সমাজ জীবনের উপর করোনা ভাইরাসের এর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব||Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society

সমাজ জীবনের উপর করোনা ভাইরাসের এর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব||Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society

সমাজ জীবনের উপর করোনা ভাইরাসের এর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব||Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society

Community Based Activities -

সমাজ জীবনের উপর করোনা ভাইরাসের এর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব||Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society
সমাজ জীবনের উপর করোনা ভাইরাসের এর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব||Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society

Community Based Activities -

সমাজ জীবনের উপর করোনা ভাইরাসের এর মানসিক ও সামাজিক প্রভাব||Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society

BENGALI VERSION -

1. ভূমিকা -

Covid-19 হল SARS-Cov-2 ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক ব্যাধি।যা 2019 সালে চিহ্নিত একটি করোনা ভাইরাস।এটি হল শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার মহামারী সৃষ্ট ব্যাধি।এই করোনা ভাইরাস দ্বারা বহু মানুষজন আক্রান্ত হয়েছে।2020 সালে প্রথম দিকে করোনা ভাইরাসের মহামারী আকার তীব্র রূপ নেয়। পৃথিবীর এক এক প্রান্তে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।এই মহামারীর ফলে জনসংখ্যার উপর উল্লেখযোগ্য মানসিক এবং সামাজিক প্রভাব ফেলেছে।

          এই করোনা ভাইরাসের ফলে একদিকে যেমন বহু মানুষ মারা যাচ্ছে, তেমনি এর ভয়াবহতা লহ্ম্য করা গিয়েছে আমাদের সমাজে, অর্থনীতিতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন, একাকিত্বের অনুভূতি,সুখ-দুঃখ, চাকরি হারানো,আর্থিক অসুবিধা, প্রিয়জনকে হারানোর শোক ইত্যাদি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে থাকে।

          এই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে একদিকে যেমন মানুষজনেরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, তেমনি অর্থনৈতিক দিক থেকে ভেঙ্গে পড়েছে এবং মানসিক স্বাস্থ্য জনিত ব্যাঘাত লক্ষ করা যাচ্ছে।

2. সামাজিক সম্পর্কের উপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব -

সামাজিক সম্পর্ক হল দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে যে কোনো সম্পর্ক।এই সামাজিক সম্পর্ক বলতে আমরা চারটি মূল সম্পর্কের প্রক্রিয়া গুলি বলে থাকে।যথা - 

  • সামাজিক যোগাযোগ
  • সামাজিক সমর্থন
  • সামাজিক মিথস্ক্রিয়া
  • সামাজিক ঘনিষ্ঠতা
এই প্রক্রিয়া গুলি সম্পর্কে আমাদের বোঝা একটি সিস্টেম দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ভূত হয় যা একটি সংযুক্ত সমগ্ৰের মধ্যে পরস্পর নির্ভরশীল উপাদান হিসাবে সামাজিক সম্পর্ককে নিহ্মেপ করে।এই Covid-19 পরিস্থিতিতে এই প্রক্রিয়া গুলিকে প্রভাবিত করে।

• সামাজিক যোগাযোগ -

সামাজিক যোগাযোগ গুলি ব্যক্তি ও সামাজিক সংযোগ গুলিকে চিহ্নিত করার একটি পদ্ধতি।সামাজিক যোগাযোগ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোনো ব্যক্তি তার নিজের মতো ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা করার একটি প্রবণতা।কিন্তু করোনা ভাইরাসের ফলে সামাজিক যোগাযোগ গুলি ছোট এবং সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে।

         তবে সামাজিক যোগাযোগের পরিবর্তনগুলি অবশ্যম্ভাবী ছিল না এবং অগত্যা স্থায়ীও ছিল না,যেহেতু সামাজিক যোগাযোগের পরিবর্তনের জন্য অভিযোজিত এবং প্রতিক্রিয়াশীল,যাতে ইন্টারঅ্যাকশনের স্বাভাবিক উপায়ে একটি। ব্যাঘাতকে নতুন নতুন উপায়ে দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে।বর্তমানে পরিস্থিতিতে মানুষজনের Google Meet বা Zoom, Facebook মতো Social Media দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছে, কিন্তু এর অসমতা বিদ্যমান।যেখানে দুই যোগাযোগের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেলেও তার সমানভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,বিপুল সংখ্যক নতুন সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিরা (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা) এই সম্পর্ক গুলিকে অনলাইনে স্থানান্তর করতে সংগ্রাম করতে পারে,যার ফলে পরিচিতি গুলির হারিয়ে যায় এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার উচ্চ ঝুঁকি বেড়ে যায়। Covid-19 বিধিনিষেধ এইভাবে ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ এবং সমাজের মধ্যে বৃহত্তর যোগাযোগ গুলির কাঠামোকে প্রভাবিত করেছে। 

