কঠিন বর্জ্য পদার্থজনিত দূষণ এবং ব্যবস্থাপনা||Solid Waste Pollution And Management

কঠিন বর্জ্য পদার্থজনিত দূষণ এবং ব্যবস্থাপনা||Solid Waste Pollution And Management

কঠিন বর্জ্য পদার্থজনিত দূষণ এবং ব্যবস্থাপনা||Solid Waste Pollution And Management

BENGALI VERSION||ENGLISH VERSION

Solid Waste Pollution And Management (Concept,Defination, Sources, Management, Environmental Effects, Errors,Acts, Student's Role)
Solid Waste Pollution And Management

Assignment Questions -

1. কঠিন বর্জ্য পদার্থ কাকে বলে। বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্য পদার্থের উৎস সম্পর্কে ধারণা দাও।||What is Solid Waste? Give An Idea About The Sources Of Different Types Of Solid Wastes.

2. কঠিন বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দাও। কঠিন বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনার ক্রটি সম্পর্কে ধারণা দাও।||Give An Idea About Solid Waste Management. Give An Idea About Solid Waste Management Techniques.

3. কঠিন বর্জ্য পদার্থের নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা দাও।||Give An Idea About The Steps Taken By The Government Of India To Control Solid Waste.

4. পরিবেশের উপর কঠিন বর্জ্য পদার্থ প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর।||Discuss The Impact Of Solid Waste On The Environment.

5. কঠিন বর্জ্য পদার্থের সচেতনতা বৃদ্ধিতে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আলোচনা কর।||Discuss The Role Of Student's In Raising Awareness Of Solid Waste.

কঠিন বর্জ্য পদার্থজনিত দূষণ এবং ব্যবস্থাপনা

BENGALI VERSION -

(ENGLISH VERSION FILE BELOW THE ARTICLE BY PDF FORMAT)

1. ভূমিকা -

বর্তমান যুগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সম্পদ ব্যবহারের মাত্রাও যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলস্বরূপ বর্জ্য পদার্থ উৎপাদনের পরিমাণও মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।বর্জ্য পদার্থ বলতে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পদার্থের অবশিষ্ট অংশ যেগুলি কঠিন,তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবেশে আসে।যার খুব এই অর্থ মূল্য নেই অথচ পরিবেশ দূষণ ঘটায়।তাই হল বর্জ্য পদার্থ।এই সব বর্জ্য পদার্থের মধ্যে কিছু পদার্থ যেমন জীব-বিশ্লেষ্য প্রকৃতির,তেমনি অধিকাংশ পদার্থই জীব-অবিশ্লেষ্য প্রকৃতির।এই জীব-অবিশ্লেষ্য পদার্থ গুলি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশে অবস্থান করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে,অন্যদিকে তেমনি বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়।এই বর্জ্য পদার্থ উপরে বর্তমানে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে।তাই "Today's Waste is the raw material of tomorrow" এই কথাটির যথার্থতাকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

• বর্জ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যাবলী - 

  1. বর্জ্য পদার্থ কঠিন,তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবেশে আসে। 
  2. বর্জ্য পদার্থের মধ্যে গৃহস্থ বর্জ্য পদার্থ সবচেয়ে বেশি।
  3. গ্ৰামাঞ্চলে থেকে শহরাঞ্চলে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। 
  4. বর্জ্য পদার্থের একটা বড়ো অংশ জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয়।একে জীব-বিশ্লেষ্য প্রকৃতি বর্জ্য পদার্থ বলা হয়।আর বেশ কিছু বর্জ্য পদার্থ বিয়োজিত হয় না।একে জীব-অবিশ্লেষ্য প্রকৃতি বর্জ্য পদার্থ বলা হয়। 
  5. বর্জ্য পদার্থ পরিবেশের দূষণ ঘটায়।
  6. সঠিক ব্যবস্থাপনার বর্জ্য পদার্থকে সম্পদে পরিণত করা হয়। 
2. বর্জ্য পদার্থের শ্রেনিবিভাগ - 

বর্জ্য পদার্থ মূলত পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে।

  1. কঠিন বর্জ্য পদার্থ।
  2. তরল বর্জ্য পদার্থ।
  3. গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থ।
  4. বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ। 
  5. বিশহীন বর্জ্য পদার্থ। 
নিম্নে শুধুমাত্র কঠিন বর্জ্য পদার্থ নিয়ে আলোচনা করা হল।-

3. কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

প্রধানত মানুষের উৎপাদন,ভোগ ও দৈনন্দিন কার্যাবলি এবং প্রাণীদের বিভিন্ন ধরনের কার্যাবলির ফলে যে সমস্ত বর্জ্য দ্রব্যের মধ্যে কঠিন বা প্রায়-কঠিন পদার্থ গুলিকে বলা হয় কঠিন বর্জ্য পদার্থ।এই ধরনের কঠিন বর্জ্য পদার্থকে সাধারণত জঞ্জাল বলা হয়। অর্থাৎ অন্যভাবে বলা যায় যে, কঠিন বর্জ্য পদার্থ বলতে মূলত বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র,জল সরবরাহ সংক্রান্ত পরিশোধন কেন্দ্র, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ হ্মেত্র থেকে সৃষ্ট জঞ্জাল, আবর্জনা,স্লাজ এবং বিভিন্ন শিল্প, বাণিজ্য,খনি ও কৃষি সংক্রান্ত কার্যাবলির ফলে উৎপন্ন বিবিধ পরিত্যক্ত কঠিন,প্রায়-কঠিন,তরল এবং আবদ্ধ গ্যাসীয় পদার্থকে বোঝায়।

• উদাহরণ - 

কঠিন কণা, আবর্জনা,কাদা,ধাতুর খাদ,অবহ্ময়িত পদার্থ,ভগ্ন ও নষ্ট পাত্র,বিনষ্ট খাদ্যদ্রব্য, মানুষ ও প্রাণীর বর্জ্য পদার্থ প্রভৃতি। আবার কোনো কোনো দেশে বিভিন্ন অ্যাসিড জাতীয় বর্জ্য,হ্মারকীয় বর্জ্য,তেল জাতীয় বর্জ্য এবং জৈব দ্রাব্য বর্জ্য প্রভৃতিকে বর্জ্য পদার্থের অন্তর্গত বলে মনে করে।

এই কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলি প্রধানত জীব-অবিশ্লেষ্য এবং সার প্রস্তুতে অহ্মম জীব-বিশ্লেষ্য পদার্থ নিয়ে গঠিত।যখন গ্ৰীণ হাউস গ্যাস,বিষাক্ত ধোঁয়া এবং হ্মুদ্র কণা নির্গমনকারী জীব-অবিশ্লেষ্য সার প্রস্তুতে অহ্মম জীব-বিশ্লেষ্য পদার্থ দ্বারা পরিবেশ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে,তখনই কঠিন বর্জ্য পদার্থ জনিত দূষণের প্রাদুর্ভাব লহ্ম্য করা যায়।

4. কঠিন বর্জ্য পদার্থের উৎস -

উৎসের তারতম্যের হিসেবে কঠিন বর্জ্য পদার্থ বিভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে।এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল -

১. গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গৃহে যে সমস্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ বের হয় তাকে গৃহস্থালির কঠিন বর্জ্য পদার্থ বলা হয়।যথা -

  • ক্যারি ব্যাগ
  • প্লাস্টিক বোতল ও জাল
  • পলিথিনের ব্যাগ
  • তেল ,স্যাম্পু বোতল
  • চুলের রং
  • পুরাতন বাড়ির ধ্বংসাবশেষ
  • নতুন বাড়ির নির্মাণ সামগ্রী অবশিষ্ট অংশ
  • টিনের কৌটা
  • বিদ্যুতের তারের অব্যবহৃত অংশ
  • বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি প্রভৃতি।

২. পৌর কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

পৌর কঠিন বর্জ্য পদার্থের মধ্যে প্রধানত গৃহস্থালি, রাস্তাঘাট, পয়ঃপ্রণালী এবং নির্মাণ হ্মেত্রের বর্জ্য পদার্থ গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে নগরায়ণ এবং জীবনযাত্রা প্রণালী ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি এই ধরনের বর্জ্য পদার্থের গঠনের পরিবর্তন ঘটেছে।যথা -

  • গৃহস্থালির সমস্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ।
  • রাস্তাঘাটে ল্যাম্প পোস্টের ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক তার ও অন্যান্য সামগ্ৰিক
  • পয়ঃপ্রণালীজাত বর্জ্য পদার্থ
  • নর্দমা নিকাশী নালার বর্জ্য পদার্থ
  • রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার পরে বর্জ্য পদার্থ
  • জলাভূমি পরিস্কারের পরবর্তী বিভিন্ন প্লাস্টিক ও ধাতব বর্জ্য পদার্থ প্রভৃতি।

