তা, বিপাকীয় অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।
  5. মৃত্তিকার সীসার বিষক্রিয়ার প্রভাবে মানুষের হিমোগ্লোবিন ও বৃক্কের সক্রিয়তা নষ্ট হয়, মস্তিষ্ক কোষের বিনাশ ঘটে,রক্তচাপ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং গর্ভপাত ঘটে থাকে।
  6. ফসল উৎপাদনের জন্য বেশি নাইট্রোজেন সার জলে দ্রবীভূত নাইট্রেটের পরিমাণ 90 ppm এর বেশি হলে বিভিন্ন ধরনের পেটের রোগ,এমনকি লিভার ক্যান্সার ও দেখা যায়।
  7. WHO র(1964) দেওয়া একটি হিসাবে দেখা যায় যে, পৃথিবীর বিকাশ শীল দেশগুলিতে প্রতি বছর মৃত্তিকা দূষণের জন্য প্রায় 50000 হাজার মানুষ হ্মতিগ্ৰস্ত হয়।
  8. মৃত্তিকার বিভিন্ন শিল্পজাত ও গৃহস্থালি বর্জ্য পদার্থের সঞ্চয় ইদুর,মাছি ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।ইঁদুরের পরজীবী ইঁদুরে মাছি প্লেগ রোগ সৃষ্টি করে।মাছি থেকে কলেরা আন্ত্রিক প্রভৃতি পেটের রোগের সংক্রমণ হয়।

• উদ্ভিদের উপর প্রভাব -

  1. মৃত্তিকা দূষণকারী বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ (যেমন - পলিঅ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন, পলিক্লোরিনেটেড বাই ফিনাইল ইত্যাদি) গুলি উদ্ভিদ বৃদ্ধি, বংশবিস্তার, স্বাভাবিক বিপাকীয় ক্রিয়া ইত্যাদিকে ব্যাহত করে।
  2. অতিরিক্ত বৃহ্মচ্ছেদনের ফলে মৃত্তিকা আলগা হয়ে যায়।

• বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব -

  1. মৃত্তিকা দূষণের সঙ্গে সঙ্গে জলদূষণ এবং আংশিক বায়ু দূষণ ঘটে থাকে।
  2. কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারে কীটনাশক দূষণ ঘটে।
  3. বৃহ্মচ্ছেদনে মৃত্তিকা আলগা হয়ে ভূমিহ্ময় সৃষ্টি করে।
  4. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়।
  5. মৃত্তিকা দূষণের ফলে মৃত্তিকার উর্বারশক্তি হ্রাস পায়।
  6. মৃত্তিকা দূষণের ফলে মৃত্তিকার জলধারনের হ্মমতা হ্রাস পায়।
  7. মৃত্তিকার ভূ-গর্ভস্থ জলে লবন ক্রমাগত সঞ্চিত হলে মৃত্তিকা লবণাক্ত ও অনুর্বর হয়ে ওঠে।

6. মৃত্তিকা দূষণের নিয়ন্ত্রণ  -

• কৃষিজাত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা -

  1. রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে।
  2. কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক পন্থা হিসাবে যথা অ্যামোনিয়া গ্যাস দূরীভূত করার জন্য "Nitrogen Stripping", জৈব পদার্থ অপসারণের জন্য " Carbon absorption" এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করার জন্য "Chlorination" পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
  3. কৃষিক্ষেত্রে জলসেচে জন্য যে জল ব্যবহার করা হয়,সেটি দূষিত কীনা যাচাই করতে হবে।
  4. কৃষিহ্মেত্রে দূষিত জল যাতে মৃত্তিকার সঙ্গে না মিশতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে কারণ দূষিত জল মৃত্তিকার সঙ্গে মিশে মৃত্তিকা দূষণ হয়।
  5. কৃষি প্রযুক্তির বিকাশ করতে হবে।
  6. জমিতে পতিত না রেখে সারা বছর শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করলে মৃত্তিকার দূষণের রোধ করা সম্ভব।

• পয়ঃপ্রণালী ও জলনিকাশি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা -

  1. গ্ৰামাঞ্চলে ফাঁকা মাঠে মলমূত্র ত্যাগ না করে ল্যাট্রিন ব্যবহার করার উৎসাহিত করা।
  2. শহরাঞ্চল যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ যাতে না করে তার জন্য একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে সুলভ শৌচালয় নির্মাণ করতে হবে।
  3. গ্ৰাম ও শহর অঞ্চলে উন্নত জলনিকাশি বন্দোবস্ত করতে হবে।

• বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা -

  1. পৌরসভা, গৃহস্থালি,শিল্পকেন্দ্র ইত্যাদি উৎস থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ গুলি শহরের বিভিন্ন নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপীকৃত করে আর্বজনাবাহী যানবাহনের মাধ্যমে দূরবর্তী বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্রে পাঠানো ব্যবস্থা করতে হবে।
  2. আর্বজনা যানবাহন বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নির্মাণ করা প্রয়োজন যাতে বর্জ্য পরিবহনের সময় কোন ভাবেই দূষণ ঘটাতে না পারে।
  3. উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন বিশেষ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থের মিশ্রণ থেকে প্রথমে জীব বিশেষ্য ও জীব অবিশেষ্য পদার্থ গুলিকে পৃথক করা প্রয়োজন।এরপর জীব বিশেষ্য পদার্থ গুলির মধ্য থেকে পুনঃব্যবহার যোগ্য পদার্থ গুলিকে সংগ্ৰহ করা যায় এবং জীব অবিশেষ্য বর্জ্য পদার্থ পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মৃত্তিকাতে গর্ত করে এই বর্জ্য পদার্থ ভরাট করে মৃত্তিকা দ্বারা আবৃত করতে হবে।
  4. বিভিন্ন আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ থেকে জৈব গ্যাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।

• সম্পদের পুনরাবর্তন ব্যবস্থা -

  1. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পুনরাবর্তন যোগ্য বিভিন্ন জৈব বস্তু যথা কাগজ, কাঁচ, ধাতু ইত্যাদি সংগ্ৰহ করা পর এগুলিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পুনঃব্যবহার করে তোলা হয়।এর ফলে সম্পদের সাশ্রয় হয় এবং সেই সঙ্গে ভূমি দূষণ রোধ করা যায়।
  2. বর্জ্য পদার্থ থেকে প্রাপ্ত  অন্যান্য পুনঃব্যবহার যোগ্য পদার্থ গুলি হল - ধাতব পদার্থ,ধাতব বর্জ্য, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ ইত্যাদি।
  3. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলির নির্গত ছাইয়ের যথোপযুক্ত ব্যবহার করে ভূমি দূষণ রোধ করার জন্য ঐসব পদার্থকে সিমেন্ট শিল্প,ইট তৈরি ও রাস্তা নির্মাণ প্রভৃতি কাজে লাগাতে হবে।
  4. প্লাস্টিকের পরিবর্তে চট বা কাগজ বা প্যাকেট এর ব্যবহার অনেক বেশি সমীচীন,যা মৃত্তিকা দূষণ কমাতে সাহায্য করে।

• সচেতনতা মূলক ব্যবস্থা -

  1. অরণ্যের গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
  2. বনসৃজন আরো বেশি করে আয়োজন করা।
  3. পাহাড়ে ঢাল অঞ্চলে বাঁধ দিয়ে জল আটকে ভূমি ধস রোধ করা।
  4. চারণভূমি সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখতে হবে।
  5. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য যাতে না মৃত্তিকাতে মিশতে পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  6. মৃত্তিকা দূষণ সম্বন্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলা।
  7. গ্ৰামাঞ্চলে গণচেতনা ও প্রচারের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েত স্তরে বিশেষ পদহ্মেপ গ্ৰহন করতে হবে।

• আইন প্রণয়ন ব্যবস্থা -

  1. জলদূষণ ও বায়ুদূষণের ন্যায় মৃত্তিকা দূষণ এবং নিয়ন্ত্রণের উপর তেমন আলাদা ভাবে কোনো আইন প্রণয়ন করা হয় নি, কিন্তু জলদূষণ, বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণ এবং কঠিন বর্জ্য পদার্থ এবং কীটনাশক আইন দ্বারা মৃত্তিকা দূষণ রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
  2. কঠিন বর্জ্য, কীটনাশক,মৃত্তিকা নিয়ন্ত্রক, প্লাস্টিক ইত্যাদির উৎপাদন ও ব্যবহার হ্রাস করার জন্য আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।এহ্মেত্রে জীব বিশেষ্য পদার্থের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা দরকার।
  3. কঠিন বর্জ্য পদার্থের অনিয়ন্ত্রিত স্তূপীকরণ নিষিদ্ধ করা উচিৎ।সেই সঙ্গে সমস্ত শ্রেণীর জনগনকে স্বাস্থ্য সম্মত অভ্যাসের আওতায় আনার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্ৰহণের প্রয়োজন।
  4. স্বাস্থ্য আইনের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারগুলিকে স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃপ্রণালীর নির্মাণের জন্য সরকারী অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থাটিকে আরও কার্যকরী করা তোলা দরকার।
  5. অ্যাসিড বৃষ্টি কমানোর জন্য সরকারের তরফে নতুন করে শিল্পনীতি ও পরিকল্পনা গ্ৰহণ করা।

7. উপসংহার -

মৃত্তিকা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যা পৃথিবীর বুকে জীবের জীবন ধারণকে সম্ভব করে তুলেছে। সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে মৃত্তিকা সম্পদের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং জীবের অস্তিত টিকিয়ে রাখতে হলে মৃত্তিকা সংরহ্মণ এবং মৃত্তিকা দূষণ প্রতিরোধ করা অত্যাবশ্যক কর্তব্য।যদি জলদূষণ এবং বায়ুদূষণ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হলেই মৃত্তিকা দূষণের মাত্রা বহুলাংশে হ্রাস পায়।তাই এখন যদি আমরা সচেতন না হলে পরিবেশ দূষণ আরো বৃদ্ধি পাবে।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post