• সামাজিক সমর্থন - 

সামাজিক সমর্থন হল সামাজিক মিথস্ক্রিয়া দ্বারা প্রদত্ত মনস্তাত্ত্বিক এবং বস্তুগত সংস্থান গুলিকে উল্লেখ করে, একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কগুলো স্বাস্থ্যকে উপকৃত করে।প্রকৃতপক্ষে,চাপের ঘটনাগুলির পরে সামাজিক সমর্থনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিস্থাপকতার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। Covid-19 পরিস্থিতিতে ব্যক্তিরা যোগাযোগ করে এবং সামাজিক সমর্থন স্বাভাবিক উপায়গুলি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

       স্বতঃস্ফূর্ত সামাজিক মিথস্ক্রিয়া জন্য সুযোগ যেমন একটি বিঘ্ন হয়েছে, উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, একটি বিরতি কক্ষে সহকর্মীদের সাথে কথোপকথনগুলি একজনের মূল সামাজিক নেটওয়ার্কের বাইরে সামাজিকীকরনের একটি সুযোগ দেয় এবং এই পরিফেরাল কথোপকথন সামাজিক সমর্থনে সহায়তা প্রদান করে।

      হোমওয়ার্কিং -এ স্থানান্তর এবং সম্প্রদায়ের স্থানগুলি বন্ধ করার ফলে এই স্বতঃস্ফূর্ত মিথস্ক্রিয়া ঘটানোর সুযোগের সংখ্যা পেয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে সেগুলিকে কেন্দ্রীভূত করেছে। ফলস্বরূপ,যে ব্যক্তিদের মূল যোগাযোগগুলি অন্য কোথায় অবস্থিত,বা যারা এমন সম্প্রদায়ে বাস করে যেখানে স্বতঃস্ফূর্ত মিথস্ক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম,তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যক্তিগত ভাবে সহায়ক মিথস্ক্রিয়া থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ কম রয়েছে।এই ব্যাঘাতের পাশাপাশি যোগাযোগ এবং সামাজিক সমর্থন পাওয়ার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।                   একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে,ঘন ঘন মুখোমুখি যোগাযোগ এবং ফোন/ভিডিও যোগাযোগ উভয়ই মার্চ থেকে আগষ্ট 2020 এর সময়ের মধ্যে নিম্নস্তরের বিষন্নতার সাথে সম্পর্কিত,তবে যোগাযোগের অভাবের নেতিবাচক প্রভাব তাদের জন্য বেশি ছিল, স্বাভাবিক সামাজিকতার উচ্চ স্তর।সামাজিক সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ বৈষম্য বিদ্যমান।যেমন যে ব্যক্তিরা সমাজে বেশি সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত অবস্থানে থাকে, তাদের সামাজিক সমর্থনে কম অ্যাক্সেসের প্রবণতা রয়েছে,সম্ভাব্য ভাবে Covid-19 দ্বারা আরও বেড়েছে।

• সামাজিক মিথস্ক্রিয়া -

মিথস্ক্রিয়ার হল একটি সম্পর্কীয় পদ্ধতি,যার মাধ্যমে গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিশ্বাস, আত্মীয়তা এবং পরিচয় তৈরি করে। গোষ্ঠী এবং সমাজের ব্যক্তিরা মিথস্ক্রিয়া প্রতীক গুলিকে অনুমোদন ব্যবস্থা এবং পুনঃনির্ধারণ দ্বারা অর্থ প্রয়োগ করে।এই প্রতীক গুলিকে নিয়ন্ত্রনকারী নিয়মগুলি ভাগ করা মূল্যবোধ এবং পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে এবং এই প্রতীক গুলির পারস্পারিক বোঝা পড়া ব্যক্তিদের সুশৃঙ্খল মিথস্ক্রিয়া অর্জন করতে,সহায়ক সম্পর্কের জবাব দিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে এবং সামাজিক ভাবে সংযোগ করতে সহ্মম করে।