৩. শিল্পজাত কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

শিল্পজাত কঠিন বর্জ্য পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন হ্মতিকারক পদার্থ মিশ্রিত থাকে।যথা -

  • শিল্পহ্মেত্র থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন ধাতু
  • রাসায়নিক দ্রব্য
  • কীটনাশক
  • রাবার
  • চামড়া কলকারখানার ক্রোমিয়াম যৌগ
  • শিল্পহ্মেত্র থেকে নির্গত মার্করি সায়ানাইড

৪. হাসপাতালের কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

মানুষ ও প্রাণীর রোগ নির্ধারণ,রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণায় হ্মেত্রে মূলত এই ধরনের কঠিন বর্জ্য পদার্থ উৎপন্ন হয়।যথা -

  • মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
  • প্রানীজাত বর্জ্য পদার্থ যেমন - প্রানীর মৃতদেহ,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ,করতে
  • মাইক্রোবায়োলজি ও বায়োটেকনোলজি ল্যাবরেটরিজাত বর্জ্য
  • তীক্ষ্ম ধারাল বর্জ্য - সূঁচ,সিরিঞ্জ,ছুরি,ব্লেড,কাচ
  • পরিত্যক্ত ওষুধ
  • রক্ত মাখা কঠিন বর্জ্য পদার্থ - গজ,তুলো, প্লাস্টারের কাটা অংশ ইত্যাদি
  • চিকিৎসা সংক্রান্ত অন্যান্য কঠিন বর্জ্য - ক্যাথিটর,টিউব
  • রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ - অ্যাসিড,ফরমালিন

৫. কৃষিজাত কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

কৃষিক্ষেত্র যে সমস্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ দেখা যায়।যথা -

  • খড়
  • শুষ্ক ঘাস
  • খাদ্যের অবশিষ্টাংশ
  • পশুর বর্জ্য পদার্থ
  • শস্যের পরিত্যক্ত মূল ও কান্ড
  • রাসায়নিক সার

৬. বাণিজ্যিক কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

বিভিন্ন বাণিজ্যিক হ্মেত্র,যেমন - দোকান,হোটেল, বাজার, রেস্টুরেন্ট, অফিস প্রভৃতি থেকে বিভিন্ন হ্মতিকারক কঠিন বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয়।যথা -

  • কাগজ
  • প্লাস্টিক
  • কাঠ
  • খাদ্যের অবশিষ্টাংশ
  • কাচ
  • কার্ডবোর্ড
  • ধাতুর ভগ্নাংশ

৭. খনিজাত কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

খনি থেকে কোনো আকরিক পদার্থ উত্তোলনের সময় যেসব বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয়, সেগুলিকে (যেমন - শিলা, মাটির বিভিন্ন পদার্থ প্রভৃতি) বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করার সুযোগ থাকলেও অনেকসময়ই দেখা যায় যে এসব বর্জ্য পদার্থের বিপুল পরিমাণ সঞ্চয় একদিকে যেমন ভূমিভাগের অনেকটা স্থানের অপচয় করছে, তেমনি এই বর্জ্য পদার্থে মিশ্রিত বিষাক্ত পদার্থগুলি পারিপার্শ্বিক পরিবেশের হ্মতিসাধন করছে।

৮. বিমান ও রেল ভ্রমণ -

বিমান ও রেল ভ্রমণ মাধ্যমে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থের সৃষ্টি হয়।

  • মিনারেল ওয়াটার বোতল
  • প্লাস্টিক প্লেট
  • প্লাস্টিক গ্লাস
  • প্লাস্টিক চামচ।

৯. মানবদেহে ও প্রাণীদেহের কঠিন বর্জ্য পদার্থ -

অনেকসময়ই মানুষ ও প্রাণীদেহের বর্জ্য পদার্থ বিভিন্ন জলাশয়ে নিহ্মেপ করা হয়।এসব বর্জ্য পদার্থ গুলি উপযুক্ত অপসারণের অভাবে বৃষ্টির জলের মাধ্যমে জলাশয়ে এসে মিশ্রিত হয় এবং দূষণের সৃষ্টি করে। তাছাড়া কসাইখানা থেকে নিঃসৃত প্রাণীর কঙ্কাল ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ উল্লেখযোগ্য।