     কিন্তু বর্তমানে Covid-19 মহামারির ফলে মানুষের মধ্যে শারীরিক দূরত্বের ব্যবস্থাগুলি মিথস্ক্রিয়ার এই নিয়মগুলিকে আমূল পরিবর্তন করেছে,যেগুলি বিশ্বাস, সম্পর্ক, সহানুভূতি এবং সম্মান জানাতে ব্যবহৃত হয়(যেমন আলিঙ্গন, শারীরিক সান্তনা)তা নিয়ে আলোচনার জন্য তীব্র জ্ঞানীয় প্রচেষ্ঠার প্রয়োজন, পূর্বে গৃহীত মিথস্ক্রিয়া গুলি পুনরায় পরীহ্মা করা হয়েছে।

      বৃহৎ সামাজিক জমায়েত ,যেমন বিবাহ, বিদ্যালয় সমাবেশ, খেলাধুলার, ইভেন্টগুলি এছাড়াও আন্তঃক্রিয়া মূলক নিয়ম গুলির নিশ্চিতকরণ এবং একীভূত করার,সংহতি এবং ভাগ করা পরিচয় গড়ে তোলা এবং সামাজিক গোষ্ঠী জুড়ে সহযোগিতার সুবিধা প্রদানের মূল সুযোগ গুলি উপস্থাপন করে। অনলাইন সমতুল্য সহজে "সামাজিক বন্ধন" ক্রিয়াকলাপ গুলিকে সমর্থন করে না যেমন গান ও নাচ, এবং কমই পেরিফেরাল/দুর্বল নেটওয়ার্ক বন্ধনের সাথে সুযোগ/স্বতঃস্ফূর্ত এক এক কথোপকথন সহ্মম করে যা শক্তিশালী করতে সাহায্যে করতে পারে একটি বড় নেটওয়ার্ক জুড়ে বন্ড।যদিও অনলাইন মিথস্ক্রিয়া এই মিথস্ক্রিয়ার নিয়ম গুলিকে অনুকরন করার অন্য কিছু উপায়ে মেতে পারে। সেখানে মূল পার্থক্য রয়েছে।এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম গুলিতে আন্তঃগোষ্ঠী যোগাযোগ প্রদানের সম্ভাবনা রয়েছে,তখন অনেক সোশ্যাল মিডিয়ার সমজাতীয় 'ইকো চেম্বার' গঠনের প্রবণতা আন্তঃগোষ্ঠী যোগাযোগকে আরও কমিয়ে দিতে পারে।

• সামাজিক ঘনিষ্ঠতা - 

ঘনিষ্ঠতা হল অন্যান্য মানুষের সাথে মানসিক সংযোগ এবং ঘনিষ্ঠতার অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত। মানসিক সংযোগ, রোমান্টিক,বন্ধুত্ব বা পারিবারিক সম্পর্কের মাধ্যমে, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে এবং দৃঢ়ভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে।

      বর্তমানে Covid-19 মহামারির ফলে ব্যক্তিদের জন্য সংযোগ এবং তাদের পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে দৃঢ় করার সুযোগ নিয়েছে, অনেক স্বাভাবিক বাহ্যিক সামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার পরে একসঙ্গে গুনগত সময়ের মধ্যে। অনলাইন মিথস্ক্রিয়া গুলি ব্যক্তিগত মিথস্ক্রিয়া থেকে গুনগত ভাবে আলাদা এবং শারীরিক ঘনিষ্ঠতার জন্য একই সুযোগ প্রদান করে না।

3. মানসিক স্বাস্থ্য উপর Covid-19 এর প্রভাব -

Covid-19 ফলে দীর্ঘদিন লকডাউনের ফলে প্রতিটি ব্যক্তির উপর মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাব পড়েছে।একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের ভিত্তিতে শিশু ও কিশোর-কিশোরিদের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

১. শিশুদের উপর প্রভাব -

১. প্রারম্ভিক পর্যায়ে (লকডাউন চলাকালীন)- 

  • শিশুরা গৃহবন্দির ফলে তাদের মধ্যে বিরক্তিকর আচরন লহ্ম করা যায়। 
  • শিশুদের মধ্যে একাকিত্ব বোধের বিকাশ ঘটে শুরু করে। 
  • শিশুদের দৈনন্দিন জীবনে রুটিন পরিবর্তন ঘটেছে।

২. পরবর্তী পর্যায়ে (আনলক চলাকালীন )-

  • দীর্ঘদিনের ধরে লকডাউনের থাকার পর  শিশুদের মধ্যে অমনোযোগিতা আচরন দেখা যাচ্ছে।
  • শিশুরা অতিরিক্ত পিতামাতার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
  • শিশুরা নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। 
  • শিশুদের মধ্যে স্মৃতিলোপের ঝুঁকি বাড়ছে। পরিবারের খাদ্য সংকটের কারণে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিতে ভুগছে। 
  • শিশুরা একা থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে, অনেকেই তখন স্কুলে যেতে চাইছে না, মেলামেশা ও সামাজিকিকরনে এক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। 
  • শিশুদের মধ্যে ঘুম, দুর্বল,হ্মুধা, দুঃস্বপ্ন, উত্তেজনা, অসাবধানতা মতো উদ্বেগ প্রকাশ পাচ্ছে।

২. কিশোর-কিশোরিদের উপর প্রভাব -

১. প্রারম্ভিক পর্যায়ে (লকডাউন চলাকালীন) -

  • Covid-19 জন্য দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দি থাকার ফলে তাদের উপর একটি বিরক্তকর মনোভাবের সৃষ্টি হয়। 
  • এদের মধ্যে অমনোযোগিতা মনোভাবের সৃষ্টি হয়। তাদের দৈনন্দিন জীবনে রুটিনের পরিবর্তন ঘটেছে। 
  • এদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও প্রায়শই একা থাকার মনোভাব গড়ে ওঠছে।
  • এরা ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতি অতিরিক্ত আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। 
  • দীর্ঘদিন ধরে তারা গৃহবন্দি থাকার ফলে তাদের মধ্যে মেজাজ হ্মোভের বিস্ফোরণ এবং পিতামাতার সঙ্গে তাদের মধ্যে দ্ধন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। 
  • করোনা ভাইরাসে সংক্রমনের আতঙ্ক ও পরিবারের বা নিকটাত্মীয় মধ্যে কেউ মারা গেলে তাদের মধ্যে মানসিক ভারসাম্য ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

২. পরবর্তী পর্যায়ে (আনলক চলাকালীন) -

  • এরা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আপত্তিকর বিষয়বস্তুর প্রতি অ্যাক্সেস করার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। 
  • এদের মধ্যে ঘুম ও হ্মুধা পরিবর্তন লহ্ম করা যায়।
  • তাদের বেশির ভাগ সময় তাদের ওজন বা শরীরের সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা বা কথা বলার জন্য ব্যয় করছে। 
  • এদের মধ্যে একঘেয়েমি ও হতাশা আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

4.মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিবেশের উপর প্রভাব -

করোনা ভাইরাস মহামারী বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য, খাদ্যব্যবস্থা এবং কর্ম জীবনে অর্থাৎ আর্থ-সামাজিক জীবনের একটি গভীর প্রভাব ফেলেছে।

• সামাজিক প্রভাব -

১. কর্মহীন -  

Covid-19 জন্য বিশ্বের বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।2020 সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে কর্মঘন্টার পরিপ্রেক্ষিতে 255 মিলিয়ন পূর্ণ সময়ের চাকরি হারিয়েছেন। "দ্য ওয়েলকাম গ্লোবাল মনিটর 2020;Covid-19" রিপোর্টে গবেষণায় দেখা গেছে যে মহামারিটি নিম্নআয়ের দেশ এবং সমস্ত দেশের কম আয়ের লোকেদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলির প্রায় অর্ধেক (45%) কর্মীরা মহামারীর কারণে চাকরি হারিয়েছেন,যা উচ্চ আয়ের দেশগুলির মাত্র 10% লোকের তুলনায়।

২. দারিদ্রতা - 

দীর্ঘ Covid-19 পরিস্থিতিতে বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। দেশের নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যম ব্যক্তিরা দারিদ্র্য সীমা রেখার নিচে অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।2021 সালে মে মাসের এক সমীক্ষায় করোনা মহামারী ও লকডাউনের ফলে প্রায় 230 মিলিয়ন ভারতীয় দারিদ্র্যের মধ্যে ফিরে গেছে।

৩. বেকারত্ব - 

বর্তমান জনসংখ্যা হার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই করোনা ভাইরাসের ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি অনুসারে 24 শেষ এপ্রিলের মধ্যে বেকারত্বের হার এক মাসের মধ্যে প্রায় 19% বৃদ্ধি পেয়েছিল,যা তারা ভারতের 26% বেকারত্বে পৌঁছেছে।