5. পরিবেশের উপর কঠিন বর্জ্য পদার্থের প্রভাব -

  • এই কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশে অবস্থান করার ফলে পরিবেশকে দূষিত করছে।
  • বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হচ্ছে।
  • কঠিন বর্জ্য পদার্থ জমির ধ্বংস করে জমিকে অব্যবহারযোগ্য করে তোলে।
  • এই সমস্ত পদার্থ মৃত্তিকা সঙ্গে মিশে মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে।
  • এই কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলি মৃত্তিকা দূষণের সহায়তা করে।
  • কঠিন বর্জ্য পদার্থ জলাভূমিতে ফেলার ফলে জলাভূমিটি বুঝে আসে।
  • পরিবেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে।
  • বায়ুমণ্ডলের গ্ৰীণ হাউস গ্যাস বৃদ্ধি পায়।
  • এই কঠিন বর্জ্য পদার্থকে উন্মুক্ত দহনের ফলে বায়ুমন্ডলে আম্লিক গ্যাস এবং নাইট্রোজেন ও কার্বনের অক্সাইড মিশ্রিত হয়ে অ্যাসিড বৃষ্টি, ওজোন হোল,বিশ্ব উষ্ণায়ন, ধোঁয়াশায় এবং কুজ্ঝটিকার সৃষ্টি করে,যা বায়ুদূষণ জনিত সমস্যার সূত্রপাত ঘটায়।
  • এই কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলি নদী,সমুদ্রে বা জলাশয়ে মিশে জলদূষণের সৃষ্টি করে।
  • এই কঠিন বর্জ্য পদার্থ একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপীকৃত ভাবে ফেলে রাখার ফলে দৃশ্যদূষণ এবং গন্ধ দূষণ এর সৃষ্টি হয়।
  • মানুষের উপর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা লহ্ম্য করা যায়।যথা -শ্বাসকষ্ট,স্নায়ুরোগ,চোখে,কিডনি, লিভার,মস্তিক জনিত রোগ,পেটের অসুখ, টাইফয়েড,আন্ত্রিক, আমাশা,কলেরা ও চর্মরোগের মতো নানা রোগের প্রাদুর্ভাব লহ্ম্য করা যায়।

6. কঠিন বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনা -

কঠিন বর্জ্য পদার্থের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পৌর অঞ্চল গুলিতে কঠিন বর্জ্য পদার্থের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল -

  • কঠিন বর্জ্য পদার্থের সংগ্ৰহ
  • কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিবহন
  • কঠিন বর্জ্য পদার্থের প্রক্রিয়াকরণ
  • কঠিন বর্জ্য পদার্থের পুনরাবর্তন
  • কঠিন বর্জ্য পদার্থের অপসারণ

1. কঠিন বর্জ্য পদার্থ সংগ্ৰহ -

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে দৈনন্দিন ভিত্তিতে বা বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাড়ি থেকে কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলি সংগ্রহ করা হয়।আর এই কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিশোধনের পদ্ধতিটি কঠিন বর্জ্য পদার্থের গঠন, পরিমাণ এবং আকার-আকৃতির উপর নির্ভর করে করা হয়। বর্তমানে কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিশোধনের হ্মেত্রে তিনটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

ক. তাপীয় পরিশোধন -

এহ্মেত্রে বর্জ্য পদার্থ পরিশোধনের জন্য তাপের ব্যবহার হয়। সাধারনত যেসব তাপীয় পরিশোধন পদ্ধতিগুলি ব্যবহৃত হয়,সেগুলি হল -

১. ইনসিনারেশন -

এহ্মেত্রে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বর্জ্য পদার্থের দহন ঘটানো হয়।ইনসিনারেশনের পরে বর্জ্য পদার্থ গুলি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প ও ভস্মে  পরিণত হয়।এই পদ্ধতির মাধ্যমে শক্তির পুনরুদ্ধার করা হয় যা উত্তাপন ও বৈদ্যুতিক হ্মেত্রে ব্যবহৃত হয়।

২. পাইরোলাইসিস এবং গ্যাসিফিকেশন -

পাইরোলাইসিস এবং গ্যাসিফিকেশন প্রায় একই প্রকৃতির পদ্ধতি,যেখানে উচ্চ তাপমাত্রা এবং স্বল্প পরিমাণ অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জৈব বর্জ্যের পচন ঘটানো হয়।গ্যাসিফিকেশনের হ্মেত্রে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন ব্যবহৃত হলেও পাইরোলাইসিসে একেবারেই অক্সিজেন ব্যবহারের করা হয় না।এই প্রক্রিয়া গুলির প্রভাবে উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন দাহ্য ও অদাহ্য গ্যাস এবং পাইরোলিজেনাস তরল উৎপন্ন হয়।গ্যাসিফিকেশনের ভূমিকা এহ্মেত্রে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কারণ এই পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থের দহনের মাধ্যমে একদিকে যেমন শক্তির পুনরুদ্ধার হয়,অন্যদিকে তেমনি বায়ুদূষণের হ্মেত্রে এই পদ্ধতি কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করে না।