৪. অপুষ্টির শিকার - 

করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে তেমনি তাদের মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি জনিত সমস্যা লহ্ম করা যায়।এরা কোনমতে জীবনযাপন করে থাকে, পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে এদের মধ্যে পুষ্টি অভাব লহ্ম্য করা যাচ্ছে।

৫. সামাজিক সুরক্ষা ও মান সম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা অভাব -

করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির ফলে মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং তাদের মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা অভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।দেখা যাচ্ছে যে,গ্ৰামীণ এলাকা ও শহর এলাকায় মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে।

৬. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভ্রমন এবং পরিষেবা ব্যাঘাত -

করোনা ভাইরাসের প্রারম্ভিক পর্বে সরকার দ্বারা বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্যে ভ্রমণ এবং পরিষেবা ছিল একটি অন্যতম দিক। জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ রদ করা হয়েছিল এবং বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা গুলি বন্ধ করা হয়েছিল। ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভ্রমণ এবং পরিষেবা উপর একটি ব্যাঘাত লক্ষ করা যায়।

৭. সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও উৎসব অনুষ্ঠানে বাতিল -

করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির ফলে সরকার দ্বারা পূজা পার্বণ, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিবাহ মতো সাংস্কৃতিক ধর্মীয় উৎসব গুলিকে রদ করা হয়েছিল। তার কারণ সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ও উৎসব অনুষ্ঠান গুলিতে মানুষজনের জমায়েত করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির অন্যতম কারণ তাই সেই সময় এই গুলিকে বাতিল করা হয়েছিল।

৮. বিনোদন জগৎ বন্ধ - 

করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির ফলে সিনেমা, থিয়েটার,রেস্তুরা ক্লাব,পার্ক,জিম সেন্টার মতো বিনোদনমূলক কেন্দ্র গুলিকে বন্ধ করা হয়েছিল।

৯. অভিবাসী শ্রমিকদের বাস্তুচ্যুতি - 

করোনা ভাইরাস বৃদ্ধির ফলে বহু শ্রমিকরা কর্ম থেকে ছাঁটাই এবং বেকার হয়ে পড়েন। কর্মের অনিশ্চয়তায়, খাদ্যের অভাব ইত্যাদি ফলে তারা বাস্তুচ্যুত হয়ে নিজও নিজও গ্রামে বা বাড়িতে ফেরার তাগিতে অনেক মাইল রাস্তা পায়ে হেঁটে সপরিবারে ফিরে এসেছেন।

১০. শিক্ষা -

করোনা ভাইরাস বৃদ্ধির ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি বন্ধ রাখা হয়, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরীক্ষা এবং ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিকল্প পদ্ধতি মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস এবং ডিজিটাল ক্লাসরুম এর সাহায্যে পঠন পাঠন করানো হচ্ছে। ইউনেস্কো অনুমান করেছে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে প্রায় 900 মিলিয়ন শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাবিত হয়েছে।

১১. লিঙ্গ ব্যবধান এবং অসমতা -

এটি অনুমান করা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের মহামারী কারনে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের চাকরির হারানোর ঝুঁকিতে বেশি। কর্মসংস্থানের ইতিমধ্যে বিদ্যমান বৃহৎ লিঙ্গ ব্যবধানের কারণে নারীর তুলনায় পুরুষদের জন্য নিখুঁত সংখ্যা হ্রাস বেশি। ঘরোয়া কাজে ব্যয় করা লকডাউনের পূর্বের এবং পরবর্তী সময়ের তুলনা করে,বেশির ভাগ রাজ্যের লকডাউনের প্রথম মাসে গড়ে গৃহস্থালি কাজে নিবেদিত ঘন্টার পরিপ্রেহ্মিতে লিঙ্গ ব্যবধানে একটি হ্রাস পাওয়া যায়।

১২. প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় ও সঞ্চায়ের মনোভাব -

করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির প্রারম্ভিক পর্যায়ে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য অতিরিক্ত পরিমাণে ক্রয় এবং সঞ্চায়ের করার মনোভাব দেখা গিয়েছিল।তারা মনে করতেন যদি পরে এই দ্রব্য না পাওয়া যায়।তাই সরকার দ্বারা লকডাউনের সময় চাল,আলু মতো খাদ্য বস্তু ও বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রয় ও সঞ্চায়ের মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল।