৩. উন্মুক্ত দহন -

উন্মুক্ত দহন হল এমন একটি পদ্ধতি যেহ্মেত্রে অবাঞ্চিত পদার্থ গুলির এমনভাবে দহন ঘটানো হয়,যার ফলে ধোঁয়া ও অন্যান্য হ্মতিকারক পদার্থ গুলি চিমনির মাধ্যমে নির্গত না হয়ে বায়ুতে সরাসরি নির্গত হয়।এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজসাধ্য এবং এহ্মেত্রে খরচও যথেষ্ট কম হয়।

তবে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর উন্মুক্ত দহন নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।এই পদ্ধতির প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন দূষকগুলি(যেমন - Dioxins, হ্মুদ্রকণিকা,Polycyclic Aromatic,যৌগ,কার্বন-মনোক্সাইড,আম্লিক গ্যাস, নাইট্রোজেন ও কার্বনের অক্সাইড প্রভৃতি) নির্গত হয় যা মানবদেহ ও পরিবেশের উপর প্রভাব লহ্ম্য করা যায়।Dioxins প্রভাবে মানবদেহে বিকাশ, হরমোন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া, প্রজনন, ক্যান্সার,অ্যাজমা ও ব্রঙ্কাইটিস,স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়।আর Halo-Hydrides প্রভাবে অম্লবৃষ্টি, ওজোন স্তরের অবহ্ময়,বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং ধোঁয়াশায় সৃষ্টি করে বায়ুদূষণ ঘটায়।

খ. ডাম্পিং এবং ল্যান্ডফিল -

১. স্যানিটারি ল্যান্ডফিল -

বর্জ্য পদার্থের অপসারণ মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের হ্মেত্রে যে ঝুঁকির সৃষ্টি করে,তা এক বৃহৎমাত্রার হ্রাস পায় স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের মাধ্যমে।এহ্মেত্রে নির্বাচিত স্থানটিতে অপ্রবেশ্য কাদা মাটির উপস্থিতি লহ্ম করা যায়,অথবা স্থানটিতে জলভাগ যথেষ্ট নীচে অবস্থান করে এবং ভূপৃষ্ঠস্থ জলভাগের অনুপস্থিতি লহ্ম্য করা যায়। ফলস্বরূপ জলদূষণ জনিত আশঙ্কার মাত্রা হ্রাস পায়।যে কহ্মে এই বর্জ্য পদার্থ গুলি বায়ুপ্রবাহ এবং বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয় না। প্রতিদিন এই বর্জ্য নিহ্মেপণের পরে কীটপতঙ্গের উপদ্রব এবং দূর্গন্ধ প্রতিরোধের জন্য আবরণ ব্যবহার করা হয়।যখন ল্যান্ডফিলের সহ্মমতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তখন অপ্রবেশ্য কাদামাটির দ্বারা এর উপরিভাগটি আচ্ছাদিত করা হয়ে থাকে। কিছু স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তির পুনরুদ্ধার করা হয়।ল্যান্ডফিলে বর্জ্য পদার্থের স্বাভাবিক অবাত বিয়োজন এর ফলে গ্যাস ,যথা - কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। মিথেন শক্তির উৎস রূপে জল ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। কিছু ল্যান্ডফিল Landfill Gas Collection (LGC) প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে।

২. নিয়ন্ত্রিত ডাম্প -

নিয়ন্ত্রিত ডাম্প ল্যান্ডফিলের জন্য একটি উপযুক্ত হ্মেত্র হলেও এহ্মেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। নিয়ন্ত্রিত ডাম্পে কোনোরূপ কহ্ম যেমন নেই,তেমনি তরল বর্জ্য ও গ্যাসের ব্যবস্থাপনার জন্য আংশিক ব্যবস্থা রয়েছে। আবার, অনেক হ্মেত্রে গ্যাসীয় পদার্থের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেই।তবে এই ধরনের ডাম্প পরিবেশগত দূষণের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং এহ্মেত্রে প্রাথমিক ব্যয় যথেষ্ট কম ও কার্যসম্পাদন সংক্রান্ত ব্যয় মাঝারি ধরনের।