১৩. ওষুধের ঘাটতি -

করোনা ভাইরাসের দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ফলে প্রথম দিকে ওষুধের অভাব লহ্ম করা গিয়েছিল।2020 সালে মার্চ মাসে, ভারতে 26টি ওষুধের উপাদান রপ্তানি সীমাবদ্ধ করে,এই নিষেধাজ্ঞা আসন্ন বিশ্বব্যাপী ঘাটতির দিকে নির্দেশ করে।ভারতে মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় কিছু ওষুধের ঘাটতির কারণে কিছু Covid-19 রোগী কালোবাজারে চলে যায়।

অর্থনৈতিক  প্রভাব -

১৪. উৎপাদনশীলতা হ্রাস - 

করানো ভাইরাসের বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে একটি প্রভাব লহ্ম করা গিয়েছিল।সেই সময় বিভিন্ন কলকারখানা বন্ধ থাকার ফলে উৎপাদনের হার অনেক কমে গিয়েছিল।

১৫. আয় উপার্জনে হ্রাস - 

দীর্ঘদিন ধরে করোনা ভাইরাসের বৃদ্ধির ফলে ব্যক্তির এবং সরকারের আয় হ্রাস পেয়েছে।2020-2021 আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক,এই সংখ্যাটি নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে।এপ্রিল - জুন 2020 এর GDP বৃদ্ধির হার ছিল -23.9%।

১৬. অত্যাবশ্যকীয় পন্য উৎপাদনের ধীরগতি -

করোনা ভাইরাসের কারণে কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে অত্যাবশ্যকীয় পন্যের উৎপাদনের হার কম হওয়ায় অর্থনীতিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

১৭. ব্যবসা বাণিজ্য ব্যঘাত - 

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা - বানিজ্যের ক্ষতি লক্ষ্য করা যায়।এপ্রিল 2020 এ ভারতের রপ্তানি বছরে -36.65% কমেছে,যেখানে এপ্রিল 2019 এর তুলনায় এপ্রিল 2020 এ আমদানি -47.36% কমেছে।

১৮. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার লোকসান -

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকার ফলে ব্যবসার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দেশের মধ্যে থেকে দেশের বাইরে ও ভেতরে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার লোকসান দেখা যাচ্ছে।

১৯. বাজারে নগদ প্রবাহ খারাপ - 

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাজারের নগদ প্রবাহ খারাপ অবস্থায় চলে যায়। কারণ এই সময় বাজার খোলা ছিল না।

২০. পরিবহনের ব্যাঘাত -

করোনা ভাইরাসের প্রভাবকে আটকাতে সরকার কর্তৃক পরিবহনের ব্যবস্থাকে বন্ধ করা হয়েছিল। 17 ই মার্চ 2020 ইন্ডিকো এবং গো ফার্স্টের মতো বেসরকারি বিমান বাতিল করে দেয়া হয়। এরপর 22 শে মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সরকার দ্বারা বন্ধ করা হয়। এরপর 24 শে মার্চের পর দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবহনের ক্ষেত্রে বাস,ট্রেন,মেট্রো,ও অন্যান্য যানবাহন গুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

5. উপসংহার -

একথা সত্যি যে Covid-19 মতো ভয়াবহ ব্যাধি একদিকে যেমন মানুষের প্রান কেড়ে নিয়েছে, তেমনি মানুষের জীবনে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মানুষ হল একটি সামাজিক প্রানী। সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মানুষ সুস্থ জীবনযাপন করে,আর এই সুস্থ মানুষজনদের নিয়ে দেশ গঠিত হয়।দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্মের এদের ভূমিকা থাকে ও সমাজ গঠনে এদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তার ফলে দেশ বা রাষ্ট্র বিকশিত হয়।তাই একটি দেশের জনগণের সামাজিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার একান্ত প্রয়োজনীয়।

        বর্তমানে Covid-19 পরিস্থিতিতে মানুষজনেরা সামাজিক,মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে বেশ প্রভাবিত হয়েছে।দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন এ থাকার ফলে মানুষজন নিজের গৃহেবন্দি হয়ে কাটিয়েছে।ফলে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে,গৃহবন্দি থাকার ফলে তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যাঘাত এবং মানসিক স্বাস্থ্য জনিত ব্যাঘাত লক্ষ্য করা যায়।তবে Covid-19 মহামারীটি স্থায়ী নয়,হয়তো খুব শীঘ্রই এ রোগের থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। মানুষের সামাজিক অর্থনৈতিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়েছে তা কাটিয়ে তুলতে একটু সময় লাগবে।




Psychological And Social Effect Of Covid-19 in our society




Post a Comment (0)
Previous Post Next Post