৩. বায়োরিয়্যাক্টর ল্যান্ডফিল -

বায়োরিয়্যাক্টর ল্যান্ডফিলের ব্যবহারের ফলে অণুজীবীয় প্রক্রিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্জ্য পদার্থের পচন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়।এই অণুজীবীয় প্রক্রিয়ার হ্মেত্রে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য তরল পদার্থ সংযোজন করা হয়। অণুজীবীয় প্রক্রিয়ার প্রভাবে তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ব্যয় হ্রাস পায় এবং শক্তির পুনরুত্থানের জন্য মিথেন উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।এই প্রক্রিয়ার বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ অত্যন্ত দ্রুত হ্রাস পাওয়ার আরো অতিরিক্ত পরিমাণ বর্জ্যের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করা সম্ভব হয়।

গ. জৈবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা -

১. কম্পোস্টিং -

কম্পোস্টিং বলতে অণুজীব এবং হ্মুদ্র অমেরুদণ্ডী প্রাণী দ্বারা জৈব পদার্থের নিয়ন্ত্রিত বায়ুজীবীর পচনকে বোঝায়। বর্তমানে কম্পোস্টিং এর হ্মেত্রে যে কৌশলগুলি প্রধানত ব্যবহৃত হয়।সেগুলি হল -

  • Vessel Composting
  • Windrow Composting
  • Vermicomposting
  • State Pile Composting
কম্পোস্ট বা সার উৎপাদনের হার নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত পদার্থের গঠন ও উপাদানের উপর। পদার্থের কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত, আর্দ্রতার ও বায়ুর পরিমাণের উপর কম্পোস্ট বা সার উৎপাদন প্রধানত নির্ভরশীল।

২. অবায়ুজীবী পচন -

কম্পোস্টিং এর মতো অবায়ুজীবী পচনের ক্ষেত্রেও জৈব বর্জ্য পদার্থ বিশ্লেষণের জন্য জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।তবে কম্পোস্টিং এর ক্ষেত্রে যেমন বায়ু এবং বিভিন্ন অণুজীবের উপস্থিতি প্রয়োজন,অবায়ুজীবী পচনের ক্ষেত্রে বর্জ্য পদার্থকে বিশ্লিষ্ট করার জন্য ব্যাকটেরিয়া এবং অক্সিজেন মুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন।অবায়ুজীবী শ্বসনের প্রভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও মিথেন উৎপন্ন হয়।তাছাড়া অবায়ুজীবী পচনের ফলে হিউমাস উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি এই পদ্ধতিকে জৈব গ্যাস উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৩. সমন্বিত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা -

সমন্বিত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং পরিবেশগতভাবে কার্যকরী একটি স্থিতিশীল পদ্ধতি গঠনের জন্য সামগ্ৰিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়।পরিবেশ ভাবে বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো একটি পরিশোধন পদ্ধতি যথেষ্ট নয় এবং এই কারণেই পরিশোধন ও অপসারণের সকল পদ্ধতিগুলি কে সমান গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করে তারপর সবথেকে উপযুক্ত পদ্ধতিগুলি নির্বাচন করা প্রয়োজন। কোনো কার্যকরী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এমনভাবে সমগ্র প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হয় যাতে একটি অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় এবং এই কারণে সমন্বিত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয় ঘটে থাকে।

2. কসকঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ হ্রাস, পুর্নব্যবহার এবং পুনরাবর্তন -

কঠিন বর্জ্য পদার্থের যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য এই ধরনের পদার্থের পরিমাণ হ্রাস, পুনঃব্যবহার এবং পুনরাবর্তন করা প্রয়োজন।তাই কঠিন বর্জ্য পরিচালন সংক্রান্ত পরিকল্পনার মধ্যে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি হল।-

ক. কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ হ্রাস এবং পুর্নব্যবহার -

কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস এবং পুর্নব্যবহারের ফলে উৎসস্থল থেকে কঠিন বর্জ্যের উৎপাদন এবং পরিশোধন ও অপসারণ সংক্রান্ত যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার চাহিদা হ্রাস পায়।কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ হ্রাসের জন্য যেসব পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করা যেতে পারে, তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল -

  1. দ্রব্য উৎপাদনের হ্মেত্রে প্যাকেজিং এর পরিমাণ হ্রাস  করতে হবে।প্যাকিং এর জন্য ক্রেতারা যাতে তাদের নিজস্ব পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ নিয়ে আসেন সেই বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
  2. জনসাধারণকে বিভিন্ন পুনর্ব্যবহারযোগ্য দ্রব্য, যেমন - পূনর্ব্যবহারযোগ্য  প্লাস্টিক,কাঁচের পাত্র প্রভৃতি ব্যবহারের মাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে উপর সচেতনতা বোধ গড়ে তুলতে হবে। 
  3. বিভিন্ন অবাঞ্চিত পদার্থগুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে সেগুলি বন্টন করা বা প্রয়োজনীয় হ্মেত্রে দান করার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
এই পদক্ষেপ গুলি গ্রহণের জন্য যেহেতু জনসাধারণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন, তাই এক্ষেত্রে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।তাছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকেও প্যাকেজিং-এর প্রকৃতি ও পরিমাণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রব্য কেনার জন্য ব্যবহৃত ব্যাগ গুলির পুনর্ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

খ. পুনঃচক্রীকরণ -

পুনঃচক্রীকরণ মূলত তিনটি পর্যায় সংঘটিত হয়।

১. কঠিন বর্জ্য পদার্থ থেকে পুনঃচক্রীকরণের উপযোগী পদার্থ গুলি সংগ্রহ করা হয়।এরপর এই পদার্থ গুলিকে কাঁচামাল তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় এবং শেষ পর্যায়ে ওই কাঁচামাল গুলি নতুন দ্রব্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।পুনঃচক্রীকরণের উপযোগী পদার্থ গুলি চিহ্নিত করার জন্য অনেক সময় বর্জ্য পদার্থের উৎসস্থলেই কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলি বাছাই করা হয়। তবে এক্ষেত্রে পুনঃচক্রীকরণের জন্য উপযুক্ত পদার্থ গুলি সংগ্রহ করার জন্য অনেক ট্রাকের প্রয়োজন হয় এবং এই পদ্ধতিটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল্যও।অনেকক্ষেত্রে এগুলিকে সাধারণ কঠিন বর্জ্য পদার্থগুলির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় সংগ্রহ করা হয় এবং উপযুক্ত স্থানে পৌরসভার উদ্যোগে পুনঃচক্রীকরণের উপযোগী পদার্থ গুলিকে চিহ্নিত করে পুনরুদ্ধার করা হয়। 

২. Recycling Of PET Bottles -

Polyethylene Terephthalate দ্বারা প্রস্তুত বোতল গুলির কঠিন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ হ্রাস এবং উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত দ্রব্যের পুনর্ব্যবহারের প্রয়োজন পুনঃচক্রীকরণ করা হয়।বিভিন্ন স্কুলের প্রজেক্ট PET বোতলের পুনঃচক্রীকরণ করা হয়।তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশে Solar Water Disinfection এর কাজেও PET বোতলের ব্যবহার করা হয়।এক্ষেত্রে PET বোতল গুলি জলপূর্ণ অবস্থায় সূর্যের আলোয় রেখে অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে জীবাণুমুক্ত করা হয়। 

৩. Recycling Of HDPE Plastics -

উচ্চ ঘনত্বযুক্ত পলিইথিলিন বা HDPE প্লাস্টিক পুনঃচক্রীকরণের ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয় তা প্লাস্টিক দ্রব্যকে পলিউডে রূপান্তরিত করা হয়।এই দ্রব্যগুলি দীর্ঘস্থায়ী ও আবহাওয়ার প্রতিরোধের ক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার এগুলির সাহায্যে ঘরের বাইরে ব্যবহৃত আসবাবপত্র প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

7. কঠিন বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণে ভারত সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ -

  1. The Factories Act,1948
  2. The Industries (Development And Regulation)Act,1951
  3. The Insecticides Act,1968
  4. Environment Conversation Act,1986
  5. Biomedical Waste(Management And Handling)Rules,1998
  6. Municipal Solid Wastes(Management And Handling) Rules,2000
  7. The Batteries (Management And Handling)Rules,2001
  8. The Hazardous Wastes(Management, Handling And Transboundary Movement) Rules,2008
  9. The Plastics (Manufacture,Usage And Waste, Management)Rules,2009
  10. The Plastics Waste (Management And Handling)Rules,2011
  11. The E-Waste (Management And Handling)Rules,2011
  12. Solid Waste Management Rules,2016

8. কঠিন বর্জ্য পদার্থের ব্যবস্থাপনার ক্রটি -

  1. এই ধরনের বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে অন্যান্য বর্জ্যের মিশ্রিত অবস্থায় থাকার ফলে পুনঃচক্রীকরণের জন্য পদার্থ গুলির গুনগত মানের উপর হ্মতিকারক প্রভাব পড়ে।
  2. ট্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য নিয়ে আসার পদ্ধতিটি ধীরগতির এবং স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
  3. অনেকসময় সংগ্ৰহ এলাকার চারদিকে বর্জ্য ছড়িয়ে থাকে এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।
  4. বাড়ির থেকে বর্জ্য সংগ্ৰহের সময় বাড়ির সদস্যরা যদি উপস্থিত না থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  5. বাইরে রাখা কঠিন বর্জ্য বায়ু বিভিন্ন প্রাণী ও সংগ্ৰাহকদের দ্বারা অনেকসময়ই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
  6. আর্বজনা সংগ্ৰহ সংক্রান্ত পরিষেবার ক্রটির কারণে অনেকসময় সমস্যা দেখা যায়।
  7. বিভিন্ন হ্মেত্রে কঠিন বর্জ্য পদার্থ সংস্কার ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি সমস্যার সৃষ্টি করে।
  8. অনেকসময়ই কঠিন বর্জ্য পদার্থ সংগ্ৰহ পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে।
  9. আবাসন গুলি থেকে এই ধরনের পদার্থ সংগ্ৰহের জন্য অনেকটা পথ হাঁটতে হয়।
  10. ল্যান্ডফিল ব্যবস্থায় রেকর্ড নথিভুক্ত করার পদ্বতিটি অপেহ্মাকৃত ব্যয়বহুল।
  11. কঠিন বর্জ্য পদার্থকে উন্মুক্ত দহনের ফলে বায়ুদূষণ জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়।

9. কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা -

পরিবেশ দূষণ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বর্জ্য পদার্থ সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। তাই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।-

  • আধুনিক ব্যাগের পরিবর্তে কাপড় বা চটের তৈরি ব্যাগ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের ব্যবহার উপদেশ করতে পারো।
  • Use And Throw পেনের পরিবর্তে কালির পেন (ফাউন্টেন পেন)ব্যবহার করলে বর্জ্যের পরিমাণ কমবে এবং খরচও কমবে।
  • খাবার বা অন্যান্য দ্রব্য ক্রয় করার সময় খেয়াল রাখে তাতে হবে যে মোড়ক থাকে তা যেন পরিবেশ বান্ধব হয়।
  • বিদ্যালয় রাস্তাঘাট বা বাড়ির চারপাশে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার্য অবশিষ্টাংশ যত্রতত্র না ফেলে,একটি নির্দিষ্ট স্থানে (ডাস্টবিন) তে ফেলতে হবে।
  • অভিভাবকের সঙ্গে বাজার করার সময় দোকান বা বাজারের প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে বাড়ির ব্যাগ ব্যবহার করা এবং ওই ব্যাগ ব্যবহারের জন্য অভিভাবকদের উৎসাহ দাও।
  • প্রয়োজন থাকলে তবেই জিনিস ক্রয় করতে হবে।
  • অতিরিক্ত জামাকাপড়,বই বা ব্যবহার উপযোগী দ্রব্য ফেলে না দিয়ে চ্যারিটেবল সংস্থাকে দাও।এই সংস্থা নিম্ন অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে সেগুলো পৌঁছে দেয়,এতে দ্রব্য গুলির পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্য পদার্থের পরিমান কমে।
  • বিদ্যালয়ের মধ্যে সকলকে সঙ্গে নিয়ে বর্জ্য পদার্থ কি হ্মতি করে সে বিষয়ে আলোচনা করো।
  • সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে বর্জ্য পদার্থের অপকারিতা বিষয়টি তুলে ধরো।

10. উপসংহার -

এই কথা সত্যি যে, বর্তমানে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন নগরায়ন ও শিল্পায়নে বিকাশ ঘটে তেমনি বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।যা পরিবেশ ও মানুষের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাবের সৃষ্টি হচ্ছে।যদি সময় থাকে এই বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না করলে সবুজ পৃথিবী হয়ে ওঠবে আস্ত জঞ্জালের গ্ৰহ।

CLICK HERE -

ENGLISH VERSION PDF FILE

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post